Powered By Blogger

মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১০

'কবিতা' ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

রবিউল ইসলাম মানিক

'কবিতা' সাহিত্যের আদি ও প্রাচীনতম শাখা ।সকল ভাষারই প্রাচীন নিদর্শন হল 'কবিতা'।যিনি কবিতা লেখেন,তিনিই কবি।কিন্তু কবিতা?কবিতার অবয়ব কিংবা কবিতা কি?কবিতার প্রকৃত অর্থ কিংবা সংজ্ঞা কি? কবিতার ব্যাপকতার জন্যে আজ পর্য্যন্ত একে সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায় নি।একেকজন একেকভাবে কবিতাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন।তাদের সংজ্ঞা ও দর্শন যেমন যুক্তিযু্মানভাবে আবেগপূর্ন,তেমনি নান্দনিকতায় ভরপুর। জীবনানন্দের কাছে কবিতা ছিল অনেকরকম।বুদ্ধদেব বসু মনে করতেন,' কবিতা সম্বন্ধে 'বোঝা' কথাটাই অপ্রসঙ্গিক। কবিতা আমরা বুঝিনা, কবিতা আমরা অনুভব করি।'শামসুর রাহমানের মতে,'কবিতা আসলে বোধের ব্যাপার। একে সংজ্ঞা দিয়ে বোঝানো মুশকিল।'কবিতা বোঝার জিনিস নয়, অনুভবের, উপলব্ধির জিনিস'বলেছেন হুমায়ুন আজাদ। আবু হাসান শাহরিয়ারের মতে,'একেকজন কবির কাছে কবিতার অর্থ একেকরকম। তাই এ প্রশ্নের কোনও সরল একরৈখিক উত্তর নেই।'বোদলেয়ার কবিতাকেই কবিতার শেষকথা বলে মনে করতেন।রবার্ট ফ্রস্ট'র কাছে কবিতা হল পারফরমেন্স ইন ওয়ার্ডস।কোলরিজের কাছে 'গদ্য মানে সর্বোৎকৃষ্টভাবে সাজানো আর পদ্য হল সর্বোৎকৃষ্ট শব্দ সর্বোৎকৃষ্টভাবে সাজানো।'কীটস মনে করতেন,'কবিতা মুগ্ধ করবে তার সুক্ষ্ম অপরিমেয়তায়,একটি ঝংকারে নয়।পাঠকের মনে হবে এ যেন তারই সর্বোত্তম চিন্তা যা ক্রমশঃ ভেসে উঠছে তার স্মৃতিতে।'এলিয়ট জানতেন,'কবিতা রচনা হলো রক্তকে কালিতে রুপান্তর করার যন্ত্রণা।'মহান দার্শনিক এরিষ্টটলের কাছে কবিতা ছিল দর্শনের চেয়ে বেশী,ইতিহাসের চেয়ে বড়।' এয়ার্ডসওয়ার্থ বলতেন,'কবিতা সমস্ত জ্ঞানের শ্বাস-প্রশ্বাস আর সুক্ষ্ম আত্মা।'

এতো গেলো বোদ্ধা কবিদের অভিমত কিন্তু আমরা যারা কবিতার সাধারণ পাঠক!তাদের কাছে কবিতার স্বরুপ কিংবা অবয়ব কেমন? আমি বিশ্বাস করি কবিতা বোঝার বিষয় নয়,এটাকে অনুভবে আয়ত্বে নিতে হয়।আমার মতে কোন কবিই পূর্ব-নির্ধারীত পট-ভূমিকায় লেখেন না।স্থান-কাল,পরিবেশ কিংবা কবির হৃদয়াবেগ,অনুভূতি কবিতাকে শেষ পর্য্যন্ত কোথায় নিয়ে যাবে তা কবিতার স্রষ্টা কবি তা জানেন না।কেননা বেদনার্ত হৃদয়ই কবিতার জন্মভূমি কিংবা কবিতা কবিরই জীবনের প্রতিফলন। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যে ঘাত-প্রতিঘাত কবি তা নিজ হৃদয়ে ধারণ করে বা সহজ ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় ব্যক্তি বা সামাজিক জীবনের চিরকালীন হাসি-কান্না,আনন্দ-বেদনা,প্রেম-বিরহ,সামাজিক উৎসব,অনাচারই কবির কবিতার উপজীব্য বা পটভূমি।কবির কবিতার এ পটভূমি কোন নির্দিষ্ট গন্ডীতে আবদ্ধ থাকে না। এ পটভূমি কখনো কখনো ব্যক্তি কিংবা সামাজিক জীবনের গন্ডি পেরিয়ে যায়;পেরিয়ে যায় দেশ-মহাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে সমকাল-মহাকাল...ইতঃপূর্বে যা কখনো ছিল না বা নেই এমন কল্পরাজ্যও কবিতার পটভূমি__এভাবেই কবিতা হয়ে ওঠে সার্বজনীন।

আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শাদা চোখে যা দেখি কবিরা তা থেকেই জীবনের মৌল পাঠ গ্রহন করে থাকেন।অবারিত দিগন্তহীন প্রকৃতি কিংবা প্রাত্যাহিক জীবনের সুখ-দুঃখ কিংবা অপমান-লাঞ্জনা থেকেও দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহার্য্য শব্দাবলী ঘষে-মেজে তৈরী করেন কবিতার অবয়ব এরপর ছন্দ,কাব্যিক উপমা ও উৎপ্রেক্ষার শাব্দিক অলংকারে বিনির্মাণ করেন একটি কবিতা;যাতে থাকে কথা,বিচার ও তাৎপর্য্যের সমন্বয়।আমরা সাধারণেরা অভিধানের শব্দাবলী জীবনের প্রয়োজনে নিছক ব্যবহার করি কিন্তু কবির ব্যবহৃত আভিধানিক শব্দাবলী কবিতা প্রেমিকার মতো অঙ্গে ধারণ করে;এখানেই কবির স্বার্থকতা। আমরা দেখি হাইড্র্যান্ট উপচে ওঠা জল চেটে নেয় কুষ্ঠরোগী কিন্তু কবি দেখে,"হাইড্র্যান্ট খুলে দিয়ে কুষ্ঠরোগী চেটে নেয় জল;/অথবা সে-হাইড্র্যান্ট হয়তো বা গিয়েছিল ফেঁসে/(রাত্রিঃজীবনানন্দ দাশ)''কবিতায় ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দই একেকটি চিত্রকর্ম। উপমা,উৎপ্রেক্ষা, ভাবনা বা কবির বোধ,মননে,চৈতন্যে মুগ্ধতার আবেশ ও প্রকাশভঙ্গির কারণে কবিতা হয়ে ওঠে পরিপূর্ণ ও জীবন্ত। কবির বিমূর্ত ভাবনায় কবিতা কখনো কখনো নিছক প্রেমের কোমল অনুভূতি,বিরিহের বেদনা বিধুর কান্না,কখনো কখনো শোকাহত হৃদয়ের আর্তনাদ,কখনো কখনো বা অধিকার বঞ্চিত শোষিত-নিপীড়িত মানুষের মুখপাত্র,কখনো কখনো বা স্বাধীনতা মন্ত্রে উজ্জীবিত সশস্ত্র সৈনিক,কখনো কখনো বা সমকাল-মহাকালের প্রতিভূ হয়ে এসেছে কবিতা___এভাবেই কবিতা হয়ে ওঠে শাশ্বত।
কবিতা একটি স্বতস্ফুর্ত প্রণোদনা ;যা নিরন্তর সাধনার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়।'নিরন্তর প্রস্ততিই তাকে অবচতনে ভাবায়। বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার,নিজের সঙ্গে অন্যের, বর্তমানের সঙ্গে অবর্তমানের, সমকালের সঙ্গে মহাকালের  নিরন্তর মিশ্রণ ঘটে চলেছে কবি সত্তার অবচেতনে।মিশ্রণ যত বেশী নিরবিচ্ছিন্ন।কবিতাও তত বেশী মহার্ঘ্য।'...(কবিতার বীজতলাঃআবু হাসান শাহরিয়ার)।ভাব প্রকাশের  সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম হল 'কবিতা'। কেননা কবিতা এমন এক রচনা ;যা নান্দনিক ও শৈল্পিকতায় ভরপুর।কবিতার মাধ্যমেই একটি জাতির বুদ্ধিভিত্তিক স্ফুরন ও  মননশীলতার নিখুত চিত্র অংকন করা সম্ভব। কবিতা ছাড়া বুদ্ধিভিত্তিক স্ফুরন ও  মননশীলতার চিত্র অন্য কোন মাধ্যমে তা অপূর্নাঙ্গই থেকে যায়।কবিতার গতি অজেয়।কবিতার নিজস্ব একটি উচ্ছাস রয়েছে,রয়েছে স্রোত;যা দিয়ে কবিতা এগিয়ে যায় নিজস্ব নিয়মে পূরাতন এবং জীর্ন রীতি-নীতি পেছনে ফেলে।কবিতার এ স্রোত এমন অজেয় যা কখনো স্তব্ধ হবে না। জীবন স্তব্ধ হবে,কবিতা কখনোই নয়।চলার পথে কখনো কখনো  বাঁক নেয় কবিতা যা রবীন্দ্রনাথের ভাষায় 'আধুনিকতা'( যদি কখনও সুযোগ ঘটে তবে 'আধুনিকতাবাদ' নিয়ে পরে আলোচনা করবো)।কবিতা স্বাধীন,দূর্বিনীত ও স্বেচ্ছাচারী।কবিতা আভিধানিক শব্দ ও ব্যকরণিক শৃংখল থেকে মুক্ত।


