Powered By Blogger

বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

গুল্মলতা

সব শেষে পড়ে থাকে অন্ধকার
অন্তহীণ থেকে অতলান্তিক অথচ ভূলুন্ঠিত
জলের ভাবানুষঙ্গ থেকে জলস্রোত---পেছন পেছন উড়ে আসছে চিতার কালচে কাঠ
চিতা জ্বলছে নদীর ধারে---অবতারণের ঘড়ি বন্ধ;
চাবি দেয়া হয় না ক'দিন

মেরুদূরাতীত রোহিণী নক্ষত্র থেকে আলো ঠিকরে পড়ছে ম্লান শরীরে,দেখেছি
সম্পূর্ণ হেমন্তকাল---পাতা ঝরে যায়
পাতারা অম্লান ঝরে যায়
লাল ইটের দালানে দু'টি বিপন্ন চড়ুই
ফাটলে অশ্বথ গাছ---প্রুতিশ্রুতিহীন
কর্তব্যহীন প্রাপ্তির মধ্যে অনিশ্চয় ধাবমান ক্ষুধার্ত মানুষ
হেঁটে আসছে অব্যবহৃত পথ ধরে;যেখানে জন্মেছে  গুল্মলতা

বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

রৌদ্র ও আলোছায়ার গল্প

অনেক দ্বিধার পথ,বিবেচনার মহাসড়কে থিকথিকে কাদা
যখন ফিরেছিলাম---একে একে সরে যাচ্ছিল রং দেয়া বানানো পুতুলগুলো
মুখোমুখি আমাদের বসে থাকা---সামান্য একটু ছোঁয়া
গ্রীষ্মাবকাশের তাঁবু হেলে আছে
ধড়হীন ঝাউগাছে কাঁচির আঘাত---নাশকতা প্রকৃতির মুখে

আজ রৌদ্র-মেঘ-বৃষ্টি নেই
মাঠে ফাঁদ পাতা রয়েছে,শিকারী দূরে
তাজমহলের ছাদে শকুন বসেছে
আমি তার উড়ে যাবার প্রতীক্ষা করি

আমাদের বয়স এখন কত
গ্রন্থকীটের মতোন মনোযোগী,অতিরিক্ত ভালোবাসা জন্মেছিল---
প্রিয় কবিতার বইয়ে উপচে গেছে সোফা-কার্পেট-আলমিরার তাক
উঠোনের ছড়ানো মাদুরে গোধূলির আলো

অপ্রাকৃত ভাষায় রৌদ্র ও আলোছায়ার গল্প আর কত

অবিন্যাস্ত মুখ

পাতার আড়াল থেকে একটানা ডেকে গিয়েছিলাম কুউই
রৌদ্রময় সমস্ত সকালবেলা উচ্চারণসাধ্য শব্দের ভেতরে ধ্বণিময়তার মগ্ন আলো
হলুদ নদীর আর্দ্র তীর,কাশবন---আমি দেখি খড়ভর্তি প্রবাসী নৌকার সারি
অলীক ঈশ্বর,স্থির আকাশ,সন্ত্রস্ত চিল ওড়ে
নির্জন প্রান্তরে অনিবার্য অন্ধকার

আমাদের সবভ উৎসবের ভেতরে অলৌকিক রাত্রি
যদি রাত্রি তার সমস্ত বিশ্রামকে মুছে আলো জ্বালে

তবে কোন অবিন্যাস্ত মুখ দেখা ফুটে ওঠে

শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৩

কিশোর চোখের তাপ

গ্রামসীমান্তে শিবমন্দির।পাশে জোড়া বটগাছ।রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিন।
জলা ক্ষেত পার হতে হতে শোনা যায় প্রবাহিত স্বাভাবিক শব্দ।
সারাপথ নিবিড় তন্ময় এক,পথের কিনারে আলোকিত প্রুতিশ্রুতি।
বিপক্ষ বাতাসে পাখি উড়ছে দূরহ শিল্পকর্ম তার ডানায়।ফুলের জন্ম
কেমন রহস্যে ঘেরা।

আমি ফিরে যাবো
 নদীর স্রোতের মগ্নতায়।
অশ্রুত গান ও কবিতায়,ধূসর পাতা ও সবুজ প্রজাপতি----
কিশোর চোখের তাপে।

বিলীয়মান মাটি

দেবীকা,আমার পথ আমাকেই খুঁজে নিতে হবে
পথের খোড়লে সাপ-খোপ
ঝড়-বৃষ্টি-জল,নুনগলানো শরীর,---তাও মেনে নেবে
দীর্ঘতর বট,সমকালীন পাথর থেকে আরেক পাথরে
শ্যাওলা,জলজগুল্ম;   নেমে আসার মুহূর্তে
যক্ষ হয়ে দাঁড়ায় তালসুপারী,মহুয়ার ঝোপ
ছেড়ে আসা বন্দরে অবাধ ঢেঊ
বদর মাঝির সিন্নী

আমার বিলীয়মান মাটি ঘুমের ভেতর
আমাকেই টেনে নেয়

কবি ও নাবিক

মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবি ও নাবিক
পরস্পরের নৈকট্যে সারাদিন।আবছায়া জাহাজ ভিড়ছে
কুয়াশামাখা বন্দরে।সময় ভাংছে নীরবতা।
কবিতার পান্ডুলিপি সাদা করে গেছে কবিতারা।

কবির জীবনে প্রেম এসেছিল।
একদিন চুপিচুপি প্রেমিকা অন্যের ঘরে।
নাবিক জানত তার দয়িতা অপেক্ষা করে আছে।
ফিরে দেখেঃশূণ্যতাময় প্রান্তর।

মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবি ও নাবিক
পরস্পরের নৈকট্যে সারাদিন।

পোড়ামাংস ভোজের উৎসব

আমাদের এই জনপদে এখন উৎসব
ডাইনীর খুরের তলায় একে একে ভেঙ্গে পড়ছে পাথর,
জ্বলছে নরম ঘাস,তুলসীমঞ্চ,গোয়ালঘর
ফুলছড়ানো উঠোনে একটানা নিশিপক্ষ

শ্বেত মনোনিবেশে তাকিয়ে দেখ
দূরের গ্রামসীমায় অগ্নিকুন্ড ঘিরে প্রেত্মাত্মার নাচ
বাতাসে ভাসছে ঝলসানো মাংসের আঘ্রাণ

আজ,পোড়ামাংস ভোজের উৎসব

পূজো

দুপুরবেলায় মেঘ করেছিল
দিগন্তবিস্তৃত টানা মেঘ
আর,তক্ষুনি কবিতা লিখলাম,মন খারাপের
দেখি মন ভালো হয়ে গেছে

মনের আকাশজুড়ে আষাঢ়ের সূর্য

ভেবে দেখলাম,তোমার ফেরার কাল ঘনিয়ে এসেছে
সারাটা দুপুর অবিমিশ্র আনন্দে বিহ্বল
কত সাজসজ্জা পথে,রঙ্গিন বাগান
তালগাছে সম্পন্ন বাবুই---বাসা বাতাসে দুলছে
সুরভীফুল ফুটেছে,কাল আবার ফুটবে---
কর্ম্বিভোল মৌমাছি এসে জানিয়ে দিয়েছে

প্রতিমা নির্মাণ হয়ে গেছে
খড়ের ওপর কাদা
তার ওপর রঙ্গের সুনিপূণ শিল্পকর্ম

বেলফুল,বাতাসা প্রস্তুত
দেবী,আমাকে গ্রহণ করো

রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

কবিতাময় জীবন

বিশুদ্ধ বসন্তে আমাদের দেখা হবে না,কখনো
সোনালী ডানার পাখিগুলো সব একে একে মরে যায়।
বিপন্ন চড়ুই;ইতস্তত ছড়ানো পালক
কোনো পথরেখা নেই---মধূবন,চম্পকনগরী।
দূরে অন্ধকার।নিবিড় অশথগাছ।উদ্ধত শাখার মৌন প্রতিবাদ
জোনাকীর লাল চোখে।প্রবাসী নৌকাগুলোতে খড় ভর্তি।
নদীর শীতল জলে পোড়ে শরীর,আত্মার মধ্যে সোনামুখী সূঁই।

ঝর্ণাপাথরের পথে যেতে যেতে দেখি ছায়ার ভেতর
আলো এবং বীজগণিতের সরলীকরণ সূত্র শুয়ে আছে।

আহা! জীবনটা কেন কবিতা হল না?

কাদের মোল্লার ফাঁসীর পর

এখনো হৃদয়ে ক্ষত,বুকের ভেতর তীক্ষ্ম যন্ত্রণাময় আগুন
বৃষ্টির শাসনে নত

কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসীকাঠে ঝুলে পড়েছিল বিস্রস্ত,বিবশ
রক্তলোলুপ হায়েনা আর বাগানের গোলাপ-বকুল-জুঁই
নির্বিরোধী বাতাসে নিমগ্ন হেসে উঠেছিল

শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩

নবজন্মের প্রার্থনা

যত ইচ্ছে অসম্মান কোরো
গায়ে মাখব না
সুন্দরের প্রতিভাসে মূর্ত মুখের প্রচ্ছদ ভেঙে
বেরিয়ে আসুক অকৃত্রিম সাজ

শোবার ঘরের লগ্ন বারাব্দায় দিনযাপনের গ্লানি
টবে সহজ অর্কিড
সে ও দাবী করে আলো ও বাতাস
পৃথিবী বিস্তৃত দৃঢ় মেঘে

দুঃখগত দিন
সমাগত সুখের দিনের শেষে বৃষ্টিভেজা পথ
একা একা বৃষ্টিভেজা পথ পার হয়ে দেখি
ভাঙা নৌকা পড়ে আছে,জলপাড়ে

আমার মতোন নবজন্ম প্রার্থনায়

গ্রহণের অন্ধকার

তোমার উন্মুক্ত স্তন থেকে ওঠা ঘ্রাণ
আমাকে ফিরিয়ে আনে শ্মশাণ বা গীর্জা থেকে
রৌদ্রাহত নির্মলতা ভেঙে জৈবিক তাড়না...
তুমি জানো ভালোবাসা ঠিক কোন পথে পাড়ি দেয়

আমাদের দেখা হয়েছিল শেষ বিকেলের রোদে
কথা ছিল জ্যোৎস্নারাতে দু'হাতে ভাসিয়ে নেব,সবকিছু
মধ্যদুপুরের তাপ কিংবা অবিশ্বাসের তামসী রাত
সমুদ্রের অন্য পার থেকে ভেসে আসা শঙ্খচিলের বিহ্বল ডাকে,---

দিগন্ত অবধি অস্বীকার করে যাবো অমোঘ মৃত্যুকে

শতাব্দীর ছড়ানো চত্বরে শুয়ে আছে আলস্যের কিছু ইচ্ছে
আদিগন্ত ঘোরে বাজছে মধ্যরাতের ঘন্টা
আমরা একাকী ভিজে যাচ্ছি গ্রহণের অন্ধকারে

যারা ঘুমিয়ে রয়েছে তারা সবাই-ই জানে
অন্ততঃ আরও কিছুদিন পরমায়ু বেঁধে তাদের বাঁচতে হবে
মাটির গভীর থেকে উঠে আসা দিনে

প্রত্যাখ্যান

মৌমাছিমুখর দিনগুলোতে বিহ্বল পাহাড়ের চূড়ায় পদ্মসম্ভব
তার কেন্দ্রে মেলে আছো পাষাণ পাপড়ি
আমার বিষাদময় মুখ নৈসর্গিক ঝড়ে
পরিদৃশ্যমান সুন্দরের বর্ণোজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি এঁকে দেয়

প্রত্যাখ্যানের এ পরাভবে আমি নিবিড়ের সজলতা ভেঙে
ক্রমশঃ এগিয়ে চলি রোঁয়া ওঠা শহরের দিকে
অগুনিত বাঁকের আড়ালে একদিন
এখানে একটা শৈশবকালের বাড়ি ছিল

আজ দেখি পানশালা
আকন্ঠ মদের গ্লাসে প্রত্যাখ্যানগুলো বুদবুদে পরিণত

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৩

রোগাটে পাখি

গাছের হলুদ পাতা বাতাসে উড়ছে,---
সে সৌন্দর্য্য মনোলোভা,অন্য গ্রহ থেকে উড়ে আসা ধূলিকণা
উত্থানপতনে ভ্রষ্ট,সংসারের জটিলতার উপর চিরদিন কালোমেঘ,বজ্রপাত,
অনাবসান বাজছে----ওই দেখ আকাশ ঝুকেছে
নদীর ওপারে;যা নিথর প্রতিধ্বনিময়

অবধারিতের ইঙ্গিতপালনে যথাযথ প্রস্তুত আমরা
অবজ্ঞেয় শ্বাসপতনের শব্দে বিহ্বল বাতাস
গ্রীষ্মাবকাশের যাবার আগে দেখে নাওঃ

পুকুর পারের হেলে পড়া তালগাছে
বাবুই পাখির বাসা কেমন দুলছে
তার ছায়ায় প্রাচীন শ্যামাপোকা অনিশ্চিত তাকিয়ে দেখছে

ওই দূরের রোগাটে পাখিটাকে

বেদনাআহত

সংহত মালতীফুল দোলে আমাদের ঝুল বারান্দায়
ছায়া-প্রশাখার জটিলতর তলায় হাত ধরা ছিল সারাদিন
রাতের সংঘর্ষে স্তব্ধ চারপাশের সবকিছুতেই কল্পিত বসন্ত---দুই চোখে নিপূণ সাজানো;
নিমগ্ন সবুজ পাতা,--পাতা যে নড়ে জেনেছি এতদিনে
 তার সমস্ত সন্ত্রাস কেমন বিবর্ণ ডালে
কৃপণ ফুলের সমুজ্জ্বল স্মৃতি শুধু

কবি পুরুষের মতো বেদনাআহত

বুনো শুকর

বুনো শুকরের পাল পথে নেমেছে,ধানুকী হাতে
ঐ মোহালু যায়,ধানক্ষেতে
আবল্য শিকারপ্রীতি
পাখিদের পালকে পালকে লেখা গভীর সন্দেহ

ঝলসানো মাংসভোজ হবে আজ

শালকীর জলে ভাসমান পাথরখন্ডে নাচছে প্রেমিকযুগল

তীরে বুনো শুকর দাঁড়িয়ে

অসহায় নির্বোধতা

সদ্যস্নাতা প্রতিফলনের উপচারে আলতো চুম্বন
মনে পড়ে সর্পসংকুল অরণ্যে জ্যোতির্ময় হ্রদ
ইঙ্গিতসঘন ক্রম অবলুপ্তির সমূহ সর্বনাশে
আমাদের সমগ্রতা বিলীন ঘাসের বিছানায়

মৃত্যুর নিশ্চিত সত্যে আমরা জেনেছিলাম---
পারিজাত ফুলের নির্মিত জ্যোৎস্না রাত,---
সজ্জিত আলোর অভিলাষে স্বভাবী মানুষ ঘরে ফিরে আসে
অনায়াস আলো,অসরব বাগান,রেখাংকিত করপুট,----
পূণরাবৃত্তি একই,পরিণাম
অনাশ্রয়ী প্রতিবাদে বিচিত্রিত রেখার জানালা

খুলে দাও,নিজস্ব আলো ও চারদেয়ালের মূর্ত হীরা
জ্বলে উঠুক সহসা

তোমার দু'হাতে অসহায় নির্বোধতা ভুলে যাব

রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৩

নিজস্ব নদী

অধোমুখে,করপুট মেলে আছি
তোমার নিজের হাতে ভিক্ষে নেবো

চোখের পাতায় আমন্ত্রণ
শেষ বিকেলের রৌদ্র ও সবুজ পাতা
প্রগাঢ় বিষাদে নবজন্ম চেয়েছিল---
রাত্রির নিয়মে সুশৃঙ্খল পদধ্বনি
মৃত্যুর অধিক নির্ঘুমতা

ভয়ে ভয়ে থাকি
মাঝেমধ্যেই অন্যমনস্ক---চোখে ভাসে শালকীর স্বচ্ছ জল

একদিন শালকী আমার ছিল

ভালোবাসা ভিক্ষা

পশ্চিমের জানালায় কার শ্বাসপতনের শব্দে
পূর্বনির্দেশিত ভাষার অভ্রান্ত ঈঙ্গিতপালন
বাড়ির রোয়াকে কৃষ্ণচূড়া
থরে থরে লাল ফুলগুলোতে গ্রীষ্মের তাপ
ভঙ্গিনিপূণ ভালোবাসায় অপ্রমান  নিথরতা

স্বাধীন ধূলোয় ভালোবাসা ভিক্ষা দেবে

নির্ধারিত নিয়তি

ভূগোলের জরাজটিল প্রান্তরে আমি একাকীত্বের আবহ দেখে পালিয়ে এসেছি
তোমাদের  এ উপত্যকায় ভস্মময় পার্ক,লৌহশকট,দূরের জানালায় অগ্নির স্ফুলিঙ্গ,---
পুড়ে যায় দু'চোখ।গীর্জার হলঘরে সামগান।এই লৌকিকতা শেষ হোক।

শুভ বুদ্ধিজাত বৃক্ষ,কার্পাস তুলোর ক্ষেত ভেঙে জেলখানার নুতন বাড়ী,---
বনবিপর্যয়ে বিঘ্নিত সুন্দর,স্বপ্নচারীতার গান গেয়েছিলাম শোনে নি কেউ।

ওরা জানে ফিরে আসার নিয়তি নির্ধারিত হয়ে আছে।

শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৩

কবিতার সাথে ঘর-গেরস্থালী

শীতের জরাজটিল অন্ধকারে খড়কুটো জ্বালিয়ে রেখেছ
মুখের ওপর কালপুরুষের ছায়া
গুহার ভেতর পাহাড়ী ছাগল,ঝর্ণাপরে ঘুমে নিমগ্ন জলপতঙ্গ
দ্রুতগামী শীতে হিম হয়ে আসে উপত্যকা

অনন্ত কাব্যের পাশে বসে থাকি সারারাত
কবিতার শরীরে শীতের দাহ,পায়ে সৈকতের বালি,ছাইমাখা নাচ
নুনজলে ভেজা চোখ---অসীম সংসারী হাতে লোহা ও আগুন
অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে ঘ-গেরস্থালী

একদিন খাল পেরিয়ে দেখতে এসো

জন্মদিনের উৎসব

জারুল বনের অন্ধকারে শ্বেত ডানার পাখিরা বাসা বাঁধছিল,মুখে খড়কুটো,
পাতার আড়ালে জ্বলজ্বলে স্বপ্ন---বনের ভাষায় জৈবফুল পুড়ছে নিঃশ্বাসে
ফুলে ওঠা ঠোঁট,অবিন্যাস্ত চুল
পোষাকের এখানে-সেখানে মাটি ও শুকনো পাতা
আমার পিঠের মাংসে দীঘল নখের ক্ষত

আমরা ঘর্মস্নানের কথা ভাবছিলাম না অথচ
বটপত্রলীন এ জীবন যেন পাহাড় চূড়ায় মেঘ,----
অনিশ্চিত আর বার্তাবহ,স্বপ্রতিষ্ঠ

জলে পোড়ে,রৌদ্রে ভাসে
আমাদের নিয়তি প্রস্তুত
জল,জলান্তরে,পাথরে যে লতা বেড়ে ওঠে তার ফুলে

বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৩

ভাষান্তর

পাতাসমেত অপরাহ্নের ফুল কী দ্রুত ঝরছে
তার জটিল পাপড়ি একটার পর আরেকটা খুলে পড়ে
বিন্যাসিত নিয়মের অনিবার্যতায় অর্থাৎ অবসানের রীতিবদ্ধ বিরুদ্ধতা
এখানে দিনের শেষে সচন্দন গন্ধপুষ্প
অধিকতর পাথুরে মৃত্যু
পাখি দেখছে কেবল বৃক্ষ,সতেজময় পাতার পাশাপাশি

পরিত্যক্ত সাপের খোলস এঁকেবেঁকে হেঁটে যায় সাপের পেছনে

ভাঙে নাটমন্দিরের প্রতিমা,ফলিত জ্যোতিষের
দুর্বোধ লেখার খাতাগুলো অনিশ্চয়তায় বাতাসে উড়ছে
বস্তুতঃ এ উপত্যাকা ধীরে ধীরে জনপদে বিলীন হয়েছে

শেষ চিঠি কবে এসেছিল ওই জনপদ থেকে
এখন নিশ্চয় কেউ আর চিঠি লেখে না;গ্রাম্যকিশোরী
পাঁচিলে দাঁড়িয়ে থাকে----হাতের তালুর উর্ধ্বে ছড়ানো আকাশ
ওখানেই দৃষ্টিনিবদ্ধ,ফেরার কথা মনে আসে

দ্বন্দ্ব ছেয়ে যায় ভাষান্তরে

উত্তরায়ণে

পূর্ণরাগ উন্মোচনে জলাধার ফুঁসে উঠেছিল,----
আমি দেখেছি একঝলক
রাগিনীর কোষ,সূর্যপথে অগণন ঢেউ.......

