Powered By Blogger

শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫

ভুল সময়ের সন্তান

কোকিলভাষ্যে সমূহ প্রেম ঝরে পড়ে আনত চোখের দৃষ্টি,অশ্রুপাত ও রক্তের স্রোতে অনুদিত হতে থাকে হেমন্তের পাতাঝরা গান জলপতনের ধারা থেকে রাঢ় ও গাঙ্গেয় উপদ্বীপে শুধুই শূন্যতা - দূরদ্বীপবাসিনী রমণী ভুলে গেছ সার্বজনীন ভাষার ব্যাকরণ ও পরাবিদ্যক কবিতা যা লেখা হয়েছে কিংবা যা এখনও লেখা হয় নি - অনামী মেঘ,সামুদ্রিক শৈবাল ও ঢেউ গোধূলিবেলার শেষ বোঝাপড়া আমাদের মাঝখানে পারস্পর্যহীন অক্ষমালা,অনুশাষিত অতীত ছড়ানো চৈত্রের দুপুরের মতোন নূতন ভাষা কাকের অক্ষর এবং মনোলীনা গানে আত্মরতি সময়ের হাহাকার এখন কি তবে ভুল সময়,সবাই ভুল সময়ের সাহসী সন্তান

বিচ্ছুরণের মায়াবী রেখা

আয়না ও আত্মপরিচয় ভেঙে স্তম্ভিত প্রেমিক বুকফাঁটা আর্তনাদে কেঁপে উঠি ভাঙা গানের কলির মতো - সারা ঘরময় রুপান্তর শিশিরের খোঁজে,অশ্রু ও রক্তের খোঁজ়ে ঝকমকে মৌরলা মাছের যে জীবন - জীবনের দীর্ঘতম ফুটপাত জুড়ে বিবর্তনবাদের আলপনা এ এক রহস্য - বোধিবৃক্ষের তলায় ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ গৃহে ফিরে যাবে অধীত জীবন থেকে উড়ে আসে তারবার্তা নির্বাণের শোক ও লিপিতে বহুদুপুরের নিঃসঙ্গতা অন্তর্গত বৃষ্টির ভেতর ধূলো ও পরিপক্ক বেদনা রুপান্তর,বিবর্তনবাদ - অগনন নক্ষত্রের রাত্রি অজ্ঞাত সমুদ্রতীরে প্রণয় দ্বিধার দৃশ্যে অন্তঃস্নান,চুম্বন,জল ও জননের সন্ধানে অসংখ্য যুবকেরা চাঁদ-ডোবা অন্ধকারে শুদ্ধতার তীব্র অভিলাষে পথে নেমেছে - নৈশবিজ্ঞপ্তি এবং ইস্তেহারে লেখা 'ক্ষুধা।মৃত্যু।জ্বরা।শোক।দুঃসময়।রজঃস্বলা নারী।' মন্দাক্রান্তা রাগমোচনের মাত্রাজ্ঞান ও সুরে শূন্যতা রাতের আলো জ্বালে আর অনাথ নদীর বুকে জেগে ওঠে বিভ্রান্তবোধ,বুদ্বুদ - বিচ্ছুরণের মায়াবী রেখা

বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫

ক্রৌঞ্চমিথুন এবং ব্যাধের তীরের প্রণয়োপ্যাখ্যান

সূর্যমুখী দিন এবং অন্ধকারের ভেতর যত শব্দ বেরিয়েছে কবির কলম থেকে-তার সবটুকুই কবিতা-পৃথিবীর শেষ কবিতাটি আজ লিখে গেছে কবি-অজস্র লেখার ফাঁকে হাঁ-করা উচ্চাশামুখ নিয়ে কবি শুয়ে আছেন বৃষ্টিগাছের নীচে-ফুল দিয়ে ঢাকা মুখ-চারিদিকে ছড়ানো শব্দের বিশৃঙ্খল জট-কবির বাঁধানো খাতা নীল রঙের অশ্রুতে ডুবে আছে-ঐ অশ্রুজল কবির বহু রাত্রি জাগরণ এবং অনেক অভিজ্ঞতার ফাল-হিম ও শিশির,রৌদ্র ও মেঘের লুকোচুরি,জ্যোৎস্না ও ঝড়জলের অসৌরমন্ডল ভূমি কর্ষণের পর কবি ফেলে গেলেন সূর্যাস্ত,জলরাশি,জন্মের পেছনে জন্ম আর একঘাত অন্তর বিরহ-একেকটি ঘাটে স্তব্ধতা-শতাব্দী ও মহাকালের ভাঙা চাঁদ কবি জন্ম নিয়েছিল নীল পরিবারে(কবির জীবন কেটে গেছে নীল রঙে রঙে)-সামুদ্রিক ঢেউয়ে ঢেউয়ে কবি রেখে গেছেন স্বাক্ষর-মাটি টানে নি-ভোরের উৎস খুঁজে নিতে ফুসফুসে মাঝরাতে মশাল,পাঁজর ফুঁড়ে লক্ষ জোনাকীর আলো আর মাথাভর্তি মরুঝড়ের বাস্তবতায় নূতন বইয়ে ঠোঁট রেখে প্রেমোচ্ছল বাগদান- কবি শুয়ে আছেন-বৃষ্টিগাছের থেকে ছাই ঝরছে-প্রণয়,ব্যররথ প্রণয়ের ছাই-কবি লিখে গেছেন ক্রৌঞ্চমিথুন এবং ব্যাধের তীরের প্রণয়োপ্যাখ্যান

গোধূলি উপ্যাখ্যান

গোধূলির পাকা রঙ মিলিয়ে গেলে সাহসী প্রেমিকা বুক মেলে ধরে কবির দু'চোখে তখন জোনাকপাখি,বৃষ্টিগাথা- তার ভেতরের ছন্দ,অপরাধ এবং পাপবোধ স্তবের মুহূর্ত ফেটে বের হয়ে আসে অতৃপ্ত রমণশব্দ বাতাসের অদৃশ্য দেয়াল থেকে লকলকিয়ে আগুন ওঠে আর কবির কলম নখের আঁচড়ে ভেঙে পড়ে ঠোঁটের কোণায় স্মিত হাসি নিয়ে কবি উঠে আসেন,নিমগ্ন-পায়ে বালি,কাদা ও কাঁকর পায়ের তলায় শতাব্দী দাঁড়িয়ে থাকে

রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

ঋণ

এত ছায়াচ্ছন্ন ভালোবাসা,দুপুরের তাপময় নির্জনতা,- কোথায় হারিয়ে গেল রামধনু পথে গ্রন্থ-মলাটের উন্মোচনে প্রেম-সম্মিলন আমাদের লৌকিক বিবেক এবং বাসনায় কী গভীর তৃপ্ত জলের ফোয়ারা আমাদের দুই চোখে স্বপ্ন,বুকের ভেতর হিম ও শিশির,- কুয়াশার টানে মুছে গেল,দূরে আগুনের তাপ ততটা ছিল না যতটুকু হলে উষ্ণতা ছড়ায় হিম ততটুকু এসেছিল যতটুকু হলে পৃথিবী বরফ হয়ে যায় আমাদের চারপাশের সমস্ত ঝাউগাছ মরে গেছে পায়ের তলার অবিমৃশ্য বালি শুধু অনন্য প্রতিভা নিয়ে জেগে আছে রক্তিম প্রতিভা নিয়ে আলো এসেছিল আমাদের সম্পন্ন উঠোনে তুমি তো জলের মেয়ে নও বোঝ নি আলো ও আঁধারের সমানুপাতিক শর্ত ফিরিয়ে দিয়েছো - খুলে দেখনি বুকের দৃঢ়তটে লেগে থাকা গুল্ম-লতায়,সবুজে লেখা প্রিয় নামের অক্ষর চিরদিনের অশান্ত ঘর,সংসারের ওপর কালো মেঘ,ঝড়,স্মৃতিজল অন্যপারে বাস্তুহীন ঠাঁই গুরুগুরু বোধনের ধ্বনি আর বিসর্জনের বিষাদে সমস্ত শব্দের কাছে ঋণ বাড়ছে - পশ্চিম থেকে পায়ে পায়ে উঠে আসা গোধূলির আলো এবং ফুলতোলা সকালের পথে প্রতীক্ষা করছি; এই ঋণ কখন তামাদী হয়ে যাবে

নিঃশর্ত লোভ

আমাদের উত্তাল রাতের গল্পগুলো সেই একই রকম - উৎসবের নীলে নির্ভার জীবন যা ঘটার ছিল,অনিবার্য্য, - তাপ ও বিদ্যুৎ একাধারে ক্রৌঞ্চমিথুন জীবনগন্ধে অসম্ভব ফিকে হয়ে আসে মৃত্যুর লগ্নের জল অনন্ত অভ্যাসে অতৃপ্ত দু'ঠোঁটে তবু মহাশ্বেত ঘোষণার অনিশ্চয় লিপি আশা,প্রত্যাশা বা অস্বচ্ছ দিনের দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর বজ্রাহত মুহূর্তে বিনীত,স্থির কল্পনার টান - নিঃসাড় পাহাড়ী পথে কথকতা ছিল না কখনও সেই ঘর,ঘরের নৈরাশ্যে অতীতের জলস্রোত প্রণয়ের নিবিড়তা এতো যে কঠিন নিজের হৃদয় খুঁড়ে অবিমৃশ্য বালি প্রত্যাশাহীন জীবনে পূণর্বার পথে নেমেছ;নিঃশর্ত লোভে

উন্মুক্ত ও নগ্নিকা দেবী

পেয়ে গেছি রতিসম্মতি,চুম্বন এইবার দু'চোখের ইশারায় খুলে যাবে অন্তর্বাস সারারাত সাপলুডু খেলে অবশেষে সকালের আলোয় শরীরজোড়া সাদা আলোরেখা নিহিত বর্ণমালায় মিশে থাকে রতিপাথরের ছায়া আলিঙ্গনের ঘ্রাণ ও নগ্ন-বুকের স্ফীতিতে চৈত্রদুপুরের মতো ঘনশ্বাসে কেঁপে ওঠে কবি অজস্র মশাল জ্বলে,জ্বলছে কবির বুক,বিদ্রোহী পাঁজর পুড়ে ছাই ওড়ে দুঃসহ রৌদ্রের তাপে ছুটে যায় প্রিয় সম্বোধনগুলো 'সোনা,তুমি ফিরে আসো,খাজুরাহে' প্রাচ্যের,মায়ার মতো সৈকতের বালি থেকে উঠে আসো উন্মুক্ত ও নগ্নিকা দেবীর বেশে

শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

পদ্মপাতা থেকে দূরে

যতদিন পাশে থাকা গিয়েছিল - ছিলাম;এখনও পদ্মপাতা থেকে দূরে,সূর্য অজানা সমুদ্রতীরে ডুবে যায় দু'চোখে আমার গরম জলের ফোঁটা পথের দু'দিকে খাদ রেখে ছুটতে ছুটতে দিগন্তের দিকে গোলকধাঁধা,ঐ গোধূলির রশ্মি - আজ,কাল কিংবা পরশু - প্রেমের এই কথাগুলো ছাড়া আমার কিই-বা ছিল শস্যমূল হাতে সকালের উৎস খুঁজে নিয়ে সূর্য্যমূখী ফুলের ভেতর খাদ্য ও পানীয় ঢেলে নদী,পাহাড় ও পাথরের স্তুপ ঠেলে সূর্যোদয়ের আলোতে কে লিখে রেখেছে এতো অভিশাপ এঁকে বেঁকে নেমে আসছে - শিল্পিত রুপ ও অবশ পতঙ্গের মতো শান্ত ভঙ্গিমায় শাপ মোচনের মন্ত্র জানো আমাদের চাপা পড়া সন্তান বাৎসল্য,পূরানো বিয়ের চোলি বকুলগন্ধে মুহূর্তে ভেসে গেল পরার্থপর অগ্নি ও জল,সারাৎসার খাদ্য ও পানীয়ে প্রিয়ে,তোমার শাড়ীতে চোরকাঁটা লেগে আছে অনায়াস ভঙ্গিতে যতটা দূরে গিয়েছিলে অম্লজানহীন,পদ্মসম্ভব ঐ পাহাড়ের চূড়ায় - দু'চোখে মেঘ অনন্ত বর্ষার!হাঁটুমুড়ে অন্ধকার বিছানায় রতিসম্মতি,চুম্বন,খন্ডযুদ্ধ সৌন্দর্য্যবোধ ও অভিশাপে যা ঘটার ছিল ঘটে গেছে বেসরকারী আতুরালয়ে পূণর্জন্ম নেবো তুমি,নেমে এসো

মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫

ক্ষিধের জগতে,ফাঁসীকাঠ এবং রণবাদ্য

আমাদের প্রতিটি রক্তের ফোঁটা শরীরের ঘামে মিশে যায় অব্যবহৃত খামার ভরে থাকে অবিচ্ছন্ন খড়ে এতো বেশী খড় আমরা দেখি নি ফসল কাটার উৎসবের শেষে স্বৈরিণী সন্ধ্যায় আমাদের শ্রম বিনোদন মিথ্যে হয়ে যায় যদি শিউলি বনের তলায় সৌরভে মগ্ন গুপ্তচর কিংবা রাজার সিপাহী প্রকৃত ও স্থুল বোধে মশাল না জ্বালে শোক,তাপ,বিদেহ - কৈবল্যে আমরা এখনো পরাধীন আমাদের গলায় গভীর ফাঁস,দু'হাতে কড়ার দাগ আমরা কেবল জেগে উঠি ক্ষিধের জগতে,ফাঁসীকাঠ এবং রণবাদ্যে প্লাবনসীমার মুখোমুখি আমাদের শোণিতে আবাল্য বীভৎসতা আমাদের রক্ত থেকে ঝরে পড়ে সবুজ শস্যের হাহাকার আমাদের ভেতর যে সহমর তৃষ্ণা তা কেবল রক্তের,মদের আজ এই অন্ধকার রাতে পান করো মহুয়ার রস আর চেখে দেখো স্ত্রীলোকেদের নিষিক্ত রক্ত

