Powered By Blogger

শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

রহমান হেনরীর 'আদোনিসের কবিতা':উত্তরাধুনিক দৃষ্টিতে

কবিতার কোন অনুবাদ হয় না,বড়জোর তাকে ভাবানুবাদ বলা যেতে পারে। এক ভাষা থেকে আরেকভাষায় ভাষান্তরিত করা নিঃসন্দেহে একটি দূরহ সাহিত্যকর্ম।বিশেষতঃ কবিতার ক্ষেত্রে।এটা কেবল ভাষান্তর বা পূণঃলিখন নয়।মূল কবিতার ভাব অক্ষুন্ন রেখে পূণঃবিনির্মাণ;যাতে থাকে কবির মানস ও প্রকৃত অভিব্যক্তি।অনুবাদ কবিতা সম্পর্কে জাপানী কবিতার আলোচক হ্যারী গার্ষ্ট বলেছেন,মূল থেকে অনুবাদের দূরত্ব অনেক ক্ষেত্রে পরিমাপযোগ্য নয় কিংবা চীনা কবিতা বিশেষজ্ঞ আর্থার কুপারের মতে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কবিতা কোন সময়েই অনুবাদ করা যায় না । অনুবাদে সব সময়েই মূল কবিতার কিছু না কিছু হারিয়ে যায়।তবে '৯০ দশকের শক্তিমান কবি রহমান হেনরী তাঁর বাঙলায়নকৃত ( উল্লেখ্য বাংলা কবিতায় এটি একটি নূতন শব্দ;যা রহমান হেনরী ব্যতীত ইতোঃপূর্বে আর কেউ ব্যবহার করেন নি) আদোনিসের কবিতা কাব্যগ্রন্থে উচ্চারিত বক্তব্য ও পারি-পার্শ্বিকতার প্রতি দৃষ্টি রেখে বাঙলায়নকৃত কবিতাগুলোর মূল বক্তব্য ও বৈশিষ্ট্য স্বীয় প্রতিভায় ধরে রেখেছেন।

কবিতার কোন দেশ-কাল নেই।কবিতা স্বয়ম্ভু।অন্যান্য কবিতার ভাব,প্রকার,পকরণে ও পারস্পরিক রসায়নে আমাদের বাংলা কবিতাও অভিনব উপস্থাপন,বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট বক্তব্য ও নান্দনিকতায় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিশেষ স্থান ও উৎকর্ষের শীর্ষবিন্দুতে পৌছুবার অপেক্ষায় অপেক্ষমান।গত শতাব্দীর দু'দুটো মহাযুদ্ধ মানুষের চিন্তা ও চেতনার জগৎকে ছিন্ন-ভিন্ন করে দেয়।এ সময়ে ও পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতবাদ ও সামাজিক আন্দোলন বিশ্ব কবিতার ইতিহাসে রোমান্টিক ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে আধুনিকতার ভিত্তি স্থাপন করে দিয়ে বিচিত্রমূখী নিরীক্ষা ও কবিতা আন্দোলনের পথ খুলে দিয়ে এক নূতন দিগন্তের দরোজা খুলে নূতন নূতন তত্ত্ব ও কবিতা আন্দোলনের পথ গতিশীল করে তুলেছে।বিট সাহিত্য আন্দোলন,হাংরি জেনারেশন,কংক্রিট কবিতা আন্দোলন, সিম্বলিজম, মডার্নিজম,পোষ্ট মডার্নিজম,পোষ্ট স্ট্রাকচারালিজম,কিউবিজম,ভ্যাঙ্গার্ডিজম,দাদাইজম,সুরিয়ালিজম, প্রভৃতি আন্দোলন গড়ে উঠেছে দেশে দেশে।কবিতার এমন নিরন্তর পালাবদলে কবিতার নূতন আঙ্গিকতা ও বিকাশময়তার স্বচ্ছ ও পরিষ্কার ধারণার জন্যে বিদেশী বা আন্তর্জাতিক কবিতা পড়ার কোন বিকল্প নেই।উত্তরাধুনিক পৃথিবীর সূচনা শতকে একবিংশ শতাব্দীর কবি ও কবিতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্যে কবি রহমান হেনরী নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছর পরে 'দি সোসিও লজিক্যাল ইমাজিনেশন' বইয়ে সি.রাইট মিল লেখেনঃযাকে আধুনিক যুগ বলা হয় তার শেষে মানুষ উপনীত হয়েছে।অনন্ত 'পোষ্ট মডার্ন' বা বাংলায় যা উত্তর আধুনিক বা উত্তরাধুনিকতা এর সামনে উপস্তিত আমরা। আলোকপ্রাপ্তির যুক্তিবোধ আর শৃঙ্খল্মুক্তি এতোদিন যে উদারতা আর সমাজতন্ত্রের বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে আছে,আজ তার প্রয়োজন নেই। কিন্তু তারও আগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে অসওয়াল্ড স্পেংলার তাঁর ' দি ডিক্লাইন অব দি ওয়েষ্ট' বইয়ে লেখেন,পাশ্চাত্যের সভ্যতা আর তার মূল্যবোধ,দায়িত্ব এবং সংস্কৃতি দুর্গন্ধময় পচনে নিমজ্জিত।

