Powered By Blogger

শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০১৪

অমোচনীয় কালিজীবন

দৃশ্য এবং দৃশ্যমানতার ভেতর গভীর জলোচ্ছ্বাস
বাঁধ ভাঙছে;যা কিছু ভাসমান
নৌকা,খড়,মানুষ,পাথরখন্ড
পিছুটান এবং স্মৃতিবিভ্রমের ভাষা

গ্রামসীমান্তে কবরখানা,সমাধি ফলক ঘেঁষে
বসন্তের পথ,স্তব্ধতায় ধূলো ওড়ে
চতুর্দিকে ছড়িয়ে শুকনো পাতা
জীবন্ত বলির আগে আলোহীন সন্ধ্যার প্রেতের গান
রক্তমুখ,নখে আবৃত আঙুলে ম্লান শিখা কাঁপে

দীর্ঘ নখের আড়ালে শীর্ষ বাঁক পার হয়ে
সমকামী মানুষ আসছে
রৌদ্রহীন ঔষধির ক্ষেত আর শ্মশানভূমির মাঝখানে
রুক্ষ্ম প্রান্তর,আগুনরঙা ঘাসে
বড় হওয়ার গান ও ঈর্ষার খেলা খেলতে খেলতে

ব্যর্থ মানুষের  স্বরে বেড়ে ওঠে অমোচনীয় কালিজীবন

অবিশ্বাস

আমি খোলা মাঠে বসে আছি
শরীরে লাগছে ত্রেতা যুগের বাতাস
মাথার ওপরে নগ্ন রাত
নক্ষত্রেরা ভেসে আছে,সারিবদ্ধভাবে
একটার পর আরেকটা,আত্মমগ্ন
পুকুরের বিতত শাপলা

রক্তের লোহিতকণা গিলে নিচ্ছে অবিশ্বাসের বীজাণু
জন্মপূর্ব অন্ধকার এবং পরবর্তী পরিচ্ছেদে
মন্ত্রমুগ্ধ অন্ধকারের ভেতর
আমি জানি না রহস্য জন্ম ও মৃত্যুর
প্রাকৃতিক কার্য্যকলাপ,ইন্দ্রিয়সুখ
আমি একবার নারীর শরীর ছুঁতে গিয়ে স্রষ্টাকে ছুঁয়েছিলাম
সেই আমার প্রথম সুখ
মেরেলিন মনরোর লাল ঠোঁট ভালোবাসি বলে
সমুদ্রের ওপারে যে লাল সকাল-সন্ধ্যায় ঝরে পড়ে
অনিঃশেষ দেখতে দেখতে ভুলে যাই
অন্তরালের বিশ্বাস

বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০১৪

রক্তাক্ত ডানা

আমরা নিঃশব্দে বসে আছি

আমাদের পায়ের তলায় দুর্বাঘাস
মাথার ওপরে কবিতাভূক দিনের সূর্য

তথৈবচ জীবন,আগামী স্বপ্ন,---
আর আমরা প্রস্তুত পাহাড়ের পেছনে যে দিন
তার পায়ে বেড়ি দিতে

প্রলাপমগ্ন শুদ্ধতা পার হয়ে
শব্দগুলো খুলে যায়
বর্ণ ভেঙে ভেঙে বহুদূরে টেনে নেয় জলস্রোত
হাড়ে হাড়ে সংঘর্ষ,আগুন

গোপন আদরে অবসাদগ্রস্ত শরীর,রাতের জলভারে
কোথায় দাঁড়াতে চাও
ভাঙা নৌকা পড়ে আছে খালের কিনারে
নিগূঢ় গাছের সমারোহে পাখিরা ঘুমিয়ে আছে
তাদের ডানায় রক্তক্ষত

জলের অনল

যুবতী জানে না যুবকের চোখের তারায়
নীলের ছত্রাক জমে আছে
চন্দ্রগ্রস্ত বুকের উপান্তে
অসহিষ্ণু শোকের আলোক

আকাঙ্খার বিমূর্ত প্রতিমা গড়েছিল---
রাত যত দীর্ঘ হয়,---এই বুক নদী নয়
ভেসে যেতে যেতে কষ্টেরা আছড়ে পড়ে
দুই কূলে বাধ

রক্তের লোহিত কণা,দশ আঙুলে আদুল অনুময়
শব্দের ভেতর থেকে বর্ণের মিছিল
ইথারে ভাসতে থাকে প্রেমের ইশতেহার

বকুলের গন্ধমাখা স্তন যদি যায় ডাকাতের হাতের মুঠোয়
তামাটে সংসার ভুলে একদিন ঠিক ঝাঁপ দেবে জলের অনলে

মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০১৪

বিস্ফোরণ

সূর্যাস্তরঙিন মুখে শুয়ে আছে,কবি
পিঠের তলায় দুর্বাঘাস
অই পারে রাতের প্রচ্ছদ
ঘরে ঘরে দীপ

চলে গেছে দিন
বহুদিন ভোরের ভেতর কবি দেখেছেঃমেঘের আলপথে
চলমান নৌকা,অর্ধনগ্ন স্নান,কলহাস্যে

খুলির ভেতর নীল ডানার ডাইনী নাচে
তা ধিন তা ধিন

কোষগুলো একে একে ফেটে যায় বিস্ফোরণে

কুয়াশা,ঝাপসা অন্ধকার

আধপোড়া শরীরে সূর্যাস্ত ঢেউ
হেমন্তের দুপুরে জোয়ার আসে
দু'কূল ছাপিয়ে

প্রোষিতভর্তৃকা কাঁপে
যৌনগন্ধহীন বিছানা ঋতুরক্ত
দুপুরের পেছনে দুপুর এসে থমকে দাঁড়িয়ে থাকে

রমণীর দুই চোখে কুয়াশা,ঝাপসা অন্ধকার

সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০১৪

সুবর্ণরঙা শরীর

নদীর এ পারে প্রগাঢ় কাশের বন,অই পারে গ্রাম্য যুবতী দাঁড়িয়ে আছে।বজ্র ও বিদ্যুৎ চমকায়,চারদিক আলো করে আসে মেঘ।মেঘের ভেতর নৌকা।ফুটো নৌকা থেকে অবিরল ধারায় বৃষ্টির জল ঝরে।জলে পোড়ে যুবতী শরীর আর সদ্যস্নাতা চুলের নরম গন্ধে সুবর্ণরঙা শরীর ছুঁতে জলরেখা ধরে ছুটে আসে শ্যামাপোকা--সারাগায়ে নীল বিষ,বাঁ দিকের খোলা স্তন---চোখ থেকে জল ঝরছে,বৃষ্টির জল আর কোনটা চোখের জল---এতদূর থেকে বুঝতে পারি নি।

বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০১৪

বিমূর্ত ছবি

ঐকান্তিক শরীরের প্রেমে যথেচ্ছ নির্ভার
তোমার শরীর ছিল ক্যানভাস
আর আমি
ছিলাম দ্য ভিঞ্চি