এতদিন জলে ছিলাম।আগুনে কেটেছিল কিছুকাল।
মৃত শরীরে মৃত্যুর ভয় লেগেছিল?

জল,মাটি ও আগুন----কার কী ক্ষমতা,
আমাকে ভাসিয়ে নেবে,পোড়াবে প্রাকৃত ব্যাধি,অবসাদে?

আমি শান্তিতে মরব বলে এই জলাধারে উত্তরায়ণের প্রতীক্ষা করছি।

ছায়াসঙ্গী

ছায়াসঙ্গীদল কোথায় গিয়েছে?
সূর্যের কিরণ থেকে জলে নামছে ঋষভ
বালুতীর থেকে আজ স্পষ্ট শুনি
সমুদ্রের অন্য পারে শঙ্খচিলের বিল্লোল ডাক।
সে কি প্রলম্বিত,শর্তাধীন।ভাবনিলীম আহ্বান,---

অনেক শূণ্যতা পার হয়ে নিদ্রাশীতল নাবিক
তার অশ্বেত নৌ-যান,ইতঃস্তত ভাঙা মাস্তুল,ছড়ানো দড়িদড়া---
ভেসে যেতে যেতে শূণ্যের ভেতরে ভাসমান অথচ ঘূর্ণির চোরাটানে পর্যুদস্ত।

সমুদ্রের এই পারে বাজছে নিঃশব্দ শোকভেরী।
ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে আসছে কংকাল,
যুদ্ধশেষ!
খোল নালচে পালটে পূণর্বার জলে ভাসছে ক্ষেত্রজ নৌকা
নারী ও পুরুষ সম্মিলিত দাঁড় টানে---

ছায়া সঙ্গীদলসহ অনিঃশেষ তাপের তন্ময় একাগ্রতা---ওটাই কবিতা।

দুপুরের প্রচ্ছদ

কবিতার সবুজাভ ক্ষেত পার হয়েব হেঁটে আসছেন,কবি
প্রসারিত হাত
দায়হীন আঙুলের ছায়া প্রশাখার জটিলতা
পায়ের তলায় দুর্বাঘাস---দুপুরের প্রচ্ছদ ঝরছে
ব্যবহৃত পুকুর পারের তালগাছ থেকে

রোদ্দুরের ধারাস্নানে ডাহুক উড়ছে
জল ছেড়ে,জলাভূমি ছেড়ে তাদের জীবন্ত ডানা
প্রায়শঃ সূর্যের কাছাকাছি ঐ মেঘের দিকে উড়ে যায়
উদাসীন মর্যাদায় অনুশাসিত অতীত,----
অনুষঙ্গরিক্ত এই বর্তমান---দীর্ঘ দিবসের চৈতন্য বিলুপ্ত যাত্রা

মাটি-আকাশ ধারাবাহিক নিয়মের দীর্ঘ সমারোহে নিভৃত ধ্যানের তাপে মগ্ন
সম্পন্ন গৌরবে অনাসক্ত ধূলো ওড়ে চৈত্রমাসের বাতাসে
বাড়ির পেছনে বুনোতুলসীর ঝোপঝাড়
হতদরিদ্র শিমুল পাশে রেখে কবি ঋজু হেঁটে আসছেন
সমৃদ্ধ ঘরের জানালায় স্বাগত উচ্ছ্বাস

রৌরব

অর্থহীন স্বপ্নের এ প্রান্ত ঘেঁষে দিনিগুলো নির্বিকার কেটে যাচ্ছে
স্বপ্নের অপর প্রান্তে আগুন ও ধোঁয়া
ওপারের বাসিন্দারা কি প্রত্যেকদিন পুড়ে যাচ্ছে
জলকলহের নীচে চাপা পড়ছে তাদের আর্তনাদ

আমাদের বিছানায় বিছানায় অতৃপ্তি,রৌরব
রাজপথে চলমান গতি আর ছড়ানো-ছিটানো রক্ত,হিংসা
আমরা কি পূর্বাপর ফিরে যাবো
যে ঘর পেছনে ফেলে এসেছি----তা ক্ষুধাময়
একমুখী গাঁয়ের সড়কে দ্রুতমুকুরের ছায়া,দীঘীভরা অবসাদ
দীর্ঘতর বটের সমকালীন ঝুরি
রৌদ্রে শুধু পাক খায় সাদা বক
ঐ দিকে চাষের ক্ষেত

বরঞ্চ কমলা রঙা সূর্যের সুমন্ত পথে হেঁটে চল
পুড়ে খাক হই

সমন্বিত অন্ধকার

চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশ দেখেছ
কী বিশাল এর পরিব্যপ্তি---
যুথবদ্ধ হাঁস উড়ে চলে
শিকারীর চাতুর্যময় ভঙ্গিতে ঝরে পড়ে
'এর মাংস অত্যাধিক স্বাদু'
শতাব্দীর পর শতাব্দী এবং বন্যতার পাশাপাশি
অপ্রাপণীয়ের বিস্ময়বোধে যা কিছু উৎসর্জন
বিচ্ছিন্নের বিষন্নতায় দু'চোখ জ্বলে ওঠে সমন্বিত অন্ধকারে

অন্ধকারের নিবিড় পটভূমি---প্রত্যাশার প্রতিরুপে
সারারাত স্বপ্নের নিভৃতে জাগে শাল মহুয়ার বিতত প্রলাপে
অসহ রাতের জল দুঃখ অশ্রুময়----সম্পন্ন গৌরবে ভাসে কালপুরুষ,সপ্তর্ষি

কেমন অস্পষ্ট প্রবাহিত সম্পূর্ণ আকাশ

ট্রাম

অশ্বেত পৃথিবী ভুলেছে রিক্ততার স্বেদ
হেমন্তের অধোলীন পাতা জলখাবারের মোড় ঘুরে
ট্রাম ছুঁয়ে আকাশে উড়ছে,নিরক্ষর

শবের গাড়ির হিমস্রোত কেটে
কতিপয় চিল
হঠাৎ সম্বিত পেয়ে
দুর্বার গতিতে ফিরে আসে
ট্রাম লাইনে,বাতাসে অশ্রু মুছে যায়

শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৩

মিলনী সংরাগ

আরো কিছু স্তব্ধতা--অবুঝ নারী কেন বোঝে না শ্মশাণে শুয়ে আছি

দুপুরের বিষে গায়ের কলংক খুলে পড়ে আমাদের সমস্ত আনন্দে
পুকুরের কাঁদায় পায়ের ছাপ মুছে গেছে
কেউ খেয়াল করে নি
কখন জঙ্গল ছেড়ে পাশের রাস্তায় হেঁটে এলাম;বাঘের থাবা
হরিণের আঁকাবাঁকা শিঙ-এ ঘনবদ্ধ কম্পন;জলের পাশে
কুমীরের খটখটে হাড়ে জলের বুদ্বুদ আর
ভূ-গর্ভে হৃদয়গুলো সত্যি সত্যি পাথরের নক্ষত্র--কানের পাশে মৌমাছির গুঞ্জরণ

সব আলো নিশ্চিতভাবে মিশেছে
তবু আমার দরিদ্র চোখে অত্যন্ত সুস্থির---
পরিণত পদক্ষেপে নূতন কুঁড়ির স্বপ্নে মগ্ন

আমি ধোঁয়াওঠা পথে ফিরে যাবো মিলনী সংরাগে

কাটাগুল্মময় পথ

তোমাদের সামাজিকতা লৌকিক।মাটির আড়ালে
স্ফীত মাটির স্বচ্ছাতা কেঁপে যায়।তোমাদের শুভ্র ব্যবহারে
স্বভাবী মানুষ ক্রুর  অন্ধকারের ভেতর প্রস্তাবিত দাবী ভুলে
পথিকজটিল পথে ফিরে আসে।উচ্চারণ অসাধ্য,সহজ কিন্তু
বিভৎস চিৎকারে আমাদের পরিচিত শব্দগুলো
একেকটি রুদ্ধ স্রোত।অবসাদ দিয়েছিলে,
স্পষ্ট মনে পড়ে শুধু মনে পড়ে না কখন
চৈত্রদুপুরের পথ পার হয়ে গিয়েছিলে

ফিরে আসবে,সে পথ
মরুভূমিবোধে কাটাগুল্মময় পথ

ঈগল

ঈগলেরা আকাশে উড়ছে
তাদের ডানায় সময়ের অন্ধকার

চারিদিকে শুধু ঈগলের নখের প্রতিবিম্বিত আলো

গ্যাস আর ধোঁয়াশার ভেতর পৃথিবী----
কতটুকু দেবে তার সীমাবদ্ধ  ক্ষমতার মধ্যে
গ্রহবাসীদের মধ্যে যারা তেজস্ক্রিয়ায় জ্বলে নি
তারা দেখুক গভীর খাদে কে কে জেগে আছে
বাগানের শান্ত অর্কিড---সে ও তো কাটাগুল্মে    আচ্ছাদিত

নিজেই নিজের মাথা ছিঁড়ে পোষা কবুতরগুলো
ভোগ দেয়
ওই দূরে ঈগল উড়ছে

মানুষের ভালোবাসা

মানুষের কাছেই পেয়েছি অবহেলা
মানুষের কাছেই পেয়েছি পারিজাত প্রেম
সমস্ত শরীরে ধূলো লেগেছিল বলে---
পথের ধারের ন্যাংটা পাগলী আমাকে বুকে তুলে নিয়েছিল
সারাদিন অভূক্ত ছিলাম দেখে রোঁয়াওঠা পাড়ার কুকুর
ভাগাড়ে না গিয়ে দুপুরটা গাছতলায় নিশ্চুপ বসেছিল
পায়ে জুতো নেই বলে লাবণী আমাকে পাথরের পথে হাঁটতে বারণ করেছিল

এত বেশী ভালোবাসা ছেড়ে আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না


বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৩

দেউলিয়া

রোদে  শুকায় ভিটের মাটি
পোড়া এ দেহের সাথে---

প্রলাপমগ্ন অমূল্য কাল কেটে গিয়েছে---এখন রাত
তবে কি জোছনা শুষে নেবে ক্ষত
আমার কখনো দেনা ছিল না অথচ
স্বতঃস্ফুর্ত সকালের আলোয় কখন দেউলিয়া ঘোষিত হলাম

আমার নিজের দ্যুতিময় আয়না নিঃসীম শীতে
আগুনের ভেতর কুয়াশা ভেঙে
অন্তরাল থেকে বের হয়ে আসে অবলুপ্ত নারী
ভূক্তাবশেষ শরীরে প্রতি জন্মের স্মারক---
ভাঙা গর্ভ থেকে টেনে আনে জটাফুল,
'এই যে এসেছি ফিরে,মানুষের চাহিদার চোখ নিভে গেলে
ভ্রুণহত্যার যে পাপ শরীরে মেখেছ
অনুতাপে জ্বলতে জ্বলতে জঞ্জালের মতো মিশে যাবে'

অসমাপ্ত ফল হাতে বলে
প্রুতিশ্রুত  বাতাসে সন্দেহ তবু সন্ধিগ্ধ দু'চোখ
খুঁজে নেয় পথ

অনাদিকাল থেকেই মানুষ নিজের পথ নিজেই খুঁজেছে

কল্পনাগুলো কখন মরে গিয়েছে---শুনিনি
বিসর্পিল পথে ফিসফাস,শকটের দাগ মুছে গেছে
শান্ত অবহেলা পাকা পাতাগুলো জড় করে

এই পাতার আগুনে শীত যাবে

হিংসাপূর্ণ রেশম

অবিনাশী স্থাপত্যে ভাঙচুর,
মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে যারা মদ জমিয়ে রেখেছ আর 
আর আমরা জেনেছি আমাদের ফিরে আসা নির্ধারিত
অনির্বাণ অগ্নিতে সহস্র পাতা পোড়ার ধোঁয়ায়
অপরিণত শীতের পাখিগুলো ডাহুকবিলের শুকনো চড়ায়
অপলাপী ভাষার স্তব্ধতা থেকে কোলাহলে উড়ে যায়

আহত ডানায় মুখ গুঁজে বসে থাকি ধবল রোদের প্রতীক্ষায়
উড়ে যাব; সাধ ছিল বলে আজ শব্দচাষী
রুঢ় অনুশাষণের চিহ্ন সমস্ত শরীরে
তবু দেখো জটাফুল;যা প্রত্যক্ষ----
জামাইপোকা কামড়ে ধরে

বৃষ্টি শেষে মেঘের ফোকর গলে যে নীলাভ আলো পরিদৃশ্যমান
তাতে কোন ফাঁক নেই---কখনো ছিল না
হাড়-কংকাল সমেত আমি বলে যেতে চাই

'আমি তোমাদের ভাষা কখনো বুঝি নি
তোমাদের ভরা মদের কলস আমি কখনো ছুঁইনি'

হিংসাপূর্ণ রেশম তোমাদের ভালোই মানায়


প্রত্যাশা

পরের বর্ষায় আমি জাল পেতে ধরব খলসে,পুঁটি
আমি সে জাল বুনছি---তাই দেখে
অভিমানী সুঁচ
ফুটো করে গর্ভবতী বধূর আঙ্গুল।

রক্তে মাখামাখি বিছানা---নবজাতক
কোন রাশির?ঠিকুজি,কুষ্ঠি ঠিক করে নাও।

দেখো,এ ছেলে নিশ্চয় একদিন বড় হবে।

শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৩

কাব্য সমগ্র

আমার কাব্যসমগ্র দিয়ে দিতে পারি

অন্ধকার থেকে অপমান
জল থেকে ডাঙায় উঠছে অন্ধ প্রতিযোগী
অথচ মানবী একদিন বুকের আঁচল ফেলে উঠে এসেছিল

বালির ওপর বসে লিখছিলাম কবিতা

কাচে বানানো দু'চোখ,জল নেই
রাত্রিবেলা ছাদ ও পাঁচিলে ধ্বসে পড়ার সুযোগে
মাথা তোলে চাঁদ

মরা নদী জোছনায় ভেসে যায়
তাকে পারাপার করে লিকলিকে সাপ

কি হবে কাব্য সমগ্রে

বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৩

আদিম সন্যাস

অনিশ্চিত পদক্ষেপে কে এগোয়?সচেতন প্রয়াসের নিবেশবিহীন পথ,
স্পষ্ট দেখা যায় নিস্পৃহতার ভেতর ভারী হয়ে আসছে দু'চোখ।
নিরতিশয় গোধূলি রঙে জ্বলে ওঠে অস্তিত্বময়ী চেতন,
অনিবার্য পরিণতির গোধূলিবেলা ওই দেখ কেমন ছুঁয়েছে স্বররণচূড়া!

তাকে অধিকার করে রাখে আদিম সন্যাস।

কবর

ত্রেতা যুগের বাতাস এসে শরীরে লাগছে

তোমরা কিছুই টের পাও না----পালাতে যাই
অশোকের ডাল ভেঙে কাধে পড়ে
অতীতকালের জলে আছড়ে পড়ছে ডিঙি নৌকা

ছায়াচর ঘুমে বিভোর,কবর কই
আমার শোয়ার সময় হয়েছে

অমাঙ্গলিক উল্কি

সহজ জলের স্তরে ভাসতে ভাসতে কতদূর,যাবে
আমাদের পাপের অভ্যাস,অমাঙ্গলিক উল্কির ছাপ সমস্ত শরীরে
অনাস্বাদিত অন্ধকারের ভয়ে কেউ ফেরে
কেউ ফেরে না---শূণ্যের অধিবাসী এ মানবজন্ম,----
প্রসারিত দুই হাতে মৃত্যুর পূর্বের লগ্নে তুলে নিয়েছিল
অমীমাংসিত সম্পদ আর বন্ধুর নিষ্ঠুর উপহাস

আমাদের পিঠে লবণজলের শোকাবহ ক্ষত
জলে ভাসমান ফুলে ওঠা সেইসব মৃতদের পার হয়ে যাবো
যাদের মায়েরা আজো ঘাটে দাঁড়িয়ে কাঁদছে

মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৩

প্রাকৃত শব্দের বোধ

প্রাকৃত শব্দের বোধে কবিতা লিখেছিলাম
সময় যখন গৃহমুখী

আমার ফেরার তাড়া ছিল
তোমার সময় ছিল না বরঞ্চ অপব্যয় বেশী হয়ে গেছে

এই ভেবে ভেবে দুই চোখে তীব্র ঘৃণা নিয়ে
পরস্পর বিপরীত পথে............

