Powered By Blogger

শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩

নবজন্মের প্রার্থনা

যত ইচ্ছে অসম্মান কোরো
গায়ে মাখব না
সুন্দরের প্রতিভাসে মূর্ত মুখের প্রচ্ছদ ভেঙে
বেরিয়ে আসুক অকৃত্রিম সাজ

শোবার ঘরের লগ্ন বারাব্দায় দিনযাপনের গ্লানি
টবে সহজ অর্কিড
সে ও দাবী করে আলো ও বাতাস
পৃথিবী বিস্তৃত দৃঢ় মেঘে

দুঃখগত দিন
সমাগত সুখের দিনের শেষে বৃষ্টিভেজা পথ
একা একা বৃষ্টিভেজা পথ পার হয়ে দেখি
ভাঙা নৌকা পড়ে আছে,জলপাড়ে

আমার মতোন নবজন্ম প্রার্থনায়

গ্রহণের অন্ধকার

তোমার উন্মুক্ত স্তন থেকে ওঠা ঘ্রাণ
আমাকে ফিরিয়ে আনে শ্মশাণ বা গীর্জা থেকে
রৌদ্রাহত নির্মলতা ভেঙে জৈবিক তাড়না...
তুমি জানো ভালোবাসা ঠিক কোন পথে পাড়ি দেয়

আমাদের দেখা হয়েছিল শেষ বিকেলের রোদে
কথা ছিল জ্যোৎস্নারাতে দু'হাতে ভাসিয়ে নেব,সবকিছু
মধ্যদুপুরের তাপ কিংবা অবিশ্বাসের তামসী রাত
সমুদ্রের অন্য পার থেকে ভেসে আসা শঙ্খচিলের বিহ্বল ডাকে,---

দিগন্ত অবধি অস্বীকার করে যাবো অমোঘ মৃত্যুকে

শতাব্দীর ছড়ানো চত্বরে শুয়ে আছে আলস্যের কিছু ইচ্ছে
আদিগন্ত ঘোরে বাজছে মধ্যরাতের ঘন্টা
আমরা একাকী ভিজে যাচ্ছি গ্রহণের অন্ধকারে

যারা ঘুমিয়ে রয়েছে তারা সবাই-ই জানে
অন্ততঃ আরও কিছুদিন পরমায়ু বেঁধে তাদের বাঁচতে হবে
মাটির গভীর থেকে উঠে আসা দিনে

প্রত্যাখ্যান

মৌমাছিমুখর দিনগুলোতে বিহ্বল পাহাড়ের চূড়ায় পদ্মসম্ভব
তার কেন্দ্রে মেলে আছো পাষাণ পাপড়ি
আমার বিষাদময় মুখ নৈসর্গিক ঝড়ে
পরিদৃশ্যমান সুন্দরের বর্ণোজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি এঁকে দেয়

প্রত্যাখ্যানের এ পরাভবে আমি নিবিড়ের সজলতা ভেঙে
ক্রমশঃ এগিয়ে চলি রোঁয়া ওঠা শহরের দিকে
অগুনিত বাঁকের আড়ালে একদিন
এখানে একটা শৈশবকালের বাড়ি ছিল

আজ দেখি পানশালা
আকন্ঠ মদের গ্লাসে প্রত্যাখ্যানগুলো বুদবুদে পরিণত

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৩

রোগাটে পাখি

গাছের হলুদ পাতা বাতাসে উড়ছে,---
সে সৌন্দর্য্য মনোলোভা,অন্য গ্রহ থেকে উড়ে আসা ধূলিকণা
উত্থানপতনে ভ্রষ্ট,সংসারের জটিলতার উপর চিরদিন কালোমেঘ,বজ্রপাত,
অনাবসান বাজছে----ওই দেখ আকাশ ঝুকেছে
নদীর ওপারে;যা নিথর প্রতিধ্বনিময়

