Powered By Blogger

বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৩

আদিম সন্যাস

অনিশ্চিত পদক্ষেপে কে এগোয়?সচেতন প্রয়াসের নিবেশবিহীন পথ,
স্পষ্ট দেখা যায় নিস্পৃহতার ভেতর ভারী হয়ে আসছে দু'চোখ।
নিরতিশয় গোধূলি রঙে জ্বলে ওঠে অস্তিত্বময়ী চেতন,
অনিবার্য পরিণতির গোধূলিবেলা ওই দেখ কেমন ছুঁয়েছে স্বররণচূড়া!

তাকে অধিকার করে রাখে আদিম সন্যাস।

কবর

ত্রেতা যুগের বাতাস এসে শরীরে লাগছে

তোমরা কিছুই টের পাও না----পালাতে যাই
অশোকের ডাল ভেঙে কাধে পড়ে
অতীতকালের জলে আছড়ে পড়ছে ডিঙি নৌকা

ছায়াচর ঘুমে বিভোর,কবর কই
আমার শোয়ার সময় হয়েছে

অমাঙ্গলিক উল্কি

সহজ জলের স্তরে ভাসতে ভাসতে কতদূর,যাবে
আমাদের পাপের অভ্যাস,অমাঙ্গলিক উল্কির ছাপ সমস্ত শরীরে
অনাস্বাদিত অন্ধকারের ভয়ে কেউ ফেরে
কেউ ফেরে না---শূণ্যের অধিবাসী এ মানবজন্ম,----
প্রসারিত দুই হাতে মৃত্যুর পূর্বের লগ্নে তুলে নিয়েছিল
অমীমাংসিত সম্পদ আর বন্ধুর নিষ্ঠুর উপহাস

আমাদের পিঠে লবণজলের শোকাবহ ক্ষত
জলে ভাসমান ফুলে ওঠা সেইসব মৃতদের পার হয়ে যাবো
যাদের মায়েরা আজো ঘাটে দাঁড়িয়ে কাঁদছে

মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৩

প্রাকৃত শব্দের বোধ

প্রাকৃত শব্দের বোধে কবিতা লিখেছিলাম
সময় যখন গৃহমুখী

আমার ফেরার তাড়া ছিল
তোমার সময় ছিল না বরঞ্চ অপব্যয় বেশী হয়ে গেছে

এই ভেবে ভেবে দুই চোখে তীব্র ঘৃণা নিয়ে
পরস্পর বিপরীত পথে............

অন্তরালে সাজানো জীবন,
ভাঙা সংসার,যা কিছু ফেলে এসেছি সবই সুখময়
শুধু সুখের অস্তিত্ব ঝড়ে গিয়েছিল

পাঠোদ্ধার

গাছের পাতার মধ্যে কীট
হাতের তালুতে দীর্ঘশ্বাস,নক্ষত্রচূর্ণ----কে লিখে রেখেছে এসব

লোকে ভুল বোঝে----লোকায়ত ভুল
পায়ের তলায় ফেলে সংসারত্যাগী বাউল
শতাব্দী পরের কবি,অন্ধ পাখি-----
ক্রমঅপস্রিয়মান রেখা আর রেখাগুলোর পাশেই নিয়মবহির্ভূত প্রতিচিত্র
অন্তঃর্মুখী বর্তমান ক্রমে আরো ভাঋক্ত
শুধু অন্যদের কথা ভেবে ভেব যে ধ্বংসের বীজ পোঁতা আছে,---
সেই রগ্ন মাটির সবুজ ঘাস জ্বলে যাচ্ছে সীসা ও গন্ধকে

নিরুত্তাপ অন্ধকারে এতো রক্তপাত
তাকে ঢেকে রাখে কাদা ও মাটির তাল

মানুষেরা আজ ভুলে গেছে সব দুঃসংবাদ
শুধু রাজদ্রোহী কবি প্রাচীন অক্ষরমালা ঘেঁটে লিখে রাখে
দ্রুতগামী হরিণের আঁকাবাঁকা শিঙ-এ

