Powered By Blogger

শুক্রবার, ৩১ মে, ২০১৩

কবিতার সরলতা

আশ্লেষময় এ পৃথিবীর সারল্যের  পাশাপাশি
কবিতার রুপালী শরীরে সামাজিক দুঃখবোধ  লেগে থাকে
কিছু কিছু ফুল ঝরে যায় পরিপক্ক হওয়ার আগে
অবিরাম বৃষ্টিপাতে ক্রমশঃ প্রকাশ হল---
অপমরণের আগে মানুষ নিশ্চয় জেনে যায় তার পূর্বজন্মের গোপণ ইতিহাস
এই যে কাঠুরে  এবং মালী---একজন ফুল ও ফলের গর্বোদ্ধত অধিকারী
আরেকজন শুধুই কাঠ পায়
কিংবা ধরো  শিকারী ও কৃষকের কথা

যে কৃষক বোঝে অগাধ মাটির কথা
নোনা শরীরের রক্তসেঁচে তুলে আনে
মুঠোভর্তি সাদা সাদা সোনা
রক্তস্নানে রক্তস্নানে সিক্ত শিকারী নিধনযজ্ঞের মহোৎসবে মাতে

আমি এসবের কিছুই বুঝি না
কবিতার সরলতা ছাড়া

জটিলতা

দিনরাতের এ পৃথিবীতে ঘুম আর বোঝাপড়ার ভেতর
আমাদের লৌকিক সামাজিকতা শেষ হয়ে এলো
এতোদিনে আমরা সবাই জেনে গেছি 'অর্কিড সহজ' ফুল
কিন্তু বাগানে,বাতাসে,ঘাসে তারও জটিলতার বাড় বাড়ন্ত শেকড়
শ্লেষাত্মক ভঙ্গিমায় ফুটে ওঠে শীতকালীন অবকাশের মধ্যে
কুয়াশামাখা সকালে দেখি একেকটা শিশির জড়ানো দূর্বাঘাস
অপূর্ব সম্ভাবনাকে দৃশয়কল্পে পরিণত করে
বুঝে নেই আমাদের ইন্দ্রিয়ের স্পর্শে রোদ আছে,বৃষ্টি আছে
পাশ কাটিয়ে যাবার কালে কেউ কাউকেই চিনি না অথচ
ধোঁয়াটে মেঘের মধ্য থেকে ছিঁড়ে আসা বিকেলের আলো
আবোদ্য ফাটলে শিরা-উপশিরা ব্যোপে বিন্যস্ত উৎসারণের মুখে

বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৩

জন্মগ্রন্থির টান

নিঃশেষে সিগারেটের পর সিগারেট জ্বলে
এ্যাশট্রে উপচে মেঝে-কার্পেটে-সিথানে
মারী ও মড়কে মৃত মাছের মতোন ভাসে
আকাঙ্খার অসহনীয় আক্ষেপ ঘিরে ফেলেলছে হৃদয়
তমসী রাতের ঘেরাটোপে বিষন্নতা বলিরেখা আঁকে দ্বিপ্রহর মুখ খুলে
কাউকে দেখাও যায় না তখন আর
কেউ বের হতেও পারে না

কতদিন হাঁটি নি  বিপুলা পৃথিবীর বুকে
কতদিন ছুঁয়ে  দেখি নি  নদীর জল
কতদিন শুনি নি সন্ধ্যার ইমনকল্যান
কতদিন প্রজাপতির ডানায় ভর দিয়ে উড়ে যাই নি কোথাও

অর্থহীন শব্দে ভরে আছে অর্ধেক আকাশ
আমি হাত নাড়ি আর উজ্জ্বলতর নক্ষত্রগুলো আরো দূরে সরে যায়
অথচ আলর স্ফুরণের মধ্য আমার আশ্রয় নেওয়ার কথা ছিল

পেছনে আশ্লেষ,ছায়া প্রশাখার জটিলতা
আমরা কি গৃহচ্যুত হব
গ্রহে গ্রহে যাযাবর যাপিত জীবন
জন্মগ্রন্থির বিষম টানে খোলা মাঠে পরে তাকব গাঁজলা ঠোটে,অচৈতন্য


