Powered By Blogger

বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০১৪

ধূপের মতোন উড়ে গেছে প্রতিশ্রুত প্রেম-৫

৪১. চারিদিকে শুধু বিপরীত জল।এমন প্রপাত-ঝরে পড়ে রুপালী আকাশ।ভেঙে দিয়ে সাজানো জীবন চিবুকে পাষাণ জেগে ওঠে,---রাতের রাক্ষুসী অন্ধকারে একে একে খুলে যায় গ্রহ-নক্ষত্রের গিঁট,ভেসে আসে মাতালের অট্টহাসি।ভেবেছিলাম কবেই মুছে গেছে সব। অর্থহীনতার ভেতর চৈতন্য,নেশা,কস্তুরী,অকাল বৈধব্যের শ্বেত পাখি অনুসন্ধিৎসায় মেলে ধরে তার দূরহ শিল্পকর্মের ডানা।জলের সীমান্ত ঘেঁষে চলা সারিবদ্ধ নৌকাগুলো একে একে থেমে যায় তোমার সংকেতময় চোখে।তোমার রক্তিম নখে খেলা করে ট্রাফিকের লাল, হলুদ,সবুজ আলো।বাস্তবতাবর্জিত চরিত্রহীন মুখজুড়ে আতসবাজির স্ফুলিঙ্গে বিনষ্ট বসন্তের স্তব্ধ ছায়া।নিমগ্ন প্রেম,বিরহের রক্তক্ষরণের পাশাপাশি বহু অবিশ্বাসে শরীরের ভেতর যে গান বেজে ওঠে,অপ্রস্তুত স্মৃতি,---গীতপঞ্চাশিকার এ-রাতে সমস্ত ব্যর্থতা ধূয়ে নেবে আদ্যাপান্ত।স্তুপের সমস্ত দিন ফেলে নামগানে ভেসে চলেছি।কে কাকে গীতময় সৃষ্ট জগতে আঁকড়ে ধরে এক বিদায় বেলার থেকে আর এক বিদায়ের মাঝখানে সরলরৈখিক পথ---সত্য ও মিথ্যার যমজজন্মের পূর্বাপর গানে ঐ পথের শেষে বুড়ো বটগাছ অনেক দেখেছেঃস্বতঃস্ফুর্ত ও দ্বিধাজড়িত পায়ে ঘর জ্বালিয়ে যাওয়া নারী,ব্যর্থ প্রণয়ের ইতিহাস, বিচ্ছেদ,মিলন এবং সন্তত জীবন। আমরা এইভাবেই প্রতিদিন বাঁচি এবং মরে যাই।নীরবতার চৈত্য ও দেহাতীত কূটভাবনার প্রাকার সন্ধ্যায় নিঃঝুম নির্বাসনের নগ্নতায় তোমার শরীরে বিবিধ বিম্ব-প্রতিবিম্বের উন্মাদনা,ভৌগলিক রেখা ঘিরে আদিম উল্লাস।দিগন্তের এইসব দখলদারির মাংস খুবলে নেয়া কাক ও শকুন---ডালিম গাছের ডালে ডানা ছড়িয়ে বসে আছে,নীচে জলকাদার ওপর লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ। ৪২. তোমার অস্তিত্ব ঢেকে আছে অনাশ্রয় আর অবক্ষয়ে,---ফিরে আসবে?শেষরাতের সান্দ্র প্রহরে যে ঘর ফেলে এসেছো-সে ঘর চিরতরে পরিলুপ্ত।অবধারিতের এমন সময়ে পরিপ্রশ্ন ওঠে?প্রশ্নবানে জর্জরিত করে দেখো নিজেকে-সৈকতে তার ইতিবৃত্ত লেখাআছে।তোমাকে যে নামে ডেকেছিলাম-সে নামও বর্ণরীতি,ধ্বনিজ আবেশে পালটে গেছে কতো অবিশ্বাস্য যন্ত্রণায়।বিচ্ছেদের প্রান্ত থেকে ভয়াবহ সুষুপ্তির মাঝামাঝি সরলরেখার পথে ভাঙা রাতপাখা হাতে সময় পারাপারের যাত্রী---মোষ ও শুকরবাহী;সুখের ভেতরে সিঁড়ি আছে আরও ঊর্ধ্বে উঠে যাবার?রাস্তার বাতিগুলো তেমনি জ্বলছে।সেবারই প্রথম এ-পথে এসেছিলাম।নিখোঁজ যাত্রীদের তালিকার গন্ধ শুঁকে শুঁকে,পদচিহ্নে নাক গুঁজে অভিবাসী অসুরেরাখুঁজছে আমার নাম।আমি-তো নিখোঁজ নই,স্বেচ্ছা-নির্বাসিত কবিতার কাছাকাছি সরলতা খুঁটে নিই।তুমি তার কিছু ভাঙতে চেয়েছিলে?অকূল জোনাকীময় এই রাতে অন্য গ্রামের ডাকাত একাকার করে দেয় সমস্ত দিন ও রাত।তাদের পায়ের চাপে কেঁপে ওঠে জনপদ,পাথুরে নদী ও আমার নিয়তি।কোনো দুঃখ নেই, ভার জমে আছে শুধু।প্রতিবিম্ব নিয়ে যতদূর গিয়েছি-সুন্দর এসে মিশে থেকেছে প্রতিভাকণা এবং জীবিকার সীমান্ত প্রদেশে।শরীরের শিরা-উপশিরা ছিঁড়ে যখনই হাতে তুলে নিয়েছি হৃৎপিন্ড,---উদবৃত্ত কিছু নেই,পথের বিলাসে শূন্য-বাজনা বাজে না।প্রণতি ও উত্থানের মাঝামাঝি অদৃশ্য সুতোর জাল।অমন প্রাকৃত জালে আটকে রয়েছে অতীতকালের প্রেম,বেদনা ও অবসাদ। মুছে যাবার সাহস নেই-ফিরে পেতে দাঁড়িয়ে রয়েছি এই বাঁকানো সাপের পথে।জলকষ্টে ব্রতধারণের কথা ভুলে গেছি,ভুলে গেছি আমার সমস্ত দিন,রাত এবং সজীব আক্রোশভরা তন্বী শরীর।মুখর ভাঁজে একদিন আমাদেরও রাত্রির ভেতরে রাত্রি এসে মিশে যেত আর অন্ধকারের ভেতর থেকে গাঢ় অন্ধকার এসে ঢেকে দিত শিৎকার ও ললাটের তিলক,বিমূর্ত অভিমান।মাধবী লতার স্রোতে সেইসব আজ ভাসমান গল্প যেমন মৃত্যুর পর মৃত্যুভয় শুয়ে থাকে সমস্ত উঠোন,ঘরে।তোমার দু’চোখ ভরে যায় কালোপাখির ছায়ায়। ছন্দের ভেতরে,পঙতির ভেতরে তুমি বারবার নেমে আসো,আমাদের এতো দ্বিধা কেনো? ৪৩. সন্দেহমুখীন দুপুরের পথ এসে আমাদের সম্পন্ন উঠোনে মিশে গেছে আর আমাদের স্বপ্নেরা নিমগ্ন বালুকা বেলার।