Powered By Blogger

শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১০

স্বতন্ত্রধারার সনেট-৭

রবিউল মানিক

পুঁজিবাদ কেড়ে নেয় মানুষের বিবেক,চিন্তার
স্বাধীনতা,মৌল নীতিবোধ,ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য,বিশুদ্ধ
ভালোবাসা ভূমিষ্ঠের সাথে সাথেই  বিচ্ছিন্নতার
মর্ম বেদনায় জর্জরিত মানব সন্তান আর্ত
চিৎকারে দিগন্ত কাঁপিয়ে তোলে আপন সত্ত্বার
বিচ্ছিন্নতা বোধে ধর্ম;ধার্মিকেরা লোভের উদ্ধুদ্ধ
প্রলোভনে ঈভ স্বর্গচ্যুত ঈশ্বর অবাধ্যতার

অরণ্যচারী মানুষ স্বীয় স্বার্থে বিচ্ছিন্ন লোভের
প্রাচুর্য ও প্রতিপত্তি আধিপত্য অন্তর্দ্বন্দে ক্ষত-
বিক্ষত মানুষ আজ যন্ত্র সভ্যতার নিষ্পেষণে
বিস্মৃত দায়িত্ববোধ চেতনার অস্তিত্বে সমার্ত
এক পৃথিবীর পথে;জাগতিক শূণ্যতা ক্ষোভের
সাথে দু'পায়ে মাড়িয়ে মানব ভালোবাসার মতো
শাশ্বত সুন্দর বুকে জয়ী  পুঁজিবাদের শোষণে

৩১.১২.১০
পল্লবী,ঢাকা।

বিপ্লবের মন্ত্র

রবিউল মানিক

রৌদ্রে পোড়ে ফসলী মাঠ,অনাবৃষ্টিতে ছেয়ে আছে দেশ
শুকনো ডালে আর্তনাদে একটানা ডেকে যায় কাক
অভিমানে অজানায় পাড়ি দিয়েছে মেঘ
বৃক্ষনিধন বন্ধ না হলে তারা আর ফিরবে না
মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া অবধি গোলাপ
আর সুবাস ছড়াবে না

নিরন্তর ছন্দে বয়ে যাওয়া নদী বলে:
কেন এই শিশুশ্রম,কোথায় শিশুর মৌলাধিকার
দোয়েলেরা অহরহ চিৎকার করে ঘরে ঘরে জানিয়ে দিচ্ছে:
উপড়ে ফেলো অমানবিকতার নিগূঢ় শেকড়
পূর্ণচাঁদ বুকের গভীরে ঢুকে দেখে নেয়
কতটুকু কালিমা ধরে রাখে,মানুষ

থোকা থোকা আগুনরাঙা কৃষ্ণচূড়া নিরন্ন,অনাহারী মানুষকে ডেকে বলে:
বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জ্বীবিত হও,মানব।

২৭.১২.১০
পল্লবী,ঢাকা।

বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১০

মুঠোফোন কাব্য

কবিতায় কেন এতো দীর্ঘশ্বাস, কেন এতো হতাশা
আর কেনইবা বিদ্রুপের এতো বিষবাষ্প ও ক্ষোভ
আটলান্টিকের ওপার থেকে ভেসে আসে মুঠোফোনে
মুদ্রিত কন্ঠস্বর;আমার কবিতার একমাত্র গুণমুগ্ধা পাঠিকার

জন্মান্ধ পথিক আমি
পথ খুঁজে ফিরি হাতড়ে হাতড়ে
গন্ধ শুঁকে পার্থক্য নির্ণয় করি
চন্দ্রমল্লিকা কিংবা সবুজ বনানী'র
নোনা গন্ধে বুঝি সমুদ্রের খুব কাছে এসে পড়েছি
দিনের সুচনাকারী লাল টকটকে সূর্য্য দেখিনি কখনো
মিহিন বাতাসে ভেসে আসা পাখ-পাখালির ডানার শব্দে
বুঝে নেই রাতব্যেপে অন্ধকারের সাথে যুদ্ধ করা ক্লান্ত সূর্য্য
আড়মোড়া ভাঙছে

ফোটার আগেই বিষাক্ত কীটের দংশনে জর্জরিত হচ্ছে গোলাপ
সামুদ্রিক শব্দোচ্ছ্বাসে শুনি: ধ্বংশোন্মুখ সভ্যতার বিলাপধ্বনি

মুঠোফোনে জলতরঙ্গের রিনরিনে কন্ঠস্বর আবারো বলে:
কবিতায় সুখ-শান্তির উষ্ণতা নেই কেন
কেন নেই নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও স্বাচ্ছন্দ্যজীবন
দুঃসহ নৈঃসঙ্গ ও ঊষর প্রকৃতি কেন বারবার ঘুরেফিরে আসে
কবিতার স্তবকে স্তবকে কেন থাকে না
অভিনব নান্দনিক বাচনভঙ্গি,রুপক আর চিত্রকল্পমুখর
গভীর এক সমুদ্রের কল্লোল

ধীর,গাঢ়স্বরে বলি:
আধুনিক মানুষ ও তার সৃজনশীলতার সংগ্রামই আমার কবিতায় উপজীব্য
সত্য ও সুন্দরের সংগ্রাম নান্দনিক প্রেমের চে' আমার কাছে আকর্ষণীয়
শিশিরপ্রতিম সজীবতায় উত্তর ভেসে আসে:
ভালো থাকবেন,কবি।শুভ কামনা অবিরাম।

২৯.১২.১০
পল্লবী,ঢাকা।

মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১০

বিদীর্ণ দীর্ঘশ্বাস

বোধিবৃক্ষের তলায় ধ্যানে নিমগ্ন থেকে দেখেছি:
গৌতবুদ্ধ'র বোধ আমাকে আচ্ছন্ন করেনি
স্বেচ্ছায় করতলে পেরেক ঠুকে দেখেছি:
যীশু'র কোনো কষ্ট-ই আমি অনুভব করিনি

একজীবনের সমস্ত বোধ আবেগানুভূতি বন্ধক রেখেছি
রুপসীর গভীর কালো চোখের মনিতে বন্দী
সামুদ্রিক ঢেউয়ের মতোন আছড়ে পড়ে ভালোবাসা
নিরন্তর ছন্দে বয়ে যাওয়া নদীর পাড়ে বসে শুনি ভাঙ্গনের গান
কল্পনার বজরায় রুপসীকে নিয়ে ভেসে বেড়াই
নিঃসীম,শান্ত নদীর বুকে---চাঁদের রক্তিম আলোয়
রুপসীর রুপ্সুধায় আকন্ঠ নিমজ্জিত থাকি
আলিঙ্গনাবদ্ধ গোটা রাত;উদ্ধত নগ্নতা নয়
শরৎস্নাত ভোরের তাজা শিউলির স্নিগ্ধ ভালোবাসায়

রুপসীর অবহেলা,অপমানে পড়ে থাকি অনন্ত সমুদ্রের তটে
বিদীর্ণ দীর্ঘশ্বাস ভেসে যায় বাতাসে
সাধ-আহ্লাদ কাম আনন্দ বিলীন হয়
সমুদ্রের সফেদ ফেনায়।

২৯.১২.১০
পল্লবী,ঢাকা।

সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১০

জ্বলন্ত চোখ

চারিদিকে অশান্তির লেলিহান অগ্নিশিখা
প্রশান্তিহীন রাত কেটে সকালগুলো আসে---
হতাশার কাফন মুড়িয়ে;তপ্ত আগুনরাঙা দুপুরেও
বুকে জমাট হিমবাহ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়
অবসন্ন বিকেলগুলো রাজপথ ভরে ওঠে নিরন্ন,বেকার আর
ন্যুব্জ কাধের কোণঠাসা মানুষের মিছিলে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত
অনিচ্ছুক ওঠে আকাশপানে

একহাতে টর্চ,আরেকহাতে কোচ নিয়ে মাছশিকারীর চতুরতায়
এনজিও হন্য হয়ে খুঁজে ফেরে হতদরিদ্র---চক্রঋণের ফাদে ফেলার
দারিদ্র জরীপ করে গবেষক,ডক্টরেট ডিগ্রীধারী
ভরে ফেলে ব্যাংকের সুরক্ষিত ভল্ট বিলিয়ন ডলারে
হালের বলদ,ভিটে-মাটি উচ্ছেদ হয়ে কৃষক পরিণত হয় ভূমিহীনে---

অসম বাণ্যিজের ভারে নুয়ে পড়া অর্থনীতি আবদ্ধ হয়
শর্তযুক্ত বৈদেশিক ঋণের জালে,দাতাদের প্রেসক্রিপসনে রাষ্ট্রীয় সম্পদের
মালিকানা চলে যায় ঋণখেলাপির হাতে,সাম্রাজ্যবাদী জাহাজভর্তি
খাদ্য নয়,ত্রাণ আসে কনডম,জন্ম-নিয়ন্ত্রণ বড়ি,তাঁবু,স্কার্ট...

ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হাড্ডিসার মানুষের চোখ ধ্বকধ্বক জ্বলে

২৫.১২.১০
পল্লবী,ঢাকা।
http://www.bangladeshnews24x7.com/literatare/poetry/3430-2010-12-31-13-52-29.html

শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১০

ভালবাসা

ভালবাসা পেলে কবির অকালমৃত্যু ঘটে
কিংবা
'দেহচ্যুত,দেহাতীত প্রেমের রোমাঞ্চ কবিকে স্পর্শ করে না'
এ আমি বিঃশ্বাস করি নাঃ
ভালবাসাই আমার প্রেরণা
ভালবাসাই আমার কবিতা্য উপজীব্য

আজন্ম ভালবাসা প্রত্যাশী প্রেমিক কবি আমি
অকাতরে দু'হাতে বিলিয়ে দিই ভালোবাসা---
অষ্টাদশী যুবতীর পায়ে,ত্রিশোর্ধ রমণীর চিবুকে,
চল্লিশোর্ধ পরস্ত্রীর করতলে কখনো বা গণিকার ঝুলেপড়া স্তনে
বাদামী,পীতাভ,কৃষ্ণাঙ্গী কিংবা শ্বেতাঙ্গী
যে কোন রমণী হৃদয়ই আমার কামনার বস্ত
একনিষ্ট ভক্ত পূজারীর নিষ্ঠায় নিমগ্ন থাকি ভেনাসের আরাধনায়

মানুষ ও মনুষ্যত্বের ভবিষ্যৎ নিক্ষিপ্ত হয় সভ্যতার ঘূর্ণিপাকে
অবসাদ,শূণ্যতাবোধ ও বিষাদাত্মক্তায় আক্রান্ত যৌবন
হোঁচট খায় নিরুদ্দিষ্ট সমুদ্রের তটে
ভুল ভালোবাসা এসে দরোজায় সজোরে কড়া নাড়ে তবুও
সাড়া দিতে ইতঃস্তত করি না কখনো

হৃদয়ের অন্তঃক্ষরণে জ্বলে ওঠে বুক
দাবানলে পুড়ে যাওয়া  পোড়া আর ধ্বংশস্তুপেও বুকের ভেতরে
অটুট থাকে ভালোবাসা,ক্রমেই স্তুপাকার হয়ে ওঠে---
প্রিয়তমা নারীর জন্যে ভালোবাসা।

২৩.১২.১০
পল্লবী,ঢাকা।

বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১০

স্বপ্ন

আজন্ম দুঃখের সাগরে বসবাস
বেদনায় গাঢ় নীল সর্বাঙ্গ
তবু ফ্যাকাসে চোখে স্বপ্ন দেখি:
স্বর্ণালী এক আগামী'র
স্বপ্ন ছাড়া কে কবে বেঁচে ছিল
২২.১২.১০
পল্লবী,ঢাকা।

সোমবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১০

ভীতু

নান্দনিক গোলাপ না-কি রুটি-সব্জী
কোনটি বেশী প্রিয়---
আজো বুঝে উঠতে পারি নি ঠিক য্যামোনটি
ঠাহর করতে পারি নাঃ
তুমি না-কি কবিতা
কে কতখানি হৃদয়ের জায়গা দখল করে আছে

কৃষ্ণগহ্বরে একে একে বিলীন হয় ছায়াপথ,নীহারিকা,ধূমকেতু
সৌরজগত,আস্ত গ্যালাক্সী
উত্তরাধুনিকতা গ্রাস করে নেয় চর্যাপদের ঐতিহ্য
পদাবলী-মঙ্গল-মহাকাব্যের সুষমায়িত ইতিহাস

আজন্ম সমুদ্রে বাস তবু
সমুদ্রে ভয়---
ঝড়ের আগে ঠিক নিশ্চিত করে্ নিই নিরাপত্তা
আজীবন সঞ্চয়িত ভালোবাসা পেয়েও
চোখের সমুদ্র হ'তে নিদ্রা বিসর্জন দিয়ে
নিরন্তর জেগে থাকি হারাবার ভয়ে

এ্যামোনই ভীতু আমি

২০.১২.১০
পল্লবী,ঢাকা।
https://sites.google.com/site/alasadupura/kabita

বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১০

নান্দনিক ত্রাণ

চারিদিকে অথৈ অন্যায়,সীমাহীন পাপাচার
পরস্ত্রীর স্তনে জমে ওঠা পরকীয়া প্রেমের নিষিদ্ধ আনন্দ
ইতি টানে দাম্পত্য কলহে---অমানবিকতার নিগূঢ় শেকড়
শরীরের শিরা-উপশিরা ব্যেপে ছড়িয়ে যায় মহাময়ারী আকারে।

ভালোবাসায় সিক্ত রসালো কোনো ঠোঁট আবেগে এগিয়ে আসে না
বড়ো বেশি মহার্ঘ্য আজ জৈবনিক প্রেম।

আদিম অসভ্য আমি প্রস্ফুটিত যৌবনধারী তরুণীর গর্বোদ্ধত
স্তন-কটি-নিতম্ব লালসার কামদৃষ্টিতে ভস্মীভূত করি
উন্মত ক্রোধে মর্দন করি যুবতীর নিখুঁত নিটোল শাদা নরম স্তন
অন্ধের মতোন হাতড়ে বেড়াই আঘ্রাণাতা-অভঙ্গুর-পিচ্ছিল যোনী।

হিংসার বিষবাষ্পে ভারী বাতাসে মহানন্দে শিকার ধরে চিল,শকুন
আর্তনাদে ডানা ঝাপটায় দোয়েল।
চাঁদহীন মধ্যরাতে শ্মশ্মাণ পেরিয়ে আসে প্রেত্মাত্মা দলে দলে গলিত শবের গন্ধে,
প্রান্তর থেকে প্রান্তর,নিঃসীম আকাশ থেকে নিশিথ বনভূম,
লোকালয় থেকে নির্জন প্রদেশ কেঁপে যায় প্রেত্মাত্মার উত্তাল নৃত্যে---
ত্রস্তা জননী আকড়েঁ ধরে শিশুকে।

চিন্তা শুন্য,চেতনায় খরা মননের মন্বন্তরে নান্দনিক ত্রাণবাহী
কোনো জাহাজ ভেড়ে না আশার বন্দরে।