যদি পারো পাঠোদ্ধার করে নাও

সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৩

নাগরিক সভ্যতা

.সমস্ত শরীর জুড়ে অপমান
এত অপমান নিয়ে বেঁচে আছি কি করে ভাবতে গিয়ে
হাঁটুজল ভেঙে অবসন্ন একদিন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
গ্রামজোড়া রৌদ্রনভস্তলে

আজন্ম নগরপাপী---
নগরপিতা আমাকে বলেছিলঃ

আমাদের এই নগরের জন্যে কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করেছ
পৌরপথে তবে কিসের প্রতীক্ষা

যদি না ভেঙেপড়ে অস্তিময়ী চেতন,এককেন্দ্রিক
আমরণ অন্তঃসার অভিশাপের মতোন
নগরপিতার শঠময় শ্বাসপতনের শব্দ

অনিশ্চিত পদক্ষেপে আমাদের যাবার বেলায়
নগরভবনে কিসের উৎসব

সতর্ক লিপি

ফুলহীন দু'হাত ছুঁয়েছে ঠোঁট
বুঝে নিয়েছিলাম আহ্লাদ
বহুপরিচর্যাজাত তোমার শরীর উল্টোদিকে বৈঠা টানে
আমার নৌকায়
নদীর অব্যবহৃত জলে ভেসে যেতে দেখি পরিত্যক্ত চোলি ও কাঁচুলি

কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছ,দৃষ্টি আকাশের দিকে
আকাশের ওই কোণে ঈশ্বর থাকেন
আমাকে কি উপহার দেবেন, ঈশ্বর
নব-আবিষ্কৃত ধাতুর আঁকর
গর্ভ উন্মাদনা
সিমেন্ট,বালি ও পাথরের চাক
কূল রক্ষাকারী ভ্রাম্যমান পরিদর্শকের পদ;যাতে
সমুহ ক্ষতির আগে টন টন শস্যে ঢেকে দিতে পারি জনপদ

ওই নদীতীরে দেখা যায় মধ্যযুগ শেষ হয়ে গেছে
বানভাসী মানুষের শীর্ণ পেটিকায় নিরন্নতার সতর্ক লিপি
জন্ম ও মৃত্যুর অন্তরালে যেই বিভাজন
তার মধ্যে কোমর বাঁকিয়ে চলে শঙ্খচুড় সাপ

দূরে সাঁপুড়ে দাঁড়িয়ে হাতে ঝাঁপি

পিতামহের অনাব্য দেহ

শরবন নুয়ে পড়ে ভরাট দুপুর রোদে
আশ্বাস-সংশয়ে পরিকীর্ণ বাবলার বনে
স্মৃতি না-কি ভবিষ্যৎ ঝাপিয়ে পড়ছে---
আমরা জানি নি
অনতিরিক্ত যা স্পষ্টতঃই তাৎপর্য্যহীন এপার
ওপারে সন্ধ্যার শীতে কুঁকড়ে পড়ছে ঘাসবন

কাঠ বাদামের তলে উপাসনারত কিছুটা গভীর সত্য
কিছুটা সত্যের দোলাচলে জানতে চেয়েছিঃ
স্পষ্ট উচ্চারিত বর্তমান,অতীতের দিনলিপি...........

চোখে ভাসে অনাবিষ্কৃত নক্ষত্র আর
শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে আসে অরণ্যতক্ষক

স্বপ্নের ভেতর কেবলই তাড়া করে ফেরে রক্তমাখা নখ
পিতামহের অনাব্য দেহ

রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৩

প্রতিরুপ গোধূলি

সূর্য্যাস্ত দেখবে বলে
একাকী ধানক্ষেতের আলপথে হেঁটে চলে কবি
পেছনে শ্মশ্মাণ,পোড়োবাড়ি,শতেক যোজন বধ্যভূমি----
মুছে ফেলে বৃষ্টির চঞ্চল রেখা
কত সহজ,নিশ্চিত বর্ষা আসে বর্ণময় প্রয়াসের সামগ্রিক প্রতিরুপে

ভাবময় কল্পনার নদী----দু'তীরে জলজ গুল্ম
নিঃসঙ্গ মাছরাঙার শেষ অস্থিরতা মিশে যায় ঘোলাজলে

