বৃহস্পতিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৫
জ্বালানী আঘাত
শালকীর শান্ত জলে স্নানোৎসব
তীরে পড়ে থাকা সমাধিফলক, জলজ শ্যাওলা, পাতা, খড়,-
জলবাহী এবং বাতাসতাড়িত
গন্ধ নিতে ইচ্ছে করে
নদী-মোহনার মুখে আটক মৃতদেহের
এক-একদিন ঝড়ের রাত্রিতে অক্ষিগ্রন্থির ভেতর
চিরস্থায়ী বিদ্যুৎচমক; আলোর বিপরীতে শব্দ ও স্রোতের উর্ধ্বে
শতছিদ্র জাল - স্মৃতি এবং বিস্মৃতির মধ্যে জমে ওঠে অপার্থিবতার বোধ
যা-কিছু ভঙ্গুর, ক্ষণস্থায়ী এবং যা-ভাঙবার নয়,-
ইহলৌকিকতা,হোমাগ্নি ও আতিথ্যময় পৃথিবী
একই রকম পড়ে থাকে
পরোপকারের জলে জ্বালানী আঘাত
ধ্বংসবীজ, গজিয়ে ওঠার আগে
বিদায় বেলার আগে যে সঙ্গীত উৎসারিত হয়েছিল,-
স্তব্ধতার সেই সুর
দীর্ঘ,কঠিন পথের শেষে মেঘের সারল্য আর
প্রতিহিংসার আগুন বুকে বন্ধকী এ জীবনের
সফল পরিসমাপ্তি টানতে চেয়েছিলাম
রৌদ্র প্রতিহত পথে মেষপালকের সারি
অসাড় অভিযাত্রীদলের মতো পাহাড়ের ঐ উঁচুতে
সাদা বরফের গায়ে নক্সী আঁকা ছাপ
ক্লান্ত বাহু, চূর্ণ-বিচূর্ণিত রৌদ্র রশ্মিকণা,-
বিরহের সুরে কোন উন্মাদক নীল পাহাড়ের তলায় ঘুমিয়ে আছে
আমার ক্ষমতা নেই ধ্বংসবীজের মতোন গজিয়ে ওঠার
ফসফরাসের আলো
নির্জন খাঁড়ির মুখে ছায়াঘন রাত্রি। পাথুরে বাসায় ডানাভাঙা পাখি কাৎরায় - ফসফরাস জ্বলে ওঠে সমুদ্রের লোনাজলে। অধোমুখ আলোর খেলায় ভেসে যাবে?এতো রহস্য ঐ প্রাকৃতিক আলোয়? শৈবাল,ঝিনুকের পাহাড়, প্রবালহাড় এবং পরিত্যক্ত নৌকা,- এইখানে প্রকৃতি জীবন্ত আর জলপাই বনের নিবিড় অন্ধকারে আমাদের শ্বাস দ্রুততর হয়ে ওঠে। জটিল ও দুর্বিষহ লিখন রীতিতে লেখা হল না - সমুদ্রগীত। নিম্নগামী রঞধনু সঙ্গীতে ব্যাপ্ত হল জীবন। উৎসব শেষে অর্থহীন মাথানাড়া,আঙুলের গিঁট গোনা,- পায়ে এসে ভেঙে পড়ে দূর্বিনীত ঢেউ অথচ আকাঙ্খা ছিল ঐ সূর্যের উচ্চতার কাছাকাছি। লবণজলের স্নান,লাঙলের ফলার মুখোমুখি,- ফসফরাসের আলোতে তমসাগান। ফুটো ভিক্ষাপাত্রে আর কত জল, আর কত দীর্ঘশ্বাস সৈকতের ভেজা বাতাসে ছড়িয়ে দেব?
পরাজয়ের নিয়ম মেনে পথে নেমেছি - সমুদ্র, ঝাউবন, উপকূলে মকর রাশির ছায়া এবং আমার যাতায়াতের পথে পড়ে আছে কিশোরীর রক্ত মোচনের তুলা ও ছেঁড়া ন্যাকড়া।
বুধবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৫
অমীমাংসীত উত্তরাধূনিকতা
অনায়াস লঘু পায়ের অদ্ভূদ শব্দে
আমি পাতার সমাধি থেকে জেগে উঠি
সংবাহন সূর্য তার সমস্ত রশ্মিতে
স্বপ্নাচ্ছাদিত দৃশ্যের মতো অনুজ্জ্বল অক্ষরে বিনষ্ট মুখ,মুখচ্ছবি এবং
পুরুষের অশ্রুপাতের যে চিত্র বালির গহ্বরে,সমস্ত সোইকত জুড়ে
জলের সীমানা ছেড়ে উঠে এসেছিল - মুছে ফেলে, মুছে ফেলে
পুরুষের সিক্ত ঘামে অনুসন্ধিৎসাময় পৃথিবী
পুরুষ ও রমণীর যাতায়াতের কন্টকাকীর্ণ পথে
একে একে উঠে আসে
ধ্বংসস্তুপ,রাত্রি,রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তি
মাথার ওপর শর্তহীন লোভে খসে পড়ে নক্ষত্রমন্ডলী
হেমন্তের কোণে পড়ে আছি
অমীমাংসীত উত্তরাধূনিকতা জলের মতোন পুরু হয়ে ওঠে
বালিকাচের ওপর লবণজলের ঝড়
উন্মাদ উত্তর পুরুষেরা শামুক লালার চিহ্নে পথ খোঁজে
রোউদ্র জ্বলছে ঐ দিকে
অগ্নিতাপ
যে স্বপ্ন দেখার কথা ছিল মুখোমুখি,অধিকারহীন,-
সবুজের অবাধ স্মৃতির অন্তরালে সাজানো সত্যের কাছে পায়ে পায়ে যেতে হয়েছিলঃ
অস্বচ্ছ দিনান্তে স্থির ও কঠিন অনিশ্চয়তার মধ্যে জলচিহ্ন নেই
বাতাসবিহীন অন্ধ ঘরে দৃঢ়,প্রসারিত দুই হাতে তবু লেগে ছিইল
ব্যবহৃত সময়ের ছাপ
সজল আঘাতে খসে গিয়েছিল নিমগ্নতা
জটাজুটের ভস্মলেখায় পড়ে থাকে স্নেহরঙিন দিন ও গোধূলিবেলার লগ্ন
শীতার্ত প্রহরে আগুন জ্বেলেছিলাম
বনের শুকনো পাতা,শেকড় ও ডাল,- সব একসাথে
অন্ধকারে মুছে গিয়েছিল আমার দু'চোখ আর সহজাত প্রতিরক্ষায় শরীর শুষে নিয়েছিল
আগুনের যত তাপ
চিত্রার্পিত রেখা ও রঙ
শিশিরের শব্দে রাতের উন্মাদগান, মেঘ জর্জর রক্তের স্রোত,চারপাশের বিরানভূমি এবং আঙুরলতার তুলনারহিত জনপদে সভ্যতা এখনও পায়ে পায়ে হাঁটছে - যা কিছু সত্য;স্ফটিক,চুম্বন,বাঁদরনাচ ও সারিবদ্ধ নৌকাগুলোকে বাতিল করে এগিয়ে চলছে সার্কাসের সিংহ - মৃত্যু আর বিনাশের কালে সমুদ্রের লবণজলে যখন চাঁদ ওঠে - সহমরণের চিতা শুকনো বাঁশপাতায় ভরে ওঠে আর অই দিকে নবনির্মিত আশ্রমে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রশ্ন ছিলঃ সাংসারিক জ্যোৎস্নায় গৌতম কেন ঘর ছেড়েছিল?
গৌড় থেকে বাংলা - আমিও প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলামঃ ধ্বংস ও সূর্যোদয়ে কেন এতো চিত্রার্পিত রেখা ও রঙের সংমিশ্রণ?উচ্ছ্বিষ্টাবৃত কবরে অর্ধসত্য ঘুম - কোন নিয়তি গভীর খাদে এনে ফেলেছে - খনিজ ধাতু বা ক্রিয়াশীল অনুঘটকে যা কিছু জারিত - হিংসার অবলীঢ় তাপে গলে গেছে হৃদযন্ত্র - প্রতিফলনের নিয়মে উদ্বাস্তু গৃহ রৌদ্রে পুড়ছে - দেয়ালে প্রতিপন্ন কবিতা ও এর অন্ত্যমিল - নদীর ওপারে কারা ছিল - এপারের বাসিন্দারা জলকলহের নীচে চাপা পরে আছে - সাঁকোহীন নদী,- ভাঙা পারের বিলাপ শুনি - করপুট ভরে জল নিই - জলের শীতলতায় হাড় কাঁপে - দূরে,জীবাশ্মের অন্ধকারে আগুনের শিখা - না-কি চিতা জ্বলে - সভ্যতার ।
জ্বালানী ক্ষত
সেই সমস্ত ডুমুরবনে আজ আর কোনো কাঠবিড়ালির বাসা নেই - উপদ্রুবময় জামের বাগানে সংঘবদ্ধ পিঁপড়ের সারি থেকে দিকভ্রান্ত ঘাসফড়িঙের গতি-প্রকৃতির যন্ত্রণাময় যে পথ নির্দেশিত ছিল আর যারা বেঁচে ছিল,- মৃতের সমান; শোধনাগারের দিকে ছুটছে-তাদের দুই পায়ে জ্বালানীর ক্ষত।ক্ষতবহ এবং অশনি ফসল-রুঢ় কষাঘাতে একাধারে তাপ ও বিদ্যুৎ - অন্যপাশে বৃত্তময় চাঁদ;এক্সসবাইকে ফেলে এগিয়ে চলেছে - বনমানুষের দল-সু-প্রাচীন মিথ, তমসাগানে মুখর রাজপথ-চিহ্নিত সমুদ্রপথ, পশ্চিমের ঘাটশীলা এবং বনের গভীর অন্ধকার ছিঁড়ে ফিরে যেতে আত্মরতিপূর্ণ যৌবনের দিকে । যৌবন ও ক্ষুধা, কুয়াশাঘন আলোকবিন্দু, ফুল ফোটানোর আগে এবং যৌনতার কালে বিপরীত,প্রতিদ্বন্দী বোধে একসাথে প্রসারিত যোনী ও আর হাঁ করা মুখের গ্রাস - নির্বেদ শূন্যতা ঝরে পড়ে পীতাভ নাভির মধ্য থেকে ।
২.
পাতা ঝরা হেমন্তের রিক্ততার শোক ভুলে যারা আধখানা ডাল ভেঙে পথে নেমেছে - মন্থরগামী কাল,- বিস্ময় চিহ্নের মতো চৈত্র-ফাল্গুনে চোখের নীচে নড়ে ওঠে । মাটির শুকনো পথ,নড়বড়ে সাঁকো পার হয়ে নদীর ওপাড়ে আবাস গড়েছে - নিদ্রাটিলা ও জটিল-জটা অক্ষরের ভাবগম্ভীর লেখায় অবিশ্বাস করতে শিখেছে - অবলীলায় মহাবিষুব রেখা মুছে দিয়ে গ্রন্থের মলাটে ঔষধির ক্ষেত আর মহা শ্মশানের ছাই - বেতগাছের দোলনা - তাতে হাজার শিশুর দোলা....।
দিনের উপান্তে কারা শুয়ে আছে ভূ-গোলের খোলা মাঠে?
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)