১৫.১২.১০
পল্লবী,ঢাকা।

শনিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১০

বাংলা কবিতাঃআধুনিকতার সুচনা-৩

প্রত্যেক কাল বা দশকে পূর্বকালের মনীষীদের দর্শন পরিমার্জিত বা সংশোধন হয়ে আসছে অনাদিকাল থেকেই।প্রত্যেক কাল বা দশকে পূর্বকালের সাহিত্য, শিল্পকলা কিংবা চিন্তা চেতনার নব নব উন্মেষ ঘটে থাকে।কখনো কখনো সেটা পরিমার্জন বা কখনো কখনো সেটা পুরোপুরি পরিত্যাজ্যা হয়।নিউটনের সূত্র মতে,'বাহির হতে কোনো বল বস্তর উপর প্রযুক্ত না হলে অর্থাৎ বস্তর উপর বলের লব্ধি শূণ্য হলে স্থির বস্ত স্থির এবং গতিশীল বস্ত সমবেগে সরলরেখায় চলতে থাকে' এবং সেই বল সরবরাহ করেন পিকাসো কিংবা জউনুল আবেদীনের মতোন চিত্রকর কিংবা শার্ল বোদলেয়ার বা জীবনানন্দ দাশের মতোন মহৎপ্রাণ কবিরা।কবিতা একটি স্বতঃস্ফুর্ত প্রণোদনা হলেও এতে কবির দীর্ঘ প্রস্ততি ও নিরন্তর সাধনার প্রয়োজন।এ দু'য়ের সমন্বয় সচরাচর ঘটেনা বলেই প্রতি দশকে মহৎ কবিরা জন্ম নেন না।
বাংলা কবিতায় আধুনিকতাবাদ পাশ্চাত্যের আধুনিক কবিতার চেয়েও বিস্ময় ও বিপর্য্যয়করভাবে আবির্ভূত হয়েছে।যেখানে একজন মহৎপ্রাণ কবির জন্যে দশকের পর দশক,শতাব্দীর পর শতাব্দী অপেক্ষা করতে হয় সেখানে ১৮৯৯-১৯০৯ সালের মধ্যে বাংলা ভাষায় আবির্ভূত হয়েছেন পাঁচ পাঁচজন আধুনিক মহৎপ্রাণ কবি যথাক্রমে জীবনানন্দ দাস(১৮৯৯-১৯৫৪),অমিয় চক্রবর্তী(১৯০১-১৯৮৬),সুধীন্দ্রনাথ দত্ত(১৯০১-১৯৬০),বুদ্ধদেব বসু(১৯০৮-১৯৭৪) ও বিষ্ণু দে (১৯০৯-১৯৮২)।অথচ আমাদের পদাবলী সাহিত্যের বড়ু চন্ডীদাস,চন্ডীদাস,বিদ্যাপতি,জ্ঞানদাস ও গোবিন্দ দাস--- এ পাঁচজনের জন্যে অপেক্ষা করতে হয়েছে চার শতাব্দীকাল তেমনি মঙ্গলকাব্যের তিনজনের(মুকুন্দরাম চক্রবর্তী,বিজয়গুপ্ত ও ভারতচন্দ্র রায়) জন্যে তিন শতাব্দীকাল,মহাকাব্যের একজন মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং রোমান্টিক কবিতার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
আধুনিক বাংলা কবিতার ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই 'কল্লোলের কাল'ই হচ্ছে আধুনিক বাংলা কবিতার জন্মকাল। কল্লোলের কাল বলতে এখানে শুধু 'কল্লোল'ই নয়,কল্লোল,প্রগতি এবং কালি-কলম---এ তিন শাখা নিয়েই কল্লোলের কাল।কল্লোলের সুচনা-১৯২৩, কালি-কলমের সুচনা-১৯২৬ এবং প্রগতির সুচনা-১৯২৭ । এই সময়েই বাংলা কবিতায় আধুনিকতার সূত্রপাত বলে সবাই একমত হন।পাশ্চাত্যে ১৯২২ সালে টি. এস. এলিয়টের 'The Waste Land' বা পোড়ামাটি কাব্যগ্রন্থের প্রকাশ এবং ১৯২৫ সালে রবীন্দ্র কবি জীবনের একটা অধ্যায় শেষ হয়েছে 'পূরবী' কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে এবং বুদ্ধদেব বসু'র প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'মর্মবাণী'তে(১৯২৫) সালে নূতন কবিতার নান্দীপাঠ করেছিলেন। সুতরাং সকল সাহিত্যবোদ্ধারা ১৯২৫ সালকেই বাংলা কবিতার আধুনিকতার সুচনাকাল হিসেবে গণ্য করেন।
আমরা নিঃসন্দেহে এটা বলতে পারি যে,বিশের দশক হচ্ছে আধুনিক বাংলা কবিতার ভিত্তিস্থাপন বা জন্মের বছর আর ত্রিশের দশক হচ্ছে প্রতিষ্ঠা লাভের বছর।যদিও বিশের দশকে আধুনিক বাংলা কবিতার আত্মপ্রকাশে ছিল অসীম সীমাবদ্ধতা।যে সমস্ত তরুণ কবিরা আধুনিক কবিতার নূতন ফর্ম নিয়ে এসেছিলেন তাঁদের সাহস ছিল বেশী কিন্তু বয়সে নবীন।তাঁদের আত্মপ্রকাশে ও আত্মপ্রচারের সুযোগ ছিল কম।তাঁদের অধিকাংশই ছিল ছাত্র,শিক্ষার্থী কিংবা নব্য বেকার যুবক।সে সমস্ত বিদ্রোহী তরুণ কবিদের প্রতি তখনকার সাহিত্য শাসকেরা প্রসন্ন ছিলেন না এবং এ সমস্ত কবির কবিতার কাব্যরীতি ও নির্মাণশৈলী (যেমন বুদ্ধদেব বসু’র রবীন্দ্র চর্চিত সাধুরীতি,সুধীন্দ্রনাথ দত্তের নিও-ক্ল্যাসিক্যাল কাব্যরীতি) রবীন্দ্র মনস্ক কাব্য-পাঠকদের অভ্যস্ত রুচির পক্ষে তৎক্ষনাৎ গ্রহনযোগ্য ও অনুকূল হয়ে ওঠেনি।বিশের দশকের সম্পাদক ও প্রকাশকেরাও সাহস ও দূরদৃষ্টি সঞ্চয় করে রবীন্দ্র প্রভাব বলয় ভেঙ্গে বাইরে আসতে চাওয়া এসব নব্য তরুণ কবি যশঃপ্রার্থীদের পত্রিকার দ্বার কিংবা কাব্য প্রকাশের পৃষ্ঠপোষকতা করেন নি। সমাজে প্রতিষ্ঠা ও আর্থিক সঙ্গতিহীন দুঃসাহসিক এ কবিগণ স্বীয় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ থেকে রবীন্দ্র সাম্রাজ্যের মহাপ্রাচীরে ফাটল ধরাতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং নবীন কবিতার বীজ থেকে চারাগাছ,চারাগাছ থেকে কিছু কিছু ফসলও তুলতে পেরেছিলেন সে সময়েই অর্থাৎ বিশের দশকে।ফলে গোটা বিশের দশকজুড়ে তরুণ এ সমস্ত কবিদের যুদ্ধ করতে হয়েছে নিজের এবং সর্বপ্রভাবব্যাপী রবীন্দ্রনাথের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চেতনার সঙ্গে এবং সে সংগ্রামে কবিদের ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার চিহ্ন বিশের দশকের কবিতার অঙ্গে অঙ্গে দেখতে পাওয়া যায়।ত্রিশ দশকের ইতিহাস হচ্ছে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তরুণ কবিদের সংগ্রামে  রবীন্দ্র প্রভাবকে পরাস্ত করে আধুনিক বাংলা কবিতা সুস্থিত হতে পেরেছে।ত্রিশ দশক হচ্ছে আধুনিক বাংলা কবিতার স্বয়ংবৃত্ত ও দীপ্ততার ইতিহাস।বিশের দশকে  যে নূতন কবিতার বীজ রোপণ করা হয়েছিল মাঠ ভরা তার অতুলনীয় ফলন দেখা যায়। ত্রিশ দশকের কবিতায় বিষয়বস্তর ক্ষেত্রে যেমন নূতন এক অভিনবত্ব এসেছে তেমনি কাব্যশৈলীর ক্ষেত্রেও অপরিমেয় বৈচিত্র এনেছেন তরুণ এ সমস্ত কবি তাঁদের সৃজনশীলতায়।তাঁদের এ সাফল্য অর্জিত হয়েছিল ইউরোপীয় সাহিত্য মনস্কতার ফল।মন ও মানসে রবীন্দ্র চেতনার দুর্দমনীয় প্রভাব অস্বীকার ও নিজস্ব কাব্যরীতি অনুসরনরত ও পাঁচ মহৎপ্রাণ কবি (পঞ্চপান্ডব) ছিলেন ইংরেজী সাহিত্যালোকেরই নাগরিক।বিদেশী সাহিত্যের অধ্যয়নলব্ধ জ্ঞান,সাহিত্য ও দর্শনের প্রভাব,পাশ্চাত্য সাহিত্যের নান্দনিকতা এমনকি বিচ্ছিন্নতাবোধও তাদের কইতায় স্পষ্ট রুপে ফুটে উঠেছে।
রবীন্দ্রত্তোর বাংলাভাষার শ্রেষ্ট কবি জীবনানন্দ দাশ গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছেন কীটস,এলিয়টস,বোদলেয়ার এবং তারঁ কবিতায় পরিস্ফুটিতভাবে ফুটে উঠেছে তাদের প্রভাব। কীটস যেখানে লিখেছেনঃ
'Much have I travelled'
জীবনানন্দ সেখানে লেখেনঃ
'অনেক ঘুরেছি আমি।' এবং
Then fell I like some watcher of the skies
When a new plannet swims into his ken
Or like start cortez when with eagle eyes
He star'd at the pacific
জীবনানন্দের কাছে হয়ে যায়
'.........অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনই দেখেছি তারে অন্ধকারে;.......'

শার্ল বোদলেয়ার যেমন চারিদিকে শুধু অন্ধকার দেখেছেন,জীবনানন্দও তেমনি মানুষের স্বভাবে দেখতে পেয়েছেন চিল,শকুন,শুয়োরের স্বভাব।

জীবনানন্দ দাশের কবিতায় এলিয়টের রুপক ও চিত্রকল্প দেশীয় আবহাওয়ায় তাঁর সৃজনশীল অনুভব দিয়ে নূতন এক মাত্রা দিয়েছেন। যেমনঃ
"O curley,cry no more in the air
Or only to the water in the west
জীবনানন্দ সেখানে লেখেনঃ
হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে
তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে!

বুদ্ধদেব বসু যথেচ্ছভাবে ইংরেজী কবিতার চিত্রকল্প ব্যবহার করে আধুনিক বাংলা কবিতায় নূতন এক স্রোত প্রবাহ সৃষ্টি করেন।রসেটি তাঁর 'Trow Town' কবিতায় লেখেনঃ
Look,I bring Thee carven cup
........
Each  Twin breast is an apple sweet বুদ্ধদেব বসু'র কাছে হয়ে যায়ঃ
হেলেন রচেছে অর্থ নিজের বুকের ছাঁচে
........।
হেলেনের বুকে দুটি পাকাফল ভরেছে রসে।

সুধীন্দ্রনাথ দত্ত আধুনিক বাংলা কবিতায় ইউরোপীয় কবিদের প্রত্যক্ষ প্রভাবে চিত্রকল্প ও উপমায় নিয়ে এসেছেন স্বাদেশিক ভাষার নিজস্ব ভাবময়তা।
ভালেরি যখন লিখেছিলেনঃ
All perishes.A thing of Flesh and pore
Am I.Divine impatiebce also dies.
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত অনুরুপভাবে বলেনঃ
মৃত্যু কেবল মৃত্যুই ধ্রুব সখা
যাতনা শুধুই যাতনা সুচির সাথী।
কিংবা এলিয়টের 'The Burial of the Dead' কবিতায় যখন শূন্যতা ও বিচ্ছিন্নতাকে এভাবে চিহ্নিত করেছেনঃ
April is the cruellest month, breeding
Lilacs out of the dead land, mixing
Memory and desire, stirring
Dull roots with spring rain.
বিছিন্নতাবোধের যাতনায় জর্জরিত কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তাঁ 'প্রতিপদ' কবিতায় তা বর্ণনা করেনঃ
'সমাপ্ত সংরক্ত রাত্রি।-শ্রান্ত দোলপূর্ণিমার শশী,
....নীড়ে নামে,দেখে,চতুর্দিকে
বাদুড়-পেচাঁর ঝাঁক।অপুষ্পক ত্রিভঙ্গিম নীপ
দুঃস্বপ্নে প্রলাপ বকে,শব-শিবা-সর্পে পরিবৃত।
সমাপ্ত সংরক্ত রাত্রি;চূর্ণমুষ্টি ধূলিধূসরিত।

এলিয়টকে আদর্শ করে বিষ্ণু দে কবিতা লেখা আরম্ভ করেছিলেন।নাগরিক জীবনের একঘেয়েমি,ক্লান্ত ও লক্ষ্যহীন জীবন-যাপনে যাপিত এলিয়ট বলেনঃ
What shall we do tomorrow?
what shall we ever do?
The hot water at ten
And if it rains,a closed car at four
And we shall play a game of chass.বিষ্ণু দে'র কাছে তা মধ্যবিত্ত্বের করুণ অবস্থায় পরিবর্তিত হয়।
তারপরে চা এবং তাস
ব্রিজই ভালো,না হয়তো ফ্লাস
ঘোরতর উত্তেজনা,ধূমপান আর্তনাদ,খিস্তি,অট্টহাসি
তারপরে বাড়ি
অম্লশুল আর সর্দিকাশি
এলোমেলো,গোলমাল,ঘেঁষাঘেঁষি,ধোঁইয়া আর লংকার ঝাল।

ইংরেজী সাহিত্যের বিদগ্ধ পন্ডিত অমিয় চক্রবর্তী স্বতঃস্ফুর্ত কবি ভাবনা আমরা দেখি যখন হপকিন্স লেখেনঃ

I caught this morning mornonbg's minion kingdom
Of daylight's dauphin,dapple-dawn-drawn
                                                falcon on his riding
Of the rolling level underneath him steady air and striding
High there,how how he rung upon the rein of a wimpling.
অময় চক্রবর্তী'র কাছে তা হয়ে যায়ঃ
চোঙ।কালো ছলছলে তল,উপরে চাকতি শুণ্যরঙা
ইটের ফাটল লাল জবাফুল সাওঁতাল পিতলের
                                                ঘটি ঘটি রাঙা
গামোছা।গাঁয়ের বউ ছায়ে
কবি কাঁদে কাক ঠোঁট ঘ্যান ঘ্যান দড়ি,যায় ব'য়ে
গ্রীষ্মের কান্নাঃউনোনের রান্না ঘরের জল,ওঁ
চুন সুরকির ভাঙা চোঙ।


সহায়ক গ্রন্থঃ
১.আধুনিক বাঙলা কবিতা-হুমায়ূন আজাদ সম্পাদিত।
২.জীবনানন্দ দাশ মূল্যায়ন ও পাঠোদ্ধার-আবু হাসান শাহরিয়ার।
৩.হাজার বছরের বাংলা কবিতা-মাসুদূল হক।
৪.আধুনিক কবিতার মানচিত্র-জীবেন্দ্র সিংহ রায়।


(ক্রমশঃ)


বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১০

সুখী কৃষাণীর লাউয়ের মাচাঙ

এ্যাকদিন ঘাম আর ব্রীজের ধূলো উপেক্ষা কো'রে চলে
গিয়েছিলাম প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে---
প্রথাসিদ্ধ শান্ত নদীর মৃদ্যুমন্দ ঢেউ,দু'ধারে সদ্য ফসল কাটা মাঠ,
দিগন্তজোড়া বিস্তৃত সবুজ,মাথার ওপর অবারিত আকাশ দেখে
আজন্ম নাগরিকা বিস্ময়ে অভিভূতা  চতুর্দশী কিশোরীর মুগ্ধতা
মেলে দেখছিলে হলদে সর্ষে ক্ষেতে প্রজাপতি ডানার সঞ্চা্‌র,
বাঁশঝাড়ে্,গাছে পাখির কলতান,বসন ওড়ানো লিলুয়া বাতাসে
এলোচুলা সুখী কৃষাণীর লাউয়ের মাচাঙ---তোমার দু'চোখে
এনে দিয়েছিল সুখী নীড়ের স্বপ্ন।
ক্লিষ্টমুখ নগরীর বৈকাল এখানে অনুপস্থিত।

আর ফেরা হয় নি,চিরদিন এমনিই হয়:
আমরা ভুলে যাই মাটির কথা,অতিক্রান্ত পৃথিবীর কথা
পেছনে পড়ে থাকে,বাতাসে দোল খায়--সুখী কৃষাণীর লাউয়ের মাচাঙ।

০৯.১২.১০
পল্লবী,ঢাকা।

মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১০

শুদ্ধ মানুষ

'লেট নাইট মুভি' শেষ হলে চলে ভালোবাসাহীন দেহজ প্রেমের উৎসব---
যান্ত্রিকতায় শেষ হয় জৈবিক উন্মাদনা
সন্দেহের তীব্র বিষে নীলাভ ভালোবাসা লালসার রক্ত-পুঁজে দুষিত
সংবাদপত্রের হুলদে পাতায় ভয়াবহ প্রতারণা বন্যার মতো ধেয়ে আসে সরল গদ্যে।

তবু দ্বি-চারিণীর বিশ্বাসহীনতার সাঁকো ভেঙ্গে দীর্ঘপথ নগ্ন পায়ে হেঁটে
এসে রাত্রি শেষে অকস্মাৎ সমুদ্দুর দেখে আজন্ম প্রেমিক পুরুষের ইচ্ছে জাগে,
'সমুদ্দুরের জলে সমস্ত গ্লানি-শোক বিসর্জন দিয়ে শুদ্ধ মানুষ হয়ে ওঠার।'

বড় প্রয়োজন আজ শুদ্ধ মানুষের।

০৭.১২.১০
পল্লবী,ঢাকা।

শনিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১০

উপেক্ষা

'নগ্ন নারীদেহের চে' মহৎ শিল্পকর্ম এ পৃথিবীতে আর নেই'---
এ আমি বিশ্বাস করি না।
কবিতার নিরাভরণ,অবয়বহীন শরীর
আমার কাছে অনেক অনেক বেশী নান্দনিক,আকর্ষণীয়।

আজীবন সঞ্চিত ভালোবাসা পেয়েও চিতায় তোলা শবের
নির্লিপ্ততায় উপেক্ষা কোরেছি---প্রতিহিংসার আগুনে
পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া এ আমি।
আটলান্টিকের ঢেউতোলা নিখুঁত ভাজের ছন্দময় শরীরের
আহ্বা্ন দু'হাতে ঠেলেছি--- একদা তোমার দু'আঙ্গুলের
ছোঁয়ায় শিহরিত এ প্রণয়াসক্ত পুরুষ।

চোখের সমুদ্র হ'তে নিদ্রা বিসর্জনে কতোদিন ধ্যানে
নিমগ্ন থেকেছি শিবের বরাভিলাষে---ব্যর্থ প্রার্থনার গ্লানি
একাকী রমণের ন্যায় ক্ষত-বিক্ষত করেছে হৃদয়।

পাথুরে শিবের চেয়েও কাঠিণ্যে ভরা ছিল তোমার হৃদয়।

০৪.১২.১০
পল্লবী,ঢাকা।
http://www.thebengalitimes.ca/details.php?val=2365&pub_no=0&menu_id=11

স্বতন্র ধারার চতুর্দশপদী-৬

একটি বিমান দুর্ঘটনা উন্মোচন করে দেয়
গণতন্ত্রে উত্তরণ পথ;ভাঙ্গা স্যুটকেস থেকে
বের হয় সৌভাগ্যের অনন্ত দুয়ার,হায়েনারা
ফাঁদ পাতে--পুঁজিবাদী পণ্যের ঝাঁঝাঁলো  বিজ্ঞাপনে
লালায়িত নিঃস্ব জন অজান্তে গর্দানে তুলে নেয়
চক্রবৃদ্ধি ঋণের জোয়াল,বলদের মেরুদন্ড বেঁকে
যায় চৈতী চৌচির জমিনে,খাদ্য খোঁজে শকুনেরা

সুফিয়ার সৎকার হয় চাঁদার টাকায়,তত্ত্ব
বোঝে,বোঝায় না কেউ,গলায় ফাঁসও নেয় দেনা
এড়াতে,উচ্ছেদ হয় ভিটে থেকে,দেশান্তরী হতে
হয় কখনো কখনো।ব্র্যাক ফেল মারলে গ্রামীণে
যেতে বাধা নেই,গ্রামীণের দেনা শুধবে নিঃশর্ত--
শর্তহীন(নিয়মিত কিস্তি) আশা,আশার পাওনা
মেটাতে প্রশিকা আছে। আরো কতটুকু চাও পেতে?