এ-রকম কালো মেঘলা দিনের শেষে গোধূলিবেলা খুঁজতে বেরিয়েছ

শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৩

প্রুতিশ্রুতি

অবশেষে শূণ্য পড়ে থাকে শীতভুমি।এ ভূমির ঊর্ধ্বাকাশে
এক নক্ষত্র উঠেছে।কুয়াশায় কুয়াশায়
যদিও তা ঢেকে ছিল কিন্তু
প্রুতিশ্রুতি মুছে যায় নি---যে প্রাপ্তি জাহাজের মতো

দূর সমুদ্রে জাহাজ পাড়ি দিলে মাস্তুল,ধোঁয়ার রেখা
আরেক বন্দরে মেশে নূতন প্রুতিশ্রুতিতে।

তারপর শুধু ঢেউ,
সফেদ ফেনার কানাকানি।

তোমার দ্বিতীয় প্রুতিশ্রুতি কবে দেবে?

নিরাসক্ত

প্লাবিত গাঁ,
চলো,আমরা কাদামাটির পথ পার হয়ে যাই
ওপরে সহস্র বক দানা ঝাপটিয়ে নিজেকে জাহির করে
ধানছড়ার ওপর,মাঠে বৃষ্টি পড়ে
আর মৌনতায় স্তব্ধ তুমি বাতাসের কাছে
সুরভিফুলের ফুটে ওঠার খবর নাও

গ্রাম রক্ষাকারী বাঁধে অনাহারী মানুষের ভীড়,জীর্ণ পেটিকায় সতর্কলিখন
ষড়যন্ত্রী নেতা ও সমাজপতিদের হাতে
তাঁবু,রিলিফ পেছনে ক্যামেরার লাটবহর,সম্ভাবনারহিত প্রুতিশ্রুতি মুখে

আমাদের অনেকদিনের ব্যবহৃত ঘর ভেসে যাচ্ছে ওই
নিরভিমান আঁধার জলে
নদীর জলের ছলছল শব্দে যতোদূর ভেসে যায়
ততোদুর চেয়ে থাকি কিন্তু কেউ-ই ফেরার কথা ভাবছি না
কালো গোলাপের মতো ফুটে ওঠা আষাঢ়ের ঘন এই রাতে


বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৩

চোখের ভাষা

যেদিন জেনেছ
আমি চোখের সাংকেতিক ভাষা অবলীলায় পড়তে পারি,---
তুমি আর সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকাও নি
যদি ভালোবাসার অতলে ডুবে যাই

সাজানো জীবন নেচে চলে রুপালী দুপুরে
আমি যত শঙ্খ কুড়িয়ে এনেছিলাম----
চোখের অশ্রুতে মুক্তোগুলো সব ঝরে যায়

চারিদিকে এত জল
বুকের প্রপাত বেয়ে ঢল নামে
শর্তহীন লোভে ব্যভিচারী ডিঙা খুঁজি
বিপরীত তীরে পাড়ি দেব
কাছে এস
এ চোখের দিকে অপলক চেয়ে থাকো

অমর্ত্য প্রেমের কিছু কবিতা লিখব

দ্বিতীয় প্রস্তুতি

আমি নিজেকেই ছেড়ে গিয়েছিলাম নিস্তব্ধ মধ্যরাতে
আধোস্বপ্নে মানুষেরা কালান্তরে ছোটে
অনিশ্চিত তাদের পায়ের শব্দে
প্রবহমান শক্তিতে
দক্ষ ডুবুরির মতোন অনিদ্রিত
অর্থাৎ সম্ভাবনারহিত

আবশ্যিক আর স্পর্শ্ময় শস্যক্ষেত ও পাহাড়ী পথে নিশ্চেতন মৃত্যুপক্ষ
ভূগোলের মাঠে আজ শুধু মানুষের কাটা ছেঁড়া জিভ
পূরো পৃথিবীর মাঝখানে শুধু রক্তমাখা হাড় ও করোটি
সাজানো রয়েছে----প্রলম্বিত অপেক্ষা ও একাকীত্বের গানে দ্বিতীয় প্রস্তুতি

পূর্ব নির্দেশিত ক্রমরুপান্তর
না-কি নিজেকেই ছেড়ে যাবার প্রয়াস

বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৩

ধর্ম

ততটাই মানানসই প্রাত্যহিকতা---যতখানি আমাদের বেঁচে থাকা
পরাশ্রিত ধর্ম---যতটুকু ধূসর,সবুজ ঠিক মৃত্যুর রঙ
আমরা কখনো ধর্মচ্যুত হব না এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে
শিউলি তলায় চল
বেলপাতায় সিঁদুর মেখে নাও

আজ দেবতার ভোগ দেব উপবাসী,নিরম্বু শরীরে

বিকৃত মুখের ফুল

জ্বলন্ত অগ্নিকে আমি নিভে যেতে দিয়েছি।রক্তের মধ্যে
ফেনিল উচ্ছ্বাস-----দেয়ালের কোনায় কোনায় ঝুল,মাকড়সাজাল,
প্রতিরোধে ক্ষয়ে ওঠে ভূর্জপুঁথি।স্পষ্টতঃ যা উঠে আসে
করপুট পেতে ধরি----বিকৃত মুখের ফুল।

রাত্রি যত গাঢ় হয়
নক্ষত্রেরা পরস্পর উপহাসে মেতে ওঠে নিজস্ব আকাশে।

নিঃস্ব

চিরকাল মানুষের কাছে ক্ষমাই চেয়েছি,----
মাতাল এ হাআত যতটুকু রৌদ্র ছেঁকে নিয়েছিল
বোধের পৃথিবী থেকে---তার সবটুকু
ছড়িয়ে দিয়েছি পাখিদের অভয়ারণ্যে,গ্রীষ্মের শেষে
বালির পাহাড় ভেঙে একটি মুহূর্তে তুলে নেয় প্রতিচ্ছবি
ডুবোজলে অবিরত লুকোচুরি

উৎসরিত সব গান ও কবিতা তুলে নিয়েছ আঁচলে

অনুচ্চারিত সমস্ত শব্দ কি কেবল
তোমাদের অধিকারে

মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৩

জলপোড়া

আমার বুকের মধ্যে আগুন,হাঁড়ের মধ্যে ঘূণেপোকা।
মোহঋতু,বসন্ত উৎসব----সব আনমনা ঝরে পড়ে।
যারা চলে গিয়েছে অব্যবহৃত ঘর,সাজানো সংসার ছেড়ে
তারা আজ,কাল বা পরশু ফিরে আসবে এমন প্রতিশ্রুতি
পীত জারুলের বনে মিশে আছে।
সমর্পিত দুপুরের হলুদ বেলায় অগ্রুন্থিত মালা,
যত দুর্লভ সংগ্রহ----ধ্বংসবালির ওপর মেতে আছে শ্যামাপোকা।
যে পাথরে লেখা হয়েছিল এপিটাফ---
আজ তা মলিন,ধূসরিত।

অতীতের আবর্জনা বলে ভাঙছে কাঁচপাত্র,
পূরনো খাতায় লেখা গান।

অনন্ত জলের নীচে আমার প্রস্তুতি।
অতল জলের থেকে ঘাঁই মারে জলপোড়া প্রকৃত শরীর
একদিন ছুঁয়ে যাবে বর্তুলাকার পৃথিবী,
প্রচন্ড সাঁতারে।

রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৩

নিয়তিময় শতক

অনন্ত বর্ষার জলে ক্ষেত্রজ কৃষক আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে
পাশাপাশি তার ছায়া,---
দীর্ঘ পথে প্রতিফসলের দিকে মোহঋতু
সারাৎসার পানীয়ের কথা মনে পড়ে

চারিদিকে এত ফেনা ও জলের বুদবুদ
খেলাচ্ছলে গ্রামময় ছুটে চলে কিশোরীর চঞ্চল পা
ইন্দ্রিয়গোচর বস্তুব্যাপকতা থেকে ঝরে পড়ে গুপ্তরোগ,শরীরের শ্বেতকুষ্ঠ
চেতনাউদ্ভূত কবি ছুঁড়ে ফেলে কবিতা লেখার খাতা