অন্তরালে সাজানো জীবন,
ভাঙা সংসার,যা কিছু ফেলে এসেছি সবই সুখময়
শুধু সুখের অস্তিত্ব ঝড়ে গিয়েছিল

পাঠোদ্ধার

গাছের পাতার মধ্যে কীট
হাতের তালুতে দীর্ঘশ্বাস,নক্ষত্রচূর্ণ----কে লিখে রেখেছে এসব

লোকে ভুল বোঝে----লোকায়ত ভুল
পায়ের তলায় ফেলে সংসারত্যাগী বাউল
শতাব্দী পরের কবি,অন্ধ পাখি-----
ক্রমঅপস্রিয়মান রেখা আর রেখাগুলোর পাশেই নিয়মবহির্ভূত প্রতিচিত্র
অন্তঃর্মুখী বর্তমান ক্রমে আরো ভাঋক্ত
শুধু অন্যদের কথা ভেবে ভেব যে ধ্বংসের বীজ পোঁতা আছে,---
সেই রগ্ন মাটির সবুজ ঘাস জ্বলে যাচ্ছে সীসা ও গন্ধকে

নিরুত্তাপ অন্ধকারে এতো রক্তপাত
তাকে ঢেকে রাখে কাদা ও মাটির তাল

মানুষেরা আজ ভুলে গেছে সব দুঃসংবাদ
শুধু রাজদ্রোহী কবি প্রাচীন অক্ষরমালা ঘেঁটে লিখে রাখে
দ্রুতগামী হরিণের আঁকাবাঁকা শিঙ-এ

যদি পারো পাঠোদ্ধার করে নাও

সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৩

নাগরিক সভ্যতা

.সমস্ত শরীর জুড়ে অপমান
এত অপমান নিয়ে বেঁচে আছি কি করে ভাবতে গিয়ে
হাঁটুজল ভেঙে অবসন্ন একদিন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
গ্রামজোড়া রৌদ্রনভস্তলে

আজন্ম নগরপাপী---
নগরপিতা আমাকে বলেছিলঃ

আমাদের এই নগরের জন্যে কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করেছ
পৌরপথে তবে কিসের প্রতীক্ষা

যদি না ভেঙেপড়ে অস্তিময়ী চেতন,এককেন্দ্রিক
আমরণ অন্তঃসার অভিশাপের মতোন
নগরপিতার শঠময় শ্বাসপতনের শব্দ

অনিশ্চিত পদক্ষেপে আমাদের যাবার বেলায়
নগরভবনে কিসের উৎসব

সতর্ক লিপি

ফুলহীন দু'হাত ছুঁয়েছে ঠোঁট
বুঝে নিয়েছিলাম আহ্লাদ
বহুপরিচর্যাজাত তোমার শরীর উল্টোদিকে বৈঠা টানে
আমার নৌকায়
নদীর অব্যবহৃত জলে ভেসে যেতে দেখি পরিত্যক্ত চোলি ও কাঁচুলি

কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছ,দৃষ্টি আকাশের দিকে
আকাশের ওই কোণে ঈশ্বর থাকেন
আমাকে কি উপহার দেবেন, ঈশ্বর
নব-আবিষ্কৃত ধাতুর আঁকর
গর্ভ উন্মাদনা
সিমেন্ট,বালি ও পাথরের চাক
কূল রক্ষাকারী ভ্রাম্যমান পরিদর্শকের পদ;যাতে
সমুহ ক্ষতির আগে টন টন শস্যে ঢেকে দিতে পারি জনপদ

ওই নদীতীরে দেখা যায় মধ্যযুগ শেষ হয়ে গেছে
বানভাসী মানুষের শীর্ণ পেটিকায় নিরন্নতার সতর্ক লিপি
জন্ম ও মৃত্যুর অন্তরালে যেই বিভাজন
তার মধ্যে কোমর বাঁকিয়ে চলে শঙ্খচুড় সাপ

দূরে সাঁপুড়ে দাঁড়িয়ে হাতে ঝাঁপি

পিতামহের অনাব্য দেহ

শরবন নুয়ে পড়ে ভরাট দুপুর রোদে
আশ্বাস-সংশয়ে পরিকীর্ণ বাবলার বনে
স্মৃতি না-কি ভবিষ্যৎ ঝাপিয়ে পড়ছে---
আমরা জানি নি
অনতিরিক্ত যা স্পষ্টতঃই তাৎপর্য্যহীন এপার
ওপারে সন্ধ্যার শীতে কুঁকড়ে পড়ছে ঘাসবন

কাঠ বাদামের তলে উপাসনারত কিছুটা গভীর সত্য
কিছুটা সত্যের দোলাচলে জানতে চেয়েছিঃ
স্পষ্ট উচ্চারিত বর্তমান,অতীতের দিনলিপি...........

চোখে ভাসে অনাবিষ্কৃত নক্ষত্র আর
শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে আসে অরণ্যতক্ষক

স্বপ্নের ভেতর কেবলই তাড়া করে ফেরে রক্তমাখা নখ
পিতামহের অনাব্য দেহ

রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৩

প্রতিরুপ গোধূলি

সূর্য্যাস্ত দেখবে বলে
একাকী ধানক্ষেতের আলপথে হেঁটে চলে কবি
পেছনে শ্মশ্মাণ,পোড়োবাড়ি,শতেক যোজন বধ্যভূমি----
মুছে ফেলে বৃষ্টির চঞ্চল রেখা
কত সহজ,নিশ্চিত বর্ষা আসে বর্ণময় প্রয়াসের সামগ্রিক প্রতিরুপে

ভাবময় কল্পনার নদী----দু'তীরে জলজ গুল্ম
নিঃসঙ্গ মাছরাঙার শেষ অস্থিরতা মিশে যায় ঘোলাজলে

এ-রকম কালো মেঘলা দিনের শেষে গোধূলিবেলা খুঁজতে বেরিয়েছ

শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৩

প্রুতিশ্রুতি

অবশেষে শূণ্য পড়ে থাকে শীতভুমি।এ ভূমির ঊর্ধ্বাকাশে
এক নক্ষত্র উঠেছে।কুয়াশায় কুয়াশায়
যদিও তা ঢেকে ছিল কিন্তু
প্রুতিশ্রুতি মুছে যায় নি---যে প্রাপ্তি জাহাজের মতো

দূর সমুদ্রে জাহাজ পাড়ি দিলে মাস্তুল,ধোঁয়ার রেখা
আরেক বন্দরে মেশে নূতন প্রুতিশ্রুতিতে।

তারপর শুধু ঢেউ,
সফেদ ফেনার কানাকানি।

তোমার দ্বিতীয় প্রুতিশ্রুতি কবে দেবে?

নিরাসক্ত

প্লাবিত গাঁ,
চলো,আমরা কাদামাটির পথ পার হয়ে যাই
ওপরে সহস্র বক দানা ঝাপটিয়ে নিজেকে জাহির করে
ধানছড়ার ওপর,মাঠে বৃষ্টি পড়ে
আর মৌনতায় স্তব্ধ তুমি বাতাসের কাছে
সুরভিফুলের ফুটে ওঠার খবর নাও

গ্রাম রক্ষাকারী বাঁধে অনাহারী মানুষের ভীড়,জীর্ণ পেটিকায় সতর্কলিখন
ষড়যন্ত্রী নেতা ও সমাজপতিদের হাতে
তাঁবু,রিলিফ পেছনে ক্যামেরার লাটবহর,সম্ভাবনারহিত প্রুতিশ্রুতি মুখে

আমাদের অনেকদিনের ব্যবহৃত ঘর ভেসে যাচ্ছে ওই
নিরভিমান আঁধার জলে
নদীর জলের ছলছল শব্দে যতোদূর ভেসে যায়
ততোদুর চেয়ে থাকি কিন্তু কেউ-ই ফেরার কথা ভাবছি না
কালো গোলাপের মতো ফুটে ওঠা আষাঢ়ের ঘন এই রাতে


বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৩

চোখের ভাষা

যেদিন জেনেছ
আমি চোখের সাংকেতিক ভাষা অবলীলায় পড়তে পারি,---
তুমি আর সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকাও নি
যদি ভালোবাসার অতলে ডুবে যাই

সাজানো জীবন নেচে চলে রুপালী দুপুরে
আমি যত শঙ্খ কুড়িয়ে এনেছিলাম----
চোখের অশ্রুতে মুক্তোগুলো সব ঝরে যায়

চারিদিকে এত জল
বুকের প্রপাত বেয়ে ঢল নামে
শর্তহীন লোভে ব্যভিচারী ডিঙা খুঁজি
বিপরীত তীরে পাড়ি দেব
কাছে এস
এ চোখের দিকে অপলক চেয়ে থাকো

অমর্ত্য প্রেমের কিছু কবিতা লিখব

দ্বিতীয় প্রস্তুতি

আমি নিজেকেই ছেড়ে গিয়েছিলাম নিস্তব্ধ মধ্যরাতে
আধোস্বপ্নে মানুষেরা কালান্তরে ছোটে
অনিশ্চিত তাদের পায়ের শব্দে
প্রবহমান শক্তিতে
দক্ষ ডুবুরির মতোন অনিদ্রিত
অর্থাৎ সম্ভাবনারহিত

আবশ্যিক আর স্পর্শ্ময় শস্যক্ষেত ও পাহাড়ী পথে নিশ্চেতন মৃত্যুপক্ষ
ভূগোলের মাঠে আজ শুধু মানুষের কাটা ছেঁড়া জিভ
পূরো পৃথিবীর মাঝখানে শুধু রক্তমাখা হাড় ও করোটি
সাজানো রয়েছে----প্রলম্বিত অপেক্ষা ও একাকীত্বের গানে দ্বিতীয় প্রস্তুতি

পূর্ব নির্দেশিত ক্রমরুপান্তর
না-কি নিজেকেই ছেড়ে যাবার প্রয়াস

বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৩

ধর্ম

ততটাই মানানসই প্রাত্যহিকতা---যতখানি আমাদের বেঁচে থাকা
পরাশ্রিত ধর্ম---যতটুকু ধূসর,সবুজ ঠিক মৃত্যুর রঙ
আমরা কখনো ধর্মচ্যুত হব না এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে
শিউলি তলায় চল
বেলপাতায় সিঁদুর মেখে নাও

আজ দেবতার ভোগ দেব উপবাসী,নিরম্বু শরীরে

বিকৃত মুখের ফুল

জ্বলন্ত অগ্নিকে আমি নিভে যেতে দিয়েছি।রক্তের মধ্যে
ফেনিল উচ্ছ্বাস-----দেয়ালের কোনায় কোনায় ঝুল,মাকড়সাজাল,
প্রতিরোধে ক্ষয়ে ওঠে ভূর্জপুঁথি।স্পষ্টতঃ যা উঠে আসে
করপুট পেতে ধরি----বিকৃত মুখের ফুল।

রাত্রি যত গাঢ় হয়
নক্ষত্রেরা পরস্পর উপহাসে মেতে ওঠে নিজস্ব আকাশে।

নিঃস্ব

চিরকাল মানুষের কাছে ক্ষমাই চেয়েছি,----
মাতাল এ হাআত যতটুকু রৌদ্র ছেঁকে নিয়েছিল
বোধের পৃথিবী থেকে---তার সবটুকু
ছড়িয়ে দিয়েছি পাখিদের অভয়ারণ্যে,গ্রীষ্মের শেষে
বালির পাহাড় ভেঙে একটি মুহূর্তে তুলে নেয় প্রতিচ্ছবি
ডুবোজলে অবিরত লুকোচুরি

উৎসরিত সব গান ও কবিতা তুলে নিয়েছ আঁচলে

অনুচ্চারিত সমস্ত শব্দ কি কেবল
তোমাদের অধিকারে

মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৩

জলপোড়া

আমার বুকের মধ্যে আগুন,হাঁড়ের মধ্যে ঘূণেপোকা।
মোহঋতু,বসন্ত উৎসব----সব আনমনা ঝরে পড়ে।
যারা চলে গিয়েছে অব্যবহৃত ঘর,সাজানো সংসার ছেড়ে
তারা আজ,কাল বা পরশু ফিরে আসবে এমন প্রতিশ্রুতি
পীত জারুলের বনে মিশে আছে।
সমর্পিত দুপুরের হলুদ বেলায় অগ্রুন্থিত মালা,
যত দুর্লভ সংগ্রহ----ধ্বংসবালির ওপর মেতে আছে শ্যামাপোকা।
যে পাথরে লেখা হয়েছিল এপিটাফ---
আজ তা মলিন,ধূসরিত।

অতীতের আবর্জনা বলে ভাঙছে কাঁচপাত্র,
পূরনো খাতায় লেখা গান।

অনন্ত জলের নীচে আমার প্রস্তুতি।
অতল জলের থেকে ঘাঁই মারে জলপোড়া প্রকৃত শরীর
একদিন ছুঁয়ে যাবে বর্তুলাকার পৃথিবী,
প্রচন্ড সাঁতারে।

রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৩

নিয়তিময় শতক

অনন্ত বর্ষার জলে ক্ষেত্রজ কৃষক আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে
পাশাপাশি তার ছায়া,---
দীর্ঘ পথে প্রতিফসলের দিকে মোহঋতু
সারাৎসার পানীয়ের কথা মনে পড়ে

চারিদিকে এত ফেনা ও জলের বুদবুদ
খেলাচ্ছলে গ্রামময় ছুটে চলে কিশোরীর চঞ্চল পা
ইন্দ্রিয়গোচর বস্তুব্যাপকতা থেকে ঝরে পড়ে গুপ্তরোগ,শরীরের শ্বেতকুষ্ঠ
চেতনাউদ্ভূত কবি ছুঁড়ে ফেলে কবিতা লেখার খাতা

কিশোরীর সারল্য ও নৈসর্গিক পাঠমালা

এই শতক নিয়তিময়
খুঁটে তোলে কন্দফল
কৃষক ও তার কিশোরী দুহিতা

কমলা রঙা

বনের ভেতর পথ হারিয়েছ
এখনো শিশিরকণা লেগে আছে গাছের পাতায়
ঝরে যাচ্ছে নিঃস্ব পাতা ও নূতন কুঁড়ি
অরণ্যের ভেতর আঁকা বাঁকা শিঙের মাথায় ব্যভিচারী পরগাছা
কেমন জড়িয়ে আছে

দ্রুতগামী চিতা----মহিষের পিঠে দগদগে কাঁচা ক্ষত
বেয়ে রক্ত ঝরছে--ঐ দূরে হরিণের সতর্ক চাহনী
আমি এই বনে যত ঘাস,যতফুল দেখেছি---মৌমাছি
তার গুঞ্জরণশীল অমিত ডানায় মেখে নেয় শুধু

যারা আঁকরের খোঁজে জরীপের যন্ত্র এনেছিল
অগ্নি জ্বেলে ঝলসে নিয়েছে বনমোরগের মাংশ
তারা ফিরে গেছে তাদের শহরে
ইতঃস্তত পড়ে আছে খাবারের কৌটা,দড়িদড়া

নীল জলাশয়ে নবমীর চাঁদ যখন ঝলমলিয়ে ওঠে
তাদের কমলা রঙা মুখ মনে পড়ে

আমি মনে মনে ভাবি সেইসব সাপ,---
কোমর বাঁকিয়ে একা একা গর্তে ফেরে

উৎসবের নাচ

অনিমন্ত্রিত এসেছি তোমাদের এ উৎসবে।অনভিনিবেশে
সাদর অভ্যর্থনার প্রত্যাশিত---
একাগ্রতা ভুলে ঝাড়লন্ঠনের শর্তাধীন আলো
শরীরে মেখেছ?কতদিনের প্রস্তুতি অপরিজ্ঞাত প্রয়াসে?

স্বতঃস্ফুর্ত ফেনিল প্রক্ষোভ।প্রতিটি বিন্যাসে,
প্রতিটি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্ণ রেখায় অমিত কৌতুহল।
আমাদের বুকের ভেতর বিপর্য্যয়,অনন্তকাল স্তব্ধনিবেশ,
অন্ধকারের ভেতর বনভূমি,তমোপাহাড়,মাঠের নিথরতা।

অন্ধকারের রঙ,শীত,কুয়াশা।প্রশ্নের অবসানে
ঘুঙুর বাজছে।উৎসবের নাচ শুরু হল এই।



মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৩

পরিণতহীন

আধো-অন্ধকারে জামের বনের মধ্যে ক্ষুধার্ত কাঠবিড়ালি
আমি তার ছুটাছুটি দেখি ডাল থেকে ডালে
পাতার আড়ালে ক্রীড়াশীল ছেলেবেলা
অর্থাৎ সৌন্দর্য্য এবং উজ্জ্বীবনের উৎক্ষিপ্ত ব্যথা---
অবিরত সংকেতে পূবের নক্ষত্রবিহীন মাঠ ভরে ওঠে

ঐ প্রান্তর পয়মন্ত নয়
অন্ধ বাউল একতারার সুরে দেহতত্ত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে
এমন অনেক শূণ্য ক্ষেত
আত্মাহীন শরীরের অবসানে তোমরা কোথায় যাবে
শিমুল তুলোর পরিণতহীন লক্ষ্যে
তপশিলি পথে পরিত্যক্ত শহরের দিকে

বহুদিন অব্যবহৃত হৃদয় খল-নির্ভর কম্পাসে লুপ্ত

সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৩

অফুরান ছুটি

নির্বোধ ক্ষমতামোহে ভাসে জল
আর ওদিকে ডাঙায় এত এত মানুষের শোভাযাত্রা
রেইকজাভিকে উত্তেজনা প্রশমন
অসলোয় শান্তিচুক্তির দলিলে গূঢ়মন্ত্র

অপরিকল্পিত দূর্বাঘাসে কাঁচির আঘাত---
পরিপূর্ন নান্দনিকতায় ছেয়ে আছে তোমার বাগান
ফুল তুলবার কালে মালী নেই
বসন্তদিনের মাঠে অফুরান ছুটি

রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৩

অবৈধ সঙ্গম

জামরুল বনের অন্ধকারের মধ্যে
দাউ দাউ জ্বলে ওঠে অগ্নিশিখা
তার ভেতর নিমগ্ন নারী
আমি তাকে জাপটে ধরেছিলাম,---

এটা ছিল আমার দ্বিতীয় সহবাস

বুকের কাঁচুলি খুলে পাড়ার অতসী দিদি
আশ্বিনের জোছনাজলে সাঁতার কাটছিল
আমি ভুলেছিলাম পারিপার্শ্বিক,স্থান,কাল
প্রথম নারীদেহের স্বাদ

তৃতীয় সঙ্গমে সারারাত কেটেছিল অপা বৌদির শোবার ঘরে
নীলাভ আলোয় জ্বলে যাচ্ছিল শরীর
অনাবিষ্কৃত রহস্যে

তার পরদিন অপা বৌদির হাতের মুঠো থেকে
রাশি রাশি যুঁইফুল কার্পেটে,মেঝেতে আলপনা এঁকেছিল

'আমার মৃত্যুর জন্যে কেউ দায়ী নয়'

সেই থেকে শূণ্যে দুই হাত তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছি
আমার মাথায় পাখিদের বাসা
শরীরে মাকড়সার জাল......

অবকাশ

কৃষ্ণপক্ষ নাচে দু'চোখে।পালিয়ে যাবে?
বিশ্বস্ত সমুদ্রে?ঘণ অরণ্যের ভেতর প্রবল রোদশ্বাস।
দুপুরবেলার নদী।কাঁপছে প্রবাসী নৌকা।খোল ভর্তি পাপ।
এতোদুর এসে ফিরে যাব?

যোজনবিস্তৃত জলাভূমির ওপারে
পরিচিত পথেরা প্রত্যহ ফিরে আসে।
সীমান্ত শহরে ধূ্লোওড়া ভীড়,
দিগন্তের ওপারে কদ্দুর যেতে পারবে,এতোটা অবকাশ?

আমার একটি চোখ আধখানা ভালোবাসা নিয়ে জেগে আছে।

শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৩

অসম পরকীয়া

অসম পরকীয়ার জালে যখন জড়িয়ে পড়লাম---
চারিদিকে ছিল পারিজাত আলোর অজস্র রেখা,
ক্রমপরিণত গোলাপী অভিনিবেশে অবিসংবাদিত কৌতুহল।
যে কষ্টের শেষ হয়ে গিয়েছিল তার জন্যে
হটাৎ উদাস হয়ে ওঠা।
অদৃশ্য পারস্পরিক ছন্দে অশাসিত স্থলপদ্ম---
অনির্মিত জেগে ওঠে অন্ধ চুম্বনের আঁধারময় ব্যর্থতা।
অসংশয়িত অবসানের আয়োজনে অনিচ্ছার ভেতর প্রাচীন মেঘ।

ওই মেঘ জলভারানত।

উর্ধ্বমুখী প্রয়াসে আলুলায়িত চোখ।
সু-শৃঙ্খল নির্ধারীত ছন্দে রচিত কবিতা
আমাদের আগে আগে এগিয়ে চলছে।

কোন দুঃখই আর বাসা বাঁধে না এ বুকে।

বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৩

অমোঘ শঙ্খ

অশান্ত নদীর স্থির চিত্র।পালতোলা ডিঙ্গি নৌকা।
ঝরে পড়ে উন্মীলিতা রাত।'দীর্ঘ যাত্রায় নৌকার ক্লান্তি কত'---
একদিন জেনে নিতে শ্মশ্মাণের আধ পোড়া কাঠ
রোদ বৃষ্টির মতোন ভেসে গিয়েছিল।

মন খারাপের কবিতা লিখব?দেখি মন ভালো হয়ে গেছে।
ধূলো ওড়া পথে গাইছে বৈষ্ণবী,
নিশ্চিত দ্বিতীয়া মরমীয়া গান।
দৃশ্যজগতের রহস্যময় আলোক,ভারমুক্ত আবেদন,জন্মান্তর---
প্রতিটি কীটের গুঞ্জরণে শুনি অশাসিত অন্বেষণ।
নৈষধচরিত,বৃহদ্ধর্ম পূরাণে অমনোযোগী বিচ্ছিন্নতা।
জীবনের ছন্দ কোথায় মিশেছে?