০৪.১২.১০
পল্লবী,ঢাকা।
http://www.bangladeshnews24x7.com/literatare/poetry/396-2010-12-04-07-52-26.html

শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১০

জয়তু!মহাসুদখোর মহাজন ডঃ মুহম্মদ ইউনুস

পটভূমিঃচট্টগ্রাম বিশ্ব-বিদ্যালয় সংলগ্ন অখ্যাত 'জোবরা' গ্রাম সারা বিশ্বে খ্যাতি পেয়েছে ক্ষুদ্রঋণের জন্মভূমি হিসেবে আর সুফিয়া খাতুন এ গ্রামেরই এক দরিদ্র  অধিবাসী;তিনিও ক্ষুদ্রঋণের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন----প্রথম ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা কিংবা ক্ষুদ্রঋণের প্রথম বলির পাঠাঁ হিসেবে।১৯৭৬ সালে গবেষণা কার্যক্রম হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জোবরা গ্রামে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম শুরু করেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। ১৯৮৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে গ্রামীণ ব্যাংক।ডঃ ইউনুসের ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য হিসেবে সারাবিশ্বে তুলে ধরা হয় জোবরা গ্রামের সুফিয়া খাতুনকে।বিভিন্ন দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয় যে,গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণে সুফিয়া খাতুন স্বাবলম্বী হয়েছেন,তিনি পাকা বাড়ী করেছেন।কিন্তু প্রকৃত তথ্য যে,সুফিয়া খাতুন স্বাবলম্বী নয় চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মারা যান ১৯৯৮ সালে।গ্রামবাসী চাঁদা তুলে তার লাশ দাফনে্র ব্যবস্হা  করে।
দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে জোবরা গ্রামের সিকদার পাড়ার অভাবী নারী সুফিয়া খাতুনের হাতে প্রথমে ২০(কুড়ি) টাকা ঋণ তুলে দেন তৎকালীন চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ মুহম্মদ ইউনুস এবং পরবর্তীতে বেশী ঋণের আশ্বাস পেয়ে নির্ধারীত সময়ের আগেই ঋণ পরিশোধ করে দেন সুফিয়া বেগম এবং নূতন করে ঋণ পান ৫০০(পাঁচশত) টাকা।একসঙ্গে এত টাকা পাওয়ার আনন্দে সুফিয়া খাতুন তা সারা গ্রামে জানিয়ে দেন এবং এর অল্পদিনের মধ্যেই পূরো গ্রাম চলে আসে ডঃ ইউনুস মুহম্মদের খপ্পড়ে অর্থাৎ ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের আওতায়।জোবরার ঘরে ঘরে তখন নগদ টাকার উৎসব।কিন্তু এ উৎসব ফিকে হতে বেশীদিন লাগেনি।সুদে-আসলে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেকে,এলাকা ছেড়েছেন রহিমা ও সায়েরা খাতুনসহ কেউ কেউ।
সুফিয়া খাতুনের দুই মেয়ে হালিমা ও নূরনাহারের দিন কাটে এখন অনাহারে-অর্ধাহারে।গ্রামীণ ব্যাংকের প্রথম ঋণ গ্রহীতা সুফিয়া খাতুনের বাড়ীতে পাঁচ কাঠা জমির ওপর হালিমা ও নূরনাহারের পৃথক দু'টো ভিটে।তাদের চাষাবাদযোগ্য আর কোনো জমি নেই।সুফিয়া খাতুনের মেয়ে নূরনাহার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমার আম্মা ( সুফিয়া খাতুন ) ক্ষুদ্র ঋণের প্রথম গ্রাহক।তাকে দেখিয়ে ইউনুস সাহেব দেশে-বিদেশে অনেক নাম করেছেন,কিন্তু আমাদের কিছুই হয় নি।বেতের তৈরি মোড়াসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরির ব্যবসা করতে আম্মা ওই ঋণ নেন কিন্তু চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকা কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হয়েছিল। গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি শোধ করতে আম্মাকে অন্যজনের কাছ থেকে আবার ঋণ নিতে হয়েছিল।'

তখন থেকে এ পর্য্যন্ত সুফিয়া খাতুনের পরিবারের কোনো সদস্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আর ঋণ নেন নি।সুফিয়া খাতুনের দারিদ্র্যতাকে পুঁজি করে দশ-বিদেশে ডঃ ইউনুস অনেক সম্মান ও মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার অনুদান পেয়েছেন কিন্তু সুফিয়া বেগমের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন আজ অবধি ঘটেনি।
নোবেল পুরস্কার পাবার পর ডঃ ইউনুস এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেঞ্জোবরা গ্রামে এসেছিলেন। সে সময় অনেক চেষ্টা করেও সুফিয়া খাতুনের পরিবারের সদস্যরা কেউ তাঁর সাথে দেখা করতে পারে নি।সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য যে,ডঃ ইউনুস নোবেল পুরস্কার পাবার পর প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের স্থানীয় গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তারা সুফিয়া খাতুনের বাড়ীর পার্শ্ববর্তী পাকা দোতলা দালান (যার মালিক সুফিয়া খাতুনের ভাইপো আবুধাবী প্রবাসী জেবল হোসেন) দেখিয়ে প্রচার করে যে,এটি পরলোকগতা সুফিয়া খাতুনের।
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অবস্থার উন্নতি করতে না পারা আরেকজন জোবরা গ্রামের মোহাম্মদ হানিফ।তিনি গত ১৯৮৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২০০০ (দুই হাজার) টাকা ঋণ নিয়ে একটি গরু কিনেছিলেন কিন্তু নিয়মিত কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে সেই গরু বিক্রি করে সাত মাসে ২৮০০ (দুই হাজার আট শ') টাকা পরিশোধ করে ঋণমুক্ত হন তিনি।(সূত্রঃবিডিনিউজ২৪)।
গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যাঃ
কেস হিস্ট্রি-০১:
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে কিস্তির টাকা দিতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কালু মিয়া (৫০)। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। জানা গেছে, বেগমগঞ্জ উপজেলার গণিপুর গ্রামের খোকা মিয়ার বাড়ির কালু মিয়া চৌমুহনী রেলওয়ে গেইট এলাকায় ক্ষুদ্র চা দোকানের ব্যবসা করতেন। দোকানের পুঁজি কম থাকায় সে গ্রামীণ ব্যাংক চৌমুহনী শাখা থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেয়। সে টাকার কিছু অংশ পরিশোধ করলেও সাংসারিক টানা-পোড়েনের কারণে কিস্তির বাকি টাকা ঠিকমতো শোধ দিতে পারছিলেন না।
 আজ সকালে কিস্তির টাকার জন্য ব্যাংকের ঋণ আদায়কারী অফিসার তাকে শাসিয়ে যায়। এরপর দুপুর ১২টার দিকে কালু মিয়া বাড়ির পাশের জামে মসজিদ সংলগ্ন মক্তবের ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।খবর পেয়ে পুলিশ দুপুর ১টায় সেখানে গিয়ে গলায় দড়ি পেছানো অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে। নিহত কালু মিয়ার স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে।(সূত্রঃ২৫ ফেব্রুয়ার,শীর্ষ নিউজ ডটকম)
কেস হিস্ট্রি-0২:কলারোয়া উপজেলার জলাবদ্ধ এলাকার পাকুড়িয়া গ্রামের রেখা রানী বিশ্বাস (৪০) কিস্তি দিতে না পেরে গ্রামীণ ব্যাংকের মাঠকর্মীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ঋণী সদস্য মারা গেলে তার কিস্তি কে দেয়। মাঠকর্মী বলেছিলেন, তার ঋণ মাফ করে দেওয়া হয়। পরের দিন অর্থাৎ শুক্রবার ভোরে পাকুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রের পাশে কাঁঠাল গাছে রেখা রানী বিশ্বাসের ঝুলন্ত লাশ দেখা যায়।(সূত্রঃ২রা নভেম্বর,১০ দৈনিক সমকাল)
কেসহিস্ট্রি-০৩:অভাব-অনটনের সাথে লড়াই করে হেরে গেলেন হরিলাল। ঋণের দায় এড়াতে উপায়ন্তর না পেয়ে অবশেষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এ ব্যক্তি। চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনাটি ঘটেছে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের হিন্দুপাড়ায়। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার ছিল ব্র্যাকের ৩০০ টাকার কিস্তি ও আগামী রোববার গ্রামীণ ব্যাংকের ৭৬৫ টাকার সাপ্তাহিক কিস্তির দিন। গতকাল পর্যন্ত ওই টাকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়ে হরিলাল দেবনাথ নিজ ঘরের চালের সাথে গলায় রশি লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। হরিলালের স্ত্রী অর্চনা দেবনাথ ও বাড়ির লোকজন জানান, পার্শ্ববর্তী মিরশ্বরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারের ফুটপাথে হাতে তৈরি পাখা, ঝাড়ু, কুলা ইত্যাদি বিক্রি করে কোনো রকমে স্ত্রী আর পাঁচ কন্যা সন্তানের সংসার চালাতেন হরিলাল। দুই বছর আগে বড় মেয়ে ফুলেশ্বরী দেবনাথকে বিয়ে দিতে গ্রামীণ ব্যাংক, দারোগারহাট শাখা থেকে ২৯ হাজার টাকা ও ব্র্যাক থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নেন তিনি। সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা দিতে অপর দুই মেয়েকে চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরিতে দেন। সম্প্রতি তারা চাকরি হারিয়ে বাড়ি ফিরে এলে সংসারে ভোগান্তি বেড়ে যায়। এনজিও’র কিস্তি শোধে গ্রামের লোকজন থেকে চড়া সুদে আরো ঋণ নেন তিনি। বহুমুখী ঋণের চাপে আর পরিবারের অনটন সইতে না পেরে অবশেষে হরিলাল আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন তরফদার বলেন, শুধু গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নয়, হরিলাল বিভিন্ন জায়গা থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েছিলেন। ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, তিনি সকালে ইউপি মেম্বারের মাধ্যমে হরিলালের আত্মহত্যার খবর জেনেছেন।(সুত্রঃদৈনিক নয়াদিগন্ত,২৪.১০.০৮)
ইউনুস ফাঁদে দরিদ্ররা: সম্প্রতি দারিদ্র দূর করতে বিদেশ থেকে অনুদান পাওয়া কোটি কোটি ডলারের মধ্যে ১০ কোটি অর্থাৎ প্রায় ৭০০কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরানোর অভিযোগ করেছে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন (এনআরকে)।এ্নআরকে এর প্রামাণ্যচিত্র 'ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদে'। ক্ষুদ্র ঋণ কার্য্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের গরীব মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নীচ থেকে তুলে আনাই ছিল এ অনুদানের উদ্দেশ্য। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জোনাথন মরডাকের দেয়া তথ্যানুযায়ী,ওই সময়ে ভর্তুকি হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রায় ১৭.৫ কোটি ডলার পেয়েছিল। ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদে' শীর্ষক প্রামান্যচিত্রে অভিযোগ করা হয়,দারিদ্র্য দূর করার জন্যে ভর্তুকি হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংককে ১৯৯৬ সালে বিপূল পরিমাণ অর্থ দেয় ইউরোপের কয়েকটি দেশ। নরওয়ে, সুইডেন,নেদারল্যান্ড ও জার্মানীর দেয়া অনুদান থেকে ৭০০ কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীন কল্যাণ নামে নিজের অন্য এক প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নেন ডঃ ইউনুস।বাংলাদেশ নরওয়ের দূতাবাস,নরওয়ের দাতা সংস্থা নোরাড এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এ অর্থ গ্রামীণ ব্যাংকে ফেরৎ নিতে চেয়েও পারেনি।খানে উল্লেখ্য,নরওয়ের দাতা সংস্হা ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্য্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংককে ৪০ কোটি ডলার অনুদান দেয়।১০ কোটি ডলারের মধ্যে ৭ কোটিরও বেশী ডলার ডঃ ইউনুসের গ্রামীণ কল্যাণ নামের প্রতিষ্ঠানেই থেকে যায়। পরে বাংলাদেশ নরওয়ের দূতাবাস,নরওয়ের দাতা সংস্থা নোরাড এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালণ করে।আরো ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে,গ্রামীণ ব্যাংকের ওই অর্থ গ্রামীণ কল্যাণের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেয় গ্রামীণ ব্যাংক।
প্রামাণ্যচিত্রটির নির্মাতা টম হেইনম্যান অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য ডেনিশ এ্যাসোসিয়শন অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম তাঁকে ২০০৭ সালে বিশেষ পুরস্কার দেয়।প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণের জন্যে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছিলেন।অর্থ স্থানান্তর ও ঋণের বেড়াজালের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ডঃ ইউনুসের মতামত জানতে প্রায়  ছয়মাস ধরে তিনি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করেও পান নি।ডঃ মুহম্মদ ইউনুস টম হেইনম্যানকে কোনো সময় দেন নি বা দেখা করতে রাজী হন নি।
গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থ গ্রামীন কল্যাণে স্থানান্তের বিষয়টি জানতে পেরে নরওয়ের উন্নয়ন সংস্থা 'নোরাড' এ বিষয়ে প্রশ্ন তুললে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা ডঃ ইউনুস এর ব্যাখ্যা দেন।অর্থ সরিয়ে নেয়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি ১৯৯৮ সালের ০৮ জানুয়ারী একটি চিঠি লেখেন।অই চিঠিতে বলা হয়,'এর মূল উদ্দেশ্য করের পরিমাণ কমানো এবং গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা। এ অর্থ রিভলভিং ফান্ড হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় থেকে গেলে ক্রমেই বাড়তে থাকা কর হারের কারণে ভবিষ্যতে আমাদের বিপূল পরিমান কর পরিশোধ করতে হবে।রিভলভিং ফান্ড থেকে কোনো অর্থ ব্যয়ের পর এর বিনিময়ে পাওয়া অথ আবার একই কাজে ব্যবহার করা যায়। এ তহবিলের ক্ষেত্রে অথ বছর বিবেচিত হয় না।
অর্থ স্থানান্তের ঘটনা যাতে প্রকাশ না পায় সে বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন ডঃ ইউনুস।নোরাডের তখনকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ১৯৯৮ সালের ০১ জানুয়ারী এক চিঠিতে তিনি লেখেন,'আপনার সাহায্য দরকার আমার।।...সরকার এবং সরকারের বাইরের মানুষ বিষয়টি জানতে পারলে আমাদের সত্যিই সমস্যা হবে।'
নরওয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়াঃটম হেইনম্যানের 'ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে' প্রামান্যচিত্রটিতে ঋণের জন্যে দেয়া অনুদানের অর্থ অন্যখাতে স্থানান্তরের বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নরওয়ের লেবার ও প্রগ্রেস পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্যরা।লেবার দলের সদস্য ক্রিস্টিন হানসেন বলেন,'বিষয়টি আমাদের কাছে নূতন।সব তথ্য-উপাত্ত অবশ্যই উপস্থাপন করতে হবে।এ ধরণের বিষয় গোপন রাখা মেনে নেয়া যায় না।'প্রগেস পার্টির সদস্য মরটেন হগল্যান্ড বলেন,'এ ঘটনার বিষয়ে সংসদে কোনো তথ্য জানানো হয় নি।এটি বিরক্তিকর।পূরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে হবে।তদন্তের জন্যে যাচাই-বাছাই ও সংসদীয় কমিটির পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।'
নরওয়ে সরকারের সহায়তা বিষয়ক মন্ত্রী এরিক সোলহেম এ ঘটনায় যে কোনো তদন্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন,'সাহায্যের জন্যে দেয়া তহবিল চুক্তির শর্তের বাইরে অন্য খাতে ব্যবহারের সুযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। মন্ত্রী ১৯৯৮ সালে ঘটনাটি উদঘাটনের পরও তথ্য গোপণ রাখার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বলেন,উন্নয়ন তহবিল কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে সে বিষয়ে পূর্ণ স্বচ্ছতা থাকতে হবে।'
ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের গল্পঃ
'ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে' প্রামাণ্যচিত্রটির নির্মাতারা গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলোতে গেছেন বেশ কয়েকবার। জোবরা গ্রামে তাদের মধ্যে দেখা হয় গ্রামীণ ব্যাংক থেকে প্রথম ঋণ নেওয়া সুফিয়ার মেয়ের সঙ্গে। যশোরের 'হিলারি পল্লী'তে তাদের দেখা হয় গরিব মানুষদের সঙ্গে, ক্ষুদ্র ঋণের কারণে তাদের ঋণের বোঝা শুধুই বেড়েছে বলে দেখতে পান নির্মাতারা। ওই পল্লীতে গিয়ে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি তার সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছিলেন সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। এ সময় ঋণগ্রহীতাদের প্রায় সবার মুখে একই কথা শুনেছেন প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাতারা। তারা জানান, প্রত্যেকেই একাধিক ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। সে ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে সবারই প্রাণান্ত অবস্থা। কেউ বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন ঋণ শোধের জন্য। আবার ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তি শোধ করতে না পারায় কারও ঘরের টিন খুলে নিয়ে গেছে ঋণদাতা ।
১০ বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য এমন ৪০ জন নারীর ওপর ডেভিড গিবসন ও হেলেন টডের এক জরীপে দেখা গেছে অই নারীদের প্রত্যেকেই গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে পূণরায় ঋণ নিয়েছেন।গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে তারা দ্বারস্থ হয়েছে ব্র্যাকের কাছে,ব্র্যাকের ঋণ পরিশোধের জন্যে আশা'র কাছে ঋণ নিয়েছেন,আশা'র ঋণ শোধ করার জন্যে প্রশিকা'র সদস্য হয়ে ঋণ নিয়েছেন,আবার গ্রামীণ ব্যাংক.....অর্থাৎ গ্রামীণ ব্যংক>ব্র্যাক>আশা>প্রশিকা>গ্রামীণ ব্যংক....আমৃত্যু এক চক্রে আবদ্ধ।
সুদের উচ্চহারঃ২৫০০ জন দরিদ্র মানুষের ওপর ২০০৭ সালে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদদের পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়--- এদের এক তৃতীয়াংশ লোক গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন।বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার ২৬% থেকে ৩১%।কোনো কোনো ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের  সুদের হার এর চেয়েও অনেক বেশী।গবেষণায় দেখা যায়,সারা বিশ্বে ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুদের হার কোথাও কোথাও ১০০% এমনকি ২০০% ভাগও রয়েছে।
টম হেইনম্যানের 'ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে' বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সমাজবিজ্ঞানী ও গবেষকের সাক্ষাৎকারও রয়েছে।এঁরা দী্ঘদিন ধরে ক্ষুদ্র ঋণের বৃহৎ সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছেন।ডেভিড রডম্যান,জোনাথন মারডক,টমাস ডিক্টার এবং মিলফোর্ড বেটম্যানের মতো সমজবিজ্ঞানীদের সবার একটাই কথা,চালু হবার পর ৩৫ বছরেও এখনো এমন কোন প্রমাণ নেই,যাতে মনে হতে পারে ক্ষুদ্র ঋণ গরীব মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে পারে।
ডঃ ইউনুসের কর প্রদানে অনীহাঃদীর্ঘ কয়েকযুগে গ্রামীণ ব্যাংক একটি শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলেও ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রপতি এরশাদের জারী করা এক অধ্যাদেশ বলে জন্ম নেয়া গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দারিদ্র্যমুক্তির প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংককে করের আওতামুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছেন ডঃ ইউনুস। এরশাদের শাষনামাল থেকে শুরু করে পরবর্তী কোন সরকারই এ প্রতিষ্ঠানের করমুক্তির আবেদন অগ্রাহ্য করেন নি।কালের কন্ঠে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়,৩১ ডিসেম্বর গ্রামীণ ব্যাংকের করমুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ডঃ ইউনুস সরকারের কাছে পরের দুই বছরের জন্যে করমুক্তি চেয়ে আবেদন করে রেখেছেন।তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর পক্ষে এখন পর্য্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয় নি।
২০০৬ সালে ডঃ ইউনুস নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর নোবেল পুরস্কারের অর্থের ওপর যাতে করারোপ না করা হয় সেজন্যে নানামুখী তৎপরতা চালান।২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ডঃ এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলামকে নোবেল কমিটির পক্ষ হতে এক চিঠিতে ডঃ ইউনুস ও তাঁর গ্রামীণ ব্যংকের পাওয়া নোবেল পুরস্কারের অথ করমুক্ত রাখার জন্যে অনুধ জানানো হয় যদিও চিঠিতে বলা হয়ছিল, যুক্ত্ররাষ্ট্রেও নোবেল পুরস্কারের অর্থ করমুক্ত নয়।নোবেল কমিটির পর ডঃ ইউনুসও নোবেল পুরস্কারের অর্থ করারোপ না করার জন্যে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ডঃ এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের কাছে আবেদন করেন এবং নোবেল পুরস্কারের অর্থ করমুক্ত করতে সক্ষম হন।
নিয়মনীতি মানেন না ডঃ ইউনুসঃগ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকার কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নিয়মনীতি মানেন না ডঃ ইউনুস। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমাল অনুযায়ী এমডি পদের চাকুরীর সর্বোচ্চ বয়স ৬৫ হলেও তিনি সমস্ত নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ৭৫ বছর বয়স পার করেও গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ আকঁড়ে ধরো আছেন এবং এমডি পদটি সার্বক্ষনিক হলেও তিনি বছরের অধিকাংশ সময়ই দেশের বাইরে কাটান ফলে গ্রামীন ব্যাংকের আভ্যন্তরীন কোন সিদ্ধান্তও ঝুলে থাকে দীর্ঘদিন।গত বছর এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালিখি হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাঁকে এমডি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিলেও তিনি তা গ্রাহ্যের মধ্যে আনেন নি।বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর তাঁকে ডেকেও পান না---এমন অভিযোগও তাঁর বি্রুদ্ধে রয়েছে।
উপসংহারঃঅর্থনীতি কিংবা দারিদ্র্যের ইতিহাসে ডঃ মুহম্মদ ইউনুস চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তাঁর অভিনব আবিষ্কারের জন্যে।পশ্চিমা বাঘা বাঘা ডক্টরেট ডিগ্রধারীরা যা পারেন নি আমাদের ডঃ মুহম্মদ ইউনুস তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে,শুধু টাকাওয়ালা ধনী কিংবা মধ্যবিত্ত্ব শ্রেণীই নয় হত-দরিদ্রেরও কিভাবে শোষণ করা যায় তাদের ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে ফেলে, তাদের ভোগ-লালসা সৃষ্টি করে কিভাবে ২৬% থেকে ৩১% শোষণ করা যায়। তাঁর শোষণের অভিনব ফর্মুলা প্রায় ৩৫ বছর ধরে চলমান। আর কতকাল টিকে থাকবে তা ভবিতব্যই বলতে পারে?
সর্বশেষঃমুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কোটি কোটি ডলার সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ নরওয়ে সরকার যাচাই করছে বলে বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে।( এ লেখার সময়কালঃ০৩.১২.১০ সন্ধ্যা ০৬.০০ মিঃ)।
http://www.bangladeshnews24x7.com/editorial-page/comments/331-2010-12-03-13-24-16.html

