Powered By Blogger

বুধবার, ৯ মে, ২০১২

আল মাহমুদ

জন্মের শুদ্ধতা লীন দ্বি-প্রহারিক স্নানের সাথে সাথে
বিশুষ্ক বিকেলে অতি-প্রাকৃত পাথরের ভাষার প্রার্থনা নিষ্ফল
যখন আত্মা কিনে নেয় শয়তান

বরঞ্চ বেরিয়ে এসো অনাঘ্রাতা কুমারীর নাভীমূল ছিঁড়ে
যীশুর পবিত্র অবয়বে।

ভূ-খন্ড নয়,হৃৎপিন্ড ভাগ করে

কতদিন কবিতা লিখি না গুনে গুনে
একলক্ষ চব্বিশ হাজার দাগে একশ চারটি
জীর্ণ প্যাপিরাস পুঁথি ছুড়ে ভূগোলের চোরাপথে
দেখি দুর্ধর্ষ বেদুঈন সাম্যের পতাকাতলে
নির্ধিদ্বায় মানচিত্র দখলের মহোৎসব
পাকা,সিদ্ধহস্ত ধর্মচ্যুতে
ইতিহাসের পাতায় জমে থাকা চাপ চাপ রক্তের ওপর
স্পষ্ট সতেরো অশ্বের ক্ষুরধ্বনি মদ্যপ নবাব সমর্পিত
অবিশ্বাসী সেনাপতি দাসখত লেখে
সাম্প্রদায়িক বিভেদে নির্মিত বার্লিন প্রাচীরের
মতোন ভূ-খন্ড নয়,হৃৎপিন্ড ভাগ করে

সাম্প্রতিক কবিতাঃরেজওয়ান তানিম

কবিতা হচ্ছে কবিমনের হৃদয়াবেগ-অনুভূতির সুতীক্ষ্ম প্রকাশ,অবচেতন মনের অবিরাম ক্রিয়ার ফল।ব্যক্তিমাত্রেই নিজমনের অবচেতন মনের ভাব জানতে পারেন।মানবীয় অস্তিত্বই অবচেতন মনের সমষ্টি।মানব চেতন মন ন্নিরন্তর প্রস্তুতির মাঝে বিরাজ করে তাহলে অবচেতন মনের প্রধান ও তাৎপর্য্য ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ করলেও করতে পারে।কবি রেজওয়ান তানিম তাঁর কাব্যগ্রন্থ 'মৌনমুখর বেলায়' ঠিক এমনভাবেই তাঁর অনুভূতিগুলোর অভিব্যক্তিগুলোর প্রকাশ ঘটিয়েছেনঃ

বিষাদের পপলার পাতা গুলো
অশ্রু লুকায়, ঝরে পরে
মুচমুচে পাপড় হয়ে , প্রতিটি
শীতের শিশির আসবার আগে । 

প্রাণের প্রাচুর্যে পূর্ণ হৃদয়,
নি:শেষ হয় একদিন, শুষ্কতার সঙ্গমে ! 
তার পরিনতি বিদ্যমান, ছোট্ট অথচ,
 প্রবাহিত অর্থবহ জীবনে ।
(বিষাদ দিনের কথা)

এটা ঠিক চূড়ান্ত হতাশ নয়,সৃষ্টি করতে না পারার হতাশা।কবি রেজওয়ান তানিম  তাঁর 'জন্ম ও মৃত্যুবিষয়ক' কবিতায় আশাবাদী প্রত্যয়,সৃষ্টিশীলতার আনন্দে ঝলমলে উচ্ছ্বাসঃ

রাত্রি দুটো । বিকাশমান অন্ধকার চিরে,
একটি সার্থক কবিতার জন্মতিথি
অবলোকনেচ্ছায়, সন্ধ্যা লাগার পর থেকে
জানলার ধারে আমার, বসে আছে -
বুড়ো চাদটা ! গগন ছাওয়া অনাঘ্রাতা