শুধু মৃত্যুর নিয়মে শঙ্খ বেজে চলে।

সহজতর জীবন

প্রথম মাতাল তার শূণ্য পাত্রে
বুদবুদ ছড়িয়ে দিচ্ছিল

দ্বিতীয় মাতাল তার জামার ভেতর থেকে
অন্ধকার আকাশে জোনাকী পোকাদের ছুঁড়ে ফেলছিল

আর নক্ষত্রগুলো কেবল জ্বলছিল

পরিবর্তন

সাংকেতিক পাথরে আদিম মানুষেরা কিছু লিখে রেখেছিল
আমি তার রহস্য উদ্ধারে মেতে উঠি

দেখি দূরের জানালা খোলা
টুপ করে ভেসে আসে কবিতার নীল খাতা
কে ছুঁড়ল
কোন কবিতা বিদ্বেষী নারী
না-কি ব্যর্থ কবি
সামাজিক দো-টানায় বিষুব শূণ্যতা
আমরা ফিরেছিলাম ভাসমান ঘাসবীজে
গর্ভাধান অনুষ্ঠান শেষে
মঙ্গলাগ্নি;যা কুশন্ডিকার সাথে আপাত পৃথক সীমন্তোন্নয়নে
দর্ভপিঞ্জলিতে আচঁড়ে দিয়েছিলাম সিঁথি

সেই সিঁথি আজো বিদ্যমান

কেবল চোখের দৃষ্টি পাল্টে গেছে

প্রত্যহিক

সমান্তরাল রেলসড়ক ঘেঁষে মাটির দেয়াল।
নিকানো উঠোন।
মহানিমের শাখায় অবসন্ন কাক ঝিমোয় রোদ্দুরে।
শরীরের তেল,ঘাম ধূয়ে অন্নপূর্না সাজে দ্বিতীয় প্রস্তুত,নববধূ।

ধূলো ওড়া পথে তার পুরুষ আসছে।

মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৩

নিস্তব্ধ উৎসর্জন

অনবহিত বনের শান্ত নদী---অপরিসীম নিয়মানুগে উন্মীলিত গতিপথ।
সেতু নেই।সারাদিন নিরভিমানী নৌকার পারাপার।
উর্ধ্বমুখী জলজ বন্যেবুড়োর ঝোপে অসংযোজিত অপেক্ষা।
নিতান্তই অনিচ্ছার ভেতর অযত্নে আঁকা সবুজের প্রতিচ্ছায়া।
নিরপেক্ষ রুপালী চরের সমগ্রতা অপস্রিয়মান।

ক্রমবিকাশমান স্বপ্নের নিবিষ্টতা ভেঙে
গড়িয়ে গড়িয়ে নামে বিন্যাসিত অবহেলা।
আরক্তিম কল্পনা।সমস্ত শ্রম ব্যর্থ।ফিরে যাব?
ক্রমপরিণত নিস্তব্ধ উৎসর্জনের মধ্যে।

শীত,রক্ত,আগুন ও জল

ভাষাগত তারতম্যে কেমন শীতল আচরণ
সারারাত ধরে অবিরল বৃষ্টি
আর বৃষ্টির ভেতর থেকে হেসে ওঠে
ভাঙা নৌকার গলুই
কাদামাটির পিচ্ছিল পথে আমবাগানের অন্ধকারে নিশীথ অপরিচয়

অনতিক্রমনীয় বরফস্তরে ক্রমস্ফীত রাত
ছুঁয়ে ছুঁয়ে এগিয়ে চলছে
তার প্রতি পদক্ষেপে আগুন,
অন্ধকার জয়ের প্রয়াস
রক্তের ভেতর নিশ্চিত সিদ্ধান্ত

আমাদের বয়স এখন কত হল
.........বিশ,ত্রিশ,চল্লিশ,পঞ্চাশ
দু'টো জীবনের তমঃনিবিড় বাসর
আমরা কি পূর্বাপর ক্ষয়ে যাবো
শীত,রক্ত,আগুন ও জলে
 

রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৩

ম্লান অনুস্যুতি

চারু বেদনার সীমাহীন আয়োজন
উদ্বাস্তু এ ঘর উপেক্ষার আস্তাকুঁড়ে
শৈশব-কৈশোর থেকে যৌবনের এতো প্রয়োজন
উড়ে যাবে চ্রিদিকে জ্যোৎস্নার আলোয়

অর্থহীন ধূলো,নিঃস্ব পাতা,----
আমাদের খেলাঘর ভেঙে যায়
মৌন বৃষ্টির নিঃসীম প্রতিবাদ বা চোখের জলে
অনিঃশেষ বৈশাখের ছায়া অপসৃত দুই হাতে

সংগোপণ প্রতীক্ষায় ম্লান অনুস্যুতি
সমস্ত শূণ্যতা ভরে ওঠে কুহকিনী অন্ধকারে
অলৌকিক উন্মোচনে দ্বিতীয় জীবন
ভাবনাময় গোলাপ ডানা মেলে

তুমি কোন সম্পন্ন পাড়ায় থাকো


শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৩

বিধুমুখী সুর

তুমি এত কাছে চলে এসেছ---তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ টের পাই
রাতের নীলাভ মানচিত্রে গুপ্ত গহ্বর,বনের মাঝখানে
জমে যাওয়া জোছনা আর তার আলোর ঝরণাধারা,----

দৃশ্য এবং দৃশ্যমানতার মধ্যে ভেঙে এনেছি সবুজ পাতাময় ডাল
আমাদের সু-নিশ্চিত বোঝাপড়ার ভেতর বিধুমুখী সুর

বসন্ত দিনের ঘাসে পড়ে থাকে বেনারসী-চেলি।

নিমগ্ন আয়োজন

দৃশ্যজগতের যত গান,কবিতা লিখেছিলাম,---
ভুলে গেছি সুন্দরের সব প্রতিচ্ছায়া।
বসন্তদিনের ঘাসে পড়ে আছে
বহু ব্যবহৃত রুমালখানি।ঐ দিকে
সম্পন্ন বাগান।গোলাপের ঝাড়ে সারাদিন কর্মব্যস্ত মালি;
যার নিজস্ব কিছুই নেই।
না,বাগান।না,প্রেমিকা।

তবে নিমগ্ন কিসের এতো আয়োজন?

বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৩

কুইনাইন

এইখানে চিকড়াসী বন।হলুদ ও লালফুল গুলো
ঝরে যাবার আগেই পেড়ে নাও।স্বল্পায়ু জীবন,
সন্নিবেশিত পাতায় বেঁচে থাকার অম্লান সাধ।
শাখাবহুল গাছের ফুলে পোষাক রাঙাবে?
তোমার বাড়ির সিংহ দরোজায়
নকশা আকাঁবে,তাই পাতলা কাঠের প্রয়োজন?
কাল রাতে জ্বর এসেছিল?
অবিরুদ্ধ ছাল থেকে তুলে নিতে এসেছ কুইনাইন?

মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০১৩

ব্যর্থ শ্রম

পাহাড়ের ঢালে আমার লৌকিক গ্রাম।ছড়ানো চত্বর,
ধূ ধূ মাঠ।অদ্ভুত পায়ের শব্দে
জলপাই বনের পীতাভ অন্ধকারে কারা হেঁটে যায়?

আদিম মানুষ?পায়ে পশুচর্ম,হাতে পাথরের ফাল।
কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যায় চকমকি পাথর ঠোকার শব্দ শুনি।
আগুন জ্বলে না।ব্যর্থ শ্রম।

রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

জোনাক পোকা

আমাদের অবদমিত ইচ্ছেরা সমন্বিত জ্বলে ওঠে,
কোনো কোনো রাতে।
উচ্চারণ সাধ্য নয়-----এমন কতক
স্পষ্টময় ভাবনার অন্তরালে জোনাক পোকারা
অন্ধকার ঘিরে
বিভৎস চিৎকারে সমর্পিত।

আতংকিত লালরঙের বারান্দা থেকে ফিরে আসি
অরব ভালোবাসার প্রতিশ্রুত ঋণে।

কড়ি

নৌকা,জাল,শস্যবীজ,ধাতুর আকর,---
আর কী কী চাই তোমাদের
করপুট ছেঁকে বিফলতা ঝেড়ে ফেলে
কতটুকু সফলতা পেলে তুমি থেমে যাবে

দীর্ঘ অসুখী প্রচ্ছায়া
মস্তিষ্কে কেবল পাক খায়----
জল,মেঘ,রৌদ্র,শিয়রে জ্যোৎস্নাপ্রদীপ

সহজতর সিন্দুক ভরে ওঠে

শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

নিয়ম-বিরুদ্ধ আর্তনাদ

বসন্ত প্রহর সমাগত।কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায়
বসে করপুট পেতে ধরি।ফুল ঝরে,
লাল লাল ফুল।

ফুল সমেত বাগানে একা একা ঘুরি।
মালি নেই।অনেক দূরের পথ পার
হয়ে এসেছি।দেখেছিঃসহজাত জলতৃষ্ণায় বেতস পাতাগুলো
কেমন এলিয়ে পড়ে।আজকাল প্রায়শঃই আমি
জল মনে করে মরীচিকা ধরতে এগিয়ে যাই।
এ-ও জানি জলাশয়গুলো ঘিরে
আবাসন প্রকল্পের জমজমাট বাণিজ্য।

জীবাশ্মের অন্ধকারের ভেতর মৃত্যুপরবশ
সভ্যতার নিয়ম-বিরুদ্ধ আর্তনাদ।

কালি মুর্তি

কালি মন্দিরের চাতালে প্রোথিত এক যুপকাষ্ঠ---
রক্তাক্ত খড়গ,পাশে।
কাটামুন্ড এদিকে,ওদিকে ধড়।

পেছনের দিকে ন্যাংটো কালি।গলায় নরমুন্ডের মালা,
লকলকে জিহ্বা।

মানুষের মৌলিকত্ব

ঘরে ঘরে আগুন জ্বলছে।
বাতাসে আমরা তার তাপ টের পাই।
নির্মম নিষেধে বাগানের ফুল হাতে নিই,
গোলাপের রঙ একেবারেই ভিন্ন।
সারাদিন শীতল,সংহত সর্বনাশ।মানুষের মৌলিকত্ব আজ
ইতিহাসের স্বয়ংসম্পূর্ণ চিত্রে নেই।পরিদৃশ্যমান পরাবাস্তবতা,---
স্বতন্ত্র চিত্রের অবগাঢ় প্রলেপন।হয়তো বা
অন্যকোন ইতিহাস।

'পূরাণের পাতায় যেটুকু লেখা আছে'
এর চেয়ে বেশী জানতে চেও না।

মহাপাতকের স্থান শেষপর্য্যন্ত নরকে নির্ধারীত।

শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

নির্মাণ কৌশল

আত্মমগ্ন আকাশ;যেখানে নক্ষত্রের সাজানো সংসার
কী গভীর মমতায় চেয়ে থাকে পৃথিবীর দিকে
মাঙ্গলিক বৃষ ও কলস ছুঁয়ে প্রকৃতির সন্তান আমরা
ঈশ্বরের প্রতিস্পর্ধী চোখে
অন্তরালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলি

সকালের কাঁটাভাঙা রোদ লেগে আছে হেলে পড়া তালগাছে
প্রশ্নাতীত সহানুভূতিশীল যথার্থতায়

চিরায়ত দৃশ্য ও উজ্জ্বীবনের

আমাদের মাটির বাড়ির কথা মনে আছে
গোবর নিকানো উঠোনের মাঝখানে ডালিম গাছের দীপ্তি
রোয়াকের পাশে সম্মিলিত বেঁচে থাকার তুলসীমঞ্চ---
প্রলম্বিত অনির্ভর

সেই মাটির বাড়িটি আজ আর নেই
পরিব্যপ্ত জলের শাষণে ধ্বসে গেছে
অযত্নপ্রয়াসে ব্যর্থ আমাদের নির্মাণ কৌশল

নিয়তি

অহংকার এবং দাম্ভিকতা
আমাদের কোন স্যুয়ারেজ সভ্যতায় নিয়ে যাচ্ছে ভেবেছ,কখনো
নর্দমা ও শস্যাগার যখন অসন্তোষের জলে ডুবে যায়
চাষীদের আর্তনাদ,অভিশাপ
গবাদি পশুর শবে ভরে ওঠে
তোমাদের বাড়ির আঙিনা----তখন তোমরা
নিশ্চিত আশ্রয়ে রামায়ণ চরিতের মাহাত্ন্য,ধর্মের সারকথা বিলি কর
আমরা কী নির্বিকার বালিবধের বৈধতা
নিয়ে কোন আস্ফালন করি না;শতেক প্রতিশ্রুতি আর
কথার ফুলঝুরিতে বিমোহিত হই

এ রকম নিয়তিই মেনে নিয়েছি,আমরা

চড়ুইপাখি

কালি সন্ধ্যায় কি দেখ
মেঘ না আকাশ
চাঁদের শরীরে লেগে আছে নিশাচর বাদুড়ের ডানা
আকাশে উড়ছে----সেইসব দিন গত
অতলান্ত পর্বতের চাপালিশ বনে স্মিত হাসির করুণা----
শূণ্যতার ভেতর দাম্ভিক প্রেম গমগম করে বেজে ওঠে
কত কষ্ট হয়---কম দেখা হয় নি,তোমাকে,---
পোষা কাকাতুয়া,দোয়েলের খাঁচার সামনে সারাদিন পর্যটন
শুধু শঙ্খচিল ফিরে গেছে

আমাদের নিকটতম চড়ুইপাখি ঠিক তেমনই আছে

বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

পাথরভাঙার গান

স্বার্থপরতার মাত্রা পূর্ণ হয়ে গেলে আকর সভ্যতা
সেতুর আড়াল দিয়ে প্রবাসী নৌকায় পাড়ি দেয়
নাগেশ্বর গাছের ছায়ায় পড়ে থাকে বসন্তকালীন রঙিন পোষাক
সমস্বরে শুধু শোনা যায় পাথরভাঙার গান

কোথা থেকে আসে বেদনাবিধুর গান
কোথাও না কোথাও লুকিয়ে আছে পশুআত্মা
ফুল দেখলেই ঝাপিয়ে পড়বে

এইখানে নাগেশ্বর গাছের ছায়ায় তুমি গাও
জীবনের,জন্মের,ফুলের.....
কান পেতে শুনুক হিজড়া,গৃহী,বধ্যভূমির ঘাতক

সহজতর নির্মাণ

ইন্দ্রিয়পরবশ জেনেছিলাম,---
সমূহ সর্বনাশের আগেঃমৃত্যুর কারণ।
নৌকা ও জালের রহস্যের সমাধান
স্মৃতি-বিস্মৃতির বেড়াজালে ক্রমবর্ধমান বেড়ে ওঠা
যুগপৎ হতাশা,গভীর তৃপ্তিবোধ।

ছেনি-হাতুড়ির শব্দে সহজতর নির্মাণ

উনুন

মশলা ভাঙার গান থেমে গেলে
মা আঁচলে হাত মুছে দেখে নেন
দুধের উষ্ণতা।

ঘরে ঘরে হেঁশেলের উনুন আগুনে ভরে ওঠে
আমার বোনের রাঙা ঠোঁট থেকে গলে পড়ে
পানের পীতাভ রস।

আর ওদিকে হাঁড়িতে
জৈব রসায়নে সেদ্ধ হতে থাকে
চাল,মাস কলায়ের ডাল,রক্ত,ঘাম......

উপবাসী স্নান

পরিত্যক্ত ধাতু খনি,সেতুহীন নদী,
স্বচ্ছ জলে ডুবে আছে আধখানা কংকাল,---
নিজস্ব পরিচয়ের ব্যাপ্তী পার হয়ে এই ছিল
আজকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞান।

সেদিন বৃষ্টির রাতে কুমারী মেঘেরা
সারারাত নেচেছিল উঠোনে,টিনের চালে,গাছের ওপর।
তাদের পায়ের চাপে ভেঙে পড়েছিল
কীটের গুঞ্জনসহ কিছু,ডাল,তাদের সবুজ পাতা
বেদনা-আহত হাসি হেসে বলেছিল,
'খুঁজে দেখো,আমাদের ছিন্নত্বক লেগে আছে ফল ও ছায়ায়।'

শিমুল তুলোর মতো পরিণতিহীন আমাদের গন্তব্য।বাড়ির পথে
নিরপেক্ষ বাদুড়ের ডানার ঝাপটানিতে মনে পড়ে
কবন্ধ ধানের ক্ষেত,ভাঙাভিটা,ঘাটে ঘাটে শোকাকূল রমণীর উপবাসী স্নান....


বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

জটিল রসায়ন

আমরা বসেছিলাম মুখোমুখি রেলিঙ্ ঘেঁষা বারান্দার কোণে
বাতাসের অমিত বিক্রমে বারংবার স্থানচ্যুত কানের পাশের চুল,
হলুদ ওড়না,---
পরিপক্ক জোড়া ডালিমের সদম্ভ প্রকাশে

ভেতরে ভেতরে তৈরী হচ্ছিল জটিল এক রসায়ন।

নির্বাচন

ঃনাম
ঃবাদাইম্যা মিশু
উদ্যত মুষল,চোখে পাথুরে কঠিণ দৃষ্টি,---
ইতঃস্তত ঢোক গিলে ব্যালট ও সীল দু'হাতে বাড়িয়ে ধরে নির্বাচন কর্মকর্তা

তোমাদের নির্বাচনে ব্যালটের চেয়ে এত বেশী প্রয়োজন,পেশীশক্তি!

মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

আকরিক সভ্যতা

এই তোমাদের সম্ভাবনার শহর?আকরিক সভ্যতা?নিহিত দুপুরের ধূলোওড়া পথ,
পৌরজীবনের শিষ্টতায় পায়ের তলায় মানচিত্র ক্রমাগত পাল্টে যায়,কোলাহলরত।
অসম্ভব বাণিজ্য চলছে।চা,মোদক,মৃগনাভী,জাল,নৌকা--এত বস্তুগত এখানে সবাই।
শিশুর তর্জনী তোমাদের দূরে ঠেলে দেয়,আরো দূরে বহু ব্যবহৃত সমুদ্রতীর থেকেও,--
এইসব সমুদ্রতীরের বালিয়াড়ি দ্বিবিধ বাঙ্ময়ে সমুজ্জ্বল ছিল সম্পন্ন মর্যাদাবোধে।


আলো আধঁরির বিমূর্ত প্রতিচ্ছায়ার দীর্ঘ প্ল্যাটফর্মে অবিরত যাত্রার নৈশকালীন ট্রেন
থামে।অর্ধেক জাগ্রত।হুইসেল থেকে ঝরে পড়ে আগুনের স্ফুলিঙ্গ,নির্বাণহীন সম্মতিতে।
প্রতিভাবিহীন অন্ধকারে তোমাদের নির্ভার জীবন পৃথিবীর সীমানা অবধি ছুঁড়ে ফেলে,
যা কিছু কলংক,অপমান--অনুপম শব্দের আঘাতে উঠে আসে পাতালপ্রোথিত শল্যপাতে।

নক্ষত্রহীন আকাশে অসম্পূর্ন পাঠ।অভ্রু'র কুচিতে লেখা কবিতার সারাৎসার;জেনে নিই
মদের গেলাস ভরে উপচে উঠছে নৃত্যাপর অপ্সরী,গণিকালয় এবং দ্রুতগামী শীত---
আগুন কী দ্রুত উড়ে যায় মৌমাছির চেয়ে।

তোমাদের লৌকিক শহরে আত্মজার প্রতি উৎপীড়ন অর্থাৎ আদিমতার দিকে যাত্রা এবং
যাত্রীবদলের জাহাজগুলোর সংকেতধ্বনি মুদ্রিত হচ্ছে কাগজের সান্ধ্য সংস্করণে।

সম সাময়িক রসায়ন ঘিরে রাখে তোমাদের প্রত্যাহিক জীবনযাপন।

কালো অরণ্যের ভেতর আশ্রয়

দাম্ভিকতাময় বিবেচনা ছিল,ছিল দ্বিধার প্রবল টান
মগ্ন অবকাশে প্রণত চোখের ঢালু কোণ বেয়ে গড়িয়ে নামত অভিমান
আর ভেতরে ভেতরে তৈরী হচ্ছিল অপরিসীম বোধের শূণ্যময় পৃথিবী

আমার চুলের জট বেড়ে চলে অপরিকল্পিত হারে
মুক্তির প্রয়াসে আকাশের দিকে চোখ তুলি---
 এ আকাশ শৈশবের নয়
এ আকাশ কৈশোরের নয়
আকাশে আলোর রেখা কেঁপে ওঠে
অবশেষে মধ্যরাতে নগ্ন পায়ে পথে নেমে আসি
নুড়ির আঘাতে দীর্ঘ নখ ভেঙে যায়
পায়ের তলায় পাল্টে যেতে থাকে মানচিত্র

উন্মুখর প্রত্যাশায় পথ হাঁটি কিন্তু
পথ চেঁপে ধরে বুক এবং গলা
এক পথের আড়ালে আর এক পথ
তারপর আর এক বাঁক

অনন্তকালের একক যাত্রায়
শেষাবধি কালো অরণ্যের ভেতর আশ্রয়

স্বপ্নময় প্রতীক্ষা

যুবক চোখের জল চেয়েছিল
যুবতীর দু'চোখে চৈত্রের দাবদাহ

দ্বাদশীর পূর্ণিমায় স্বপ্ন ছিল
পুকুরের কাছাকাছি অলৌকিক খেলাঘর বাঁধা হবে

যুবতীর চোখে আজো আষাঢ়ের ঢল নেই
তিথি,নক্ষত্র,জোছনা তার কাছে অর্থহীন

তবুও যুবক স্বপ্নময় পথের সীমান্তে প্রতীক্ষায় থাকে

শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ক্রুসবিদ্ধ যীশু

শ্বেত সমারোহে নিজের পাশাপাশি হেঁটে চলি
পাহাড়ের ঢালে আমাদের এ শহরে
ঈশ্বরের অস্তিত্বের সামগান,তার স্বরলিপি,---
বেদনার চেয়ে মহার্ঘ্য বস্তু

আমাদের বুকের ওপর দিয়ে চলে যায় রেলগাড়ি
আমরা কী নির্বিকার!
পৌরাণিক বাইবেলের ইয়াকোবের পুত্র এবং শেখেমের মতো
যন্ত্রণায় ছটফট করি

নানান ধাতুর সংমিশ্রণে যোদ্ধা,মূল্যবান লোহিত পাথর
হারিয়ে যাওয়া কুটিরশিল্পের সাথে
ঈশ্বরের নামাংকিত জাহাজগুলো বন্দরে ভেড়ে পালবিহীন,বিভ্রান্ত

আমার দাদুকে জোর করে শোয়ানো হয়েছে ধ্বংসপ্রাপ্ত কবরখানায়
আমার পিতাকে পাহাড়ের চূড়া থেকে নিক্ষেপ করেছে ঈশ্বরানুগত দাস
এবং আমাকেও আজ,কাল অথবা পরশু দূর সমুদ্রে ভাসিয়ে দেবে
রক্তাভ আদেশে

প্রাচীন সমাধিক্ষেত্রে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকি বিবর্ণ ঘাসের মতো
আমি ঈশ্বরের ত্রোস্ত বাদ দিয়ে পড়ে নিই
নির্ভুল সমাধি প্রস্তরের ভাষা
(মৃতদের জন্যে প্রগাঢ় প্রার্থনা কিংবা বিলাপের প্রয়োজন নেই)
আমি সাঁকো অতিক্রমকারী সেই নাগরিকঃ
যে কিনা শহর রক্ষাকারী বাঁধ ভেঙে দেওয়ার বিপক্ষে;আমার শিশু
শিশুর মা এবং আমার প্রাক্তন প্রেমিকার সুরক্ষার জন্যে

শহরের মানচিত্রের আড়ালে ধর্ম ও বিশ্বাসকে ওরা পেরেকবিদ্ধ করেছে
উন্মুল জ্যোৎস্নার এই রাতে কবরের গায়ে হেলেপড়া গাছগুলো মনে হয়
ক্রুসবিদ্ধ যীশু

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ঐহিকতা

এখন গোধূলিসূর্য।
পাহাড় গড়িয়ে অন্ধকার নামে সীমান্ত শহরে,
পেছনে আসাম।

মানুষেরা যে যার নিজের বৃত্তে বন্দী।মেঘের আড়ালে চাঁদ এবং
দিগন্তরেখার দিকে নদী।তীব্রভাবে বেঁচে ওঠার প্রয়াসে
আদিবাসী রমণীর বুকের কাঁচুলি শক্ত করে চেঁপে ধরি,
পান করি তার চিবুকের ধারা বেয়ে নেমে আসা
মহুয়া ফুলের রস।

ঘুরে ঘুরে সারারাত যৌন দ্রাঘিমার স্তরে
ঘনিষ্ঠ নিঃশ্বাস;কুয়াশায় টিলার উপরে
নিশাচর পাখিদের ঐহিকতা।আস্থাহীন উল্লস্ফন।

সরাসরি ঢেউয়ের আঘাতে কাঁপছে
আমাদের শরীর কাঁপছে।

অপার কবিতা

খঞ্জনী বাজিয়ে কারা গান গায়?

নদীর ওপার থেকে সাবধানে উঠে এসো
স্বচ্ছ জলে ছায়া ফেলে--তোমার বিনুনী,
হলুদ রেশমে গাঁথা ওড়না,কামিজ
এপারে শ্মশান।কুরুক্ষেত্র।

সিপাহীর হাঁক থেমে গেল, অবহারে,----
দিনশেষে ব্যর্থ আমাদের কষ্টের মিলনকালে
স্বস্ত্যয়ন সেরে নাও---
কখন মাড়িয়ে যাবে অগ্নিকুন্ড,
আমার-ই চিতা।

ক্র্মাগত সূর্যহীনতায় আমাদের যৈবনিক চুম্বন ও ক্ষুধা
অপরাহ্নের ফুলের মতো ঝরে যায়,দ্রুত।
ছায়া নিবিড় স্বর্ণচাঁপার ডালে শুয়ে থাকা পাখি
পৌষের কালিমালিপ্ত কুয়াশায় সাম্য,প্রতিসাম্যতার বিজ্ঞান
গ্রাস করে বেড়ে ওঠে।

সব সাধ ছুঁড়ে ফেলে এতকাল যা শিখেছ;
লিখে ফেল,---
প্রান্তরের অপার কবিতা।





বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

প্রস্তুত জীবন

কতবার উড়ে গেছি শীত পাখিদের সাথে
পাহাড়,সমুদ্র,নদী,বনভূমি পার হয়ে
মুখোমুখি যন্ত্রণার,নানাবিধ ধ্বনি ব্যঞ্জনায়
মৃত্যুর সূচকে----

বিকীর্ণ সৈকতে শোকগ্রস্ত প্রেমিকের বিষন্ন মিছিল
পামগাছের সারির নীচে স্পষ্টতঃ বিধবা রমণীরা খুঁজছে শুক্রাণু;
আইন সম্মত রাতে তাদের সুন্দর শাড়ীগুলো বাতাসে কেমন লেপ্টে থাকে
রক্তের সুবাসে উত্তেজিত শ্বাপদেরা ঘিরে রাখে আশ্চর্য্য শরীর

বিশুদ্ধ ধ্বনির মতো নির্জন সমাধিক্ষেত্রে যারা শুয়ে আছে
ভেজা বাতাসের আর্দ্রতায় ফুলে ফেঁপে ওঠে করুণ বিলাপ
কিংবা বৃষ্টির মতোন
মৃত্যুর বিধ্বংশী মুখ তাদের খুঁজছে
সম্মার্জনীর মধ্যেই মৃত্যুর হিমশিতল বীজ যেমন নিহিত

একা একা এতসব দেখে
অন্ধকার বুক খুলে বের হয় আসি
জীবন প্রস্তুত---এইখানে,মধ্যরাতে

সামঞ্জস্যহীন দ্বিপদী

কিছু বুঝে ওঠার আগেই রৌদ্র মেঘের আড়ালে এবং
সমুদ্র যেখানে শেষ তার থেকে দূরে,আরও দূরে

সংহত সর্বনাশের মধ্যে লাঞ্জিত প্রেমিক,পরিত্যক্ত
ঘরের বাইরে

বটপত্রলীন এ জীবন অপাবৃতে টলমল
শীতল ভাটার টানে চুপসে যাওয়া বিছানায়

জৈবফুল পুড়ছে নিঃশ্বাসে
ঘামে-অবসাদে মোড়া যৌন প্রহারের অপচিহ্ন

বিশল্যার খাঁজকাটা পাতার কিনারা ঘেঁষে বসে আছে মাংসপাখি
গূঢ় ধৈর্য্যে শিকারী প্রস্তুত

আজ ভোজ হবে
পাখি মাংস

বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

অপরিস্রুত জীবন

রাত্রির আকাশ জুড়ে নীল নক্ষত্রেরা কেবলই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে,
এগিয়ে চলছে ছন্দময় বিশৃঙ্খলা।স্পর্শময় অন্তরালে দোলায়মান নিশ্চিত বাহু
টেনে আনবে প্রত্যাশা---এবং আজ রাতেই হয়তো আমি লিখে যাবো অন্তিম কবিতা।

আমার বয়স কত হল?'তুই কি চিরকালই এরকম ছোট্ট হয়ে থাকবি'--মা বলে।
মায়েরা প্রাচীন অভিজ্ঞানে অন্ধকার সিঁড়ি ঘরের মাকড়সার জাল,ইঁদুরের বিষ্ঠা
নিষ্কম্পন ঝেড়ে ফেলে।অনতিক্রমনীয় দূরত্বে আমাদের মনোনিবেশ উৎসর্গ।
অযত্ন প্রয়াসে আমাদের নির্মাণ কৌশল,আমাদের গৃহসজ্জা বিন্যাসের ব্যাপকতা
শূণ্যপ্রহরের বিজনতায় উৎসর্গীকৃত;যা অনবহিত অরণ্যের অন্তরালে পরিত্যক্ত।

গভীর সত্যের মুখোমুখি আমাদের অপরিস্রুত জীবন আত্যন্তিক পরিম্লানে অসম্পূর্ণ।

মৃত্যুর কবিতা

তোমাদের গান,কবিতা
সবই মৃত্যুর

আসে ঘূর্ণিঝড়,খরা,মৃত্যুর দেবতা
পূরোনো অগ্নির রথে চেঁপে
দ্বিধাহীন হাতে তুলে নিই বিষের পেয়ালা

কানায় কানায় উপচানো রক্তের সফেদ ফেনা

২.
রাত্রির গভীরে শ্বাসরোধী ভাবনায়
কাল থেকে কালান্তরে
দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে
অসম্ভব বিপরীত দু'টি দৃশ্য

মৃত্যু এবং রুপান্তর

শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

জলের শব

ধূলো ও সন্ধ্যার মেঘে আমাকে নিগূঢ় ডেকেছিলে
ইনানী বীচের শূণ্য দৃষ্টি,আমাদের বোঝাপড়ার ভেতর ছিল সমুদ্র গর্জন
আদিম বিশ্বাসে অপরিচয়ের সব চিহ্ন মুছে আমরা জেনেছিলাম
নগ্ন ঠোঁটের চুম্বনস্বাদ

মিশে গেছে সেই দাগ
সমর্পিত চাঁদ জানে
এত উপকরণ,শবাচ্ছাদন,---
ছিঁড়ে ফেলে জননীর নাভীমূল

অলৌকিক সমুদ্রে জলের শব ভাসে

জ্যামিতিক পরিমাপ

জন্মগ্রন্থির জরাজটিল নাড়ী কেটে ফেলে নিপূণ সার্জন।নিষ্পাপ ভ্রূণের শিশুগণ
তোমাদের অভিবাদন দ্বিতীয় নির্মাণের পৃথিবীতে।আলো এবং ছায়ার অন্তরালের মধ্য
জেনে নাও এখানে সবাই জুতো পায়ে প্রস্তুত।বস্তুতঃ চারিদিকে এতো মানুষ পোড়ার গন্ধ,
চোখ ঢেকে যায় কালো ভস্মে।মানবিকতার চেয়ে রাজনীতি এখানে অনেক বেশী লোভনীয়।
নগর ধ্বংসের পরে ফুলে ফেঁপে উঠেছে বারুদ,সার্জিক্যাল টেপ এবং ব্যান্ডেজের কারখানা।

জ্যামিতির মূল লক্ষ্য ছিল নির্মাণের প্রসারতা,প্রকরণ এবং শৈলী---সমূহ শব্দের মতো
নারীঘটিত শূণ্যতা বিবর্তিত গুহাপ্রান্তে উপবৃত্তাকার পথে ঘূর্ণায়মান।যৌনতা এবং যুদ্ধ,---
বর্ণিল নির্দেশে আবর্তিত।কত সহজ বিপন্ন বিষ্ময়গুলোর অবসান---জ্যামিতিক পরিমাপে
সকলেই চায় স্রোতের অনুকূলতা।

অব্যবহৃত নগরে কুর্চিফুল গাছে যেদিন প্রথম ফুটেছিল;সমস্ত বিকেল জুড়ে
দীর্ঘ পথের মালিন্যে জেনে নাও মানবসভ্যতা হামাগুড়ি দিতে শেখে নি;যে কি না
প্রাপ্তবয়স্ক মাঝরাত্তিরে গ্রাম-গণিকার ভাঙা ভিটায় ঘুমিয়ে থাকে।

কাটা কম্পাসের ভুল পরিমাপে অনেক নির্মাণ।পরিবর্তিত রেখার অপরুপ কারুকাজ।
সিঁড়ির তলায় অন্ধকার মাকড়সার জালবুনন---বাস্তবিক পক্ষে এটা কি নির্মাণ

না-কি জ্যামিতিক ঘেরাটোপ?


ইতিহাসের অনাব্য পথ

সভ্যতার মানদন্ডে শব্দ ও ভণিতা মেপে বালিকা নিবিড় বটগাছে ঝুলেছিল

শুধু মনে আছে আবছা নদীর তীরে বসে জলের স্রোতের সাথে
ইতিহাস প্রবাহের ধ্বনি শুনেছিল আর
অভ্যস্ত নিপূণ পায়ে হেঁটে চলে গেল ইতিহাসের অনাব্য পথে

বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

প্রতিহত ভালোবাসা

পাহাড়ী স্রোতের সহজিয়া নদীর ওপার থেকে দৃশ্যজগতের গান বেঁধেছিল অন্ধ কবি
শোনে নি বালিকা।এই পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখছে পাতাহীন ডুমুরের তলে অস্থি,করোটি,কংকাল,--
ধ্বনিপ্রতিধ্বনিময় সূর্যাস্ত বেলায়।নিষ্প্রভ চোখের মতো রৌদ্র শুয়ে আছে বালুচরে।
ভিন্ন জলের উচ্ছ্বাসে ডুবে গেল অবলম্বহীন জাল;প্রয়োজনে যা এনেছে---নদীর কিনারে
কেননা প্রবাসী নৌকাগুলো এতো বেশী তথাগত দুঃখ এনেছিল,---ভূর্জপত্রে,প্যাপিরাসে
আরো কিছু লেখা বাকী,সমাগত নৌকা এবং ভাঙা অবসাদ---চলে গেছে নদীর জোয়ারে।

সূর্যাস্তের পানে অস্ত্বিতের গান এখোনো গাইছে, কবি।তবে কি একই দিকে সব ভালোবাসা
প্রতিহত হয়ে ফিরে আসে;বালিকার জ্যোৎস্নাময় সিঁথিতে।সিঁদুর রঙে।

মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

আশ্রয়

ধ্রুবতারা আকাশের কোনদিকে?অন্ধকার বেয়ে খালপাড়ে উঠে এসেছ?সন্যাস চোখে
শান্ত বিষন্নতা।বাতাস তাড়িত নাক্ষত্রিক রাতে মৌন ছায়াপথ,স্থির বিষুব শূণ্যতা।
শেষ কবে আমাকে আশ্রয় করেছিলে?আজ রাতে আবিষ্কার করি,---
নৌকা,জাল,বৃষ,তামাক ও নুন----বড় বেশী বস্তুগত।

দিনগুলো ছিল দিবাস্বপ্নে ভরা।কৌম রাত হাঁটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
একদিন যারা মহুয়ার নেশায় মাতাল ছিল;তাদের ফেরার পথে কে কাটা পুঁতেছে?
যারা বালি খুঁড়ে খুঁড়ে জল তুলেছিল---তাদের দু'চোখে আজ চৈত্রের দাবদাহ।
সুবর্ণরেখার তীরে ভিখেরীর চাপে পিষ্ট আর্য নগরীর কোথায় দাঁড়িয়ে ছিলে?