বৃহস্পতিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১০

নিয়তিবাদী

চৈতী খররোদে পোড়া মাঠে উদাস তাকিয়ে থাকা কৃষকের অক্ষম আক্রোশ আর
সর্বগ্রাসী ক্ষুধা অগ্নশিখার মতোন জ্বলে ওঠা বুকে--কৃষক আজন্ম স্নেহে তবু ছুটে
যায় খরতাপে ফাটা বন্ধ্যা কিংবা বানভাসী জমিতে-- কেননা শুধু কৃষকই জানে
কিভাবে কঠিন মাটিতে বীজ বুনতে হয়,আগাছা নিড়ানী দিতে হয়, কখন সার বা
পানি দিতে হয়।মাটি বড় জেদী,অভিমানী সুন্দরী বধূর মতোন।সময় মতোন সার
বা পানি না পেলে অভিমানে গুমড়ে কাঁদে। কাল পরিক্রমায় আবার আসে খরা,বন্যা,
গোর্কি,সিডর।পরিশ্রমী কৃষক হয়ে যায় অদৃষ্ট,নিয়তিবাদী।

লোনা সমুদ্রের বুকে মোষের দুধের সরের মতোন টলটলে চর জাগে--
কিশোরী য্যামোন দিনে দিনে লাউডগার মতোন বেড়ে ওঠে।চরের পরিধিও
তেমনই বাড়তে থাকে। পলিমাটিতে চর কঠিন হয়--নূতন জাগা চর অবহেলে
পড়ে থাকে--দিনের পর দিন(ততদিনে ভূমিখেকো দস্যু দখল পাকাপোক্ত করতে
প্রতীক সম্বলিত পতাকা পুঁতে রেখে গিয়েছে)।পরিযায়ী পাখিদের কল্যাণে ক্রমে
দু'এক গাছি ঘাস থেকে গোটা চর ঘাসে ছেয়ে যায়--সবুজ ঘাসের বন।

নূতন জাগা চরে দখলবাজ জোতদার অনুগত প্রকৃতির মতোনই উদ্যাম,দুঃসাহসী,
নিঃস্ব, গরীব চাষীরাই গাছপালা,ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রহীন চরে ভাগ্যবিধাতা কেন্দ্রিক
সমাজ ও জনপদের শেকড় ছড়িয়ে দ্যায়।

০২.১২.১০
পল্লবী,ঢাকা।

রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১০

স্বতন্ত্র ধারার চতুর্দশপদী-৫

উচ্ছেদের হরতালে ডোবে রাজপথ,পোড়ে গাড়ী
হিমবাহ চেপে বসে ক্ষমতাসীন ও হীনতার
স্থায়ী গোপণ বৈঠকে সত্য বিতাড়িত হয়ে যায়
সিডরে বিলীন হয় জনপদ চোখের পলকে
কামাসাক্ত লালসায় প্রতারিত নির্বাক কিশোরী
উদাস তাকিয়ে দ্যাখে : প্রজাপতি ডানার সঞ্চার
সম্পদের মালিকানা চলে যায় অসুষমতায়।

মানুষ নদীর কাছে নেয় চলমান জীবনের
পাঠ,সমুদ্রের কাছে শেখে গভীরতা,উদারতা
শিক্ষা দ্যায় নীলাকাশ;আদিমতা শেখে ঘূর্ণিঝড়ে
দৃপ্তপদে জীবন এগিয়ে যায় জীবনের দিকে
চিরকাল য্যামোন গিয়েছে;শেখে সবুজ বনের
পেলবতা,মৌল পাঠশালা পৃথ্বী দিগন্তবিস্তৃতা
সয় পাষাণ কালের চিহ্ন,প্রেম ঝরে ঝরে পড়ে।


২৮.১১.১০
পল্লবী,ঢাকা।

বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১০

চতুর্দশপদী,অন্যরকম

( হাসানআল আব্দুল্লাহ শ্রদ্ধাষ্পদেষু )

নিস্তব্ধ শবের পাশে থেকে মৃত্যুবোধে নয়,গাঢ়--
জীবনবোধে আচ্ছন্ন,বিমর্ষ থেকেছি গোটা দিন
ভালোবাসা পাবার পরই মনে হয়েছে বিরহ
কত সুখের মানবী!জোস্নার কাফন মোড়া রাতে--
মনে হয় বর্ষণমুখর রাতের মতোন দৃঢ়
আসক্তি কিছুতে নেই।যুদ্ধ অপব্যয়ী,অর্থহীন--
উপদ্বীপে অবিরত বয়ে যায় যুদ্ধের আবহ!



সন্দেহের তীব্র বিষে নীলাভ উত্তরাধুনিকতা
বিবর্তিত হয়ে যায় শিল্পকলা-কবিতা,মননে--
মানব-স্বভাবে রয়ে যায় প্রাগৈতিহাসিকতার
জ্বীন,মূল্য বাড়ে নান্দনিক গোলাপের,পৃথিবীতে!
ব্যর্থতায় অন্ধকারে মুখ লুকায় মানবিকতা
সুষম সমাজ সাম্য মৈত্রী রচিত কবির স্বপ্নে
ভার নিতে অপারগ হয় কদর্য,নিঃস্বতার।

২৫.১১.১০
পল্লবী,ঢাকা।

বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১০

অন্যরকম চতুর্দশপদী

মৃত্যুও জন্মের মতোনই আনন্দময়, বোঝেনা--
মানুষ অবুঝ তাই ছুটে ছুটে যায় ক্লান্তিহীন
জীবনের দিকে;গতি,শক্তিহীনতাই মৃত্যু,স্থিরঃ
স্থিরতার কি ক্ষমতা বহমান জীবন থামিয়ে
দ্যায়,বাস্তব তাড়না কি মেটায় অজানা,অচেনা
স্বর্গ?নরকের লেলিহান আগুনে সমস্ত দিন
জ্বলেও কি ছারখার হয় সীমাহীন পাপাচার?

মূঢ় পশুর মতোন তাকিয়ে দেখেছি :সভ্যতার
গর্ভে ধাবমান নান্দনিক প্রেম জীবন উল্লাস
ভেসে যায় ঘুর্ণিঝড়ে,প্রেমহীন যৌনাচারে লিপ্ত
মত্ত দাম্পত্য যুগল!শতাব্দীর জঞ্জাল এড়িয়ে
চলে স্রোত,সময়ের। পাষাণ অমানবিকতার
লীন হয় ইতিহাসে,প্রিয় মানবীর তপ্ত শ্বাস
বুকে নিয়ে মানব নূতন মন্ত্রে আজ উজ্জীবিত।

২৪.১১.১০
পল্লবী,ঢাকা।

মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১০

শিরোনামহীন

চৈতালী খরায় পোড়ে মাঠ,কাঁদে শিশু অনাহারে
একটানা ডেকে যায় পেঁচা, গাছের শুকনো ডালে
ডেকে যায় কাক;ক্ষুধা ও তৃষ্ণার তীব্র যাতনায়
জর্জরিত স্ফীত উদরের আত্মজার কংকাল
কাধে স্তনহীনা নারী ফুটপাথেই এলিয়ে পড়ে
পথচারীরা ভূলুন্ঠিতাকে এড়িয়ে এগিয়ে চলে
নিষ্প্রাণ মাতাকে শিশু ধরে জাপটে,নির্ভাবনায়।

সময়ের চোরাস্রোত এসে খেয়ে গ্যাছে জমি,ভিটে
হালের বলদ,-আশা,যৌবন-লাবণ্য,প্রেম-স্বপ্ন--
দিয়ে গ্যাছে দরিদ্রতা,ক্ষুধা আর গ্লানির জীবন,
হতাশার  দীর্ঘশ্বাস :দগ্ধীভূত শিল্প-সমকাল
লীন হয়ে যায় মহাকালে,পড়ে থাকে অবশিষ্টে-
ধূলায় লুটায় শিশু,ভূলুন্ঠিতা শেষ ঘুমে মগ্ন
পত্রিকায় মৃত্যুর খবর আসে 'শিরোনামহীন।'


২৩.১১.১০
পল্লবী,ঢাকা।

সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০১০

'স্বতন্ত্র সনেট' পড়ার পর



পড়ন্ত বিকেলে আরক্তিম গোধূলীতে বলেছিলে--
এক জীবনের কতটুকু ভালোবাসা দিতে পারো
সমকাল থেকে নৈঃশব্দ পেরিয়ে এসে নিসর্গের
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বল্লাম: নিও অযুত নিযুত;
সহস্র-কোটিও নয় মহাকালে অসামান্য দিলে--
ডজমানো ভালোবাসা পেয়ে তৃষ্ণা মিটেছে কি কারো;
রসালো ঠোঁটের বৃষ্টি অকৃত্রিম খোলা আবেগের


উত্তরাধুনিক দস্যু লুটে নেয় জৈবনিক প্রেম
ইতিহাসের মহাসড়কে পিষ্ট হয় মানবতা
বিলের শাপলা কুমারীর ঋতু-রক্তের মতোন
জ্বলে, উড়ন্ত ঈগল, চিল হানে অব্যর্থ, নিখুঁত।
আধুনিকতার শিক্ষা দেয় তবু অসভ্য হারেম
মানুষ, জল্লাদ পাঠ দেয় অস্রাব্য মানবিকতা
মানবী, সঞ্চিত--আজীবন--ভালোবাসা কি এ্যামোন!