সংবাহন সূর্য নির্বিকার উত্তাপ ছড়িয়ে দিচ্ছে।আজকের গল্পের শুরুটা এভাবেই ক্রমশঃ উচ্চতা এবং শিখর ছাড়িয়ে আরও দূরে পর্বতের মালভূমি কিংবা পাহাড়ের সানুদেশে ইত;স্তত রডোডেনড্রন গুচ্ছে,গর্ভবতী পাথুরে শিকড়ে,বাঁশ ও চন্দনপাতা-ম্লান করতলের ভেতর প্রত্যকের অচেনা শরীর অন্য শত শরীরে মিশেছে।চিরকাল তোমার বাহুর অভিলাষী-বুক জুড়ে শস্যহীন ঘূর্ণিপাত, পাঁজরের স্ফুলিঙ্গে ঝরছে মটরদানার মতো আগুনের দাগ।শ্মশানের হিরণ্ময় চিতা কতক্ষণ জ্বলে?আধ প্রহর?শাশ্বত আগুনের উপাসনামন্ত্র,বেদবেদাঙ্গবিৎ সত্যের ধর্মে অভিশাপ জেগে ওঠে। অরাজকতা ও ন্যায়পরায়ণতার ভেতর তোমার অনাদর হয়েছিল?অদ্ভূত রঙিন দিনগুলো কত চিহ্ন ধরে রেখেছে?বুঝি নি ধর্ম।সমূহ ক্ষতির পূর্বাপর মুহূর্তে আনুপাতিক ছায়া.....অতঃপর অপদেবতার ঘোড়ার খুরের শব্দে হাসতে হাসতে বলেছিলেঃ’এ-এমন কিছু নয়।‘প্রতিশ্রুতিশীল যে নক্ষত্র প্রতিদিন মাথার ওপর আলো দেয় –সেই জ্বালিয়ে দিয়েছে মাথা,বুক নাভী আর,আর অজস্র ইস্পাতি গুঁড়া ঢেকে ফেলছে চরাঞ্চলের যত বালি। ৪৪. সম্পন্ন শব্দের অন্তরালে দীর্ঘশ্বাস-অপরিণত শীতের পাখিগুলো উড়ে আসে আর স্বপ্নের ভেতর দেবদারু গাছ থেকে খসে পড়ে অজস্র হলুদ পাতা।আমি ঐ হলুদ পাতা ছুঁয়ে দেখেছি তোমার পরিণতির শূণ্যতা-বৃত্তময় চাঁদমারি গর্ভগর্ত।অন্য ধর্ম,বস্তুত তোমার চোখে জন্মান্তরের প্রস্তুতি।জন্ম ও মৃত্যুর সম্ভাবনাময় দূয়ার ও সহমরণের চিতা থেকে সরাসরি আমাদের সাংসারিক উঠোনে উড়ে আসে বাঁশপাতা।পরান্নলোভী সূর্য,কালো নক্ষত্র ও বালুকণা রোগজীবাণুর মতো শরীরে জড়িয়ে মুড়ে নাও মৃত শিশু। শ্মশানতলীর আঘাটায় সরাসরি ঢেউ এসে কেঁপে ওঠে আগুনের সর্বস্বতা। তুমি কোন সর্বনাশা খেলায় মেতেছো? নৈশকালীন আগুন জানে এবারের শীতের তীব্রতা।অনপনেয় হেমন্তে আমিও বুঝে নিয়েছি অশ্রুর নীল নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্বের মহাবিষুবীয় রেখা আমার চিবুক ছুঁয়ে গেছে।পায়ের তলায় লুন্ঠিত,কাশ্মিরী শাল-তার ছেঁড়া,ম্লান সুতো শরীরে জড়িয়ে আছে পাকে পাকে এবং অতিরিক্ত মুনাফায় নেশাতুর চোখ মেলে দেখে নেই তোমার উলঙ্গ দেহে আগুন,উল্কির ছাপে আমার আত্মার চেয়ে মহার্ঘ্য রেশম এবং প্রত্যাখ্যানের চাতুর্যময় ভঙ্গি বলে দেয় কূয়াশার ঐ পারে সূর্যাস্ত অতঃপর বিদায়ের ঘন্টাধ্বনি.....। আধোলিন প্রতিটি বসন্তে আমাদের নাম লেখা ছিল।নিভৃত বাতাসে সেইসব সুন্দর দিনগুলোর স্বচ্ছ জল অন্তিম গোধূলি নিয়ে বুকের ভেতর আলো জ্বালে।জোনাকী পোকার হাজার ডানার শব্দে সেইসব আজ চাপা পড়ে আছে। তুমি কোন দুঃখে ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছ? ঘরপোড়া রমণী,নিষ্পাপ মৃতদেহে দীর্ঘ কালিগোলা ছাপ,অকাম কামনা,---এক একদিন এই ঘুমন্ত শরীর অনুপম মেঘের মতোন উড়ে যায়;যারা ফিরে আসতে চেয়েছে-বছরের ক্লান্ত শেষদিকে অগণ্য পালক পড়েছিল-হলুদ পাতার মতো এতো শীর্ণ পথ পার হয়ে কেউ-ই আসে নি।অদৃশ্য বিদ্যুতে পুড়ে গিয়েছিল যে ডানা-সৌন্দর্য্য অবলুপ্ত সমস্ত ভুলতে হাতে তুলে নিই মেঠোফল।সুন্দর নিয়তিগুলো জ্বলে একা একা বজ্রাহত,দীর্ঘ ঝড়জলে। ধাতুর গলানো চাঁদ থেকে তরল ফোটায় শালবনে ঝরে পড়ে অপর্যাপ্ত টানে লেখা 'সতর্কলিখন।' ৪৫. পশুচলাচলের সুড়ঙ্গ পথে বিষাক্ত আত্মার অশালীন বীজানুবিস্তার,ঘূর্ণায়িত দুই চোখে জীবনের অর্থহীনতা ও অনিষিক্ত ভ্রূণে শকুনের ডানা-মুখে খর মরভূমি নিয়ে চিরায়ত সকালের প্রতি পলে বিষাদ;চেতনাহীন শূন্যের ভেতর লোকায়ত অমর্ত্য ফুলের ঘ্রাণ মুছে বিপরীত প্রতিদ্বন্দ্বী বোধে কপালের একপাশ থেকে আর এক পাশে উড়ে যায় সারাৎসার বিচ্ছেদের নীল।নির্নিমেষ করুণ অঙ্গারে বুক,নাভী,ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হতে হতে সমস্ত শরীর মর্ম ছিঁড়ে আত্মরতিহীন যৌন মখমলের গালিচা পার হয়ে নির্মল বীজের থেকে ক্রমাগত পূর্ণরুপান্তরিত মহিলা হয়ে উঠছো?সালের বনে নির্বেদ শূন্যতা ঝরে পড়ে,ঝরে পড়ে ত্যক্ত বিপূলতা-যোনির শিখরে এতো রক্তপাত?সায়াহ্নকাল অবধি উচ্চকিত নিনাদ-কেননা জন্মোৎসব জাগতিক প্রণালীর ভাষা।