সূর্য রমণের চিহ্ন এঁকে
আমি প্রত্যয়ের মতো ফিরে এসেছি,আমাকে
আদি আশ্রয়ের নিশ্চয়তা দাও।

রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

সমালোচক

শেষ কবিতাটি প্রেসে চলে গেছে
অনাবাদী নিউজ প্রিন্টের গায়ে আঁকা হয়ে ছড়িয়ে পড়বে কাল
কেউ হয়তো পড়বে,
কেউ পড়বে না
কিন্তু সমালোচকের দীর্ঘ নখে ঠিকই বিদীর্ণ হবে
কবিতার শরীর,হৃদয়

তাতে কবির কি কিছু যায় আসে

শান্তি

যখন আমার চারপাশে মানুষেরা নিরস্ত্র থাকবে এবং
আমার উদ্ধত হাতে অত্যাধুনিক রিভলভার...
কেবল এভাবে,এভাবেই শান্তি বজায় থাকবে বলে আমার বিশ্বাস

চুপ,একদম চুপ
আমার মুখের 'পর কেউ কোন কথা বলবে না

শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

শ্বাপদের শ্বাস

নিঃশ্বাসের দুরত্ব থেকেও দূরে কখন হারিয়ে যায় মগ্ন দেবী
পূজোর নৈবেদ্য পড়ে থাকে
সিঁদুর মাখানো বেলপাতা,জবাফুল,অসিদ্ধ আতপ
এমন নিমগ্ন সন্ধ্যাবেলা প্রসাদের লোভে ছুটে আসে
অবেলার পথিক,ভিখেরী,ছিন্নমূল ভবঘুরে

ভিড়ের ভেতর টের পাই
দেবী নয়,মাংশভূক শ্বাপদের শ্বাস

পরবাসী

মৃত্যুদিনের ফ্যাকাসে রঙে পালিয়ে এসেছ আমাদের এ গদ্যশহরে
এখানে তুড়ির শব্দে উড়ে যায় কোকিল।সন্ধ্যার নীল শ্বাসে
ঘন হয়ে ওঠে শান্তিপ্রিয়তার ছায়া।

বুনো কাঠগোলাপের ঝাড়,মহুয়ার জনশ্রুতি,----
আরুঢ় পৃথিবী অনায়াসে বদলায় নিজের রঙ।

পূণর্বার ফিরে যাবে শালপাতার আশ্রয়ে
যেখানে উঠোন ঘিরে থাকে নক্ষত্রমন্ডলী
আর পূর্ব দিকে চাঁদ ওঠে।

শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

করোটির সাদৃশ্যতা

অস্ফুট গানের শব্দে পরিত্যক্ত সমাধি ফলক নড়ে ওঠে
অব্যবহৃত জারুল বনে পড়ে থাকা কিছু কংকাল,করোটি
সৃষ্টি ও ধ্বংশের রক্তবীজে তাদের গোপণ সঙ্গমের সাক্ষী শ্যামাপোকা;

গ্রীষ্মতাপ গায়ে মেখে আমি এসেছি এ বনে

পেছনে পরিহাসের ধর্ম
সামনে সমান উচ্চতার গাছ
অবোধ্য উচ্চারণের ভৌগলিক নাশকতা জলে ঝড়ে দিগভ্রান্ত
এক নিমগ্ন ভালোবাসায় আমি শেখাতে এসেছি গান
ত্রিমাত্রিক জ্যামিতি ও ভূমি খনন যন্ত্রের ব্যবহার
আর মৃতদের পায়ে ঠেলে পশুবধের নূতন নীতিকথা

বিলুপ্ত ম্যামথ;ভাষা ও সৌষ্ঠব ভেঙে
কী জটিলতার সারাৎসার,----

আমি দ্রুত দেখে নেই পড়ে থাকা ঐসব কংকাল
এবং করোটির সাদৃশ্যতা

দ্বিতীয় ঈশ্বর

আজ রাতেই ভেবেছি জন্ম দেবো দ্বিতীয় ঈশ্বর।অবচেতন মননে সহজাত
পূরোনো বেদনা ভুলে নিরেট বাস্তবতার আঙ্গিকতা;যা মহাবিশ্বের প্রতিধ্বনি মাত্র।
আমি সেইসব কথা লিখে যাবো;যা ধাতুর মতো মূল্যবান।মাটি খুঁড়ে তোমরা যে সব
আঁকর তুলেছ---সেটা কেবল হানাহানিতে ব্যয় হচ্ছে।যে উপায়ে পশুবধ করছ তা
নীতিহীন।ভূমি জরীপ ও খননের যন্ত্রগুলো ব্যবহার করেছ তা অকল্যাণকর।

দুঃসহ নৈঃসঙ্গে আমি ভেবেছি সমস্ত দিন ভূ-খন্ড বা শুধু জলরাশি আমাদের
তৃপ্ত করে না।বাস্তবে প্রতীকীবাদই স্বচ্ছন্দে জায়গা করে দেয়।

বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

অবৈধ সঙ্গমলোভ

সম্পন্ন শব্দের অগোচরে কত কবিতা লিখেছি
তোমার শরীরে
আপাত স্বরব্যঞ্জনে চুম্বনের রেখাচিত্র,---
জলজ ভাষার অভিজ্ঞানে তোমাকে জেনেছিলাম

নিবিড় সেসব নগ্ন রাত;এখনো আবছা মনে পড়ে
শুভ্র সম্মিলিত তোমার প্রণত চোখে সমর্পণের আহ্বান
শরীরের সমাহিত উন্মোচনে---আমি ভেদ করে গেছি কঠিণ প্রিজম

অবৈধ সঙ্গমলোভে আমি কতবার ফিরে এসেছি প্রবাস থেকে

২.
ঈশ্বরীর গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে যে শয়তান;
তার  সাদা দাঁতে রক্তের টুকরো
অবৈধ সঙ্গমলোভে পারঙ্গম নমঃশুদ্রচারী পৃথিবী,তোমাকে আশীর্বাদ
কিশোরীর রহস্যময় শরীর মুনী ঋষির সামনে মেলে ধরে দেখো

তার নির্বাণের মোহ ভেঙে যেতে কতক্ষন

মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

বাস্তবতা

আদিবাসী রমণীর সুডৌল পায়ের নাচ দেখেছ?মঙ্গলদীপ জ্বেলে
নাচের জটিল মুদ্রা গিলে খায় কৌম অন্ধকার
আর তাদের কাঁচুলি বেয়ে ঝরে পড়ে
ইশারাময় যৌবন।

মধ্যরাতে ঘুমের ভেতর
তোমার কামার্ত দেহ জেগে ওঠে
আমার করতলের সুখস্পর্শে,
গভীর সুড়ঙ্গপথে পারমাণবিক বিস্ফোরণে।

আমাদের বাস্তবতা শেষ হয় এখান থেকেই।

সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

চোখের ইঙ্গিত

ব্যকরণহীন জীবন চেয়েছিলাম,---
বোঝে নি সে নারী
বুকের কাঁচুলি শক্ত করে বেঁধে চলে গেল

গত রাতের দেহের নিবিষ্টতা,ক্ষীণ যৌন নিঃশ্বাস,শিৎকার
সন্দেহ তাড়িত সকালের পথের ওপর তার শীর্ণ ছায়া
শোনা গেল কিছু অভিব্যক্তি

যদি সম্পূর্ণ শরীর খুলে পড়ে চোখের ইঙ্গিতে

পর মুখাপেক্ষী

তোমাদের এত অহংকার,এত ক্রোধ

তাকাও,বিমান থেকে নামছে ওষুধ
সমুদ্রগামী জাহাজ থেকে চাল,মদ,সিগারেট,শিশুখাদ্য,মার্বেল পাথর
বিদ্যুৎবিহীন ষষ্ঠীর পয়মন্ত চাঁদ
জ্বলে আর নেভে

তোমাদের অহংকার,তোমাদের ক্রোধ জ্বলতে জ্বলতে
নিঃশেষ হয় না কেন

বিমূর্ত

রমণীকে চেয়েছিলাম বিমূর্তরুপে।
দৃষ্টিগ্রাহ্যের ভেতর।
যখন পাহাড়ে উঠে দেখি সারি সারি যুগল পাহাড়
তখন সাদৃশ্যতার মধ্য

তার দু'টি স্তন।

শনিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৩

অপ্রয়োজনীয়

যারা সমুদ্রচারী হয়েছিলাম
সম্ভবতঃ আমরা ভালোবেসেছিলাম ডাঙার সতেজ ঘাস
এবং শর্তহীন লোভে ছুঁড়ে দিয়েছি স্ত্রী লোকেদের

কারণ আমরা হিব্রু পাঠমালায় জেনেছিঃ
রাজমিস্ত্রীরা যে পাথরটা ফেলে দিয়েছিল
সেটারই প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী

তুলোচাষ

তোমাদের তুলোচাষ কোথায়?অহিংস খদ্দরের পাঞ্জাবী পরবো বলে
অরণ্য শহর থেকে নেমে এসেছি।অস্বাভাবিক প্রযুক্তিবিদ্যা,
ভূমি জরীপের যন্ত্রগুলো ইতঃস্তত পড়ে আছে এখানে-সেখানে
আর ঐদিকে কার্পাস বাগানের বর্গাদার সকাল বেলার রৌদ্রে দাঁড়িয়ে দেখছে
শিমুল তুলোর ওড়াওড়ি।

বাঁশপাতা বাতাসে কাঁপছে।আজ সারাদিন আমি বাতাসের সাথে খেলব ভীষণ।

শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৩

নিমন্ত্রণ

প্রথম বিশ্বাসে সবটুকু ভালোবাসা দিয়েছিলাম,---ফেরে নি সেই নারী
প্রগাঢ় বাস্তবতার চোখ তুলে দেখে নি আমার পরাক্রান্ত মুখ
প্রিয় যত গান,যত সুর,যত কবিতা----রেখেছি ব্যক্তিগত বসন্ত খাতায়
প্রিয় যত ফুল,---
বুনেছিলাম সম্পন্ন বাগানের টবে

অতীতের আবর্জনা বলে সমর্পিত কোল ঘেঁষে চলে গেল অন্য নিমন্ত্রণে
সারাপথ জুড়ে পড়ে থাকে মসৃণ পায়ের ছাপ,ঋতু,দীর্ঘশ্বাস

যদি একজীবনের সারাৎসার তুলে ধরি,---
মৃতদের শোভাযাত্রা চেয়েছিল দীর্ঘ পরমায়ূ
বনের সমস্ত গাছ একে একে মরে যায়
ওখানে দিনের শেষে প্রার্থনায় মগ্ন গাছের কংকাল
ওদের বল্কল খুলে বের হয়ে আসে জরাজটিল মাংসের গ্রন্থি

নিরুপায় বনের ভেতর অসম্পূর্ণ পাঠ
শেকড়ে মাটির রুদ্ধ শৃঙ্খলের ধ্বনি
পৌষের নির্লিপ্ত কুয়াশায় উড়ে চলে শিরা উপশিরাগ্রস্ত পাতা

আমার আকাঙ্খা ছিল স্বার্থপর
যদিও তা ভেঙে পড়েছিল গোধূলিবেলায়,অনাহুত নিমন্ত্রণে

উৎসব ফুরোলে কেউ মনে রাখে নি আমাকে

বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৩

সাম সঙ্গীত

দৃশ্যমান বাস্তবতা গ্রীষ্মকাল অবধি তাদের ঘিরে ছিল
হৃৎস্পন্দনের শব্দের মতো অসংখ্য শেকড়ে
আলো ও ছায়ার অবাস্তব সংগ্রামে ভ্রমণরত;

সূর্য জ্বলছে।জ্বলতে থাক,স্বতস্ফুর্ত।দিনের আলোয়
মৃতরা কখনো আরো বেশী বাঁচবার অভিপ্রায়ে
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাবে না।

জীবিত মানুষেরাই
কেবল জীবন থেকে পালিয়ে আধাঁরে থেকে যায়।

এবং সাম সঙ্গীতের আবির্ভাবে পূণর্বার বেঁচে ওঠে।

রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৩

আমাদের প্রতিচ্ছায়া

বাস্তবতা খুব সুক্ষ্মভাবে আমাদের ঘিরে রেখেছিল;
যখন বাঁচার অভিলাষে যা কিছু দৃশ্যতঃ
শস্যবীজ,ক্রুস,যুদ্ধক্ষেত্র...............

এবং আমাদের ছায়ারা প্রতিনিয়ত নিজেদের পৃথক করছে
তাদের অস্বচ্ছ স্বর চতুর্দিকের দেয়ালে প্রতিধ্বনিময়

অসংখ্য পাঠান্তরের মধ্যে
নিরাসক্ত যে সব গোলাপ ফুটেছিল
ধূসর দিনের অতিবাহনের পর,---
আমরা তাদের পতনের শব্দ শুনি
এতকাল যত পাথর ছুঁড়েছিলাম

কিন্তু জানালার কাঁচগুলো এখনো অক্ষত
যেখানে গড়িয়ে নামে আমাদের প্রতিচ্ছায়া

শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৩

উপেক্ষা

শিখে নিয়েছ প্রাকৃত উপেক্ষার পরিভাষা?স্পষ্ট উচ্চারণে
গাঢ় প্রত্যাখ্যান।সুগত দু'চোখ জ্বলে যায় সুতীব্র ঘৃণায়।

তোমাদের লৌকিকতা বড় বেশী সামাজিক।অতিথিবিমুখীনতা।
প্রগাঢ় উপলব্ধির সম্মীলনে স্বার্থপর ভ্রু-কম্পনে
অন্বেষণ আলোর ভেতর।সাধারণ ভাবনায়
চৈত্রদুপুরের সারাপথ প্রস্তাবিত দাবিতে স্ফুরিত;
পরিচিত শব্দের সমূহ সমারোহে অনিবার্য ধ্বনিময়তায়
সান্দ্র আমন্ত্রণ---নি;সীম স্মৃতির উন্মীলন।

আমি ফিরে এসেছি।উপেক্ষা এত তীব্র।
এই তোমাদের অতিথি সৎকার?
জল ভারানত স্বচ্ছদীঘি।সরিষার তেল,গামছা কোথায়?

শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৩

উৎসর্জন

সৃজনের অধিকার কেড়ে নিতে চাও?
রজনীগন্ধার মূর্ত আলো,শীতের আগুন,
আমার গানের নীল খাতা?
সম্পন্ন কবিতা;যা আমার রক্ত ও ঘামের  সংমিশ্রণে শ্রম বিনোদন।

সেই বুনো তুলসীর ঝাড়,--আবর্তিত অভিশাপে
কাঠ বাদাম গাছের দিকে চেয়ে মনে হয়
প্রণত দু'হাতে রক্তজবা ফুল ছুঁয়ে দিলে জীবন হয়তো
পরিস্রুত একটি প্রেমিক তারা হয়ে যেত।

তোমাদের লৌকিকতা শেষ হোক।
দেহরক্ষীরা তাদের নিজ নিজ গৃহে ফিরে যাক।
(ওদেরও তো ইচ্ছে করে প্রিয়তমা রমণীর
শরীরের ওম পেতে।)

পূরোনো ভালোবাসার স্থির নির্দেশের বিনত সম্মানে
শুভ্র স্বপ্নের ভেতর থেকে জেগে উঠি
নিবিড় কেন্দ্রের বিসর্পিল লালধূলো ওড়া পথে,
জংলী গোলাপের উৎসর্জনে।

দিনপঞ্জী

তোমার পূর্বের নারী এক প্রবল ঝড়ের রাতে
বস্তুব্যাপক উপলব্ধির মুখোমুখি বলেছিল,
'স্বপ্নের ভেতর মগ্ন মানুষ দৃশ্যতঃ
ফেরে না তাদের নির্ধারীত জায়গায়।'

বাস্তবিক আমার নৌকার তলা ফেঁসে গেছে। আমি চরায় আটকে আছি।
আমার আকাঙ্খা ছিল সূর্যের চেয়েও দীপ্তমান।প্রদোষের অন্ধকারে
চলাচলরত ইঁদুরেরও হয় না ততোধিক।বিদায় বেলার রাতে
খুব শীত পড়েছিল।চাঁদরে জড়িয়ে নিয়েছিলে নিজেকে?প্রতিভাবান চাঁদ
থানার দারোগা বাবু নক্ষত্রসন্ধির প্রতি গাঢ়
মনোযোগে সুনিপূণ লেখে দিনপঞ্জী।

আমাদের আরো কত কিছু শেখা বাকী।

২.
অতঃপর জৈবিক বপণ শেষে
আমরা শস্যফলন বিষয়ক আলোচনায় মেতেছিলাম।

আবছা নদীর দুই তীরে তরমুজ বন ।কিছু দূরে একাকী ধানক্ষেতের পাশে
সূর্য ডুবে যায় দ্রুত।সপ্তর্ষিমন্ডল তার নভোরশ্মির পোষাকে
আমাদের প্রসন্ন উঠোন ঘিরে রাখে।তাদের নানান গোপণতা থেকে
ঝরে পড়ে মৌল রসায়নরাশি।চাল থেকে ভাত রন্ধনপ্রণালী
চোলাইমদ,রেশম গুটিপোকা;পূর্ণতা প্রাপ্তির গূঢ় ধৈর্য্যে,---

এখনো বুঝি নি প্রাকৃতিক দুঃখজটাজাল?
আমার ঘরের জানালাবিহীন অন্ধকারে শেষ কবে নক্ষত্রের ম্লান আলো
এসে পড়েছিল।কবিতার নিষ্ফলতা থরে থরে সাজানো রয়েছে ওই
নীল পানা পুকুরের অস্বচ্ছ জলের স্তরে;
বালিকার দুর্নিরীক্ষ্য শরীরের মতো।

মৌল রসায়নশাস্ত্র আমাদের বেঁচে থাকার উপকরণ
পরার্থপর আগুন,জল,পাহাড়ের কাছে শিখে নিয়েছি ভূ-তত্ত্ব,
চিকিৎসাবিজ্ঞান,ধাতুর বিবিধ ব্যবহার।

যে চড়ুই পাখিটির ডাকে আমাদের ঘুম ভাঙে
তারও তো প্রয়োজন খুঁদকুড়া ও প্রজননের।

বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৩

জন্মান্তরের প্রস্তুতি

বিবর্তিত অতসী কাঁচের মধ্যে বস্তুর অবস্থানের তারতম্যে
প্রস্তর যুগের মানুষের অস্পষ্ট হস্তলিপির উচ্চারণে
তাদের যাপিত দিন মৃত্যুর আবর্তে শূণ্যে স্থির।
সূর্যোষ্ণ পাথর ঘিরে রাখে পৃথিবীর পিঠ ও প্রান্তর।নিমজ্জিত গ্রীষ্মকাল,
কৃষ্ণময় অতলান্তিক,---তুলট কাগজের বুক রেখা ও রঙের সংমিশ্রণ
বাদামী হাতের ছাপে বিমূর্ত প্রকাশ।প্রুতিশ্রুত প্রেম
বাঁকা ভুরুর কম্পনে আমি সারাদিন কাজের আড়ালে ভুলে থাকি।

আমার দ্বিতীয় চিত্র জন্মান্তরের প্রস্তুতিতে শেষ হয়।

কবিতার কলংক ও সারসত্য

অনেক বৃষ্টির জল ঝরেছিল সেই রাতে।মগ্ন অবকাশে
নিস্পৃহ শ্রাবণ।দু'য়েকটা ঘনিষ্ট আলাপ মিশে গিয়েছিল বৃষ্টির ফোঁটায়।
আমাদের সমস্ত প্রয়াস ভেঙে অরচিত বাড়ি
বধির সম্ভাবনায় উর্ধ্বমুখী ছড়ানো উঠোন,অবিভেদ্য।
ভগ্ন নদীর জলজ স্রোতে ভেসে যেতে যেতে স্থিরতায় ঝর্ণাপাথরের পথে।

আমার কবিতা লেখা আপাতত বন্ধ।
অশ্রুপাতে লেখা আছে অপমরণের আগে জেনে যাবো
কবিতার কলংক ও সারসত্য।



বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

হাইয়ারোগ্লিফ

আত্মবিকাশমান সূর্যের আলো যখন ঠিকরে পড়ে আমার শরীরে
পাঠোদ্ধারহীন,গুপ্ত সাংকেতিক দিনে।যেন বা মায়ান হাইয়ারোগ্লিফ।
আদিম মানব লিখেছিল অস্পষ্ট হস্তলিপিতে আলো এবং
ছায়ার পরিমাপক,স্থিতিস্থাপকতা।

আমার মাথার টবে কুঁড়ি মেলে নুতন কবিতা।

অসহায় মাঘের সন্ধ্যায় স্পষ্ট শুনি চকমকি পাথর ঠোকার শব্দ
অথচ আগুন জ্বলে নি।সুচারু শব্দে কারা হেঁটে গেল,
কারা ফিরে আসে অদ্ভুত পায়ের জোড়াছন্দে? আমিও এ জনপদ ছেড়ে যাব,---
আমার পূর্বপুরুষ;যারা শিখেছিল নৌকা চালনার কৌশল,সঙ্গীত,
ধাতুর বিবিধ ব্যবহার।এনেছিল শস্যবীজ আর ধর্মগ্রন্থ,---
আত্মবিবৃতির সুনিপূণ উন্মাদনা;

অনায়াসলব্ধ আলোচাল,কলা ও পাটালিগুড়---শ্বাপদের ধর্মদাঁত
নির্বিচারে খুঁটে খুঁটে খায়।যদি দেখি
তুলসী তলার অন্ধকার উলম্ব ও মোদকমাত্রার পরিমান
অপরিমিত আকারে বেড়ে যায় তবে
আমি পাপসমুদ্রে শরীর ছেড়ে দেব
পুড়ে যাক শরীর শীতল জলে।

আমার পিতা ও মাতামহের ছায়া বিলম্বিত আত্মরুপে লীন।

মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৩

অন্ধ পেঁচা

গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নার পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম
কবিতার ভাষা আর ছন্দ,বিভাজিত ছন্দের ভেতর
বিন্যাসিত অতীত;যখন
পাখির ডানায় ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াতাম এবং
স্পর্শ পেতাম ফুলের
সকালের শিশিরকণা এখনো কুলকুল শব্দে ভেঙে ফেলে
দ্বন্দ্ব,অসাধারণ উপমা
যেখানে ঘুমন্ত মানুষের স্বপ্ন স্বচ্ছতায় পরিপূর্ণ
সমূহ সাফল্যহীনতার মধ্যে অবশেষে
মহাকালিক আকাশে জমে থাকা অনন্ত জ্যোৎস্নারাশির মধ্য
থেকে বের হয়ে আসে অন্ধ পেঁচা

অমোঘ মৃত্যু



সমারোহে যখন অমোঘ মৃত্যু আসে
অন্ধকার গ্রাম আর শূণ্য শস্যক্ষেতে
কৃষকের কন্ঠের মর্মরধ্বনি
জলের ওপর পারদের মতো জ্বলে ওঠে
এবং অন্য উপকূলে
সূর্যের চাকার একফালি মেঘের গভীরে
শতাব্দী কালের গুল্ম  রাশি প্রস্ফুটিত,ঝুলে থাকে

সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৩

জীবন গতি

আমাদের ঘিরে থাকা ক্লান্ত জোনাকী পোকারা অতঃপর
উড়ে যায় ঝাউ গাছের গভীর অন্ধকারে।এবং
আমরা অনবরত কথা বলে যাচ্ছিলাম
সুসংহত বাক্যে।

সামুদ্রিক সবুজ শৈত্যপ্রবাহে উপবাসী দীর্ঘরাত।
যা কিছু বলার ছিল আমাদের
ক্লান্তি,ক্রোধ,বিবমিষা,----
আমরা চেয়েছিলাম এসবের সফল পরিসমাপ্তি।

গোপনে যে মৃত্যু এসে
আমাদের শরীরের মাপ নিয়েছিল,---
বরাদ্দকৃত সে ভূমি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম,সরোষে।
সরাসরি তোমার শরীরে পথ করে নিয়েছিলাম,সুড়ঙ্গ বেয়ে।

আমাদের অস্বীকৃত মিলন প্রণয়
ভবিষ্যৎহীন গুহার অভ্যন্তরে ঘূর্ণায়মান;তখন
জীবন গড়াতে থাকে তার নিজস্ব নিয়মে এবং
অধিক প্রোজ্জ্বল আলো ছড়ায় ঘুমন্ত মানুষের মুখে মুখে।

রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৩

পরিযায়ী

শরীর সমুদ্রে ঢেউ।শূণ্য বিছানা।একাকী।
অবিশ্রান্ত বর্ষণের মতো তামসিক অন্ধকার
সময়ের অধৈর্য্য তুলিতে পৃথিবীকে আঁকে অনুক্ষণ।
গভীরতর অন্ধকারের মধ্যে কখনো কখনো
চোখ মেলে দেখে জীবন;দৃশ্যতঃ
সেই দিনগুলো আকাশজুড়ে নক্ষত্রব্যক্তিত্বের সুরে পরিণত,--
যখন সমুদ্র সৈকতের বড় বড় পাথরেরা অবশেষে পরিযায়ী হয়ে যায়।

শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৩

অবসিত জীবন

অনেক কবিতা লেখা হয়েছে।অনেক গান,---
স্বপ্নের গভীরে চলে গেলে অথচ বোঝো নি
প্রখর সূর্যের আলোকরেখার মধ্যে হেঁটে চলা
মানুষের মুখে অন্ধকারের আঘাত।

অবিরল বর্ষণের মতো জমাট অন্ধকারের মধ্যে
যখন আমরা যুথবদ্ধ ফিরে আসি;
সে যায়গাটি আর আমাদের নেই।
কোথায় হারিয়ে গেল দূর্দমনীয় যৌবন?

একদিন যেখানে শিশুরা খেলা করত;সেখানে আজ
অনেক কবর।ফাঁকা।
তবু নূতন কবরে ভরে ওঠে
অনেককালের পূরোনো পৃথিবী।

অবসিত জীবনের কামনায়............

টোমাস ট্রান্সট্র্যোমার

আপত অপচ্ছায়ার মুখোমুখি।সত্ত্বার বিকাশে
দ্বান্দ্বিক মনের দোলাচল।রহস্যনিবিড় সংকেতের ছায়াপাত।
শিল্প ও জীবন,আধুনিক এবং ঐতিহ্যের সংশ্লেষণে জারিত অসঞ্জীবিত বাস্তবতা;
পূরোনো স্মৃতির প্রতিভাসে বিমূর্ত কবিতা।
আত্মজৈবনিক এবং মনোচ্ছাপের আলেখ্যে;
সীমাবদ্ধ এবং সাধারণ জ্ঞানের পৃথক সরলীভবন।
দেয়াল ও আকাশের অনুপম চিত্রকল্প;
যেখানে জীবন হয়ে ওঠে প্রতীকমন্ডিত।
একজীবনের মধ্য দিয়ে উঁকি দেয় মৃত্যু,---
আরেক জীবনে আবিষ্কৃত নূতন জীবন।

চিরসবুজ লরেলবৃক্ষ

বর্ষা,খাদ,বনভূমি,পাহাড় পালিয়ে আসা নিমগ্ন দাফনী
পিনিউস নদীর সামনে বুঝে নিয়েছিল
পিঠে তার কামোন্মত এ্যাপোলোর তপ্ত শ্বাস।
অবসন্ন শরীর।ক্লান্তির শেষ মুহূর্তে লরেল বৃক্ষে পরিণত।

যার পাতার রঙ অমলিন  ঝরে যাবার আগেও।

বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৩

প্রেমের অন্ত্যমিল

ভয়াবহ সামুদ্রিক ঢেউয়ের মতোন রাতের পর রাত জেগে আছি
আরাধ্য জ্যোৎস্নায় অন্তর্গত উন্মত দ্রোহের দগ্ধীভূত প্রেম
আমি একে একে বাড়ীর দরোজা খুলে দিই আকাশের দিকে
নৈঃশব্দে অংকিত শূণ্যতার অবসরে অন্তহীন ঘুরছে মহাকালের চাকা
শব্দের স্বচ্ছন্দ চলাচলে অমর্ত্য প্রেমের অন্ত্যমিল বাষ্পীভূত
হয়ে ঝরে পরে বিশীর্ণ চোখের ঢালু কোণ বেয়ে
দৃশ্যমান অন্ধকারে প্রত্যেকটি স্বরলিপি বিষাদ সঙ্গীতে ব্যপ্ত
তার সুর নিস্তব্ধতা ভেঙে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে

আমি উঠে আসি অবসন্ন জ্যোৎস্নার ছায়ায়
যেখানে সবুজ দূর্বাঘাস এবং ফুল
অবিরত সংকেত পাঠায় চাঁদে
দীর্ঘ শূণ্যতার ভেতর বর্ণান্ধ রাত জমে থাকে আর
অনন্ত নক্ষত্রবিথী ক্লান্তিকর নিঃসীম আকাশে ভাসে

বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৩

ভালোবাসার জ্যোৎস্না

কতকাল ছুঁইনি তোমাকে
তবু টের পাই এখনো সন্ধ্যায় নীল দীর্ঘশ্বাস তোমাকে বিদীর্ণ করে
শিল্পের অন্ধত্ব কামনায় চাও ওতপ্রোত অন্ধকার
আকাঙ্খার অসহ আক্ষেপে মিশে আছ অবসন্ন জ্যোৎস্নার আঁচলে
আনমনা বিশীর্ণ আঙুলে আয়নায় আঁক দীর্ঘতম শোকগাঁথা
অন্য গ্রহ থেকে উড়ে আসা ধূলিকণা ঢেকে ফেলে তোমার আয়না

আর সেই আয়নার ভেতর অসাড় অভিযাত্রীদল নেমে আসে সমতলে
একদিন যারা ভালোবেসে সমুদ্রচারী হয়েছে
তারা বলেছিল,ফিরে আসবো,প্রতীক্ষা কোরো
তাদের দু'হাতে ছিল এঁটেল মাটির চাক

বিনির্মাণে বিনির্মাণে শিল্পীর নিবিষ্টতায় তারা গড়েছিল প্রতিমার মুখ
প্রেম ও সম্ভোগ শেষ হয়ে গেলে
ঠোঁটের কোণায় ঘনীভূত আশ্লেষায় বলেছিল,
প্রেম নেই কোন
চোখে তাদের শামুকের জরাজটিল সমুদ্রক্ষত

সম্পন্ন শব্দের অগোচরে
তোমার সুমন্ত দেহ তখন জড়িয়ে ধরে আমার ভালোবাসার জ্যোৎস্না

প্রবাসী কবি

প্রবাসী কবির কথা মনে আছে?

খা খা চৈতালী দুপুরে ঘন মেঘে ঢেকে দিয়েছিল তোমার আকাশ
মাত্রাবৃত্ত প্রফুল্ল কদমগাছ---সে কি সাদা সাদা ফুল!
অন্ধকার গুহার ভেতর ঝলমল হীরার জ্যোৎস্নায়
সুগত দু'চোখ ভেসে গিয়েছিল বিবিধ রঙের সংমিশ্রণে।
কোন নির্মাণে তখন উপলব্ধ প্রেমিক বসন্ত দিন?

শোকের ফানুসগুলো কি সুন্দর!

চোখে এখনো বর্ষার মেঘ লেগে আছে এবং
কবির চোখের জল সোনা হয়ে ওঠে আচ্ছন্ন বিলাপে।
শালকীর চকচকে বালিয়াড়ি পার হয়ে গেছ?
পড়ে আছে তোমার পায়ের ছাপ।
কে নিঃস্ব তাকিয়ে দেখে?
তোমার শাড়ীতে লেগে থাকা চোরকাঁটা বেছে দেয় অন্য পুরুষ;তখন
সাদা বরফের ধার ভাঙতে ভাঙতে তোমাকেই কবিতা ভাবছে
বুভুক্ষু,প্রবাসী কবি।

মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৩

শিল্পরুপ

সমূহ সর্বনাশের আগে আসে হাঙ্গর,কাছিম।
পিঠে তাদের সমুদ্রক্ষত।পপির অশুভ ফুল
প্রশ্নের গূঢ়তা বোঝে না;এমন অরক্ষিত নির্যাসে জারিত।
আবছা নদীর তীরে আগাম বর্ষার
সতর্ক লিখন।

আমাদের শিল্পরুপ নেই।বিমূর্ত ছবির অর্থ বোধগম্যতার সমতীত।
প্রতিটি জন্মের কথা অবিচুয়ারির স্তুপে আমূল জমতে থাকে।
আমরা সুস্বাদু হরিণের মাংশ খেতে চাই নি অথচ
অভিবাসী দ্বিমুখী অসুর---তাদের পায়ের চাপে কেঁপে ওঠে বনভূমি।
ঋদ্ধ পরিচয়ে বহুপরিচর্যাজাত আমার আপন ভূমি ধ্বংশেলীন।
মেঘ ও আলোর রেখা,মাতৃরেখায় যে গন্ডি বেঁধে দেয়া আছে
তা পেরিয়ে যাবো---সে শক্তি আমার নেই।
সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি আমার শোবার ঘরে পৌঁছে গেছে
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট তবু সোনালী বীজের ঘ্রাণ নিই;
ঝরে পড়ে কিছু সুযোগসন্ধানী ফুল ও ফল।

আমাদের এ জনপদ খরায় জ্বলে যাবার আগেই
আমাকে তৃষ্ণানিবারণের জল দাও।দাও,স্বস্তি
কাদা জলমেশানো পানাপুকুর থেকে।


লক্ষণরেখা

আলোকজটিল স্নানাগারে আমি কবিতার নগ্ন শরীরে লক্ষণরেখা আছে কি-না
তা মিলিয়ে নিতে চেয়েছিলাম।যুগল স্তনবৃন্ত থেকে মূক্তোর দানার মতো ফোটা ফোটা
জল বুক পেট নাভী উরুসন্ধি বেয়ে শাওয়ারের জলের সাথে মিশে গিয়েছিল। এবং
অন্ধ মিলনার্ত কামনায় অবরুদ্ধ নারীর মনন গেঁথে নিয়েছিলাম শরীরে।

নাহ্,আমূল শরীরে আমি কোন লক্ষণরেখা চিনি নি।

অসম দিনযাপন

ব্রাক্ষ্মমুহূর্তের প্রণত আলোয় চোখ থেকে সরে গিয়েছিল অবসাদ।অভিমানী নারী
তুমি বোঝ নি অস্বচ্ছ জানালায় আমাদের প্রিয় সম্বোধন কি শৈল্পিকতায় ফুটে ওঠে। 
এইখানে যদি কবিতার শেষ হত তবে গল্পটা নূতনভাবে অভিনীত হত।রৌদ্র, 
প্রতিহত পথ,গঙ্গাজল--আমার ইচ্ছামৃত্যুতে কারা হবে শ্মশ্মাণবন্ধু?প্রলাপমগ্ন 
দিনের স্বপ্নকে দেখোঃক'জন পালাতে পারে শস্যবীজের প্রণয় থেকে?সংবাহন সূর্য 
কিভাবে ত্বকের নীচে উষ্ণতা ছড়ায়?দিনযাপনের অসম গ্লানিতে সমস্ত উৎসব 
একে একে শেষ হয়।আমাদের নির্ধারীত আসন,গোলাপ,--আমরা হাঁটছি,পাশাপাশি! 
সকালবেলার বাসীফুল ফেলে কি অবলীলায় বলে দিই বলার মতোন কিছু নেই।

প্রতিবিম্ব

জলশোধনের গুপ্তবিদ্যা শিখে নিয়েছো?চোলাই মদ?
উপহারজাত শস্যবীজ মাচাঙে শুকিয়ে গেছে।ভুলে গেছ
রন্ধন প্রক্রিয়া?

নিবিড় অশ্বথ,শিমুলের তলে অপর্যাপ্ত দিন,
আধপোড়া খড়।আমার পুরুষদেহ শীতে তার ওম নেবে।
পৌষের শীতল প্রহর---শায়া ছিঁড়ে গেছে।
এ মৌসুমে ধান চাল গম যথেষ্টই মজুত রয়েছে।
অবেলায় ঘুম পেলে চিবুকের তিল ছুঁয়ে দেখো।

নিজের ছায়ার চেয়ে আমরা কেউই বড়ো নই।

সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০১৩

প্রাকৃতভাষা

রাত্রি এসে আমাদের খুঁজছে অন্ধকারের শুঁড় মেলে।

আমরা এখন কোন ভাষার কোরকে কথা বলব?অধিকারবিহীন?
আমাদের মাঝখানে জল থেকে উঠে আসে পোড়া শব,
নিবিড় কেন্দ্রের অনাসক্ত মাটির ভেতর থেকে ধোঁয়া ওঠে
মুঠো মুঠো আগুন ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃত শরীরে।
আমাদের ভাষার সহজ অবসানে শুধু একটি নিস্পৃহ মোমবাতি
নিবিষ্ট সময়ে অনিঃমেষ জ্বলে।

মনে পড়ে আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টির জল ছুঁয়েছিলে আর আমি
প্রসন্ন উঠোন থেকে একমুঠো মাটি কপালে মেখেছিলাম।
তোমার শাড়ীর নীল আঁচল ছড়িয়ে দিয়েছিলে
পাঁচিলের কোণ ঘেঁষে কদমফুলের পাপড়ি কি অবিরল ঝরে পড়েছিল।

গ্রহ থেকে গ্রহান্তরের নিস্তব্ধ পাতা জালে
আমাদের প্রাকৃতভাষা আটকে থাকে।

সময়ের গাছপাথর

সময়ের গাছপাথর এতোটা পরিকীর্ণ?
পূবে গিয়েছি,পশ্চিমে.........
সমুদ্রতীর অবধি।অভিমানহীন সরলস্রোত ফিরিয়ে দেয়
দিনশেষে ব্যর্থ প্রতিশ্রুতি।

অন্ধকারে আকাঙ্খিত সফল পথের অনাবৃত ইঙ্গিত।সুদূর উচ্চারণ এবং
তৃষ্ণার্ত বনভূমির প্রান্তে দীপ্ত পটভূমি।
সমমর্মী শিল্পে এমন আচ্ছন্ন ছবি,---
বিশুষ্ক ফলের উজ্জ্বলতা ঝরে পড়ে।
চৈতালী দুপুরে সব বিবিধ ভাবনা
ঘরের ভেতর।লাল বারান্দায় সংহত,নিবিড় ঝুমকোলতার ফুল।

সারাদিন নির্মোহ উচ্ছ্বাসে অকম্পন দৃষ্টি,নিয়ত বধির।

শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৩

পলায়ন

সময়ের আপেক্ষিক স্রোত বোঝে নি আমার ভাষা।আবছা নদীর তীরে সম্পন্ন শব্দের
ঘূর্ণামান জলস্তম্ভ তোমাকে কি ছুঁয়েছিল?অনুচ্চার অভিযোগে সমস্ত ব্যর্থতা আজ
স্বপ্নের চেয়েও মিথ্যে মনে হয়।সজল মেঘাবরণে রাত্রি জ্বলে;প্রান্তে তার বৃষ্টিরেখা।
আমি ধূলোওড়া পূরোনো শহর ফেলে এসেছি।বাতাসে লবণের স্বাদ।এর অর্থ পৌঁছে গেছি
সমুদ্রবন্দরে।সারি সারি মৃত জাহাজের খোল থেকে নামছে চাউল, মার্বেলপাথর।

কতদিনের নিরম্বু উপবাসী শরীর।নিগূঢ়  প্রশ্নে জর্জরিত করো সংসদ ভবনঃ
খাদ্য ঘাটতির দেশে মার্বেল পাথরের কি প্রয়োজন?