২২.১১.১০
পল্লবী,ঢাকা।

শনিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১০

কবিতা

পড়ন্ত বিকেলের রক্তিম গোধূলিতে দু'হাতে আমার
হাত চেঁপে ধরে গভীর আবেগে বলেছিলে,
কাকে তুমি বেশী ভালবাস,
কবিতা না আমাকে ?

সূর্যাস্ত থেকে চোখ ফিরিয়ে
তোমার স্বচ্ছ গভীর দৃষ্টি উপেক্ষা কোরে-
গাঢ়স্বরে বলেছিলাম,'কবিতা'
অস্ফুষ্ট আর্তনাদে কেঁপে উঠলে তুমি
হাত সরিয়ে ত্রস্তা হরিণীর ক্ষিপ্রতায়
বিকেলটাতে একরাশ বিষন্নতা ছড়িয়ে চলে গেলেঃ
দু'হাত বাড়িয়ে তোমাকে ফেরাতে গিয়েও অব্যক্ত
এক অভিমানে থেমে গেলাম।

তারপরঃ
বিকেলগুলো হয়ে এলো বিবর্ণ,ম্রিয়মান
সন্ধ্যাগুলো ধূসর,রাতগুলো কালো, নিকষ অন্ধকার
আর সকালগুলো হতাশার কুয়াশায় মোড়ানো।

কখনো বোঝনি যে তুমিই ছিলে আমার 'কবিতা' ।


২১.১১.১০
পল্লবী,ঢাকা।
http://www.notundesh.com/Archive/12-01-10/shahitta_news9.html

বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১০

'কবি ও কবিতা' বিষয়ক একটি বানানো (অ)কবিতা

কবিতার জন্যে প্রয়োজন নিরন্তর,নিরবিচ্ছিন্ন সাধনা
জীবনও বাজি ধরে কেউ কেউ খ্যাতির দুর্নিবার আকাঙখায়
জীবিকার্জন বা জীবিকাহীনতায়ও অকালে ঝরে যায় কেউ কেউ
দেশান্তরী কিংবা নির্বাসনেও যেতে হয় কখনো কখনো
দান্তেকে ছেড়ে আসতে হয়েছিল জন্মভূমি ফ্ল্যোরেন্স
রাতের আধাঁরে দাউদ হায়দারকে ছাড়তে হয় প্রিয় বাংলাদেশ

কেউ কেউ আছেন যারা কবিতা লেখেন মজ্জাগত স্বভাব হিসেবে
কেউ কেউ আছেন যারা কবিতা লেখেন লিখতে হয় বলে
অপার জীবন আর দিগন্তবিস্তারী নিবিড় প্রকৃতিই কবির পাঠশালা
জড়প্রকৃতির মধ্যেই কেউ কেউ খুঁজে পান জীবন্ত,সর্বব্যাপী সত্ত্বা
কারো কাছে প্রকৃতি প্রেমই ধর্ম
কেউ কেউ কবিতার পাঠ নেন জাগতিক দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটন
অপমান-লাঞ্জনা এ্যামোনকি অসফলতা কিংবা কেউ কেউ চষে বেড়ান
পূরান,ইতিহাস,নৃতত্ত্ব,দর্শন, সঙ্গীত শিল্পক্ললার বিস্তীর্ণাঞ্চল

কবির কোনো সান্তনা,আশা,আশ্বাস কিংবা মুক্তি নেই
সমকালের হুল্লোড় থেকে দূরেই কবিতার সিদ্ধি,আত্মস্ততাই সন্ন্যাস
মেঘদূতের স্বপ্ন কবির কাছের ব্যর্থ,শকুন্তলার স্বর্গ অর্থহীন
প্রচার নয় সৃষ্টিতেই আনন্দ,বিরহ তার কাছে নরক,প্রশান্তিতেই মৃত্যু।

সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১০

২২শে অক্টোবর

( ত্রিশাখ জলদাশকে )

সমস্ত সবুজ পাতা অগ্রহায়ণের বিষন্নতায় ম্লান হয়ে আছে
ইতঃস্তত ঘুরে বেড়ায় ইঁদূর আর ব্যাঙ হতশ্রী ধান কাটা মাঠে--
নীলাভ জ্যোৎস্নায় ম্লান হয়ে আসে পৃথিবী;
কুয়াশারা ভেঙ্গে পড়ে খান খান হয় অন্ধকারের আকন্দ ধুন্দুল
জোনাকীতে ভরে যায় মৃত নক্ষত্রেরা অন্ধকারে কাদার মত
থক থকে জ্বলে। সমুদ্র তার সমস্ত সফেদ ফেনাগুলো গভীর
থেকে আরো দূর গভীরে নিয়ে যায়। কোনো ঘাই হরিণী
মিলনোম্মোত্ত উন্নম্মতায় পূরুষ হরিণকে ডাকবে না,
কোন কীট আজ বিষাক্ত দাঁতে ফুটন্ত গোলাপকে ছোঁবে না
বুঁনোহাস আজ সারাদিন জলকেলী করেনি- রাঙা পৃথিবীর সব
ঘুঘু হিজলের বনে মৌনভাবে বসেছিল যেমন  চিল ডানায় রৌদ্রের
গন্ধ মেখে অশ্বত্থের জানালার ফাঁকে তাকিয়েছিল ধানসিড়ির দিকে।

আজ শুধু মানুষই যাবে মানুষের বিপক্ষে আর
বুনো শুয়োরগুলো আদিম উল্লাসে মেতে উঠবে ।

১৫.১১.১০
পল্লবী,ঢাকা।

শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১০

বাংলা কবিতাঃআধুনিকতার সুচনা-২

এখন বাংলা কবিতার আধুনিকতার সুচনালগ্নে 'আধুনিক কবিতা' কি এ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন। বাংলা কবিতার পুরোহিত বুদ্ধদেব বসু'র মতে 'আধুনিক কবিতায় নগর কেন্দ্রিক যান্ত্রিক সভ্যতার ছোঁওয়া থাকবে,থাকবে বর্তমান জীবনের ক্লান্তি ও নৈরাশ্যবোধ,দেখা যাবে আত্মবিরোধ ও অনিকেত (Rootless) মনোভাব এবং রবীন্দ্র ঐতিহ্যের (রোমান্টিকতা) বিরুদ্ধে সচেতন বিদ্রোহ ও নতুন পথের সন্ধানের প্রয়াস।' মার্কসিষ্টরা এর সাথে যোগ করলেন সাম্যবাদী চিন্তাধারার প্রভাবে নতুন সমাজ সৃষ্টির আশার কথা থাকবে কাব্যের মধ্যে এবং বাকরীতি ও কাব্যরীতির সচেতন মিশ্রন ঘটবে কাব্যে।গদ্যের ভাষা,প্রবাদ,চলতি শব্দ,গ্রাম্যশব্দ ও বিদেশী শব্দের ব্যবহারে গদ্য,পদ্য ও কথ্যভাষার ব্যবধান বিলোপের প্রচেষ্টা অবশ্যই থাকবে কবিতায়।আবু সায়ীদ আইয়ুবের মতে,'কালের দিক থেকে আধুনিক কবিতা প্রথম মহাযুদ্ধ পরবর্তী,ভাবের দিক থেকে মুক্তির প্রয়াসী....।' 'আধুনিক কবিতা হল বিদ্রোহের,প্রতিবাদের,সংশয়ের,ক্লান্তির,সন্ধানের আবার এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে বিস্ময়ের জাগরণ,জীবনের আনন্দ,বিশ্ববিধানে আস্থাবান চিত্তবৃত্তি। আশা আর নৈরাশ্য,অন্তর্মুখিতা বা বহির্মুখিতা,সামাজিক জীবনের সংগ্রাম আর আত্মিক জীবনের তৃষ্ণা,এই সবগুলো ধারাই খুঁজে পাওয়া যাবে ভিন্ন ভিন্ন কবিতাতেই নয়,কখনো হয়তো বিভিন্ন সময়ে একই কবির রচনায়।''

এ কথা কারুরই অস্বীকার করার উপায় নেই যে,আধুনিক বাংলা কবিতা উদ্ভূত হয় রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর রোমান্টিসিজম কবিতা বর্জনের ঐকান্তিক প্রয়াস থেকে।প্রত্যেক কবিরই সহজাত বৈশিষ্ট্য হলঃ পূর্ববর্তী ও সম-সাময়িক কবিদের থেকে 'স্বাতন্ত্র্যবোধ'।এ স্বাতন্ত্রবোধটাই কবিকে অন্যদের কাছ থেকে দূরে সরে আসতে কিংবা বিদ্রোহ করতে বাধ্য করে।স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর স্বাতন্ত্রবোধে সচেষ্ট থেকে,স্বীয় কবিসত্ত্বা বিনির্মাণের প্রত্যয় থেকে বিদ্রোহ করেছিলেন মধুসূদন সাম্রাজ্যে।তিনি কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন মেঘনাদবধ কাব্যের,বর্জন করেছিলেন হেমচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়,নবীনচন্দ্র সেনের কৈশোরিক পাঠের। নবীনযুগের কবিরাও সচেতনভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে,রবীন্দ্র প্রভাব বলয়ের মাঝখানে তারা বিকশিত হতে পারবেন না । তাই তারা সরাসরি রবীন্দ্রনাথকে আক্রমন করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে লিপ্ত হলেন।আধুনিক যুগের প্রবর্তক কবিরা তাদের রোমান্টিকতা বিরোধী দৃষ্টি সরাসরি রবীন্দ্রনাথের দিকে নিক্ষেপ করে রবীন্দ্রপ্রভাব বলয়ের বাইরে এসে পূর্বে অনাস্বাদিত এক নব কাব্যধারার। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ তখন একচ্ছত্রাধিপত্যে বাংলা ভাষাকে শাষণ করে চলেছেন।রবীন্দ্র প্রভাব বলয়ের বাইরে এসে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা সেসব তরুণ কবিদের স্বাভাবিক কিন্তু সহজ ছিল না।বুদ্ধদেব বসু রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নূতন কবিতার নান্দীপাঠ করেছিলেন ১৯২৫ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'মর্মবাণী'তে;যদিও তা ছিল রবীন্দ্রঘেঁষা। আর এ সমস্ত তরুণ কবিদের মতামত প্রকাশ করতে লাগলো দীনেশরঞ্জন  দাশ সম্পাদিত'কল্লোল',মুরলীধর বসু,শৈলজানানন্দ মুখোপাধ্যায়,প্রেমেন্দ্র মিত্র সম্পাদিত'কালিকলম',বুদ্ধদেব বসু,অজিতকুমার দত্ত সম্পাদিত 'প্রগতি' প্রভৃতি পত্রিকা।মূলতঃ কল্লোল পত্রিকা প্রকাশিত হবার পর পরই শুরু হল নবধারার আধুনিক বাংলা কবিতা রচনা প্রবাহের ধারা আর এঁদের সাথে যুক্ত হলেন অজিত দত্ত,অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত,সঞ্জয় ভট্টাচার্য্য প্রমুখ কবিরা।রবীন্দ্রনাথ লিখলেন,'হাট ত্রিসীমানায় নেই বটে,কিন্তু হট্টগোল যথেষ্ট আছে।আধুনিক সাহিত্যে ঐটেই বাহাদুরী...'। ঠিক তখন অমিয় চক্রবর্তী প্রবন্ধ লিখে কঠোর সমালোচনা করলেন কবিতায় ব্যবহৃত ছিনু,গেনু,হিয়া ইত্যাদি শব্দ ব্যবহারের।রবীন্দ্রনাথ সরাসরি আধুনিক কবিদের 'ভাঙন ধরা,রাবিশ জমা,ধুলো-ওড়া যুগের কবি বলে চিহ্নিত করলেন। 'সাহিত্যের স্বরুপ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন,'শ্রী নেই,তাতে পরিমিতি নেই,তাতে রুপ নেই,আছে প্রচুর বাক্যের পিন্ড।এটা দানবিক ওজনের সাহিত্য,মানবিক ওজনের নয়।' আর এদিকে আধুনিক কবিরা আরো সঙ্ঘবদ্ধ ;কবিতার পয়ার,অতিকাব্যিক শব্দ ব্যবহার পরিত্যাগ করেন।সেই সময়,অমিয় চক্রবর্তী লিখলেনঃ তালিকা প্রস্তুত/কী কী কেড়ে নিতে পারবে না/কুয়োর ঠান্ডা জল,গানের কান,বইয়ের দৃষ্টি/গ্রীষ্মের দুপুরের বৃষ্টি।

শেষ পর্য্যন্ত কালের দাবী মেনে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মুক্তকছন্দ নামে 'পুনশ্চ'তে আনলেন গদ্যছন্দ;যেখানে তিনি তাঁর অতি প্রিয় তবে,সনে,মোর কাব্যধর্মী শব্দগুলো ব্যবহার করেন নি।সুধীন্দ্রনাথ দত্ত 'ছন্দোমুক্তি ও রবীন্দ্রনাথ'নামে প্রবন্ধ লিখে রবীন্দ্রনাথের প্রশংসা করে আধুনিক কবিদের সাবধান করে দিলেন,'তপস্যা কঠিন রবীন্দ্রনাথের পক্ষে যেটা মোক্ষ,আমাদের ক্ষেত্রে তা হয়তো সর্বনাশের পথ।' বুদ্ধদেব বসুও 'নতুন পাতা' নামে 'পুনশ্চ' গ্রন্থের প্রশংসা করে প্রবন্ধ লিখলেন।

কিন্তু তিরিশ দশকের এসব তরুণ কবি রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে একটু স্নেহ ও তাঁর কাছ থেকে সমর্থন পাবার লোভে ব্যাকুল থাকতেন।একদিকে তরূণ বিদ্রোহী এ সকল কবিগণের রবীন্দ্রনাথের প্রভাব বলয় থেকে দূরে থাকার চেষ্টা,অন্যদিকে কবিগুরুর স্নেহাশীষ লাভের আকাঙ্খার কারণেই অনেকের লেখায় রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে স্ব-বিরোধীতা প্রকাশ পেয়েছে।সম্ভবতঃ তারা রবীন্দ্রনাথের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়েই রবীন্দ্রনাথকে অতিক্রম করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তারা সে কথা পরিষ্কার করে উল্লেখ করেন নি।তরূণ এ সবকবি তাদের প্রকাশিত বই রবীন্দ্রনাথকে পাঠিয়ে সাগ্রহে তাঁর মতামতের জন্যে অপেক্ষা করতেন।রবীন্দ্রনাথ তাদের নিরাশ করতেন না।সেজন্যেই রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আধুনিক কবিদের কারো কারো উক্তি কখনো কখনো পরস্পর বিরোধী মনে হয়ঃবুদ্ধদেব বসু 'প্রগতি'র ১৩৩৫,বৈশখ সংখ্যায় অভিনব গুপ্ত ছদ্মনামে লিখলেন,'....রবীন্দ্রনাথের দিন এক রকম ফুরাইয়া আসিতেছে,একথা আমি কোন খানেই বলি নাই।আমি শুধু লিখিয়াছিলাম যে আধুনিক সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব ক্রমশঃ সরিয়া যাইতেছে।'সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'তন্বী' (১৯৩০) রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেন।উৎসর্গপত্রটি ছিল এরকম---
"উৎসর্গ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকরের শ্রীচরণে
অর্ঘ্য
ঋণ শোধের জন্য নয় ঋণ পরিশোধের জন্য।" এছাড়াও সুধীন্দ্রনাথ দত্ত 'তন্বী'র ভূমিকায় লিখেছেন-'.....কবিতাগুলোর উপর স্বদেশী-বিদেশী অনেক কবিই ছায়াপাত করেছেন-সব সময়ে গ্রন্থকারী সম্মতিক্রমে নয়।কেবল রবীন্দ্রনাথের ঋণ সর্বত্রই জ্ঞানকৃত।' আবার ১৯৩৫ সালে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'অর্কেষ্ট্রা'তে রবীন্দ্রাসক্তি আর খুঁজে পাওয়া যায় না কিন্তু তখনো তিনি রবীন্দ্রনাথকে অদ্বিতীয় মনে করতেন।রবীন্দ্রমনস্কতা সত্ত্বেও তিনি লিখলেন,'যুগধর্মে দীক্ষা গ্রহন তার (আধুনিক কবির) অবশ্য কর্তব্য।এ কথা না মেনে তার উপায় নেই যে প্রত্যেক সৎকবির রচনাই তার দেশ ও কালের মুকুর এবং রবীন্দ্রসাহিত্যে যে দেশ ও কালের প্রতিবিম্ব পড়ে,তাদের সঙ্গে আজকালকার পরিচয় এত অল্প যে উভয়ের যোগফলকে যদি পরীর রাজ্য বলা যায় তা হলে বিস্ময় প্রকাশ অনুচিত।'
কিংবা
দেশ,সাহিত্য সংখ্যা,১৯৭৫ এর এক নিবন্ধে জানা যায়,'কবি জীবনের প্রারম্ভ থেকে জীবনানন্দ দাশের যোগাযোগ ছিল রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে।কারন ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন রবীন্দ্রভক্ত। আধুনিক কবিদের মধ্যে সবচেয়ে স্বয়ম্প্রভ ও শক্তিমান কবি হয়েও তিনি অল্পবিস্তর রবীন্দ্রছায়ায় বিবর্ধিত হয়েছেন।জীবনান্দ জানতেন রবীন্দ্রনাথকে বর্জন করে কোনো সাহিত্যকৃত এদেশে চলবে না।তাই পিতৃপ্রতিম কবিগুরুকে বই পাঠিয়ে তিনি সাগ্রহে প্রতীক্ষা করেছেন তাঁর মতামতের জন্য,তাঁর  স্নেহাশিসের জন্য।'