প্রকৃত স্বপ্নের অবতংশ

ঈর্ষাকাতর গোলাপী রঙে ছুপানো হাত,ঐ হাত বসন্তকর্ণিক বসন্তের কারিগর এসেছিল - উপহসিত স্বপ্নভঙ্গের শেষ সবুজ ইঁটের নূতন সংসার ভেঙে পথে নেমেছি;লুব্ধক তারা থেকে ছিটকে পড়ছে আলো ও কুয়াশা মাধবীলতার স্রোতে একদিন প্রতিশ্রুতি ছিল অকূল জোনাকীময় রাত,গভীর সত্যের মতো বিধুমুখী সৌন্দর্য্য ও মাথার ওপরে নীলকান্ত সূর্য্য প্রত্যাখ্যাত ফেরানোর বজ্রমন্ত্র বুকে কবিতা,গান ও শব্দে যতদূর দৃষ্টি যায় নক্ষত্রবিহীন সমস্ত আকাশ উৎক্ষিপ্ত হৃদয়ে এতো বেশী শূন্যতা;ফুলের কোরকে কোরকে প্রকৃত স্বপ্নের অবতংশ পড়ে আছে শুধু

অধিদেবতা,গোরখোদক এবং দীপান্তরীত কয়েদী

নদীর এ পার থেকে কারা দেশান্তরী হয়েছিল ওপারের বাসিন্দারা জলকলহের নীচে চাপা পড়ে আছে জল কিংবা জলান্তরে বেড়ে ওঠা লতা,গুল্ম ও জলজ দাম - যৌনতায় দুলে উঠছে - নিঃশ্বাসে জৈবফুল ক্ষুধা ও চুম্বনে নিশ্চয়তা খুঁজেছিলে লেলিহান সময়ের কাছে অনিয়ন্ত্রিত জোয়ারভাটা এবং সামুদ্রিক মফস্বলের প্রাণান্তকর পাঠ প্রচেষ্টায় শ্যাওলা ও চোখের জলের দাগে স্পষ্ট দেখা যায় কার্তিক জ্যোৎস্নায় ছাই ওড়ে আর পরস্পরকে বাতিল করে তৈরী করে ছন্দোবদ্ধ পয়ারের বাক্য পাঠ কর,জলের সন্তান যারা তোমাদের আগে আগে এগিয়ে চলেছে অধিদেবতা,গোরখোদক এবং দীপান্তরীত কয়েদী

আদ্যিকালের সুর

স্ফুরিত দু'চোখে সূর্যাস্তের ছায়া অন্তঃসারহীন আলো,অস্পষ্ট অতীত,- সব একসাথে কেঁপে ওঠে পশ্চিমের চরাচর কোন বন্ধু ছিল না,অজানা ছিল বৃত্তি তবু উত্তর-দক্ষিণে দুই হাত মেলে পথের ওপর দাঁড়িয়েছ,নারী তুমি একেলা কোথায় যাবে আকাশের পটভূমিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা নীচে ভাসছে,পৃথিবী এতো জল কোথা থেকে এল নিমগ্ন জলের তোড়ে মুগ্ধ নির্বাসন ঘন বিনুনী শূন্যতা - এপারের সর্বস্বতা ফেলে প্রবাসের মাঝি লগি ঠেলে নীরবতার ভেতর বেজে উঠছে আদ্যিকালের সুর

রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৫

পিকাসোর অর্ধোন্মত তুলি

ফুলে ওঠা বাঁশঝোপের ভেতর অন্ধকার এবং হৃতশূন্যতায় চাপা বাতাসের শব্দে নারীঘটিত বেদনা ; নৈঃশব্দের মধ্য থেকে ঝরছে ধারাবাহিক শোক খাঁড়ি মোহনার স্তব্ধ পথ ছাড়িয়ে এসেছি পেছনের পথে ক্ষীণ যৌন-নিঃশ্বাস ও স্রোতের কোরাসধ্বনি কী করে বিমূর্ত ছবি আঁকব নারী ও সমুদ্রের রক্তমাংস ও জলের স্বাদে বারংবার ফিরিয়ে নিয়েছে শান্ত ও প্রসন্ন রমণীর ধর্মের ভেতর তার গর্ভ,অবসাদ ও সম্ভোগে উত্তাল নিতম্বরেখা,গ্রীবা ও স্তনের স্ফীতি - পিকাসোর অর্ধোন্মত তুলি থেমে যায় ভোরবেলা শান্ত উপকূলে মৃত নাবিকের অস্থি'র তুলিতে সৈকতের বালিতে কে আঁকে ভাঙা জাহাজ,মাস্তুল,পাটাতন যারা ভেসে গিয়েছিল ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে তাদের প্রচ্ছায়া আজও তিস্তার অকিঞ্চিৎকর জলে ভাসে দেখেছিলে,সেইসব ছবি

ভুল ভালোবাসা

আত্মপতনের বীজ থেকে যে চারাগাছের জন্ম তার শেকড় ও মূলে কেবল ক্রোধের অগ্নিশিখা সময় এখন তোমাদের হাতে হাতে লুকোচুরি খেলে আর আঙুলের ফাঁক গলে গড়িয়ে পড়ছে মেয়েছেলেদের উলঙ্গ শরীর শুধু শরীরটুকু,- প্রস্তুত সান্ধ্যপথে এক দুই তিন চার ...... ক্রমেই মিছিল ভারী হয়ে আসে দীর্ঘ লাইন,- শুঁড়িখানায়,বেশ্যাপাড়ার বিপথে যুবকের মুখখানি মনে পড়েঃ আজও কিসের প্রতীক্ষা পাতার পোষাকপড়া প্রেমিকাকে ওরা চুরি করে নিয়েছিল প্রদোষের অন্ধকার ও ছিন্ন মুহূর্তে একদিন সমস্বরে গেয়ে ওঠেছিলঃ এ তো ভুল প্রেম,ভুল ভালোবাসা

মৃত্যুগীত

বোধবুদ্ধিহীন প্রখর রৌদ্রের নীচে দাঁড়িয়ে থাকবে - ক্রমাগত রৌদ্রের ছায়ায় মিশে থাকতে থাকতে আমিও বুঝেছি আলোছায়াময় পথ;যা ছিল মূলতঃ মেঘে ঢাকা,আণব ধোঁয়ায় পূর্ণ,কাঁটাতার এবং চোরাগর্ত - উন্মার্গের গোধূলি অথবা অপ্রাকৃত ধূলোর স্বরুপে ঢেকে যাবে? উত্থান ও পতনের সংকেতধ্বনি নক্ষত্রহীন জনপথে প্রতিভাত তবু প্রতিটি নিঃশ্বাসে দেখ যুথবদ্ধ ইউক্যালিপটাসের বন সপ্তর্ষিমন্ডল ঘিরে রাখে। পাথুরে আহ্লাদে অসংখ্য করবীফুল ঝরে পড়ে - উদ্ভিদপ্রাণ,লোকায়তিক শ্লোক - অর্থহীন,অর্থহীন মনে হয় চরণাশ্রিত সঙ্গীত - বিভেদের মর্মজ্বালা - বিশুদ্ধ বীজের থেকে বিরুদ্ধগামী বৃক্ষের ছালে সনাতনী কাঠের ধর্ম,শবাচ্ছাদান। হিত ও অহিতে টলে ওঠে পরাশ্রিত ধর্ম আর ঐ দিকে যজ্ঞোপবীত ছিঁড়ে সম-সাময়িক অন্ধত্ব ও ভুল সমাজ বিজ্ঞানে তত্ত্ব এবং অপভাষার কূট-কাচালি । এখন কেবল ধ্বংসচূড়া থেকে ভেসে আসে ঝলসানো মৃত্যুগীত।

শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫

কাঙ্খিত প্রেমিক

অধিকারহীন নূতন ভাষার গান,সম্পন্ন কবিতা এবং হলুদ সর্ষের ক্ষেত - আমাদের পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাঝখানে হেমন্তকালীন সাদা শাড়ী,সাদা হাত আঁচড়ায় মধুমতির নীলচে জল।করুণাহত নদীর তীরে প্রকৃত স্বপ্নের রুপ - বাদাম,মাসকলাইয়ের ক্ষেত ।অন্তহীন আকাশে নীরব সূর্য। উচ্ছ্বসিত বিকেল ও সন্ধ্যারাত্রে ঠোঁটের কোণায় ঘনীভূত হাসি। নৈসর্গিক নিস্তব্ধতার ভেতর অসম্ভব শীতের ক্রমবর্ধিষ্ণু লম্বছায়া,--- যারা অন্ধকারে জল ও জলজ শ্যাওলার প্রেমে ছুটে এসেছিল নৈঃশব্দিক রাত্রি ভেদ করে ; নিমগ্ন ভালোবাসায় একেকটি নামের বিপক্ষে অগণন ঢেউ তাদের শরীর ছুঁয়েছিল।অসংখ্য জলজ শ্যাওলার শোক প্রতিটি বিরহ ঘিরে রেখেছিল। এইভাবে প্রতিদিন নূতন নূতন প্রেম ও বিরহে শান্ত নদীর দু'কূল ভরে ওঠে। জল ও জলের কলহাস্যে আমার মেয়েও একদিন খুঁজে নেবে তার কাঙ্খিত প্রেমিক।

শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫

বর্ষার পূরাণ

আমার স্ত্রী আর মেয়ে জানেঃ আগামী বর্ষায় ওপারের বাঁধ কেটে ফেলা হবে এই গ্রাম,গ্রামান্তের ঘর - ঘরের জানালা - নীল পর্দা - আধখোলা চিঠি নিখুঁত জ্যামিতি,বীজগণিতের সুতো, নৌকা,পাটাতনে আধাঁর বনের ছায়া সমূহ সর্বনাশের আগে জলে ডুবে যাবে ওই নদীতীরে দেখো,সেতুর ওপর আজ মিছিল নেমেছে অনাহারী এবং বানভাসী মানুষের এই পতন-উন্মুখ সেতু - বহু রুঢ় অনুশাসনের প্রযুক্তি বিজ্ঞান আর বর্ষার পূরাণে মুখোমুখি আমি প্রস্তুত - সমস্ত গ্রাম ডুবে যাবার আগেই নদী পার হয়ে যাব

শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫

মূকাভিনয়

(আমার মেয়ে নির্ঝর কে) আমার মেয়ের মুখ মাঝরাতে খসে পড়ে। কেঁপে ওঠে ঘরের দেয়াল।আমি জেগে উঠি। ঘরের দরোজা খুলে দেখিঃ ফুলে ওঠা সামুদ্রিক ঢেউয়ের ফণায় পদ্মপাতার শুঁচিতা;আমার মেয়ে এবং তার ছায়া - সমস্ত বিছানাজুড়ে ফোঁটা ফোঁটা কুয়াশা জমেছে আর নৈসর্গিক আল্পনায় আঁকা আমার মেয়ের সুগত দু'চোখে দশ দিগন্তের মেঘ বৃষ্টি হয়ে আছড়ে পড়ছে আমি নিমগ্ন তাকিয়ে দেখি বদ্ধ ঘরে অভিনীত মেয়ের মূকাভিনয়

শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৫

পাঠ-প্রতিপাঠ

সুপেয় জলের বাষ্প থেকে খালি গায়ে নেমে এসেছ?সর্বাঙ্গ ভেজা,শিরদাঁড়ায় রহস্যময় জীবাণু কথা --- ধর্মচ্যুত,নিরাশ্রয়ী আমি সৌন্দর্য্য ও প্রসবের লগ্নে হাসপাতালের টানা বারান্দায় উদ্বিগ্ন পিতার অপরাধবোধে জর্জরিত মুখে প্রশান্তির ছায়া দেখেছি অর্থাৎ প্রুতিশ্রুতি ছিল - আত্ম-বিবৃতির সুনিপূণ উন্মাদনা পরিপূর্ণ,বিরোধপূর্ণ লেখা ও কবিতায় দূরত্ব ঘটেছে । পিতা,পিতামহ ও অন্যান্য পূর্ব-পুরুষের রক্ত কণিকায় ঘূণে পোকাদের বাস ছিল - ভুলে গেছে উন্মাদ উত্তর পুরুষেরা।আমরা তো স্থির বসে আছি,বুকে জগদ্দল পাথরের ভার।হিংসার আবর্ত স্রোত,বিকৃত মুখের ছটা এবং গোধূলি বেলার গল্পগুলো একই রকম বহমান - আবহমানতা অর্থাৎ সূক্ষ্ম ও স্থুল অনুভূতিগুলো ধ্রুবক,অপরিবর্তনীয়। প্রেমিকার মুখরতা,প্রিয় বন্ধুর শঠতা - কীট ও ঘাসের গল্পে আমার সাধ্যের নৌকা দুলে উঠেছিল - তারো বাস্তবতা ঘণীভূত হয় অগ্নিমান সময়ে - প্রার্থনারত ময়ূরেরা ক্রমাগত সূর্যহীনতায় মেঘ ও বৃষ্টির গর্ভ খুঁড়ে ডুবে যেতে চেয়েছিল - জলসিঞ্চনের প্রতিভা শিখিয়েছিলে - বিন্যাসিত কূপে মৃত্যুপথ যাত্রীরা জলের স্তরে ইস্পাতের ভাঙা ফলা ভেসে যেতে দেখেছিল - এতো ইস্পাত কাদের কল্যাণে নিহিত - ইতিহাস উক্ত রাজা ও সম্রাট এবং স্বপ্নে দেখা ভিখারিণী,- কারও জন্যে আমার প্রতীক্ষা নেই।বিরুদ্ধগামী সময়ে পুকুরের শাপলায় কূমারীত্ব নষ্ট হোক - আমি আর কিছু দেখব না - তোমাদের ভৌত রসায়ন,মহাকাশ সভ্যতা ও অর্থনীতি থেকে আমি কোন পাঠ না নিয়েই ফিরে যাচ্ছি। আমিই প্রথম পুরুষ-এ পৃথিবীতে যার করণীয় বিবেচিত নয়।

শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৫

বুকচাপা সমুদ্র গর্জন

গোধূলির মতো নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে আছ প্রত্যেকটি অঙ্গ-ভঙ্গির ভেতর শতাব্দীর বিষাদ,পাথুরে চোখে সূর্যাস্ত,রাত্রির জিহ্বা চেটে নেয় ফ্ল্যাটবাড়ি,আকাশ ও জল নিজেদের চেনা বাড়িটিকে মনে হয় অচেনা পান্থনিবাস রাতের আড়ালে নগ্ন ঠোঁট কেপে ওঠে অনাবৃত ভয়ে আকন্ঠ চুম্বনশেষে বিছানাজুড়ে লুটিয়ে পড়ে বুকচাপা সমুদ্র গর্জন শূন্যদৃষ্টিতে জেনেছি প্রত্যাখ্যান অনিবার্য্য টের পাইঃসমস্ত অস্তিত্ব থেকে ঝরে পড়ে মানব লুপ্তির ইতিহাস নৈঃশব্দ ও স্বপ্নাদেশ এড়িয়ে কেবল খুঁজে নিতে চেয়েছি,--- সরল মুহূর্তের সবুজ সমীকরণ - সান্ধ্যভাষা ও প্রতীকচিহ্নে তোমার দু'হাতে মঙ্গলদীপ,নৃত্যারতা,- নিঃশব্দে দূরত্ব কমে ঝর্ণাতীরের পাশের মাঠে

বাতাসবিন্দু

সংবাদপত্রহীন বনের আরও গভীরে বাতাসে পাতাদের সশব্দ সন্ত্রাস ঝরে পড়ে শুষ্ক ফল,গাছেদের ছিন্ন ত্বক দুপুরের রোদপোড়া বনে আমার ভেতরে শত-সহস্র গাছের শাখা শিরা-উপশিরায় সবুজ ক্লোরোফিল---- সকলের অগোচরে এই বনজ ভূমিতে শয্যা পেতেছি;হেমন্ত এবং এর সৌন্দর্য্য ও ধ্বংস প্রতিভা,____ অন্তরীক্ষে খুলে যায় শরীরের গিঁট বনের তলার মাটি ফুঁড়ে ভাপ উঠছে -সরিসৃপেরা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে - শ্বাপদ ও শকুনেরা তাকিয়ে দেখছেঃ দুই চোখে লালা অশ্রুপাত ও রক্তের রঙে একদিন ওরা জেনে যাবে শরীরের প্রতিটি হাড় ও রক্ত কণিকায় সামাজিক দুঃখ হৃদপিন্ডে,ফুসফুসে গভীর ফাটল এবং কিন্নর শরীর ততদিনে জল,সব অম্লজান বাতাসে বাতাসবিন্দু হয়ে সব মিশে যাবে

শিল্পের সৌন্দর্য্য

গন্ধমুষিকেরা ছুটে আসে - জুলু-টোটেমের লাল ঝুঁটিতে আদিম উজ্জ্বলতা - হায়!যে শিল্প ও শিল্পের প্রেরণায় প্রেমিকার চোখের গভীরে,দুঃখের ভেতরে পথ থেকে পথে চারণ কবিতা এবং ভ্যানগঁগের সমস্ত ছবি জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম - একেকটি কবিতা ও ছবি - চেতনার মর্মমূলে যে শূন্যতার নির্মাণ করেঃ একজীবনের সমস্ত কবিতা এবং শিল্পের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছিল তত্ত্ব নির্মাণ ও বিনির্মাণে। অন্তর্মূখী ছায়াপথে গম্ভীর নক্ষত্রসভা - রাত্রি ততটা জটিল নয় যতটুকু হলে শিল্পের সৌন্দর্য্য আর কবির সংসার ভেঙে পড়ে এবং কবি অবিরাম বালির ওপর লিখে যায় ।

শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০১৫

মুখ ও মুখের প্রচ্ছদ

চারিদিকে এতো আবির,গুলাল,___ রাঙা ফাল্গুনের পূর্ণিমা তিথির এই মাহেন্দ্রক্ষণে বৈষ্ণবী দোলযাত্রার উৎসব ফেলে কোথায় গিয়েছ আমি দশদিকের বিষাদ হাতের মুঠোয় ধরে রেখেছি; ক্ষেত-পথ ও আঙিনা ভরে আছে রক্তের রঙে মঠ ও মন্দিরে পুরোহিতের পাথরকীর্ণ দুঃখ অ সোনাবৌ,তুমি দেখ আমি বেঁচে আছি ছদ্মের সংসারে কানামাছি খেলে জগৎ ভুলেছি তুমি ফিরে এসো আদ্যিকালের পুকুরে ডুব দাও মুখের প্রচ্ছদ মুছে গিয়ে বেরিয়ে আসুক অন্নপূর্ণা সাজ

আনন্দ ও বেদনার সীমারেখা

সঙ্গোপনে দেখা হয়েছিল।আমি দেখিন নি;হয়তো বারান্দার রেলিঙ ঘেঁষে বিকেলের শান্ত পথে চোখ গেঁথেছিল। এখন,দূরান্তে দৃষ্টটি। অতলান্তিক সমুদ্র আর কতটা গভীর? তোমার চোখের পাপড়িতে বন্দরের বিষন্নতা।প্রথম আবির্ভাবের মতো --- শুচি কুমারী,ভাষার কূটচালে দূরদ্বীপে কেঁপে ওঠে ক্ষীণ ঠোঁট।ঘাটে বাঁধা নৌকা নেই।সব ছুটে গেছে। জাল ফেলছে সমুদ্রে এখন সময় কত?যারা এসেছিল সৈকতের বালি পার হয়ে; বলে দিয়েছি,তাদেরঃআনন্দ ও বেদনার মধ্যে সীমাহীন যে রেখার ব্যবধান - সেটা ছুঁয়ে দাও ।

ছাইমাখা নাচ

সুষমা ছিল না কোন সুর,ছন্দ কিংবা পাখিওড়া ছায়ায় এগিয়ে আসে কয়েক হাজার চোখ - লক্ষ মোউমাছির হুল সারা রাত্তিরের ক্ষত মুখে ঈর্ষা পরায়ণ যে প্রতিবেশীরা ঘিরে দাঁড়িয়েছিল উঠোন ঘরের দরোজা খোলা পেয়ে কেউ কেউ মুছে নিয়েছিল সিঁদুরের টিপ,শাঁখা____ শ্মশানে উৎসব শুরু হয় কালু ডোম নাচে ছাইমাখা নাচ

ভাঙা পথ

বাসন্তী রঙের শাড়ী,লাল পাঁড় - বেশ মানিয়ে গিয়েছে দুই হাত ভর্তি কাচের রেশমী চুড়ি রৌদ্র ও ঘামে তোমার কপালের টিপ চকচক করছে;এলানো খোঁপা এবারের বৈশাখী মেলায় প্রিয়ে তোমার দু'চোখে সমুদ্রের আল্পনা;কোকিল্ভাষ্যে উড়ে যেতে চেয়েছিলে আমি শস্যমূল হাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম তুমি উড়ে যাবে সাঁতরাবে সাঁতারের ক্লান্তি কত ঐ নদীর স্বচ্ছ জল তোমাকে ডাকছে আর পাখিরা আকাশ খালি করে দিল তোমার চোখের ভাষায় ভয় ও সংশয় দুই পায়ে দ্বিধা ও জড়তা যে চোখে তাকিয়েছিলে যে দিন আমাকে ছুঁতে চেয়েছিলে - - - আমি হয়েছিলা শ্মশানকাঠ,শ্মশানের পোড়া কাঠ কবিদের এত শক্তি নেই যে পথকে জোড়া দেবে

সুমন্ত কবিতা

চিতা জ্বলছে,__ দেখতে পাচ্ছ চন্ডালের ছাইমাখা নাচ দুই একটি অক্ষর,অক্ষরের ক্রমে শব্দ এবং শব্দ থেকে সু-সংহত বাক্যে পয়ারের মিল এইভাবে ক্রমশঃ আমার কবিতারা বেড়ে উঠেছিল আর দূরন্ত সাহসী হয়ে তোমার বুকের কাঁচুলিতে পূর্ণ হয়েছিল সে স্বপ্নের শেষ হয়েছিল আঘাটায় তার পৈঠাতে এখনও লেগে আছে যৌনতার ধোয়া দাগ আগামী বর্ষায় এই পথ মুছে যাবে অনন্ত বর্ষার জলে যা ভাসতে থাকে তার সবটুকুই কবিতা

অন্য গ্রহের বাসিন্দা

বকুলগন্ধার রাতে প্রাচীন দিঘীর জলে পদ্মপাতার শুচিতা চারদিকের আকাশ ভরে আছে ভস্মে প্রেমিকের অভিমান কত তীব্র - সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের শেষ রশ্মি অভিশাপে ভরে আছে তা কি তোমাকে ছুঁতে পারবে তুমি তো এখন অন্য গ্রহের বাসিন্দা

নিমগ্ন আলো ও জলের তোড়ে

কুমার নদের তীরে গোধূলির পাকা রঙ,সূর্যাস্তে এতো বেশী আলো দুই চোখের মণিতে বিশ্ব-চরাচর,উত্থান ও উচ্চাশার বীজ শহরতলীর পথে আমার নিজস্ব নামে আদিম লতাগুল্মের ঝোপে খোঁড়া,আতুর ও বধিরেরা জয়ধ্বনি ও পতাকা ওড়াচ্ছে স্বাধীনতার গোপণ টানে আমার পিঠের দুই পাশে ডানা গজিয়েছে উড়ে যেতে চাও মেঘ পাহাড়ের কাছাকাছি অই মেঘে জল আছে,অই মেঘে বৃষ্টি আছে গভীর রাতের জলতৃষ্ণা মিটে যাক আর প্রিয় কুমার নদের তীর ভরে উঠুক নিমগ্ন আলো ও জলের তোড়ে

নীল বিষাদ

যারা বালির উত্থানে ভীত হয়েছিল নিভৃত আশ্বাসে সামুদ্রিক ঢেউ তাদের ভাসিয়ে নিয়েছিল জীবনমৃত্যুর মাঝামাঝি বায়বীয় জালে আটকে রয়েছে ক্ষুধা,প্রেম,পরাভব আমাকে ভালোবাসার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলে ছুঁড়ে ফেলে সনাতনী দেহভার - কার কাছে যাব তোমার পায়ের কাছে কুকুরকুন্ডলী শুয়ে থেকে অঞ্জলী পেতেছি ব্রাম্মমুহূর্তে চেয়েছিলাম - এক জীবনের অবসাদ মাথার ভেতর জ্বলে ওঠে একশ হাজার নীল বাতি তোমার ঘরের নীল পর্দা বাতাসে উড়ছে এতো বিষাদ কোথায় ধরে রেখেছিলে

শুদ্ধিস্নান

সিঁড়িতে বলির রক্ত - - - মুছে দেয় বাঁশপাতা মন্দিরে বিগ্রহ নেই - - - লতিয়ে উঠছে সাপ তুমি আর দাঁড়িয়ে থেক না পালাবে,কী লাভ পালিয়ে বরঞ্চ দু'হাতে মেখে নাও রক্ত আমার মদের গ্লাসও রক্তে ভরা ঠোঁটে ধরে আছি ফেনায়িত হাসি প্রেতের নাচ ও পানোৎসবে বেমানান দাঁড়িয়ে থেক না একে একে খুলে ফেলো শাড়ী,ব্লাউজ,কাঁচুলি অতঃপর সভ্যতার রক্তে শুদ্ধিস্নান

সোনালী বিভ্রম

একটানা দু;সহ বৈশাখ।দুঃস্বপ্নের ভেতর চলছে একদল অভিযাত্রী। পেটিকা ও বোঁচকায় লেখাঃপথ।ক্ষুধা।শ্রান্তি বিনোদন।আশ্রয়।পুরানো ঘর এবং গ্রীষ্মরাতের একাকী দুঃখ। অশ্রুর সীমানা ছুঁয়ে শুরু হয়েছিল বিষুব শূন্যতা; সেই দ্বিতীয় বেদনা আজ সত্যিকারের বিমূর্ত আর চৈত্রদুপুরের ক্রোধ,--- নৈঃশব্দের চলচ্ছায়া,পায়ের গভীর দাগ ও বিনীত অবিশ্বাসে যারা পথে নেমেছে - দিগন্ত থেকে উড়ে আসা কাকের অক্ষরে চোখের সামনে যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু সোনালী বিভ্রম

শুধু একবার নারী নয়,মানবীর বেশে অবতীর্ণ হও

সুদূর পরাহত প্রবাসী নারী বনজ সঙ্গীত ভালোবেসে একদিন এ শরীর ছুঁয়েছিলে এই সে বনের পথ একদিন এখানে ফুলের মালা গেঁথেছিলে এই সেই জলাশয়;যেখানে সমস্ত শরীরের সুখ মুছে নিয়েছিলে এই যে তমাল গাছ,মহুয়ার সারি পিঁপড়েরা দেশান্তরে ছুটে যাচ্ছে- মুখে ডিম - অস্থির তাদের চলাফেরা মহুয়া ফুলের গন্ধে মাতাল বাতাস,মাতাল মৌমাছি কিছুতেই ফিরবে না জানি তবু একবার,শুধু একবার নারী নয়,মানবীর বেশে অবতীর্ণ হও

চান্দ্রপথ ও হাড়ের পাশাখেলা

জানালার বিপরীতে রাতের জোনাকী রক্ত ও আনন্দমাখা প্রেত নাচছে;যেহেতু ঘুমাই নি অন্ধকারে সাদা হাত বাড়িয়ে দিয়েছি কালো,অপুষ্পিত - যা যা আছে হরিণের চামড়া,শুশুক,ময়ূরের চোখ ও পালক, ছিন্নভিন্ন মানুষ ও পাখি এইখানে পড়ে ছিল বলে - ওপারের বধ্যভূমি,খড়ের কাঠামো ফেলে কিছদূরে বদ্ধ নদীর কিনারে চাঁদ একা বসে থাকে পায়ের তলায় রাত্রি,সকালের ব্রতে প্রাচীন অক্ষরমালা ঘেঁটে অন্ধ পেঁচারা নিরাপদেই ঘরে ফেরে কেউ জানে নি মাটির ঢিবি,রাতের পাহারা মাটির গভীরে আরো ঈর্ষা,চান্দ্রপথ ও হাড়ের পাশাখেলা