স্বাধীন,দূর্বিনীত ও স্বেচ্ছাচারীতার কারণে কবিতা সর্বদাই আধুনিকতা ও ধর্মীয় ও রাজন্যবর্গের শাষণ-শোষণ ও অন্যায়ের প্রতিবাদে মুখর। আর তাই কবিতাকে প্লেটো থেকে শুরু করে প্রতিক্রিয়াশীল মোল্লা-পুরুত,যাজক ও রাজ রোষাণলে পড়তে হয়েছে বারংবার।কখনো কখনো রাজানুকল্য ও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীভূক্ত কবিও কবিতার বপক্ষে চলে যান।কিন্তু কবিতার ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই কবিতা কখনো অনাধুনিকতা কিংবা প্রতিক্রিশীলতাকে আকঁড়ে ধরে নি,বরাবরই তাকে পরিত্যাগ করেছে।প্রতিক্রিয়াশীল কবি আল মাহমুদের মতে,'প্রতিক্রিয়াশীলতাও কবিতা হতে পারে।'কিন্তু না,  কবিতার ইতিহাসে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে,পাঠকেরা প্রতিক্রিশীল কবিতা সব সময়েই বর্জন করে এসেছে।মানুষের ভেতরের শুভ আকাঙ্ক্ষা কখনোই প্রতিক্রিয়াশীলতাকে মানুষের জন্যে শুভ ও মঙ্গলজনক মনে করেন নি।প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর সমর্থক কবিরা সব সময়েই কালের বিচারে অপাংতেয় থেকে গেছে,কবি খ্যাতির পাশাপাশি তারা পাঠক কতৃক ধিকৃতও হয়ে এসেছেন।

বিচিত্র এ পৃথিবীতে মানুষ বিভক্ত নানান বর্ণ ও জাতিতে,বিভক্ত নানান গোষ্ঠীতে,বিভক্ত নানান ভাষা ও উপ-ভাষায়।কিন্তু সব জাতির,সব গোষ্ঠীর সব ভাষাভাষী মানুষের মৌল অনুভূতির ভাষা এক এবং অভিন্ন। বিমূর্ত ও শাশ্বত এ অনুভূতির মূর্ত প্রকাশই কবিতা। কবিতার এ মানবিক আবেদন সর্বজন বিদিত ও স্বীকৃত। পল সিলানের মতে,'কবিতা মৌলিক কথা বলে,এতে নিকট ও দূর একাকার, একদিকে সে  অন্ধকার আবার তা দূরের উজ্জ্বলতাও।

