অন্তহীন
গোধূলি সন্ধ্যায় আমি একটি রক্তজবার পাতা ছিঁড়েছিলাম এর জটিল গ্রন্থি থেকে
আড়ম্বরহীন শাখাগুলো কোনো প্রতিবাদ করেনি কেবল কাণ্ড থেকে ফোঁটা ফোঁটা
কষ আমার পা বেয়ে অনুর্বর মাটি ভিজিয়ে দিচ্ছিল;ছিন্নবাস পাতার মর্মর ধ্বণি
আন্দোলিত করে গেল অযৌক্তিক পৃথিবীর অসঙ্গতির বিপূল দূর্বাঘাসেদের
থেমে গেল সান্ধ্য সঙ্গীতের সুর,দুঃখের নৈরাশ্যে জীবন বিস্তৃত হল মৃত্যুর প্রান্তরে
আর সময়ের পূর্বে রাত্রি সর্বত্র ছড়ালো তার ভয়াবহতার নিদর্শন
প্রগলভতায় প্রগলভতায় কীটেরা বেরিয়ে এলো মাটির তলার গর্ত থেকে
এবং তারস্বরে অভিশাপ দিতে লাগল আমার অস্তিত্বের খামখেয়ালীপনার
শব্দহীন বাতাসের মধ্য থেকে অব্যাহত আর্তনাদে ডেকে গেল ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের দল
সমবেদনার ঝাঁঝে,সুরেলা কান্নায় দিগন্তের নিস্তব্দতা ভেঙে গড়িয়ে পড়ল
মানুষের কত অবিচ্ছিন্ন গোপণ পাপের ইতিহাস জানে ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের দল
সমৃদ্ধ উত্তাপে অবিরল জ্বালিয়ে গিয়েছি পল্লবিত বহুরৈখিক স্বপ্নগুলোর
পিপীলিকার মৃত্যুকালীন সময়ের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে পুড়ে মরেছে রুপালী স্বপ্ন
তবু শরীরের সাদা,রুগ্ন কাঠামোয় প্রলয় নাচন নেচে যায় অদম্য ইচ্ছেরা
পথহীনতার ভেতর অরণ্যে শুনিঃদ্বৈতকন্ঠে কুড়োল গাইছে বিচ্ছেদের গান
প্রতিশব্দে প্রতিশব্দে বৃক্ষদের আসহায়তার নির্মম বিদায় সঙ্গীতের মর্মজ্বালা
কাঠুরিয়ার মগজে ডানা ঝাপটিয়ে যাচ্ছিল বিলীয়মান,অপসৃত পাখির মতোন
অনাবৃত আকাশের কোণে প্রতিনিয়ত প্রশ্নবোধক চিহ্ন তুলে জেগে থাকে সাত ঋষি
আমার সমস্ত ঘরে মৃত্যুর সতেজ গন্ধ এবং ইঁদুরেরা চেটে খায় ফুলেল নির্যাস
ঝড়ের অশান্ত রাতে ভীতিকর বাতিঘরগুলো কেবল প্রহেলিকার জন্ম দিয়ে যায়
অস্বচ্ছ ভূমিকাময় পৃথিবীতে নিসর্গের সমতানে ঐকতানিক সঙ্গীতহীন
কুয়াশায় কুয়াশায় দিগন্তের কান্নায় পৃথিবী আলো আভার মিশ্রণে থমকে দাঁড়ায়
সূর্যাস্তের নিঃশব্দতার ভেতর একগুঁয়ে বাতাসের স্বাগতিক মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে
সুবিদিত বীণা যখন সুরের মুর্ছনায় হৃদয়ের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে নমনীয়তার
ঢেউয়ে ঢেউয়ে দূর প্রবাসের পথে মনোহীনতার দুঃসহ দুর্গন্ধ সরে যায়
আহা! মানুষ আজও ভালোবাসে ঐন্দ্রজালিক সঙ্গীত
আশ্বাসে আশ্বাসে বেঁচে থাকা মন্তরগতির কালে রিক্ততার যাবতীয় দুঃখ শোক
আয়নান্ত সূর্যের উত্তাপে সবিস্ময় চিহ্ন চোখের গভীরে খেলা করে,খেলা করে
বিবস্ত্র অন্ধকারের মধ্যে শুধু হিংস্র অবলীঢ় তাপে ফাটে প্রকৃতিপ্রত্যয়বোধ
আমার স্বপক্ষে শুধু কিছু সদ্য রোগমুক্ত কুষ্ঠরোগীর যন্ত্রণাহীন ভাষান্তরে
কবিতার ছন্দ,অন্ত্যঃমিলের সমালোচনা সংকুচিত এবং সম্প্রসারণে অগ্নিশিখার
মতো জ্বলজ্বলে;জমাট বৃষ্টিও আমার কাব্যিক শ্রমে মুগ্ধ
আত্মপরান্মুখ কবিতাগুলো আমার ছুঁয়ে যায় বিস্মৃত পৃথিবী;কুন্ডলিত রাত
ওড়ে নীল গন্ধের রুমালে---প্রত্যাশাহীন জীবনে জিজ্ঞাসার অনুরণনের সুর
তুলে তুলে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে ক্ষমাহীন রাতগুলো সজল মেঘাবরণে আকাশের
অজস্র তারার মতো চুম্বনে চুম্বনে যোজনবিস্তার ব্যবধান মুহূর্তে মুহূর্তে শূণ্য,
রৌদ্রের চাঁদরে ঢেকে যাবে এ রাতের গল্প কথকতা
কলঙ্কশীলিত সন্ধ্যায় মৃত্যুর কবিতারা পড়ে থাক
সময়ের স্তরগুলো করোটির মধ্যে ভেসে যায় অবাধ সন্ন্যাসে
এবং সারি সারি নগ্ন পাথরের এপিটাফগুলো হিম হয়ে আসে মৃতদের শ্বাসে
যখন জীবন ছিল তারা ছুঁয়েও দেখেনি
বুকের ভেতর দাবদাহ,চোখের ভেতর খরা,পূর্ণিমা উপুড় হয়ে পড়ে থাকে
রক্তজবার পাতার অভিশাপে জটিল ও দুর্বিষহ জীবন সঙ্গীত হল না কারণ
কতদিন আশাবরী মাঘের কুয়াশা ভোররাত থেকে কোথাও দেখি না
এক অক্ষৌহিনী আজানুলম্বিত বটের ঝুরির মধ্যে প্রগাঢ় অন্যায় ঘটে গেছে
পাতাদের ফাঁকে হলুদ সূর্যের আলো নিয়ে নিভৃত আশ্বাসে হরিয়াল কোন সুরে গায়
ঝলকে ঝলকে মুখে রক্ত নেমে আসে রক্তজবা ফুলের মতোন