বুধবার, ২৯ মে, ২০১৩

এই পরাভব আমি কোথায় রাখব

এই পরাভব আমি কোথায় রাখব

অধিকন্তু বর্ষা ঋতুতে আমরা ভেসে গেছিলাম
আলোর তরল জলে
জলীয় প্রণত পথে ছিল শিল্পের অন্বয়ে
প্রতীতি ও আত্মলীন প্রেম

নীল সন্ধ্যার সঙ্গীতে অজান্তেই ঝরে পড়েছিল
পাপ কলুষিত অবক্ষয় এবং
আমরা পৌঁছেছিলাম আতিথেয়তায় পরিপূর্ণ
ঋদ্ধ এক মালতীবিতানে

আষাঢ়ে মেঘের নীচে প্রবাহিত
ঢেউয়ের নীলাম্বরী উচ্ছ্বাসে উচ্ছ্বাসে আধোশ্বেত মাছ
বর্ষা মঙ্গলের সুর ঠেলে
নূতন যে নামে আমাকে ডেকেছো
তা ছড়িয়ে পড়েছে চতুর্দিকে
পাখির অগণ্য পালকের মতো

এখনো অনেক দীপাঞ্চল নামকরণের বাকী আছে
ট্রেনের শীতল কামরায় সহযাত্রীর নামও
ব্যক্তিগত বসন্ত খাতায় লিখে রাখতে চেয়েছিলাম
সভ্যতা ও বন্যতার পাশাপাশি
মানুষের অলিখিত ইতিহাসের পাতায়
অন্ধ ভিখারীও চেয়ে বসে তার নামে
একটা রাস্তার নামকরণের যথার্থতা

আজো বহু পায়ে চলা মেঠোপথ নামহীন পড়ে আছে
আমি চাই সেগুলোর  নামকরণ আমাদেরই নামে করা হোক

প্রার্থনার জাগতিক নিয়মেই
অপ্রাপনীয়ের বিস্ময়তা আমাদের ছুঁয়ে গিয়েছিল
ঐকান্তিক উষ্ণতার সম-সাময়িকে
আমাদের বিষন্নতা বোধ আধো অন্ধকার আগুনে সন্ধ্যায়
মিশে গিয়েছিল জলের গভীরতম স্তরে
দ্বাদশীর পূর্ণচাঁদ শব্দ ও স্রোতের উর্ধ্বে
আমাদের নৌকাটিকে টেনে নিয়েছিল
প্রকৃত স্বপ্নের রুপে
স্তব্দতাকে ভালোবেসে
রঙিন বেলুন নিয়ে খেলছিলাম পরোপকারী জলে

আমাদের পরস্পরকে সতর্ক করেছিল কাঁশবন

গূঢ় রহস্য আবিষ্কারের জন্যে যখনই তোমাকে বেষ্টন করলাম
'আমার চোখের দিকে চেয়ে থাকো
পৃথিবীতে এর চেয়ে সত্য আর কিছু নেই।'
বলে আমাকে ফিরিয়ে দিলে জলের সজল উপকূলে

সোমবার, ২৭ মে, ২০১৩

অন্ধ ভিখারী

তপশিলি গ্রামের ওপর দিয়ে ধূলোওড়া এই পথ নৈশ শহরে মিশেছে।
অবিমৃশ্য শহরের পথে পথে স্থবির গাড়ীর সারি
ট্র্যাফিক ছুটছে উদভ্রান্ত।
যুবতীর রক্তিম নখরে সন্ধ্যা থমকে দাঁড়...
আর একে এক খুলে যায় সব বন্ধ পানশালার দরোজা
আধভাঙা আলোয় টুইস্ট টুইস্ট টুইস্ট বলে
ভরন্ত গ্লাসেরা পরস্পর সম্ভাষণে মেতে ওঠে।

টলোমলো পায়ে শূণ্য গ্লাস ফেলে উঠে আসে গোপণ প্রণয়
ক্রিসমাস ভীড়ে উদ্দাম হারিয়ে যায়।

পিচের পথের পাশে অন্ধ ভিখারী নবাগতকে ডেকে বলে,
'এসো,এ শহর আজ ঘুরিয়ে দেখাই।'