ঔদাসীন্যহীন মৃত্যুতে মঙ্গল কিংবা অমঙ্গল কোনোটাই নেই। শোকের ভাবানুষঙ্গে মেঘ তার শ্রাবণসমেত ঝড় এবং অবিরল বৃষ্টি ধারাসহ গড়িয়ে পড়ছে।প্রাপ্যের তালিকা থেকে কিছু বাদ পড়ে গেছে?ত্বক পরিচর্যাকারী ক্ষার,নৌ-রথ,সৈকত,সমুদ্রের সান্দ্র স্বর?ঢেউ আর বায়ুর বিহারে অন্ধকার রাতের রাশির ছকে সূর্যোদয়ের স্বভাব ছটা দেখেছিলাম।প্রতিপদের চাঁদ বনের ঠিকানা মিলিয়ে নিয়েছে।ভূ-লুন্ঠিত আলোর ভূমিকা ছিল অথচ উন্মাদ কলাকার মঞ্চ জুড়ে অন্ধকারের আবহ্ন চেয়েছিল।তা-কি ঠিক?তা-কি কুশীলবের প্রত্যাশা?ধুন্দুমার আলো ও ছায়ায়,ভাষা ও বল্কলে,ব্যথাবেদনার অস্তাচলে কাকে খুঁজে পেয়েছিলে?আজ,বায়ুভূক গ্রন্থগুলিই আমার কাছে ছুটে আসে পোষা বিড়ালীর মতো।বাদামী শরীর ভরে দেয় তার সাদা রোমে।অক্ষর ও কবিতায় ফুটে ওঠে রঙধনু,আশ্চর্য,উদ্ভাসিত সহাস্য শিশুর কন্ঠ,বাবার অসুখ আর মায়ের শিন্নিমানতে ক্ষেতজাঙাল,গ্রামের আলপথ,পিতৃ-পুরুষের কবরখানায় মুক্তির বাসনা।ভয়াবহতায় প্রতিটি স্বপ্নের রেখা কেটে গেলে ভূ-কম্পিত প্রাকৃতিক নারী-জেনে নাও,আমি পরান্মুখ নই।প্রাচীর-ফটকে যারা প্রবেশাধিকার পায় নি তাদের একজন আমি এবং আমার অস্তিত্ব গোধূলিবেলার আলোর মতোন ক্ষণস্থায়ী নয়। ৪৬. যে পাথরে বসে মিলনের সঙ্গীট গেয়েছো,---পাঁজরকাঁপানো বিরহের সঙ্গীত তার চে' সুমধুর ছিল?এখন শহর থেকে শহরের স্মৃতির মিনার সব ব্যথা-বেদনা মোচন করে খুলে দেয় অসম্ভবের কুলায় শ্বাপদ সুন্দর শ্যামলতা ও বুকের ধারাস্নাত জল,রক্ত।ক্লানি ছিল না কখনও।গোধূলির রঙের অন্তিম থেকে অন্তঃসারহীম আলো খুলে ফেলেছিল সমস্ত শরীর,অস্তীতির ঘট ভেঙে প্রতিধ্বনিবিহীন শূন্যতা মুছে লেঁপে ওঠে দু'টি শরীরের একীভূত প্রতিবিম্ব।জলসন্ধি কিংবা প্রতিফলিত হ্রদের জলে ছায়া ছিল না-গরিমাচূড়া,আভিজাত্যে জ্বলজ্বল করছিল বুজে-আসা কূয়া আর ভস্মময় পার্ক।দীর্ঘ চরাচর,---আরও দীর্ঘতর যবনিকার উত্থানে আড়মোড়া ভাঙে সিঁদুরমাখা পাথরখন্ড।পূর্বাপর স্মৃতিতে আমার চোখে জেগে ওঠে শুকতারা,হিমতারাসকল,আগুনপোড়া খড় এবং শ্মশানঘাটের কালশিটে পথ।চিতার রুপালী ছাইয়ের ভেতর কিছু কী গোপনচারিতা ছিল?আমাদের বস্তুবাচক বয়স কত হল---ছেঁড়া কাগজসমেত এইসব ভাবি আর আমার উঠোনময় ত্যক্ত সাপের খোলস হেঁটে যায় সাপের সন্ধানে।বলা হয় নি-নিথর এসে দাঁড়ানো মিথুনমুর্তি ঘোর কালঘুমে অবিচল ঋণী থেকে যায় ঘুমের ভেতর।নির্বাসিত ভাষার স্বেচ্ছাচারিতা কিংবা তার জলীয় ফেনায় সহজ আশ্রয় পেতে দু'হাতের করপুট পেতে...কে কাকে আশ্রয় দেবে দুর্যোগের এই কালে?অতর্কিত গাছের শুকনো ডালপালা ছুঁয়ে তাদের ক্ষতের নীচে শস্যশরীর-সমস্ত শস্য ঝরে পড়ে চৈতালী বাতাসে। অতঃপর রমণী,হাজার আলোকবর্ষ নিঃশ্বাসে পাকা শস্যের বর্ণের মতো তোমার শরীরে স্বর্ণাভ-হলুদ ছটা-এই রাত্রি,আতুর আলোয় জন্মদাগ স্পর্শে কেবলই মনে হয়, 'ভুল এ-জন্মে প্রতিকারবিহীন দ্রুত ক্ষয়ে যাক।' ৪৭. হাতের ছাপের মূর্ত এই দেয়াললিপিকা;যার প্রতি ভাঁজে ভাঁজে মতিচ্ছন্ন মুখ ফুটে আছে,শোকাচ্ছন্ন হৃদয় ও দ্রাবিড় আঙুল-কোন কার্যপ্রণালীতে এটা শনাক্তযোগ্য?ঈশ্বর অবরোহী?সুর আর রক্ত?সূর্যপাত?বিসর্জন?অকাল্বোধন? গানের গভীর গলা থেকে উঠে আসে তোমার রক্তিম গ্রীবা।বিদায় বেলার শেষ রাগিণীতে তরল আগুন ছুঁয়ে দিয়েছিল আমিষরঙা শরীর।বিষের বোঁটায় সর্পগন্ধা-ছেয়ে আছে তোমার উঠোন। নৈঃশব্দ্যের চলচ্ছায়া,অবিশ্বাস ও অপরিণিত ভাষ্য এবং টীকাসমেত সরল মিথ্যে নিয়ে পৃথিবীর প্রান্তশায়ী জ্বলন্ত রমণী,সমস্ত বোধ ও চেতনার উর্ধ্বমুখে গতানুগতিক প্রথার বাইরে থেকে জেগে ওঠা সেই নীল অঘোর-বঞ্চণা অনভ্যস্ত বিক পেতে ধরে রাখি।আগুনে পোড়ে না।মোছে না জোয়ার জলে।প্রতি রোমকুপে ঘন তার সজীব সঞ্চারে।প্রতীকী অথচ আন্তরিক পরিত্রাণহীন রুপটান স্মৃতি-কোনও বিসর্জন নেই শুধু বিষাদের আবহে আকাশ ছেয়ে আছে। চুম্বনহীণ ঐ ঠোঁটে বিষধুতুরার নীল।কুহকিনী অন্ধকারে শুধু বেড়ে ওঠে নখ ও দাঁতের দাগ।তোমার বাহুর সুপ্ত ভাঁজে কতো নিথর শরীরে ভরে আছে।