অশান্ত রাতের ঢেউ ছুঁয়ে
বিষাক্ত সুদূর গলে গিয়েছিল প্রেম ও সম্ভোগে

যথেষ্ট বর্ণনা ছিল না;উদ্দাম প্রেম,যৌনজ্বরে
তপ্তশ্বাস---শরীরের নীচে শরীর,ক্ষমতা ছিল---
প্রতিরোধে প্রতিরোধে দিন কাটে,রাত কাটে
পায়ের তলায় খাদ,মাথার ওপরে নির্মেঘ আকাশ

বসতি ঘুমোয় আর আমরা বিক্ষত নখ ও ঠোঁটের আঁচড়ে

পলায়মান ভবিষ্যৎ

নির্বাপিত,ধুম্রনাসা কাঠ
শ্মশানের পেছনে পুরোনো তালগাছ
করোটির পানপাত্র,হাড়ের ছিলিম,---
লাল চোখে ধোঁয়া ওগড়ায়
ছায়াচরে ঘুম,শেকলের ঝনাৎকার

শ্মশান বন্ধুরা ফিরে গেছে
পথরক্ত পার হয়ে
উঠোনে ধানের গোলা
আগুন ও লোহা ছুঁয়ে
শামুকের চুন মুখে
হাতে বাজে রুপোর চাকতি
অসম্ভব প্রণামী দু'চোখে
পলায়মান ভবিষ্যৎকাল

সারাঘরে ছুটোছুটি করে

নিস্তব্ধ অন্ধকার

সমুদ্র তীরের পাশাপাশি,ঝাউবনে
সন্ধ্যাবেলার প্রচ্ছদ
সমস্ত দিনের অবিরল ভুল থেকে,
বস্তুব্যাপকতা থেকে ফিরে আসি
আমার একাকী জ্যোৎস্নাবাধা ঘরে

পায়ে পথরক্ত,হাতে জমানো শব্দের শব
ক্ষতভরা মুখে গুঁজে দিই মুঠো মুঠো দুর্বাঘাস
চন্দন প্রলেপে দুঃখমুছে
পালাবার পথ ভরে লক্ষ লক্ষ জোনাকীর চোখ

যে পথে ফিরেছে শ্মশান বন্ধুর দল,----
পুরোনো বন্ধুরা কেউ আর সহগামী নয়

পথ মুড়ে নিয়েছি নিস্তব্ধ অন্ধকারে

মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০১৪

পৃথিবীর ধাতব প্রচ্ছদ

আর অপেক্ষা কোরো না
আমি জলের তলায় নেমে গেছি
চকচকে বালিয়াড়ি পার হয়ে
আরো বড় খাদ---সামনে প্যাঁচানো সিঁড়ি,রক্তমুখ
সূর্যাস্তের প্রার্থনায় বিশীর্ণ আঙুল আকাশের দিকে উঠে গিয়েছিল

কতোদিনের পুরোনো মুখ,কোটরহীন দু'চোখ
ব্যর্থ প্রণয়ের ছাই
দু'দিকে পাঁজর ফুড়ে লোহার আরক চূর্ণ,কয়লা মেশানো জল
বালির ওপরে জমে ওঠে কাঁকড়ার প্রণয়;আলো ও অন্ধকারে
ভাঙা হাড়গোড়
স্তুপের পেছনে স্তুপ
উন্মাদ,মিথুনাবদ্ধ প্রাণ আবর্তিত অভিশাপে
জ্বলে পৃথিবীর ধাতব প্রচ্ছদ
ইস্পাতের ঘাস

অমোঘ শ্লোক

অবশেষে নিজের খুলির মধ্যে
কিলবিল করে ওঠে ক'লক্ষ জোনাক পোকা
অন্ধকার জ্বালিয়ে,বাঁকানো বঁড়শিতে
তুলে আনে জলপোড়া শব
চোখহীন শরীর খুবলে খেয়ে গেছে
প্রতিসাম্য বনের শেয়াল

দোল পূর্ণিমার রাতে
স্বর্ণত্বক লতাগুল্মে   মিশেছিল;দেহভারানত
জ্বলন্ত শরীর নিয়ে জল খেতে ঝর্ণাতীরে
চোলি,কাঁচুলি,ওড়না---
এখনো মাটিতে মিশে যায় নি;ধূয়োঁর রেখা
বনের আড়াল থেকে লক্ষ্য করে অন্ধকার

করপুট ভরে চোখের সমস্ত জল---
লবণ ঝরছে চোখ থেকে
'পুরুষকার,পুরুষকার নয়,দৈবই প্রবল',---

জ্বলছে অমোঘ শ্লোক একাকী,প্রদোষে

গোধূলির নিস্পৃহ বিষাদ

গোধূলির নিস্পৃহ বিষাদে ম্লান ছবি।লাল ইটের বাড়ির পাশে
ঘূর্ণিফলগাছ।পরিচিত দৃশ্য,কাঙ্খিত বিন্যাস।আমি কতদিন
গুঁড়িতে হেলান দিয়ে বসি।স্বচ্ছল পাতার অন্তরালে
পরিচিত পাখিদের বাসা।ছুঁয়ে আছে সূর্যের বেগুনী রশ্মি।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট,রহস্যের মূল কিনারায় প্রিয়তমা নারী,
অতীত আসক্তি এবং তোমার গানের নীল খাতা,দীর্ঘশ্বাস---
অগুনিত মানুষ তোমার গান শুনেছিল।
অন্ধত্ব ও বধিরতা ছিল গানে?ছিল,প্রতিদিনের গল্প ও
রৌদ্ররুপালীর রেখা?প্রিয় কামনায় খুলে নিয়েছিলে হাড়,
বুকের পাঁজরে জ্বেলেছিলে আত্মমগ্ন দীপ।জাগতিক বিপূল নিয়মে
সেইসব কাঠবাদামের বন আজ কোথায় হারিয়ে গেছে।
ঐকান্তিকতা থেকেও দূরে খেলা ছিল জলে।
প্রতিবন্দু আনন্দের জলে বুদবুদ---নীল বিচ্ছেদের অধিকৃত।
নৈশকালীন আগুনে পুড়ে গেছে দারুণ শীতের ত্বক,
উন্মুক্ত শিরা-উপশিরা বেয়ে নামে কুয়াশা,লৌকিক গ্রাম

ঘিরে শেয়াল ছুটছে,পেছনে কুকুর।

চন্ডাল

তোমাদের হাতে পরিত্রাণ,মনোবৃত্তি,সুদূর অতীত থেকে উঠে আসা অমোঘ নিয়মাবলী।
আমাদের কর্কশ শরীর,খর্বচুল,গলায় শ্মশানমালা,নীল চোলি,কব্জি,কন্ঠায় ও গোড়ালিতে,কন্ঠায় লোহাবন্ধ।