শরতের মেঘেরা,তার চোখের উপরে
প্রলেপ দিয়ে দিলেও,মন ছিল উত্তরের জানলায় ।


কানে কানে শুধোয় বারবার,
 উল্লাস আর সুতীব্র চিৎকারে ভরবে কি এ ঘর?
 রোশানাই জলবে কি জন্মোৎসবে, একটি 
 কালোত্তীর্ণ কবিতার জন্মে ?
 নির্বাক আমি, লিখে গেছি আপনমনে ।
পড়ার টেবিলে ছড়ানো কাগজের মাঝে,
ঝরণা কলমের আকি বুকি চলছে নিরন্তর ।
কবি, আমি থাকি পাশে মৌনতা ভঙ্গ হয় না আমার । দৃষ্টি চলে যায় 
টেবিলের পাশে ওয়েস্ট বাস্কেটে ।
আমায় অনুসরন করে পঞ্চমীর চাদ ।
চন্দ্রালোক ছড়িয়ে পরে মুঠি মুঠি 

করে ফেলে দেয়া শক্ত অফসেটের উপর । 
ক্রন্দনরত অন্ত সত্ত্বা আমার,
বলে ধরা গলায়- দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দেয়া,
অগ্নিস্পর্শে ভষ্মীভূত হয়ে যাওয়া এই সব কাগজেরা ;
সদ্য মৃত এক একটি কবিতার লাশ বহন করে ।
এখনো দেহে তাদের মৃত্যু যন্ত্রনার ভয়াল ছাপ ! পুড়ে  

অঙ্গার হয়ে যাওয়া- এ অস্থি,
চর্মহীন রক্তাভ দেহের পদ্য গুলো ; ব্যর্থতা আমার ।
এরা কবিতা নয় ! এরা আমার সন্তান ।
তবু নিজ হাতে গলা টিপে হত্যা করেছি আমি ।  
মৃত্যু নিশ্চিত করেছি- শ্বাসরোধ করে
করা মৃত্যুপথযাত্রী ঘো ঘো
শুয়োরের- কসাইছুরির তলে যে কর্ণবিদারী আর্তনাদ,
তার থেকেও প্রবল মরণ যন্ত্রণার অশেষ চিকার
আরো নির্মম করেছিল আমায়,  
এখনো কানে বাজে- করুণ আর্তিটুকু !
এর পরেও হে সৌম্য সুন্দর চাদ
অদ্ভুত আনন্দ ভরা জন্মোৎসব,
দেখতে চায় স্নায়ু তোমার ?
কুহকী চন্দ্রকিরণ ম্লান হয় ।
নিশ্চুপ আমাকে ফেলে, চলে যায় কিছু না বলে !
আবার ডুব দেই মগ্নতায় ।
নগ্ন নির্জনতা- আগুন ধরায়- দেহে মনে ।
মাথায় শুরু হাজার শব্দের বিভীষিকা, যুদ্ধ !
পঙতির পরে পঙতি, শব্দের বুকে শব্দের মিলন,
অণুরণন তোলে সাইক্লোনের মতন ।
চোখ দুটো বুজে আসে ব্যাথার তীব্রতায় ।
মস্তিষ্কের ছোট্ট গ্রন্থিটা এখন দারুণ সচল ।
ঢেলে দিচ্ছে সঞ্চিত জ্ঞাণের সবটুকু ।  
আযানের ধ্বণি, বেজে ওঠে হঠাৎ ভোরের পূর্বাভাস ।
কবিতা বেড়োয় সদ্য 

মাতৃ জঠর ছেড়ে ।
আশ্রয় নেয়,শক্ত সাদা কাগজের জমিনে ।
অতৃপ্ত কবি হয় শান্ত; কবিতা জন্ম নিয়েছে বলে ।
বিশ্ব চরাচর মগ্ন ঘুমে চাদ নেই আকাশের কোনখানে ।
অদ্ভুত শূন্যতা, গ্রাস করেছে সব,
কেউ নেই জন্ম সংবাদ দেবে তাকে ।

একাকীত্ব ও শূন্যতার হাহাকারে জর্জরিত আধুনিক বিদগ্ধ মানুষ।পরিবার,স্বজন ও প্রেম বিচ্ছিন্নজাত যন্ত্রণা কবি মানস কুঁরে কুঁরে খায়।সভ্যতার ক্রম-বিবর্তনে সৃষ্ট শ্রম ও জীবন  ধারণের জটিলতা মানুষকে করেছে সমাজ,পরিবার ও প্রেম থেকে বিচ্ছিন্নঃ