শনিবার, ২৫ মে, ২০১৩

জ্বরতপ্ত কবিতা

আমার অব্যক্ত বেদনারা যখন বর্ণালী গান হয়ে
চারদিক অন্ধকার করে
আকাশে নদীতে
গূঢ়তমা জোয়ারের জলে ভেসে যেতে যেতে
বালির পাহাড়ে ভেঙে পড়ে

শুধু অটুট দাঁড়িয়ে থাকে তুঙ্গ ঢেউ

একতারা হাতে শীর্ণ বাউল কখন এসেছিল এ উপত্যকায়
আমরা কেউ ই তার নাম মনে রাখি নি অথচ
তার বিলাপের সুর সৈকতের বিরুদ্ধ বাতাসে ভেসে আসে
সম্ভাবনাহীন স্বপ্নে
পতনের অপেক্ষায় শব্দভূক কবি
ভূর্জপত্রে লিখে গিয়েছিল গোলাপের উপাখ্যান

ঝরে যাবার সময় হলে গোলাপ যৌবনপ্রাপ্ত হয়ে ফোটে

পূরবীরাগ,ভৈরবী রাগে প্রেম আর বিরহের কষ্টে
আমি শুধু দেখে গেছি দয়িতার লাস্যময়ী মুখ
কখনো দেখিনি দু'স্তনের ভাঁজে লেগে আছে বিষদাঁত
উরুসন্ধির সুড়ঙ্গে কাঁকড়া বিছের আনাগোনা

জ্বরতপ্ত কবিতায় কবিতায় তবু ভালোবাসার শেকলহীন স্বাধীনতা


শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৩

মৌলিক বিষাদ

সমর্পণ নিয়ে যেদিন প্রথম এসেছিলে,---
আমি কেঁপে উঠেছিলাম;শোণিতে ছিল আবাল্য জলের টান।
রক্তমাখা চোলির টুকরো উড়ে গিয়েছিল বালিয়াড়িময় ফেনায় ফেনায়।
পুরুষস্পর্শের গ্রহণের জলে গোপণ প্রণালী বেয়ে
আত্মার সমগ্রে মিশেছিল কামনার ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ।

আমাদের মৈথনিক প্রেম শেষ হয়ে গেলে
সৈকতের অজস্র বাতাসে দুঃখময় পৃষ্ঠাগুলো
গান হয়ে আকাশে-নদীতে মিশে যেতে যেতে
কামনাদলিত তোমার হাতের স্পর্শে কিংশুক-কুঁড়ির মতো ফুটেছিল।
গূঢ়তমা জোয়ার ফিরিয়ে দিয়েছিল তন্তুসার স্বপ্নমালা,
মৌলিক বিষাদ ছিন্ন পাতার মতোন ভেসে এসেছিল ঢেউয়ে ঢেউয়ে।
আনন্দ তখন দিগন্তরেখার সীমানা ছাড়িয়ে
দূরতম প্রদেশে অনির্দেশিত পথে পথে ঘুরছিল।

আর ডাঙায় প্রগাঢ় অন্ধকার মুছে ফেলেছিল জোনাকীময় প্রান্তর।

যৌন প্রহার

সূর্যাস্তের পথে ছিল দিগন্তের সফলতা
দুই পায়ে এত ক্লান্তি,তাই ভাসতে চেয়েছিলাম
নদীর পূরাণে।
জলের স্বভাবে ভেসে যায় রক্তমাখা চোলি,অশ্রু,কাম
সমগ্রতা সমর্পণ শেষে এলোচুলে কেন যে স্পষ্টতঃ কেঁদে ওঠ
কিশোরীর অবোধ সারল্যে ?

তবে অবসিত রাতের প্রহরে কেন ভেসে যাও সশব্দ যৌন প্রহারে?

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০১৩

স্বপ্নের নীলচে তাঁবু

যদি চলে যাও তবে
স্বপ্নের নীলচে তাঁবু খালি পড়ে থাক
আমি শীত সকালের মধ্যে রোঁয়াওঠা
সোয়েটারের ভেতর দিয়ে তাকিয়ে দেখব মেঘেদের ওড়াউড়ি
ফুসফুসের কুয়াশা যদি ঢেকে না দেয় তোমার ঘর
সব হারানোর ব্যথা নিয়ে
তমসী বৃক্ষের নীচে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকব
ঘৃণার ঈশান যতক্ষণে না জ্বালিয়ে দেয় এ হৃদয়