রোগা,ভীতু আলোতে ভুতুড়ে সাড়ে তিন হাত ছায়া,এতো বেশী অন্ধ হয়ে গেছো?কে তোমাকে ছোঁবে,আজ?পারাপারের সমস্ত নৌকা পুড়িয়ে এসেছো?সবরকমের অন্ধকার আজ এতো প্রিয় হল?ভেবেছো সমস্ত অপচ্ছায়া এই বিশালাক্ষী অন্ধকার গিলে নেবে?নিরন্তর প্রণয়ের মধ্যে প্রেতিনীর নাচ নেচে যাচ্ছো-মুহূর্তের বর্ষণে অতীতকাতরতা অবাঞ্চিত করে। তোমার গানের শব্দ লক্ষ্য করে যারা ছুটেছিল দিগ্বিদিক অজ্ঞানের ঘোরে-তাদের কঙ্কাল ইতঃস্তত পড়ে আছে,পথপ্রান্তে;তারা নিশীথস্নানের দ্বি-পদী রাশিমালার সুত্র বুঝতে পারে নি কিন্তু তুমি ঠিকই জানতে দেহমিলনের আবর্তিত সূত্র। সম-সাময়িক নিষ্ফলতার ভেতর সারারাত জেগে ভাঙা আকাশের গায়ে সময়ের অথর্ব তুলিতে পূর্ব্ভাদ্রপদ নক্ষত্র,রেবতী,কৃত্তিকানক্ষত্র,সপ্তর্ষিমন্ডল আঁলি এবং মুছে ফেলি রোহিণীনক্ষত্র,পুষ্যা ও অনুরাধানক্ষত্র।মুখের রেখার লেগে থাকে সিংহরাশি,কালপুরুষের ছায়া এবং নিঃশব্দ সময় কমে দূরত্বের পরিমাপ কেবল আকাশ ছুঁয়ে যায়। তোমার দু'চোখে সাঙ্কেতিক গুহাচিত্ররেখা,অপরিণত ভ্রূণের প্রসবের জটিলতা-প্রেম ও যৌনতা ভেঙে বিবর্তনের গুহায় উপবৃত্তাকার ব্রক্ষান্ডের ত্বকে মরণকালের নিস্তব্ধতা। গতি অবিচ্ছেদ্য তরল অগ্নির রিরংসায় কূটিল স্তনের বৃন্ত,উরুস্তম্ভ,জন্মদাগ কখন গ্রীবার তাপে ফেটে ওঠে-অপদেবতা মুক্তি ও ধর্মে,নিষেধের প্রবারণায় কখন ছুঁড়ে ফেলেছিল সতীচ্ছদ? তুমি গৌরী,কিশোরীকালের মন্ত্রে একদিন আমাকে আহ্বান করেছিলে। ৪৮. ব্যবহৃত পুকুরের জটিল শিয়রে হেলে পড়া তালগাছের ছায়ায় উড়ে আসা কাকের অক্ষর,চৈত্রদুপুরের ক্রোধ এবং আলস্যের অন্তর্দ্বন্দ্বে সমস্ত সোনালী বিভ্রমের চরে ভাষা ও বিচ্ছেদে ঐকান্তিক শরীরের তৃপ্তি ও সম্ভোজ্ঞ শেষে পরিত্যক্ত বাতিঘরের মতোন আমাকে নিঃশব্দে ছেড়ে উলঙ্গ বন্দরে নেমে যাও।দ্রুতগামী বুদ্বুদরেখা ও মুখোমুখি ঢেউ-রক্তে ভেজা,জ্বলন্ত সূর্যের কালো ছায়া-স্নায়ু ছেঁড়ে,শরীর বিদীর্ণ করে এবং ফিরে পাই রক্তের পরিশোধিত মদ।এই নাও,ভাঙা গ্লাস।যথেচ্ছ পরিবেশনে ঝাঁপ ফেলা অন্ধকারের দোকানে এতো মানুষের ভীড়?টেবিলে টেবিলে টুইস্টের টুংটাং,নারীর সঞ্চার,পুরুষের গলাবদ্ধ ফাঁসে সন্দেহের গান,গণিকার নিষ্প্রদীপ করতলে বাহুহীন ধরে গুপ্ত বিদ্যা,---চোরাডাক পৌঁছে যাক আত্মার গভীরে। নিশকৃতির চেয়ে দুর্দমনীয় আকাঙ্খা,সাবলীল শূন্যতা এমন করে ছড়িয়ে রয়েছে ক্ষরণের দিকে-এই গল্প,এই চক্রপরিক্রমায় সমস্ত ঋণ একদিন শোধ হয়ে যাবে?রাতের বিশ্বাসে যে গাছের নীচে পাশাপাশি শুয়ে নিঃশ্বাস শুঁকেছিলাম-তার ডালে উড়ন্ত পাখির বাসা;বহু ঝড়জলে এখনও অটুট।ছিঁড়ে নিতে চেয়েছিল বাতাস,রৌদের তাপের প্রয়োজন ছিল,বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়েছে,অবিনাশী ঝড় উড়িয়ে নেয় নি শুধু আমাদের ঘর পুড়ে গেছে,জ্বালিয়ে দিয়েছে বিচ্ছেদের নীল শিখা।ছাই ভস্ম ভেসে গেছে অকাল বর্ষণে। শূন্য কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে।হয়ত-বা আরও কিছুকাল টিকে যাবে। ৪৯. মাংসাশী অন্ধকারের মধ্যে বিমূর্ত রুপের নারী যতো শক্ত করে বেধেঁছিলে বুকের কাঁচুলি------স্তনশীর্ষে স্পষ্টতর ধারাবাহিক শোকের অবিনাশী কীর্তিগাঁথা যৌন-নিঃশ্বাসের নীচে চাপা পড়ে যায়।রাত্রি ঘন শীত-প্রস্তুত এখানে একমুঠো ধর্ম,সিকি,আধুলি,---খুচরো পয়সার আশীর্বাদ।অনির্দেশ্য টানে সুদীর্ঘ নিষ্ফলতার পর অবচেতনার স্থির অবসাদে সূক্ষ্মতর কম্পাসকাঁটা,স্থিতিস্থাপক এবং উদাসিনী তোমার শূন্যতা-প্রেম ছিল কখনো?শীতার্ত প্রহরের ইচ্ছাকৃত অসময়ে দ্বিতীয় বেদনা সঙ্গীতের চেয়েও বাঙ্ময় কেননা প্রেম থেকে জন্ম নেয় স্থবির কন্ঠের সুর,মোহরাত্রি;যা স্বপ্নে দেখেছিঃপ্রেমের প্রকৃত করতল,চোখ এবং চুম্বনের শামুক পিছল দাগ-সোঁদাগন্ধ দুঃখ থেকে মুছে গিয়েছিলে কোন মুহূর্তে?বিচ্ছেদ কিংবা অনিবার্য আমাদের ব্যর্থ প্রেমে এতো দুর্গলিত ক্ষত?ছায়ার মতোন দীন,প্রাচীন শ্যাওলা ধরা মুখে নীল ফেনা পোড়া ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকে।নিশিরাতের প্রহরে প্রতি পলে খোঁজো স্পর্শসুখ?ব্রাক্ষ্মনিতম্বিনী,রাত নেমে আসুক পাহাড়জুড়ে,তারপর জেগে উঠুক বিরহ। অনন্ত বিরহ-বর্ণময়।সাপের চলার পথে অক্ষরহীনতা,ভুল পাঠ।নিরন্তর পাঠে জলের গভীরে নেমে জেনে আসি পোড়া এই মুখ পরস্পরাচ্যুত জলের আঘাতে কতক্ষণে নিঃশেষিত হয়? ৫০. প্রতিটি দৃশ্যের অন্তর্গত গোপন মুহূর্তে মেঘ ও সূর্যাস্তরেখা ঘিরে সরল আকাঙ্খা-আমি তোমাকে চেয়েছিলাম। শুদ্ধ চিত্রকলা,প্রতীকী ব্যঞ্জনা ও কাব্যভাষার সূক্ষ্ম শৈলী এবং আবৃত যোনীর নির্মোহের রাতগুলোতে প্রণয় অসম্ভব শ্লোক ও নির্মম কটাক্ষের জগতে বস্তুতঃ অবাঞ্জিত-ই থেকেছি,চিরদিন।নক্ষত্রখচিত রাত্রির আকাশ।একটানা দু;সহ বৈশাখে ডেকে গেছি কাকের কর্কশ স্বরে।রুক্ষ্ম তালগাছের মতোন অন্ধকার কোণে দাঁড়িয়ে থেকেছো।রাতের প্রেতেরা চেটে গেছে শরীরের ত্বক,উন্মুক্ত পেট ও নাভী,উরুদ্বয়,সোনার কাঁচুলি খুলে জোড়া রাজহাঁসের বিমূর্ত ও ঘন রুপ নৈঃশব্দের মুখোমুখি মধ্যরাতের রতিশরীরে....শুধু কিছু অভিব্যক্তি ভেসে থেকেছে বাতাসে। কোথায় গিয়েছে যৌন-অহঙ্কার? শেষ কথন গল্পের শেষের অংশে এসে মনে হল অবিচ্ছিন্ন ফুলগুলো তত ভালো ছিল না যতটা আঙুলের ফাঁক গলে গড়িয়ে পড়েছে বসন্তরজনীর অনিঃশেষিত শোকতাপ।গতানুগতিক ক্লান্ত মুখচ্ছবির কবিত্ব কিংবা আমাদের আত্মউপলব্ধিতে বিস্ময়কর জন্মের প্ল্যাটফর্মেজোড়া প্রতীক্ষার সম্মিলিত আলো,অন্য প্রান্তে গন্ধমুষিকের দল;দাঁতে ধরে আছে ঔদাস্য,পলায়নের স্থিতিস্থাপকতা-দুই বিপরীত টানে বেড়ে চলে শূন্যতা ও দীর্ঘ রেললাইনের পাতজুড়ে বিধৃত আঁভা-গার্দের চায়াচিত্র। পশ্চিমের গন্তব্যে,সূর্যস্ত।সঙ্গীদলসহ সেদিকেই হেঁটে যাচ্ছ আর আমি ভিখিরির মতো সপ্রতিভ খুঁড়িয়ে চলছি পূর্বদিকে।সূর্যোদয়ে ধূয়ে নেবো মৃত পাখির ডানায় লেগে থাকা আমার পূরাণো সব প্রেমিকার প্রিয় ডাকনাম।

শনিবার, ১৪ জুন, ২০১৪

ধূপের মতোন উড়ে গেছে প্রতিশ্রুত প্রেম-৪

৩১. মায়ান বা তক্ষশিলা কিংবা যে কোনো পূরাণো সভ্যতার মতো সমস্ত ধ্বংসের শেষে কবরখানার মাটি ফুঁড়ে আরেক সভ্যতা এসে গেলে আমরা বলেছিলাম পূণর্জাগরন।অবিকৃত আগামীর গর্ভে কিছু বিস্ফোরণ...রঙের ঝলক।এইভাবে,এইভাবেই নূতন সভ্যতার শুরু অথচ সে জ্বলনের অরোরা আভায় শরীরের জল হয়ে ওঠে অগ্নিলাভা,গলন্ত ধাতু ও মাটির ভেতরে পচে যাওয়া হাড়ের স্তুপে বোনা বীজে হৃৎপিন্ডের রক্ত ঢেলেছি দু'বেলা যদি আশরীর ধ্বংস নিয়েও মেরুদন্ডের হাড় সীজা হয়ে দাঁড়ায়।মরণাহত জিজীবিষা,---প্রেম জেগে উঠেছিল ক্ষমার ভাষায়?সভ্যতার ইতিহাসে আবহমান বিচ্ছেদ।মানুষের ঘাতকজন্মে পাপযোগাদিদোষ।কালরাত্রিদোষে অন্ধ দুই চোখে স্থিরতা।আদিমতার নগ্ন প্রতিমানে গোপনে যে দুঃসাহসে ভর করে আগুন নেভাতে গিয়েছিলে---সেই আগুনে জ্বলছ্ব ঘর,সাজানো সংসার।বৃষ্টিভেজা রথের মেলায় যাই নি।পথশ্রমের গ্রামান্তরে উত্তর দক্ষিণ পূর্ব ও পশ্চিমে পায়ে পায়ে মুক্তি,মুক্তির শৃঙ্খল। সহজাত মুক্তি এমন সহজলভ্য। ৩২. শরীরের শেষতম হাড়ে কিছু পরিমাণ ত্বক লেগে আছে।মাটির আড়ালে মাটি চাপা দিয়ে ঘাসের বীজ ও জল (হৃৎপিন্ডের সব রক্ত জমে গেছে) ঢেলে মুছে দাও স্মৃতির সমস্ত চিহ্ন।গূঢ় লৌকিকতার পরাবাস্তব টানে এর চেয়ে বেশী খুঁজেছিলে অপার সম্ভাবনার স্তর?জায়মান শ্রেয়বোধে শিল্পের অন্বয়ে এবং প্রতিফলনের মতো বেঁচে থাকার অপর আয়নায় দেখি পূবের সমুদ্রস্রোতে আধপোড়া পুরুষ ভাসছে,---মরে গেছে বোধহয়।জলস্রোতে কার মুখ দেখেছিলে?রাত্রিময় অমাবস্যা থেকে উঠে আসে শবের মিছিল।চোখে তাদের জ্বলন্ত মৃত্যুচিহ্ন।বুকের আরেকদিকে বিমূঢ়তা?এতো বিমূঢ়তা ভালো লাগে?ভালো লাগে এইসব অলস ভাসানে ভেসে চলা ঘূর্ণিটান রাত্রি?অশরীরী অন্ধকারে তোমার করতলের স্পর্শে বাঁচতে চেয়েছিলাম।চেয়েছিলাম।নীরব পলের পাশাপাশি মাথার সমান্তরালে অতীতের স্থিরচিত্র।উপ্যাখ্যানের চরিত্র প্রেম দাবী করেছিল?তাদের স্মরণে দুঃখপথ-একে একে ম্লান খসে পড়ে উল্কা পতনের মতো।আমার ঘরের জানালাবিহীন অন্ধকারে বিচিত্র বর্ণের আলোকের ছটা ফেলেছিলে?জলের রেখার দীর্ঘ পরিসরে ধূয়ে নিয়েছিলে বিশীর্ণ হাহাকারের দুঃস্বপ্নের রাত।সেই তুমি কেন যে বালিকার স্পষ্টতায় ফুলে ওঠো?চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে অবিনাশ।কেউ জানে,কেউ জানে না।আমরা তার ক্ষীণ প্রান্ত ছুঁয়ে মুখোমুখি মুখোশের হাসি দেখেছিলাম।তোমার শরীরের নগ্নতা হাতের মুঠো ভরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম কচি শালপাতায় মুড়ে।আজ সেই পাপে অহর্নিশ ধ্বংসাবশেষের শ্বাস শুনি আর ঠোঁটের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে তেতো কষ।বাঘনখ আলিঙ্গনের ভেতর লাভা শরীর জড়িয়ে নিতে নিতে গোপন সংকেতে মনে পড়ে আমরা কীভাবে সমুদ্রের উষ্ণতায় উঠ গিয়েছিলাম।ভূ-মধ্যসাগরের স্রোত হঠাৎ সৈকতে এসে রুদ্ধ হল।তবু আমার স্বপ্নেরা দুপুরের,উবর্শী রাতের,সকালের শিশিরের জলে ধরে রাখে নীল যবনিকা।এর চেয়ে দীর্ঘ যবনিকা পৃথিবীতে আছে?ক্ষুধা ও নিবৃত্তিগানে মানুষ নিজেকে দ্বি-খন্ডিত,ত্রি-খন্ডিত কিংবা চতুর্খন্ড করে ফেলছে অথচ প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে দেখেছঃপৃথিবীর প্রতিচ্ছায়া কেমন শূন্যতা মেখে আছে?শূন্যতার ভেতর এতো ঢেউ কে রেখেছে?যথেষ্ট বর্ণনা ছিল না।বৃষ্টির পথ ভেঙে আষাঢ়ের কিছু অংশ ভেঙে ফেলেছিলাম।অন্যান্য বহু পুরুষের মতো আমি চেয়েছিলাম আমার নিজস্ব উঠোনে প্রতিশ্রুতিশীল নক্ষত্রের উত্থান ও দূর সমুদ্রের জাহাজের পাটাতনে শুয়ে নীল ঝর্ণাধারার জ্যোৎস্নায় অবারিত সৌন্দর্য্যে ছুটির অবকাশ।সকলেই চেয়েছিল সহজ আশ্রয় এবং ত্রাণ।এভাবেই বেঁচে উঠি ভাঙনের সীমানা,জলের অভাবে প্রাকৃতিক কূটিল লিখনে বৈপরীত্যে জোয়ার টানের মুখে। ৩৩. দ্রুত ছিঁড়ে ফেলা রক্তমুখ ভরে ফেনা,আকাঙ্খিত অপরাধে গভীর অসুখ,---আমার মানবজন্ম সারাদিন দলাদলা জল কাটে,কী কঠিন সব জল?বৈঠার শাব্দিক অর্থে পাল্টে যায় নদীর দু’তীর,বালিচর,কাশের জঙ্গল।দাঁড়ের বিরহী টানে যে মুহূর্তে একা হয়ে যাই কাকের দুপুর,ফাঁকা জলপথে দেখা হয়ে যায় দু’য়েকটা সভ্যতার যদিও কখনও তাদের নাম জিজ্ঞেস করি নি কিন্তু সেই গুহাচিত্রের আদলে দীর্ঘ সে অতীতকালে সুগত চোখের জল মিশে গেছে নদী ও সমুদ্রে।আঁচলে সংসার ঢেকে ডুবে গেলে ঘনমুখে।জাগরনের ঐ পারে থেকে গেল আধখানা শাড়ীর আঁচল।জীবনের রেখাগুলো অনন্ত প্রবাহে কেমন অস্থির হয়ে উঠেছে?তোমার দুই হাতের মুঠোতে আষাঢ়ের জলধারা।দেখো,ভেসে গেছে কত উন্মাদ যুবকদেহ।অতর্কিতে নদী পার হয়ে যাও।থেমে যায় জলযান,যাবতীয় স্রোত শুধু নদীর পূরাণে ভেসে থাকছে তোমার নাম। ৩৪. ব্রাক্ষ্মমুহূর্তের প্রার্থনা শোন নি।প্রেত-নিঃশ্বাসে সময় জেগে উঠছে যন্ত্রণা এবং বিচ্ছেদের পূর্ববর্তী বাঁকে আর করপুট ভরে উঠে আসে মিথ্যে মানবজন্মের গান।তারপর ক্রমশঃ সংক্রান্তি,নৈবেদ্য,পূজোর মন্ত্র.....।সময় কী নৌকা?অনায়াস ভেসে যাবে সহজ জলের স্রোতে?তীরে বিচিত্র ও বিবিধ পুরুষ সমস্বরে ডাকছে।অবৈধ সম্পর্কের শেষে এতো অভিলাষ লুকিয়ে রয়েছে?দীর্ঘচুল,ইচ্ছাময় চোখে নানাবিধ আলো-অন্ধকার।ফেলে আসা ভাঙা মুখ ঝরে গেছে?অধোঃমুখে মনে পড়ে অতীতের প্রিয় মুখ?আদিম জলের মধ্যে অনেক কালের দুঃখ,কতো সমর্পণ,---জল কী হিসেব রাখে?দু’একটি নিরিবিলি দুপুর---মধ্যকপালে সূর্য আঁকা;ছায়া নেই,মেঘ নেই;আমাকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলে?ভেবে রেখেছিলে দুর্বিনীত ভাগ্যরেখায় পালটে দেবে সূর্য্যনাম?স্পর্শতিলে ধরে রেখেছো যে সীমারেখা,ঈষৎ গভীর---শরীর কাঁপিয়ে ঝড় আসে,ঠোঁটের ঈষাঙ্কোণে কালো মেঘ।শেষ আদরের পর পরিশ্রান্ত আঙুলে জড়িয়ে চেয়েছিলে নিভৃত সন্তান?কতটুকু জীবন লুকানো ছিল নগ্নবুকে?ওপরে আকাশ,দূরে কৌতুহলী নদীতে জন্মজন্মের আয়ুষ্কাল।আয়ুষ্মতী হও,নারী। আয়ুষ্কাল।আয়ুষ্মতী হও।যাকে ইচ্ছে পথ থেকে তুলে নাও।ডেকে যাও,প্রিয় কিংবা ডাকনামে আর একাকী নিষিক্ত ভ্রূণ খসে পড়ুক তোমার কালো গর্ভাধার থেকে। ৩৫. সাপ,আপেল ও নারী,---সমস্ত ধর্মগ্রন্থের পাপ মেখে বসে আছো দুই হাতে।শুনে গেছো সারাদিন অতৃপ্ত প্রেমিক পুরুষের অনন্ত পতন।বেদনার প্রাণদাহী মৃত্যুর ফুলের মধ্যে জর্জরিত যে জীবন---শুষ্ক,পতিত ও অনুর্বর;তোমার অস্বচ্ছ হাতে হাত রাখলেই টের পাইঃবজ্রকলঙ্কিত,উলঙ্গের মুখোমুখি আরেক বিবস্ত্রা নারী দেহতাপের আধিক্যে গতরাতে যা বলেছো এই ঘাসের জঙ্গল,ফুলবন,---লিখে রেখেছি কীটদংশিত ঠোঁট,বুকের নখরাঘাত।সেতুহীন নদীতে পারাপারের মাঝি রাত্রির জীবন ভরে রাখে তার দ্বি-প্রহর মুখে।রাতের ললিতমাখা দেহ প্রিয় নিঃসীমতা ভুলে ভরে দিয়েছিলে---এমন সমর্পণের চাঁদ দেখিনি কখনও।আঙুলে,নখের কোণে অনুরাগ।মেহেদীর দাগ মুছে নিয়েছিল ঢেউয়ের উচ্ছ্বাসে?জল কেটে,নৌ-যাত্রায় পশ্চিমের দিকে এগিয়ে চলেছো?তীরে অন্ধত্ব ও অপেক্ষার গান গেয়ে যাচ্ছি আমি এক বধির যুবক।দীর্ঘ ও লম্বিত ফুঁ-য়ে ফেরাতে পারবো মৃত প্রেম? যা হারিয়ে গেছে-বিশ্বাস,পারস্পরিক সমঝোতা?আলোছায়াময় রাত্রি আর ময়ূরপালক দিন?তুমি মানবী ছিলে না।নারী হিসেবে তোমার কিছু শাপ থেকে গেল।মানুষ হিসেবে কিছু অনুচ্চারিত শব্দের প্রশ্নে অমীমাংসা থেকে গেল।নেশাতুর অপব্য জীবন ততটা স্বচ্ছ হল না-যতটা হলে বেঁচে থাকার আহ্লাদ জাগে।বিরুদ্ধগামী সময় এবং কালে ফুল-ফোটানোর সময় হয়েছে।কেই-বা হিসেব রাখে? ৩৬. রাতের উপান্তে অন্ধকার নামছে।আমার পাঠ শেষ।দেখিঃআকাশের মুখে প্রলয়ের প্রতিবিম্ব।ধ্বংসঅভ্যাসে পুতুল গড়েছিলে;সেই কাদা,সেই মাটি,সেই পোড়ামুখে ধর্ম শুঁকছে পুরোহিতের দল।তোমার দু'চোখে প্রিয় পাপ,স্মৃতিকোষে অবাধ যৌনাচারের গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল।প্রত্যেক নিঃশেষ থেকে উঠে আসে ডুবোজাহাজের স্মৃতি।তাহলে কি পরিত্যক্ত বাতিঘর-ই তোমার শেষ পরিণতি? পাপের স্খালনে খুলে যায় মুঠো-আমার হাতের মধ্য থেকে খসে গেছে আট বছর আগের হাত;আঙুলের স্পর্শে গলে যেত শরীরের জ্বর,মাথার অসুখ।পিঠে,তোমার লুকোনো ডানা ছিল?গভীর বিপথে উড়ে গেলে জ্বলন্ত রাতপোষাকে।আদিগন্ত ঘর, উচ্ছনে সংসার,---নদী রঙের শাড়ীতে প্রাচীন মেঘের ধ্বংসস্তুপ।সহজ জলের স্তর খুঁজে পেয়েছো? নদীতে ঢেউ।নদীও ভুলে গিয়েছিল কোন পথে,কবে,সে এসেছে?ধূলো ও জীবাণু নিয়ে ফসলের গন্ধমাখা আলপথে সন্তর্পণে পার হয়ে গেছো কবে-টের পাই নি।একান্ত জলবায়ুগত দিন ও রাতের বিভাজন ভুলে পরকীয়া নিমন্ত্রণের অঢেল আয়োজনে।সিঁড়িতে রোদের দাগ এখনও রয়েছে।তোমার শরীরে রোদ বসেছিল।তাকিয়ে দেখেছিলামঃআশরীর উপোষী চকোর আধখানা চাঁদমুখ খুবলে খেয়েছে।বুকে-পিঠে কোমল রক্তের স্বেদবিন্দু।অসুখের সঙ্গে নিরালা এ-মাঠে চিরন্তন নখ-দাঁত শানিয়ে রেখেছো?তোমার দু’চোখে কৃষ্ণপক্ষ নাচে। কাঁপছে ডান পাশের ভ্রূ।এটা কোন ঋতু?চোখের পাতায় মধুকূপী ফুল।প্রবল ইচ্ছায় খুলে ফেলি অতৃপ্ত আঙুল।এই ঘর,এই ঘাসের বিছানা---একসঙ্গে পথে নেমেছিলাম।ঝোড়ো শ্বাস,সিঁড়ির আড়ালে রক্তমুখী ক্ষত।মাথার ওপরে ডাকিনী মেঘের দল নেচে যাচ্ছে। অন্ধকার আমাকে বলেছেঃঅই মেয়েটিরও নাম অন্ধকার। ৩৭. যা হবার কথা ছিল না অথচ প্রাগৈতিহাসিক দুঃখ ঢুকে পড়ছে পাঁজর ফুঁড়ে এবং আমরা জেনেছি আশরীর সমুদ্র মন্থনে ইতস্তত দুঃখ,কিছু দুঃখ প্রাচীন মাছের পাখনার নীচে শ্যাওলার মতো জমে আছে আমার মোহের এ-শরীরে বিষণ্ন ডানার এ্যালবাট্রস যখন শেষবার চেষ্টা করছিল লবণের ঢিবি,নারিকেল বাগানের সারি পার হয়ে যেতে-গতানুগতিক দায়বদ্ধতায় চির-পরিচিত পৃথিবী তখনও নিজের অক্ষের ভরে ঘুরছিল।হতাশাজনক শীতার্ত প্রহরে ভারি কুয়াশার আস্তর নিঃশব্দে নেমে আসছে চরাচরের ব্যপ্তি পার হয়ে আর অকপট নিসর্গপ্রতিভা প্রতিদিন জন্ম দিতে থাকে আত্মরক্তপাত,মৃতঘুঙুরের শব্দ।নিজের বাঁকানো মেরুদন্ডে অসতর্ক পদক্ষেপে একসঙ্গে মনে পড়ে যাচ্ছিল অতীত,বর্তমান।ভবিষ্যতের গুহায় নিরপেক্ষ স্তব্ধতা ও কোলাহলে অগণ্য শব্দের বাঙ্ময় ও অবিকল্প শূন্যমেঘে সেইসব আদি অশ্রুগুলো এখনও শোভন।দৃশ্যপট ভরে আসে চৈত্র থেকে বৈশাখের স্বপ্নগুলোর বিপূল স্রোতধারা,চারপাশের গোধূলি বেলার আলোর মধ্যে জানাশোনা মানুষেরা কেমন স্তিমিত হয়ে যায়।তাদের আত্তপ্ত বাক্যগুলো হিম হয়ে যায়।সমস্ত চিন্তা ও চেতনার ভেতর পরাবাস্তববাদী ছায়া।শীতার্ত দিনের স্পর্শ ফেলে সকলেই খুঁজছে নিভৃত আকাশের উষ্ণতা।হৃদয় জ্বেলে দুই হাতে ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে মৃত্যু ও জীবন। আমাদের দেখা হল অধিকন্তু বালির মন্দিরে কিন্তু কেউ-ই কারো মুখ দেখি নি।