সমানুপাতিক ছায়া

ক্ষুধারুপিনীর ছড়ানো আঁচল।ভাঙা পানপাত্র। অনাসক্ত মাটির সানকি।চুলার ওপর জটাফুল। অস্তিত্বের প্রশ্নে লোহাচূর্ণ,শৈবাল,কচুর শাক গুড়ি,গেগলি,শামুক এবং আরও কিছু..... এই শতাব্দীতে অনাহারী মানুষের খাদ্যনালীতে সতর্কবার্তা ঝুলিয়ে দিয়েছে - অনাসক্ত বিস্ময় চিহ্নের মতো । পতন-উন্মুখ আসুরিক সভ্যতার জারিত উন্মাদ রসে অগণন মানুষের সমাগম। দেশ-জনপদ সামনের দিকে না-কি পেছনের পথে?সরল অংকের মতো অর্ধসত্যে কিংবা কূট-পরিক্রমায় সমূহ প্রশ্ন চাপা পড়ে আছে। স্বাক্ষরতার হারের ঊর্ধ্বঃক্রমে আনন্দিত নগরপাল অথচ জন্ম এবং মৃত্যুহারের আপাত পার্থক্যে সীমাহীন ব্যবধান। পদ্মদিঘী আর বাঁশবনে সমানুপাতিক ছায়া ফেলে উড়ে যায় বালিহাস

ডুব সাঁতার ও লগিঠেলা

নিঃসঙ্গ পথিক জানে সামনের গহ্বর,মৃত্যুর বাঁক একদিন অতৃপ্ত প্রেমিক জেনে নিয়েছি শরীর --- তার সমস্ত সীমান্ত চৌকি,লোভনীয় ভাঁজে অসংখ্য কামার্ত ঊরু শুষে নেয় আর শরীরের নীচে উন্মাদ শালকী,দাম,শ্যাওলা ও জোঁক,--- তারপর নিমজ্জিত জাহাজের মতো বিসর্জন জ্যোতিষ্কপুঞ্জের অভিমান ততটা নির্ভার নয় যতটা আমার বুক,পেশী ও পাঁজরে ক্ষত শালকীর স্রোত থেকে ভেসে ওঠা আলোর ভেতর বসন্তদিন ও রক্তমাখা চোলি --- আত্মার গভীরতর বাস্তবতা মেনে নিয়ে পূর্বাপর স্রোতের বিপক্ষে লগিঠেলা ও ডুব সাঁতার

মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

তারপর ক্রমশ...ক্রমশ তারপর

রমণীর শরীরের ভেত্র যে ধর্ম --- স্বপ্নকে স্তম্ভিত করে গর্ভ,শূন্যদৃষ্টি,মরুঝড়ের মতোন ঢুকে পড়েছিল চুলের খোঁপা ও কাঁচুলির ভাঁজে জউথুব এক মধ্যরাতে সর্বস্ব খোয়াল তার পরের বিকেলে বেশ সপ্রতিভ পাড়া-প্রতিবেশীদের মাঝখানে পরের বছর এবং পরের বছ্র তার শরীরের অভ্যন্তর খুঁড়ে দু'টো ছায়া তারপর ক্রমশ.......ক্রমশ তারপর

ধাত্রীমাতার ধর্ষণঘাথা

নিরুত্তাপ অন্ধকারের ভেত্র একটানা নিশিডাক রুগ্নমাটি,উদ্ভিদ ও ঘাসে হেমন্তের শূন্যতা;তোমরা ধূলোপায়ে ফিরে এসেছ - উঠোনজোড়া মৃত্যসঙ্গীত জরা ও মৃত্যুর দিকে অনন্ত-যৌবনা ঘৃত কুমারীরা নেচে যাচ্ছে উলঙিনী নাচ রৌদ্র ও বাতাসে নগ্ন দেহের প্রচ্ছায়া এত নগ্ন দেহ সাবানের বুদবুদে ঢেকে যাবে ঠোঁট থেকে ঠোঁটে ঝরে পড়ে অমৃত লালা ও যৌনবর্ধক রসায়ন কেঁপে ওঠে লৌহদন্ড প্রতিটি কুমারীর কাঁধে দংশনের চিহ্ন,যৌনপ্রহারে যৌনপ্রহারে তাদের ভয়ার্ত চোখে নিষ্কৃতির স্তব সবাই তাকিয়ে আছে নড়ছে না কেউ যেন রৌদ্রে অভিনীত ধাত্রীমাতার ধর্ষণঘাথা

পরিবর্তন

তোমার ঠোঁটের কোণে মিথ্যে লেগে আছে চোখে ধূম মনে পড়ে না স্নেহ রঙিন দিন,প্রেম,প্রতিশ্রুতি যেটুকু দেখার দেখার ছিল - শুষে নিয়েছো করুণা,হাঁড় থেকে মেদ-মজ্জা মনের মন্দিরে এখনও বাজছে ঘন্টা এনেছ,পূজার ফুল,বেলপাতা সিঁড়ি পথে আগাছার স্তুপ আমি চিরকাল আথর সরিয়ে পথ হেঁটেছি;শষ্পের মতো একদিন বলে উঠেছিলাম কবিতা,শুধু কবিতা দিয়েই পৃথিবীটা পালটে দেব দিয়েছি,কবির কথা মিথ্যে হয় নি কখনো শুধু আমার ক্ষমতা হয় নি তোমাকে পাল্টানোর

মায়াবশে লেখা কবিতা

তুমি বোঝ নি ছড়ানো প্রেম অগ্নিদগ্ধ পথে পায়ে পায়ে ছাই ওড়ে সামনে জলের পথ - - - যতদূর দৃষ্টি যায় মায়া-মরীচিকা মায়াবশে লেখা এ কবিতাগুলো ছাড়া আর আমার কিছুই অবশিষ্ট নেই

গভীর রহস্য

শরীরের ঘাম ও গর্জন থেকে স্পষ্ট ঝরে পড়ে ঈগল্বিষাদ - যে বিষাদ মহা জাগতিক এবং প্রেমিকের হৃদয় আর প্রেমিকার করতল থেকে জন্ম নিয়েছিল - নিজের সম্পূর্ণ শরীরের ভার যখন প্রেমিকা শুষে নিয়েছিল তখনও বিষাদ পারমাণবিক বিস্ফোরণে ছিন্ন-ভিন্ন হয় নি - যুগল আত্ম-হননের স্মৃতি কিংবা মৃত্যু পরবর্তী শোকসভাগুলো হয়ে ওঠে এক ঈর্ষা-পরায়ন সহকর্মীর তামাশাস্থল - ওই সময়ের পাহাড়ীগান ও জলে মৃত্যুর প্রকৃত চোখে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম ছায়া- মাটি ও সূর্য্রশ্মিতে যে জীবন ছিল - বহু তত্ত্ব,প্রজ্ঞা এমনকি নির্বাণের মোহ ভেঙে ঋষি ও তপস্বী ক্রিয়াশীল গাছের তলায় কামসূত্র এবং কথাকলি - ব্রাম্মনিতম্বিনী নারী ও যুবতীদের সোনার কাঁচুলি খুলে সরোষে জানান দেয় প্রত্যাখ্যান অনিবার্য্য - আলিঙ্গন ও ত্রাণের কৌণিক নগ্নতা এবং দৈব প্রজননে সৃষ্টির কী গভীর রহস্য

মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০১৫

আয়ূ,প্রেম

বাঁশের মাচায় শুয়ে আছি জানালাবিহীন ঘর,মাটির দেয়ালে মৃত শরীরের রেখা,ত্বক মুছে গেছে রমণীর মুখ আবছা ঐ মুখে উইপোকাদের বাস পুরানো হাড়ের ঘ্রা শুঁকে শুঁকে কখনো পাবে না জেনে কবির সংসারে অনিশ্চিত শ্রম ও আশ্লেষ,সামুদ্রিক ঝড়স্বপ্ন,ঝড়ের বাস্তবতায় রমণী ফিরিয়ে নিয়ে গেছো নিজেকে,স্বেচ্ছায় শতাব্দীর যুপকাষ্ঠ হাত পেতে আছে পূর্ণ করে দাও আয়ূ,প্রেম

শূন্য

সকলেই প্রস্তুত - যে যার মতো,_ সূর্য ডুবে গেলে পৃথিবীতে নেমে আসে গাঢ় এক অন্ধকার আর সেই অন্ধকারের আস্বাদহীন,উপবাসে আমাদের কৃকলাশ শরীর আপাত ভিন্নতায় জেগে ওঠে ক্ষুধা,কাম,মৃত্যুর পূর্বের সহমর তৃষ্ণা কখনো কখনো অন্ধকার ফুঁড়ে ভেসে ওঠে আধখান চাঁদ মৃণালহীন কাগুজে আভা উত্তরে দক্ষিণে পূর্ব ও পশ্চিমে কিংবা আমাদের চারপাশের যা কিছুঃ পোড়া ভিটেমাটি,ভাঙা চালাঘর একসাথে নড়ে ওঠে ক্ষুধা ও রিরংসা আমরা শূন্যের দিকে ধাবমান শূন্য থেকে এসেছি,- শূন্যতে মিশে যাবো মাঝখানে পড়ে থাকবে চোখের জল,ভাঙা থালা,রক্তমাখা চোলি

ঘরপোড়া ছাই

ঘর-দুয়ার-আঙিনা সব,সব ছেড়ে এসেছি,উচ্ছন্নে গেলে যাক নীল তেজস্ক্রিয়া,সাবান,কন্ডম,সার ও বৃষচিক রাশি.... তোমার প্রেম ও ঘৃণা মুছে ফেলতে এতোদূরে চলে এসেছি;সভ্যতা থেকে আরও দূরে,-তবু তোমার নিঃশ্বাস টের পাই সে নিঃশ্বাসে তাপ ও উষ্ণতা নেই আছে শুধু ঘরপোড়া ছাই

ঘুমের পোষাক

গরম জলের স্নান,আতর,লোবান,ধূপকাঠি - সব কিছুই প্রস্তুত কফিনে শোয়ানো লাশ অধিকাংশ দিন এবং রাতে বুকের ক'খানা হাড়ে উন্মোচিত হয়ে আসে দুঃস্থ হাহাকার,সূর্যের অসংখ্য শোক শোয়ার সময় হয়ে এল নিরবিচ্ছিন্ন ঘুমের অনায়াস আয়োজন আমার ঘুমের পোষাক কোথায় লুকিয়ে রেখেছ

কবির আচ্ছন্ন বিলাপ

দু'চোখে বর্ষার মেঘ তোমার পায়ের কাছে অগোচরে শুয়ে আছে ভাঙা জলের কলস চিতায় ছিটোবে - জল কোথায় ;উড়ছে চিতাভস্ম উড়ছে অক্ষর,শব্দ ও কবিতা সে লেখা পড়েছ কবির আচ্ছন্ন বিলাপের ধ্বনি কিভাবে দিগন্তে মিশে যায়

নিয়তি

সেইসব অনামী মেঘ ও তার ভেতরের বিদ্যুৎ;নিঃসীম শোনা যায় জল দেবতার হাঁ-করা মুখের হাসি একেকটি বন্যায় ফসলী ক্ষেত জলে ভাসে আর এক খরায় পুড়তে থাকে শস্য আমাদের নিয়তি প্রস্তুত কী দূর্গম এ জীবন - রক্তবর্ণ,লোহার প্রান্তর

প্রার্থনা

কেন্দ্রভিমুখী ক্ষমতার বর্গ - ভেঙে ফেলতে চেয়েছ নিদ্রামোহাবিষ্ট শামুকের খোলে এলোমেলো রেখার জ্যামিতি অপরিণাম মোহের বশে শূন্যের বিরোধী মানুষেরা সব যে যার ইচ্ছেয় অনুকূল ও প্রতিকূলের লক্ষ্মী০উপাসনা ঠেলে দেয় অনামী মেঘের দিকে কোন পথে আমার গন্তব্য বলে দাও, প্রভূ পাথরকুচি শরীরে সূর্যাস্তের ছায়া লম্বভাবে পড়ে আছে মুখের কিনারে অগণন ঢেউ - বিশীর্ণ আঙুলগুলো মেলে দেই উল্টামুখ আকাশের পূরাণে;প্রার্থনাস্তব এবং তপস্যার দান-ধ্যান-নিমগ্নতা বৃষ্টির ফোয়ারা হয়ে নেমে আসে বড় কষ্ট প্রভূ - নিদ্রাহীনতার সুখ দাও অসামঞ্জ্যের শুচি অথবা অশ্লীল বীজানুবিস্তারে পথিক জটিল পথ কত প্রতিহত পথ আজ মিশে আছে অস্বচ্ছ,তরল এবং লম্বাকারে আমি দশদিকে হাত উঁচিয়েছি - অবরুদ্ধ এই জনপদে সবুজাভ আলো দাও,প্রভূ

মানুষ ও পাখি

প্রার্থনার স্তব ফেটে পাকিয়ে উঠছে ধূলো ভাঙা রথ,শিরস্ত্রাণ,- ত্রেতা থেকে কলিযুগের সূর্যাস্তে সেই একই রঙ মানুষ মরছে কুরুক্ষেত্রে আর গন্তব্যে পৌঁছার পূর্বে - অভিশাপ তাকে আজও কাছে টানে পালাবার পথে সুড়ঙ্গ - হাড়ের নৌকা কে দাঁড় টানছে দুই পায়ের কলঙ্ক মুচে জলের উপরকার চরে ছায়া ও চন্দ্রিমা মুখোমুখি স্নান এবং কলহাস্যে তাড়া করে মানুষ ও পাখি

ছায়া ও চন্দ্রিমা

ছায়া ও চন্দ্রিমা ঘেরা উঠোন তোমার আমার লেখার দুই ধারে কাঁটাবন যে আগুন জ্বালিয়েছ পোড়া ছাইটুকু বাদ দিলে.....সারাঘর আলোকিত বারান্দাময় অলীকস্বপ্ন তবু সকালকে কাঁধে তুলে বসে থাকি ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলবো বলে

পরমাণু ঘড়ি

পরমাণু ঘড়িতে সকাল ন'টা শাহবাগের রাস্তায় ট্রাফিক ছুটছে থেমে আছে সমস্ত শহর 'তোমাদের গন্তব্য কোথায়?' ভীড় করে আসে সুযোগসন্ধানী কিছু প্রশ্ন মুখ খোলবার আগেই সবুজ বাতি ঢাকা ক্লাবের ধারের ফুটপাত ঘেঁষে বসে থাকা অর্ধলিঙ্গিনী ভিখারী মহিলাটি আমার মা আর রমনার লেকে যে মেয়েটি শুধু শায়া পড়ে পাড়ে শাড়ী শুকাচ্ছে;সমস্ত রাত এই শহরের লাম্পট্যের তৃষ্ণা মিটিয়েছে - সে যে আমারই বোন গতরাতে ওর শরীরের প্রতিটি আঁচড়ে,আর্তনাদে বাসী এক ধর্ষণের মুখোমুখি তোমাদের সভ্যতা থমকে আছে

আহ্লাদ ও পুনরুথান

যে সারল্য তোমাদের মজ্জাগত আলোছায়াময় টানাদিন এবং আমার ভেতর যে আনন্দ,- তা শুধু রক্তের,তা শুধু মদের উপকারী সমাজ বিজ্ঞানে যথেষ্ট অসত্য এবং গূঢ় লৌকিকতার আড়ালে লুকানো আগুনে পোড়া ক্ষত সম্ভবতঃ আজ,কাল কিংবা আগামী পরশু বাতাস ও জোয়ারের টানে স্বচ্ছলতা ভেসে যাবে অঙ্গুলিনির্দেশকারী রাজপুরুষেরমুর্তি ও স্থাপত্যে নূতন বিহগপথ আহ্লাদ ও পুনরুথানের

গ্রামান্তরের গান

গভীর অন্ধকারের গ্রাম গন্ধ শুঁকে উঠে আসছে প্রেতেরা রক্তে,অশ্রুপাতে এবং অপমরণের আগে শ্মশান অবধি যারা যেতে পেরেছিল হাতে সামান্য জ্বালানী চন্দনপাতা,উল্টানো চোখ,আধপোড়া নাভী ও হৃৎপিন্ড মারী ও মড়কে কত গ্রাম,কত শহর উচ্ছন্নে গেল ভেদবমি,ডেঙ্গু,কালাজ্বর - মরা লোকালয়ে চাঁদ জ্বলে নদীর এ পারে গান থেমে আছে পঙতিতে পঙতিতে দুঃখ আর অইদিকে আকাশে আকাশভরা তারা গান পৌঁছে গিয়েছে জলের স্তর পার হয়ে ঐ দিকের গ্রামান্তরে

ছাইমাখা নাচ

আগুনের সক্ষমতা আছে নিমেষে পুড়িয়ে ছাই করবার সাদা কিংবা কালো আগুন বোঝে না হাহাকার,আর্তনাদ,ঘরপোড়া অন্তর্জ্বালা দেখেছ কি ভাবে সূর্যশরীরে কবিতা লেখা হয়েছিল প্রার্থনার ফুল ঝরে পড়েছিল অরুণোদয় হৃদয়ে,সান্ধ্যসঙ্গীত ও স্তবে,দাবদাহে কেমন ঝলসে গিয়েছিল হৃদয়ের সেই পোড়া ছাই আজও বাতাসে ভাসছে শ্মশানের চন্ডাল নাচছে,ছাইমাখা নাচ

সোমবার, ২০ জুলাই, ২০১৫

নূতন ভাষায় গান ও কবিতা

বেদনা ও বিদ্রুপের বিরোধাভাসে আমার ছায়াটাকে অনুভব করে যখন তোমরা ডানা মেলে দিয়েছিলে - প্রতিযোগীদের ঈর্ষা-মাখা হাসিতে আকাশ ভরে গিয়েছিল নিন্দুকের আর ইউক্যালিপটাসের মতো দীর্ঘ আমার ছায়াটা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রকায় হয়ে মিশে যাবার প্রাণান্তকর চেষ্টায় - যা হয়ে থাকে সচরাচর;উদ্বাস্তু দিন এবং রাতের নির্ভার ঘুমের ভেতর স্বপ্ন ও অভিমানের সহাবস্থানে দ্ব্যররথদোতক হাসি - জননেরে আলোড়নে সু-পরিকপ্লিত মিথ্যাচার কিভাবে নিন্দুকদের মর্মমূল খুঁড়ে অবিমৃশ্য বালিতে নিশীথ জ্যোৎস্ন কিংবা নূতন ভাষায় গান ও কবিতা লেখা যায়

রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫

স্মৃতি,মৃদুজলঢেউ

চিনাংশুকে ঢাকা এইসব বনস্থলী,রুপালী জলের প্রভা,- দেখেছ আগুন,বন্যপাতা কিভাবে পুড়ছে শিশিরের জল আর মেঘের কুয়াশা আধখানা মুখ,আধখানা চাঁদ জেগে আছে ছায়াময় বাহিত প্রপাত এতোবেশী অন্ধকার ঝরে যায় সবমুখ,স্মৃতি,মৃদুজলঢেউ মধ্যরাতে নিজেকে ছেড়ে এসেছি;একেলা পথ - অনিশ্চিত আর বার্তাবহ শোক,তাপ আর বিদেহ,-'জয় হোক' কল্যাণী তোমার পথে পথে আশীর্বাদী গান গেয়ে যাচ্ছি আমরা অবুঝ তবুও ভালোবাসা পায়ে পায়ে হাঁটে

কালের মন্দিরা

অজস্রবার গিয়েছিলাম সমুদ্রের তীরে সূর্যোদয়,সূর্যাস্ত,গোধূলী আর জ্যোৎস্নার শিখরে ভেসে প্রতিবার ফিরতে হয়েছে বিকৃত মুখের ফুল ও শূন্যের মাঝামাঝি চিরন্তন স্বদেশ ও সন্ন্যাসের সজল উন্মেষে জটায় জ্বলছে স্বাভিমান প্রতিবার ফিরে আসি,ফিরতে হয়েছে - পাঁজরের হাড়ে বেজে ওঠে স্ব-নির্মিত কালের মন্দিরা

কবির অভিশাপ

সময় ও দূরত্বের দীর্ঘ রেখায় দ্বি-ঘাত সমীকরণের দূরহ সকেত প্রতিটি বিচ্ছেদ ঘিরে পতঙ্গের আনাগোনা এই ব্যর্থ ভূ-মন্ডল,প্রাণের উন্মেষ এবং প্রণয়ের চিহ্ন ধরে যত আঁক,স্থাপনা,কোকিলভাষ্য,--- অনাথ দেবদূতের মতো ভিক্ষাবাটি পেতেছি;বিপথে জাতকূলীনের ছায়া - রাত নিশীথের স্নান শেষে তত্ত্ব-বিনির্মাণ কবির অভিশাপের ছায়া এত বেশী গাঢ় যে অবলীলায় একদিন সমস্ত গদ্যশহর মিশে যাবে

সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৫

নিহিত বর্ণমালা

আমাদের ঘর নেই,ভিটে নেই সাবেক ভিটেতে দাউদাউ চিমনি জ্বলছে - ক্ষুধা এবং যৌনতার আমাদের মেয়ে ও স্ত্রীলোকেদের শহরের বাবুরা তাদের সাথে করে নিয়ে গেছে শহরের হারেমে এখনও কত ঘর খালি পড়ে আছে রতিপ্রস্তুতির গর্জনে প্রতিটি রাত ভরে ওঠে অবৈধ সঙ্গমলোভে একেকটি চুম্বনের শব্দে শহররক্ষার দেয়ালে ভিত কেঁপে ওঠে আর ঐ দিকে নৈশপ্রহরী হেঁকে যায়,'সাবধান।' যৌনতায় দুলে ওঠে শহর - নগরপিতা বার বার হিসেব কষছে সাধারণ নাগরিক এবং বারবণিতার সমানুপাতিক সাংখ্যের আধিক্যে সমর্থনের সুষম ভারসাম্য,জন্মনিয়ন্ত্রণ,পয়ঃনিষ্কাষন শুঁড়িখানায় এখন আর মাতলামি নেই বরঞ্চ বেশ্যাপল্লীর পথে অস্থি ও জীবাশ্মেভরা অন্ধকারের ভেতর দৈবপ্রজনন,কটুগন্ধা যোনীর অনার্যা ঈশ্বরীর আর্তনাদ - নৃত্যরতা বাঈজী ও বেশ্যার কিশোরীকন্যা - ওদের এখন কোন মৌলিক উৎসব নেই চঞ্চল কীট ও পতঙ্গের মতো শস্যদর্শনের স্মৃতি আছে প্রত্যেক অনামী ঠোঁট ও কপালে অজস্র যৌনপ্রহার একেকটি মাতালের আলিঙ্গনে শরীরের লোভনীয় বাঁকে ফুটে ওঠে আলোরেখা,চুম্বঞ্চিত্র,নিহিত বর্ণমালা

শূণ্যের বিরোধী

আমরা সবাই আজ শূণ্যের বিরোধী অপূর্ণ শূণ্যতা ম্লান ইশারায় ছিঁড়ে নেয় বুকের ভেতর চুপ করে বসে থাকা দুঃখ ও তফসীলি বেদনা মুখের প্রচ্ছদ এমনই সবুজ - এত যে অনাদর তবু প্রতিদিনের পুণর্বাসনে সজীব সঞ্চার পটভূমিকায় সামুদ্রিক ঝড় ও বাতাস ফুলতোলা সকালের পথে অকাল বোধন সনাতনী বলিদান

মৌল চাহিদা

আমার সমস্ত দুঃস্বপ্নের ভেতর আশ্রয় নেয় বিষুব-শূণ্যতা নিঃশেষিত খাদ্য ও পানীয়ে - আমাদের যুগল আত্মহত্যার জ্বলজ্বলে স্মৃতি কুয়াশামাখা সকালে শেষ যে চিঠিটি লেখা হয়েছিল; তা কি ডাকবাক্সে ফেলেছ রোদের ভেতর সেইসব প্রশ্নেরা অস্থিরতায় কিলবিল করছিল আমাদের মৌল চাহিদাগুলো দিনকে দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে

সম্মিলিত বোঝাপড়া

একেলা নদীর তীর।ঘন সূর্য্যাস্ত।তোমরা পথ ভুল করে এইখানে এসে দাঁড়িয়েছ?কাশবনের ভেতর আলপথ। তো্মাদের অমোঘ মুঠিতে গোধূলির পাকা রঙ।সমস্ত সন্ধ্যাবেলা ঝরে পড়ে - বিচ্ছুরণে মায়াবী মমতা? গম্ভীর নিঃশ্বাসে বের হয়ে আসে রাত্রিবেলার বাদুড় কৌম অন্ধকারের ভেতর দু'জনের লবণাক্ত হৃদয়।যুগল আত্মহত্যা এবং তারপরের মুহূর্তে চিতা জ্বলে ওঠে।জলের কিনার ঘেঁষে পড়ে থাকে সম্মিলিত বোঝাপড়া।

নৈশবিজ্ঞপ্তি

মাঝরাতের প্রহরে একেকটি সমুদ্রঝড় রমণীর বুকের ভেতর তার অন্তর্বাস ভেদ করে তাকে পাহাড়ের উচ্চতায় নিয়ে যায় আর ফ্লুরোসেন্ট বাল্বের আলোয় আমি নিমগ্ন তাকিয়ে দেখিঃ তার শরীরের থেকে তারা খসে পড়ার মতোন একে একে শাড়ী,শায়া,বক্ষবন্ধনী,ব্লাউজ এবং শেষ সুতোটির অন্তর্ধানে কী শৈল্পিক নগ্নদেহ চোখের সামনে ভেসে ওঠে রক্তের উন্মাদনায় নগ্ন দেবী প্রতিমার পায়ের তলায় পড়ে থাকি আমার গোলাপী জিহ্বা পায়ের নখ ও পায়ের পাতা,গোঁড়ালি হাঁটু,উরুসন্ধি থেকে মসৃন পেট ও নাভী,ভরাট স্তন ও গলদেশ,ওষ্ঠ থেকে.... ক্রমাগত একই রকম,এইভাবে এইভাবে প্রতিরাতে আমার শোবার ঘরে অভিনীত হতে থাকে শরীরী প্রতিভা আঙুলের নখে লুকানো আয়না - নৈশবিজ্ঞপ্তি এখানে থেমে থাকে

শোক ও শোকাশ্রু

শোক থেকে শোকাশ্রু ও শোক সঙ্গীতের সুরে তারা ডোবা দেখেছিল মেয়ে - ঐ দিগন্তে তারা খসে পড়ে! শত বছরের আগে এবং পরে আকাশে আকাশ ভরা তারা - কত লোক ওপারের পথে গিয়েছিল গত শতাব্দীতে মারী ও মড়কে যারা গ্রামছেড়ে গিয়েছিল তাদের উত্তর পুরুষেরা কোথায়,কেমন আছে এই শতাব্দীতে গান থেমে আছে মরা লোকালয়ে চাঁদ জ্বলে চকোর পাখিরা ফিরে আসছে ঐ

ঊনিশ এবং রক্তমাখানো নখের জলছাপ

অনতিদূরে গমের ক্ষেত,সমস্ত রাতের স্বপ্ন জ্বলে - নবআবিষ্কৃত শমী বৃক্ষের তলায় উদাসীন বসে আছি ভুলে গেছি প্রার্থনার মন্ত্র,সূর্যস্তব - এবারের শরতে কেবল মৃত্যুবোধ জেগে ওঠে মৃত্যুর দেবতা এসে লিখে গেছেঃ সাল আনুমানিক ঊনিশ কিংবা তার পরের হেমন্তে... সারি সারি চিতার আগুন - খবরের পাতা ভরে আসে দুঃসংবাদ আগুন ও ধোঁয়া,ধোঁয়া ও আগুন এতো মৃত্যু কাদের কল্যাণে দুর্মূল্য পেট্রোল বোঝে না নিজের সক্ষমতা মসজিদ,মন্দির ও গীর্জায় পূণ্যার্থীর ভীড়ের ভেতর কেবল একটি চোখ জ্বলে উঠেছিল বান্ধবের মৃত্যু ও সহমরণে - তহবিল সম্ভাবনাহীন এবং ধর্পোম ও তীর্থশালার পোড়া ইটে আঁকা ঊনিশ এবং রক্তমাখানো নখের জলছাপ

সীতার মতোন পূত ও পবিত্র....

রাত্রির পাথর ভেঙে বেশ্যাপারার বিপথে একসাথে ধর্ম ও কবিতা মদে নেশাচ্ছন্ন হয়েছিল - হে আমার পিতৃপুরুষেরা কেবল জলের অনুষঙ্গে ভেসে গেলে রক্তবর্ণ মদ,নখরাঘাতে ক্ষত-বিক্ষত গণিকার স্তন থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরে - তা মদের চেয়েও স্বাদু ঠান্ডা পানীয়ের চেয়েও কোমল ও মিষ্টি গ্রাম্য কুমারীর মাংসে যারা তৃপ্ত হয়েছিল সেইসব কবি ও পূজারী আজ দীক্ষা দেবে - বেশ্যারা প্রস্তুত অগ্নিস্নানে সীতার মতোন পূত ও পবিত্র....

উদ্ভিদ,প্রাণী,পতঙ্গ ও ঢেউ

প্রেমিকাকে বন্ধ্যা করবার ক্ষমতা নিয়েই চলে গেল যতদিন বেঁচে ছিল -চোখে বিহ্বলতা নিয়ে নারী ও নদীর মুখোমুখি আনমনে প্রশ্ন করেছিলঃ তোমরা পেছনেকোন ঘর ভাসিয়ে এসেছ অগণন মানবযোনী পরিভ্রমণ শেষে কবি বসেছিলেন প্রান্তরে তোমাদের জন্ম হয়েছিল কোন সালে তোমরা কি প্রতিবেশীদের খাবারে বিষ মিশিয়েছিলে অথবা ঘরে আগুন - ক্ষেতের আল কেটে দিয়েছিলে ঘন্টা বাজছে ঐ,গীর্জাঘরে সামগান মাতা মেরী,তোমার সন্তানদের রক্ষা করো শহর,নগর আর বন্দরের বাতাসে মানুষপোড়া ছাই ভাসছে - রঙহীন সূর্যোদয়ে আতর ও লোবানের ঘ্রাণ ভাঙা চারাগাছে কাঠি বেঁধে ভূগোল ঘুরছে দেখো,ধ্বংসের ভেতর মাথা তুলছে উদ্ভিদ,প্রাণী,পতঙ্গ ও ঢেউ

সময় ও পরিপার্শ্ব

আমাকে রাত্রিরপথে ঠেলে দিয়েছ,একেলা আমি দশদিকে হাত উঁচিয়েছি - পথ আমাকে নেয় নি আমাকে চিনেছে ঘন বিনুনী শুণ্যতা,অন্ধকার - পৃথিবী নামক এই গ্রহ তার বায়বীয় জালে আটকে রেখেছে সময় ও পরিপার্শ্ব

ঝমঝম বাজছে রুপার মল

আমার বিলীয়মান বালি,অবিমৃশ্য বালি - চোখের পাতায় খাল খালের দু'ধারে বাবলার বন,হিজল গাছের সারি সবুজের অবাধ্ন স্মৃতির মধ্যে নৌকা-খালের সংঘাত বেজে ওঠে শরীরের চতুরঙ্গে ভ্রুকূটির শাষন-নিখাত পাতালের ছায়া যেদিকে তাকাই - বেজে ওঠে শত হাজার কাঠির ঢাক মাটিতে শোয়ানীও নৌকা- কত আর জল ধরে রাখে উত্থান ও প্রণতির মাঝখানে পড়ে ছিল আমাদের বোঝাপড়া ভুল কিংবা সঠিক - হিসেব করি নি কখনো কেবল শুনেছিলাম তোমার পায়ের শব্দ ঝমঝম বাজছে,বেজেই চলেছে রুপার মল

রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৫

ঘরের বিষাদ

গৈরিক সন্ন্যাসে ডুবে আছে সমস্ত পাহাড়ী পথ তবু আমি পথে নেমেছি - ভেবেছি সামঞ্জস্য পরিণতি অথবা সজীব সমাধান যেদিকে তাকাই - শুধুই মৃত্যুর গান পেছনে যে ঘর - তাতে ক্ষুধা সামনে যে পথ - তা জ্বলছে ডানে কবরখানা,বাঁইয়ের পথে খানা-খন্দক-গহ্বর আমি দুই হাত শূন্যে তুলেছি- আকাশ নেমে আসে মাথার ওপর ভুল সময়ে পথেরমাঝখানে এসে দাঁরিয়েছি বন্ধকী এ জীবনের দেনা পথে পথে কেটে যাবে অতীতের ধারাপাত- যেইখানে ছিল...সেভাবেই আজও আছে ঘরের বিষাদ একাকার হয়ে মিশে আছে পথের রেখায়

পাঁজর নির্মিত দাঁড়

সকালের সমুদ্রবাতাসে এক দূরন্ত গাঙচিল-মুখে যার মাছের স্ফটিকঅমাংশঃ ক্রমাগত দূরে উড়ে যায় রাতের জোয়ারে দূর থেকে দেখা যায় নক্ষত্রহীন আলোকস্তম্ভ - আলোকগ্রস্ত,অর্ধেকঢাকা গাঙচিল ও রাতের ফসফরাসে আমি কেবল একাকী খুলে ফেলি পাঁজর নির্মিত দাঁড়

মুক্তি

দক্ষিণাবর্ত শঙ্খের থেকে সাধকের ইড়া, পিঙ্গলায় ওঁকার ধ্বনির স্বর,___ ত্রেতা,দ্বাপর যুগের মুনি ঋষিরা মহাকলিতে মিশে আছে কৈলাস,মানস সরোবর,অমরনাথ,গাঙ্গোত্রী এতো ভীড় মানুষের-কুলকুন্ডলিনী খুলে যায় জয় শিবশম্ভু 'গৃহী মানুষের মুক্তি নেই' বলে গৌতমবুদ্ধ খড়গপুর ষ্টেশনের প্ল্যাটফর্মে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে

প্রিয় সব নামের অক্ষর

তোমার নিজের হাতে এক এক করে বুকের পাঁজরগুলো খুলে নাও তারপর হৃৎপিন্ড উপড়ে দেখো ভালোবাসার সু-বিন্ন্যাসিত স্তরেকেমন সাজানো প্রিয় সব নামের অক্ষর

পরাভব

সুখ এবং দুঃখ।হলুদ পূর্ণিমা। ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি যা-কিছু প্রবল দূর্বিপাকে টেনে নিয়েছিলেঃ রেল-সাঁকো অর্ধেক ডফুবন্ত নৌকা কবিতার নিষ্ফলতা অন্ধত্ব ও বধিরতার সঙ্গীতে- সমুদ্তোর অথবা নদী মোহনার বুকে তোমার দু'চোখ ফুটে বেরিয়েছিল অবিশ্বাসের ঝড়।যা কিছু প্রত্যক্ষ- কিংবা মনগড়া - চক্ষ্মুষ্মান পুরুষের বাচালতা নিয়ে আমি কিছুই দেখি নি শুধু বুঝতে চেয়েছিলামঃ একজীবনের পরাভব। ক্লান্তি ও শ্রমবিনোদনের কথা মনে আছে? আমার লেখার নীল খাতা ভরে গেছে অভিজ্ঞানলব্বধ কবিতা ও গানে। একদিন পড়ে দেখো।

শুক্রবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

বৃষ্টি, অন্য ক্ষেতে,ক্ষেতজাঙালের বাঁধে

স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর প্রবাসী নৌকার সারি - দাঁড় ও জলের নিবিড় প্রণয়ে মতিচ্ছন্ন অভিযাত্রীদল ঝুঁকে আছে নদীতীরের ঘাটের দিকে - অর্ধসত্য ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি মনে হল আধুনিকতার শেষ হয়ে গেছে - যুদ্ধের দামামা নেই কিন্তু তার বিষ রয়ে গেছে - দৃষ্টিক্ষুধা আর সফেদ সাবানে ছিন্ন মিথ্যা প্রত্যয়বোধে হাঁটা পথ ও বনস্থলের রীতি মেনে পাখিদের পেছনে পেছনে সামুদ্রিক ভূত,অসুরেরা উড়ছে - তাদের ডানা ও পালকে কালোধ্বজ,অমঙ্গলের সূচকচিহ্ন - নীল নভেঃ ভাসমান অক্ষরের ক্রমে শব্দ ও ভাষার পাঁকে জাগতিক নিয়ম,দিব্যোন্মদনা - অতীতচারিতার ভেতর সাল-তারিখের জটিলতা,পরাবিদ্যা - বনগত বনানী ও বিভা ছিঁড়ে ফেলে প্রযুক্তির অধিবিদ্যা - খনিজবিদ্যা,জরীপ কার্য্যাবলী - এত উৎকর্ষতা পেয়েছে - মাথার উর্ধ্বে যতি ও পূর্ণচ্ছেদের বিরতিতে পড়ে থাকা সমাধিপ্রস্তরে দেখেছি স্বাতন্ত্র্য,অধর্মের ছায়া।জীবিতের কর্তব্য বা বস্তুব্যাপকতা থেকে কল্পিত ঘুমের পাশে ফোটে অগ্নিরেখা,মর্মতল ছুঁয়ে যায় ঝড়ের রাতের শীতলতা। রমণী,এমন রাতে তুমি পথে বেড়িয়েছ? অসংখ্য শোকের ডাল ও পাতায় স্মরণাতীতের প্রতিচ্ছবি - কখন দিগন্তে ডুবে যাবে? জলের অধিকারের মতো একদিন তোমার শরীরে চন্দ্রাহত আষাঢ়ে পূর্ণিমা - স্পষ্ট দেখেছিলাম আমার বিশ্বাসের সারাৎসার ও প্রব, দূর্বিপাকে উৎসারিত সব গান মুছে দিয়েছিল অন্য আর এক করতল। প্রতিটি ফুলের জন্ম ঝর্ণার অনন্ত শব্দে মিশে থাকে আর বৃষ্টির অঝোর ধারাজলে তুমি এক উন্মুখ প্রান্তর যেন - যদিও দুই হাত তুলে বৃষ্টিই চেয়েছিলাম। সেই বৃষ্টি আজ অন্য ক্ষেতে,ক্ষেতজাঙালের বাঁধে

আঁচলে বাঁধা কোজাগরী চাঁদের টুকরো?

আকাঙ্খার অসহ্য আক্ষেপে আমি কেঁপে উঠেছিলাম - আর্তনাদ ও অবসাদে রাতের কংকালশীর্ণ দেহে জড়িয়ে নিয়েছি জ্যোৎস্নার আঁচল। অবগুন্ঠিতা রমণী,তপ্তহত আমার এ মুখ চাঁদের মতোন পান্ডুবর্ণ,বরফের মতোন শীতল - সূর্যমুখী পৃথিবীতে যদি অগ্নির অক্ষরে লিখি নাম - জ্বলে ওঠে বুক দাউ দাউ জলের অক্ষরে লিখি কবিতা - অকাল বর্ষণের ঢলে ভেসে চলে যায় বালি,কাশবন ও উড়ন্ত পাখিদের ডানায় লিখেছি প্রিয় নাম অরূণোদয়ে হৃদয় খুলে দিয়েছিলাম - দেখো নি প্রিয় নিঃসীমতা ভুলে প্রতীক্ষিত প্রহরে নিভৃত কান্না। সান্ধ্য শহরের নির্জনতা বুঝে নিয়েছিল নিদ্রাহীন জ্বালা।মুঠোয় ধরতে পেরেছিলে সকালের আলো বা আঁচলে ধরে রেখেছিলে কোজাগরী চাঁদের টুকরো? তোমাদের লীলাময়ী হাত থেকে খসে পড়ে প্রেম,আলো,সারাৎসার জীবন। তমসাগান আর ভৈরবীতে এতোদূর চলে এসেছ?ফেরার পথে মিলনের সম্পূর্ণ মায়ায় মমতামাখানো সকাল। আঁচলে তন্দ্রা ঢেকে রাখ।

বৃহস্পতিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

ভ্রুণ

নির্বেদ শূন্যতা এবং আত্মরতিহীন বিচ্ছেদের নীল মুছে ফেলে যুবাপুরুষের পূণর্বার ইচ্ছে জাগছে প্রেমের,সম্ভোগের। আনুপাতিক বাঁশবনের ছায়া ছায়া মুছে অতঃপর সূর্য ডুবে যায় দ্রুত- অনায়াস তার ডুবে যাওয়া - আরাধ্য কামনায় থরথর কেঁপে ওঠে কিশোরী,যুবতী আর প্রোষিত-ভর্তৃকা - সন্ধ্যা ও রাতের যুগল সদ্ভাবে জেগে উঠছে বাতাস - স্মৃতিজল তার পূর্বাপরতায় ভাসিয়ে নদীর দুই কূল যথার্থ বিশ্বাসে কুকুরকুন্ডলি শুয়ে থাকে পায়ের তলায় - এত যে প্রেম,দ্বৈরথ,- নিরালোক রশ্মির পরিদ্রবণে কেবলই শরীর জাগছে - পীতাভ নাভির মধ্যে যেখানে আগুন মুহূর্মুহূ জ্বলে আর উরুসন্ধি বেয়ে লবণজলের ধারা নেমে আসে - অঘ্রাণিত কুমারী যোনী ও স্তনবৃন্ত ঘিরে শুয়াপোকার সংকেতধ্বনি;অনঙ্গ আগুন ঝরে যায় - অগ্নির সমাজ বড় বেশী স্পর্শকাতর - আদিম,বন্য এবং রক্তলোলুপ - নিস্তব্ধ শরীরের ভাঁজে ডুবে যায় ইহলৌকিকতা-অর্থ-সংস্কার-সংযম। তোমাদের পরিণতি বলে কিছু নেই - তোমাদের সমাজনীতি নির্মম - তোমাদের বৈদ্যেরা ছুরি-কাঁচিতে নিতান্তই পারদর্শী - গর্ভাধার খুঁড়ে যে সমস্ত ভ্রুণ ফেলে দিয়েছিলে - জন্মের আস্বা্দদ্মুখে তারা সমুদ্রের জলে সাঁতার কাটছে মৃত্যুকে এগিয়ে নিয়ে - তোমাদের এত জন্মভয়? সেইসব মায়েদের কান্নায় একক এবং তুলনারহিত ভ্রুণ বড় হওয়ার গান গাইতে গাইতে অবিশ্বাস করেছিল পিতা,পিতৃপুরুষ - ঈর্ষার খেলা ভাঙতে ভাঙতে আতুরালয়ের পাশে সার্বভৌম পুরুষের পুরুষত্ব খেলাচ্ছলে নষ্ট করে দিয়েছিল - ঐ অঙ্গটা অযৌক্তিক বলে মনে হয়েছিল?নিরুজ্জ্বল ভবিভব্যতার কথা ভেবে জটিল লিখন ভঙ্গিমায় পাতার শিশিরবিন্দু,অন্ধকার,হিম,রক্ত,দাবানল,বৃষ্টিধারাজলে যত কবিতা ও গান - বিদ্যুতের তারে শোনা যায় ক্লান্ত ভ্রুণের অনুচ্চারিত পঙতি।

বুধবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

অমীমাংসিত প্রশ্ন

এবারের দ্রুতগামী শীত বোঝে আগুনের উষ্ণতা - তোমার পায়ের কাছে বিপর্যস্ত বালিয়াড়ি - আমাদের নৈশ অভিসারে চন্দ্ররথ-নেমে এসেছি - দূর,শূন্যপথ ঘুরে আলোকণা অপ্রতিহত গতিতে ঝরে পড়ছে কাঠবাদাম,রুটিফল,আঙুরের লতা - স্পর্শময় নদীরে প্রতিধ্বনিত জল কী দারুণ খেলায় মেতেছে - 'তুমি পথচারিণির ক্লান্তি নিয়ে এসেছো' - সমর্পণের ডাকে পায়ের নীচের বালি নড়ে ওঠে আর নাড়ার আগুন অবিন্যস্ত জ্বলে ওঠে। আমরা ভাবছিলাম পঙ্গপাল আক্রান্ত গাছের ডাল ও পাতার বিবাহসম্বন্ধে দারুণ শীতের ভীরু পাখিগুলি বারংবার উড়ে আসে - আচ্ছন্ন আবিলতায় গাছ থেকে খসে পড়ে পাতা - পেছনে পেছনে বসন্তের ইস্তেহার। অপার সম্ভাবনায় এবারের বসন্ত আসছে। প্রতিশ্রুতিহীন বনে জটিল লিখন ভঙ্গিমায় কালবৃক্ষের ফল ও পাতাগুলো দুলছে - সমূহ সর্বনাশে মানুষেরা প্রতিটি গহ্বর,প্রতিটি বৃক্ষের মূল খুঁড়ে খুঁজে দেখবে অভ্র ও তামা। এত ধাতু কাদের কল্যাণে? বনের ধুতুরা,শিয়ালমুতির আধফোঁটা ফুল,- প্রতিটি প্রশ্নের গূঢ় অর্থ খোঁজ়ে। ত্রেতা,দ্বাপর ও সত্য যুগ শেষ হয়ে গেছে কিন্তু অনাহারী মানুষের ক্ষুধার স্বরুপ আজও একই রকম। পূব পাড়ার রহিম শেখ ক্ষুধা পেটে সেই যে বানের জল পার হয়ে গেল - সে-কি ফিরে এসেছিল? অনাসক্ত প্রতিটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর কে পেয়েছিল? সত্যানন্দ মাস্টারের বৌ-টা শেষরাতে কাঁদে কেন? উত্তরের মুখাপেক্ষী আজ এই শীতার্ত প্রহরে কোন প্রশ্ন করব না। অভিসারের মুহূর্তকাল পার হয়ে গেলে আমরা যে যার ঘরে ফিরে যাব। অমীমাংসিত প্রশ্নের যথার্থতা পড়ে থাক সাঁকোর তলায়।

জন্মভয়,মৃত্যুর আনন্দ

সবুজের মুঠো খুলে গড়িয়ে পড়ছে একান্ত আয়না,তেলছবি,অবসাদ - শতাব্দীর জলস্রোত আমাদের গোড়ালি ছাড়িয়ে হাঁটু অব্দি উঠে যেতে চায় - এই নিরালোক আবহমানতা ছেড়ে কোথায় পালাতে চাও - অতীতকালের প্রণয়কথন মনে পড়ে - এত যে প্রণয় - অবেলায় এসে মনে পড়ে ঝর্ণাতীরের পূরানো গুঁড়ি - চ্ছিন্ন মুহূর্ত,অদৃশ্য জাল,- সব ঢাকা পড়ে যায়ঃএই পৃথিবীতে প্রেম ছিল -কিশোরী শিশির,ধানদূর্বা,নদীর উজানস্রোত ঠেলে ভালোবাসা এসেছিল - শরীরে শারদবেলা - কাশবনে মিশে থাকে আমাদের প্রিয়নাম - শব্দগুলো খুলে যায় - জলস্রোত টেনে নেয় সমুদ্রের দিকে - জন্মভয়,মৃত্যুর আনন্দ ফেলে আমার বুকের এই ঘর ছেড়ে যেতে পেরেছ - ভুলেছ মৃত্যু-মনোরথ। অস্তদীঘী পার হয়ে ছুটছে মৃত্যুর রথ - অন্তরীণ আলোকণা ছিঁড়ে নেয় কাল-সমকাল-মহাকাল - আমরা ছুটছি,অপরিণামহীন - জন্ম ও মৃত্যুদিনের স্মৃতি - বন্য অন্তরাল ভেঙে অসম্ভব এক তৃতীয় ভূবন জেগে ওঠে আমাদের মনের অলিন্দে - দিনান্তের পূণর্বাসনে চারপাশের আর্তনাদ ও স্ফটিক ঠিকরানো আলোতে আমরা মুখোমুখি - ঘ্রাণ-শ্রুতি-স্পর্শমুখে গভীর সুড়ঙ্গ - শ্বাসকষ্টময় অগভীর ঘুম - পাতালপ্রোথিত শল্যপাতে ভুলে গিয়েছি ঘরের বিষাদ,পতনউন্মুখ পুঞ্জীভূত মেঘ - পৃথিবীর মাঠে সূর্যশোক ও যে কোন ঝড়ে উন্মোচিত হয়ে আসে দুঃস্থ হাহাকার - দেশ-দেশান্তর আর মধ্যজলে যত উদ্যত প্রণয় - ধাবমান শূন্যের ধারায় উঠে যায় - কী বিপুল ব্যথা - পাখিওড়া ছায়ায় দেখেছিঃবিকলাঙ্গের ক্লৈব্যের শ্বাস,আদর ও প্রত্যঙ্গের তৃপ্তি - তোমার দু'চোখে জ্বলজ্বলে ঘৃণা,প্রাণভরণের ঋণ - এত ঋণ শুধবে কিভাবে ? পুজোমন্ডপের পাশে ফুলতোলা সকাল - পশ্চিমমুখো স্মৃতিগুলো যেন আষাঢ়ের ঢল - সব একসাথে নেমে আসে - ছাপিয়ে নদীর দুই কূল।

জীবনের যৌক্তিকতা

নিমগ্ন মাকড়সার জালবোবা দেখি - সাজানো দুপুরে প্রিয় কাকের চিৎকারে বাঁশবন নুয়ে আসে - মশলা ঝাড়ার গানে সজনে তলায় আমার মেয়েরা আজ রাত দুপুরের মতো দূরে চলে গেছে -পাতা কুড়ানোর ছলে শান বাঁধানো বনের পথে আমাদের পূরানো প্রলাপ ভরে ওঠে - সেবার দাবানলের শেষে অসংখ্য পাতার শোক ঢেকে রেখেছিল বনের সমস্ত ভূমি - পোড়া ডাল,ভাঙা ডিম ও পাখির বাসা,হাজার ডানার শব্দ,- পোড়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমরা দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলাম - প্রাচীনকুঞ্জ,সুন্দরের নিয়তিতে দিন,সপ্তাহ,মাস ও বছরের ক্লান্তি ফিরে আসছে - বিগত োসৌরভ্রমণের কালে তোমার চোখের জল আর মুখের শ্যাওলা মুছে নিয়েছিলাম - দু'ঠোঁটে আজও তার স্বাদ লেগে আছে - আরও অনেক তীর্থযাত্রীর সঙ্গে নদীর ঐ পারে সূর্যোদয়ে প্রণাম করেছিলাম - যদিও মনে ছিল না গায়ত্রীমন্ত - অথচ স্পষ্ট মনে পড়ে অজন্তা ও ইলোরার গুহাচিত্র,মহেঞ্জোদারো সভ্যতা - ব্যাথা-বেদনার দূর মাস্তুলে ঐ অর্থহীন কাগতিক ভোগ-বাসনার উর্ধ্বে জীবনকে অযৌক্তিক মনে হয়েছিল যুগল এ জীবনের যৌক্তিকতা আছে কোনও

কুউই-কুউই

মরা পাতার কোরাসধ্বনি - প্রিয় কবিতাগুলো আটকে আছে হাঙরের দাঁতের ফাঁকে - সাম্প্রতিক চাতুরী ও শ্লেষা - না-বলা অপ্রিয় সত্যে অপরাধবোধ নেই - অন্যের লেখা ও পাঠে হিত বা অহিত ছিল না - বরঞ্চ লৌস্পর্শ,বারুণী রাতের দাহে জলতৃষ্ণা - লাল ইটের দালান,ত্রিকোণ ভূমিতে জ্যামিতিক আঁক - অসমাপ্তই রয়েছে আমাদের স্বপ্নের আবাস - সীমান্ত দেয়াল ঘেঁষা এ প্রান্তের স্বপ্নগুলো ডালপালা ছাপিয়ে উঠছে - অগ্নি ও ধোঁয়ায় কুন্ডলিত ঐ পারের অভিযাত্রিকেরা আজও স্বপ্ন দেখেঃপাহাড়ের কোলে আশ্চর্য্য বনপ্রদেশ,সবুজের ক্ষেত আর ডুমুরপাতার ছায়াময় বাড়ী - অসংখ্য মৃতের শোক ও ক্ষুধার সমারোহে খঞ্জনি ও পিতলের ঘুঙুর,রক্তের দাগমাখা কাপড়,বারুদ এবং সোনালী গমের শীষ - নেমে যেতে চায় জীবনের স্পন্দন - যে ঘর পরিত্যক্ত;পোকামাকড়ের বাসও উঠে গেছে - সেখানে কী দ্রুত লকলকিয়ে উঠছে লতানো গাছের ছায়া - সূর্যের বিষাক্ত ছালে কোকিল ডাকছে কুউই-কুউই।

শূন্যের অধিবাসী

আমাদের মাঝখানে পৃথিবী গুরছে,আমরা সূর্যের মত স্থির দাঁড়িয়ে রয়েছি - ক্ষুধা,কাম এবং জন্মের পেছনে জন্ম দু'পায়ে মাড়িয়ে কোটি বছর পরের পৃথিবীতে কুঞ্জবন,কদমের ছায়া,-সারাদিন দু'জনের মনে সন্দেহ,আকাশভরা অভিমান;দেবতাদের যেমন থাকে - প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা সকলেই প্রস্তুত - ঈশ্বর নেমে আসে - পাখি ওড়ে - উড়তে উড়তে চলে যায় এবং তারপর শুনশান নীরবতা - আমি আর কতদিন,কতটা প্রহর তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকব - আমার চোখের পাতা থেকে লবণ ও ঘামে মাখামাখি কুয়াশার ভেতর ক্রমশঃ নদী জেগে ওঠে - কারণবিহীন মহাপরিণামের নৌকায় ঝুপ করে নেমে আসে ঘনরাত - আজকাল আর জলে কেউ নামে না - শুশুকগুলো ভেসে গেছে দূরে,আরও দূরে -মানুষেরা সেখানে থাকে না - আমাদের বরাদ্দকৃত সময়,শৈশবের আত্মীয়তা এমন কি নাড়ী ও শিরার রক্তোচ্ছ্বাস এবং আত্মস্বীকৃত মিলনও আমাদের বেঁধে রাখতে অক্ষম। আমরা কী শূন্যের অধিবাসী? শূন্যে মিশে যাবে ঘূর্ণায়মান সম্পর্ক,বিচ্ছেদের গান?

কবির যোগ্য সমাদর

পোড়া মাটিমাটি,ভাঙা চালাঘর - আকাশসত্য গোপণ রাখি নি;অথচ লৌহমেঘ আর পৃথিবীর নিঃশব্দ চিৎকারে সময়ের অন্ধ লিপিকার লিখে যায় অন্ধকার। মৃত্যু। ক্ষুধা। বিবাদ ও বিসম্বাদে কবি একবার সাঁতরায়,আরেকবার উড়ছে। জল থেকে আকাশ,- শতাব্দী থেমে থাকে। জলে ডোবানো সমস্ত পাপ,ঈর্ষা,ক্রোধ,অনুশোচনা ও পাঠযোগ্য আকাশের সান্ধ্যপথে কবিরা সংসার পেতে আছে। সংসারের নীল প্রচ্ছদে অশান্তি,দৈব ও ক্ষমায় কবি ফুল নিতে আসবেন? কবিদের কি কখনো অবিশ্বাসী হতে হয়? শস্যজলে ভেজানো মুখের পাশ। ঠোঁট দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। মুখের শেষ রক্তবিন্দ্য মুছে নিয়ে ফুটছে গোধূলি। উপবীত ছিঁড়ে রঙধনু,বটগাছের তলা,ধানের শিশিরবিন্দু,-কবিদের স্বপ্নে শেকল পড়াবে? কবি তো এসেছে। আঙুলের গিঁটে দ্বি-সহস্র রাতের প্রহর গুনে গুনে আর সূর্যের বিষাক্ত ছাল হায়ে মেখে ___ এখানে কবির যোগ্য সমাদর কই?