কিশোরীর সারল্য ও নৈসর্গিক পাঠমালা

এই শতক নিয়তিময়
খুঁটে তোলে কন্দফল
কৃষক ও তার কিশোরী দুহিতা

কমলা রঙা

বনের ভেতর পথ হারিয়েছ
এখনো শিশিরকণা লেগে আছে গাছের পাতায়
ঝরে যাচ্ছে নিঃস্ব পাতা ও নূতন কুঁড়ি
অরণ্যের ভেতর আঁকা বাঁকা শিঙের মাথায় ব্যভিচারী পরগাছা
কেমন জড়িয়ে আছে

দ্রুতগামী চিতা----মহিষের পিঠে দগদগে কাঁচা ক্ষত
বেয়ে রক্ত ঝরছে--ঐ দূরে হরিণের সতর্ক চাহনী
আমি এই বনে যত ঘাস,যতফুল দেখেছি---মৌমাছি
তার গুঞ্জরণশীল অমিত ডানায় মেখে নেয় শুধু

যারা আঁকরের খোঁজে জরীপের যন্ত্র এনেছিল
অগ্নি জ্বেলে ঝলসে নিয়েছে বনমোরগের মাংশ
তারা ফিরে গেছে তাদের শহরে
ইতঃস্তত পড়ে আছে খাবারের কৌটা,দড়িদড়া

নীল জলাশয়ে নবমীর চাঁদ যখন ঝলমলিয়ে ওঠে
তাদের কমলা রঙা মুখ মনে পড়ে

আমি মনে মনে ভাবি সেইসব সাপ,---
কোমর বাঁকিয়ে একা একা গর্তে ফেরে

উৎসবের নাচ

অনিমন্ত্রিত এসেছি তোমাদের এ উৎসবে।অনভিনিবেশে
সাদর অভ্যর্থনার প্রত্যাশিত---
একাগ্রতা ভুলে ঝাড়লন্ঠনের শর্তাধীন আলো
শরীরে মেখেছ?কতদিনের প্রস্তুতি অপরিজ্ঞাত প্রয়াসে?

স্বতঃস্ফুর্ত ফেনিল প্রক্ষোভ।প্রতিটি বিন্যাসে,
প্রতিটি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্ণ রেখায় অমিত কৌতুহল।
আমাদের বুকের ভেতর বিপর্য্যয়,অনন্তকাল স্তব্ধনিবেশ,
অন্ধকারের ভেতর বনভূমি,তমোপাহাড়,মাঠের নিথরতা।

অন্ধকারের রঙ,শীত,কুয়াশা।প্রশ্নের অবসানে
ঘুঙুর বাজছে।উৎসবের নাচ শুরু হল এই।



মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৩

পরিণতহীন

আধো-অন্ধকারে জামের বনের মধ্যে ক্ষুধার্ত কাঠবিড়ালি
আমি তার ছুটাছুটি দেখি ডাল থেকে ডালে
পাতার আড়ালে ক্রীড়াশীল ছেলেবেলা
অর্থাৎ সৌন্দর্য্য এবং উজ্জ্বীবনের উৎক্ষিপ্ত ব্যথা---
অবিরত সংকেতে পূবের নক্ষত্রবিহীন মাঠ ভরে ওঠে

ঐ প্রান্তর পয়মন্ত নয়
অন্ধ বাউল একতারার সুরে দেহতত্ত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে
এমন অনেক শূণ্য ক্ষেত
আত্মাহীন শরীরের অবসানে তোমরা কোথায় যাবে
শিমুল তুলোর পরিণতহীন লক্ষ্যে
তপশিলি পথে পরিত্যক্ত শহরের দিকে

বহুদিন অব্যবহৃত হৃদয় খল-নির্ভর কম্পাসে লুপ্ত

সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৩

অফুরান ছুটি

নির্বোধ ক্ষমতামোহে ভাসে জল
আর ওদিকে ডাঙায় এত এত মানুষের শোভাযাত্রা
রেইকজাভিকে উত্তেজনা প্রশমন
অসলোয় শান্তিচুক্তির দলিলে গূঢ়মন্ত্র