সহায়ক গ্রন্থঃ
১.হাজার বছরের বাংলা কবিতাঃমাসুদুল হক
২.আধুনিক কবিতার মানচিত্রঃজীবেন্দ্র সিংহ রায়
৩.কল্লোলের কালঃজীবেন্দ্র সিংহ রায়

(ক্রমশঃ)
http://www.bangladeshnews24x7.com/literatare/ghotonaprobaho/214-2010-12-01-20-10-16.html

রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১০

বৈরী কাল

রবিউল ইসলাম মানিক

মহাকালের দাবানলে দাউ দাউ পুঁড়ছে হৃদয়
সমকালের পিঠে সওয়ার উত্তরাধুনিক দস্যু লুটে নেয় জৈবনিক প্রেম
সভ্যতার গলিত লাশের গন্ধে  নাক চাঁপে বিপন্ন মানবতা
ইতিহাসের মহাসড়ক  ছেড়ে আলপথে নেমে যায় বাস্তবতা
ডাক্তারের সুনিপুণ সার্জারিতে খসে পড়ে অপাপবিদ্ধা কিশোরীর ভ্রুণ
সাম্রাজ্যবাদী বটের ডালে শ্যেণদৃষ্টিতে শিকার খোঁজে চতুর ঈগল
ডাষ্টবিন ভাগাভাগি করে নেয় মানুষ আর কুকুর
স্বপ্নহীন ভাবালুতায় মানুষ ছুটে চলে নিরুদ্দিষ্ট সাগরেরে বালুকাবেলায়

বৈরী এ কালে বাগানের ফুটন্ত গোলাপ বড়োবেশী নিষ্প্রভ, ম্রিয়মান
নিঃশব্দে তাকিয়ে দেখি প্রেমিকার ম্লান,বিষন্ন হাসি
সৌম্যমুখ প্রাগৈতিহাসিক বুড়োরা  নিজেকে গুটিয়ে নেয় শামুকের সন্তর্পণতায়
একাকী রমণে ক্লান্ত যুবক স্বস্তির পরশ খুঁজে পায় গণিকার সন্ধানে

নষ্টদের কাছথেকে দূরে থাকা নিরন্তর নবায়নযোগ্য নান্দনিক কবি
নিদ্রাহীন লালচোখে প্রেমিকার জন্য লিখে যায় একের পর এক
কষ্টের কবিতা।

০৫.১১.১০
পল্লবী,ঢাকা।




বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১০

বাংলা কবিতাঃআধুনিকতার সুচনা-১

'আধুনিক কবিতা এক আন্তর্জাতিক'প্রপঞ্চ;যা আধুনিক বা আধুনিকতাবাদ নামে অভিহিত। এর জন্ম পাশ্চাত্যে এবং কালের প্রভাবে তা ক্রমে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।আধুনিক শব্দটি এসেছে অধুনা শব্দ থেকে;যার আভিধানিক অর্থ সম্প্রতি বা আজকাল।সে সূত্রে আধুনিক শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় সাম্প্রতিক বা আজকালকার।সুতরাং আধুনিক কথাটির কালগত তাৎপর্য্য রয়েছে।রবীন্দ্রনাথের ভাষায়,'পাঁজি মিলিয়ে মডার্নের সীমানা নির্ণয় করবে কে?এটা কালের কথা ততটা নয় যতটা ভাবের কথা।'-('আধুনিক কাব্য',সাহিত্যের পথেঃরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। অর্থাৎ সময়কে তিনি গৌণের কোঠায় ফেলে দিয়েছেন। কিন্তু জীবেন্দ্র সিংহ রায় রবীন্দ্রনাথের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বলেছেন,'আধুনিক শব্দের ব্যুৎপত্তির দিকে লক্ষ্য রাখলে তাঁর বক্তব্য মেনে নেওয়া যায় না।কেননা আধুনিকতা কখনও সাম্প্রতিকতাকে বাদ দিয়ে আসতে পারে না। কালের বর্তমান পদচিহ্ন অনুসরণ করেই তার যাওয়া আসা।'-('আধুনিকতা,আধুনিক কবিতার মানচিত্রঃজীবেন্দ্র সিংহ রায়)।আধুনিকতা একটি আপেক্ষিক ধারণা।আধুনিকতা শব্দটি বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়,কোন পাঠকগোষ্ঠীর সাধারণ রুচি ও শিল্পের মান ও প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ততার।

রবীন্দ্রনাথ,মাইকেল মধুসূদন দত্ত কিংবা ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তাঁদের সময়ে নিশ্চয়ই অনাধুনিক ছিলেন না।শিল্পকর্ম তা কোন চিত্রকর্ম বা কবিতাই তা বিশেষকালের ক্ষেত্রে আধুনিক হতে পারে,সর্বকালেই নয়। রবীন্দ্রনাথ যেমন ১৩০০ সনে কল্পণা করেছিলেন,'আজি হতে শতবর্ষ পরে/কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি/কৌতুহল ভরে,/আজি হতে শতবর্ষ পরে!'রবীন্দ্রনাথের কবিতা আজও আমদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়,তা কি আধুনিক বলে? না-কি কালজয়ী বলে?কালিদাস,শেকসপিয়ার,টলষ্টয় এমন কত ঔপন্যাসিক,নাট্যকার-কবি আছেন যাঁদের সৃষ্টি প্রত্যেক যুগের পাঠককে নিত্য-নূতনভাবে টানে।সে তো তাঁদের সৃষ্টি শাশ্বতভাবে আধুনিকবলে নয়-কালজয়ী বলে। শাশ্বতভাবে 'আধুনিক' ও 'কালজয়ী' সমার্থবাচক নয়।তাই আধুনিকতা প্রসঙ্গে 'শাশ্বতভাবে আধুনিক' কথাটির তাৎপর্য্য নেই।-('আধুনিকতা,আধুনিক কবিতার মানচিত্রঃজীবেন্দ্র সিংহ রায়)

প্রত্যেক দশক বা কালে এক বা একাধিক গুণী কবি,চিন্তাবিদ,দার্শনিক,শিল্পী জন্মে থাকেন।এঁরা তাঁদের সময়ের থেকে অগ্রগামী এবং স্ব স্ব সমাজে সম-সাময়িক রুচি ও শিল্পের মান পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন।এ সকল মনীষী সমাজ ও রাষ্ট্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যাবতীয় সনাতন রীতি-নীতি,কূপমন্ডুকতা,অনগ্রসরতা ও পশ্চাৎমুখীনঅতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে কালে কালে,দশকে দশকে মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে টেনে নিয়ে গেছেন।এঁরা সমকালকে সাথে নিয়ে মহাকালের প্রান্তর চষে বেড়ান কিংবা মহাকালের নিক্তিতে সমকালকে পরিমাপ করেন।।এঁদের হাতে পূর্বকালের মণীষীদের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শন পরিমার্জিত,সংশোধিত কিংবা কখনো কখনো পরিত্যাজ্যা হয়ে আসছে।যিনি যতবেশী শক্তিমান,তিনি ততবেশী পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকেন।পৃথিবী সৃষ্টির যুগ থেকেই সবার অলক্ষ্যে কিংবা কখনো কখনো বিস্ময়কর,বিপর্য্যস্তভাবে এটা ঘটে চলেছে।

১৮৮০ সনে বোদলেয়ার,ম্যালার্মের আবির্ভাব কালকে আধুনিকতার সুচনাকাল ধরা হয়।এ সময় কতকগুলো বৈজ্ঞানিক হাইপোথিসিস কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মতবাদের কারণে মানুষ ঈশ্বরবিমুখ হয়ে পড়েন,সমালোচনা শুরু করেন চার্চের একচ্ছাত্রাধিপত্যবাদ ও বুর্জোয়া সমাজের। এ সময় বিদগ্ধজনেরা সমাজের নৈরাশ্যচেতনা ও অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।তাঁরা একেবারে গোড়া থেকেই ছিলেন বিদ্রোহী।সমাজ ও দেশের পূরানো মতবাদ,ঈশ্বরবিশ্বাস ও চার্চের একচ্ছাত্রাধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তাঁদের চিন্তা,চেতনা ও লেখায় ঈর্ষণীয় সাফল্য ফুটে ওঠে,ফুটে ওঠে নান্দনিক শিল্পকলায়।১৯১০ থেকে ১৯২৫ সনকে ধরা হয় আধুনিকতাবাদের শ্রেষ্ঠ সময়। এ সময় পাশ্চাত্য দগ্ধীভুত হয় অপব্যয়ী প্রথম মহাযুদ্ধে, মানুষ মেতে ওঠে রক্তপাতে,যুদ্ধের পর হতাশা ও অবিশ্বাস থেকে জন্ম নেয় বিশ শতকের শিল্পকলা,কবিতা ;যার মধ্যে থাকে আধুনিকতাবাদ। এককথায় বিংশ শতাব্দীর মানুষের শ্রেষ্ঠ অর্জন কবিতায় আধুনিকতাবাদ।বলা যেতে পারে পাশ্চাত্যে প্রত্যেক শতকেই শিল্পকলার জগতে পরিবর্তন ঘটে গেছে নীরবে,অলক্ষ্যে,পরিবর্তন হয়েছে মন,মনন ও সংবেদনশীলতার কিন্তু তা কোনো সমাজ ও সামাজিক মূল্যবোধের ভিত নাড়িয়ে দেয় নি। কিন্তু আধুনিক কবিতা সমস্ত ভীরুতা ও নৈরাশ্যবাদকে জড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলে বিপর্য্যয়রুপে আত্ম-প্রকাশ করেছে।১৯১৮ সনে হপকিন্সের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'The Poems of Gerard Manley Hopkins' প্রকাশের পর ইংরেজ কবিতার পাঠকেরা আধুনিক কবিতার বিচিত্র স্বাদ পেলেন।পূর্বেই বলেছি,প্রথম মহাযুদ্ধের পরে জন্ম নেয় নূতন এক শিল্পকলার;যার ফলে সনাতন ও রক্ষণশীল সমাজের ভাবধারায় আমূল পরিবর্তন ঘটার ফলে ইংরেজি সাহিত্যেও এর প্রভাব পড়ে।আমেরিকান সাহিত্যও পিছিয়ে থাকে না। এ সময় ১৯১৫ সনে 'Some Imagist Poets' শীর্ষক সংকলনে Imagist দলভূক্ত কবিদের কবিতা প্রকাশিত হয় ফলে বৃটেন ও আমেরিকায় কবিতা এক নূতন মাত্রা পায়।এই নূতন মাত্রার সাথে যুক্ত হয় যখন টি,এস,এলিয়টের প্রধান প্রভাবসম্পাতী কাব্যগ্রন্থ'The Waste Land' বা পোড়ামাটি প্রকাশিত হয়;যেখানে তিনি প্রচলিত কবিতার রীতি ভেঙ্গে নিয়ে আসেন অভিনবত্ব।তারপর থেকে এটি বিবেচিত হয়ে এসেছে আধুনিক নগরজীবনের ভাষ্য হিসেবে। ঐ কবিতায় পোড়োমাটির যে উদ্ভাস তাঁর হৃদয়ে মরুময় কণ্টকময় হয়ে উঠেছিল তা শুধু ইংরেজি কবিতাই নয়, তা ছিল বিশ্বের নানা দেশের কবিতা ও ভূগোল। ঠিক একই সময়ে বাংলা কবিতায়ও সনাতন রীতি-নীতি ও পশ্চাদ্মুখীনতা আকড়ে না থেকে সমকালের দাবী মেনে নিয়ে বিবর্তিত হতে থাকে। ''তিরিশের দশকের বাঙালি কবিরা এলিয়টের প্রত্যক্ষ প্রভাবে কবিতা রচনা শুরু করেন। এলিয়টের অনুকরণে কলকাতা নগরীকে তাঁরা ভাবতে শুরু করেন ভিড়াক্রান্ত লন্ডন নগরীর অশুভ পাপময়তা-পচনশীলতার এতদ্দেশীয় প্রতিরূপ হিসেবে। (এলিয়টের লন্ডন নিজেই ছিল আধুনিকবাদের আদিগুরু বোদলেয়ারের প্যারিসের প্রতিরূপ।) তারপর থেকে দীর্ঘ দিন বাঙালি কবির কাছে আকাশ মানেই ছিল বিধ্বস্ত নীলিমা, বাতাস মানেই অসুস্থ বিকারগ্রস্ত পঙ্গু মানুষের ঘামের গন্ধে বিষাক্ত, বিষন্ন। জীবনানন্দের রাত্রি কবিতায় দেখি “হাইড্র্যান্ট খুলে দিয়ে কুষ্ঠরোগী চেটে নেয় জল/... থামে ঠেস দিয়ে লোল নিগ্রো হাসে/নগরীর মহৎ রাত্রিকে তার মনে হয় লিবিয়ার জঙ্গলের মতো।”-- এরকম বর্ণনা এলিয়টভাবিত ও প্রভাবিত।...''(খোন্দকার আশরাফ হোসেন : ইঙ্গ-মার্কিন কবিতায় আধুনিকবাদ)।আধুনিক বাংলা কবিতার পথিকৃৎ মূলতঃ জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু,সুধীন্দ্রনাথ দত্ত,অমিয় চক্রবর্তী ও বিষ্ণু দে;যারা পঞ্চপান্ডব নামে খ্যাত।এঁদের হাতেই ইউরোপীয় আধুনিকতার আদলে আধুনিক বাংলা কবিতার গোড়াপত্তন হয়।বাংলায় আধুনিকতার গোড়াপত্তন হয় ১৯২৫ সনে;যা ইউরোপীয় আধুনিক কবিতার সমবয়সী।
(ক্রমশঃ)
http://www.bangladeshnews24x7.com/literatare/81-ghotonaprobaho/135-2010-11-30-14-45-48.html?tmpl=component&print=1&layout=default&page

মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১০

'কবিতা' ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

রবিউল ইসলাম মানিক

'কবিতা' সাহিত্যের আদি ও প্রাচীনতম শাখা ।সকল ভাষারই প্রাচীন নিদর্শন হল 'কবিতা'।যিনি কবিতা লেখেন,তিনিই কবি।কিন্তু কবিতা?কবিতার অবয়ব কিংবা কবিতা কি?কবিতার প্রকৃত অর্থ কিংবা সংজ্ঞা কি? কবিতার ব্যাপকতার জন্যে আজ পর্য্যন্ত একে সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায় নি।একেকজন একেকভাবে কবিতাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন।তাদের সংজ্ঞা ও দর্শন যেমন যুক্তিযু্মানভাবে আবেগপূর্ন,তেমনি নান্দনিকতায় ভরপুর। জীবনানন্দের কাছে কবিতা ছিল অনেকরকম।বুদ্ধদেব বসু মনে করতেন,' কবিতা সম্বন্ধে 'বোঝা' কথাটাই অপ্রসঙ্গিক। কবিতা আমরা বুঝিনা, কবিতা আমরা অনুভব করি।'শামসুর রাহমানের মতে,'কবিতা আসলে বোধের ব্যাপার। একে সংজ্ঞা দিয়ে বোঝানো মুশকিল।'কবিতা বোঝার জিনিস নয়, অনুভবের, উপলব্ধির জিনিস'বলেছেন হুমায়ুন আজাদ। আবু হাসান শাহরিয়ারের মতে,'একেকজন কবির কাছে কবিতার অর্থ একেকরকম। তাই এ প্রশ্নের কোনও সরল একরৈখিক উত্তর নেই।'বোদলেয়ার কবিতাকেই কবিতার শেষকথা বলে মনে করতেন।রবার্ট ফ্রস্ট'র কাছে কবিতা হল পারফরমেন্স ইন ওয়ার্ডস।কোলরিজের কাছে 'গদ্য মানে সর্বোৎকৃষ্টভাবে সাজানো আর পদ্য হল সর্বোৎকৃষ্ট শব্দ সর্বোৎকৃষ্টভাবে সাজানো।'কীটস মনে করতেন,'কবিতা মুগ্ধ করবে তার সুক্ষ্ম অপরিমেয়তায়,একটি ঝংকারে নয়।পাঠকের মনে হবে এ যেন তারই সর্বোত্তম চিন্তা যা ক্রমশঃ ভেসে উঠছে তার স্মৃতিতে।'এলিয়ট জানতেন,'কবিতা রচনা হলো রক্তকে কালিতে রুপান্তর করার যন্ত্রণা।'মহান দার্শনিক এরিষ্টটলের কাছে কবিতা ছিল দর্শনের চেয়ে বেশী,ইতিহাসের চেয়ে বড়।' এয়ার্ডসওয়ার্থ বলতেন,'কবিতা সমস্ত জ্ঞানের শ্বাস-প্রশ্বাস আর সুক্ষ্ম আত্মা।'