এ রকম অস্থিতিশীল সামাজিক ও বৈশ্বিক পরিস্তিতিতে উত্তরাধুনিকতার উদ্দীপক প্রতিভূ জঁ-ফ্রাঁসোয়া লিওতার ' দি পোষ্ট মডার্ন' লিখে ঘোষণা করেন :মহা-আখ্যান ও পরা-আখ্যানের কাল শেষ।ওসব আখ্যানের বৈধতার প্রতিশ্রুতি লুপ্ত ও নির্বাপিত। উল্লেখ্য যে,এ মহা-আখ্যান/পরা-আখ্যান হলো কান্ট,হেগেল,মার্কসের দর্শন।

১৮৭০ সালে ওয়ট কিনস চ্যাপম্যান নামে এক চিত্রকর সর্বপ্রথম'পোষ্ট-মডার্নিজম' শব্দটি ব্যবহার করেন। তিনি ফরাসী ইমপ্রেশনিস্ট চিত্র অপেক্ষা আরো আধুনিক,আরো অভাঁ-গার্দ ছবির ক্ষেত্রে এই অভিধা প্রয়োগ করেন। তারওপ্রে ১৯১৭ সালে এসে Rudolf Pannwitz একটি বইতে নিহিলিজম ও সে সময়কার ইউরোপে সব মূল্যবোধ ভেঙ্গে যাওয়ার বিবিরণ দিতে গিয়ে তিনি শব্দটি ব্যবহার করেন।

রবীন্দ্র যুগের রোমান্টিক ধারার বিরোধীতা করেও তাঁর দৈশিক ও বৈশ্বিক ভাবনা,চিন্তন,মেধা ও মননশীলতা অনুসরণ করে বিশ শতকের প্রথমার্ধে কিছু তরুণ কবি নূতন ধারার এক কবিতা চর্চা শুরু করেন;যা আধুনিক কবিতা ( যার সূচনাকাল ১৯২৫ সাল)।এ আধুনিক কবিতার ফর্ম বা কনটেক্সট তড়তড়িয়ে এগিয়ে চলে অর্ধ শতাব্দী কালেরও কিছু বেশী সময়। তারপর বাংলা তথা বিশ্ব কবিতার ইতিহাস এক দীর্ঘ বাঁক নেয়;এর নাম উত্তরাধুনিকতা।এ উত্তরাধুনিক শব্দটি সম্পর্কে অনেকের দ্বিমত,বিভিন্ন তাত্ত্বিকের নানাবিধ বিশ্লেষণ,এর সার্বজনীন ব্যাখ্যা বা গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে নানা তর্ক-বিতর্ক প্রতিনিয়ত চলে আসছে এবং প্রায় তিন দশক কালেরও অধিক সময়ব্যাপী হয়ে এল এ তর্কের মীমাংসা এখনো শেষ হয় নি অর্থাৎ আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি কবিতার অবস্থান;আদোনিস স্পষ্ট মন্ত্রোচ্চারণ করেন :

তোমাদের এ ভাষায় কথা বলে না সে।
চেনে না,নিষ্ফলা-পতিত ভূখন্ডগুলির কন্ঠস্বর---
পাথুরে ঘুনের কর্ণকুহরে আগাম-নিগুমের বয়ানকারী,
অনাগত-সুদুরের অজস্র ভাষায় ভরপুর সে।