অবধারিতের ইঙ্গিতপালনে যথাযথ প্রস্তুত আমরা
অবজ্ঞেয় শ্বাসপতনের শব্দে বিহ্বল বাতাস
গ্রীষ্মাবকাশের যাবার আগে দেখে নাওঃ

পুকুর পারের হেলে পড়া তালগাছে
বাবুই পাখির বাসা কেমন দুলছে
তার ছায়ায় প্রাচীন শ্যামাপোকা অনিশ্চিত তাকিয়ে দেখছে

ওই দূরের রোগাটে পাখিটাকে

বেদনাআহত

সংহত মালতীফুল দোলে আমাদের ঝুল বারান্দায়
ছায়া-প্রশাখার জটিলতর তলায় হাত ধরা ছিল সারাদিন
রাতের সংঘর্ষে স্তব্ধ চারপাশের সবকিছুতেই কল্পিত বসন্ত---দুই চোখে নিপূণ সাজানো;
নিমগ্ন সবুজ পাতা,--পাতা যে নড়ে জেনেছি এতদিনে
 তার সমস্ত সন্ত্রাস কেমন বিবর্ণ ডালে
কৃপণ ফুলের সমুজ্জ্বল স্মৃতি শুধু

কবি পুরুষের মতো বেদনাআহত

বুনো শুকর

বুনো শুকরের পাল পথে নেমেছে,ধানুকী হাতে
ঐ মোহালু যায়,ধানক্ষেতে
আবল্য শিকারপ্রীতি
পাখিদের পালকে পালকে লেখা গভীর সন্দেহ

ঝলসানো মাংসভোজ হবে আজ

শালকীর জলে ভাসমান পাথরখন্ডে নাচছে প্রেমিকযুগল

তীরে বুনো শুকর দাঁড়িয়ে

অসহায় নির্বোধতা

সদ্যস্নাতা প্রতিফলনের উপচারে আলতো চুম্বন
মনে পড়ে সর্পসংকুল অরণ্যে জ্যোতির্ময় হ্রদ
ইঙ্গিতসঘন ক্রম অবলুপ্তির সমূহ সর্বনাশে
আমাদের সমগ্রতা বিলীন ঘাসের বিছানায়

মৃত্যুর নিশ্চিত সত্যে আমরা জেনেছিলাম---
পারিজাত ফুলের নির্মিত জ্যোৎস্না রাত,---
সজ্জিত আলোর অভিলাষে স্বভাবী মানুষ ঘরে ফিরে আসে
অনায়াস আলো,অসরব বাগান,রেখাংকিত করপুট,----
পূণরাবৃত্তি একই,পরিণাম
অনাশ্রয়ী প্রতিবাদে বিচিত্রিত রেখার জানালা

খুলে দাও,নিজস্ব আলো ও চারদেয়ালের মূর্ত হীরা
জ্বলে উঠুক সহসা

তোমার দু'হাতে অসহায় নির্বোধতা ভুলে যাব

রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৩

নিজস্ব নদী

অধোমুখে,করপুট মেলে আছি
তোমার নিজের হাতে ভিক্ষে নেবো

চোখের পাতায় আমন্ত্রণ
শেষ বিকেলের রৌদ্র ও সবুজ পাতা
প্রগাঢ় বিষাদে নবজন্ম চেয়েছিল---
রাত্রির নিয়মে সুশৃঙ্খল পদধ্বনি
মৃত্যুর অধিক নির্ঘুমতা

ভয়ে ভয়ে থাকি
মাঝেমধ্যেই অন্যমনস্ক---চোখে ভাসে শালকীর স্বচ্ছ জল

একদিন শালকী আমার ছিল

ভালোবাসা ভিক্ষা

পশ্চিমের জানালায় কার শ্বাসপতনের শব্দে
পূর্বনির্দেশিত ভাষার অভ্রান্ত ঈঙ্গিতপালন
বাড়ির রোয়াকে কৃষ্ণচূড়া
থরে থরে লাল ফুলগুলোতে গ্রীষ্মের তাপ
ভঙ্গিনিপূণ ভালোবাসায় অপ্রমান  নিথরতা

স্বাধীন ধূলোয় ভালোবাসা ভিক্ষা দেবে

নির্ধারিত নিয়তি

ভূগোলের জরাজটিল প্রান্তরে আমি একাকীত্বের আবহ দেখে পালিয়ে এসেছি
তোমাদের  এ উপত্যকায় ভস্মময় পার্ক,লৌহশকট,দূরের জানালায় অগ্নির স্ফুলিঙ্গ,---
পুড়ে যায় দু'চোখ।গীর্জার হলঘরে সামগান।এই লৌকিকতা শেষ হোক।

শুভ বুদ্ধিজাত বৃক্ষ,কার্পাস তুলোর ক্ষেত ভেঙে জেলখানার নুতন বাড়ী,---
বনবিপর্যয়ে বিঘ্নিত সুন্দর,স্বপ্নচারীতার গান গেয়েছিলাম শোনে নি কেউ।

ওরা জানে ফিরে আসার নিয়তি নির্ধারিত হয়ে আছে।

শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৩

কবিতার সাথে ঘর-গেরস্থালী

শীতের জরাজটিল অন্ধকারে খড়কুটো জ্বালিয়ে রেখেছ
মুখের ওপর কালপুরুষের ছায়া
গুহার ভেতর পাহাড়ী ছাগল,ঝর্ণাপরে ঘুমে নিমগ্ন জলপতঙ্গ
দ্রুতগামী শীতে হিম হয়ে আসে উপত্যকা

অনন্ত কাব্যের পাশে বসে থাকি সারারাত
কবিতার শরীরে শীতের দাহ,পায়ে সৈকতের বালি,ছাইমাখা নাচ
নুনজলে ভেজা চোখ---অসীম সংসারী হাতে লোহা ও আগুন
অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে ঘ-গেরস্থালী

একদিন খাল পেরিয়ে দেখতে এসো

জন্মদিনের উৎসব

জারুল বনের অন্ধকারে শ্বেত ডানার পাখিরা বাসা বাঁধছিল,মুখে খড়কুটো,
পাতার আড়ালে জ্বলজ্বলে স্বপ্ন---বনের ভাষায় জৈবফুল পুড়ছে নিঃশ্বাসে
ফুলে ওঠা ঠোঁট,অবিন্যাস্ত চুল
পোষাকের এখানে-সেখানে মাটি ও শুকনো পাতা
আমার পিঠের মাংসে দীঘল নখের ক্ষত

আমরা ঘর্মস্নানের কথা ভাবছিলাম না অথচ
বটপত্রলীন এ জীবন যেন পাহাড় চূড়ায় মেঘ,----
অনিশ্চিত আর বার্তাবহ,স্বপ্রতিষ্ঠ

জলে পোড়ে,রৌদ্রে ভাসে
আমাদের নিয়তি প্রস্তুত
জল,জলান্তরে,পাথরে যে লতা বেড়ে ওঠে তার ফুলে

বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৩

ভাষান্তর

পাতাসমেত অপরাহ্নের ফুল কী দ্রুত ঝরছে
তার জটিল পাপড়ি একটার পর আরেকটা খুলে পড়ে
বিন্যাসিত নিয়মের অনিবার্যতায় অর্থাৎ অবসানের রীতিবদ্ধ বিরুদ্ধতা
এখানে দিনের শেষে সচন্দন গন্ধপুষ্প
অধিকতর পাথুরে মৃত্যু
পাখি দেখছে কেবল বৃক্ষ,সতেজময় পাতার পাশাপাশি

পরিত্যক্ত সাপের খোলস এঁকেবেঁকে হেঁটে যায় সাপের পেছনে

ভাঙে নাটমন্দিরের প্রতিমা,ফলিত জ্যোতিষের
দুর্বোধ লেখার খাতাগুলো অনিশ্চয়তায় বাতাসে উড়ছে
বস্তুতঃ এ উপত্যাকা ধীরে ধীরে জনপদে বিলীন হয়েছে

শেষ চিঠি কবে এসেছিল ওই জনপদ থেকে
এখন নিশ্চয় কেউ আর চিঠি লেখে না;গ্রাম্যকিশোরী
পাঁচিলে দাঁড়িয়ে থাকে----হাতের তালুর উর্ধ্বে ছড়ানো আকাশ
ওখানেই দৃষ্টিনিবদ্ধ,ফেরার কথা মনে আসে

দ্বন্দ্ব ছেয়ে যায় ভাষান্তরে

উত্তরায়ণে

পূর্ণরাগ উন্মোচনে জলাধার ফুঁসে উঠেছিল,----
আমি দেখেছি একঝলক
রাগিনীর কোষ,সূর্যপথে অগণন ঢেউ.......

এতদিন জলে ছিলাম।আগুনে কেটেছিল কিছুকাল।
মৃত শরীরে মৃত্যুর ভয় লেগেছিল?

জল,মাটি ও আগুন----কার কী ক্ষমতা,
আমাকে ভাসিয়ে নেবে,পোড়াবে প্রাকৃত ব্যাধি,অবসাদে?

আমি শান্তিতে মরব বলে এই জলাধারে উত্তরায়ণের প্রতীক্ষা করছি।

ছায়াসঙ্গী

ছায়াসঙ্গীদল কোথায় গিয়েছে?
সূর্যের কিরণ থেকে জলে নামছে ঋষভ
বালুতীর থেকে আজ স্পষ্ট শুনি
সমুদ্রের অন্য পারে শঙ্খচিলের বিল্লোল ডাক।
সে কি প্রলম্বিত,শর্তাধীন।ভাবনিলীম আহ্বান,---

অনেক শূণ্যতা পার হয়ে নিদ্রাশীতল নাবিক
তার অশ্বেত নৌ-যান,ইতঃস্তত ভাঙা মাস্তুল,ছড়ানো দড়িদড়া---
ভেসে যেতে যেতে শূণ্যের ভেতরে ভাসমান অথচ ঘূর্ণির চোরাটানে পর্যুদস্ত।

সমুদ্রের এই পারে বাজছে নিঃশব্দ শোকভেরী।
ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে আসছে কংকাল,
যুদ্ধশেষ!
খোল নালচে পালটে পূণর্বার জলে ভাসছে ক্ষেত্রজ নৌকা
নারী ও পুরুষ সম্মিলিত দাঁড় টানে---

ছায়া সঙ্গীদলসহ অনিঃশেষ তাপের তন্ময় একাগ্রতা---ওটাই কবিতা।

দুপুরের প্রচ্ছদ

কবিতার সবুজাভ ক্ষেত পার হয়েব হেঁটে আসছেন,কবি
প্রসারিত হাত
দায়হীন আঙুলের ছায়া প্রশাখার জটিলতা
পায়ের তলায় দুর্বাঘাস---দুপুরের প্রচ্ছদ ঝরছে
ব্যবহৃত পুকুর পারের তালগাছ থেকে

রোদ্দুরের ধারাস্নানে ডাহুক উড়ছে
জল ছেড়ে,জলাভূমি ছেড়ে তাদের জীবন্ত ডানা
প্রায়শঃ সূর্যের কাছাকাছি ঐ মেঘের দিকে উড়ে যায়
উদাসীন মর্যাদায় অনুশাসিত অতীত,----
অনুষঙ্গরিক্ত এই বর্তমান---দীর্ঘ দিবসের চৈতন্য বিলুপ্ত যাত্রা

মাটি-আকাশ ধারাবাহিক নিয়মের দীর্ঘ সমারোহে নিভৃত ধ্যানের তাপে মগ্ন
সম্পন্ন গৌরবে অনাসক্ত ধূলো ওড়ে চৈত্রমাসের বাতাসে
বাড়ির পেছনে বুনোতুলসীর ঝোপঝাড়
হতদরিদ্র শিমুল পাশে রেখে কবি ঋজু হেঁটে আসছেন
সমৃদ্ধ ঘরের জানালায় স্বাগত উচ্ছ্বাস

রৌরব

অর্থহীন স্বপ্নের এ প্রান্ত ঘেঁষে দিনিগুলো নির্বিকার কেটে যাচ্ছে
স্বপ্নের অপর প্রান্তে আগুন ও ধোঁয়া
ওপারের বাসিন্দারা কি প্রত্যেকদিন পুড়ে যাচ্ছে
জলকলহের নীচে চাপা পড়ছে তাদের আর্তনাদ

আমাদের বিছানায় বিছানায় অতৃপ্তি,রৌরব
রাজপথে চলমান গতি আর ছড়ানো-ছিটানো রক্ত,হিংসা
আমরা কি পূর্বাপর ফিরে যাবো
যে ঘর পেছনে ফেলে এসেছি----তা ক্ষুধাময়
একমুখী গাঁয়ের সড়কে দ্রুতমুকুরের ছায়া,দীঘীভরা অবসাদ
দীর্ঘতর বটের সমকালীন ঝুরি
রৌদ্রে শুধু পাক খায় সাদা বক
ঐ দিকে চাষের ক্ষেত

বরঞ্চ কমলা রঙা সূর্যের সুমন্ত পথে হেঁটে চল
পুড়ে খাক হই

সমন্বিত অন্ধকার

চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশ দেখেছ
কী বিশাল এর পরিব্যপ্তি---
যুথবদ্ধ হাঁস উড়ে চলে
শিকারীর চাতুর্যময় ভঙ্গিতে ঝরে পড়ে
'এর মাংস অত্যাধিক স্বাদু'
শতাব্দীর পর শতাব্দী এবং বন্যতার পাশাপাশি
অপ্রাপণীয়ের বিস্ময়বোধে যা কিছু উৎসর্জন
বিচ্ছিন্নের বিষন্নতায় দু'চোখ জ্বলে ওঠে সমন্বিত অন্ধকারে

অন্ধকারের নিবিড় পটভূমি---প্রত্যাশার প্রতিরুপে
সারারাত স্বপ্নের নিভৃতে জাগে শাল মহুয়ার বিতত প্রলাপে
অসহ রাতের জল দুঃখ অশ্রুময়----সম্পন্ন গৌরবে ভাসে কালপুরুষ,সপ্তর্ষি

কেমন অস্পষ্ট প্রবাহিত সম্পূর্ণ আকাশ

ট্রাম

অশ্বেত পৃথিবী ভুলেছে রিক্ততার স্বেদ
হেমন্তের অধোলীন পাতা জলখাবারের মোড় ঘুরে
ট্রাম ছুঁয়ে আকাশে উড়ছে,নিরক্ষর

শবের গাড়ির হিমস্রোত কেটে
কতিপয় চিল
হঠাৎ সম্বিত পেয়ে
দুর্বার গতিতে ফিরে আসে
ট্রাম লাইনে,বাতাসে অশ্রু মুছে যায়

শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৩

মিলনী সংরাগ

আরো কিছু স্তব্ধতা--অবুঝ নারী কেন বোঝে না শ্মশাণে শুয়ে আছি

দুপুরের বিষে গায়ের কলংক খুলে পড়ে আমাদের সমস্ত আনন্দে
পুকুরের কাঁদায় পায়ের ছাপ মুছে গেছে
কেউ খেয়াল করে নি
কখন জঙ্গল ছেড়ে পাশের রাস্তায় হেঁটে এলাম;বাঘের থাবা
হরিণের আঁকাবাঁকা শিঙ-এ ঘনবদ্ধ কম্পন;জলের পাশে
কুমীরের খটখটে হাড়ে জলের বুদ্বুদ আর
ভূ-গর্ভে হৃদয়গুলো সত্যি সত্যি পাথরের নক্ষত্র--কানের পাশে মৌমাছির গুঞ্জরণ

সব আলো নিশ্চিতভাবে মিশেছে
তবু আমার দরিদ্র চোখে অত্যন্ত সুস্থির---
পরিণত পদক্ষেপে নূতন কুঁড়ির স্বপ্নে মগ্ন

আমি ধোঁয়াওঠা পথে ফিরে যাবো মিলনী সংরাগে

কাটাগুল্মময় পথ

তোমাদের সামাজিকতা লৌকিক।মাটির আড়ালে
স্ফীত মাটির স্বচ্ছাতা কেঁপে যায়।তোমাদের শুভ্র ব্যবহারে
স্বভাবী মানুষ ক্রুর  অন্ধকারের ভেতর প্রস্তাবিত দাবী ভুলে
পথিকজটিল পথে ফিরে আসে।উচ্চারণ অসাধ্য,সহজ কিন্তু
বিভৎস চিৎকারে আমাদের পরিচিত শব্দগুলো
একেকটি রুদ্ধ স্রোত।অবসাদ দিয়েছিলে,
স্পষ্ট মনে পড়ে শুধু মনে পড়ে না কখন
চৈত্রদুপুরের পথ পার হয়ে গিয়েছিলে

ফিরে আসবে,সে পথ
মরুভূমিবোধে কাটাগুল্মময় পথ

ঈগল

ঈগলেরা আকাশে উড়ছে
তাদের ডানায় সময়ের অন্ধকার

চারিদিকে শুধু ঈগলের নখের প্রতিবিম্বিত আলো

গ্যাস আর ধোঁয়াশার ভেতর পৃথিবী----
কতটুকু দেবে তার সীমাবদ্ধ  ক্ষমতার মধ্যে
গ্রহবাসীদের মধ্যে যারা তেজস্ক্রিয়ায় জ্বলে নি
তারা দেখুক গভীর খাদে কে কে জেগে আছে
বাগানের শান্ত অর্কিড---সে ও তো কাটাগুল্মে    আচ্ছাদিত

নিজেই নিজের মাথা ছিঁড়ে পোষা কবুতরগুলো
ভোগ দেয়
ওই দূরে ঈগল উড়ছে

মানুষের ভালোবাসা

মানুষের কাছেই পেয়েছি অবহেলা
মানুষের কাছেই পেয়েছি পারিজাত প্রেম
সমস্ত শরীরে ধূলো লেগেছিল বলে---
পথের ধারের ন্যাংটা পাগলী আমাকে বুকে তুলে নিয়েছিল
সারাদিন অভূক্ত ছিলাম দেখে রোঁয়াওঠা পাড়ার কুকুর
ভাগাড়ে না গিয়ে দুপুরটা গাছতলায় নিশ্চুপ বসেছিল
পায়ে জুতো নেই বলে লাবণী আমাকে পাথরের পথে হাঁটতে বারণ করেছিল

এত বেশী ভালোবাসা ছেড়ে আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না


বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৩

দেউলিয়া

রোদে  শুকায় ভিটের মাটি
পোড়া এ দেহের সাথে---

প্রলাপমগ্ন অমূল্য কাল কেটে গিয়েছে---এখন রাত
তবে কি জোছনা শুষে নেবে ক্ষত
আমার কখনো দেনা ছিল না অথচ
স্বতঃস্ফুর্ত সকালের আলোয় কখন দেউলিয়া ঘোষিত হলাম

আমার নিজের দ্যুতিময় আয়না নিঃসীম শীতে
আগুনের ভেতর কুয়াশা ভেঙে
অন্তরাল থেকে বের হয়ে আসে অবলুপ্ত নারী
ভূক্তাবশেষ শরীরে প্রতি জন্মের স্মারক---
ভাঙা গর্ভ থেকে টেনে আনে জটাফুল,
'এই যে এসেছি ফিরে,মানুষের চাহিদার চোখ নিভে গেলে
ভ্রুণহত্যার যে পাপ শরীরে মেখেছ
অনুতাপে জ্বলতে জ্বলতে জঞ্জালের মতো মিশে যাবে'

অসমাপ্ত ফল হাতে বলে
প্রুতিশ্রুত  বাতাসে সন্দেহ তবু সন্ধিগ্ধ দু'চোখ
খুঁজে নেয় পথ

অনাদিকাল থেকেই মানুষ নিজের পথ নিজেই খুঁজেছে

কল্পনাগুলো কখন মরে গিয়েছে---শুনিনি
বিসর্পিল পথে ফিসফাস,শকটের দাগ মুছে গেছে
শান্ত অবহেলা পাকা পাতাগুলো জড় করে

এই পাতার আগুনে শীত যাবে

হিংসাপূর্ণ রেশম

অবিনাশী স্থাপত্যে ভাঙচুর,
মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে যারা মদ জমিয়ে রেখেছ আর 
আর আমরা জেনেছি আমাদের ফিরে আসা নির্ধারিত
অনির্বাণ অগ্নিতে সহস্র পাতা পোড়ার ধোঁয়ায়
অপরিণত শীতের পাখিগুলো ডাহুকবিলের শুকনো চড়ায়
অপলাপী ভাষার স্তব্ধতা থেকে কোলাহলে উড়ে যায়

আহত ডানায় মুখ গুঁজে বসে থাকি ধবল রোদের প্রতীক্ষায়
উড়ে যাব; সাধ ছিল বলে আজ শব্দচাষী
রুঢ় অনুশাষণের চিহ্ন সমস্ত শরীরে
তবু দেখো জটাফুল;যা প্রত্যক্ষ----
জামাইপোকা কামড়ে ধরে

বৃষ্টি শেষে মেঘের ফোকর গলে যে নীলাভ আলো পরিদৃশ্যমান
তাতে কোন ফাঁক নেই---কখনো ছিল না
হাড়-কংকাল সমেত আমি বলে যেতে চাই

'আমি তোমাদের ভাষা কখনো বুঝি নি
তোমাদের ভরা মদের কলস আমি কখনো ছুঁইনি'

হিংসাপূর্ণ রেশম তোমাদের ভালোই মানায়


প্রত্যাশা

পরের বর্ষায় আমি জাল পেতে ধরব খলসে,পুঁটি
আমি সে জাল বুনছি---তাই দেখে
অভিমানী সুঁচ
ফুটো করে গর্ভবতী বধূর আঙ্গুল।

রক্তে মাখামাখি বিছানা---নবজাতক
কোন রাশির?ঠিকুজি,কুষ্ঠি ঠিক করে নাও।

দেখো,এ ছেলে নিশ্চয় একদিন বড় হবে।

শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৩

কাব্য সমগ্র

আমার কাব্যসমগ্র দিয়ে দিতে পারি

অন্ধকার থেকে অপমান
জল থেকে ডাঙায় উঠছে অন্ধ প্রতিযোগী
অথচ মানবী একদিন বুকের আঁচল ফেলে উঠে এসেছিল

বালির ওপর বসে লিখছিলাম কবিতা

কাচে বানানো দু'চোখ,জল নেই
রাত্রিবেলা ছাদ ও পাঁচিলে ধ্বসে পড়ার সুযোগে
মাথা তোলে চাঁদ

মরা নদী জোছনায় ভেসে যায়
তাকে পারাপার করে লিকলিকে সাপ

কি হবে কাব্য সমগ্রে