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে আমাদের সুন্দর বাসযোগ্য এ পৃথিবী একদিন ধ্বংশ হয়ে যাবে। বিজ্ঞানীদের মতে সূর্য্যের জ্বালানীর উৎস হাইড্রোজেন নিঃশেষ হয়ে গেলে পৃথিবী নামক এ গ্রহ টা ধ্বংশ হয়ে যাবে (আমাদের ভীত হওয়ার কোন কারণ নেই,এটা ঘটবে আজ থেকে ৮০০কোটি বছর পর);ততদিন পর্য্যন্ত বেচে থাকবে মানুষ,বেচে থাকবে তার মনের সু-কোমল অনুভূতি, আবেগ, সংবেদনশীলতা। ততদিন পর্য্যন্ত থাকবে কবিতা।দৈনন্দিন বা প্রাত্যাহিক জীবনের নানা ঘটনার টান-পোড়নে আন্দোলিত হয়ে কবি স্বীয় হৃদয়ে তা ধারণ করে সেই অনুভূতির প্রতিওফলন ঘটাবেন কবিতায়। সংবেদনশীল মানুষ পড়বেন সে কবিতা।

সবশেষে প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশের একটি উদ্ধৃতি  দেয়ার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। '......কবিতার ভিতর আনন্দ পাওয়া যায়;জীবনের সমস্যা ঘোলা জলের মূষিকাঞ্জলীর ভিতর শালিখের মতো স্নান না ক'রে আসন্ন নদীর ভিতর বিকেলের শাদা রৌদ্রের মতো;-সৌন্দর্য্য ও নিরাকরণের স্বাদ পাওয়া যায়।(কবিতার কথা)



শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১০

একজন বংশীবাদক

রবিউল ই. মানিক
(শাকিলা তুবাকে)


চিকন,নিক্কর এক বাঁশীর সুরে খান খান হয়ে ভেঙ্গে পড়লো
মাঝ্রাতের সূচিভেদ্য অন্ধকার।ভীত-সন্ত্রস্ত নগরবাসীরা
জানালার শার্সি দিয়ে দেখতে পেলঃ রঙচঙা আলখাল্লা পড়া দীর্ঘ,
কৃষকায়  একলোক বিশালাকার এক বাঁশী বাজিয়ে চলছে।
ত্রস্তা জননী সভয়ে ঘুমন্ত শিশুকে বুকে আকড়েঁ ধরে।

জমাট বাধা চাপ চাপ অন্ধকারের মধ্যে  বহুতল একটি ভবন থেকে
ছিটকে বেড়িয়ে এলো মোটা চর্বিওয়ালা থলথলে নাদুস-নুদুস এক পৌঢ়
হাফাঁতে হাফাঁতে বংশীবাদককে অনুসরণ করতে লাগলো;য্যানো
বংশীবাদককে অনুসরণ করা ছাড়া জীবনের আর কোন সারসত্য নেই।
ফ্লোরসেন্টের ভূতুরে-আবছায়া আলোয় নগরবাসীরা দেখলো,'এ তো সেই
লোক, যে কি না '৭১ এর মানবতা বাদী অপরাধে অভিযুক্ত।

বংশীবাদক মুনী-ঋষির নির্লিপ্ততায় বাজিয়ে চলছে তার বাঁশী।

পথ চলতে থাকা বংশীবাদককে ড্রেসিং গাউনের ফিতা বাধতে বাধতে
আরেকটি বহুতল ভবন থেকে আরেককজন অনুসরণ করতে লাগলো
প্রথমজনের মতোনঃনাগরিকেরা একে সনাক্ত করলেন রাজনৈতিক এ নেতা
দূর্নীতির অভিযোগে সদ্য জামিনে মুক্ত।বংশীবাদক রাজপথে অবিরাম বাঁশী
বাজানোর সাথে এগুতে থাকে। বাঁশী বাজানো কিংবা অন্তহীন পথ চলাতে
তার কোন ক্লান্তি নেই।অপার্থিব এ বাঁশীর সুরে বদ্ধ ফটক খুলে একে একে
বেড়িয়ে আসতে থাকে অগুনিত মানুষ।কেউ আসছে স্ত্রীকে ঠেলে ফেলে,
কেউ আসছে বুকে ঘুমন্ত শিশুকে সরিয়ে রেখে,কেউ আসছে মধ্যরাতের
সঙ্গম অসমাপ্ত রেখে,কেউ আসছে পরকীয়া প্রেমের নিষিদ্ধ আনন্দকে পায়ে ঠেলে,
কেউ আসছে মদিরার বোতল সরিয়ে রেখে।