নির্জনতার সন্ত্রাস আচম্বিতে শূণ্যের ভেতর থেকে এসে
হামলে পড়ুক
তমসী বৃক্ষের ডালে বসে থাকা লেজ ঝোলা পাখির ডানায়

বুধবার, ২২ মে, ২০১৩

নীরবতা

নিরাশ্বাস বিকেলের বিষে
মরে যায় অনন্ত দুপুর
অবিমৃষ্য বালির পাহাড় ভেঙে ভেঙে
নেমে আসে সুনসান নীরবতা

ঝুরি নামানো সন্ধ্যাবেলায়
বুকের ভেতর ঢুকে পড়ে
প্রতিপথ বেয়ে নেমে আসা
তথাগত নীরবতা

কৈবল্য রাতের কথকতা গিলে নেয়
সমস্ত শব্দের হাহাকার
সুন্দরের অপরুপ আধার যেখানে এসে
মিশে গিয়েছে নীরবতার প্রান্তে

আমারও তো নির্জনতার অধিকার চাই কিন্তু
এতো বেশী গান,এতো বেশী ছন্দ
এতো এতো কবিতা কোথায় রাখি
বুকের প্রপাতে নীরবতা যদি ঝরে যায়

সোমবার, ২০ মে, ২০১৩

অন্তঃসলীলা

অন্তঃসলীলা নদীর মোহনায় সূর্য ডুবে যায় দ্রুত
বালিকা যেখানে বসে দেখে
নক্ষত্রবিহীন পশ্চিমাকাশের কোণ থেকে চাঁদ ওঠে
চাঁদ ওঠে আর নীল দিগন্তের ততদূর চলে যায় অপার্থিব সৌন্দর্য্য ও
যৌবনপ্রান্তিক খাঁজকাটা ধূসর পাথর থেকে
উৎসরিত উপনয়নের তুলো ওড়ে
আশ্রয়হীন গ্রীষ্মের ক্রোড়পত্র হাতে প্রোষিতভর্তৃকা
যৌনপ্রহারে যৌনপ্রহারে সূর্যস্তবে ক্রীড়াশীল

'ক্ষমা করো,ক্ষমা করো',অর্থাৎ আনন্দ
ও প্রসববেদনার অপরাধবোধ থেকে গর্ভবতী রমণীর মুক্তি দাও

সময়ের স্রোত

এই দেখো, আমি ফিরেছি শ্মশ্মাণ থেকে।

এক হাতে লোহা,অন্য হাতে আগুন ছুঁয়েছি।
পরিশুদ্ধ হতে আর কি লাগবে?

আমার ক্ষতজ্বালার দিকে দু'হাত বাড়িয়েছিলে
উঠে দাঁড়িয়েছিলাম  ঠিক কিন্তু
এক গ্রাম অন্ধকার মূখর হাসিতে ভরে দিল
ঝলকদেওয়া খোলা মাঠ।
তারাকণিকার ছায়ায় বুঝেছি ভালোবাসা কেন ম্লান,বস্তুত প্রান্তিক!

গ্রহণের জলে দুঃখস্নান সেরে ফিরে দেখি
নদীর হলুদ জলে ভেসে গেছ ব্যবহৃত সময়ের স্রোতে।

রবিবার, ১৯ মে, ২০১৩

সহনশীল

যখন আতিথ্যপূর্ণ পৃথিবীতে কিছুই ঘটে না
কালের অসীম ঝুলে থাকে
দ্বিধার প্রবল টানে ঘর থেকে নেমে এলে
কৌণিক দূরত্বে উড়ে আসে অগ্নি স্ফুলিঙ্গসহ যজ্ঞের কাঠ

মানুষের কাছেই মানুষ ফিরে আসে
সেকথা বোঝেনি কেউ
একদিন জেনে নেব
শ্মশ্মাণের কালো কাঠ কতটা সহনশীল

জীবনমুখী

আমার যা কিছু লেখা সবই মৃত্যুর
কেবল এ একটাই জীবনের

সূর্য্যমুখী ফুলের কোরকে জীবনের যে আধার জমে থাকে
পরার্থপর অগ্নির কাছে হাঁটু মুড়ে শিখে নেয়
মৌল রসায়ন,জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ধাত্রীবিদ্যা
নক্ষত্র না চেনা ক্ষেত্রজ মানুষ ভাসে সম্মুখগামী জোয়ারে
পোড়ামাটির ফলক থেকে দক্ষিণ সমুদ্রগামী হয়ে যেতে হয় কখনো কখনো

