Powered By Blogger

শুক্রবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

বৃষ্টি, অন্য ক্ষেতে,ক্ষেতজাঙালের বাঁধে

স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর প্রবাসী নৌকার সারি - দাঁড় ও জলের নিবিড় প্রণয়ে মতিচ্ছন্ন অভিযাত্রীদল ঝুঁকে আছে নদীতীরের ঘাটের দিকে - অর্ধসত্য ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি মনে হল আধুনিকতার শেষ হয়ে গেছে - যুদ্ধের দামামা নেই কিন্তু তার বিষ রয়ে গেছে - দৃষ্টিক্ষুধা আর সফেদ সাবানে ছিন্ন মিথ্যা প্রত্যয়বোধে হাঁটা পথ ও বনস্থলের রীতি মেনে পাখিদের পেছনে পেছনে সামুদ্রিক ভূত,অসুরেরা উড়ছে - তাদের ডানা ও পালকে কালোধ্বজ,অমঙ্গলের সূচকচিহ্ন - নীল নভেঃ ভাসমান অক্ষরের ক্রমে শব্দ ও ভাষার পাঁকে জাগতিক নিয়ম,দিব্যোন্মদনা - অতীতচারিতার ভেতর সাল-তারিখের জটিলতা,পরাবিদ্যা - বনগত বনানী ও বিভা ছিঁড়ে ফেলে প্রযুক্তির অধিবিদ্যা - খনিজবিদ্যা,জরীপ কার্য্যাবলী - এত উৎকর্ষতা পেয়েছে - মাথার উর্ধ্বে যতি ও পূর্ণচ্ছেদের বিরতিতে পড়ে থাকা সমাধিপ্রস্তরে দেখেছি স্বাতন্ত্র্য,অধর্মের ছায়া।জীবিতের কর্তব্য বা বস্তুব্যাপকতা থেকে কল্পিত ঘুমের পাশে ফোটে অগ্নিরেখা,মর্মতল ছুঁয়ে যায় ঝড়ের রাতের শীতলতা। রমণী,এমন রাতে তুমি পথে বেড়িয়েছ? অসংখ্য শোকের ডাল ও পাতায় স্মরণাতীতের প্রতিচ্ছবি - কখন দিগন্তে ডুবে যাবে? জলের অধিকারের মতো একদিন তোমার শরীরে চন্দ্রাহত আষাঢ়ে পূর্ণিমা - স্পষ্ট দেখেছিলাম আমার বিশ্বাসের সারাৎসার ও প্রব, দূর্বিপাকে উৎসারিত সব গান মুছে দিয়েছিল অন্য আর এক করতল। প্রতিটি ফুলের জন্ম ঝর্ণার অনন্ত শব্দে মিশে থাকে আর বৃষ্টির অঝোর ধারাজলে তুমি এক উন্মুখ প্রান্তর যেন - যদিও দুই হাত তুলে বৃষ্টিই চেয়েছিলাম। সেই বৃষ্টি আজ অন্য ক্ষেতে,ক্ষেতজাঙালের বাঁধে

আঁচলে বাঁধা কোজাগরী চাঁদের টুকরো?

আকাঙ্খার অসহ্য আক্ষেপে আমি কেঁপে উঠেছিলাম - আর্তনাদ ও অবসাদে রাতের কংকালশীর্ণ দেহে জড়িয়ে নিয়েছি জ্যোৎস্নার আঁচল। অবগুন্ঠিতা রমণী,তপ্তহত আমার এ মুখ চাঁদের মতোন পান্ডুবর্ণ,বরফের মতোন শীতল - সূর্যমুখী পৃথিবীতে যদি অগ্নির অক্ষরে লিখি নাম - জ্বলে ওঠে বুক দাউ দাউ জলের অক্ষরে লিখি কবিতা - অকাল বর্ষণের ঢলে ভেসে চলে যায় বালি,কাশবন ও উড়ন্ত পাখিদের ডানায় লিখেছি প্রিয় নাম অরূণোদয়ে হৃদয় খুলে দিয়েছিলাম - দেখো নি প্রিয় নিঃসীমতা ভুলে প্রতীক্ষিত প্রহরে নিভৃত কান্না। সান্ধ্য শহরের নির্জনতা বুঝে নিয়েছিল নিদ্রাহীন জ্বালা।মুঠোয় ধরতে পেরেছিলে সকালের আলো বা আঁচলে ধরে রেখেছিলে কোজাগরী চাঁদের টুকরো? তোমাদের লীলাময়ী হাত থেকে খসে পড়ে প্রেম,আলো,সারাৎসার জীবন। তমসাগান আর ভৈরবীতে এতোদূর চলে এসেছ?ফেরার পথে মিলনের সম্পূর্ণ মায়ায় মমতামাখানো সকাল। আঁচলে তন্দ্রা ঢেকে রাখ।