এতো গেলো বোদ্ধা কবিদের অভিমত কিন্তু আমরা যারা কবিতার সাধারণ পাঠক!তাদের কাছে কবিতার স্বরুপ কিংবা অবয়ব কেমন? আমি বিশ্বাস করি কবিতা বোঝার বিষয় নয়,এটাকে অনুভবে আয়ত্বে নিতে হয়।আমার মতে কোন কবিই পূর্ব-নির্ধারীত পট-ভূমিকায় লেখেন না।স্থান-কাল,পরিবেশ কিংবা কবির হৃদয়াবেগ,অনুভূতি কবিতাকে শেষ পর্য্যন্ত কোথায় নিয়ে যাবে তা কবিতার স্রষ্টা কবি তা জানেন না।কেননা বেদনার্ত হৃদয়ই কবিতার জন্মভূমি কিংবা কবিতা কবিরই জীবনের প্রতিফলন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যে ঘাত-প্রতিঘাত কবি তা নিজ হৃদয়ে ধারণ করে বা সহজ ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় ব্যক্তি বা সামাজিক জীবনের চিরকালীন হাসি-কান্না,আনন্দ-বেদনা,প্রেম-বিরহ,সামাজিক উৎসব,অনাচারই কবির কবিতার উপজীব্য বা পটভূমি।কবির কবিতার এ পটভূমি কোন নির্দিষ্ট গন্ডীতে আবদ্ধ থাকে না। এ পটভূমি কখনো কখনো ব্যক্তি কিংবা সামাজিক জীবনের গন্ডি পেরিয়ে যায়;পেরিয়ে যায় দেশ-মহাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে সমকাল-মহাকাল...ইতঃপূর্বে যা কখনো ছিল না বা নেই এমন কল্পরাজ্যও কবিতার পটভূমি__এভাবেই কবিতা হয়ে ওঠে সার্বজনীন।

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শাদা চোখে যা দেখি কবিরা তা থেকেই জীবনের মৌল পাঠ গ্রহন করে থাকেন।অবারিত দিগন্তহীন প্রকৃতি কিংবা প্রাত্যাহিক জীবনের সুখ-দুঃখ কিংবা অপমান-লাঞ্জনা থেকেও দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার্য্য শব্দাবলী ঘষে-মেজে তৈরী করেন কবিতার অবয়ব এরপর ছন্দ,কাব্যিক উপমা ও উৎপ্রেক্ষার শাব্দিক অলংকারে বিনির্মাণ করেন একটি কবিতা;যাতে থাকে কথা,বিচার ও তাৎপর্য্যের সমন্বয়।আমরা সাধারণেরা অভিধানের শব্দাবলী জীবনের প্রয়োজনে নিছক ব্যবহার করি কিন্তু কবির ব্যবহৃত আভিধানিক শব্দাবলী কবিতা প্রেমিকার মতো অঙ্গে ধারণ করে;এখানেই কবির স্বার্থকতা। আমরা দেখি হাইড্র্যান্ট উপচে ওঠা জল চেটে নেয় কুষ্ঠরোগী কিন্তু কবি দেখে,"হাইড্র্যান্ট খুলে দিয়ে কুষ্ঠরোগী চেটে নেয় জল;/অথবা সে-হাইড্র্যান্ট হয়তো বা গিয়েছিল ফেঁসে/(রাত্রিঃজীবনানন্দ দাশ)''কবিতায় ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দই একেকটি চিত্রকর্ম। উপমা,উৎপ্রেক্ষা, ভাবনা বা কবির বোধ,মননে,চৈতন্যে মুগ্ধতার আবেশ ও প্রকাশভঙ্গির কারণে কবিতা হয়ে ওঠে পরিপূর্ণ ও জীবন্ত। কবির বিমূর্ত ভাবনায় কবিতা কখনো কখনো নিছক প্রেমের কোমল অনুভূতি,বিরিহের বেদনা বিধুর কান্না,কখনো কখনো শোকাহত হৃদয়ের আর্তনাদ,কখনো কখনো বা অধিকার বঞ্চিত শোষিত-নিপীড়িত মানুষের মুখপাত্র,কখনো কখনো বা স্বাধীনতা মন্ত্রে উজ্জীবিত সশস্ত্র সৈনিক,কখনো কখনো বা সমকাল-মহাকালের প্রতিভূ হয়ে এসেছে কবিতা___এভাবেই কবিতা হয়ে ওঠে শাশ্বত।
কবিতা একটি স্বতস্ফুর্ত প্রণোদনা ;যা নিরন্তর সাধনার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়।'নিরন্তর প্রস্ততিই তাকে অবচতনে ভাবায়। বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার,নিজের সঙ্গে অন্যের, বর্তমানের সঙ্গে অবর্তমানের, সমকালের সঙ্গে মহাকালের  নিরন্তর মিশ্রণ ঘটে চলেছে কবি সত্তার অবচেতনে।মিশ্রণ যত বেশী নিরবিচ্ছিন্ন।কবিতাও তত বেশী মহার্ঘ্য।'...(কবিতার বীজতলাঃআবু হাসান শাহরিয়ার)।ভাব প্রকাশের  সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম হল 'কবিতা'। কেননা কবিতা এমন এক রচনা ;যা নান্দনিক ও শৈল্পিকতায় ভরপুর।কবিতার মাধ্যমেই একটি জাতির বুদ্ধিভিত্তিক স্ফুরন ও  মননশীলতার নিখুত চিত্র অংকন করা সম্ভব। কবিতা ছাড়া বুদ্ধিভিত্তিক স্ফুরন ও  মননশীলতার চিত্র অন্য কোন মাধ্যমে তা অপূর্নাঙ্গই থেকে যায়।কবিতার গতি অজেয়।কবিতার নিজস্ব একটি উচ্ছাস রয়েছে,রয়েছে স্রোত;যা দিয়ে কবিতা এগিয়ে যায় নিজস্ব নিয়মে পূরাতন এবং জীর্ন রীতি-নীতি পেছনে ফেলে।কবিতার এ স্রোত এমন অজেয় যা কখনো স্তব্ধ হবে না। জীবন স্তব্ধ হবে,কবিতা কখনোই নয়।চলার পথে কখনো কখনো  বাঁক নেয় কবিতা যা রবীন্দ্রনাথের ভাষায় 'আধুনিকতা'( যদি কখনও সুযোগ ঘটে তবে 'আধুনিকতাবাদ' নিয়ে পরে আলোচনা করবো)।কবিতা স্বাধীন,দূর্বিনীত ও স্বেচ্ছাচারী।কবিতা আভিধানিক শব্দ ও ব্যকরণিক শৃংখল থেকে মুক্ত।


স্বাধীন,দূর্বিনীত ও স্বেচ্ছাচারীতার কারণে কবিতা সর্বদাই আধুনিকতা ও ধর্মীয় ও রাজন্যবর্গের শাষণ-শোষণ ও অন্যায়ের প্রতিবাদে মুখর। আর তাই কবিতাকে প্লেটো থেকে শুরু করে প্রতিক্রিয়াশীল মোল্লা-পুরুত,যাজক ও রাজ রোষাণলে পড়তে হয়েছে বারংবার।কখনো কখনো রাজানুকল্য ও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীভূক্ত কবিও কবিতার বপক্ষে চলে যান।কিন্তু কবিতার ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই কবিতা কখনো অনাধুনিকতা কিংবা প্রতিক্রিশীলতাকে আকঁড়ে ধরে নি,বরাবরই তাকে পরিত্যাগ করেছে।প্রতিক্রিয়াশীল কবি আল মাহমুদের মতে,'প্রতিক্রিয়াশীলতাও কবিতা হতে পারে।'কিন্তু না,  কবিতার ইতিহাসে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে,পাঠকেরা প্রতিক্রিশীল কবিতা সব সময়েই বর্জন করে এসেছে।মানুষের ভেতরের শুভ আকাঙ্ক্ষা কখনোই প্রতিক্রিয়াশীলতাকে মানুষের জন্যে শুভ ও মঙ্গলজনক মনে করেন নি।প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর সমর্থক কবিরা সব সময়েই কালের বিচারে অপাংতেয় থেকে গেছে,কবি খ্যাতির পাশাপাশি তারা পাঠক কতৃক ধিকৃতও হয়ে এসেছেন।

বিচিত্র এ পৃথিবীতে মানুষ বিভক্ত নানান বর্ণ ও জাতিতে,বিভক্ত নানান গোষ্ঠীতে,বিভক্ত নানান ভাষা ও উপ-ভাষায়।কিন্তু সব জাতির,সব গোষ্ঠীর সব ভাষাভাষী মানুষের মৌল অনুভূতির ভাষা এক এবং অভিন্ন। বিমূর্ত ও শাশ্বত এ অনুভূতির মূর্ত প্রকাশই কবিতা। কবিতার এ মানবিক আবেদন সর্বজন বিদিত ও স্বীকৃত। পল সিলানের মতে,'কবিতা মৌলিক কথা বলে,এতে নিকট ও দূর একাকার, একদিকে সে  অন্ধকার আবার তা দূরের উজ্জ্বলতাও।

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে আমাদের সুন্দর বাসযোগ্য এ পৃথিবী একদিন ধ্বংশ হয়ে যাবে। বিজ্ঞানীদের মতে সূর্য্যের জ্বালানীর উৎস হাইড্রোজেন নিঃশেষ হয়ে গেলে পৃথিবী নামক এ গ্রহ টা ধ্বংশ হয়ে যাবে (আমাদের ভীত হওয়ার কোন কারণ নেই,এটা ঘটবে আজ থেকে ৮০০কোটি বছর পর);ততদিন পর্য্যন্ত বেচে থাকবে মানুষ,বেচে থাকবে তার মনের সু-কোমল অনুভূতি, আবেগ, সংবেদনশীলতা। ততদিন পর্য্যন্ত থাকবে কবিতা।দৈনন্দিন বা প্রাত্যাহিক জীবনের নানা ঘটনার টান-পোড়নে আন্দোলিত হয়ে কবি স্বীয় হৃদয়ে তা ধারণ করে সেই অনুভূতির প্রতিওফলন ঘটাবেন কবিতায়। সংবেদনশীল মানুষ পড়বেন সে কবিতা।

সবশেষে প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশের একটি উদ্ধৃতি  দেয়ার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। '......কবিতার ভিতর আনন্দ পাওয়া যায়;জীবনের সমস্যা ঘোলা জলের মূষিকাঞ্জলীর ভিতর শালিখের মতো স্নান না ক'রে আসন্ন নদীর ভিতর বিকেলের শাদা রৌদ্রের মতো;-সৌন্দর্য্য ও নিরাকরণের স্বাদ পাওয়া যায়।(কবিতার কথা)



শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১০

একজন বংশীবাদক

রবিউল ই. মানিক
(শাকিলা তুবাকে)


চিকন,নিক্কর এক বাঁশীর সুরে খান খান হয়ে ভেঙ্গে পড়লো
মাঝ্রাতের সূচিভেদ্য অন্ধকার।ভীত-সন্ত্রস্ত নগরবাসীরা
জানালার শার্সি দিয়ে দেখতে পেলঃ রঙচঙা আলখাল্লা পড়া দীর্ঘ,
কৃষকায়  একলোক বিশালাকার এক বাঁশী বাজিয়ে চলছে।
ত্রস্তা জননী সভয়ে ঘুমন্ত শিশুকে বুকে আকড়েঁ ধরে।

জমাট বাধা চাপ চাপ অন্ধকারের মধ্যে  বহুতল একটি ভবন থেকে
ছিটকে বেড়িয়ে এলো মোটা চর্বিওয়ালা থলথলে নাদুস-নুদুস এক পৌঢ়
হাফাঁতে হাফাঁতে বংশীবাদককে অনুসরণ করতে লাগলো;য্যানো
বংশীবাদককে অনুসরণ করা ছাড়া জীবনের আর কোন সারসত্য নেই।
ফ্লোরসেন্টের ভূতুরে-আবছায়া আলোয় নগরবাসীরা দেখলো,'এ তো সেই
লোক, যে কি না '৭১ এর মানবতা বাদী অপরাধে অভিযুক্ত।

বংশীবাদক মুনী-ঋষির নির্লিপ্ততায় বাজিয়ে চলছে তার বাঁশী।

পথ চলতে থাকা বংশীবাদককে ড্রেসিং গাউনের ফিতা বাধতে বাধতে
আরেকটি বহুতল ভবন থেকে আরেককজন অনুসরণ করতে লাগলো
প্রথমজনের মতোনঃনাগরিকেরা একে সনাক্ত করলেন রাজনৈতিক এ নেতা
দূর্নীতির অভিযোগে সদ্য জামিনে মুক্ত।বংশীবাদক রাজপথে অবিরাম বাঁশী
বাজানোর সাথে এগুতে থাকে। বাঁশী বাজানো কিংবা অন্তহীন পথ চলাতে
তার কোন ক্লান্তি নেই।অপার্থিব এ বাঁশীর সুরে বদ্ধ ফটক খুলে একে একে
বেড়িয়ে আসতে থাকে অগুনিত মানুষ।কেউ আসছে স্ত্রীকে ঠেলে ফেলে,
কেউ আসছে বুকে ঘুমন্ত শিশুকে সরিয়ে রেখে,কেউ আসছে মধ্যরাতের
সঙ্গম অসমাপ্ত রেখে,কেউ আসছে পরকীয়া প্রেমের নিষিদ্ধ আনন্দকে পায়ে ঠেলে,
কেউ আসছে মদিরার বোতল সরিয়ে রেখে।

কয়েক'শ মানবতাবাদী অপরাধী নয়তো ক্ষমতাসীন কিংবা ক্ষমতাহীন অসৎ
রাজনীতিকের মিছিল নিয়ে বংশীবাদক নগরীর আরেকপ্রান্তের ভরাবর্ষা,
স্ফীত নদীর তীরে থেমে দাড়াঁয়,তার ঝোলা থেকে মোষের শিঙ্গের মতোন
বাঁকানো কুচকুচে কালো এক বাঁশী বের করে তাতে ফু দ্যায়ঃ মোলায়েম
আবেশী এক সুরের মূর্ছনায় ভরে যায় সারা প্রান্তর।বাঁশীর এ সুর কানে
যাওয়া মাত্র বংশীবাদককে অনুসরণ করে আসা জনতা হুড়োহুড়ি করে ভরা
নদীতে এ ওকে ঠেলে সরিয়ে ধাক্কিয়ে একে একে লাফিয়ে পড়তে লাগলো।

ঢেউ এর টানে তারা সরে যেতে লাগলো দূর থেকে দূরে।

(আমার কবিতা দীর্ঘশ্বাসে শাকিলার কমেন্টের জবাবে লিখেছিলাম....শুধু স্বপ্ন দেখে যাই একজন বংশীবাদকের,যে কি না তার বাঁশীর সুরে সমস্ত মৌলবাদী রাজাকার,অসৎ রাজনীতিককে টেনে অতল গহ্বরে ফেলে দেবে। আর এ থেকেই এ অকবিতাটি লেখার অপপ্রায়াস অর্থাৎ কবিতাটি লেখার পেছনে শাকিলা পরোক্ষে অনুপ্রেরণাদায়িনী। আমি সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মতোন বিশ্বাস করি,'দশটা কবিতা বা পদ্য লিখলে একটা কবিতা হবে,দশটা কবিতা লিখলে একটা ভালো কবিতা হবে,দশটা ভালো কবিতা লিখতে পারলে একটি স্মরণীয় কবিতা হবে,দশটি স্মরণীয় কবিতা লিখতে পারলে একট মহৎ কবিতা হবে অর্থাৎ চন্দন গাছের জন্যে বিশাল অরণ্য তৈরি করতে হবে অর্থাৎ লিখতে হবে।)











দীর্ঘশ্বাস

রবিউল ইসলাম মানিক
(শরীফ এ.কাফী শ্রদ্ধাষ্পদেষু )

অন্তর্নিহিত জ্বালা-যন্ত্রণায় পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাই
অক্ষম ক্রোধ ও আক্রোশে আকড়েঁ ধরি নিজেরই মাথার চুল
তবে কি দিনে দিনে ক্রমশঃ নপুংষক,নির্জীব হয়ে যাচ্ছি;
আয়নার সামনে দাড়িঁয়ে পচিঁশোত্তর যুবক নিজেকেই প্রশ্ন করে?