নগ্নপায়ে ঘুরি,পথ কেঁপে ওঠে।মুখের রেখায় তিনপুরু ধূলোস্তর যেমন নদীর জলে মিশে থাকে জাহাজের সারি।রোদহীন শস্যের শরীরে পরিত্রাণ খুঁজি,পথের গহ্বরে পরিচিত শব্দমালা,শেকলের ঝনাৎকার বেজে ওঠে।যথার্থ বসন্ত---সাবলীল কালো জলাধারে এবং অর্থহীনতার পরপারে লুকিয়ে রয়েছে। একেকটা দিন এভাবে হারিয়ে যেতে থাকে পাহাড়ের ঢালে।সতেজ ঝর্ণার জলে বেঁকে যায় ঠোঁট।দু'হাতে শ্মশান ডাকে।

চিতার আগুনে গোল হয়ে বসি।খুরিভর্তি মদ।মৃতদের গল্প শুনি।আহ!চমৎকার দিন ছিল...........।

কামাখ্যা মন্ত্র

নাটমন্দিরের প্রতিমা,অপরিণত ভ্রূণ,---
মাতৃসমা জলে ভাসে
দু'জনার সাজানো জীবন
ভাঙা দেয়ালের খোপে পরাচুল,মুখোস ও স্নেহময় উল

সর্বাঙ্গে জড়িয়ে ঘেরাজাল,মাছের আঁশটে গন্ধ
মালসার আগুনে পুড়ছে তুষ
দ্রুতগামী শীতে জ্বলছে শরীর,নারী
কতটুকু ওম ধরে রেখেছ সংবেদী হৃদয়ের ভাঁজে
সুদূর সূর্যের তাপে শুয়ে আছি
এই বালুচর,কাশের বন
ভূগোলের সরল প্রান্তরে

দীর্ঘসূত্রী জীবন,কামাখ্যা মন্ত্রে
শুধু ছুটে যায় সুতো,কাঠি ফাঁস

সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০১৪

স্বরচিত অন্ধকার

স্বরচিত অন্ধকারের ভেতর শব্দগুলো খুলে পড়ে
চুপচাপ মুছে যায় আমাদের প্রিয় নাম
অপলাপী ভাষার কবিতা,সন্দর্শন,---
হলুদজল সময় ছুঁয়ে যায় দিগন্তের ঘের

নিমগ্ন বালুর চরে গোধূলির ভাঙা আলো
লিখেছিলাম সন্ধ্যার শত নাম,খোলা নিঃঝুমতা
নদীর জোয়ারে ভেসে গেছে আলতো ঠোঁটের গান
গোপন রাতের স্তুপে জমে জোনাকীর মৃতদেহ
আত্ম-ইতিহাস থেকে বালির উত্থানে
আমাদের বেঁচে থাকা ক্রমশঃ দুর্লভ থেকে
 দুর্লভতর;যেখানে ভবিষ্যৎ নেই

ঠান্ডা পাথরের ঘর,নিঃশব্দ প্রহরে
বুক থেকে খুলে আসে পাঁজর,---ত্রিতালে বেজে ওঠে
গ্রহনক্ষত্রের দল;যেদিকে তাকাই
স্বরচিত অন্ধকারে বিষাদ উপুড় হয়ে শুয়ে আছে

রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৪

জ্বলে ওঠে একজন নিঃসঙ্গ পুরুষ

গভীর ঘুমের মাঝখানে আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টির জল ছুঁয়ে
ভেঙেছে সংযম;হার্দ্য প্রবণতা

জলপাই বনের নীলাভ অন্ধকারে
সদ্যস্নাতা যুবতীর বুক ও চুলের ঘ্রাণে
কবিতা লিখছে নিমগ্ন কবির প্রতিকৃতি,প্রেমিক পুরুষ

দাউ দাউ জ্বলে ওঠে শরীর,দু'কূলে বাধ
জ্বলে ওঠে একজন নিঃসঙ্গ পুরুষ

মাছির গুঞ্জন

বিজন সন্ধ্যাবেলার গ্রাম।গৈরিক সন্ন্যাস।পথে রিপুভয়।
শালবন থেকে পায়ে পায়ে উঠে আসে কালো রাত।
বাদুড়ের ডানা ঝাপটানো শব্দের ভেতর পাটাতন।
নৌকা ও নদীর সাংঘর্ষিক অবস্থান।অই পারে চলে যাবে?
সবুজের অবাধ স্মৃতি ও অন্ধকারে পালটে চাঁদের শত নাম।
জলের ওপর ভেসেছিল বদর মাঝির নৌকা,
ডুবে গেছে কতকাল,----অস্পষ্ট অতীত দিন মুখে
ভয়ে ভয়ে ভরে তুলি উঠোন,শস্যের গোলা

যদি আসে দুর্ভিক্ষ ও খরা,---
পাথর কুঁচির মুখ ঠিক খুঁজে নেবে মাছির গুঞ্জন

পায়ের শব্দে

পায়ে তিনপুরু ধূলো,মাথার ওপরে বৈশাখের তপ্ত ধারাস্নান
একেলা পথিক পথে নেমেছ;শরীর বেয়ে ঘাম
জলতেষ্টা
পথের সমস্ত ধূলো বুজে গেছে,পরা পুষ্করিনি

আদি মানবীর ঠোঁটে সতেজ ঝর্ণার জল লেগে আছে
বুকের কাঁচুলি খুলে মুঠো মুঠো শস্যবীজ,---
তার ছায়ায় প্রণয়--- এই অভিলাষে
চিরন্তন ধানীস্তন,পুরুষ্ট গমের শীষ নুয়ে পড়ে
পূর্বমুখে ভিটেমাটি,মধ্যমাঠ একসঙ্গে কেঁপে ওঠে
নালহীন ঘোড়ার চাপে
খসে পড়ে সময়---পায়ের শব্দে
শোনা যায় কেউ একজন ঐ দিকে আসছে

অগ্নি ও জলের মাঝামাঝি

প্রতিপদের একেলা চাঁদ,নিঃসীম সৈকতে ভেসে আসে লোকায়ত বৃন্দগান
জড়তা নামছে মোহশরীরে;আভ্যন্তরীন রক্তপাত,বালির প্রতিফলনে
সমুদ্র রেখার নীল রঙে জলসন্ধি,কেবল গরিমাচূড়া

পরিত্যক্ত সীসা ও অভ্রের খনি,সাঁকোহীন নদী এবং মৃতকূপে ভরা পথ
হ্রদ নেই,দূরের পাহাড়ে দাবানল
পুড়ে গেছে পাথর ও গাছ
সৈকতের বাতাসে শুধুই ছাই ওড়ে