.................................
কি যে লিখুম তোরে, বুঝবার পারতাছি না !
চিডি লিখতে বইলেই,
তোর কথা মনে আহে খালি । মাথার মইদ্যে
কেবল, পাক মারে ভালবাসার চক্কর ।
সারাডা দিন তোরে দেখবার মন চায় ;
ছয়..ডা মাস ! তোরে দেহিনা চোহের দেহা-
দেহিনা তোর হাসি । ভাবতেই খা খা কইরা উডে,
পাষাণ বুক খান আমার । তুই,
কেমন আছস রেবতী?পিয়ারী আমার,
(রেবতী, আমি আইতাছি এই ঈদে)

নিমূর্ত প্রেম আর মানবীর প্রতি প্রেমে কবির হতাশা,বেদনা,নৈরাশ্য,গ্লানিতে কবি জর্জরিত হয়ে পড়েছেন।বিচ্ছেদ যন্ত্রণা,অপ্রাপনীয়তার হাহাকারে কাতর কবির সত্ত্বাকে রক্তাক্ত ও ক্ষত-বিক্ষত করে তুলেছে।নিঃসীম শূণ্যতা,একাকীত্বের জ্বালা,যুগ-মানসের সংকট,প্রেম-বিচ্ছিন্নজাত অভিঘাতে কবি গেয়ে ওঠেনঃ

................................
আমার রক্তের প্রতিটি শ্বেত কণা, অণুচক্রিকার প্রাত্যহিক প্রার্থনা বেদনার মঞ্চে। ভ্রান্তিবিলাসী হয়ে ছটফট করি প্রতিফলিত সূর্যালোকের রাতে, হেমন্তের উর্বর গর্ভবতী বিকেলে! আমি কাঁদতে থাকি ঝুমবরষারয়, মৌনতার অদ্ভুত মুখরতায়। স্মৃতির পাতারা, তোমরা আমাকে পূর্ণ করেছ জমাট কষ্টের সিম্ফনী দিয়ে। কোন সুখ, কোন আনন্দ এমনকী জনাপাচেক লোকের কোলাহল উপভোগের সুখটুকু, বিনষ্ট করেছ ফালি ফালি করে কেটে। এখন আমার আর দু:খ চাষের কোন বর্গা জমি নেই, তাই বলছি তোমাকে- বেচে থাকাটা খুব সহজ, যন্ত্র হয়ে, শাদা কালো স্বপ্ন বিসর্জনে, আলো-ছায়া আবেগ ছাড়া জড় দেহের পার্শ্বস্থ বৃদ্ধি নিয়ে। 
(বিচ্ছুরিত বিষাদ কণা)

কবির হৃদয় হচ্ছে উর্বরা ফসলী জমি।পূর্বসুরী কোনো কবির লেখার একটি বাঁ দু'টি লাইন বাঁ স্তবক যখন অন্য একজন কবির মনে ধ্বনিত-প্রতিধ্বণিত হতে থাকলে অনেক সময় সেই অবচেতন-অনুকম্পন থেকে শুরু হয় নূতন একটি কবিতার বীজ সৃষ্টির প্রক্রিয়ার,জন্ম নেয় নূতন একটি কবিতাঃ

এই খানে নেমে এসেছে, শশ্মানের শব পোড়ানো রাত্রির মতন-
অদ্ভুত ক্লান্ত নিস্তব্ধতা । মৃত্যু এখন তার শীতলতা নিয়ে;
হয়ত ঘুরছে আমাদের আশেপাশে। হয়তবা দেহান্তরের খেলায়,
লীন হবে পরম সত্ত্বা কোন। অন্ধকার আমাদের অবসন্ন করে,
নিয়ে যাবে বিনাশের কাছে । ভূষা কালি বা কয়লার মতন
অসভ্য এই রাত; কিশোরীর ঢেউ খেলানো খোলাচুল কিংবা
উঠতি বুকপাহাড়ের খাজের মতন দৃষ্টি সুখের নয়।
(মৃত্যু)

অন্তর্গত উত্তাপধারী কবি রেজওয়ান তানিম নমনীয়,সর্বজনবোধ্য ভাষাতেই কবিতার দৃঢ় বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেনঃ

জমাট নির্জনতায় জড়ানো আজকের এই
নিশীথের শেষ প্রহর । ভূতুড়ে কেমন এক  
অনুভূতি ছড়ায় এই আমাতে।  
বসে আছি আমি পার্কের বেঞ্চিতে
কৃষ্ণপক্ষের গোল রূপোলি চাঁদ-আমার পানে চেয়েছে
বিষন্ন দৃষ্টি মেলে। অবাক হয়েছে হয়তবা
উদভ্রান্তের মত নিজেই আমি নিজেকে দেখছি বলে।
ওতো জানে না হিংস্রতা আমার
ঢেকে গেছে জ্যোছনাধারার স্নিগ্ধতায় !
ঘুমিয়ে পড়েছে যান্ত্রিকতা যত শহরের,ব্যস্ততার মুখোশ 
ঝেড়ে ফেলে শান্ত এখন ঢাকা ।
ঘুমন্ত গাছেরা এখন, স্বপ্নে হয়ত আকঁছে
অব্যক্ত কথার ব্যক্ত চিত্র রূপ,সুর ভাজে নতুন গানের।
(আজ রাত্রে)

ভাববাদী দর্শনের প্রভাব এবং ফল্গুধারার তানিকবি রেজওয়ান তানিমের কবিতার অন্তঃসার।তীক্ষ্ম ইন্দ্রিয়বিলাসী কবির কবিতায় বিলাস প্রকটভাবে ফুঁটে উঠেছে।শব্দ-রুপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ তাঁর কবিতার অবয়বে আভা বিজাড়িত হয়ে রয়েছে।তিনি সমস্ত ইন্দ্রিয়কে প্রস্তুত করে ধরে রেখেছেন যেন কোন মুহূর্ত বাদ না পড়ে।দিন-রাতের মুহূর্তগুলো তাঁর কবিতার বাগানে বিচিত্র বর্ণ ফুল হয়ে ফুঁটে উঠেছে দূরন্ত আবেগ প্রকাশের পরিমিতির পবিত্রতায়।মর্ত্য প্রীতির আসীম কামনার বিহবল সৌন্দর্য্যবোধ চরমভাবে বিকশিত তাঁর কাবিতায়ঃ

নির্লিপ্ত আহ্বান করে যায়, আমাদের ক্লান্ত কটি প্রাণ !
বিশ্ব চরাচর অন্ধকার হয় তাই, নিকষ রাত্রির মাঝে ।
চলে নিদ্রায়জন, দিবা নৃত্যের শেষ মুদ্রা, ভুলে যায়
মানবেরা। বিছানায় পতন ঘটে নিদ্রালু সব জড় দেহের,
জেগে থাকে বুড়ো পৃথিবীটা তবু। অবাক প্রত্যাশা তার
ক্লান্তি হীন, সূর্য উদয় দর্শনে। রাতজাগা শ্রমিকের
দল, সদা ব্যস্ত নিশাচরের মত। অসামাজিক কত
হায়েনাদের ভিড়ে, হারিয়ে যায় যত রক্ষীর দল। নিভে
আসে ম্লান লণ্ঠন তাদের। বিশাল আয়োজনে রাতের,
 শ্বাপদেরা নিশ্চুপ, নির্ঘুম ।
                 মৃত্যু শাশ্বত তাই, ঘুম নয়;
উপলব্ধি আমার। ঝুলে থাকা হিম রক্ত, দেয়াল বাসী
হলদে প্রাণীটিও সম্মতি জানায়, চিরচেনা টিকটিক শব্দে ।
রাত্রিকালীন সভায় মত্ত হয়, পাড়াতো সারমেয়োর দল ।
চালায় অন্বেষণ রাতের খাবারের, দু শূড়ো আরশোলার
দল । হয়ত বাছারা জানতে চায়, শুধু খাবারের সন্ধান ।
না পেলেও ক্ষতি নেই, খেতে দেবে নিজের কাইটিন খোলস ।
সব শেষে নীরব চারপাশ ; শব্দের খেলায় মত্ত কবির দল,
ডোবে নিস্তব্ধতায় । এই অদ্ভুত শব্দহীন রাত, ভয় জাগায়,
মনে হয় মৃত্যুর আদি দশা । ঘুম তাই মৃত্যুর পদধ্বনি নিয়ে
আসে। টুকরো মৃত্যুরা নিয়ে যায় পরম বিনাশের কাছে ।
(রাত্রির কবিতা)

সম-সাময়িক হলেই উত্তরাধুনিকতা হয় না।সম-সাময়িককে উপলক্ষ করেই আয়ত্ব করতে হয় আরেক মাত্রা।সময়ের বাঁক-স্পন্দনের পরশ ছুঁইয়ে দিতে হয় সব সময়ের প্রশ্নকে।সময়কে ছুঁইয়ে সময় পরিচ্ছিন্ন স্বাবলম্বন অর্জনের মধ্যেই থাকে উত্তরাধুনিকতা;যার সন্ধান সহজ নয় অথচ তার সন্ধান অন্বেষণই কবির কাজঃ

নিজেকে এখন গুটিয়ে নিয়েছি আমি,
ইদানীং বড্ড একঘেয়ে লাগে-
বন্ধু কিংবা চেনা জানা মানুষের ভীড়ে ।
এখন একা থাকি মাঝে মাঝেই, স্বেচ্ছা নির্বাসনে !
এই যেমন গত পাচ দিন ;
ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ি নিরুদ্দেশ যাত্রায় ।
কানাগলি পেড়িয়ে রেললাইনের ধার,
হাটতে হাটতে উপশহরের ছোট্ট কোন পার্ক,
কাদা জল মাখা গ্রামের পথে হেটেছি,
রোদ বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে । কোথায় ছিলাম
এতদিন, তাই বলা মুশকিল । এমনি করেই
হারিয়ে যাই বারংবার । আবার ফিরে ফিরে আসি !
তখনি ফিরে আসে লুকিয়ে থাকা
ইচ্ছেরা, আমার ভাললাগার নুড়ি পাথর গুলো-
তখনি মনে হয়, শুরু করি অধিকারের লড়াই ;
বুঝে নেই আমার প্রাপ্য টুকু কড়ায় গন্ডায় ।
ঢেকে দেই ব্যথর্তার কালি, উড়াই বিজয় নিশান ।
হা হা হা অর্থহীন সবকিছু ; তবু ভাল লাগে
এই লুকোচুরি । মূল্যহীন এ জীবনটা, মূল্যবান করার
প্রচেষ্টা চলে তখন ক্লান্তি হীন ।
..............................
..............................
এগিয়ে যাক সে ।পলি পরে
থেমে যাওয়া তার চরাচর উন্মুক্ত হোক
ভালবাসার পরশে ! আমি আছি এখনো
ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ স্বপ্ন নিয়ে । হয়তবা
একদিন শেষ হবে নিজের থেকে নিজের
পালিয়ে বেড়াবার খেলা ।
(নষ্ট ছেলের ইতিকথা)

বিশ্ব-প্রকৃতির অনন্ত সৌন্দর্য্য ও আনন্দ তথা প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক কবিতার এক ও প্রধানতম বিষয় কবি রেজওয়ান তানিমের।অপরাপর মানুষের জীবন ও প্রকৃতির এক আবেগমন্ডিত,আনন্দঘন প্রতিভাস মূর্ত করে তুলে ধরেন তাঁর কবিতায়ঃ

মায়াবী ভ্রমে মজে থাকা
ভ্রান্তিবিলাসী যুবক এক; লাল নীল
প্রজাপতির পাখনার নীচে
করেছিল রক্তবীজের
নীল নকশার সন্ধান ।
ডিম্ববতী মথেরা যখন, ডিমে তা দেয়;
প্রজাপতি পাখা মেলে ওড়ে
যুবকের মাথায় ঘোরে উড়বার
আরো প্রবল নেশা

অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে;
সে একদিন রূপান্তরিত হয় ।
দিঘীর জলে পা ফেলা শান্ত শাদা বকে ।
জীবনের জাগতিক যন্ত্রণার বিনাশ
তাকে মুক্ত করে । অপস্রিয়মাণ আলোয়
কুঁকড়ে যাওয়া শতপদীর
দু ফুট পথ অতিক্রমণ, আটকে
যায় সসীম-অসীমের দান্দ্বিক
বেড়াজালে পথের শেষ কোথায় ?
অমীমাংসিত অমূলদ সংখ্যার মত
সময়ের পূর্ণতা অপেক্ষমাণ মস্ত মৃত্যুর
হাতে । অদ্ভুত জীবনেরা তাই
আয়োজন করে পরম বিনাশের
চর্চিত অনুপান । অগোচরে টুকরো টুকরো
ক্ষয়, প্রোথিত করে- মহীরুহের বীজ ।
(অপেক্ষা)