আর আমি তখন সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি পার হয়ে উলম্ব সূর্যের কাছাকাছি
পৌঁছে যাব।











আশ্রয়

দুঃখবিষে ভরা এ শরীর নিয়ে কতকাল শুয়ে আছি জলের তলায়।সমতীত দিন,
অন্তহীন রহস্যের সহজতর স্রোতের দোলাচলে বিচ্ছিন্নের বিষন্নতায় দু'চোখ
বিবিধ  রঙ,বিচিত্রিত রেখা---বিনম্র নদীর সমুদ্রের দিকে সমাহিত যাত্রা;গ্রামসীমা
পার হলে অন্ধকারের শ্রাবণে স্পষ্ট নিহিত বঞ্চণা।নিবিড় হারিয়ে যাবো?প্রবাহিত
সন্ধ্যার সর্পিল ভাষা---কবিতা লেখার উপযোগী নয়।এখনো বুঝিনি খেত্রজ নৌকার
অবিচ্ছিন্ন গতি কোন দ্বীপের আশ্রয়ে শেষ হয়।










































































































বিরুদ্ধ আগুন

সর্ব অঙ্গে পাপ।উদ্বায়ী প্রেমের নীল রেখা;যে সমস্ত ব্যাথা মিশে ছিল শালকীর জলে
পূরোনো সম্পর্ক ভেঙে আদুল নখের কোণে মেহেদীর দাগ---খুব আনমনা অনুরাগে
চোখের সামনে থেকে সরে যায় ধোঁয়াওঠা ট্রেন।মনখারাপের বাঁশি বেজে উঠেছিল?
রেলসড়কের খাদভর্তি ডানকানা মাছ।আমরা দেখেছিলাম কদমগাছের পাতা
অনায়াসে ঘুরে ঘুরে পড়ছিল।ঝড়ী বিকেল কিভাবে ভাসিয়ে নিয়েছিল দূর গাঁয়ে।
বিষন্নের দুপুর আকাশে ছিল অপমান।আমার পুরুষ্ট ঠোঁট হয়ে উঠেছিল
শস্ত্রময় বিশ্বাসঘাতক।

বিরুদ্ধ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল প্রথম বিশ্বাস।











































































































































পারাপার

সবকিছুই বিস্মৃত।শুধু মনে আছে কোজাগরী পূর্ণিমায় প্রবাহিত সম্পূর্ণ আকাশ;
শালের মামল্ল পাতা,আধকাটা গাছ,কবরখানার পাশে স্তব্ধ রাত।গ্রহণের কালে
কোথায় পৌঁছুতে চেয়েছিলে? একজীবনের পরাভবে!রৌদ্রনভস্তলে পূরোনো শহর,-
যা কিছু আমার চারপাশে ছিল
আগুন ও জল।
মাটি ও পাথর।
সবুজ ঘাস ও খড়।
সূর্যাস্ত ও সমুদ্রসৈকত।

নিদ্রাহীনতার ভেতর জলের বিভাজন থেকে উঠে এসেছিল আদিপ্রাণ,পশুআত্মা ।
অর্ধসমাপ্ত লবণজল স্নানশেষে আধোশ্বেত শরীরে তাদের আলোর উলম্ব রেখা,
অপর্যাপ্ত জীবনবোধ।মুখর প্রতিবাদে তালবীথি।শান্ত সাগরনদীর দুই তীরে
জেগে ওঠে চর।প্রতিহত পথ স্বচ্ছ জলে ডুবে যাবার আগেই এসো,পার হয়ে যাই।



















































































































































































































































































































বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৩

কাব্যিকপ্রেম

নিরলস আঘাত হানছো
ভেবে দেখনি সহ্যক্ষমতা
পাথরও একসময়ে হিমানী সম্পাতে ভেঙে পড়ে
এতো মূঢ়মতি
মিথ্যে অহংকার,অনুতাপহীন চোখ,---
সম্ভোগ ও বিতৃষ্ণায় ধ্বসে পড়ে পূরোনো শহর
শুধু আমার নিজস্ব ঘর টিকে আছে
মোমের আলোয় বাক্যবদ্ধ পাঠ্যান্তর
অক্ষরে অক্ষরে কবিতার জন্মকথা

কোন গোপণ প্রহরে প্রেম কাব্যে রুপান্তরিত হয়েছে

মানবপূজা

সারাদিন জপতপ,মালা চন্দনের পরিশ্রম
প্রভূ,স্নান সেরে এসেছি,এবার অর্ঘ্য দাও।

আমাদের মানবিক কষ্টগুলো এতো অবিশ্বাস্য,বস্তুবিহীনতা,---
মাটির স্বচ্ছতা কেঁপে যায়।প্রভূ,তুমি দেখেছো কখনো?

অন্ধকার পথ ধরে মন্দিরে এসেছি
আমার পূজোর বেলফুল এখনো দাওনি,প্রভূ?

বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৩

জীবনচক্র

সর্বময় বিস্তৃত আকাশ থেকে কাল বৃষ্টি ঝরেছিল।অভ্যস্ত নিপূণ পায়ে বেজে ছিল
কর্দমাক্ত পথ।কোথায় লুকানো শান্ত উপাচার?চারদেয়ালের ঘেরাটোপে?
অনন্য রাত্রির মধ্যে নশ্বর যৌনতা স্তব্দ প্রতীক্ষায়,প্রস্তুত শরীরে।

অশেষ জীবনচক্রে এই ছবি আঁকা হয়ে আছে।

জাতিস্মর

ভুলে গেছি প্রিয় সব নাম।সুন্দরের আখ্যান।করন্ডচিত্র।গ্রামময় ভাঙা আলপথ।
গড়ে তুলবার কথা মনেও আসে নি।আমার সম্পন্ন জানালায় বিনির্মাণের প্রচ্ছায়া।
পূরোনো ধ্বংশের স্মৃতি স্বাধীকার জাগরণে তন্ময়।প্রতিশ্রুতির দিগন্ত প্লাবিত পদ্ম
ধ্যানে নিমগ্ন,আলোকোজ্জ্বল।দূরতিক্রমণের নিয়ম জানা আছে?অশাসিত অশ্বফুল,--
বাতাসে উড়ছে গর্জনের বীজ।প্রজন্মের থেকে প্রজন্মান্তরে,একাকী।

জাতিস্মরের সর্বস্ববিকশিত স্মৃতি দৃশ্যমান ঘোলাটে দু'চোখে।

সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৩

রডডেনড্রন গুচ্ছ

আতত নির্জন রাত এতো স্পষ্ট।প্রত্যাশার সমরাগে স্বাভাবিক অমিত বিশ্বাস।
অনাশ্রয়ী অন্ধকারে যৌন দ্রাঘিমার ওপারে সমূহ সর্বনাশে কাঁপে ধূতুরার ফুল।
অন্তলীন খসে পড়া একশত গোধূলিময় আকাশ,অশ্রুজলরেখা পরিপূর্ণ নদী,
নীল পাহাড়ের চূড়ায় রৌদ্রের ঝলকানি।ভুলে গেছ আষাঢ়ে পূর্ণিমা।রক্তের ভেতর
দাবদাহ।রুগ্ন অক্ষমতায় সুস্পষ্ট প্রকাশের ভাষা---নিবিড়তম।বিরুদ্ধ ভালোবাসা
চিরদিনের অবধ্য।শষ্পদল আঙুলে আঙুলে মাটি ছুঁয়ে দেখি কেবল শরীর নয়
রডডেনড্রন গুচ্ছে ঢেকে আছে তোমার চিকন আত্মা।

রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৩

বিভাজিত ছন্দ

সীমান্ত শহরে চলে এসেছো?বিমূর্ত কিছু শব্দাবলী,----
অনাসক্ত অভিবাসনের এই তোমার পাথেয়?
শূণ্যময় অতলান্তে গোত্রস্মারক।অনাব্য পথে
পায়ের তলায় চাপ চাপ অন্ধকার।অনুচ্চার অভিযোগে
নূতন জন্মের সাথে ঝরে পড়ে

সমস্ত ব্যর্থতা,জন্মান্তর---প্রথম প্রস্তুতি অশ্রুময় নির্মাণ।কেবল
পরিশ্রান্ত বিকেলের আলো বুকের ভেতর হিম হয়ে আসে।

অন্তরাল দ্যুতিময়তায় ভুলে গেছ শব্দের বলয় ভেঙে বের হয়ে আসা
বিভাজিত ছন্দ।

শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৩

বিমূর্ত রেখা

নিপূণ পথের বাঁক পার হয়ে মনে হলো কোথায় সে পথ,সুমন্ত আলোকময়?
আমার পাথরকুঁচি মুখ নক্ষত্রের ছায়া এসে ঢেকে দেয়।উত্তর দক্ষিন পূর্ব
পশ্চিম ওপর নীচ চারদিক জুড়ে আসে অন্ধকার মেঘ।নিদাঘ খরায় পোড়ে বুক।
মাটি ফুলে ওঠে।আপ্লুত আহ্লাদে চোখে এঁকে দিয়েছিলে চুম্বনের ছাপ।বিদ্যুৎ রেখায়
ছুঁতে চেয়েছিলে অসময়ের বিমূর্ত রেখা!

শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৩

ক্ষণস্থায়ী

প্রবল একাকী ঘোরে হেমন্তলীন পাতার নিরন্তর উড়ে যাওয়া।নির্বেদ শূণ্যতায়
পৃথিবীর সব সমুদ্রতীর দ্বিবিধ অর্থময় হয়ে ওঠে।নক্ষত্রহীন নৌ-অভিজ্ঞতা,--
আমরা জেনেছিলামঃআত্মমৈথুনিক মানুষের বিষ্মরণ!কেন্দ্রাভিমুখী ক্ষমতা,অগ্নি,
দ্যুতিপ্রাণতায় পরিণত ফল,সাঁইবাবলার সম্পন্ন ছায়ায় স্থান বদলের ঘন্টা।
পাতার মর্মর ধ্বনি।পথ ফুটে থাকে সমুদ্রের ভেতর।নৌকার সীমাহীন চলাচল
দ্বীপের আশ্রয় জুড়ে।এ সমস্ত দ্বীপ একদিন ডিমের খোসার মতো  ভেঙে পড়ে।

বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৩

পূর্বরাগ ভালোবাসা

আউশ ধানের ক্ষেতে মুক্তডানার বকের সাবলীল ওড়াউড়ি।
বর্ষাশেষে নদীর ওপারে ঘেঁটুবন,বুঁচকাঁটা,বনমরিচের সান্দ্র সুদূরিমা---
সুগত দু'চোখে স্বতঃস্ফুর্ত আকাশের নিস্পৃহ শ্রাবণ।
এমন নৈসর্গিকতা।ষষ্ঠীর নিমগ্ন চাঁদ ডোবে সম্পন্ন বাড়ির
প্রসন্ন উঠোনে।

অসংখ্য নিবিড় লতাপাতা---তিত্তিরাজ,বন্যেবুড়ো,পিটুলিগাছের বন।
প্রাকৃতিক পানা পুকুর।উত্তভাদ্রপদ নক্ষত্রের জলে
যে মুক্তো জন্মাবে আমি তারই আশায়
সংহত ঝিনুক জড়ো করে রাখি আঁশ শ্যাওড়া ঝোপের পাশে।

পূর্বরাগে ভালোবাসার যে স্বপ্ন জন্মেছিল
আমি তার ধূলো গায়ে মেখে আছি সমূহ বিশ্বাসে।
নেবে?
শব্দহীন সূর্যালোকে পূর্ণ প্রেম---
অবিরোধী দুঃখের বিজিত সমারোহে।

বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০১৩

শান্ত অগ্নি

জলের ভাবানুষঙ্গে
দ্বাপর যুগের স্রোতে ভেসে রয়েছি;মুছতে পারো
সুলেখ্য কবিতা,চান্দ্রগীতি।

অবিন্যস্ত সিঁথি,অশ্বমেধ যজ্ঞ,
মিলনবেলায় আমার অস্পষ্ট বাকরীতি ,---
উপক্রমণিকা হাতে ছুটে পালিয়েছ।

উত্তর রৈখিক শব্দাবলী---চর্যাপদের বাগান,
নেবে?
আমি বোঝাতেই পারি না ভাষার সন্দর্শন,
ছন্দবিভাগ,খান্ডবদাহ।শান্ত অগ্নি।

মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০১৩

শেষ বিকেলের বোঝাপড়া

ধ্বংশের প্রতিমা বানিয়েছি---পূজো দেবো আজ রাতে।তারপর।
বিসর্জনের বিষাদ।অর্থহীন শব্দে ভরে যাবে সাদা পাতা।

ঠোঁট থেকে গড়িয়ে পড়ছে লুব্ধ লালা,
আসমুদ্র পাপেভরা লবণজল শরীর---চিতা জ্বলে বুকের ভেতর।
সকালের শিশিরজলে এ পাপ মুছে যাবে?
চারিদিকে মূঢ় ধ্বংশ আর বিনাশ;ফসফরাসে এতো আলো?

আমাদের সব সত্য অবলীন শেষ বিকেলের বোঝাপড়ার ভেতর।

অডিসি

কোথায় ইথাকা?
কোথায় অডিসিউস?
অসম্পূর্ণ আয়োজন।ছায়া বিবর্জিত ট্রোজান,গোধূলি রঙে সজ্জিত ট্রয়নগরী।
স্বদেশ প্রত্যাবর্ত্নে পথভ্রষ্ট।টেলেগোনাসের তরবারী
রক্তে লাল।হায়!ইথাকা নগরী ভেসে যায়।

স্বপ্ন বিসর্জন

স্বপ্নের ভেতর এলোকেশী!

আমার অস্পষ্ট হাতে রুপোঝরা বলয়িত সূর্য
কাদামাখা পায়ের তলায় আঁকা বাঁকা নীলচে জলের স্রোত
একবীজপত্রী উদ্ভিদ,ক্ষেতজাঙাল----গোলাপের গন্ধ নিতে ইচ্ছে করে
তোমাদের ফুলের বাগানে বেড়া কই

আমাদের স্বপ্নেরা কখন মৃত হয়ে যায়
শীতল দৃষ্টির নির্নিমেষ কোন অনিবার্যতা সুস্পষ্ট
আনত জলের বিভাজনে আমি উঠে আসব অর্ধসম্পূর্ণ স্নান থেকে
আমাদের বিস্ময়গুলো যখন স্থির হয়ে যায়,---
হিজলের ছায়ায়,বিরহ সঙ্গীতের সুরে নৌকা ভাসাব;সমূহ স্বপ্ন বিসর্জনে

শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৩

খেলার পুতুল

সুগত দু'চোখে নিমগ্নতা।সমন্বয়ী ব্রতে অরব আনন্দ।কোথা থেকে আসে এতো আলো?

অন্ধকার ঘরের ভেতর আলোকিত জানালা।গোলাপভরা ফুলদানী।দুঃখময় সুরে
অভিন্ন ভালোবাসার প্রুতিশ্রুত ঋণ---ভুলে যাবে।আমাদের বিচিত্রিত কররেখা,
মুখের শীতল রেখা,পরিপাটি স্বপ্ন---ঝোড়ো বাতাসের স্মৃতি উন্মাদনায় আহত
আমাদের অশান্ত সংসার ছুঁয়ে যায় প্রথম বৃষ্টির জল,ভাঙা-চোরা সম্পর্কের সাঁকো।
ঐকান্তিক শরীরের প্রেমে দ্বিধার দেয়াল,অশ্লেষা সন্ধ্যায় আকাশের মুখোমুখি
যে বিশাল চন্দ্রাতপ বানিয়েছি;তা আজ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে।শনির দিকে উড়ে গেছে
স্বস্তিময় সুখ।অলৌকিক অন্ধকারে এতো আয়োজন?আমাদের মাঝখানে দাঁড়িয়েছে
উদাসীন অক্ষমালা।পারস্পর্য্যহীন নদীর দু'পাড়।আমার অন্তিম অশ্রুপাত
ঝরে পড়ে অগস্ত্যের পথে।আততায়ীর উল্লাসে টাঙিহীন জেগে দেখিঃমাঙ্গলিক সূত্রে
ছেয়ে আছে চরাঞ্চল।দখলের মহোৎসবে কাটা পড়ে গেছে শরবন।

বাস্তবতার পরাজয়ের রীতি,প্রতিচ্ছায়া ভেঙে ভেঙে খেলার পুতুল হব?

শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০১৩

প্রতিষ্ঠ প্রেম

উন্মীলিতা রাত,অনিঃশেষ ভালোবাসা,আধখোলা বুক,----
কূটিলতার পৃথিবী অবহিত আমার সামনে।পপি গাছের অশুভ ফুলে
ছেয়ে আছে আদিগন্ত ক্ষেত।অসহনীয় সৌন্দর্য্যে।পাতায় পাতায়
সর্বনাশের উচ্ছ্বাস।
অমিত বিশ্বাসে রৌদ্র নেমেছিল।'বিকেলে আবার দেখা হবে'
বলে যে বালিকা নদীর ওপা্রে চলে গিয়েছিল শুভ্র সমারোহে
তার জটিল পায়ের ছাপ আজো ঢেকে যায় নি,বালিতে।

আদিম রক্তগোলাপ অবিরোধী ঘনতায় বিস্তৃত,অনন্য জাগরণে
দিগন্ত প্লাবিত প্রত্যাশার প্রুতিশ্রুত সোপান,প্রতিষ্ঠ প্রেম।

অভিযোজন

মৃত্যুর অন্তর্মুখীনতার মধ্যে সর্ষে ফুলের এ মাঠ
একদিন মুছে যাবে আমাদের বিস্মৃত স্মৃতিতে
পরিপক্ক ডুমুর গাছের পাতা এবং ফল
ঝরে যায়,ঝরে যায়----সবকিছুই অনুচ্চারিত

একই রকম গ্রীষ্মকাল
স্বরলুপ্তির ঘোষণা,----সম্ভবতঃ আমরা এগিয়ে যাচ্ছি
সার্বজনীন ভাষার ব্যকরণে 
নিরাসক্ত,ছায়ালীন,স্বাভাবিক স্থিতি

সহজাত অভিযোজ্যতায় অযোগ্যতা কিংবা প্রত্যাশার প্লাবিত মন্দিরে
দেখেছি পুরোহিতের তীক্ষ্ম তিরস্কারে আর্ত অন্ধকার

বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

বিষাদের চান্দ্রগীতি



জলস্রোতে খুঁজে নেবে গোত্র পরিচয়?
উপদ্রবহীন জামরুল বাগানের গোপণ প্রণয়ে মেরুদূরাতীত?
ভূতবিদ্যা ও জ্যোতিষশাস্ত্র থেকে যে জ্ঞান জেগেছে
অমীমাংসীত আধূনিকতা কবিতার আঁচল জড়িয়ে
উত্তর রৈখিক খাটে শুয়ে আছে দ্বিধাহীন মশার জ্বালায়।

নিরন্তর প্রস্তুতি---তাপিত ঘোষণায় নিদ্রাবিষ্ট।
কেন্দ্রাভিমূখী ক্ষমতা,স্মৃতিহীন প্রতিটি বস্তুর অবস্থিতি,
সংস্কারবিহীন নির্ভরতা---অনতিক্রমণীয়, অনুবর্তিত নদী,
সামাজিক মুদ্রাদোষহীন পাপ দুচোখে---শাসিত সমর্পণে
বেজে উঠেছে সাফল্য,প্রতিশ্রুতিময়।

নান্দনিক কবিতার ক্ষেতে বুনে দিয়েছি যে সব সুমন্ত গানের কলি,---
ঝরেছিল কন্ঠ থেকে।
প্রতিদিনের পূরণো সুর বেজে ওঠে সন্ধ্যেবেলা,
তমাল বনের অন্ধকারে কোন অন্ধ প্রেমিক গাইছে
বিষাদের চান্দ্রগীতি।

পরিণতিহীন শিমুল তুলো

পরিণতিহীন শিমুল তুলোর বীজ বাতাসে উড়ছে।
তুমি কোনদিকের জানালা খুলে রেখেছো?পূবের?
পশ্চিমের জানালায় আমাদের নাম লেখা ছিল।
ঝোড়ো বাতাসে তা নিশ্চয়ই মুছে গেছে
অনেকান্ত জীবনের জাহাজের যাত্রী তালিকায় কিংবা
হোটেলের অভ্যাগত তালিকায় আজ আর কোন নাম নেই।

সে দিনগুলোর কথা মনে পড়ে,
যখন নরম চাহনীতে জলদ মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিলাম
গোটা পৃথিবী বৃষ্টির জন্যে অপেক্ষায় ছিল।
বৃষ্টির শীতল ধারা পৃথিবীকে শান্ত করে রেখেছিল
আর তোমার শরীর ধীরে ধীরে সমুদ্রের উষ্ণতায় উঠে যেত।