Powered By Blogger

বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০১৪

মৃত্যু,ক্ষুধা ও চুম্বন

বসন্তের গূঢ় ধৈর্য্যে সমস্ত অক্ষরগুলো ধ্বনি-প্রতিধ্বনি সহ মুছে যায় প্রতিটি জন্মের পূর্বে এবং নগর ধ্বংসের পরে বিপরীত করতলে শুধু চিরায়ত একতি মুহূর্তে দালপালা অথবা বল্কল থেকে তুলে নেয়া ঘূণাক্ষরে লেখা পাঠ ম্লান,বিপূল গ্রন্থের কাছে হলুদ পাতার দুপুরবেলায় অনর্থক ছোটাছুটি বেলাভূমির আনত রৌদ্রে যতদূর দৃষ্টি যায়---- প্রসারিত ভূমি,নিষ্প্রভ অরণ্যে নাক্ষত্রিক স্বপ্ন যত প্রতিচ্ছবি অনুবর্তিতাকারে লুপ্তির পথে শুধু গত সহস্রাব্দের আলোয় পরিস্ফুট মৃত্যু,ক্ষুধা ও চুম্বন

শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৪

জলস্পর্শের অধিকার

পাখিদের স্বরলিপি উড়ে গেছে আকাশের পূরাণে;ডানায় রক্তক্ষত, পায়ে অসুখ-শব্দের সম্মোহন,নক্ষত্র ফোটার পূর্বে শেষ অস্থিরতা এবং অপস্রিয়মান ছায়া ছুঁয়ে যায় মর্মতল রক্তের তৃষ্ণায় যারা উড়ে গিয়েছিল-তাদের লোহার ঠোঁট ও ইস্পাত নখ পুরানো স্মৃতির ভারে কেঁপে ওঠে স্রোতস্বতী পার হয়ে সারারাত দুঃস্বপ্নের অসংখ্য শোকের ডাল কেটে যখন জলের কাছে ফিরে আস,ভাবনাহীন বৃত্তের মধ্যে যা কিছু টেনেছ,ঘূর্ণিপাকে অন্য দেশ,স্কুল,হাসপাতাল,মন্দির--- স্মরণাতীত কালের জলে ভেসে ওঠে প্রতিচ্ছায়া এই জলস্পর্শের আজন্ম অধিকার এখনো অটুট আছে

শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০১৪

জলবতী-২৫

সপ্তসুরের প্রকৃতি ভেঙে কার্তিক জ্যোৎস্নায় যা পেয়েছি অথবা যা পাই নি---অবলীলায় উঠে আসে নিসর্গরেখা,মাস্তুল,___ নদীর বিরুদ্ধগামী ঢেউ ক্রমশঃ টানছে অর্থহীন শব্দগুলো অই পারে মোহের শরীরে দুঃখ নেই,ভার আছে শিরা-উপশিরা ভরে জল অথচ সমস্ত সম্ভাবনা ফেলে নির্ণয়িত দিগন্তের স্থির বিন্দুতে ভবিষ্যৎ ম্লান সাদা ঘোড়া ছুটছে,পেছনে আলো,অন্ধকার তার পায়ে পায়ে

শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৪

জলবতী-২

১৯. সকাল ও সায়াহ্নের নদীতে অঢেল ঢেউ বালির ওপর নতজানু হয়ে সূর্যস্তবে বসেছি;গায়ত্রীমন্ত্রে মুছে যাবে শোকাবহ আগুন,নদীপ্রণামে কত লোক এসেছিল আজ? নিবিড় শ্লেষাবিহীন স্মৃতিকোষে শঙ্খের ফুৎকারমতো প্রাগিতিহাসের দিনলিপি তুমি কোন মুহূর্তের মুখ হাতে ধরে আছ,জলবতী? ২০. পরিত্যক্ত বন্দরের মুখে বেজে ওঠে মাঝরাতের স্মৃতি কপালে ফাটল,স্বচ্ছ জলের সংসারে কান পেতে আছি একদিন,অভিমানবশে আমি আর কোন গান শুনব না ইলিশের,নাবিকের,ভাসানের এই জলের ওপর থেকে আলো একদিন সরে যাবে মেঘ ও উদ্ভিদলতা বালি ও পাথর নিমজ্জিত জাহাজ ও দ্রুতগামী বুদবুদরেখা,___ কিছু অংশ শুষে নেবে,বাকীটা প্রতিফলিত স্বপ্নের ভেতর তুমি, কোন অন্ধকারে লুকিয়ে থাকবে ২১. এখন গোধূলিবেলা জলের কিনারে স্তব্ধ হাতে দাঁড়িয়েছ,জলবতী লুপ্তস্মৃতির সমস্ত কোষে নিষ্ফল আক্রোশ জলে ভেজা দু'পা;দাঁড়িয়ে থাকার অনন্যতা,স্থির ছবিতে নিসর্গ,___ সবকিছুই মানিয়ে যায় ধানসিঁড়ি, শালকী,সোহাগী অলকানন্দা,অমরাবতী..... সব নদী-ই সমুদ্রগামী শুধু আমাদের গন্তব্য অপরিণামদর্শী,উদ্দেশ্যবিহীন ২২. একশত চাঁদ পূর্বে থেকেই নদীবিস্তার কিংবা কুয়াশার মধ্য থেকে জন্মের জটিল ঠোঁট ছুঁয়ে আলো ও অন্ধকারের জল সীমানায় ব্যবহৃত শব,___ তোমার মুখমন্ডল ঘিরে অশ্রুবিন্দুজাল অস্তগামী চাঁদের তলায় কে এঁকে রেখেছে নগ্ন স্নানঘাট অপলাপী ভাষার বৃত্তান্ত থেকে এই নিঃঝুম নির্বাসনের প্রান্ত ঘেঁষে সশব্দ ও আশঙ্কায় হঠাৎ নোঙরের দড়ি ছিঁড়ে কাপড়ের পাল,কাঠের মাস্তুল,___ বালির চরায় ঠেকে আছে জলযান নীরবতার আনত চোখে কত ক্লান্তি,ছিন্ন মিথ্যা ও প্রত্যয়ে পথচলা কিছু বাকী ছিল---স্বপ্নের মতোন সমবেত সুরে আত্মতৃপ্তির সঙ্গীত;যারা গেয়ে থাকে,তারা বিদায় নিয়েছে সংহত উৎসব শেষে আমাদের ডানাজোড়া খুলে আমরা কী তবে জাগতিক বোধের অতীত আঁকড়ে থাকব ২৩. আশ্বিনের রোদ শুয়ে আছে বালুচর,কাশের জঙ্গলে নিভৃত সত্ত্বার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি;শবানুগমনের প্রহরে প্রতিবর্ণী অভিমান,---মুমূর্ষা ও শিল্পের অন্বয়ে মৃৎশিল্পীর চাকে নূতনভাবে নির্মিত যাত্রিকের শুষ্ক দেহ আবর্জিত কবিতার লাইন আউড়ে দ্রুত হেঁটে গেলে ২৪. ছন্দ বিভাগ ও বিভাজনে সমস্ত সকালবেলা সান্দ্র স্রোতের ভেতর পরিচিত উজ্জ্বলতা;নিশ্চিত শপথে মগ্ন সহজাত প্রবণতা আমি তীরে দাঁড়িয়ে রয়েছি মেঘ-রৌদ্র-আলোয় রচিত নিয়মনিরুদ্ধ প্রীতস্বরে ডেকে যাচ্ছি তুমি,জল ছেড়ে উঠে আস নিভৃত গৌরবে ঠোঁট তুলে বলে দাওঃ আমি একা নই ২৫. আমাদের ইচ্ছেগুলোর রুপরঙ আছে ধূসর প্রপাতে চেয়ে আছো ক্ষরণের দিকে খোঁড়া পায়ে চলে এসেছি;প্রাকৃত পৃথিবীর সমস্ত চাতুরী সাদা শরীরে মেখেছি বালুচর পার হতে যতটুকু শব্দ,তার চেয়ে বেশী শেকলের ঝনাৎকার শব্দ তুলে বুকের ওপর দিয়ে হেঁটে যায় দিন আমাদের ছড়ানো উজাড় কথামালাগুলো শেষ বিকেলের গোধূলিতে জলের মতোন স্পষ্ট জলপ্রবাহ,জলদর্পণে অনর্গল ছায়া এসে মিশেছে-ব্রতধারণে তোমার শরীর ঢেকে আছে-দুই তীরে রক্তিম ফোয়ারা দ্বিধা এবং ভয়ের প্রবল টান তবু আমি তোমার কাছেই ছুটে আসি

অন্য নাম

অন্তরের অতলান্ত খুঁড়ে দেখেছিঃতোমার আত্মা মিশে আছে অন্য এক নামে অকপট নিসর্গপ্রতিভায় যাদের অভিলাষ---অধিকাংশ হতপ্রাণ মেঘ ও শস্যের জন্যে প্রার্থনারত;মৃগয়া এবং মধু সংগ্রাহক শ্বেত ও প্রবাল ঘূর্ণিস্রোতে শুরু হয়েছিল প্রথম প্রণয় ঘাসে ভরে আছে উঠোন,এখন এই অবেলায় আর আমাকে ছুঁয়ো না

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০১৪

দেবী

আতুর বেশ্যার স্তনশীর্ষে সূর্যদাহ এবং অজ্ঞাত দংশনচিহ্ন গূঢ় মিলনের আকাঙ্খায় শরীর মথিত বিষ নিয়ে আমি তোর দরোজায় অতিথি,দেবতা পূজো দিবি না শরীর ঢেলে পূরোটা অতীত জুড়ে অনার্য আঙুলে মালা ও মদিরা শরীরের দূরতম শেষে অন্তিম বিস্ফার--- বিছানার মাঝখানে সভ্যতার ঘুম তুই কাঁদিস না বরঞ্চ গেয়ে নে কিশোরী নদীর গান বালুচরে যদি জেগে ওঠে উল্টোমুখের প্রাণ,আদিআত্মা যে যাই বলুক আমি জানি তুই সেই দেবী ঈশ্বরের সাথে অভিমানে মর্ত্যে নেমে এসেছিস তোর ডানা ছিল অন্ততঃ থাকাটা বিচিত্র ছিল না পিঠ উল্টিয়ে দেখিয়ে দে কাটা ডানার শুকনো রক্তক্ষত

মন্দাক্রান্তা রাগমোচন

পৃথিবীর শেষ কবিতাটি লিখতে অজস্র শব্দ ও বাঙ্ময় বেদনার মধ্য থেকে হিংস্র ও মাংসাশী অন্ধকারে জেগে ওঠে এক স্বপ্নাতীত সুর--- বস্তুত,দীর্ঘদিনের নিষ্ফলতা,শিল্প,সম্ভোগ,উদাসীনতা,--- ইন্দ্রিয়-তাড়িত ও প্রুতিশ্রুতিশীল কবিকে স্পর্শ করে না;সরল আকাঙ্খার মতো ভগ্নস্তুপের ভেতর এক অবিনশ্বর প্রচ্ছায়া---সোনালী বিভ্রম অশ্রুগ্রন্থির বিকাশ,মাতৃস্তন,বৃক্ষাশ্রিত বসত,পরিচয়ের সব সূত্র মুছে শালগাছের আড়ালে ধ্যানরত বুদ্ধের আসীনতায় গ্রীষ্মদুপুরের স্থির বিষুব শূন্যতা অবরোহী পদ্ধতিতে শনাক্ত করছে ভূত,ভবিষৎ ও অতীত চেতনার অস্থির জগতে বিতাড়িত হবার মুহূর্তে পরিদৃশ্যমান সুন্দরের জ্বালামুখ,মৃত্যুদিনের ফ্যাকাসে রঙে খুলে রাখে তার দৃষ্টির আগল মন্দাক্রান্তা রাগমোচনের সুরে বিমোহিত শেষ কবে তাকিয়ে দেখেছে প্রেমিকার পায়ের ঘুঙূর

বুক-চাপা সমুদ্র গর্জন

যেটুকু দেয়ার কথা ছিল--- হাতের আঁজলা ভরে শূন্যদৃষ্টি,বুক-চাপা সমুদ্র গর্জন,--- হৃদয় মথিত শান্ত আবেদনগুলো অজ্ঞাত জলের মতো বেড়ে উঠছে;লবণজল চুম্বনের ছবি মুছে নিয়ে গেল অতিকায় ঢেউ ভদ্র ও বিমূঢ়তায় পলি জমে ওঠে আমার নিমজ্জমান ঘরে তোমার শরীরে বৃষ্টিভরা মেঘ কিন্তু কোনো বৃষ্টি নেই বুকে ব্যস্ত যৌবনের তাপে বাষ্পে বাষ্পে ভস্মীভূত শরীরের ছায়া মাটিছোঁয়া মুহূর্তে ঝর্ণার কলরোল একদিন স্তব্ধতার মুখোমুখি নগ্নশ্বাস,ঊরুর কম্পন,--- রতির এমন উথাল-পাথাল ঢেউ সেদিন দারুণ ঝড় উঠেছিল,মাঝরাতে

একাকীত্বের শূন্যতা

সিঙড়া বনের ঐ পাশে অনর্থের ছায়া,মেঘ ও সূর্যাস্ত চুম্বনরত বাঁকের মুখোমুখিঃপাথরে আছড়ে পড়া ঢেউ এবং তারপর শুধু একাকীত্বের আবহ একাকীত্বের শূন্যতা মেলে উড়ে যাবার সময়ে আমি স্পর্শ করেছিলাম দুঃস্বপ্ন তুমি তার ভেতর নিঃশব্দে মাথা নেড়েছিলে

পরিত্রাণের প্রত্যাশী

কাঁচুলির গিঁট খুলে মেঘ ও ছাঁয়ার খোঁজে-অভাবিত প্রাপ্যনীয়ে পরিষ্কার রক্তে ফুটে ওঠে উষ্ণমন্ডলের সূর্য,উত্তরের কৃষিক্ষেত নির্জন দুপুরবেলা,কাশের জঙ্গল নড়ে ওঠে অবিশ্বাস্য রুপান্তরে নির্বাণের মোহ ভেঙে বালির ওপর শুয়ে আছে বৌদ্ধ ভিক্ষু নগ্ন শরীরের চোখে নিরীশ্বর রৌদ্রে পরিত্রাণের প্রত্যাশী

সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০১৪

সমুদ্র,আগ্নেয়গিরির সুর

করতলে যেটুকু জীবন ধরে,--- তার বেশী চাই নি কখনো দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরের ভেতর থেমে আছে জাগতিক স্রোত রজঃস্বলা দিন,অন্তহীন রাত যে কোনও পূর্বতন প্রেমিকা;সমস্ত সম্পর্কের শেষে লুকানো অভিমানের ইতিবৃত্ত-কত অবিশ্বাস্য যন্ত্রণা,ঈর্ষার সংক্রমণ চতুর্ভাঙা মুখ,চোখে ময়াল সাপের ক্রোধ আমি কেন এত মূঢ়মতি আধা জীবনের জমানো কৃষ্ণচূড়ার যত ফুল অপাত্রে ঢেলেছি অন্তর্বেদনার পাখি সুর ধরে সেই সুর সমুদ্রের,আগ্নেয়গিরির

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০১৪

সম্ভোগ এবং বৈরাগ্য

দু'পায়ে ব্যর্থতা,প্রগাঢ় শরীরে ধূলো ও ভস্মের কণা এ-জীবন যেন অন্ধকার,শূন্যে মুছে যাবার বর্তুল পথে গতানুগতিকতার রৌদ্রে ঝলসানো ফুলে-ওঠা বাঁশঝোপের ভেতর দুঃখ ও যৌনতা ভেঙে চোরাপথের নিষিদ্ধ মানচিত্র এঁকে সম্ভোগ ও বৈরাগ্যের গৈরিক কৌপিনে আত্মসন্তষ্টির রঙিন জগত রক্ত,মদ ও জ্বালানী---অন্ধকূপ এবং উন্মাদ আশ্রম,___ নিজেরাই নিজেদের কবর খুঁড়ছে পাহারায় পাথরচোখের সৈনিক,উন্মুক্ত টাঙ্গি হাত

বিবৃতি

রাত্রির আড়ালে চোলাই,কারণ বারি ও সাট্টার ধূম লেগে আছে তোমরা অপেক্ষা কোরো,--- কলার মধূর মতো কিশোরী ঠোঁটের স্বাদ পুঁজরক্তে মাখানো চাঁদর আর অনন্তের কাছাকাছি দীর্ঘ শৈত্যের ভেতর অন্ধকার প্রসূতিসদনে ঘুম নেমে আসে ক্রমবিকাশের ছবি,পরিত্যক্ত সারেঙ্গী ও অন্য বিবর্তনে অজন্তা,ইলোরা থেকে আজকের এই কসমোপলিটন শহর ঘিরে যে মন্বন্তরের রুপরেখা---কুৎসা ও নির্মমতার সমকামী সভ্যতার আস্তাবলে জন্ম নেয়া ক্ষমতা ও মেগালোম্যানিয়া___ ভেবে দেখেছোঃদুর্জ্ঞেয় পাটিগণিতের নির্বেদ শূন্যতা বেদ,কোরান ও বাইবেলে সঙ্গত প্রশ্নচিহ্নের অন্তরালে আত্মগত প্রশংসার স্তব দুঃখমোচনের কোনো সার্বজনীন পদ্ধতি নেই কিন্তু ধর্মযাজকের শুয়োরমুখে ঠিকই শোনা যায়ঃ নিশ্চয়,পাপের ক্ষমা আছে

বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০১৪

রাতের গল্প

নিরানন্দ ঘুমের ভেতর এক লুকানো মৃতদেহের সাথে আমি প্রতিনিয়ত সঙ্গম করি। বিনাশের গভীর সঙ্কেত বেজে উঠলে অশ্রুর শুক্র তীব্র গতিতে অশ্রুর ডিম্বানুর সাথে প্রচন্ড সংঘর্ষে সম্ভাবনাময় নূতন একটি সকালের জন্ম দেয়। এভাবেই একেকটি রাত কেটে যায়।