কয়েক'শ মানবতাবাদী অপরাধী নয়তো ক্ষমতাসীন কিংবা ক্ষমতাহীন অসৎ
রাজনীতিকের মিছিল নিয়ে বংশীবাদক নগরীর আরেকপ্রান্তের ভরাবর্ষা,
স্ফীত নদীর তীরে থেমে দাড়াঁয়,তার ঝোলা থেকে মোষের শিঙ্গের মতোন
বাঁকানো কুচকুচে কালো এক বাঁশী বের করে তাতে ফু দ্যায়ঃ মোলায়েম
আবেশী এক সুরের মূর্ছনায় ভরে যায় সারা প্রান্তর।বাঁশীর এ সুর কানে
যাওয়া মাত্র বংশীবাদককে অনুসরণ করে আসা জনতা হুড়োহুড়ি করে ভরা
নদীতে এ ওকে ঠেলে সরিয়ে ধাক্কিয়ে একে একে লাফিয়ে পড়তে লাগলো।

ঢেউ এর টানে তারা সরে যেতে লাগলো দূর থেকে দূরে।

(আমার কবিতা দীর্ঘশ্বাসে শাকিলার কমেন্টের জবাবে লিখেছিলাম....শুধু স্বপ্ন দেখে যাই একজন বংশীবাদকের,যে কি না তার বাঁশীর সুরে সমস্ত মৌলবাদী রাজাকার,অসৎ রাজনীতিককে টেনে অতল গহ্বরে ফেলে দেবে। আর এ থেকেই এ অকবিতাটি লেখার অপপ্রায়াস অর্থাৎ কবিতাটি লেখার পেছনে শাকিলা পরোক্ষে অনুপ্রেরণাদায়িনী। আমি সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মতোন বিশ্বাস করি,'দশটা কবিতা বা পদ্য লিখলে একটা কবিতা হবে,দশটা কবিতা লিখলে একটা ভালো কবিতা হবে,দশটা ভালো কবিতা লিখতে পারলে একটি স্মরণীয় কবিতা হবে,দশটি স্মরণীয় কবিতা লিখতে পারলে একট মহৎ কবিতা হবে অর্থাৎ চন্দন গাছের জন্যে বিশাল অরণ্য তৈরি করতে হবে অর্থাৎ লিখতে হবে।)











দীর্ঘশ্বাস

রবিউল ইসলাম মানিক
(শরীফ এ.কাফী শ্রদ্ধাষ্পদেষু )

অন্তর্নিহিত জ্বালা-যন্ত্রণায় পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাই
অক্ষম ক্রোধ ও আক্রোশে আকড়েঁ ধরি নিজেরই মাথার চুল
তবে কি দিনে দিনে ক্রমশঃ নপুংষক,নির্জীব হয়ে যাচ্ছি;
আয়নার সামনে দাড়িঁয়ে পচিঁশোত্তর যুবক নিজেকেই প্রশ্ন করে?

এ কেমোন কাল এলো?
ভূলুন্ঠিত সভ্যতার লাশের ওপর পিশাচের অট্টহাসি
বিপন্ন মানবিকতা,ধর্ষিতা মাতৃভূমির ওপর রাজাকারের
আস্ফালন,পুড়ঁছে ট্রেন অবলীলায়,'রক্ত চাই','রক্ত চাই',
বলে ডাকিনী-যোগিনীর সুতীক্ষ্ম চিৎকারে সদ্য প্রসুতি জননী
বুকের মাঝে আকড়েঁ ধরে তার শিশুসন্তানকে।