এখানে,এই ধ্বংশস্তুপতলে সে এলো
অভিনব শব্দাবলীর সুবাতাস বইয়ে দিতে,
সে,তার,ঘষাঁমাজাহীন অথচ চকচকে পেতলের পাতের মতো
কবিতাবলী,তুলে ধরছে মর্মাহত বাতাসের উদ্দেশ্যে

মাস্তলে মাস্তলে অভাবনীয় স্ফুলিঙ্গ-উদ্ভাসনের ভাষা,
অশ্রুতপূর্ব শব্দাবলীর নকীব,সে।
(নতুন নিয়ম)

মানুষ স্বভাবতঃই ক্ষমতালিপ্সু।সেই প্রস্তরযুগ থেকেই মানুষ সুযোগ পেলেই অন্যের ওপর প্রভাব বা আধিপাত্য বিস্তার করে অন্যকে নিজের অধীন করে নিচ্ছে।এতে খর্ব হচ্ছে ব্যক্তি-স্বাধীনতা।আর এই স্বাধীনতা বিপন্ন হচ্ছে ক্ষমতার দ্বারা ফলে সৃষ্টি হচ্চছে ক্ষোভ, তৈরী হচ্ছে দ্বন্দ্ব,ব্যক্তি-স্বাধীনতা বিপন্ন মানুষের মনে।ব্যক্তি-স্বাধীনতা বিপন্ন মানুষ সচেতন তার এই স্বাধীনতাহীনতায়।উত্তরাধুনিকতার ভালো দিকগুলোর একটি হল ব্যক্তি-স্বাধীনতার প্রশ্নটিকে একেবারে সামনে নিয়ে আসা।কর্তা ও অবনত পক্ষের দ্বন্দ্ব সম্পর্কে তারা সচেতন।উত্তরাধুনিকেরা মনে করেন ক্ষমতা মাত্রই দুঃশাষনকারী।ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ তথা রাষ্ট্রকে অপ্রয়োজনীয় করে তোলা তাদের লক্ষ্য কিন্তু বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতার রুপান্তর ঘটাতে তারা চান না।তাদের লক্ষ্য স্থির ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু নয়,পরিধির মধ্যে প্রতিরোধ করে ক্ষমতাকে দুর্বল করে ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে গুরুত্ববহ করে তোলা :

দুনিয়াটাকে মুক্ত করে দিলাম আমি আর কারারুদ্ধ করলাম সাত আসমানকে
আলোর প্রতি বিশ্বস্ত থাকবো বলে লাফিয়ে নামলাম;দুনিয়াকে দ্ব্যর্থক,
মনোমুগ্ধকর,পরিবর্তনীয় আর বিপজ্জনক করে তুলবো বলে,প্রচলিত
পদক্ষেপের বাইরে নূতন এক পদযাত্রা ঘোষণা করবো বলে,লাফিয়ে নামলাম।
.............
..........
(জগতের প্রান্তসীমায়)

আমরা বাস করছি উত্তরাধুনিক বিশ্বে।সময়ের সাথে সাথে পালটে গেছে চিরাচরিত লোকায়তপ্রথা,বিশ্বাস ও  বিশ্বও।আমাদের চিন্তা,চেতন ও মননকে নাড়া দিয়ে যায় মিশেল ফুকো,জ্যাক দেরিদা,রোঁলা বার্ত,লেভি স্ট্রস প্রমুখ চিন্তাবিদদের ভাবনা ও তত্ত্ব। উত্তরাধুনিকতার মূলমন্ত্র হল সৃজন নয়,বিনির্মাণ।উত্তরাধুনিক পূর্বকালে পাঠক ছিল লেখকের আজ্ঞাধীন কিন্তু এখন লেখক নয়,পাঠ ও বিষয় পাঠকের হাতে।আর এই মননজগতের নূতন ভাষা,'পাঠকৃতি';যা গড়ে উঠেছে বিখ্যাত ভাষাতাত্বিক ফার্দিনান্দ দ্য সোস্যুরের ভাষাতত্ত্বকে ধারণ করে।একবিঙ্গশ শতাব্দীর মানুষ কেবল অর্থনীতি বা যৌনের দ্বারা শাষিত নয় বরঞ্চ নিয়ন্ত্রিত ভাষার দ্বারা:

উত্তরাধিকার জ্বালিয়ে দিচ্ছি আমি,বলছি,
''অপ্ত্য-অক্ষত' এ ভূমি আমার যৌবন এখানে কোনও কবর ছিলো না''।
ভগবান ও শয়তান উভয়কে ছাপিয়ে উঠছি
(আমার চলার পথ ভগবান ও শয়তানের পথভূক্ত নয়)
আমি আমার কেতাবের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি,
বজ্রের দীপ্তিময় শোভাযাত্রার ভেতর দিয়ে,
সবুজ বজ্রের শোভাযাত্রার ভেতর দিয়ে
যেতে যেতে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছিঃ
''আমার পর এখানে থাকবে না কোনও বেহেস্ত,থাকবে না স্বররগচ্যুতি''
আর আমি মুছে দিয়ে যাচ্ছি পাপের ভাষাগুলি
(পাপের ভাষা)

উত্তরাধুনিকতার অন্যতম লক্ষণ হল self-reflexiveness  বা আত্ম-প্রতিফলনঃ

২.
যদি আবারও শুরু হতো নতুন সময়,
আর জলরাশি হু হু করে ছুটে আসতো জীবনের মুখে,
আর কেঁপে উঠতো দুনিয়া,এবং যদি এমন হতো যে,খোদা তা'আলা
ত্বরিত সিদ্ধান্তে,অনুময় করে বলতেন আমাকে,''নূহ,প্রাণীগুলোকে বাঁচাও।''
সেই অনুরোধে কর্ণপাত করতাম না আমি।
আমার জাহাজটি চালিয়ে দিতাম,মৃতদের চোখগুলো থেকে
কাদা ও নুড়ি সরিয়ে সরিয়ে
তাদের ভেসে যাবার পথ সচ্ছন্দ করে দিতাম
আর তাদের শিরায়-ধমনীতে ফিসফিসিয়ে বলতাম,
উন্মত্ত বন্যতা থেকে ফিরে এসেছি আমরা,
বলতাম,গর্ত থেকে জেগে উঠেছি,
বলতাম,শতাব্দী প্রাচীন আসমানসমূহ পালটে দিয়েছি,
বলতাম,ভয়ের কাছে আত্ম-সমর্পন না করে,পাল তুলেছি---
বলতাম,ওই খোদার কথায় কান দিইনি আমরা।
বরং সাক্ষাৎকার-সূচি নির্ধারণ করেছি মৃত্যুর সাথে।
আমাদের গন্তব্য,সুপরিচিত সেই  নিরাশা-তাড়ানো উপকূলের দিকে
লৌহজলের বরফশীতল এক সমুদ্র পেরিয়ে
অপ্রতিরোধ্য,প্রায় শেষপ্রান্তে পৌঁছে গেছি আমরা,
সে খোদা আর তার কথাগুলোর কর্ণপাতহীন;
অন্য কিছুর প্রত্যাশায়,নতুনতর এক খোদার আশায়।
(নব্য নূহ)

কিংবা স্পষ্ট,সহক,সরল বলিষ্ঠ উচ্চারনঃ

যখনই বলিঃ
বয়স হয়ে যাচ্ছে আমার,অগ্নি যন্ত্রণার ক্ষতগুলো এসে ছিড়ে-খুঁড়ে ফ্যালে আমাকে,
প্রবল এক শঙ্কা শিহরণ ঝাঁকুনি দেয় মনে,
তারপর,ভোরবেলাকার তারুণ্যদীপ্তি এসে
আমাকে পরিয়ে দেয়
তার বেশভূষা।

নীৎসে ঘোষণা করেছিলেন ঈশ্বর মৃত্যুবরণ করেছেন অর্থাৎ রঙ্গমঞ্চে নায়কের আর প্রয়োজন নেই।দর্শকদের মধ্য থেকেই উঠে দাড়াঁতে হবে নায়ককে অর্থাৎ ঈশ্বরের স্থান পূর্ণ করবে মানুষ,অতি মানুষ।য়্যুরোপে রেনেসাঁর কাল হল মানব জাগরণের, মানবমুক্তির। মানুষ যে শুধু ঈশ্বরকে অস্বীকার করা শুরু করল শুধু তাই নয় তাকে অপ্রয়োজনীয়,বাতিল বস্ততে পরিণত করে মানুষ নিজেকেই ঈশ্বরের স্তরে উপনীত করে ফেলল।অপার সম্ভাবনাময়ী মানুষ নিজেই তার সৃজনশীলতা দিয়ে বিনির্মাণ করবে মহাকাব্যেরঃ

শব্দহীন আর্তনাদের মতো,নিরস বায়বীয় স্বরে
আদম আমার কানে মুখ রেখে বললোঃ
''জগতপিতা নই আমি,
বেহেস্ত আমি চোখের দেখাও দেখিনি।
স্রষ্টার কাছে নিয়ে চলো আমাকে''

কিংবা

................
................
আমাদের ভূ-খন্ডে ছিলো এক ঈশ্বর
কিন্তু আমরা পরিত্যাগ করেছিলাম তাকে
যখন থেকে সে নিজেই একটা দূরত্ব রচনা করেছিলো
আমাদের সাথে।
তার পশ্চাৎদিকে,আমরা পুড়িয়ে ফেলেছিলাম
মোমের মন্দির আর বলিদানের রীতি।
আর অবিদ্যামানতার ভেতর থেকে
গড়ে-পিটে বানিয়েছিলাম ধূলির এক দেব প্রতিমা
এবং বিদ্যমানতা দিয়ে তাকে করে তুলেছিলাম পাথর প্রতিম
নতুন সেই এক পথ যা সুচিত প্রায়।
আহ,পথ,যা অসীকৃতি জানায় সূচিত হতে।
(একটা পথ)

বিনির্মাণ বা de-construction এর নিকটতম শব্দ বিশ্লেষণ বা  analysis.জ্যাক দেরিদার বলেছেন,....পাঠকৃতির মধ্যে নিজস্ব নিয়মেই তৈরী হয় তার অনুবিশ্ব এবং সেই অনুবিশ্ব সমগ্রের স্মৃতি নিয়ে জেগে থাকে যে সব টুকরো টুকরো চিহ্ন বা স্মারক,বিনির্মাণের ধারায় তাদের ওপর সমীভূত হয় মননশীলতার আলো অর্থাৎ এ সব পাঠে আপাত প্রচ্ছন্নতার চূর্ণভষ্ম থেকে উঠে আসে এক সমগ্রের উজ্জ্বল আলোকিত মিনারঃ

পৃথিবীর ভেতরে একটা দুয়ার খুলে দিই
আর স্থাপন করি বিদ্যমানতার গনগনে শিখা
পরস্পরকে আড়াআড়ি ভেদ করে যাওয়া কিংবা আকাশময়
পথনিশানার মত ছুটন্ত ওইসব মেঘেদের মধ্যে
সমুদ্রে এবং তার মোহময় ঢেউগুলি জুড়ে
পাহাড়ে পাহাড়ে আর তাদের বনভূমিময়
আর পাথর ও শিলাখন্ডগুলোর অন্দরে
গর্ভবতী রাত্রিগুলোর জন্য
একটা জন্মভূমি বানিয়ে
শেকড়-বাকড়ের ছাইভস্মে
সঙ্গীতময়তার খোলা যত প্রান্তরে প্রান্তরে
বজ্রধ্বনি ও বজ্রপাতের ভেতরে
এবং এইসব অগ্নিকে খেতে দিই
যুগ-যুগান্তের মমিগুলো।
(বিদ্যমানতা)

উত্তরাধুনিক ভাববাদী কল্পণার নিগূঢ়ে আবদ্ধ নয়,বীক্ষণ আর অন্তঃবীক্ষণের কৌশলে ঐতিহ্য,চিন্তা,চেতন ও মননে চির সম্প্রসারণশীল এক অসীম সৌন্দর্য্যের আধারঃ

পরিভ্রমণরত
অথচ থেকে যাচ্ছি স্থির।
ও সূর্য্য,
কী প্রকারে তোমার পদচারণের
সমকক্ষ হয়ে উঠবো আমি
(পরিভ্রমণ)

উত্তরাধুনিক কবিতার অন্যতম দাবী pluralism বা বহুরৈখিকতা।একরৈখিকতার কেন্দ্রকে গুড়িঁয়ে ভাষার এক অনির্দিষ্ট যাত্রায় উত্তরাধুনিকতা:

উপাসনা করছি এই শান্তিময় পাথরের
ঘর প্রস্ননমুখে চোখ রেখে আমি দেখতে পাই
নিজের মুখটি
আর আমার হারানো কবিতাবলী
(একটা পাথর)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন