Powered By Blogger

বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩

গুল্মলতা

সব শেষে পড়ে থাকে অন্ধকার
অন্তহীণ থেকে অতলান্তিক অথচ ভূলুন্ঠিত
জলের ভাবানুষঙ্গ থেকে জলস্রোত---পেছন পেছন উড়ে আসছে চিতার কালচে কাঠ
চিতা জ্বলছে নদীর ধারে---অবতারণের ঘড়ি বন্ধ;
চাবি দেয়া হয় না ক'দিন

মেরুদূরাতীত রোহিণী নক্ষত্র থেকে আলো ঠিকরে পড়ছে ম্লান শরীরে,দেখেছি
সম্পূর্ণ হেমন্তকাল---পাতা ঝরে যায়
পাতারা অম্লান ঝরে যায়
লাল ইটের দালানে দু'টি বিপন্ন চড়ুই
ফাটলে অশ্বথ গাছ---প্রুতিশ্রুতিহীন
কর্তব্যহীন প্রাপ্তির মধ্যে অনিশ্চয় ধাবমান ক্ষুধার্ত মানুষ
হেঁটে আসছে অব্যবহৃত পথ ধরে;যেখানে জন্মেছে  গুল্মলতা

বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

রৌদ্র ও আলোছায়ার গল্প

অনেক দ্বিধার পথ,বিবেচনার মহাসড়কে থিকথিকে কাদা
যখন ফিরেছিলাম---একে একে সরে যাচ্ছিল রং দেয়া বানানো পুতুলগুলো
মুখোমুখি আমাদের বসে থাকা---সামান্য একটু ছোঁয়া
গ্রীষ্মাবকাশের তাঁবু হেলে আছে
ধড়হীন ঝাউগাছে কাঁচির আঘাত---নাশকতা প্রকৃতির মুখে

আজ রৌদ্র-মেঘ-বৃষ্টি নেই
মাঠে ফাঁদ পাতা রয়েছে,শিকারী দূরে
তাজমহলের ছাদে শকুন বসেছে
আমি তার উড়ে যাবার প্রতীক্ষা করি

আমাদের বয়স এখন কত
গ্রন্থকীটের মতোন মনোযোগী,অতিরিক্ত ভালোবাসা জন্মেছিল---
প্রিয় কবিতার বইয়ে উপচে গেছে সোফা-কার্পেট-আলমিরার তাক
উঠোনের ছড়ানো মাদুরে গোধূলির আলো

অপ্রাকৃত ভাষায় রৌদ্র ও আলোছায়ার গল্প আর কত

অবিন্যাস্ত মুখ

পাতার আড়াল থেকে একটানা ডেকে গিয়েছিলাম কুউই
রৌদ্রময় সমস্ত সকালবেলা উচ্চারণসাধ্য শব্দের ভেতরে ধ্বণিময়তার মগ্ন আলো
হলুদ নদীর আর্দ্র তীর,কাশবন---আমি দেখি খড়ভর্তি প্রবাসী নৌকার সারি
অলীক ঈশ্বর,স্থির আকাশ,সন্ত্রস্ত চিল ওড়ে
নির্জন প্রান্তরে অনিবার্য অন্ধকার

আমাদের সবভ উৎসবের ভেতরে অলৌকিক রাত্রি
যদি রাত্রি তার সমস্ত বিশ্রামকে মুছে আলো জ্বালে

তবে কোন অবিন্যাস্ত মুখ দেখা ফুটে ওঠে

শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৩

কিশোর চোখের তাপ

গ্রামসীমান্তে শিবমন্দির।পাশে জোড়া বটগাছ।রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিন।
জলা ক্ষেত পার হতে হতে শোনা যায় প্রবাহিত স্বাভাবিক শব্দ।
সারাপথ নিবিড় তন্ময় এক,পথের কিনারে আলোকিত প্রুতিশ্রুতি।
বিপক্ষ বাতাসে পাখি উড়ছে দূরহ শিল্পকর্ম তার ডানায়।ফুলের জন্ম
কেমন রহস্যে ঘেরা।

আমি ফিরে যাবো
 নদীর স্রোতের মগ্নতায়।
অশ্রুত গান ও কবিতায়,ধূসর পাতা ও সবুজ প্রজাপতি----
কিশোর চোখের তাপে।

বিলীয়মান মাটি

দেবীকা,আমার পথ আমাকেই খুঁজে নিতে হবে
পথের খোড়লে সাপ-খোপ
ঝড়-বৃষ্টি-জল,নুনগলানো শরীর,---তাও মেনে নেবে
দীর্ঘতর বট,সমকালীন পাথর থেকে আরেক পাথরে
শ্যাওলা,জলজগুল্ম;   নেমে আসার মুহূর্তে
যক্ষ হয়ে দাঁড়ায় তালসুপারী,মহুয়ার ঝোপ
ছেড়ে আসা বন্দরে অবাধ ঢেঊ
বদর মাঝির সিন্নী

আমার বিলীয়মান মাটি ঘুমের ভেতর
আমাকেই টেনে নেয়

কবি ও নাবিক

মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবি ও নাবিক
পরস্পরের নৈকট্যে সারাদিন।আবছায়া জাহাজ ভিড়ছে
কুয়াশামাখা বন্দরে।সময় ভাংছে নীরবতা।
কবিতার পান্ডুলিপি সাদা করে গেছে কবিতারা।

কবির জীবনে প্রেম এসেছিল।
একদিন চুপিচুপি প্রেমিকা অন্যের ঘরে।
নাবিক জানত তার দয়িতা অপেক্ষা করে আছে।
ফিরে দেখেঃশূণ্যতাময় প্রান্তর।

মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবি ও নাবিক
পরস্পরের নৈকট্যে সারাদিন।

পোড়ামাংস ভোজের উৎসব

আমাদের এই জনপদে এখন উৎসব
ডাইনীর খুরের তলায় একে একে ভেঙ্গে পড়ছে পাথর,
জ্বলছে নরম ঘাস,তুলসীমঞ্চ,গোয়ালঘর
ফুলছড়ানো উঠোনে একটানা নিশিপক্ষ

শ্বেত মনোনিবেশে তাকিয়ে দেখ
দূরের গ্রামসীমায় অগ্নিকুন্ড ঘিরে প্রেত্মাত্মার নাচ
বাতাসে ভাসছে ঝলসানো মাংসের আঘ্রাণ

আজ,পোড়ামাংস ভোজের উৎসব

পূজো

দুপুরবেলায় মেঘ করেছিল
দিগন্তবিস্তৃত টানা মেঘ
আর,তক্ষুনি কবিতা লিখলাম,মন খারাপের
দেখি মন ভালো হয়ে গেছে

মনের আকাশজুড়ে আষাঢ়ের সূর্য

ভেবে দেখলাম,তোমার ফেরার কাল ঘনিয়ে এসেছে
সারাটা দুপুর অবিমিশ্র আনন্দে বিহ্বল
কত সাজসজ্জা পথে,রঙ্গিন বাগান
তালগাছে সম্পন্ন বাবুই---বাসা বাতাসে দুলছে
সুরভীফুল ফুটেছে,কাল আবার ফুটবে---
কর্ম্বিভোল মৌমাছি এসে জানিয়ে দিয়েছে

প্রতিমা নির্মাণ হয়ে গেছে
খড়ের ওপর কাদা
তার ওপর রঙ্গের সুনিপূণ শিল্পকর্ম

বেলফুল,বাতাসা প্রস্তুত
দেবী,আমাকে গ্রহণ করো

রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

কবিতাময় জীবন

বিশুদ্ধ বসন্তে আমাদের দেখা হবে না,কখনো
সোনালী ডানার পাখিগুলো সব একে একে মরে যায়।
বিপন্ন চড়ুই;ইতস্তত ছড়ানো পালক
কোনো পথরেখা নেই---মধূবন,চম্পকনগরী।
দূরে অন্ধকার।নিবিড় অশথগাছ।উদ্ধত শাখার মৌন প্রতিবাদ
জোনাকীর লাল চোখে।প্রবাসী নৌকাগুলোতে খড় ভর্তি।
নদীর শীতল জলে পোড়ে শরীর,আত্মার মধ্যে সোনামুখী সূঁই।

ঝর্ণাপাথরের পথে যেতে যেতে দেখি ছায়ার ভেতর
আলো এবং বীজগণিতের সরলীকরণ সূত্র শুয়ে আছে।

আহা! জীবনটা কেন কবিতা হল না?

কাদের মোল্লার ফাঁসীর পর

এখনো হৃদয়ে ক্ষত,বুকের ভেতর তীক্ষ্ম যন্ত্রণাময় আগুন
বৃষ্টির শাসনে নত

কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসীকাঠে ঝুলে পড়েছিল বিস্রস্ত,বিবশ
রক্তলোলুপ হায়েনা আর বাগানের গোলাপ-বকুল-জুঁই
নির্বিরোধী বাতাসে নিমগ্ন হেসে উঠেছিল