মাতৃসমা সমুদ্রের জলে কতবার ভাসতে ভাসতে
ফিরে এসেছি বালিয়াড়ির টানে
স্তব্ধতা ও কোলাহল থেকে,----
বালিয়াড়ি জানে আমি অগ্নি ও জলের মাঝামাঝি অবস্থানে
সাহায্যবটের অবিনাশী নাশকতা,গ্রীষ্মদিনের প্রান্তরে অপর্যাপ্ত জল
কৌমার্য্যহীন অক্ষরে লেখা সমস্ত কবিতা শ্রেয়বোধে লুকিয়ে রয়েছে
অতৃপ্ত আলোর উন্মোচন,---আড়ালে কিংশুক

আর অভিবাসী অসুরের দল
নুন চাটছে,সৈন্ধব লবণের চাঙড়ে তাদের দ্বি-বিধ মুখ

শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০১৪

অনুচ্চারিত শব্দ ও সমতীত দিন

অনুচ্চারিত শব্দ ও সমতীত দিনশেষে মাঠে মাঠে শান্ত ছবি,বিমূর্ত কুয়াশাঘেরা
সর্ষেফুল,মটর শুঁটির এই মাঠ মুছে যাবে অবিরোধী কলরবে।শুভ্র প্রতিশ্রুতি,
অনুসৃত আবেগ ও মৌল অবসাদে নিমগ্ন পায়ের চিহ্ন বালুচরে ম্লান,অন্তরালে
বিচ্ছিন্নের বিষন্নতায় সুগত চোখে সমন্বিত পদ্ম জ্বলে।প্রত্যাশিত বাঁকের আড়ালে
তমসালীন দুপুরে সমর্পণ জেগেছিল।ঘন শ্বাস,অবন্যস্ত চুল,স্খালিত পোষাকে
মাটি ও শুকনো পাতা।মনোময় উৎসব।নিবিড় স্তন-শিল্পের অন্বয়ে বিকশিত।
দূরাগত অসহায়ের খেয়ায় উচ্চারিত প্রতিধ্বনি,সমর্পিত নিয়মী উপকরণ।
ফাঁকা ঘরে নিরুদ্দেশ স্বর্ণের সমুজ্জ্বলতা,অন্তহীন রহস্যে বাজছে ঘন্টা।মধ্যরাতে
সঞ্চারিত অভিভাব,অনুবর্তিতার স্তব্ধতায় এঁকেছি মিলনলগ্ন,পরিশ্রান্ত ছবি।
চিরবিস্মৃত আলোয় শীতল চোখের দৃষ্টি,পরিশুদ্ধ মুখের রেখার মধ্যে প্রতিরুপী
আলো এবং স্বভাবী নির্মাণে অনিদ্রিত গোলাপ।আপাত গৌরবের পরিশ্রমী
আয়োজন।আমাদের সমান্তরাল ইচ্ছেগুলোর দ্যুতি যেন আবর্তিত অভিশাপ।
জ্যোৎস্না এলে কুঁড়ি মেলে, দুলে ওঠে বিনম্র ও দীর্ঘ সমারোহ এবং উপহাসে।

নীল ফুলের স্পর্ধিত অহংকার

নীল ফুলের স্পর্ধিত অহংকারে কতদিন আহত হয়েছি
অসম্পূর্ণ বাগানের বিতত গোলাপ
বাগানের পথে নিবিড় অশথগাছ
সারা বিকেল নিমগ্ন রজনীগন্ধার বিমূর্ত সৌরভে
তোমার বাগানে আসন্নসম্ভব নির্জনতা,বিস্তৃত মমতা
কুঁড়ি ও সম্পন্ন ফুল;আমার শরীর ভরে ছায়া নেমে আসে
আমি শান্ত উঠে আসি বকুল ফুলের কান্না থেকে
প্রণত দু'হাত রক্তজবা ছুঁয়েছিল,---
আমি তার অভিশাপ টের পাই

সেদিন বোঝ নি ফুল ও কোরক কোন ভাষার আশ্রয়ী
কামুক আঁধার চেয়েছিলে,অন্যমন নিরুদ্ধ নিঃশ্বাস
অবজ্ঞাত বিশুষ্ক হলুদ ফুলে ভরে উঠেছিল
ফিরে দেখ নি সংহত মল্লিকার কষ্টগুলো
যখন পাপড়িগুলো আস্তে আস্তে ম্লান হয়ে আসে আর
দরিদ্র শিউলি বাগানের ধূলোয় অম্লান শুয়ে থাকে

বালির বিকিরণ

প্রীত অনুচ্ছ্বাসে বসন্ত বন্দনা,অবিরল সুর
শোনো নি বিলাপ,বাতাসের
ফাল্গুনের শান্ততায় উদ্ধত অভীপ্সা
অমেয় নির্জন মুখে সায়াহ্নের মেঘ
বিচিত্রিত গোধূলি,নিমগ্ন তীরে এতো আলো

জলস্রোতে সমরাগ,শিথিল বিশ্বাস ফিরে পেতে চাও
চাও,আকাঙ্খিত সোপান,অলঙ্ঘ্য প্রতিশ্রুতি
প্রশ্নাতুর জলের ভাষায় আবর্তিত সমুদ্রের অতলান্ত দাবী
বিস্ময়ের নিবিষ্ট স্বাক্ষর
আসন্নসম্ভব নির্জনতা ঘিরে রেখেছে বিস্মরণের লাল মৃত্যু

প্রণত পথের পাশে সবুজ ঘাসের পাখি,ফুল
উন্মোচিত আবির্ভাবে অধরা বিস্মৃতি
অনায়াস প্রণয়ের চূড়ায় আকাশ জ্বালিয়েছ
তোমার সম্পন্ন ঘরে তরঙ্গিত ঢেউ,জলভারানত মেঘ
ভেজা বকুলফুলের গন্ধ,আতত হৃদয়
আলোকিত সন্ধ্যাবেলায় সুস্পষ্ট জীবনের নীল সমন্বিত আলো ও বালির বিকিরণ

রক্ত ঠোঁটের বিদ্যুৎ

পথে পথে বাতাসের বিলাপ,নির্জন বালুচরে
গেয়ে যাচ্ছ বিরহী সংরাগ
উতরোল বেদনা,প্রণয়,---
উচ্ছ্বসিত দুলে ওঠে কাশবন

পরিচিত পথের দুপুরে অন্তহীন রহস্য,গভীর সমতায় শান্ত স্রোত
অনুকূল ছায়া,দ্বিতীয় নির্মাণে মিলনের ভাষা এমন সহজ
অবিরল চেতনার সুরে নিবিষ্ট মুহূর্ত,ব্যাপ্ত আকাশ,ধূসর মেঘ
খর রোদে জমে থাকে বিন্দু বিন্দু জল

শব্দার্থময় যজ্ঞ ও পিন্ডে,শিল্পকর্মে অগ্নির প্রবাহ
সংবেদী হৃদয়ে সমন্বিত জ্বলে ওঠে নক্ষত্রের মতো
তার ছাই শিরায় উপশিরায় তরঙ্গিত অনাশ্রয়ী অন্ধকারে
মেঘ ঢেকে রেখেছে শরীর কিন্তু ঝড় এখনো আসে নি
অথচ উত্তাপে দীপ্ত প্রেম,প্রলাপ,প্রণতি,---
পাশাপাশি রক্ত ঠোঁটের বিদ্যুৎ ঠিক ঝলসে উঠছে

বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৪

বোধ,পরিত্রাণ ও পরাভব

সায়ংকালীন স্নান ও অগ্নিহোত্র শেষে শব্দহীন বালির রহস্য,বিকিরণ
তোমার চোখের চরাচরে জেগে ওঠে আত্মাভিমান,ঝাউবন
নতজানু ক্ষমা চেয়েছিলাম,---বোধের,পরিত্রাণ ও পরাভবের
ঝরে পড়ার প্রতিটি শব্দে নৈসর্গিক দুঃখজটাজাল

গোধূলি শহর ছেড়ে এসেছি,ভিক্ষার থালা হাতে
দীর্ঘ সমারোহে স্বচ্ছ পথে পুরোনো গাছের গুঁড়ি
বাকলে বাকলে ঘুণ
সজল রাতের ধারাময় শল্যপাতে
ঘরের বিষাদ ভুলে গেছি
প্রাংশুলভ্য উন্মাদ সন্ন্যাসে সবটুকু জল ধরেছি দু'হাতে

আমার থালায় কয় মুঠি ভিক্ষে দেবে

বর্ষার গান

পাললিক আগুন,রুপান্তরীত ধোঁয়া,নদীর ওপারে বৃষ্টিহীন মেঘ
চিত্রার্পিত বালুচরে শুয়ে আছ
আচ্ছন্ন রৌদ্রের স্বপ্নে দুই চোখ
বোঝে নি বর্ষার সচকিত গান

বালির ভেতরে ঢুকে যায় অপমান
দুর্বৃত্ত বৃষ্টির গর্ত তাকে খুঁড়ে আনে
অন্তর্ময় নিদাঘ,---বর্ষার মন্ত্র জপে জপে বীতরাগে
জেনে নিয়েছি বর্ষার পরিমাপ

স্বপ্নের প্রসূণ ভিজিয়ে রেখেছি বর্ষামঙ্গলের ঘটে
বিবশ আঙুল,ছেঁড়া স্বরতন্ত্রী,----
খরতপ্ত ঠোঁট ও অধর আর্দ্র করে নাও
এবারের এ বর্ষা মৌসুমে

শেকড় সংশ্লিষ্ট বিভাজন

জলের গভীরতর প্রহেলিকা অগাধ শরীরে রেখে যায় মুগ্ধ পরাভব
আমি চিতা থেকে দৌড়ে নেমে আসি
পথে পথে পুড়ি
অগ্নি ও জলের মিলনী সংরাগে
চিতা থেকে ছাই,জল থেকে মৃত নাবিকের দল
মৃদুজল ঢেউয়ে নিহিত বোধে উঠে আসে
জলের প্রতিটি শব্দে গত বর্ষাদিনের স্বচ্ছতা
শেকড় সংশ্লিষ্ট বিভাজনে শ্মশান থমকে আছে

সমন্বিত চিতা জ্বলে দ্বিগুণ,দ্বিগুণ
জল পোড়ে,জল পোড়ে,নদীর সমস্ত জল পুড়ে যায়

বুধবার, ১২ মার্চ, ২০১৪

সমুদ্র জলে সমর্পণ

শিশ্নহীন সওদাগরী নৌকার ভৌগলিক নগরের দিকে যাত্রা শুরু হলে জলবৃত্তে
রশ্মিময় প্রতিবিম্ব,জলের ভেতর সুবাসিত মাছের শরীর অনন্ত পদান্তে কেঁপে ওঠে।
তীরে দাঁড়িয়ে আয়নাটুকু ধরে রাখি-ঐ পারে কাঠবাদাম গাছ,কোটরে কাঠবিড়ালী,
সুতোজাল ছড়িয়ে রয়েছে,ভাগ্যান্বেষী শুশুক অন্তিম হাড় খুলে ফেলে ধাতুকবিতার।
খনিজবিদ্যা শিখেছ,ভূ-গর্ভস্থ আলো-অন্ধকারের ভেতর হীরকখন্ড লাফিয়ে ওঠে
কয়লার সু-কঠিণ স্তর থেকে স্তরে ঝরে পড়ে অপার্থিব আলোকজ্জ্বল বর্ণালী দ্যুতি।
বৈচিত্রহীন একটি রঙে স্থির সমস্ত শরীর,সারসঙ্গ শ্বেত,আদূল মুখের পট,
চোখের ভেতর নুন,জল,হলুদ ও মশল্লার দ্রবে চারদিকে ম ম গন্ধ,ঘর্মস্নান,
নদী বিপর্যয়ে এই বালুচরে গান গেয়েছিলাম,পরাবাস্তবতার,শুনেছিল কেউ?
মাথার ওপর চৈত্র,পায়ের তলায় কাঁপে মাটির স্বচ্ছতা,মেঘহীন অঘোর আকাশ--
সূর্য তলোয়ার গেঁথে রাখে ত্রিখন্ড ত্রিশুল,ভাঙে বুদ্ধের জটিল নিদ্রা,ধ্যান।

সাঁকোর আড়ালে ম্লান নৌকাগুলো স্তব্ধতার মাত্রা ভেঙে কলংকের ভাগ নিতে ছুটে আসে
জল ভেঙে,ঢেউ ভেঙে,পাপ থেকে পাপের স্খালনে সমর্পিত সমুদ্র জলের দিকে।

মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০১৪

মানুষের টান

দূরাগত প্রাকৃতিক দৃশ্য,বিপন্ন মানুষ,প্রজাপতির রঙিন ডানা,দীর্ঘতর বট
আমি এসবের থেকে আড়াল চেয়েছিলাম পরাভূত সময়ে মূখর হাসি,আর্তনাদ
বস্তুত প্রান্তিক ভালোবাসার ভেতর থেকে জ্বলে উঠেছিল চিতা,রাত্রিবেলার নিঃস্বনে
জন্মজামিন প্রেমিকা সমর্পণের সমস্ত উজ্জ্বলতা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে,মুখোমুখি
চন্দ্রতাপ,নিষ্ফলতার চাবুক শিষ কাটে,স্মৃতিজলে সাঁতরায় কয়েক হাজার হাঁস
উন্মুক্ত নাভির ঘ্রাণে শুয়ে আছি প্রেমিকার পাশে,একপাশে আলো,আলোর ভেতর শূন্য
ভেঙে এনেছি ত্রিতাল,কোন তল থেকে বের হয়ে আসে স্বরধ্বনি,পায়ে পায়ে ব্যকরণ
শৃঙ্খলের ব্যঞ্জন,বুকের মধ্যে একাদশীর একেলা অন্ধকার,কখনো রক্তের ডাক
জল থেকে শিহরণ,নাবিকের হাড়ে লবণ-ফেনার স্তুপ,চিমনির ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে
অশ্বমেধযজ্ঞের রহস্য,দশাশ্বমেধ লাফিয়ে ওঠে অনাদিকালের মানুষের টানে

সোমবার, ১০ মার্চ, ২০১৪

অশরীরী অন্ধকার

চোখের পাতায় ঘাসরঙা স্বপ্ন

মেঘের ভেতর উড়ে যাবার প্রয়াসে
সামঞ্জস্যের অপরিণত ডানা

আকাশগঙ্গার ছায়া থেকে নেমে আসে
মৃত মানুষের দল
জ্যোৎস্নার আদলে নড়ে ওঠে

নিজেকে ছিঁড়েছি আবর্তন,ঘূর্ণিপাকে
আমার মজ্জার মধ্য দিয়ে বয়ে চলে জনস্রোত
আহ্নিক আবর্ত,আকাশে মিথুনমুর্তি,---
চিরায়ত ফল খসে পড়ে মাধ্যাকর্ষণের টানে

আমার চোখের দিকে তাকাও;পরিখাময় শ্বাস,---
হতভাগ্য দিনগুলো উত্তর-দক্ষিণে বেড়ে যাচ্ছে
যার শুরু নেই,শেষ নেই
এবং মূর্খরাও জেনে গেছে

অশরীরী অন্ধকারে অনেকান্ত জীবন ক্রমশঃ ঝরে পড়ে

রবিবার, ৯ মার্চ, ২০১৪

দিন-রাতের প্রভেদ

অসম্ভব প্রণামী দু'চোখ ঢেকে আছে ফুলের কোরকে
চারদিক থেকে উপচে উঠছে আলো
স্বচ্ছতায় লীন আলোর ভেতর বাস
অন্ধকার তার পায়ে পায়ে

লুকানো রয়েছে সব দাহ
প্রেমিকার রক্তাভ নখের ঘায়ে অবিচল ঋণের তামাদী সুদ পিঠে
বুকের আরেক পাশে আলো
ছিঁড়ে ফেলে শূন্য প্রতিভা ও দিন-রাতের প্রভেদ

অপ্রতিহত গতি

শেকড় আঁকড়ে দিন ও রাতের মাঝখানে ভুল পায়ে উঠে আসি
ঘরের বিষাদ,পাখি ওড়া ছায়া,যা কিছু কলংক,---
শুধু শব্দে নয় জলের ঘুর্ণিতে সূর্য প্রতিভার রেখা
গোধূলির অনন্ত সন্ন্যাসে ভুলে গেছি
কবে অতর্কিতে ছুঁয়েছিলাম বেদনাময় পাতা ও সবুজ আত্মাময় ডাল
পাথরের পথ ঘুরে দেখি কুয়াশায় মুছে নেয়া নদীর সম্পন্ন তীরে
পালানোর আকর্ষণ ছড়িয়ে রয়েছে ভেবে
ঘন সবুজের স্রোতে মিশে যাই কাছি নৌকা-অপ্রতিহত গতির তীব্রতায়

শনিবার, ৮ মার্চ, ২০১৪

অর্ধেক বেদনা

অর্ধেক বেদনা বুকে পুষে রেখেছি,অর্ধেক জলস্রোতে

জল নেয় নি,রাগিনীরেখা,ইমনকল্যাণে ফিরিয়ে দিয়েছে
অগোচর ধ্যানে পথচলতি চিৎকার

কোথায় পালাবে
পূর্ব পশ্চিম পাহাড় বন
আকাশের সীমা পার হয়ে

প্রহরে প্রহরে জাগে বেদনার টান
ফুঁসে ওঠে বালি,ঝর্ণাপাথরের পথে উন্মাদ পুরুষ
উড়িয়ে দিয়েছে কবিতার নীল খাতা
আত্মবিবৃতির সুনিপুণ দিনপঞ্জি

করতল মেলে বলি,এসো নাব্য পথে
জলসেঁচের কিনার ঘেঁষে
যদি আসে খরা,বৃষ্টিহীন দিন
আমরা মেঘের দিকে সরে যাব
জ্বলে যাক বুকের শুকনো ক্ষত তারার মতোন

রুপালী ইলিশ দ্যুতি

ঢেউ কেটে কাছিনৌকা চলে যায় নদীর ওপারে
শরীরে সজল আভা,আমাকে ডাকে নি
সাবেকী আহ্লাদে ভেঙে পড়ে বিকেলের আলো
সমকালের গহ্বরে মিশে গেল আরো এক ব্যর্থ দিন

পলকে পলকে অপমান,রীতিহীন খেলা,---
তোমার শরীর থেকে সব আদরের চিহ্ন ঝরে গেছে
ভাসিয়ে নিয়েছে ঢেউ মরা প্রতিভা,ভালোবাসার প্রতিশ্রুত ঋণ

সমর্পিত নদী,দুঃখের দক্ষিণ পাশে স্থির

স্থিরতর থেকে সন্ধ্যাজাল পথে হেঁটে গেছি
আমার দুঃখের পাশে ছিল রুপালী ইলিশ দ্যুতি

খড় ও পোড়ামাটির গন্ধ

আমি ফিরে এসেছি পথের ধারে শব্দগুলো মুছে
অংকশায়ী স্বরধ্বনি ফাঁদ পেতেছিল
মুখের উপরে ধারাস্নান---শূন্যে ভেঙে
নিয়তি,প্রতিবিম্বিত আলো,----
পাপে ভরা শরীর,আকাশে সূর্যপোড়া ছাই

তোমার অভিমানের প্রতিরুপে নিচু হয়ে বসেছিলাম,পায়ের কাছে
স্বপ্নালু এ কবি নগ্ন পায়ে ঠোঁটের আল্পনা এঁকে দিয়েছিল

খড় নির্মিত শরীরে কাদামাটি গেঁথে
কুশপুত্তলিকা থেকে
শিরা উপশিরা ধমনী ও অবশেষে মাংসে ঠাসা জলজ্যান্ত নারী

খড় ও পোড়ামাটির গন্ধ আজও শরীরে লেগে আছে

সমানুপাতিক ধ্রুবতারা

চতুর্দশীর একেলা অন্ধকার,বুকে শ্যামল বিনয়ভূমি
জলস্রোতে ভাসে বসন্তবয়স
আমি ধূলোপায়ে ফিরে এসেছি কালান্তরের রথ থেকে
স্মৃতিদীপ জ্বালো নি এখনো
ডাল সমেত সবুজ পাতা ভেঙে এনেছি,দু'হাতে কীট ও পতঙ্গ

সূর্য্যালোকে প্রীত পাখি ও গলিত মাছি আমাকে চিনেছে
গ্রহ-নক্ষত্রের অসীম প্রভাবে যারা নিজেকে দেবতা ভাবে
আমি জানি ধাতব তৈজষপত্র আর কবচকুন্ডলিত
শরীরে অগ্নির হাহাকার