বৃহস্পতিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

ভ্রুণ

নির্বেদ শূন্যতা এবং আত্মরতিহীন বিচ্ছেদের নীল মুছে ফেলে যুবাপুরুষের পূণর্বার ইচ্ছে জাগছে প্রেমের,সম্ভোগের। আনুপাতিক বাঁশবনের ছায়া ছায়া মুছে অতঃপর সূর্য ডুবে যায় দ্রুত- অনায়াস তার ডুবে যাওয়া - আরাধ্য কামনায় থরথর কেঁপে ওঠে কিশোরী,যুবতী আর প্রোষিত-ভর্তৃকা - সন্ধ্যা ও রাতের যুগল সদ্ভাবে জেগে উঠছে বাতাস - স্মৃতিজল তার পূর্বাপরতায় ভাসিয়ে নদীর দুই কূল যথার্থ বিশ্বাসে কুকুরকুন্ডলি শুয়ে থাকে পায়ের তলায় - এত যে প্রেম,দ্বৈরথ,- নিরালোক রশ্মির পরিদ্রবণে কেবলই শরীর জাগছে - পীতাভ নাভির মধ্যে যেখানে আগুন মুহূর্মুহূ জ্বলে আর উরুসন্ধি বেয়ে লবণজলের ধারা নেমে আসে - অঘ্রাণিত কুমারী যোনী ও স্তনবৃন্ত ঘিরে শুয়াপোকার সংকেতধ্বনি;অনঙ্গ আগুন ঝরে যায় - অগ্নির সমাজ বড় বেশী স্পর্শকাতর - আদিম,বন্য এবং রক্তলোলুপ - নিস্তব্ধ শরীরের ভাঁজে ডুবে যায় ইহলৌকিকতা-অর্থ-সংস্কার-সংযম। তোমাদের পরিণতি বলে কিছু নেই - তোমাদের সমাজনীতি নির্মম - তোমাদের বৈদ্যেরা ছুরি-কাঁচিতে নিতান্তই পারদর্শী - গর্ভাধার খুঁড়ে যে সমস্ত ভ্রুণ ফেলে দিয়েছিলে - জন্মের আস্বা্দদ্মুখে তারা সমুদ্রের জলে সাঁতার কাটছে মৃত্যুকে এগিয়ে নিয়ে - তোমাদের এত জন্মভয়? সেইসব মায়েদের কান্নায় একক এবং তুলনারহিত ভ্রুণ বড় হওয়ার গান গাইতে গাইতে অবিশ্বাস করেছিল পিতা,পিতৃপুরুষ - ঈর্ষার খেলা ভাঙতে ভাঙতে আতুরালয়ের পাশে সার্বভৌম পুরুষের পুরুষত্ব খেলাচ্ছলে নষ্ট করে দিয়েছিল - ঐ অঙ্গটা অযৌক্তিক বলে মনে হয়েছিল?নিরুজ্জ্বল ভবিভব্যতার কথা ভেবে জটিল লিখন ভঙ্গিমায় পাতার শিশিরবিন্দু,অন্ধকার,হিম,রক্ত,দাবানল,বৃষ্টিধারাজলে যত কবিতা ও গান - বিদ্যুতের তারে শোনা যায় ক্লান্ত ভ্রুণের অনুচ্চারিত পঙতি।

বুধবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

অমীমাংসিত প্রশ্ন

এবারের দ্রুতগামী শীত বোঝে আগুনের উষ্ণতা - তোমার পায়ের কাছে বিপর্যস্ত বালিয়াড়ি - আমাদের নৈশ অভিসারে চন্দ্ররথ-নেমে এসেছি - দূর,শূন্যপথ ঘুরে আলোকণা অপ্রতিহত গতিতে ঝরে পড়ছে কাঠবাদাম,রুটিফল,আঙুরের লতা - স্পর্শময় নদীরে প্রতিধ্বনিত জল কী দারুণ খেলায় মেতেছে - 'তুমি পথচারিণির ক্লান্তি নিয়ে এসেছো' - সমর্পণের ডাকে পায়ের নীচের বালি নড়ে ওঠে আর নাড়ার আগুন অবিন্যস্ত জ্বলে ওঠে। আমরা ভাবছিলাম পঙ্গপাল আক্রান্ত গাছের ডাল ও পাতার বিবাহসম্বন্ধে দারুণ শীতের ভীরু পাখিগুলি বারংবার উড়ে আসে - আচ্ছন্ন আবিলতায় গাছ থেকে খসে পড়ে পাতা - পেছনে পেছনে বসন্তের ইস্তেহার। অপার সম্ভাবনায় এবারের বসন্ত আসছে। প্রতিশ্রুতিহীন বনে জটিল লিখন ভঙ্গিমায় কালবৃক্ষের ফল ও পাতাগুলো দুলছে - সমূহ সর্বনাশে মানুষেরা প্রতিটি গহ্বর,প্রতিটি বৃক্ষের মূল খুঁড়ে খুঁজে দেখবে অভ্র ও তামা। এত ধাতু কাদের কল্যাণে? বনের ধুতুরা,শিয়ালমুতির আধফোঁটা ফুল,- প্রতিটি প্রশ্নের গূঢ় অর্থ খোঁজ়ে। ত্রেতা,দ্বাপর ও সত্য যুগ শেষ হয়ে গেছে কিন্তু অনাহারী মানুষের ক্ষুধার স্বরুপ আজও একই রকম। পূব পাড়ার রহিম শেখ ক্ষুধা পেটে সেই যে বানের জল পার হয়ে গেল - সে-কি ফিরে এসেছিল? অনাসক্ত প্রতিটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর কে পেয়েছিল? সত্যানন্দ মাস্টারের বৌ-টা শেষরাতে কাঁদে কেন? উত্তরের মুখাপেক্ষী আজ এই শীতার্ত প্রহরে কোন প্রশ্ন করব না। অভিসারের মুহূর্তকাল পার হয়ে গেলে আমরা যে যার ঘরে ফিরে যাব। অমীমাংসিত প্রশ্নের যথার্থতা পড়ে থাক সাঁকোর তলায়।