হিংসাময় প্রেমিক

পাথরপ্রকীর্ণ দুঃখ এবং যৌনজ্বর - একসাথে নেমে আসে।আমার হাতের করতলে অবলীলায় দলিত অন্য কোন করতলে। আদিবাসী রমণীর চোখে ভয়,দ্বিধা - বনপ্রদেশের স্বাভাবিক পথে সদ্যসবুজ উদ্ভিদ,সবুজের সারাৎসার থেমে বুকের কাঁচুলি,কোমরের কৌপিণে - তেল চকচকে শরীরে পৃথিবী স্থির,- সংকোচ,সভ্যতা,পুত্রস্নেহ। স্বেচ্ছা-নির্বাসনদন্ডে আগুনের উষ্ণতা খুঁজেছিলাম - অন্তহীন জীবনের ভেতর দুঃখের এত শ্লোক?ঋতু কাঁপে,ঋতুর শরীর বেয়ে নামে কুন্ঠাহীন উন্মাদনা - কুয়াশায় কাঁপে অতীতের ভাপ!আমার ঘরের মধ্যে হা%টুজল।ইচ্ছে ছিল না কখনও পাহাড়ের দেয়ালে লৌকিক বাসা বানানোর তবু সীমাহীন সাধ্যের ভেতর খুঁড়ে খুঁড়ে যত আকর ও ধাতু তুলেছি - এ সব তোমাদের কল্যাণে - আমার দুইপায়ে পথশ্রম,শ্রান্তি-বিনোদনে শরীর জেগেছে - রমণীর বুকে মীনাংকন এঁকে দিই নিবিষ্ট শিল্পীর মগ্নতায় - তাপ ও জাগ্রতবোধে আমি চিরকাল হিংসাময় প্রেমিক ছিলাম ।

কবিতার সারসত্য

সূর্যমুখী দিনগুলো দাউ দাউ জ্বলে যাচ্ছে - ঐ পারে দিনের শেষে সচন্দন আলো - আমরা ভাবছিলাম পূর্বাপর প্রেম,অতীত আসক্তি এবং ঘর্মস্নান - যতদিন পাশে থাকা গিয়েছিল;ছিলাম - কেবল একটাই ঘর,একটাই বিছানা - জানালা ছিল না - বারান্দা,বারান্দার কোণ ঘেঁষে খ্রীষ্টগাছ - সমূহ আশায় কী নিবিড় পরিচর্যা - শুকনো ডাল ও মরা পাতা - শেকড়ের ক্ষতে দূর্বেধ্য লিখন লিপি - শিখে নিয়েছিলাম শেকড় ও মূলের পরিভাষা - সামনের সভ্যতা পর্য্যন্ত প্রতিটি পথ ও বাঁকে তোমার নিঃশ্বাস - তাতে অরক্ষিত প্রেমের আবেশ,শরীরের তাপ,যৌনজ্বর - কতদিন চলে গেছে - সেই ঘর আজ লোকসঙ্গহারা - খুলে পড়েছে কড়িবরগা,দরোজার কাঠ - লোনাধরা ইটের দেয়ালে আগাছার স্তুপ - পরস্পর দোষারোপ করতে করতে সন্ধ্যা,রাত,সকাল,সন্ধ্যা ও তারপর রাত - সকাল ক্রমশঃ...... - ।যতদিন শরীরের আবেদন ছিল - তুলে নিয়েছ সমস্ত শস্যকণা,প্রাচীনতা,ভুল এবং মিথ্যা - কবির মুখের থেকে যত দীর্ঘশ্বাস বেরিয়েছি - তা সব কবিতা - রমণী,তুমি বোঝ নি কবিতা - তার সারসত্য

বৃহস্পতিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৫

জ্বালানী আঘাত

শালকীর শান্ত জলে স্নানোৎসব তীরে পড়ে থাকা সমাধিফলক, জলজ শ্যাওলা, পাতা, খড়,- জলবাহী এবং বাতাসতাড়িত গন্ধ নিতে ইচ্ছে করে নদী-মোহনার মুখে আটক মৃতদেহের এক-একদিন ঝড়ের রাত্রিতে অক্ষিগ্রন্থির ভেতর চিরস্থায়ী বিদ্যুৎচমক; আলোর বিপরীতে শব্দ ও স্রোতের উর্ধ্বে শতছিদ্র জাল - স্মৃতি এবং বিস্মৃতির মধ্যে জমে ওঠে অপার্থিবতার বোধ যা-কিছু ভঙ্গুর, ক্ষণস্থায়ী এবং যা-ভাঙবার নয়,- ইহলৌকিকতা,হোমাগ্নি ও আতিথ্যময় পৃথিবী একই রকম পড়ে থাকে পরোপকারের জলে জ্বালানী আঘাত

ধ্বংসবীজ, গজিয়ে ওঠার আগে

বিদায় বেলার আগে যে সঙ্গীত উৎসারিত হয়েছিল,- স্তব্ধতার সেই সুর দীর্ঘ,কঠিন পথের শেষে মেঘের সারল্য আর প্রতিহিংসার আগুন বুকে বন্ধকী এ জীবনের সফল পরিসমাপ্তি টানতে চেয়েছিলাম রৌদ্র প্রতিহত পথে মেষপালকের সারি অসাড় অভিযাত্রীদলের মতো পাহাড়ের ঐ উঁচুতে সাদা বরফের গায়ে নক্সী আঁকা ছাপ ক্লান্ত বাহু, চূর্ণ-বিচূর্ণিত রৌদ্র রশ্মিকণা,- বিরহের সুরে কোন উন্মাদক নীল পাহাড়ের তলায় ঘুমিয়ে আছে আমার ক্ষমতা নেই ধ্বংসবীজের মতোন গজিয়ে ওঠার

ফসফরাসের আলো

নির্জন খাঁড়ির মুখে ছায়াঘন রাত্রি। পাথুরে বাসায় ডানাভাঙা পাখি কাৎরায় - ফসফরাস জ্বলে ওঠে সমুদ্রের লোনাজলে। অধোমুখ আলোর খেলায় ভেসে যাবে?এতো রহস্য ঐ প্রাকৃতিক আলোয়? শৈবাল,ঝিনুকের পাহাড়, প্রবালহাড় এবং পরিত্যক্ত নৌকা,- এইখানে প্রকৃতি জীবন্ত আর জলপাই বনের নিবিড় অন্ধকারে আমাদের শ্বাস দ্রুততর হয়ে ওঠে। জটিল ও দুর্বিষহ লিখন রীতিতে লেখা হল না - সমুদ্রগীত। নিম্নগামী রঞধনু সঙ্গীতে ব্যাপ্ত হল জীবন। উৎসব শেষে অর্থহীন মাথানাড়া,আঙুলের গিঁট গোনা,- পায়ে এসে ভেঙে পড়ে দূর্বিনীত ঢেউ অথচ আকাঙ্খা ছিল ঐ সূর্যের উচ্চতার কাছাকাছি। লবণজলের স্নান,লাঙলের ফলার মুখোমুখি,- ফসফরাসের আলোতে তমসাগান। ফুটো ভিক্ষাপাত্রে আর কত জল, আর কত দীর্ঘশ্বাস সৈকতের ভেজা বাতাসে ছড়িয়ে দেব? পরাজয়ের নিয়ম মেনে পথে নেমেছি - সমুদ্র, ঝাউবন, উপকূলে মকর রাশির ছায়া এবং আমার যাতায়াতের পথে পড়ে আছে কিশোরীর রক্ত মোচনের তুলা ও ছেঁড়া ন্যাকড়া।

বুধবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৫

অমীমাংসীত উত্তরাধূনিকতা

অনায়াস লঘু পায়ের অদ্ভূদ শব্দে আমি পাতার সমাধি থেকে জেগে উঠি সংবাহন সূর্য তার সমস্ত রশ্মিতে স্বপ্নাচ্ছাদিত দৃশ্যের মতো অনুজ্জ্বল অক্ষরে বিনষ্ট মুখ,মুখচ্ছবি এবং পুরুষের অশ্রুপাতের যে চিত্র বালির গহ্বরে,সমস্ত সোইকত জুড়ে জলের সীমানা ছেড়ে উঠে এসেছিল - মুছে ফেলে, মুছে ফেলে পুরুষের সিক্ত ঘামে অনুসন্ধিৎসাময় পৃথিবী পুরুষ ও রমণীর যাতায়াতের কন্টকাকীর্ণ পথে একে একে উঠে আসে ধ্বংসস্তুপ,রাত্রি,রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তি মাথার ওপর শর্তহীন লোভে খসে পড়ে নক্ষত্রমন্ডলী হেমন্তের কোণে পড়ে আছি অমীমাংসীত উত্তরাধূনিকতা জলের মতোন পুরু হয়ে ওঠে বালিকাচের ওপর লবণজলের ঝড় উন্মাদ উত্তর পুরুষেরা শামুক লালার চিহ্নে পথ খোঁজে রোউদ্র জ্বলছে ঐ দিকে

অগ্নিতাপ

যে স্বপ্ন দেখার কথা ছিল মুখোমুখি,অধিকারহীন,- সবুজের অবাধ স্মৃতির অন্তরালে সাজানো সত্যের কাছে পায়ে পায়ে যেতে হয়েছিলঃ অস্বচ্ছ দিনান্তে স্থির ও কঠিন অনিশ্চয়তার মধ্যে জলচিহ্ন নেই বাতাসবিহীন অন্ধ ঘরে দৃঢ়,প্রসারিত দুই হাতে তবু লেগে ছিইল ব্যবহৃত সময়ের ছাপ সজল আঘাতে খসে গিয়েছিল নিমগ্নতা জটাজুটের ভস্মলেখায় পড়ে থাকে স্নেহরঙিন দিন ও গোধূলিবেলার লগ্ন শীতার্ত প্রহরে আগুন জ্বেলেছিলাম বনের শুকনো পাতা,শেকড় ও ডাল,- সব একসাথে অন্ধকারে মুছে গিয়েছিল আমার দু'চোখ আর সহজাত প্রতিরক্ষায় শরীর শুষে নিয়েছিল আগুনের যত তাপ

চিত্রার্পিত রেখা ও রঙ

শিশিরের শব্দে রাতের উন্মাদগান, মেঘ জর্জর রক্তের স্রোত,চারপাশের বিরানভূমি এবং আঙুরলতার তুলনারহিত জনপদে সভ্যতা এখনও পায়ে পায়ে হাঁটছে - যা কিছু সত্য;স্ফটিক,চুম্বন,বাঁদরনাচ ও সারিবদ্ধ নৌকাগুলোকে বাতিল করে এগিয়ে চলছে সার্কাসের সিংহ - মৃত্যু আর বিনাশের কালে সমুদ্রের লবণজলে যখন চাঁদ ওঠে - সহমরণের চিতা শুকনো বাঁশপাতায় ভরে ওঠে আর অই দিকে নবনির্মিত আশ্রমে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রশ্ন ছিলঃ সাংসারিক জ্যোৎস্নায় গৌতম কেন ঘর ছেড়েছিল? গৌড় থেকে বাংলা - আমিও প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলামঃ ধ্বংস ও সূর্যোদয়ে কেন এতো চিত্রার্পিত রেখা ও রঙের সংমিশ্রণ?উচ্ছ্বিষ্টাবৃত কবরে অর্ধসত্য ঘুম - কোন নিয়তি গভীর খাদে এনে ফেলেছে - খনিজ ধাতু বা ক্রিয়াশীল অনুঘটকে যা কিছু জারিত - হিংসার অবলীঢ় তাপে গলে গেছে হৃদযন্ত্র - প্রতিফলনের নিয়মে উদ্বাস্তু গৃহ রৌদ্রে পুড়ছে - দেয়ালে প্রতিপন্ন কবিতা ও এর অন্ত্যমিল - নদীর ওপারে কারা ছিল - এপারের বাসিন্দারা জলকলহের নীচে চাপা পরে আছে - সাঁকোহীন নদী,- ভাঙা পারের বিলাপ শুনি - করপুট ভরে জল নিই - জলের শীতলতায় হাড় কাঁপে - দূরে,জীবাশ্মের অন্ধকারে আগুনের শিখা - না-কি চিতা জ্বলে - সভ্যতার ।

জ্বালানী ক্ষত

সেই সমস্ত ডুমুরবনে আজ আর কোনো কাঠবিড়ালির বাসা নেই - উপদ্রুবময় জামের বাগানে সংঘবদ্ধ পিঁপড়ের সারি থেকে দিকভ্রান্ত ঘাসফড়িঙের গতি-প্রকৃতির যন্ত্রণাময় যে পথ নির্দেশিত ছিল আর যারা বেঁচে ছিল,- মৃতের সমান; শোধনাগারের দিকে ছুটছে-তাদের দুই পায়ে জ্বালানীর ক্ষত।ক্ষতবহ এবং অশনি ফসল-রুঢ় কষাঘাতে একাধারে তাপ ও বিদ্যুৎ - অন্যপাশে বৃত্তময় চাঁদ;এক্সসবাইকে ফেলে এগিয়ে চলেছে - বনমানুষের দল-সু-প্রাচীন মিথ, তমসাগানে মুখর রাজপথ-চিহ্নিত সমুদ্রপথ, পশ্চিমের ঘাটশীলা এবং বনের গভীর অন্ধকার ছিঁড়ে ফিরে যেতে আত্মরতিপূর্ণ যৌবনের দিকে । যৌবন ও ক্ষুধা, কুয়াশাঘন আলোকবিন্দু, ফুল ফোটানোর আগে এবং যৌনতার কালে বিপরীত,প্রতিদ্বন্দী বোধে একসাথে প্রসারিত যোনী ও আর হাঁ করা মুখের গ্রাস - নির্বেদ শূন্যতা ঝরে পড়ে পীতাভ নাভির মধ্য থেকে । ২. পাতা ঝরা হেমন্তের রিক্ততার শোক ভুলে যারা আধখানা ডাল ভেঙে পথে নেমেছে - মন্থরগামী কাল,- বিস্ময় চিহ্নের মতো চৈত্র-ফাল্গুনে চোখের নীচে নড়ে ওঠে । মাটির শুকনো পথ,নড়বড়ে সাঁকো পার হয়ে নদীর ওপাড়ে আবাস গড়েছে - নিদ্রাটিলা ও জটিল-জটা অক্ষরের ভাবগম্ভীর লেখায় অবিশ্বাস করতে শিখেছে - অবলীলায় মহাবিষুব রেখা মুছে দিয়ে গ্রন্থের মলাটে ঔষধির ক্ষেত আর মহা শ্মশানের ছাই - বেতগাছের দোলনা - তাতে হাজার শিশুর দোলা....। দিনের উপান্তে কারা শুয়ে আছে ভূ-গোলের খোলা মাঠে?