মনোবাসীদল তোমরা জেনেছ পরিত্রাণ নেই নির্বোধ পোষাকে
হা-করা মুখের গ্রাসে উঠছে সিঁদুর,ছাই
চোখ ঢেকে আছে আধপোড়া কাঠের ধোঁয়ায়

যথার্থ বিদুষী নারী যে পথে ফিরেছি
ধ্রুবতারা ছিল সমানুপাতিক তবে

মোদক মাত্রার পরিমাপ না করেই ফেরার হয়েছিলাম

ভেষজ মানুষ

ছেনি-হাতুড়ীর শব্দে স্বপ্নের নির্মাণ শুরু হলে
আমাদের ভাঙাবাড়ি আর যে স্বপ্নের কথা সারা গ্রাম রটে গিয়েছিল
তার মাঝখানে প্রতিবেশীর দেয়াল
উঁচু হতে হতে আকাশের মাথা ছুঁয়েছিল

দিন ও রাতের সহচর ইঁদুরের চতুর দাঁতের ফাঁকে
কুট কুট শব্দে ভেঙে যাচ্ছিল ঘৃণার স্তুপ

স্বপ্ন ও ঘৃণার পাশাপাশি
বাস্তবতা খড়খড়ি তুলে দেখে নেয়

আপাত পার্থক্যঃছায়া এবং ভেষজ মানুষ

শূন্য

সাঁকোহীন নদীর দু'পারে ভৌগলিক সীমারেখার আলাদা উপাখ্যান,ভিন্ন ভিন্ন গল্প
এপারে জলকলহ,ওপারের বাসিন্দার শব্দ ও স্রোতের বিপরীতে শতছিদ্র জাল,
কাছিনৌকা,পালের বিস্তার,অক্ষরের ক্রম,তমসাগান ও ক্ষুধা নিবৃত্তি,প্রাচীন মিথে
দীর্ঘকায় পুরুষের অনায়াসলব্ধ জীবন,এপারে বারুদবাগান,ব্যক্তিগত প্রেত,
আরুঢ় প্রতীচী এবং গোয়েন্দার সার্বক্ষনিক নজরদারী,বিদ্যুতের তার,বেকারত্ব
মাঝে মাঝে অন্ধকারের ভেতর থেকে স্বপ্নচারিতার যে গান ঝলে ওঠে-মহাশূন্যে
মিলিয়ে যাবার আগে অফুরান এ পৃথিবী তার কিছু ছটা ধরে রাখে ফুল ভাঙা ডালে

ভয় অবিশ্বাস মনস্তাপ

শোকাতুর আচ্ছন্ন বিলাপে তোমাদের সুগত চোখের জল সোনা হয়ে ওঠে
মূর্খ অভিমানে হলুদ শরীর ফেটে পাথরপ্রকীর্ণ দুঃখ আর
ঝর্ণার সতেজ ঠোঁটে বোধনের ধ্বনি
একসঙ্গে কেঁপে ওঠে পূবমুখো পাহাড়ের সারি

বনবাসী বাতাস শুকনো পাতা উড়িয়ে শীতের রাতে স্থির ঘাসপাথরের বুকে
কিশোরবেলার একাকিনী রঙিন দীঘীর পদ্মপাতা
কোথায় পুরোনো দিন
শালপাতায় মোড়ানো সাঁওতাল রমণীর শরীরে জটাহুটের ভস্মলেখা
পাপ ছূঁয়ে যায় চরাচর

পূণর্বার ফিরে আসে ভয় অবিশ্বাস মনস্তাপ

বুধবার, ৫ মার্চ, ২০১৪

আদমের ভ্রুণ

দুপুরের প্রান্তদেশে আদুল শরীর ভেঙে ভেঙে পড়ছে ভ্রুকুটি,প্রতিবাদ

গতরাতে খুলে ফেলা যুবতীটির প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অরোরাবিভা
বিভ্রান্তিজনক ধাতু,নিঃশ্বাসে গৃহীত শুক্র

জৈবফুল উড়ছে বাতাসে
শান্ত গৃহসারি,পেছনে পুকুর,স্নান আর কলহাস্যে
ভরে আছে সমস্ত মুকুর

দু'হাতে সবুজ রেখা,শরীরের যত কাটাছেঁড়া নিয়ে
শুয়ে ছিল মাঠে,ক্ষেতের কিনারে
ঘাসের শিয়রে বৃষ্টিজলে মিশে গেছে ছায়াপথে
আদমের ভ্রুণ

প্রতিশ্রুত সোপান

শরৎকালের রোদ্দুরে মূক পাতাদের সংস্কারহীন অনির্ভরতা
দ্যুতিপ্রাণতায় বাজছে সাফল্য-প্রতিশ্রুত সোপানের
ক্লান্ত সমুদ্যত মুখচ্ছবি,ইচ্ছেগুলো বৃত্তের ভেতরে
উৎসারিত কবিতা ও গান---ছন্দের ভেতরে এত অন্ধকার

শ্বেত পাথরের বধিরতা ঘিরে রাখে মুখের ফাটল
মৃত ডানা,প্রকাশিত জবা---মিলনের রীতি জানা আছে,উদ্বায়ী প্রেমের
 মিলনী সংরাগে অস্বীকৃত তন্ময়তা
প্রতিটি বস্তুর অবস্থিতিবিন্দু,কেন্দ্রাভিমুখী নির্মাণ

প্রভাতী সঙ্গীতে প্রাত্যহিক বেঁচে ওঠা
পাতা ও ফুলের ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি
অশ্রুজলরেখা রাতের প্রহরে নিঃস্ব কানাকানি
এবং ফিরে তাকানোর নীল আলো

সুগত দু'চোখে রৌদ্র এনেছিল আর
ভালোবেসে খুলে দিয়েছিল বন্য চুল
স্পর্ধিত দুপুরবেলা সমর্পনের নিভৃতে
হার্দ্য উচ্চারণে গাঢ় অভ্যর্থনা,বিনত সংঘাতে বিকশিত নিস্পৃহ বিষাদ

বিস্মরণের লালচে মৃত্যু

শহরের এক গলি থেকে আরেক গলির মোড়ে অস্বচ্ছ গোধূলি ছায়া মেলে আছে।
আসন্নসনভব নির্জনতা,আতপ্ত নিবিড় সঞ্চারিত রক্ত,বিমূর্ত বিস্ময়ে প্রবাহিত
মন্থর সময়।নিমগ্ন জানালা বন্ধ করে রেখেছ?ঘরের মধ্যে অরব আলোর রেখা।
সংহত দেয়াল দ্যুতিহীন,অসম্পূর্ণ রঙের বিশ্লিষ্ট সিঁড়ির তলায়,অন্ধকার কোণে।
নিঃস্বন রাতের পথে কোন প্রতিবাদ নেই।আমি ক্লান্ত হেঁটে আসি।করতলে ম্লান ছবি
মুখের প্রচ্ছদে বাদামী হাতের ছাপ।সম্পুর্ণ ছবিটা স্পষ্ট মনে আছে শুধু রেখাগুলো
নিস্পৃহ বিষাদে উপলব্ধ যন্ত্রণায় বিচিত্রিত শূণ্যতায় সমর্পিত,সমন্বয়ী ব্রতে।

আমি শূণ্যের জাতক।অসামান্য বাসন্তী রঙের শূণ্য বিস্তীর্ণ আলোকবর্ণ চরাচরে
পায়ে পায়ে জড়িয়ে চলছে।বাড়ি থেকে বের হলেই ফেরার পথে শূণ্যতা আঁধার করে
পথ ঢেকে রাখে।কত দীর্ঘ দিন ধরে থেমে থাকা এ শূণ্যতা আমার কপাল আলো করে
পরিয়েছে সোনালী চন্দন-যতদূর তার আলো,ততদূর প্রস্তুত উৎসর্জনের পটভূমি।
তামসী বিস্ময় আর নিবিড় একাগ্রতায় ফুঁসে ওঠে বিস্মরণের লালচে মৃত্যু।

মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০১৪

অন্ধকারের রেখা

জড়মৃত্তিকার মুখ খুলে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে মমতাময়ী পৃথিবী
শিলার ভেতরে জল,জলের তলায় রত্নশরী শব
দিন ও রাতের মাঝখানে নিথর শ্মশাণ ভূমি শুয়ে আছে
চিতার আগুন নিভে গেছে,কাঠ নেই,----

নীল মুর্ছা,সাদা আত্মা---নিঃশেষ তলিয়ে যায়
জলপতঙ্গের ডানা ধরে রাখে মরা কাঠ
যদি ভেসে যায় সমস্ত ঋতুর দিকে
যে কোরক ঢেকে রেখেছে পথের চিহ্ন
ঘনদেশ,হলুদ পাতার স্তুপে,লতার নিঃশ্বাসে

ময়ূরপালক দিন ঝরে যায়
বুকের ভেতর উঠে আসে ছদ্মনাম,মৃতশক্তি
কালো ঈগল,অশান্ত রাত
প্রতিবিম্বিত অন্ধকারের রেখা কেঁপে

শরীরের সব কুষ্ঠ,রক্তপুঁজ ফেটে যাক দিনান্তের ঐ জনসমাগমের দিকে

পরাবিদ্যক কবিতা

আমি শুদ্ধ হতে চাই
আমাকে আগুন দাও
চিতার আগুনে ঝলসাবে এ শরীর
দিনানুদিনের পাপ----সেও কি ঝলসে যাবে

মধ্যজলে চোখ জ্বলে ওঠে
সাজানো সংসার,গৃহহীন চাঁদ,শোকাভাসিত প্রান্তিকে
ঘুরে ঘুরে যাচ্ছে সূর্যশোক
ভুলে গেছি সান্ধ্যগান,ছন্দ,প্রতীক,উপমা এবং চিত্রকল্প

অবিশ্বাসী দুই চোখে অতীত সমৃদ্ধি,আকিঞ্চন অন্ধকার
কবিতাশ্রিত জীবন ফিরে আসে ঝর্ণা,বনাঞ্চল ও পাহাড় পার হয়ে

হলুদ সোনার পাত

অন্তহীন রাত এবং দিনের বিভাগে আজ স্পষ্টতঃ সন্দেহ

পাপ থেকে পাপের স্খালনে ভেসে আছি আসমুদ্র জলে
সূর্যশোকে গলে গলে কলুষমাখানো দুই হাত তুলেছে বিপুল জলস্তম্ভ

মানবজন্মের নামে যত আবর্জনা জমে আছে
পচাগলা হাতে জোনাক পোকার লাশ বের করে আনি
অন্ধকার বাঁশবন,স্রোতঃজ্যোতি,---প্রেতকাজ ফেলে গেছে

নির্জন শশ্মাণ ভূমি আমার হৃৎপিন্ড মুড়ে দেয় হলুদ সোনার পাতে

সোমবার, ৩ মার্চ, ২০১৪

উদাসীন মানচিত্র

আমাদের সুদূরতম উৎসব শেষ হয়ে গেলে নিরভিমান সময়ে
উঠে এসেছিলাম,ডাঙায়।অনপেক্ষ জল অবধারিত নিয়তি
মিশ্রণের অবিমিশ্র রীতি ভেঙে ভেঙে বালির গভীর তলে
নিমগ্ন সংহত প্রার্থনায় সনাতন জল
শিখরে পাষাণ বেঁধে স্বেদাক্ত গহ্বর---
তার কিছু চিহ্ন,রক্তপাত দুই পায়ে।

দগ্ধীভূত ঘাস ও উদ্ভিদ,ক্রমাবনতির অক্ষরে ছায়ার টান।
প্রতিসাম্যতার বসন্ত আসবে কোন পথে?
বালুঝড়ে ওড়ে দ্বরব্যঞ্জন,বিষাদছায়া ঢেকে রেখেছে ছদ্মনাম
পরান্মুখ কবিতাশ্রয়ী জীবন,লৌকিকতা,সন্দেহতাড়িত অবিশ্বাস।
দাউ দাউ জ্বলে যাচ্ছে ফুলভর্তি জবাগাছ
মাতাল স্বামীর জন্যে জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে থাকে যে রমণী
তার স্বপ্ন--পায়ে শেকড়,মাকড়সার জাল জমে ওঠে।

মধ্যযুগ শেষ হয়ে গেছে,আধুনিকতা ধ্বংসের পথে
উত্তরাধুনিকতার এখন শৈশবকাল।
দু'হাতে খামচে ইতিহাস গড়িয়ে গড়িয়ে

উদাসীন মানচিত্র---এর পরে যাদের আসার কথা
ন্যুনতম ঘাসবিন্দুটুকু জমিয়ে রেখেছ?


অনন্ত ঘূর্ণিপাক

ভুলে গেছ শিয়ালমুতি গাছের ঘ্রাণ
কুটুমপাখি,শুকানো কুঁচফল

সবুজ পাতায় ভরে ওঠে শালগাছ
যতদিন না বিবর্ণ ধরে আছি পাতার মর্মর
মেঘাতুর পাহাড়চূড়ায় একদিন স্পর্ধিত দু'হাতে
তোমাকে ছুঁয়েছিলাম

শহরে উনুন জ্বলে,ধোঁয়াহীন
প্রতিবেশীদের নিন্দা গায়ে মেখে
ছেলেবেলায় কাশবনের পাশে কত কেঁদেছিলে
মনে পড়ে

আজ চোখের ভেতর কুঁড়ি মেলা পদ্ম
হাতে স্নেহময় উল
ক্রুশের পেরেক খুলে যীশুকে নামিয়ে পথে
অপর অনন্ত ঘূর্ণিপাক

যীশু,অসহায়  তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে