Powered By Blogger

শনিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৩

অপ্রয়োজনীয়

যারা সমুদ্রচারী হয়েছিলাম
সম্ভবতঃ আমরা ভালোবেসেছিলাম ডাঙার সতেজ ঘাস
এবং শর্তহীন লোভে ছুঁড়ে দিয়েছি স্ত্রী লোকেদের

কারণ আমরা হিব্রু পাঠমালায় জেনেছিঃ
রাজমিস্ত্রীরা যে পাথরটা ফেলে দিয়েছিল
সেটারই প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী

তুলোচাষ

তোমাদের তুলোচাষ কোথায়?অহিংস খদ্দরের পাঞ্জাবী পরবো বলে
অরণ্য শহর থেকে নেমে এসেছি।অস্বাভাবিক প্রযুক্তিবিদ্যা,
ভূমি জরীপের যন্ত্রগুলো ইতঃস্তত পড়ে আছে এখানে-সেখানে
আর ঐদিকে কার্পাস বাগানের বর্গাদার সকাল বেলার রৌদ্রে দাঁড়িয়ে দেখছে
শিমুল তুলোর ওড়াওড়ি।

বাঁশপাতা বাতাসে কাঁপছে।আজ সারাদিন আমি বাতাসের সাথে খেলব ভীষণ।

শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৩

নিমন্ত্রণ

প্রথম বিশ্বাসে সবটুকু ভালোবাসা দিয়েছিলাম,---ফেরে নি সেই নারী
প্রগাঢ় বাস্তবতার চোখ তুলে দেখে নি আমার পরাক্রান্ত মুখ
প্রিয় যত গান,যত সুর,যত কবিতা----রেখেছি ব্যক্তিগত বসন্ত খাতায়
প্রিয় যত ফুল,---
বুনেছিলাম সম্পন্ন বাগানের টবে

অতীতের আবর্জনা বলে সমর্পিত কোল ঘেঁষে চলে গেল অন্য নিমন্ত্রণে
সারাপথ জুড়ে পড়ে থাকে মসৃণ পায়ের ছাপ,ঋতু,দীর্ঘশ্বাস

যদি একজীবনের সারাৎসার তুলে ধরি,---
মৃতদের শোভাযাত্রা চেয়েছিল দীর্ঘ পরমায়ূ
বনের সমস্ত গাছ একে একে মরে যায়
ওখানে দিনের শেষে প্রার্থনায় মগ্ন গাছের কংকাল
ওদের বল্কল খুলে বের হয়ে আসে জরাজটিল মাংসের গ্রন্থি

নিরুপায় বনের ভেতর অসম্পূর্ণ পাঠ
শেকড়ে মাটির রুদ্ধ শৃঙ্খলের ধ্বনি
পৌষের নির্লিপ্ত কুয়াশায় উড়ে চলে শিরা উপশিরাগ্রস্ত পাতা

আমার আকাঙ্খা ছিল স্বার্থপর
যদিও তা ভেঙে পড়েছিল গোধূলিবেলায়,অনাহুত নিমন্ত্রণে

উৎসব ফুরোলে কেউ মনে রাখে নি আমাকে

বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৩

সাম সঙ্গীত

দৃশ্যমান বাস্তবতা গ্রীষ্মকাল অবধি তাদের ঘিরে ছিল
হৃৎস্পন্দনের শব্দের মতো অসংখ্য শেকড়ে
আলো ও ছায়ার অবাস্তব সংগ্রামে ভ্রমণরত;

সূর্য জ্বলছে।জ্বলতে থাক,স্বতস্ফুর্ত।দিনের আলোয়
মৃতরা কখনো আরো বেশী বাঁচবার অভিপ্রায়ে
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাবে না।

জীবিত মানুষেরাই
কেবল জীবন থেকে পালিয়ে আধাঁরে থেকে যায়।

এবং সাম সঙ্গীতের আবির্ভাবে পূণর্বার বেঁচে ওঠে।

রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৩

আমাদের প্রতিচ্ছায়া

বাস্তবতা খুব সুক্ষ্মভাবে আমাদের ঘিরে রেখেছিল;
যখন বাঁচার অভিলাষে যা কিছু দৃশ্যতঃ
শস্যবীজ,ক্রুস,যুদ্ধক্ষেত্র...............

এবং আমাদের ছায়ারা প্রতিনিয়ত নিজেদের পৃথক করছে
তাদের অস্বচ্ছ স্বর চতুর্দিকের দেয়ালে প্রতিধ্বনিময়

অসংখ্য পাঠান্তরের মধ্যে
নিরাসক্ত যে সব গোলাপ ফুটেছিল
ধূসর দিনের অতিবাহনের পর,---
আমরা তাদের পতনের শব্দ শুনি
এতকাল যত পাথর ছুঁড়েছিলাম

কিন্তু জানালার কাঁচগুলো এখনো অক্ষত
যেখানে গড়িয়ে নামে আমাদের প্রতিচ্ছায়া

শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৩

উপেক্ষা

শিখে নিয়েছ প্রাকৃত উপেক্ষার পরিভাষা?স্পষ্ট উচ্চারণে
গাঢ় প্রত্যাখ্যান।সুগত দু'চোখ জ্বলে যায় সুতীব্র ঘৃণায়।

তোমাদের লৌকিকতা বড় বেশী সামাজিক।অতিথিবিমুখীনতা।
প্রগাঢ় উপলব্ধির সম্মীলনে স্বার্থপর ভ্রু-কম্পনে
অন্বেষণ আলোর ভেতর।সাধারণ ভাবনায়
চৈত্রদুপুরের সারাপথ প্রস্তাবিত দাবিতে স্ফুরিত;
পরিচিত শব্দের সমূহ সমারোহে অনিবার্য ধ্বনিময়তায়
সান্দ্র আমন্ত্রণ---নি;সীম স্মৃতির উন্মীলন।

আমি ফিরে এসেছি।উপেক্ষা এত তীব্র।
এই তোমাদের অতিথি সৎকার?
জল ভারানত স্বচ্ছদীঘি।সরিষার তেল,গামছা কোথায়?

শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৩

উৎসর্জন

সৃজনের অধিকার কেড়ে নিতে চাও?
রজনীগন্ধার মূর্ত আলো,শীতের আগুন,
আমার গানের নীল খাতা?
সম্পন্ন কবিতা;যা আমার রক্ত ও ঘামের  সংমিশ্রণে শ্রম বিনোদন।

সেই বুনো তুলসীর ঝাড়,--আবর্তিত অভিশাপে
কাঠ বাদাম গাছের দিকে চেয়ে মনে হয়
প্রণত দু'হাতে রক্তজবা ফুল ছুঁয়ে দিলে জীবন হয়তো
পরিস্রুত একটি প্রেমিক তারা হয়ে যেত।

তোমাদের লৌকিকতা শেষ হোক।
দেহরক্ষীরা তাদের নিজ নিজ গৃহে ফিরে যাক।
(ওদেরও তো ইচ্ছে করে প্রিয়তমা রমণীর
শরীরের ওম পেতে।)

পূরোনো ভালোবাসার স্থির নির্দেশের বিনত সম্মানে
শুভ্র স্বপ্নের ভেতর থেকে জেগে উঠি
নিবিড় কেন্দ্রের বিসর্পিল লালধূলো ওড়া পথে,
জংলী গোলাপের উৎসর্জনে।

দিনপঞ্জী

তোমার পূর্বের নারী এক প্রবল ঝড়ের রাতে
বস্তুব্যাপক উপলব্ধির মুখোমুখি বলেছিল,
'স্বপ্নের ভেতর মগ্ন মানুষ দৃশ্যতঃ
ফেরে না তাদের নির্ধারীত জায়গায়।'

বাস্তবিক আমার নৌকার তলা ফেঁসে গেছে। আমি চরায় আটকে আছি।
আমার আকাঙ্খা ছিল সূর্যের চেয়েও দীপ্তমান।প্রদোষের অন্ধকারে
চলাচলরত ইঁদুরেরও হয় না ততোধিক।বিদায় বেলার রাতে
খুব শীত পড়েছিল।চাঁদরে জড়িয়ে নিয়েছিলে নিজেকে?প্রতিভাবান চাঁদ
থানার দারোগা বাবু নক্ষত্রসন্ধির প্রতি গাঢ়
মনোযোগে সুনিপূণ লেখে দিনপঞ্জী।

আমাদের আরো কত কিছু শেখা বাকী।

২.
অতঃপর জৈবিক বপণ শেষে
আমরা শস্যফলন বিষয়ক আলোচনায় মেতেছিলাম।

আবছা নদীর দুই তীরে তরমুজ বন ।কিছু দূরে একাকী ধানক্ষেতের পাশে
সূর্য ডুবে যায় দ্রুত।সপ্তর্ষিমন্ডল তার নভোরশ্মির পোষাকে
আমাদের প্রসন্ন উঠোন ঘিরে রাখে।তাদের নানান গোপণতা থেকে
ঝরে পড়ে মৌল রসায়নরাশি।চাল থেকে ভাত রন্ধনপ্রণালী
চোলাইমদ,রেশম গুটিপোকা;পূর্ণতা প্রাপ্তির গূঢ় ধৈর্য্যে,---

এখনো বুঝি নি প্রাকৃতিক দুঃখজটাজাল?
আমার ঘরের জানালাবিহীন অন্ধকারে শেষ কবে নক্ষত্রের ম্লান আলো
এসে পড়েছিল।কবিতার নিষ্ফলতা থরে থরে সাজানো রয়েছে ওই
নীল পানা পুকুরের অস্বচ্ছ জলের স্তরে;
বালিকার দুর্নিরীক্ষ্য শরীরের মতো।

মৌল রসায়নশাস্ত্র আমাদের বেঁচে থাকার উপকরণ
পরার্থপর আগুন,জল,পাহাড়ের কাছে শিখে নিয়েছি ভূ-তত্ত্ব,
চিকিৎসাবিজ্ঞান,ধাতুর বিবিধ ব্যবহার।

যে চড়ুই পাখিটির ডাকে আমাদের ঘুম ভাঙে
তারও তো প্রয়োজন খুঁদকুড়া ও প্রজননের।

বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৩

জন্মান্তরের প্রস্তুতি

বিবর্তিত অতসী কাঁচের মধ্যে বস্তুর অবস্থানের তারতম্যে
প্রস্তর যুগের মানুষের অস্পষ্ট হস্তলিপির উচ্চারণে
তাদের যাপিত দিন মৃত্যুর আবর্তে শূণ্যে স্থির।
সূর্যোষ্ণ পাথর ঘিরে রাখে পৃথিবীর পিঠ ও প্রান্তর।নিমজ্জিত গ্রীষ্মকাল,
কৃষ্ণময় অতলান্তিক,---তুলট কাগজের বুক রেখা ও রঙের সংমিশ্রণ
বাদামী হাতের ছাপে বিমূর্ত প্রকাশ।প্রুতিশ্রুত প্রেম
বাঁকা ভুরুর কম্পনে আমি সারাদিন কাজের আড়ালে ভুলে থাকি।

আমার দ্বিতীয় চিত্র জন্মান্তরের প্রস্তুতিতে শেষ হয়।

কবিতার কলংক ও সারসত্য

অনেক বৃষ্টির জল ঝরেছিল সেই রাতে।মগ্ন অবকাশে
নিস্পৃহ শ্রাবণ।দু'য়েকটা ঘনিষ্ট আলাপ মিশে গিয়েছিল বৃষ্টির ফোঁটায়।
আমাদের সমস্ত প্রয়াস ভেঙে অরচিত বাড়ি
বধির সম্ভাবনায় উর্ধ্বমুখী ছড়ানো উঠোন,অবিভেদ্য।
ভগ্ন নদীর জলজ স্রোতে ভেসে যেতে যেতে স্থিরতায় ঝর্ণাপাথরের পথে।

আমার কবিতা লেখা আপাতত বন্ধ।
অশ্রুপাতে লেখা আছে অপমরণের আগে জেনে যাবো
কবিতার কলংক ও সারসত্য।



বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

হাইয়ারোগ্লিফ

আত্মবিকাশমান সূর্যের আলো যখন ঠিকরে পড়ে আমার শরীরে
পাঠোদ্ধারহীন,গুপ্ত সাংকেতিক দিনে।যেন বা মায়ান হাইয়ারোগ্লিফ।
আদিম মানব লিখেছিল অস্পষ্ট হস্তলিপিতে আলো এবং
ছায়ার পরিমাপক,স্থিতিস্থাপকতা।

আমার মাথার টবে কুঁড়ি মেলে নুতন কবিতা।

অসহায় মাঘের সন্ধ্যায় স্পষ্ট শুনি চকমকি পাথর ঠোকার শব্দ
অথচ আগুন জ্বলে নি।সুচারু শব্দে কারা হেঁটে গেল,
কারা ফিরে আসে অদ্ভুত পায়ের জোড়াছন্দে? আমিও এ জনপদ ছেড়ে যাব,---
আমার পূর্বপুরুষ;যারা শিখেছিল নৌকা চালনার কৌশল,সঙ্গীত,
ধাতুর বিবিধ ব্যবহার।এনেছিল শস্যবীজ আর ধর্মগ্রন্থ,---
আত্মবিবৃতির সুনিপূণ উন্মাদনা;

অনায়াসলব্ধ আলোচাল,কলা ও পাটালিগুড়---শ্বাপদের ধর্মদাঁত
নির্বিচারে খুঁটে খুঁটে খায়।যদি দেখি
তুলসী তলার অন্ধকার উলম্ব ও মোদকমাত্রার পরিমান
অপরিমিত আকারে বেড়ে যায় তবে
আমি পাপসমুদ্রে শরীর ছেড়ে দেব
পুড়ে যাক শরীর শীতল জলে।

আমার পিতা ও মাতামহের ছায়া বিলম্বিত আত্মরুপে লীন।

মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৩

অন্ধ পেঁচা

গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নার পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম
কবিতার ভাষা আর ছন্দ,বিভাজিত ছন্দের ভেতর
বিন্যাসিত অতীত;যখন
পাখির ডানায় ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াতাম এবং
স্পর্শ পেতাম ফুলের
সকালের শিশিরকণা এখনো কুলকুল শব্দে ভেঙে ফেলে
দ্বন্দ্ব,অসাধারণ উপমা
যেখানে ঘুমন্ত মানুষের স্বপ্ন স্বচ্ছতায় পরিপূর্ণ
সমূহ সাফল্যহীনতার মধ্যে অবশেষে
মহাকালিক আকাশে জমে থাকা অনন্ত জ্যোৎস্নারাশির মধ্য
থেকে বের হয়ে আসে অন্ধ পেঁচা

অমোঘ মৃত্যু



সমারোহে যখন অমোঘ মৃত্যু আসে
অন্ধকার গ্রাম আর শূণ্য শস্যক্ষেতে
কৃষকের কন্ঠের মর্মরধ্বনি
জলের ওপর পারদের মতো জ্বলে ওঠে
এবং অন্য উপকূলে
সূর্যের চাকার একফালি মেঘের গভীরে
শতাব্দী কালের গুল্ম  রাশি প্রস্ফুটিত,ঝুলে থাকে

সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৩

জীবন গতি

আমাদের ঘিরে থাকা ক্লান্ত জোনাকী পোকারা অতঃপর
উড়ে যায় ঝাউ গাছের গভীর অন্ধকারে।এবং
আমরা অনবরত কথা বলে যাচ্ছিলাম
সুসংহত বাক্যে।

সামুদ্রিক সবুজ শৈত্যপ্রবাহে উপবাসী দীর্ঘরাত।
যা কিছু বলার ছিল আমাদের
ক্লান্তি,ক্রোধ,বিবমিষা,----
আমরা চেয়েছিলাম এসবের সফল পরিসমাপ্তি।

গোপনে যে মৃত্যু এসে
আমাদের শরীরের মাপ নিয়েছিল,---
বরাদ্দকৃত সে ভূমি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম,সরোষে।
সরাসরি তোমার শরীরে পথ করে নিয়েছিলাম,সুড়ঙ্গ বেয়ে।

আমাদের অস্বীকৃত মিলন প্রণয়
ভবিষ্যৎহীন গুহার অভ্যন্তরে ঘূর্ণায়মান;তখন
জীবন গড়াতে থাকে তার নিজস্ব নিয়মে এবং
অধিক প্রোজ্জ্বল আলো ছড়ায় ঘুমন্ত মানুষের মুখে মুখে।

রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৩

পরিযায়ী

শরীর সমুদ্রে ঢেউ।শূণ্য বিছানা।একাকী।
অবিশ্রান্ত বর্ষণের মতো তামসিক অন্ধকার
সময়ের অধৈর্য্য তুলিতে পৃথিবীকে আঁকে অনুক্ষণ।
গভীরতর অন্ধকারের মধ্যে কখনো কখনো
চোখ মেলে দেখে জীবন;দৃশ্যতঃ
সেই দিনগুলো আকাশজুড়ে নক্ষত্রব্যক্তিত্বের সুরে পরিণত,--
যখন সমুদ্র সৈকতের বড় বড় পাথরেরা অবশেষে পরিযায়ী হয়ে যায়।

শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৩

অবসিত জীবন

অনেক কবিতা লেখা হয়েছে।অনেক গান,---
স্বপ্নের গভীরে চলে গেলে অথচ বোঝো নি
প্রখর সূর্যের আলোকরেখার মধ্যে হেঁটে চলা
মানুষের মুখে অন্ধকারের আঘাত।

অবিরল বর্ষণের মতো জমাট অন্ধকারের মধ্যে
যখন আমরা যুথবদ্ধ ফিরে আসি;
সে যায়গাটি আর আমাদের নেই।
কোথায় হারিয়ে গেল দূর্দমনীয় যৌবন?

একদিন যেখানে শিশুরা খেলা করত;সেখানে আজ
অনেক কবর।ফাঁকা।
তবু নূতন কবরে ভরে ওঠে
অনেককালের পূরোনো পৃথিবী।

অবসিত জীবনের কামনায়............

টোমাস ট্রান্সট্র্যোমার

আপত অপচ্ছায়ার মুখোমুখি।সত্ত্বার বিকাশে
দ্বান্দ্বিক মনের দোলাচল।রহস্যনিবিড় সংকেতের ছায়াপাত।
শিল্প ও জীবন,আধুনিক এবং ঐতিহ্যের সংশ্লেষণে জারিত অসঞ্জীবিত বাস্তবতা;
পূরোনো স্মৃতির প্রতিভাসে বিমূর্ত কবিতা।
আত্মজৈবনিক এবং মনোচ্ছাপের আলেখ্যে;
সীমাবদ্ধ এবং সাধারণ জ্ঞানের পৃথক সরলীভবন।
দেয়াল ও আকাশের অনুপম চিত্রকল্প;
যেখানে জীবন হয়ে ওঠে প্রতীকমন্ডিত।
একজীবনের মধ্য দিয়ে উঁকি দেয় মৃত্যু,---
আরেক জীবনে আবিষ্কৃত নূতন জীবন।

চিরসবুজ লরেলবৃক্ষ

বর্ষা,খাদ,বনভূমি,পাহাড় পালিয়ে আসা নিমগ্ন দাফনী
পিনিউস নদীর সামনে বুঝে নিয়েছিল
পিঠে তার কামোন্মত এ্যাপোলোর তপ্ত শ্বাস।
অবসন্ন শরীর।ক্লান্তির শেষ মুহূর্তে লরেল বৃক্ষে পরিণত।

যার পাতার রঙ অমলিন  ঝরে যাবার আগেও।

বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৩

প্রেমের অন্ত্যমিল

ভয়াবহ সামুদ্রিক ঢেউয়ের মতোন রাতের পর রাত জেগে আছি
আরাধ্য জ্যোৎস্নায় অন্তর্গত উন্মত দ্রোহের দগ্ধীভূত প্রেম
আমি একে একে বাড়ীর দরোজা খুলে দিই আকাশের দিকে
নৈঃশব্দে অংকিত শূণ্যতার অবসরে অন্তহীন ঘুরছে মহাকালের চাকা
শব্দের স্বচ্ছন্দ চলাচলে অমর্ত্য প্রেমের অন্ত্যমিল বাষ্পীভূত
হয়ে ঝরে পরে বিশীর্ণ চোখের ঢালু কোণ বেয়ে
দৃশ্যমান অন্ধকারে প্রত্যেকটি স্বরলিপি বিষাদ সঙ্গীতে ব্যপ্ত
তার সুর নিস্তব্ধতা ভেঙে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে

আমি উঠে আসি অবসন্ন জ্যোৎস্নার ছায়ায়
যেখানে সবুজ দূর্বাঘাস এবং ফুল
অবিরত সংকেত পাঠায় চাঁদে
দীর্ঘ শূণ্যতার ভেতর বর্ণান্ধ রাত জমে থাকে আর
অনন্ত নক্ষত্রবিথী ক্লান্তিকর নিঃসীম আকাশে ভাসে

বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৩

ভালোবাসার জ্যোৎস্না

কতকাল ছুঁইনি তোমাকে
তবু টের পাই এখনো সন্ধ্যায় নীল দীর্ঘশ্বাস তোমাকে বিদীর্ণ করে
শিল্পের অন্ধত্ব কামনায় চাও ওতপ্রোত অন্ধকার
আকাঙ্খার অসহ আক্ষেপে মিশে আছ অবসন্ন জ্যোৎস্নার আঁচলে
আনমনা বিশীর্ণ আঙুলে আয়নায় আঁক দীর্ঘতম শোকগাঁথা
অন্য গ্রহ থেকে উড়ে আসা ধূলিকণা ঢেকে ফেলে তোমার আয়না

আর সেই আয়নার ভেতর অসাড় অভিযাত্রীদল নেমে আসে সমতলে
একদিন যারা ভালোবেসে সমুদ্রচারী হয়েছে
তারা বলেছিল,ফিরে আসবো,প্রতীক্ষা কোরো
তাদের দু'হাতে ছিল এঁটেল মাটির চাক

বিনির্মাণে বিনির্মাণে শিল্পীর নিবিষ্টতায় তারা গড়েছিল প্রতিমার মুখ
প্রেম ও সম্ভোগ শেষ হয়ে গেলে
ঠোঁটের কোণায় ঘনীভূত আশ্লেষায় বলেছিল,
প্রেম নেই কোন
চোখে তাদের শামুকের জরাজটিল সমুদ্রক্ষত

সম্পন্ন শব্দের অগোচরে
তোমার সুমন্ত দেহ তখন জড়িয়ে ধরে আমার ভালোবাসার জ্যোৎস্না

প্রবাসী কবি

প্রবাসী কবির কথা মনে আছে?

খা খা চৈতালী দুপুরে ঘন মেঘে ঢেকে দিয়েছিল তোমার আকাশ
মাত্রাবৃত্ত প্রফুল্ল কদমগাছ---সে কি সাদা সাদা ফুল!
অন্ধকার গুহার ভেতর ঝলমল হীরার জ্যোৎস্নায়
সুগত দু'চোখ ভেসে গিয়েছিল বিবিধ রঙের সংমিশ্রণে।
কোন নির্মাণে তখন উপলব্ধ প্রেমিক বসন্ত দিন?

শোকের ফানুসগুলো কি সুন্দর!

চোখে এখনো বর্ষার মেঘ লেগে আছে এবং
কবির চোখের জল সোনা হয়ে ওঠে আচ্ছন্ন বিলাপে।
শালকীর চকচকে বালিয়াড়ি পার হয়ে গেছ?
পড়ে আছে তোমার পায়ের ছাপ।
কে নিঃস্ব তাকিয়ে দেখে?
তোমার শাড়ীতে লেগে থাকা চোরকাঁটা বেছে দেয় অন্য পুরুষ;তখন
সাদা বরফের ধার ভাঙতে ভাঙতে তোমাকেই কবিতা ভাবছে
বুভুক্ষু,প্রবাসী কবি।

মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৩

শিল্পরুপ

সমূহ সর্বনাশের আগে আসে হাঙ্গর,কাছিম।
পিঠে তাদের সমুদ্রক্ষত।পপির অশুভ ফুল
প্রশ্নের গূঢ়তা বোঝে না;এমন অরক্ষিত নির্যাসে জারিত।
আবছা নদীর তীরে আগাম বর্ষার
সতর্ক লিখন।

আমাদের শিল্পরুপ নেই।বিমূর্ত ছবির অর্থ বোধগম্যতার সমতীত।
প্রতিটি জন্মের কথা অবিচুয়ারির স্তুপে আমূল জমতে থাকে।
আমরা সুস্বাদু হরিণের মাংশ খেতে চাই নি অথচ
অভিবাসী দ্বিমুখী অসুর---তাদের পায়ের চাপে কেঁপে ওঠে বনভূমি।
ঋদ্ধ পরিচয়ে বহুপরিচর্যাজাত আমার আপন ভূমি ধ্বংশেলীন।
মেঘ ও আলোর রেখা,মাতৃরেখায় যে গন্ডি বেঁধে দেয়া আছে
তা পেরিয়ে যাবো---সে শক্তি আমার নেই।
সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি আমার শোবার ঘরে পৌঁছে গেছে
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট তবু সোনালী বীজের ঘ্রাণ নিই;
ঝরে পড়ে কিছু সুযোগসন্ধানী ফুল ও ফল।

আমাদের এ জনপদ খরায় জ্বলে যাবার আগেই
আমাকে তৃষ্ণানিবারণের জল দাও।দাও,স্বস্তি
কাদা জলমেশানো পানাপুকুর থেকে।


লক্ষণরেখা

আলোকজটিল স্নানাগারে আমি কবিতার নগ্ন শরীরে লক্ষণরেখা আছে কি-না
তা মিলিয়ে নিতে চেয়েছিলাম।যুগল স্তনবৃন্ত থেকে মূক্তোর দানার মতো ফোটা ফোটা
জল বুক পেট নাভী উরুসন্ধি বেয়ে শাওয়ারের জলের সাথে মিশে গিয়েছিল। এবং
অন্ধ মিলনার্ত কামনায় অবরুদ্ধ নারীর মনন গেঁথে নিয়েছিলাম শরীরে।

নাহ্,আমূল শরীরে আমি কোন লক্ষণরেখা চিনি নি।

অসম দিনযাপন

ব্রাক্ষ্মমুহূর্তের প্রণত আলোয় চোখ থেকে সরে গিয়েছিল অবসাদ।অভিমানী নারী
তুমি বোঝ নি অস্বচ্ছ জানালায় আমাদের প্রিয় সম্বোধন কি শৈল্পিকতায় ফুটে ওঠে। 
এইখানে যদি কবিতার শেষ হত তবে গল্পটা নূতনভাবে অভিনীত হত।রৌদ্র, 
প্রতিহত পথ,গঙ্গাজল--আমার ইচ্ছামৃত্যুতে কারা হবে শ্মশ্মাণবন্ধু?প্রলাপমগ্ন 
দিনের স্বপ্নকে দেখোঃক'জন পালাতে পারে শস্যবীজের প্রণয় থেকে?সংবাহন সূর্য 
কিভাবে ত্বকের নীচে উষ্ণতা ছড়ায়?দিনযাপনের অসম গ্লানিতে সমস্ত উৎসব 
একে একে শেষ হয়।আমাদের নির্ধারীত আসন,গোলাপ,--আমরা হাঁটছি,পাশাপাশি! 
সকালবেলার বাসীফুল ফেলে কি অবলীলায় বলে দিই বলার মতোন কিছু নেই।

প্রতিবিম্ব

জলশোধনের গুপ্তবিদ্যা শিখে নিয়েছো?চোলাই মদ?
উপহারজাত শস্যবীজ মাচাঙে শুকিয়ে গেছে।ভুলে গেছ
রন্ধন প্রক্রিয়া?

নিবিড় অশ্বথ,শিমুলের তলে অপর্যাপ্ত দিন,
আধপোড়া খড়।আমার পুরুষদেহ শীতে তার ওম নেবে।
পৌষের শীতল প্রহর---শায়া ছিঁড়ে গেছে।
এ মৌসুমে ধান চাল গম যথেষ্টই মজুত রয়েছে।
অবেলায় ঘুম পেলে চিবুকের তিল ছুঁয়ে দেখো।

নিজের ছায়ার চেয়ে আমরা কেউই বড়ো নই।

সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০১৩

প্রাকৃতভাষা

রাত্রি এসে আমাদের খুঁজছে অন্ধকারের শুঁড় মেলে।

আমরা এখন কোন ভাষার কোরকে কথা বলব?অধিকারবিহীন?
আমাদের মাঝখানে জল থেকে উঠে আসে পোড়া শব,
নিবিড় কেন্দ্রের অনাসক্ত মাটির ভেতর থেকে ধোঁয়া ওঠে
মুঠো মুঠো আগুন ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃত শরীরে।
আমাদের ভাষার সহজ অবসানে শুধু একটি নিস্পৃহ মোমবাতি
নিবিষ্ট সময়ে অনিঃমেষ জ্বলে।

মনে পড়ে আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টির জল ছুঁয়েছিলে আর আমি
প্রসন্ন উঠোন থেকে একমুঠো মাটি কপালে মেখেছিলাম।
তোমার শাড়ীর নীল আঁচল ছড়িয়ে দিয়েছিলে
পাঁচিলের কোণ ঘেঁষে কদমফুলের পাপড়ি কি অবিরল ঝরে পড়েছিল।

গ্রহ থেকে গ্রহান্তরের নিস্তব্ধ পাতা জালে
আমাদের প্রাকৃতভাষা আটকে থাকে।

সময়ের গাছপাথর

সময়ের গাছপাথর এতোটা পরিকীর্ণ?
পূবে গিয়েছি,পশ্চিমে.........
সমুদ্রতীর অবধি।অভিমানহীন সরলস্রোত ফিরিয়ে দেয়
দিনশেষে ব্যর্থ প্রতিশ্রুতি।

অন্ধকারে আকাঙ্খিত সফল পথের অনাবৃত ইঙ্গিত।সুদূর উচ্চারণ এবং
তৃষ্ণার্ত বনভূমির প্রান্তে দীপ্ত পটভূমি।
সমমর্মী শিল্পে এমন আচ্ছন্ন ছবি,---
বিশুষ্ক ফলের উজ্জ্বলতা ঝরে পড়ে।
চৈতালী দুপুরে সব বিবিধ ভাবনা
ঘরের ভেতর।লাল বারান্দায় সংহত,নিবিড় ঝুমকোলতার ফুল।

সারাদিন নির্মোহ উচ্ছ্বাসে অকম্পন দৃষ্টি,নিয়ত বধির।

শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৩

পলায়ন

সময়ের আপেক্ষিক স্রোত বোঝে নি আমার ভাষা।আবছা নদীর তীরে সম্পন্ন শব্দের
ঘূর্ণামান জলস্তম্ভ তোমাকে কি ছুঁয়েছিল?অনুচ্চার অভিযোগে সমস্ত ব্যর্থতা আজ
স্বপ্নের চেয়েও মিথ্যে মনে হয়।সজল মেঘাবরণে রাত্রি জ্বলে;প্রান্তে তার বৃষ্টিরেখা।
আমি ধূলোওড়া পূরোনো শহর ফেলে এসেছি।বাতাসে লবণের স্বাদ।এর অর্থ পৌঁছে গেছি
সমুদ্রবন্দরে।সারি সারি মৃত জাহাজের খোল থেকে নামছে চাউল, মার্বেলপাথর।

কতদিনের নিরম্বু উপবাসী শরীর।নিগূঢ়  প্রশ্নে জর্জরিত করো সংসদ ভবনঃ
খাদ্য ঘাটতির দেশে মার্বেল পাথরের কি প্রয়োজন?

আর আমি তখন সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি পার হয়ে উলম্ব সূর্যের কাছাকাছি
পৌঁছে যাব।











আশ্রয়

দুঃখবিষে ভরা এ শরীর নিয়ে কতকাল শুয়ে আছি জলের তলায়।সমতীত দিন,
অন্তহীন রহস্যের সহজতর স্রোতের দোলাচলে বিচ্ছিন্নের বিষন্নতায় দু'চোখ
বিবিধ  রঙ,বিচিত্রিত রেখা---বিনম্র নদীর সমুদ্রের দিকে সমাহিত যাত্রা;গ্রামসীমা
পার হলে অন্ধকারের শ্রাবণে স্পষ্ট নিহিত বঞ্চণা।নিবিড় হারিয়ে যাবো?প্রবাহিত
সন্ধ্যার সর্পিল ভাষা---কবিতা লেখার উপযোগী নয়।এখনো বুঝিনি খেত্রজ নৌকার
অবিচ্ছিন্ন গতি কোন দ্বীপের আশ্রয়ে শেষ হয়।










































































































বিরুদ্ধ আগুন

সর্ব অঙ্গে পাপ।উদ্বায়ী প্রেমের নীল রেখা;যে সমস্ত ব্যাথা মিশে ছিল শালকীর জলে
পূরোনো সম্পর্ক ভেঙে আদুল নখের কোণে মেহেদীর দাগ---খুব আনমনা অনুরাগে
চোখের সামনে থেকে সরে যায় ধোঁয়াওঠা ট্রেন।মনখারাপের বাঁশি বেজে উঠেছিল?
রেলসড়কের খাদভর্তি ডানকানা মাছ।আমরা দেখেছিলাম কদমগাছের পাতা
অনায়াসে ঘুরে ঘুরে পড়ছিল।ঝড়ী বিকেল কিভাবে ভাসিয়ে নিয়েছিল দূর গাঁয়ে।
বিষন্নের দুপুর আকাশে ছিল অপমান।আমার পুরুষ্ট ঠোঁট হয়ে উঠেছিল
শস্ত্রময় বিশ্বাসঘাতক।

বিরুদ্ধ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল প্রথম বিশ্বাস।











































































































































পারাপার

সবকিছুই বিস্মৃত।শুধু মনে আছে কোজাগরী পূর্ণিমায় প্রবাহিত সম্পূর্ণ আকাশ;
শালের মামল্ল পাতা,আধকাটা গাছ,কবরখানার পাশে স্তব্ধ রাত।গ্রহণের কালে
কোথায় পৌঁছুতে চেয়েছিলে? একজীবনের পরাভবে!রৌদ্রনভস্তলে পূরোনো শহর,-
যা কিছু আমার চারপাশে ছিল
আগুন ও জল।
মাটি ও পাথর।
সবুজ ঘাস ও খড়।
সূর্যাস্ত ও সমুদ্রসৈকত।

নিদ্রাহীনতার ভেতর জলের বিভাজন থেকে উঠে এসেছিল আদিপ্রাণ,পশুআত্মা ।
অর্ধসমাপ্ত লবণজল স্নানশেষে আধোশ্বেত শরীরে তাদের আলোর উলম্ব রেখা,
অপর্যাপ্ত জীবনবোধ।মুখর প্রতিবাদে তালবীথি।শান্ত সাগরনদীর দুই তীরে
জেগে ওঠে চর।প্রতিহত পথ স্বচ্ছ জলে ডুবে যাবার আগেই এসো,পার হয়ে যাই।



















































































































































































































































































































বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৩

কাব্যিকপ্রেম

নিরলস আঘাত হানছো
ভেবে দেখনি সহ্যক্ষমতা
পাথরও একসময়ে হিমানী সম্পাতে ভেঙে পড়ে
এতো মূঢ়মতি
মিথ্যে অহংকার,অনুতাপহীন চোখ,---
সম্ভোগ ও বিতৃষ্ণায় ধ্বসে পড়ে পূরোনো শহর
শুধু আমার নিজস্ব ঘর টিকে আছে
মোমের আলোয় বাক্যবদ্ধ পাঠ্যান্তর
অক্ষরে অক্ষরে কবিতার জন্মকথা

কোন গোপণ প্রহরে প্রেম কাব্যে রুপান্তরিত হয়েছে

মানবপূজা

সারাদিন জপতপ,মালা চন্দনের পরিশ্রম
প্রভূ,স্নান সেরে এসেছি,এবার অর্ঘ্য দাও।

আমাদের মানবিক কষ্টগুলো এতো অবিশ্বাস্য,বস্তুবিহীনতা,---
মাটির স্বচ্ছতা কেঁপে যায়।প্রভূ,তুমি দেখেছো কখনো?

অন্ধকার পথ ধরে মন্দিরে এসেছি
আমার পূজোর বেলফুল এখনো দাওনি,প্রভূ?

বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৩

জীবনচক্র

সর্বময় বিস্তৃত আকাশ থেকে কাল বৃষ্টি ঝরেছিল।অভ্যস্ত নিপূণ পায়ে বেজে ছিল
কর্দমাক্ত পথ।কোথায় লুকানো শান্ত উপাচার?চারদেয়ালের ঘেরাটোপে?
অনন্য রাত্রির মধ্যে নশ্বর যৌনতা স্তব্দ প্রতীক্ষায়,প্রস্তুত শরীরে।

অশেষ জীবনচক্রে এই ছবি আঁকা হয়ে আছে।

জাতিস্মর

ভুলে গেছি প্রিয় সব নাম।সুন্দরের আখ্যান।করন্ডচিত্র।গ্রামময় ভাঙা আলপথ।
গড়ে তুলবার কথা মনেও আসে নি।আমার সম্পন্ন জানালায় বিনির্মাণের প্রচ্ছায়া।
পূরোনো ধ্বংশের স্মৃতি স্বাধীকার জাগরণে তন্ময়।প্রতিশ্রুতির দিগন্ত প্লাবিত পদ্ম
ধ্যানে নিমগ্ন,আলোকোজ্জ্বল।দূরতিক্রমণের নিয়ম জানা আছে?অশাসিত অশ্বফুল,--
বাতাসে উড়ছে গর্জনের বীজ।প্রজন্মের থেকে প্রজন্মান্তরে,একাকী।

জাতিস্মরের সর্বস্ববিকশিত স্মৃতি দৃশ্যমান ঘোলাটে দু'চোখে।

সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৩

রডডেনড্রন গুচ্ছ

আতত নির্জন রাত এতো স্পষ্ট।প্রত্যাশার সমরাগে স্বাভাবিক অমিত বিশ্বাস।
অনাশ্রয়ী অন্ধকারে যৌন দ্রাঘিমার ওপারে সমূহ সর্বনাশে কাঁপে ধূতুরার ফুল।
অন্তলীন খসে পড়া একশত গোধূলিময় আকাশ,অশ্রুজলরেখা পরিপূর্ণ নদী,
নীল পাহাড়ের চূড়ায় রৌদ্রের ঝলকানি।ভুলে গেছ আষাঢ়ে পূর্ণিমা।রক্তের ভেতর
দাবদাহ।রুগ্ন অক্ষমতায় সুস্পষ্ট প্রকাশের ভাষা---নিবিড়তম।বিরুদ্ধ ভালোবাসা
চিরদিনের অবধ্য।শষ্পদল আঙুলে আঙুলে মাটি ছুঁয়ে দেখি কেবল শরীর নয়
রডডেনড্রন গুচ্ছে ঢেকে আছে তোমার চিকন আত্মা।

রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৩

বিভাজিত ছন্দ

সীমান্ত শহরে চলে এসেছো?বিমূর্ত কিছু শব্দাবলী,----
অনাসক্ত অভিবাসনের এই তোমার পাথেয়?
শূণ্যময় অতলান্তে গোত্রস্মারক।অনাব্য পথে
পায়ের তলায় চাপ চাপ অন্ধকার।অনুচ্চার অভিযোগে
নূতন জন্মের সাথে ঝরে পড়ে

সমস্ত ব্যর্থতা,জন্মান্তর---প্রথম প্রস্তুতি অশ্রুময় নির্মাণ।কেবল
পরিশ্রান্ত বিকেলের আলো বুকের ভেতর হিম হয়ে আসে।

অন্তরাল দ্যুতিময়তায় ভুলে গেছ শব্দের বলয় ভেঙে বের হয়ে আসা
বিভাজিত ছন্দ।

শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৩

বিমূর্ত রেখা

নিপূণ পথের বাঁক পার হয়ে মনে হলো কোথায় সে পথ,সুমন্ত আলোকময়?
আমার পাথরকুঁচি মুখ নক্ষত্রের ছায়া এসে ঢেকে দেয়।উত্তর দক্ষিন পূর্ব
পশ্চিম ওপর নীচ চারদিক জুড়ে আসে অন্ধকার মেঘ।নিদাঘ খরায় পোড়ে বুক।
মাটি ফুলে ওঠে।আপ্লুত আহ্লাদে চোখে এঁকে দিয়েছিলে চুম্বনের ছাপ।বিদ্যুৎ রেখায়
ছুঁতে চেয়েছিলে অসময়ের বিমূর্ত রেখা!

শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৩

ক্ষণস্থায়ী

প্রবল একাকী ঘোরে হেমন্তলীন পাতার নিরন্তর উড়ে যাওয়া।নির্বেদ শূণ্যতায়
পৃথিবীর সব সমুদ্রতীর দ্বিবিধ অর্থময় হয়ে ওঠে।নক্ষত্রহীন নৌ-অভিজ্ঞতা,--
আমরা জেনেছিলামঃআত্মমৈথুনিক মানুষের বিষ্মরণ!কেন্দ্রাভিমুখী ক্ষমতা,অগ্নি,
দ্যুতিপ্রাণতায় পরিণত ফল,সাঁইবাবলার সম্পন্ন ছায়ায় স্থান বদলের ঘন্টা।
পাতার মর্মর ধ্বনি।পথ ফুটে থাকে সমুদ্রের ভেতর।নৌকার সীমাহীন চলাচল
দ্বীপের আশ্রয় জুড়ে।এ সমস্ত দ্বীপ একদিন ডিমের খোসার মতো  ভেঙে পড়ে।

বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৩

পূর্বরাগ ভালোবাসা

আউশ ধানের ক্ষেতে মুক্তডানার বকের সাবলীল ওড়াউড়ি।
বর্ষাশেষে নদীর ওপারে ঘেঁটুবন,বুঁচকাঁটা,বনমরিচের সান্দ্র সুদূরিমা---
সুগত দু'চোখে স্বতঃস্ফুর্ত আকাশের নিস্পৃহ শ্রাবণ।
এমন নৈসর্গিকতা।ষষ্ঠীর নিমগ্ন চাঁদ ডোবে সম্পন্ন বাড়ির
প্রসন্ন উঠোনে।

অসংখ্য নিবিড় লতাপাতা---তিত্তিরাজ,বন্যেবুড়ো,পিটুলিগাছের বন।
প্রাকৃতিক পানা পুকুর।উত্তভাদ্রপদ নক্ষত্রের জলে
যে মুক্তো জন্মাবে আমি তারই আশায়
সংহত ঝিনুক জড়ো করে রাখি আঁশ শ্যাওড়া ঝোপের পাশে।

পূর্বরাগে ভালোবাসার যে স্বপ্ন জন্মেছিল
আমি তার ধূলো গায়ে মেখে আছি সমূহ বিশ্বাসে।
নেবে?
শব্দহীন সূর্যালোকে পূর্ণ প্রেম---
অবিরোধী দুঃখের বিজিত সমারোহে।