এভাবেই সন্দেহ ও অবিশ্বাস দ্বিখন্ডিত বিবিধ ফাটলে

শনিবার, ১৮ মে, ২০১৩

শুধু এক অন্ধকার

শ্মশ্মাণের চিতায় যে সুর বেজে ওঠে
মৃত মানুষের জ্বলে ওঠা হাঁড়ে হাঁড়ে
শ্মশ্মাণ বন্ধুরা উদাসীন শুনে গিয়েছিল
তারা জানে কতক্ষণে চিতা পুড়ে ছাই হয়

আমাদের মাংশবহুল আহার
উদ্ভিজ পানীয়
অকূল জোনাকীময় রাত
তৃণময় বিছানায় মৃত্যুভয় নিয়ে শুয়ে থাকা
মেঘের বাসাবাড়ীতে বিদ্যুতের ঝটিকা হামলা
তারপর অন্ধকার
শুধু এক অন্ধকার

নিভৃত আশ্বাস

স্তব্দতাকে ভালোবেসে আশ্বাস দিয়েছিলাম
বিকেলের অপরিচ্ছন্ন মুহূর্ত
গোধূলি বেলায় মিশে যাবে আমার এ কথা সত্য হয়েছিল
কেননা হলুদ ফুলগুলো মুখব্যাদানের অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছিল
আমাদের অমৃত চোখের মণি ভরে উঠেছিল
সোনালী ডানার পাখিদের ছায়ায় ছায়ায়

আমি কেবল তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাবো
পঁচা শ্যাওলার স্তুপে
আমাদের তৃপ্ত আহারের উচ্ছিটাংশের উপর
যে কুমড়ো ডগা বেড়ে উঠছে আগামীকাল
এই সতেজভূমির উর্ধ্বাকাশে এক নক্ষত্র উঠবে

আহত মানুষ

শরীরে শরীর ঘষে যখন আগুন জ্বলে ওঠে
বহুপরিচর্যাজাত প্রবণতার অতৃপ্ত আহারের উচ্ছিষ্টাংশ
অপলাপী ভাষায় শিকারী চেটে খায় রক্তমাখা নখ
দ্বিধাদ্বন্দ্বে ঐকান্তিক শারীরিক প্রেমে যুবতী কিসের প্রতিচ্ছায়া ভাঙে

খেলা ভাঙার অনুরনণে মন ছুঁয়েছিল
কাল জীবাণুর স্থিতিস্থাপকতা
রৌদ্রের কোরকে
পাতাহীন ডালে ডালে
নৈসঃঙ্গের একাকীত্বে
অপমান আর প্রত্যহিক বর্জনের মধ্যে
শিথিল মুঠোয় ধরে রাখে রাত্রির হৃদয়

বীজময় রাত্রি ঘিরে রাখে অন্ধ পেঁচার মতোন
যদি ফিরে আসে অগাধ মেঘের প্রান্তসীমা ঘেঁষে
ব্যাথাময় গ্রামান্তের দিক থেকে
ভাঙন প্রবল নদীর জলে প্রবাসী নৌকার মধ্য থেকে

প্রস্তুতি ছিল না মিলনের তবু
তৃপ্ত পিচ্ছিলতা নিয়ে সাজায় শরীর
শষ্পদল আঙুলে আঙুলে পরস্পর অবিশ্বাস

মানুষের জরাজটিল অরণ্যে
তমসী বৃক্ষের নীচে পড়ে থাকে আহত মানুষ

বুধবার, ১৫ মে, ২০১৩

মানুষের আগে পৃথিবীতে গান ছিল

মানুষের আগে পৃথিবীতে গান ছিল

শালের মামল্ল পাতা যা কিছু ধারণ করেছিল
পাহাড়ী বসন্ত বায়ু
মেঘ কুয়াশার আশৈশব প্রেম
শুয়াপোকার গন্তব্যহীন যাত্রা