জন্মভয়,মৃত্যুর আনন্দ

সবুজের মুঠো খুলে গড়িয়ে পড়ছে একান্ত আয়না,তেলছবি,অবসাদ - শতাব্দীর জলস্রোত আমাদের গোড়ালি ছাড়িয়ে হাঁটু অব্দি উঠে যেতে চায় - এই নিরালোক আবহমানতা ছেড়ে কোথায় পালাতে চাও - অতীতকালের প্রণয়কথন মনে পড়ে - এত যে প্রণয় - অবেলায় এসে মনে পড়ে ঝর্ণাতীরের পূরানো গুঁড়ি - চ্ছিন্ন মুহূর্ত,অদৃশ্য জাল,- সব ঢাকা পড়ে যায়ঃএই পৃথিবীতে প্রেম ছিল -কিশোরী শিশির,ধানদূর্বা,নদীর উজানস্রোত ঠেলে ভালোবাসা এসেছিল - শরীরে শারদবেলা - কাশবনে মিশে থাকে আমাদের প্রিয়নাম - শব্দগুলো খুলে যায় - জলস্রোত টেনে নেয় সমুদ্রের দিকে - জন্মভয়,মৃত্যুর আনন্দ ফেলে আমার বুকের এই ঘর ছেড়ে যেতে পেরেছ - ভুলেছ মৃত্যু-মনোরথ। অস্তদীঘী পার হয়ে ছুটছে মৃত্যুর রথ - অন্তরীণ আলোকণা ছিঁড়ে নেয় কাল-সমকাল-মহাকাল - আমরা ছুটছি,অপরিণামহীন - জন্ম ও মৃত্যুদিনের স্মৃতি - বন্য অন্তরাল ভেঙে অসম্ভব এক তৃতীয় ভূবন জেগে ওঠে আমাদের মনের অলিন্দে - দিনান্তের পূণর্বাসনে চারপাশের আর্তনাদ ও স্ফটিক ঠিকরানো আলোতে আমরা মুখোমুখি - ঘ্রাণ-শ্রুতি-স্পর্শমুখে গভীর সুড়ঙ্গ - শ্বাসকষ্টময় অগভীর ঘুম - পাতালপ্রোথিত শল্যপাতে ভুলে গিয়েছি ঘরের বিষাদ,পতনউন্মুখ পুঞ্জীভূত মেঘ - পৃথিবীর মাঠে সূর্যশোক ও যে কোন ঝড়ে উন্মোচিত হয়ে আসে দুঃস্থ হাহাকার - দেশ-দেশান্তর আর মধ্যজলে যত উদ্যত প্রণয় - ধাবমান শূন্যের ধারায় উঠে যায় - কী বিপুল ব্যথা - পাখিওড়া ছায়ায় দেখেছিঃবিকলাঙ্গের ক্লৈব্যের শ্বাস,আদর ও প্রত্যঙ্গের তৃপ্তি - তোমার দু'চোখে জ্বলজ্বলে ঘৃণা,প্রাণভরণের ঋণ - এত ঋণ শুধবে কিভাবে ? পুজোমন্ডপের পাশে ফুলতোলা সকাল - পশ্চিমমুখো স্মৃতিগুলো যেন আষাঢ়ের ঢল - সব একসাথে নেমে আসে - ছাপিয়ে নদীর দুই কূল।

জীবনের যৌক্তিকতা

নিমগ্ন মাকড়সার জালবোবা দেখি - সাজানো দুপুরে প্রিয় কাকের চিৎকারে বাঁশবন নুয়ে আসে - মশলা ঝাড়ার গানে সজনে তলায় আমার মেয়েরা আজ রাত দুপুরের মতো দূরে চলে গেছে -পাতা কুড়ানোর ছলে শান বাঁধানো বনের পথে আমাদের পূরানো প্রলাপ ভরে ওঠে - সেবার দাবানলের শেষে অসংখ্য পাতার শোক ঢেকে রেখেছিল বনের সমস্ত ভূমি - পোড়া ডাল,ভাঙা ডিম ও পাখির বাসা,হাজার ডানার শব্দ,- পোড়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমরা দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলাম - প্রাচীনকুঞ্জ,সুন্দরের নিয়তিতে দিন,সপ্তাহ,মাস ও বছরের ক্লান্তি ফিরে আসছে - বিগত োসৌরভ্রমণের কালে তোমার চোখের জল আর মুখের শ্যাওলা মুছে নিয়েছিলাম - দু'ঠোঁটে আজও তার স্বাদ লেগে আছে - আরও অনেক তীর্থযাত্রীর সঙ্গে নদীর ঐ পারে সূর্যোদয়ে প্রণাম করেছিলাম - যদিও মনে ছিল না গায়ত্রীমন্ত - অথচ স্পষ্ট মনে পড়ে অজন্তা ও ইলোরার গুহাচিত্র,মহেঞ্জোদারো সভ্যতা - ব্যাথা-বেদনার দূর মাস্তুলে ঐ অর্থহীন কাগতিক ভোগ-বাসনার উর্ধ্বে জীবনকে অযৌক্তিক মনে হয়েছিল যুগল এ জীবনের যৌক্তিকতা আছে কোনও