এ কেমোন কাল এলো?
ভূলুন্ঠিত সভ্যতার লাশের ওপর পিশাচের অট্টহাসি
বিপন্ন মানবিকতা,ধর্ষিতা মাতৃভূমির ওপর রাজাকারের
আস্ফালন,পুড়ঁছে ট্রেন অবলীলায়,'রক্ত চাই','রক্ত চাই',
বলে ডাকিনী-যোগিনীর সুতীক্ষ্ম চিৎকারে সদ্য প্রসুতি জননী
বুকের মাঝে আকড়েঁ ধরে তার শিশুসন্তানকে।

বিলে ফোটে না আর আশার নীলপদ্ম,কিশোরীর প্রথম ঋতুর রক্তমাখা
লাল শাড়ীর ন্যায় গোলাপ দুষ্প্রাপ্য।ম্রিয়মান,ফ্যাকাশে জ্যোৎস্নায়
অনাহারী,ভীত মানুষ ফিসফিসিয়ে কথা বলে য্যানো বড়লোক প্রতিবেশীর
ঘুম না ভাঙ্গে।

হেলে,নুইয়ে পঁড়া কৃষাণীর লকলকিয়ে বেড়ে ওঠে লাউডগায়,
পৌষের হিমেল বাতাসে কান পাতলেই শোনা যায় আসাদের আর্তনাদ,
নূর হোসেনের দীর্ঘশ্বাস।

১৫.১০.১০
পল্লবী,ঢাকা।


বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১০

অকবি

কবিতার এ বন্ধ্যাকালে
ছন্দের একচ্ছত্রহীনতায় কবি ও অকবির ব্যবধান নির্ণয় কি খুব কঠিন?
য্যামোন বাস্তবের সাথে কল্পনার,চিত্রকল্পের সাথে প্রতীকি ব্যঞ্জনার,
ইতিহাসের সাথে পুরাণের এবং সমকালের সাথে মহাকালের।

উৎকৃষ্ট,উর্বরা ভূমিগুলো ক্রমশঃ বে-দখল হয়ে যাচ্ছে অকবিদের হাতে
ধর্ম,রাষ্ট্র,রাজনীতি,পশ্চাৎপদ সামাজিকতা সম্পর্কে চিতায় তোলা শবের
মতোন শীতল,অনুভূতিহীন অকবির প্রশংসায় পঞ্চমুখ রাষ্ট্র ও প্রচারযন্ত্রঃ
জোটে পদক,খেতাব।বামন সম্পাদকের স্তুতিতে সময় বয়ে যায়
প্রচারপটু অকবির;কবিতা পড়ে থাকে অবহেলে।নিজস্বতা ও
ভাব-প্রতিভাহীন অকবির হাতে প্রতিনিয়ত ধর্ষিতা হচ্ছে 'কবিতা'।

অন্ধকার আর কূপমন্ডুকতা থেকে মানুষকে বারংবার আলোর দিকে
টেনে নিয়ে গ্যাছে কবিরাই
নিরন্তর সাধনা ও স্বকীয়তায় ভাস্বর মহাকালিক একজন কবিই
কেবল পারেন কবিতার রাজ্যে এ দুর্যোগময়তা দূর করতে।

পল্লবী,মিরপুর।
১৩.১০.১০

রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১০

সোনালী রোদ

আশাহত,নিঃস্ব মানুষ বেচেঁ থাকে নুতন সূর্যোদয়ের প্রতীক্ষায়
বানভাসী কৃষক নব-উদ্যমে কাধেঁ তুলে নেয় লাঙ্গল
ব্যর্থ কবি পুরোনো পান্ডুলিপি ফেলে আবারো....
অশিতীপর বৃদ্ধও ঘোলাটে,ফ্যাকাশে চোখে স্বপ্ন দ্যাখে।


গোধুলির বিষন্নতায় কতোবার ফিরিয়েছ
কতোবার উপেক্ষা কোরেছ নতজানু প্রণয়
রক্তাক্ত,ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ে বিনির্মিত স্বপ্নময়
ভালোবাসার জগৎ কত সহস্রবার ধুলিস্মাৎ কোরেছ?
একনিষ্ঠ ভক্ত পূজারীর নৈবেদ্য কতবার মৃতের
নির্লিপ্ত শীতলতায় দু'পায়ে মাড়িয়ে চলে গ্যাছো?

তোমার প্রতিটা উপেক্ষাই আমাকে নূতন করে
ভালোবাসার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে,
দিয়েছে প্রেমিক পুরুষ হিশেবে স্বীকৃতি।
পাথরে প্রোথিত মানবী কতোটুকু নিষ্ঠুর হতে পারবে তুমি?

আমার ভালোবাসায় পাষাণ পাথরেও ফুল ফুটবে
মানবী,তোমার হাসিতে আকাশের মেঘ সরে ঝলমলিয়ে সোনালী রোদ উঠবে।

মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১০

অহংকার

অশুভ ও অকল্যাণের মাঝেও কবিরা মঙ্গলের আলোকবর্তিকা পৌছে দেন,
শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে কবিরাই সমস্বরে জ্বালাময়ী প্রতিবাদ জানাতে পারেন,
পারেন বিনা দ্বিধায় ছুড়ে ফেলতে লোভ,খ্যাতি ও রাজকীয় খেতাব
মৃত্যুর মুখোমুখি কবিরাই গেয়ে উঠতে পারেন জীবনের জয়গান

কবির দুর্বিনীত অহংকারের কাছে প্লেটো ছিলেন খুব অসহায়
কবির সীমাহীন কল্পনার জগতে তাঁর কল্পিত দার্শনিক রাষ্ট্রটি ছিল
নিতান্তই ক্ষুদ্র,অকিঞ্চিকরতাই ঈর্ষাবশতঃ  মহান এ দার্শনিক তাঁর 
রাষ্ট্র থেকে সমস্ত কবিকে ফুল-চন্দন দিয়ে নির্বাসনে দিয়েছিলেন

ঈশ্বর প্রাণ সৃষ্টি করেন আর ঈশ্বরের সমান অহংকারের অংশীদারিত্ব
নিয়েই কবিরা কবিতায় প্রাণ সঞ্চার করেন।কবিরা ঈশ্বর সমতুল্য!

'জীবনানন্দ'কে নিয়ে কিছু কথা ।

জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখলেন,"তোমার কবিতা চিত্ররুপময়;সেখানে তাকিয়ে দেখার আনন্দ আছে।"বুদ্ধদেব বসু লিখলেন,"ছবি আকঁতে তার অসাধারণ নিপুণতা,তার ছবিগুলো শুধু দৃশ্যের নয়,বিশেষভাবে গন্ধের ও স্পর্শের।"আব্দুল মান্নান সৈ্যদের মতে,"শুধু উত্তররৈখিক আধুনিক বাংলা কবিতার নয়__বৃহত্তর যে বাংলা কবিতার কাল (ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দী),সেই কালেরও একজন প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশ।"বাংলা কবিতার একটি সার্বভৌম অধ্যায়__ জীবনানন্দ দাশ।হাজার বছরের বাংলা কবিতাকে তিনি দিয়েছেন এক মহাকালিক ব্যঞ্জনা’__বলেচ্ছেন আবু হাসান শাহরিয়ার।


বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের পর জীবনানন্দ দাশকে নিয়েই লেখালিখি ও গবেষণার পরিমাণ সর্বাধিক।বাংলা কবিতার ইতিহাস জীবনানন্দ দাশ ছাড়া লেখা যাবে না।বাংলা কবিতায় জীবনানন্দ দাশ একটি মজবুত স্তম্ভ। জীবনানন্দ তাঁর কাব্য-সাহিত্যকে সাজিয়ছেন রোদ্দুরের দিকচিহ্নের মতোন।তাঁর অস্তিত্ব বাংলা কবিতায় দিগন্তরেখার মতোন সূচনা আছে,কিন্তু শেষ নেই। তাঁর কবিতায় ধীর,গভীরময়তা পাঠককে নিয়ে যায় অনেক দূরে ( হয়তোবা........আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরেঃবনলতা সেন)।তাঁর কবিতায় রেখে যাওয়া গভীর আবেগ বাংলা কবিতার ইতিহাসে বিরল।আবেগের তীব্র তীর আর হৃদয় খুঁড়ে জেগে ওঠা বেদনা প্রকাশের ভাব ও ভাষা বাংলা কবিতায় তুলনারহিত
(পৃথিবীর রাঙ্গা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে;
আবার তাহারে কেন ডেকে আনো?
কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!ঃহায় চিল............................................)।
কোনো এক গবেষক বলেছিলেন,’ জীবনানন্দ দাশ শুধু নির্জনতা আর ধূসরতার কবি নন,তিনি স্তিতধী সময়-সচেতন কবিপ্রাণ,তিমিরহন্তা আলোকরশ্মিমালা।‘


জীবনানন্দের কাছে কবিতা ছিলো অন্যরকম।শব্দ চয়ন ও ভাষার ব্যবহারে নির্বাক প্রকৃতি ও সবাক হয়ে উঠেছে তাঁর কবিতায়।তিনি বাংলা কবিতার অকর্ষিত ভূমি চাষ করে অনেক ফসল তুলে দিয়ে গ্যাছেন বাংলা কবিতার গোলায়।তাঁর কবিতায় অনেকবার স্থান পেয়েছে মশা,মাছি,ব্যাঙ,পেঁচা,ইদুর, শেয়াল ও ঘাসফড়িং; যা অন্য কবির কবিতায় বিরল।তিনি কীটের দুঃখো অনুভব করেছেন (...._কীটের বুকেতে যেই ব্যাথা জাগে আমি সে বেদনা পাই;নিখিল আমার ভাই),অনুভব করছেন যে নক্ষত্রেরা মরে গিয়েছে তার বুকের হিম (....যে-নক্ষত্র মরে যায়,তাহার বুকের শীত/লাগিতেছে আমার শরীরে,ঃনির্জন স্বাক্ষর)।তিনি বাংলা ভাষার একমাত্র কবি যিনি বাতাসের রঙ সবুজ (........ঘাসের উপর দিয়ে ভেসে যায় সবুজ বাতাসঃবিভিন্ন কোরাস),মধ্যরাতের রঙ নীল (রৌদ্র ঝিলমিল,/ঊষার আকাশ,মধ্যনিশীথের নীলঃনীলিমা) দেখেছেন।দেখেছেন রৌদ্রের অন্ধকার,পেয়েছেন শিশিরের ঘ্রাণ।


কবির জীবদ্দশায় তিনি সবচে’ নির্জন,অন্ধকারের নির্জন কবি হিশেবে অভিহিত হো’য়েছিলেন।অস্তিত্বের যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট,যান্ত্রিক-যন্ত্রণায় পিষ্ট,মৃতু যন্ত্রণায় আড়ষ্ট এবং মানসিক ও আত্মিক সংকটে জর্জরিত কবি জীবনানন্দ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ,পারিবারিক ও সামাজিক,রাষ্ট্রিক এমনকি বৈশ্বিক পরিমন্ডলের কোনো কিছুকেই তিনি অবলম্বন করতে পারেন নি। প্রেম-নারী-প্রকৃতি-ইতিহাস কিংবা যুগের জটিলতার ক্লেদাক্ত চিত্র আকঁতে গিয়ে সর্বত্রি তিনি নৈঃসঙ্গ ও মর্মবিদারী যন্ত্রণার কথা অকপটে ফুটিয়ে তুলেছেন।ব্যক্তিজীবনের সীমাহীন দুর্ভোগ ও যুগমানসের জটিলতায় তিনি মুষড়ে পড়েছিলেন,নিমজ্জিত হয়েছিলেন হতাশা,ক্লান্তি,নশ্য,বিছিন্নতা আর একাকীত্বের গভীরে। জীবনানন্দের কবিতায় ফুতে উঠেছে অনাশ্রয়ী পৃথিবীর কথা।বিনির্মাণ করেছেন নৈঃসঙ্গপীড়িত,বিপন্নতার,যন্ত্রণার কথা।


চির সবুজ কবি জীবনানন্দ দাশের কাব্য আমাদের এ পৃথিবীকে দিয়েছে অনন্য এক বিশিষ্টতা,যেমন বিশিষ্টতা তাঁর ইন্দ্রিয়াতুর রুপ,গন্ধ ও স্পর্শের সুক্ষ চেতনায়।তাঁর সমস্ত কাব্য যেমন ঘিরে রেখেছে প্রেমের তীব্র অনুভূতি অন্যদিকে পরিবর্ত্মান মহাকালে।তারঁ কাব্যের পটভূমি হাজার বছরের বাংলার গ্রাম থেকে শুরু করে আধুনিক শহর কিংবা কখনো সুদূর অতীতের পিরামিডের যুগ থেকে বর্তমানে প্রবাহিত।ইতিহাসাচ্ছন্ন গভীর হতাশাবোধ থেকে ওঠা প্রবল আশাবোধের এক অনুপম চেতনা।


জীবনানন্দ দাশ বাংলার মাটি,জল,মানষ ও প্রকৃতির কবি।মানুষ ডুব দেয় তাঁর অতিন্দ্রিয় উর্বর শতকের কবিতায়।তাঁর কবিতা আমাদের সমাজ,সভ্যতা ও চেতনাকে সমুন্নুত করে।তিনিই প্রথম আমাদের জীবন জটিলতাকে গভীর উপলব্ধিসহ কবিতায় প্রকাশ  করেন।তিনি হাজার বছর ধরে কবিতার রাজ্যে বিচরণ করে নিজস্ব সৌন্দর্য্যের মাঝে একক সৃজনশীলতায় ছিলেন শ্রেষ্ঠ কুশীলব।বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে যথাযথভাবে সম্মান দেখিয়ে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবির আসনটি জীবনানন্দ দাশকে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে।


সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১০

বিশ্ব রক্ষিতার জন্মদিনে উৎসর্গপত্রঃ

15th august is the darkest night....
একটি জাতির স্বপ্ন ভঙ্গের দিন ।

এক বেবুশ্য (লোকে যারে আদর করে বিশ্ব রক্ষিতা বলে);
পাকি বাবার ঐরশে ভারতে যার জান্ম,;
বাংলার আলো-হাওয়া মেখে যে বেড়ে উঠেছে।
তার স্বামী যখন রনাঙ্গনে ;মুক্তিযুদ্ধে।
তিনি তখন ইয়াহিয়ার সোনার ছেলেদের বুকের মাঝে
ঠিক যেমন কবুতর'র বাচচার মতন আদরের অম নেয়।
রনাঙ্গন থেকে মেজরদুত পাঠান
প্রিয়তমা স্ত্রী ও সন্তানকে কাছে নেয়ার__
পাকি অফিসার?নিরাপদ আশ্রয়,বিত্ত,বৈভবফেলে সে কোথায় যাবে?

'ছোঃ,তিন'শ টাকা বেতনের একজন মেজর স্বামী গেলে কি আসে-য়ায় ?

অতঃপর রক্ষিতার স্বপ্ন ভেঙ্গে দেশ স্বাধীন হয়।
স্বামী ফিরে আসে বিজয়ী,বীররুপে।
স্ত্রীকে অস্বীকার,গৃহচ্যুত করে ।
বুদ্ধিমতি রক্ষিতা দ্বারস্হ হয় মহান পিতার দরবারে,
ক্ষমাশীল পিতার আদেশ মানতে বাধ্য হনআমাদের মেজর ।
এক সামরিক অভ্যুথ্থানে আমাদের মেজর (মেজর তখন সাবেক জেনারেল,রাষ্ট্রের কর্ণধার)
নিহত হলে রক্ষিতার সৌভাগ্যের দ্বার উন্মোচিত হয় ;
রাতারাতি পেয়ে যান___
ক্যান্টনমেন্টে বাড়ী,গুলসানে প্রাসাদ,দলীয় প্রধানের পদ।
স্বামীর ভাঙ্গা স্যুটকেশ হতে একে একে বের হয় __
কোকো,ড্যান্ডি ডাইং,কোটি কোটি ডলার ।
হঠাৎ একদিন ম্যারেজ ,স্কুল সার্টিফিকেট নর্দমায় ছুড়ে দ্যানঃবলেন,
১৫'ই অগাষ্ট তার জ-ন-মো-দি-ন।

লজ্জা-ঘৃণা-ধিক্কারে জাতি মুখ ফিরিয়ে নেয় ।

রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১০

অপেক্ষাতুর

বর্তমানের কবিরা স্বেচ্ছা-নির্বাসনে চলে যাক_______
আমাদের নবীন কবিরা অকর্ষিত কবিতার জমি
প্রগতিশীলতার লাঙ্গলে চষে অসাম্প্রদায়িক ও সাম্যবাদের বীজ বুনবে;
সার হিশেবে দেবে মৃত কবিদের অস্থি ও মজ্জা।

 

রবীন্দ্রনাথের বর্ষা নবীন কবিদের যুথবদ্ধ খামারে
অঝোরধারায় ঝরে খামারকে সিক্ত ও সতেজ করবে।
গণতন্ত্রের সুবাতাসে ফসলের চারাগাছ আন্দোলিত হবে ;
কিশোরীর নরম পায়ের ঘুঙ্গুরের মতোন ।


ক্ষতিকর রাজাকার কীট-পতঙ্গের তাড়াঁতে শিকারী পাখি

মুক্তিযোদ্ধারা রাত জেগে ক্ষেত পাহারা দেবে।


আমরা সবাই যুথবদ্ধ খামারের ফসলের জন্যে অপেক্ষাতুর।


ঈশ্বরনামা

অলীক ঈশ্বরে কখনো বিশ্বাস ছিলো না
শেষ কবে হাটু গেড়ে ঈশ্বর বন্দনা কোরেছি;তা
নৃ-তাত্ত্বিকদের গবেষণার বিষয় হো'তে পারে
'অভিকর্ষ বলের' সূত্র না জানা এ আমিও যে
স্টিফেন হকিং এর মতোন বিশ্বাস করি,
...'অভিকর্ষ বলে'র কারণেই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি হোয়েছে।
বিশাল এ বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের বিকাশ ও ক্রম-বিকাশ স্বয়ংক্রিয়____
 

এর পেছনে ঈশ্বরের কোনো হাত নেই ।