সঙ্গীহীন গাঙচিলের ডানার ঝাপটে
পাথুরে সৈকতে ভাঙে তুঙ্গ ঢেউ
আর ওদিকে ঈশাণ কোণে 'বর্ষা এসে গেছে'
বলে মেঘ ঘোষণা করেছে
পৌরাণিক গিরিগর্ভ থেকে যে ঝর্ণার স্রোত নেমে এসেছিল
বাতাস তা শুষে নিয়েছিল
সকালের প্রতিশ্রুত রোদ যখন পাতার ফাঁকে হেসে ওঠে
চরণাশ্রিত সঙ্গীতে
সূর্যমুখীরা তখন ডানা মেলে আকাশের দিকে


মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৩

বিষের পেয়ালা

অনার্য ডোবার জলে সারারাত ব্যাপী ব্যাঙেরা যখন
উন্মাদ মেঘজর্জর গানে মেতেছিল
তখন বর্ষার ঘোলা জল নদীর দু'পাড় ভেঙে ছুটে গিয়েছিল
শোধনাগারের দিকে।

আর আপেলের মিষ্টি স্বাদে আমি জেগে উঠলাম।

স্বপ্নের ভেতর
আপামর প্রশ্নবানে বিদ্ধ করেছি।
'তিরস্কারে তিরস্কারে ক্ষতবহ বুকে'----
এতো বেশী দেখে ফেলেছি যে
সহজাত আত্মার চেয়েও
গভীর তোমার পথ।
ঘরে পোষা ময়নার অবাধ স্বাধীনতায়
যতোদূর যেতে চাও?

যথোচিত নেশাতুর আমি
তাই অবেলায় মনে পড়ে
গোধূলি বেলার পথ মিশে গিয়েছিল
তোমার যাবার প্রতিপথে।
স্পষ্ট ভেসে যায়
জটিল ও দুর্বিষহ জীবনের কার্যভার।

ব্যকরন মানি নি কখনো
অথচ কী সাবলীল শব্দের আধিক্যে লিখে গিয়েছি কবিতা
বাতাস স্তম্ভিত করে

পান পাত্র ভেঙে ফেলে বিষের পেয়ালা তুলে নিয়েছি; পুষ্পিত ঠোঁট
তুমি ছুঁয়ে দাও।


সোমবার, ১৩ মে, ২০১৩

ধুনুচির অন্ধকার

অনার্য ডোবার জলে যে মাছেরা বেড়ে উঠেছিল
পরস্পরকে নাকচ করে তারা আজ
আষাঢ়ের মল্ল ঢলে আর্য নদীর গভীরে পৌঁছে গেছে

যৌনদ্রাঘিমার দ্রাবিড় মিলনে পারঙ্গম শঙ্খচুঁড়
জিভ বের করে চেটে নেয় চন্দ্রালোক এবং
নিজ ঠোঁটেই ছোবল কাটে

যে যার নিজের পথে ফিরে গেলে
ধারাময় নির্ভার জীবন কেঁপে ওঠে
ধুনুচির অন্ধকারে

রবিবার, ১২ মে, ২০১৩

শেষ অপমান

বৃষ্টি চেয়েছিল জল
যতটুকু প্রয়োজন সুর ছড়িয়ে দিয়েছিলাম সমুদ্রের ঢেউয়ে ঢেউয়ে
মদমত্ত বাতাসের বুকে আগুনের শক্তি ছিল
মোমের আলোক রশ্মি যে প্রভা ছড়ায় তারচে' বেশী
উজ্জ্বল হৃদয় খুলে নিয়ে একাকী দুপুরে
সভ্যতার নীলাভ পাষাণে মোড়া পাথরের মুখচ্ছবি
দেখে জেনে গিয়েছিলামঃকাঙ্খিত প্রার্থনার লগ্ন সৌর অন্ধকারে ছেয়ে আছে
এবং বিরহী প্রেমের স্তবে সবুজের মুঠো ভরে আসে অনার্য সূর্য্যমুখীর ছায়া

হতভাগ্য সেইসব দিনে ত্র্যহস্পর্শে জেগে ওঠে
মৃত মানুষের শব
বাসাহী্ন শরীরের দুঃখস্নানের বৃষ্টিরজল
অবিরল শুষে নেয়
অতীতের শেষ অপমান