অপরিকল্পিত দূর্বাঘাসে কাঁচির আঘাত---
পরিপূর্ন নান্দনিকতায় ছেয়ে আছে তোমার বাগান
ফুল তুলবার কালে মালী নেই
বসন্তদিনের মাঠে অফুরান ছুটি

রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৩

অবৈধ সঙ্গম

জামরুল বনের অন্ধকারের মধ্যে
দাউ দাউ জ্বলে ওঠে অগ্নিশিখা
তার ভেতর নিমগ্ন নারী
আমি তাকে জাপটে ধরেছিলাম,---

এটা ছিল আমার দ্বিতীয় সহবাস

বুকের কাঁচুলি খুলে পাড়ার অতসী দিদি
আশ্বিনের জোছনাজলে সাঁতার কাটছিল
আমি ভুলেছিলাম পারিপার্শ্বিক,স্থান,কাল
প্রথম নারীদেহের স্বাদ

তৃতীয় সঙ্গমে সারারাত কেটেছিল অপা বৌদির শোবার ঘরে
নীলাভ আলোয় জ্বলে যাচ্ছিল শরীর
অনাবিষ্কৃত রহস্যে

তার পরদিন অপা বৌদির হাতের মুঠো থেকে
রাশি রাশি যুঁইফুল কার্পেটে,মেঝেতে আলপনা এঁকেছিল

'আমার মৃত্যুর জন্যে কেউ দায়ী নয়'

সেই থেকে শূণ্যে দুই হাত তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছি
আমার মাথায় পাখিদের বাসা
শরীরে মাকড়সার জাল......

অবকাশ

কৃষ্ণপক্ষ নাচে দু'চোখে।পালিয়ে যাবে?
বিশ্বস্ত সমুদ্রে?ঘণ অরণ্যের ভেতর প্রবল রোদশ্বাস।
দুপুরবেলার নদী।কাঁপছে প্রবাসী নৌকা।খোল ভর্তি পাপ।
এতোদুর এসে ফিরে যাব?

যোজনবিস্তৃত জলাভূমির ওপারে
পরিচিত পথেরা প্রত্যহ ফিরে আসে।
সীমান্ত শহরে ধূ্লোওড়া ভীড়,
দিগন্তের ওপারে কদ্দুর যেতে পারবে,এতোটা অবকাশ?

আমার একটি চোখ আধখানা ভালোবাসা নিয়ে জেগে আছে।

শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৩

অসম পরকীয়া

অসম পরকীয়ার জালে যখন জড়িয়ে পড়লাম---
চারিদিকে ছিল পারিজাত আলোর অজস্র রেখা,
ক্রমপরিণত গোলাপী অভিনিবেশে অবিসংবাদিত কৌতুহল।
যে কষ্টের শেষ হয়ে গিয়েছিল তার জন্যে
হটাৎ উদাস হয়ে ওঠা।
অদৃশ্য পারস্পরিক ছন্দে অশাসিত স্থলপদ্ম---
অনির্মিত জেগে ওঠে অন্ধ চুম্বনের আঁধারময় ব্যর্থতা।
অসংশয়িত অবসানের আয়োজনে অনিচ্ছার ভেতর প্রাচীন মেঘ।

ওই মেঘ জলভারানত।

উর্ধ্বমুখী প্রয়াসে আলুলায়িত চোখ।
সু-শৃঙ্খল নির্ধারীত ছন্দে রচিত কবিতা
আমাদের আগে আগে এগিয়ে চলছে।

কোন দুঃখই আর বাসা বাঁধে না এ বুকে।

বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৩

অমোঘ শঙ্খ

অশান্ত নদীর স্থির চিত্র।পালতোলা ডিঙ্গি নৌকা।
ঝরে পড়ে উন্মীলিতা রাত।'দীর্ঘ যাত্রায় নৌকার ক্লান্তি কত'---
একদিন জেনে নিতে শ্মশ্মাণের আধ পোড়া কাঠ
রোদ বৃষ্টির মতোন ভেসে গিয়েছিল।

মন খারাপের কবিতা লিখব?দেখি মন ভালো হয়ে গেছে।
ধূলো ওড়া পথে গাইছে বৈষ্ণবী,
নিশ্চিত দ্বিতীয়া মরমীয়া গান।
দৃশ্যজগতের রহস্যময় আলোক,ভারমুক্ত আবেদন,জন্মান্তর---
প্রতিটি কীটের গুঞ্জরণে শুনি অশাসিত অন্বেষণ।
নৈষধচরিত,বৃহদ্ধর্ম পূরাণে অমনোযোগী বিচ্ছিন্নতা।
জীবনের ছন্দ কোথায় মিশেছে?

শুধু মৃত্যুর নিয়মে শঙ্খ বেজে চলে।

সহজতর জীবন

প্রথম মাতাল তার শূণ্য পাত্রে
বুদবুদ ছড়িয়ে দিচ্ছিল

দ্বিতীয় মাতাল তার জামার ভেতর থেকে
অন্ধকার আকাশে জোনাকী পোকাদের ছুঁড়ে ফেলছিল

আর নক্ষত্রগুলো কেবল জ্বলছিল

পরিবর্তন

সাংকেতিক পাথরে আদিম মানুষেরা কিছু লিখে রেখেছিল
আমি তার রহস্য উদ্ধারে মেতে উঠি

দেখি দূরের জানালা খোলা
টুপ করে ভেসে আসে কবিতার নীল খাতা
কে ছুঁড়ল
কোন কবিতা বিদ্বেষী নারী
না-কি ব্যর্থ কবি
সামাজিক দো-টানায় বিষুব শূণ্যতা
আমরা ফিরেছিলাম ভাসমান ঘাসবীজে
গর্ভাধান অনুষ্ঠান শেষে
মঙ্গলাগ্নি;যা কুশন্ডিকার সাথে আপাত পৃথক সীমন্তোন্নয়নে
দর্ভপিঞ্জলিতে আচঁড়ে দিয়েছিলাম সিঁথি

সেই সিঁথি আজো বিদ্যমান

কেবল চোখের দৃষ্টি পাল্টে গেছে

প্রত্যহিক

সমান্তরাল রেলসড়ক ঘেঁষে মাটির দেয়াল।
নিকানো উঠোন।
মহানিমের শাখায় অবসন্ন কাক ঝিমোয় রোদ্দুরে।
শরীরের তেল,ঘাম ধূয়ে অন্নপূর্না সাজে দ্বিতীয় প্রস্তুত,নববধূ।

ধূলো ওড়া পথে তার পুরুষ আসছে।

মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৩

নিস্তব্ধ উৎসর্জন

অনবহিত বনের শান্ত নদী---অপরিসীম নিয়মানুগে উন্মীলিত গতিপথ।
সেতু নেই।সারাদিন নিরভিমানী নৌকার পারাপার।
উর্ধ্বমুখী জলজ বন্যেবুড়োর ঝোপে অসংযোজিত অপেক্ষা।
নিতান্তই অনিচ্ছার ভেতর অযত্নে আঁকা সবুজের প্রতিচ্ছায়া।
নিরপেক্ষ রুপালী চরের সমগ্রতা অপস্রিয়মান।

ক্রমবিকাশমান স্বপ্নের নিবিষ্টতা ভেঙে
গড়িয়ে গড়িয়ে নামে বিন্যাসিত অবহেলা।
আরক্তিম কল্পনা।সমস্ত শ্রম ব্যর্থ।ফিরে যাব?
ক্রমপরিণত নিস্তব্ধ উৎসর্জনের মধ্যে।

শীত,রক্ত,আগুন ও জল

ভাষাগত তারতম্যে কেমন শীতল আচরণ
সারারাত ধরে অবিরল বৃষ্টি
আর বৃষ্টির ভেতর থেকে হেসে ওঠে
ভাঙা নৌকার গলুই
কাদামাটির পিচ্ছিল পথে আমবাগানের অন্ধকারে নিশীথ অপরিচয়

অনতিক্রমনীয় বরফস্তরে ক্রমস্ফীত রাত
ছুঁয়ে ছুঁয়ে এগিয়ে চলছে
তার প্রতি পদক্ষেপে আগুন,
অন্ধকার জয়ের প্রয়াস
রক্তের ভেতর নিশ্চিত সিদ্ধান্ত

আমাদের বয়স এখন কত হল
.........বিশ,ত্রিশ,চল্লিশ,পঞ্চাশ
দু'টো জীবনের তমঃনিবিড় বাসর
আমরা কি পূর্বাপর ক্ষয়ে যাবো
শীত,রক্ত,আগুন ও জলে
 

রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৩

ম্লান অনুস্যুতি

চারু বেদনার সীমাহীন আয়োজন
উদ্বাস্তু এ ঘর উপেক্ষার আস্তাকুঁড়ে
শৈশব-কৈশোর থেকে যৌবনের এতো প্রয়োজন
উড়ে যাবে চ্রিদিকে জ্যোৎস্নার আলোয়

অর্থহীন ধূলো,নিঃস্ব পাতা,----
আমাদের খেলাঘর ভেঙে যায়
মৌন বৃষ্টির নিঃসীম প্রতিবাদ বা চোখের জলে
অনিঃশেষ বৈশাখের ছায়া অপসৃত দুই হাতে

সংগোপণ প্রতীক্ষায় ম্লান অনুস্যুতি
সমস্ত শূণ্যতা ভরে ওঠে কুহকিনী অন্ধকারে
অলৌকিক উন্মোচনে দ্বিতীয় জীবন
ভাবনাময় গোলাপ ডানা মেলে

তুমি কোন সম্পন্ন পাড়ায় থাকো


শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৩

বিধুমুখী সুর

তুমি এত কাছে চলে এসেছ---তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ টের পাই
রাতের নীলাভ মানচিত্রে গুপ্ত গহ্বর,বনের মাঝখানে
জমে যাওয়া জোছনা আর তার আলোর ঝরণাধারা,----

দৃশ্য এবং দৃশ্যমানতার মধ্যে ভেঙে এনেছি সবুজ পাতাময় ডাল
আমাদের সু-নিশ্চিত বোঝাপড়ার ভেতর বিধুমুখী সুর

বসন্ত দিনের ঘাসে পড়ে থাকে বেনারসী-চেলি।

নিমগ্ন আয়োজন

দৃশ্যজগতের যত গান,কবিতা লিখেছিলাম,---
ভুলে গেছি সুন্দরের সব প্রতিচ্ছায়া।
বসন্তদিনের ঘাসে পড়ে আছে
বহু ব্যবহৃত রুমালখানি।ঐ দিকে
সম্পন্ন বাগান।গোলাপের ঝাড়ে সারাদিন কর্মব্যস্ত মালি;
যার নিজস্ব কিছুই নেই।
না,বাগান।না,প্রেমিকা।

তবে নিমগ্ন কিসের এতো আয়োজন?

বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৩

কুইনাইন

এইখানে চিকড়াসী বন।হলুদ ও লালফুল গুলো
ঝরে যাবার আগেই পেড়ে নাও।স্বল্পায়ু জীবন,
সন্নিবেশিত পাতায় বেঁচে থাকার অম্লান সাধ।
শাখাবহুল গাছের ফুলে পোষাক রাঙাবে?
তোমার বাড়ির সিংহ দরোজায়
নকশা আকাঁবে,তাই পাতলা কাঠের প্রয়োজন?
কাল রাতে জ্বর এসেছিল?
অবিরুদ্ধ ছাল থেকে তুলে নিতে এসেছ কুইনাইন?

মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০১৩

ব্যর্থ শ্রম

পাহাড়ের ঢালে আমার লৌকিক গ্রাম।ছড়ানো চত্বর,
ধূ ধূ মাঠ।অদ্ভুত পায়ের শব্দে
জলপাই বনের পীতাভ অন্ধকারে কারা হেঁটে যায়?

আদিম মানুষ?পায়ে পশুচর্ম,হাতে পাথরের ফাল।
কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যায় চকমকি পাথর ঠোকার শব্দ শুনি।
আগুন জ্বলে না।ব্যর্থ শ্রম।