বিলে ফোটে না আর আশার নীলপদ্ম,কিশোরীর প্রথম ঋতুর রক্তমাখা
লাল শাড়ীর ন্যায় গোলাপ দুষ্প্রাপ্য।ম্রিয়মান,ফ্যাকাশে জ্যোৎস্নায়
অনাহারী,ভীত মানুষ ফিসফিসিয়ে কথা বলে য্যানো বড়লোক প্রতিবেশীর
ঘুম না ভাঙ্গে।

হেলে,নুইয়ে পঁড়া কৃষাণীর লকলকিয়ে বেড়ে ওঠে লাউডগায়,
পৌষের হিমেল বাতাসে কান পাতলেই শোনা যায় আসাদের আর্তনাদ,
নূর হোসেনের দীর্ঘশ্বাস।

১৫.১০.১০
পল্লবী,ঢাকা।


বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১০

অকবি

কবিতার এ বন্ধ্যাকালে
ছন্দের একচ্ছত্রহীনতায় কবি ও অকবির ব্যবধান নির্ণয় কি খুব কঠিন?
য্যামোন বাস্তবের সাথে কল্পনার,চিত্রকল্পের সাথে প্রতীকি ব্যঞ্জনার,
ইতিহাসের সাথে পুরাণের এবং সমকালের সাথে মহাকালের।

উৎকৃষ্ট,উর্বরা ভূমিগুলো ক্রমশঃ বে-দখল হয়ে যাচ্ছে অকবিদের হাতে
ধর্ম,রাষ্ট্র,রাজনীতি,পশ্চাৎপদ সামাজিকতা সম্পর্কে চিতায় তোলা শবের
মতোন শীতল,অনুভূতিহীন অকবির প্রশংসায় পঞ্চমুখ রাষ্ট্র ও প্রচারযন্ত্রঃ
জোটে পদক,খেতাব।বামন সম্পাদকের স্তুতিতে সময় বয়ে যায়
প্রচারপটু অকবির;কবিতা পড়ে থাকে অবহেলে।নিজস্বতা ও
ভাব-প্রতিভাহীন অকবির হাতে প্রতিনিয়ত ধর্ষিতা হচ্ছে 'কবিতা'।

অন্ধকার আর কূপমন্ডুকতা থেকে মানুষকে বারংবার আলোর দিকে
টেনে নিয়ে গ্যাছে কবিরাই
নিরন্তর সাধনা ও স্বকীয়তায় ভাস্বর মহাকালিক একজন কবিই
কেবল পারেন কবিতার রাজ্যে এ দুর্যোগময়তা দূর করতে।

পল্লবী,মিরপুর।
১৩.১০.১০

রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১০

সোনালী রোদ

আশাহত,নিঃস্ব মানুষ বেচেঁ থাকে নুতন সূর্যোদয়ের প্রতীক্ষায়
বানভাসী কৃষক নব-উদ্যমে কাধেঁ তুলে নেয় লাঙ্গল
ব্যর্থ কবি পুরোনো পান্ডুলিপি ফেলে আবারো....
অশিতীপর বৃদ্ধও ঘোলাটে,ফ্যাকাশে চোখে স্বপ্ন দ্যাখে।


গোধুলির বিষন্নতায় কতোবার ফিরিয়েছ
কতোবার উপেক্ষা কোরেছ নতজানু প্রণয়
রক্তাক্ত,ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ে বিনির্মিত স্বপ্নময়
ভালোবাসার জগৎ কত সহস্রবার ধুলিস্মাৎ কোরেছ?
একনিষ্ঠ ভক্ত পূজারীর নৈবেদ্য কতবার মৃতের
নির্লিপ্ত শীতলতায় দু'পায়ে মাড়িয়ে চলে গ্যাছো?

তোমার প্রতিটা উপেক্ষাই আমাকে নূতন করে
ভালোবাসার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে,
দিয়েছে প্রেমিক পুরুষ হিশেবে স্বীকৃতি।
পাথরে প্রোথিত মানবী কতোটুকু নিষ্ঠুর হতে পারবে তুমি?

আমার ভালোবাসায় পাষাণ পাথরেও ফুল ফুটবে
মানবী,তোমার হাসিতে আকাশের মেঘ সরে ঝলমলিয়ে সোনালী রোদ উঠবে।