শুক্রবার, ১০ মে, ২০১৩

পরিচয়হীন

দিগন্ত অবধি আজ আর মৃত্যু নেই
বালির পাহাড় ভেঙে খোঁড়াতে খোঁড়াতে আদিগন্ত মৃত্যুর করুণ ছায়া
প্রতিটি শবের মুখে সশব্দ চুম্বনে রমণীর রক্তিম নখরে ঝরে পড়ে।
শেকড়ে শেকড়ে গোত্র পরিচয় বেজে ওঠে পরিচয়হীন।
ঋদ্ধ পরিচয়ে ঋজু বনচ্ছায়া আপামর প্রশ্নবানে বিদ্ধ করেঃ
সুর্য্যাস্তের কাছে কি প্রার্থনা কর?

আর আমি প্রবাসী নৌকার দীর্ঘ দাঁড় টেনে
ঘাটে ঘাটে খুঁজে দেখিঃকোথায় আমার ঘর।

বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৩

দ্বিপদী

কাল কোনো কবিতা লিখি নি
অথচ গ্রহমন্ডলী নিয়ে কবিতা লেখার কথা ছিল

কাগজের ওপর যখন আকিঁ বুঁকি করছিলামা আর্দ্রানক্ষত্র থেকে
তীক্ষ্ম এক আলোকরশ্মির কণা বুকের ভেতর ঢুকে গেল

উত্তর ভাদ্রপদনক্ষত্র ভেদ করে রেবতী নক্ষত্র থেকে উঠে গেল
শত শত আলোকবর্ষের চরাচরহীন দীর্ঘ পথ পার হয়ে

দূরাগত ধ্বনিমূল সমকালে সমকালে কড়া নাড়ে
অন্ধ ভিখারীর মতো ভ্রুকুটির প্রতিবিম্ব তুলে

আর পায়ে এসে লাগে শেকলের টান
অতীতের শ্মশ্মাণ তেমনি আজো যোগ্য প্রবাহণে সিদ্ধ

প্রতিহত পথের ওপর শুয়ে থাকা জান্তব পশুর পাশে
অসহায় উড়ে যায় ছেঁড়া পোড়া ওল্ড টেষ্টামেন্ট

মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০১৩

রিরংসিত ভালোবাসা

তোমার নিরাবরণ বুকে যখন ভালোবাসার ঘ্রাণ নিয়েছিলাম,মুহূর্তে
অবিন্যস্ত চুল দু'হাতে খামচে ধরেছিলে।
সৈকতের ঝাউবন প্রবল বাতাসে দুলে উঠেছিল
আর আমাদের টেনে নিয়েছিল জলের গভীর থেকে
গভীরতর প্রদেশে---যত দুর্লভ সংগ্রহ
তুলে নিয়েছিলাম সুমন্ত শরীরের অভ্যন্তর  থেকে।

জল ছিল ঠিকঠাক শুধু নাবিকবিহীন, পরিত্যক্ত নৌকা
ভেসে গিয়েছিল দিগন্তের দিকে
এবং সব ভালোবাসা প্রবাহিত সমুদ্রের দিকে।


রবিবার, ৫ মে, ২০১৩

তমোহীন

প্রমত্ত জলরাশির ঘূর্ণিপাতে
নিরঞ্জন ভেসে যাবার যে প্রতিশ্রুতি ছিল
সোঁদা বৃষ্টিতে ভিজবে বলে মাঝরাতে
ভাঙন প্রবল নদীর তীর পেরিয়ে আরেক তীরে এসে পৌঁছেছিলে
উন্মীলিতা জোছনায় অনিঃশেষ ভালোবাসার প্রহরে নগ্নস্নানোৎসবে____
চোখের তারায় স্বপ্ন ফুটেছিল

গ্রহণের অন্ধকারে একে একে সব চলে যায়
সমুদ্দুরের সফেদ ফেনা
বৃষ্টিময় পথ
সূর্যের উজ্জ্বল প্রভা

অটুট দাঁড়িয়ে থাকে বালির পাহাড়

নির্জনতার যে অধিকার সংরক্ষিত ছিল
মেঘ রোদ্দুরে তা ভেঙে ভেঙে ছড়িয়ে পড়ছে তমোহীনতায়

বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০১৩

প্রাকৃতিক গান

প্রাকৃতিক উনু্নে একান্নবর্তী হাঁড়ি
জাগতিক নিয়মের বেড়াজাল
পৈত্রিক বসত ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ
যুথবদ্ধ খামারে ভাগের আল