কুউই-কুউই

মরা পাতার কোরাসধ্বনি - প্রিয় কবিতাগুলো আটকে আছে হাঙরের দাঁতের ফাঁকে - সাম্প্রতিক চাতুরী ও শ্লেষা - না-বলা অপ্রিয় সত্যে অপরাধবোধ নেই - অন্যের লেখা ও পাঠে হিত বা অহিত ছিল না - বরঞ্চ লৌস্পর্শ,বারুণী রাতের দাহে জলতৃষ্ণা - লাল ইটের দালান,ত্রিকোণ ভূমিতে জ্যামিতিক আঁক - অসমাপ্তই রয়েছে আমাদের স্বপ্নের আবাস - সীমান্ত দেয়াল ঘেঁষা এ প্রান্তের স্বপ্নগুলো ডালপালা ছাপিয়ে উঠছে - অগ্নি ও ধোঁয়ায় কুন্ডলিত ঐ পারের অভিযাত্রিকেরা আজও স্বপ্ন দেখেঃপাহাড়ের কোলে আশ্চর্য্য বনপ্রদেশ,সবুজের ক্ষেত আর ডুমুরপাতার ছায়াময় বাড়ী - অসংখ্য মৃতের শোক ও ক্ষুধার সমারোহে খঞ্জনি ও পিতলের ঘুঙুর,রক্তের দাগমাখা কাপড়,বারুদ এবং সোনালী গমের শীষ - নেমে যেতে চায় জীবনের স্পন্দন - যে ঘর পরিত্যক্ত;পোকামাকড়ের বাসও উঠে গেছে - সেখানে কী দ্রুত লকলকিয়ে উঠছে লতানো গাছের ছায়া - সূর্যের বিষাক্ত ছালে কোকিল ডাকছে কুউই-কুউই।

শূন্যের অধিবাসী

আমাদের মাঝখানে পৃথিবী গুরছে,আমরা সূর্যের মত স্থির দাঁড়িয়ে রয়েছি - ক্ষুধা,কাম এবং জন্মের পেছনে জন্ম দু'পায়ে মাড়িয়ে কোটি বছর পরের পৃথিবীতে কুঞ্জবন,কদমের ছায়া,-সারাদিন দু'জনের মনে সন্দেহ,আকাশভরা অভিমান;দেবতাদের যেমন থাকে - প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা সকলেই প্রস্তুত - ঈশ্বর নেমে আসে - পাখি ওড়ে - উড়তে উড়তে চলে যায় এবং তারপর শুনশান নীরবতা - আমি আর কতদিন,কতটা প্রহর তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকব - আমার চোখের পাতা থেকে লবণ ও ঘামে মাখামাখি কুয়াশার ভেতর ক্রমশঃ নদী জেগে ওঠে - কারণবিহীন মহাপরিণামের নৌকায় ঝুপ করে নেমে আসে ঘনরাত - আজকাল আর জলে কেউ নামে না - শুশুকগুলো ভেসে গেছে দূরে,আরও দূরে -মানুষেরা সেখানে থাকে না - আমাদের বরাদ্দকৃত সময়,শৈশবের আত্মীয়তা এমন কি নাড়ী ও শিরার রক্তোচ্ছ্বাস এবং আত্মস্বীকৃত মিলনও আমাদের বেঁধে রাখতে অক্ষম। আমরা কী শূন্যের অধিবাসী? শূন্যে মিশে যাবে ঘূর্ণায়মান সম্পর্ক,বিচ্ছেদের গান?

কবির যোগ্য সমাদর

পোড়া মাটিমাটি,ভাঙা চালাঘর - আকাশসত্য গোপণ রাখি নি;অথচ লৌহমেঘ আর পৃথিবীর নিঃশব্দ চিৎকারে সময়ের অন্ধ লিপিকার লিখে যায় অন্ধকার। মৃত্যু। ক্ষুধা। বিবাদ ও বিসম্বাদে কবি একবার সাঁতরায়,আরেকবার উড়ছে। জল থেকে আকাশ,- শতাব্দী থেমে থাকে। জলে ডোবানো সমস্ত পাপ,ঈর্ষা,ক্রোধ,অনুশোচনা ও পাঠযোগ্য আকাশের সান্ধ্যপথে কবিরা সংসার পেতে আছে। সংসারের নীল প্রচ্ছদে অশান্তি,দৈব ও ক্ষমায় কবি ফুল নিতে আসবেন? কবিদের কি কখনো অবিশ্বাসী হতে হয়? শস্যজলে ভেজানো মুখের পাশ। ঠোঁট দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। মুখের শেষ রক্তবিন্দ্য মুছে নিয়ে ফুটছে গোধূলি। উপবীত ছিঁড়ে রঙধনু,বটগাছের তলা,ধানের শিশিরবিন্দু,-কবিদের স্বপ্নে শেকল পড়াবে? কবি তো এসেছে। আঙুলের গিঁটে দ্বি-সহস্র রাতের প্রহর গুনে গুনে আর সূর্যের বিষাক্ত ছাল হায়ে মেখে ___ এখানে কবির যোগ্য সমাদর কই?

হিংসাময় প্রেমিক

পাথরপ্রকীর্ণ দুঃখ এবং যৌনজ্বর - একসাথে নেমে আসে।আমার হাতের করতলে অবলীলায় দলিত অন্য কোন করতলে। আদিবাসী রমণীর চোখে ভয়,দ্বিধা - বনপ্রদেশের স্বাভাবিক পথে সদ্যসবুজ উদ্ভিদ,সবুজের সারাৎসার থেমে বুকের কাঁচুলি,কোমরের কৌপিণে - তেল চকচকে শরীরে পৃথিবী স্থির,- সংকোচ,সভ্যতা,পুত্রস্নেহ। স্বেচ্ছা-নির্বাসনদন্ডে আগুনের উষ্ণতা খুঁজেছিলাম - অন্তহীন জীবনের ভেতর দুঃখের এত শ্লোক?ঋতু কাঁপে,ঋতুর শরীর বেয়ে নামে কুন্ঠাহীন উন্মাদনা - কুয়াশায় কাঁপে অতীতের ভাপ!আমার ঘরের মধ্যে হা%টুজল।ইচ্ছে ছিল না কখনও পাহাড়ের দেয়ালে লৌকিক বাসা বানানোর তবু সীমাহীন সাধ্যের ভেতর খুঁড়ে খুঁড়ে যত আকর ও ধাতু তুলেছি - এ সব তোমাদের কল্যাণে - আমার দুইপায়ে পথশ্রম,শ্রান্তি-বিনোদনে শরীর জেগেছে - রমণীর বুকে মীনাংকন এঁকে দিই নিবিষ্ট শিল্পীর মগ্নতায় - তাপ ও জাগ্রতবোধে আমি চিরকাল হিংসাময় প্রেমিক ছিলাম ।

কবিতার সারসত্য

সূর্যমুখী দিনগুলো দাউ দাউ জ্বলে যাচ্ছে - ঐ পারে দিনের শেষে সচন্দন আলো - আমরা ভাবছিলাম পূর্বাপর প্রেম,অতীত আসক্তি এবং ঘর্মস্নান - যতদিন পাশে থাকা গিয়েছিল;ছিলাম - কেবল একটাই ঘর,একটাই বিছানা - জানালা ছিল না - বারান্দা,বারান্দার কোণ ঘেঁষে খ্রীষ্টগাছ - সমূহ আশায় কী নিবিড় পরিচর্যা - শুকনো ডাল ও মরা পাতা - শেকড়ের ক্ষতে দূর্বেধ্য লিখন লিপি - শিখে নিয়েছিলাম শেকড় ও মূলের পরিভাষা - সামনের সভ্যতা পর্য্যন্ত প্রতিটি পথ ও বাঁকে তোমার নিঃশ্বাস - তাতে অরক্ষিত প্রেমের আবেশ,শরীরের তাপ,যৌনজ্বর - কতদিন চলে গেছে - সেই ঘর আজ লোকসঙ্গহারা - খুলে পড়েছে কড়িবরগা,দরোজার কাঠ - লোনাধরা ইটের দেয়ালে আগাছার স্তুপ - পরস্পর দোষারোপ করতে করতে সন্ধ্যা,রাত,সকাল,সন্ধ্যা ও তারপর রাত - সকাল ক্রমশঃ...... - ।যতদিন শরীরের আবেদন ছিল - তুলে নিয়েছ সমস্ত শস্যকণা,প্রাচীনতা,ভুল এবং মিথ্যা - কবির মুখের থেকে যত দীর্ঘশ্বাস বেরিয়েছি - তা সব কবিতা - রমণী,তুমি বোঝ নি কবিতা - তার সারসত্য