এ কোন কালের প্রতিধ্বনিময়ে ছেয়ে আছে সমস্ত আকাশ
মাছের কাঁটার মতো গলায় আটকে থাকে দুঃস্বপ্নেরা
আমাদের বাৎসরিক ভোজে ব্যবহৃত হচ্ছে জীবানুনাশক তেল আর
পথ চেঁপে ধরে পথিকের গলা

এই অধীর সংকটে একমাত্র মানুষই ঠিক একদিন
মানুষের ডাকে সাঁড়া দেবে
আর দেখো এই শরীরের মধ্য থেকে
গান ফিরে আসবে স্বকীয় প্রণোদিত মহিমায়

ঘুমপাড়ানী গান

স্খলিত প্রতিটি পদক্ষেপে সে এক রাত্রির দিক থেকে
আরেক রাত্রির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো
মৃতভার আর তাকে টানছে না
বেঁচে থাকার অপার কৌতুহলে
মলিন সময়গুলো বুকে জ্বলে ওঠে
দ্যুতিময় হীরের মতোন
জাগতিক দুঃখ
প্রাত্যহিক দিন যাপনের গ্লানিগুলো
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ শ্যাওলা হয়ে জমে থাকে
পদ্ম পুকুরের ঘাটে

জল ভারানত দু'টি চোখ যখন আলোর গুচ্ছে
পারিজাত প্রেম আর অবসিত বাসনার চিত্রপটে
মিশে একাকার হয়ে যায়
তখন অন্ধকারের মধ্য থেকে অনুপম আকাশের
দিকে ছুটে যায় বান্ধব হৃদয়

পিশাচের অট্টহাসি চাঁপা পড়ে যায়
ঘুমপাড়ানী গানের সুরে


বুধবার, ১ মে, ২০১৩

ধূলো মাটির পূরাণ

প্রাসঙ্গিকভাবে আজ মনে পড়ছে অব্যবহৃত খামারের তালা,মরচেধরা;যা
বহু ব্যবহারে মসৃণতা লাভ করেছিল।শত সহস্র একরব্যাপী অনাবাদী জমি,
ঘরে ঘরে নিরম্বু উপবাসের পালা।অনাহারী মানুষের রক্ত-ঘামে ভেজা মাটি
প্রাকৃতিক লতাগুল্মে আচ্ছাদিত পায়ে হাঁটা মেঠোপথ ইঁদুরের মিছিলে মিছিলে
উন্মুখর।যে কৃষক মাঠে সোনা ফলিয়েছিল,চাষের ঢালু জমি মধ্যে পানাদিঘী,
সন্ধ্যার আগুনে কালো মহিষের দুধ জ্বালত যে চাষীবউঃ'ফসল উঠলে পরে
নীল শাড়ী কিনে দেবো',সে মিথ্যে আশ্বাস দিয়েছিল ।চাষী জানে ভরপুর মাঠ
যে কোন সময় ভেসে যেতে পারে মল্ল আষাঢ়ের অবিশ্বাসী ঢেউয়ে ঢেউয়ে।

ধূলো মাটির পূরাণে লেখা থাকে ঈর্ষার আগুনে দগ্ধীভূত ফসলের মাঠ।

পরার্থপর অগ্নি

পরার্থপর অগ্নির কাছে শিখে নিয়েছ,দহনরীতি।
আমি নগ্নবুকে ঋজু দাঁড়িয়েছি
দেখে নেব,অগ্নির ক্ষমতা।
বুকের পাঁজর কতক্ষনে ভস্মে পরিণত হয়!

ব্যাপক বসন্তে গোধূলির কালে আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে
প্রাগ সভ্যতার পানাদীঘীতে তা আজ
রাশি রাশি শ্যাওলার শব হয়ে ভাসে।

প্রতিহারী বেড়াল

প্রতিহারী বেড়ালেরাকাল খেয়ে গেছে খাঁচার মুনিয়াগুলো
আজ তারা ফিরে এসেছিল
পূণর্বার সুযোগের পাশাপাশি,___

প্রাত্যহিক দিনযাপনের রক্ত লেগেছিল ওদের পুরুষ্ট ঠোঁটে