নিশ্চয়তার ভেজা মাঠে অপেক্ষার কালে আমরা পাথর হয়েছিলাম।পাশের মাঠে থকথক করছিল পয়ার,ছদ্মপূরাণ। আমাদের কোনো কান্না যথাযথ নয়।নিম্নগতির সুষুম্না,আধা ধর্ম পথপাশে পড়ে আছে।সূর্যোকরোজ্জ্বল দুই হাত শূন্যে তুলে ডেকে গেছি।ছড়ানো পাখির ডানা-শোন নি সে ডাক।বোধিসত্ত্বে কার প্রাণ কামনা করেছো?অপরিমিত অন্ধকারের মধ্যে এতো সাজ?সূর্যোদয় থেকে সায়াহ্ন অবধি কঠিন শপথ,---সুগত ঐ চোখে কেনো এতো ভাঙা টুকরো,রাতের?করাল কালের কুম্ভীপাকে নিজের ধ্বংসের দিকে আমি কতোদিন শূন্যতার মধ্যে ভেসে আছি আশা ও নিরাশাহীম দোলাচলে,ঘেরাটোপের ভেতর।শূন্যতার ভেতর ঢেউ কিন্তু সৃষ্টি,সম্ভাবনা কিংবা প্রস্তাবনা নেই।তিরতিরে ঈথারের নীচে ঝর্ণা,নদী ও সমুদ্র।রুদ্রাক্ষের মালা ছড়িয়ে পড়ছে পথ ও পাহাড়ে। আমি অপেক্ষা করছিঃতুমি নৈসর্গের নিস্তব্ধতা মেখে বসে আছো? ৩৮. নিজের আদ্যন্ত আয়ু জ্বালিয়ে দু’হাতে কবর খুঁড়েছিলাম-তাই মুখ থুবড়ে ধূলোর নীচে পড়ে আছি।শ্মশানকালীর বিষ ও ভস্মের কণা এতো নিবিড় টানছে---ছারখার হয়ে যায় সমস্ত সাহস।বিবর্তনের বিকাশ,কুঁড়ি মেলা পদ্ম,---খরতোয়া নদীতে অনাব্য ঢেউ।রোমাঞ্চের কুহকিনী ডাক ফেরাতে পারো নি?সূর্যশিখর আবির্ভাবের স্বপ্নে ‘সুরঞ্জনা’হয়েছিলে?প্রচল ভাঙার সহজাত প্রবণতায় জ্যোৎস্নার এলোচুলে দুই চোখে হলুদ পাখির ডানা;বসন্তের বিশুদ্ধ নিয়ম অস্বীকারে পরিত্যক্ত ঘরে ফিরে যাবে?ঘরের ভেতর আলো ছিল---বিনত শুভ্রতা?ভয় পেয়ে পালিয়ে এসেছো?স্রোতের অনুগামীর মতো আমি প্রস্তুত।দেখবো, মালতীলতার অনায়াস দোল। ৩৯. মাত্রাবৃত্ত জীবন চেয়েছিলাম-বন্যা-ই আমা্র নিয়তিতে বাঁধা। তুমি ও তোমার বহমান উদ্বাস্তু জীবন বেঁধে নিয়েছো নৌকার বে-আব্রু মাস্তুলে।শিরায় ফেনিয়ে ওঠে কালবিষ,অফলা বিদ্যুৎ আছে কিন্তু দাহ নেই।শোধ করেছো জন্মান্তরের প্রথম শস্যের গন্ধ? যেভাবে দেখেছিলাম দগ্ধ দু'কোটরে সিঁদুরে গোধূলি নয়,---অন্ধকার মেঘ।অই মেঘে বৃষ্টি ঝরবে?দু'কূল ভেসে যাবে?সাথে অসম্পূর্ণ ঘর,কবিতার নীল খাতা?তোমার নিঃশ্বাসে কৃষ্ণচূড়ার সজীব বীজ ছিল---কোথায় হারিয়ে গেল সেইসব মোহময়ী দিন ও রাতের শ্রান্তিভার?শূন্য থেকে শূন্যে ভাসে কত অপমান তবু পানপাতার ঐ মুখে কেবলই জেগে উঠেছিল সবুজের রক্ত।সবটুকু শুষে খাবে?রেখার সারল্য,স্থানবিন্দু থেকে কালবিন্দুটুকু?এমন কী অতীতের কাতরতা? বজ্রাহত বাড়ীর সমস্ত ঘর পুড়ে গেছে অথচ অটুট সমুদ্র বালিয়াড়িতে গড়া বাড়ী।জোয়ারও পিছিয়ে গেছে অনন্ত ভাঁটায় ডুবে আছে বেলাঞ্চল।কাঁটাঝোপ,লোনাবালি,---চক্রবাল ছিঁড়ে যেতে চেয়েছিলে?ঠিক কতটুকু উষ্ণতা চেয়েছো এক জীবনে?তবে কি হৃদয় জুড়াতে ঘাট থেকে ঘাটে,পাহাড়,সমুদ্র থেকে সমতলে নুড়ি কুড়াতে কুড়াতে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ,শিলচর থেকে সুরাট,কাশ্মীর থেকে কন্যা কুমারিকা---তমার দু'পায়ে যাত্রাক্ষত।রক্তে সিঁদুর গলবে?আচম্বিত জলস্রোতে আমাদের যৌথ দিনগুলো নদীপথ থেকে মোহনা,মোহনা থেকে সমুদ্র,সমুদ্র থেকে অতঃপর বাষ্পীভূত ঘনমেঘে শুধু লবণগুলো সমুদ্র তার বুকে জমিয়ে রেখেছে।এপিটাফ মুছে অবিশ্রাম ঝরে পড়ছে পূর্বাষাঢ়ানক্ষত্র,সন্ধ্যা এবং রাত।আবলুশ কাঠের কফিন নিয়ে ভেসে আসে স্বপ্নোত্থিত নৌকা---গলুইয়ে বসে বেহালার ছড় টানছে জন্মান্ধ গায়কের দল-তাদের সুরের মূর্ছনায় পূণর্গঠিত পাঠল;যারা কবিতাবিরোধী,--- প্রথম দশক ছুঁয়ে অনুভূতির প্রদেশে ক্রমাগত প্রশ্নচিহ্ন,টেরোড্যাকটিলের আঘাতে স্বপ্নভঙ্গ- এখানে সবাই এক বিরহের কালে।আমার নিস্পৃহ চোখ ডুবে যায় নিমগ্ন,গভীর ঘুমে।ঘুমের ভেতর সেই মানবজন্মের গান, অশ্রপতনের অপেক্ষা,---আবার উঠে দাঁড়াব?দূরের পূষ্যা নক্ষত্রের থেকে বিবিধ রঙের বায়ূস্তর ভেদ করে কেউ কি আসবে শরীরে জড়িয়ে ইমনকল্যাণ?আশরীর প্রথম বৃষ্টির জলে ভেজা রাগিণীরেখার মতো?হাতে ধরে ঘুরিয়ে আনবে অন্তহীন ভবিষ্যৎ? খসে পড়া চিরায়ত ফলে ভরে আছে সমস্ত ফলবাগান,বীজ বোনা শেষ।এই গাছগুলোর ছায়ায় একদিন ছায়া নেবো।বুকের ভেতর এতো পরাভব।গ্রহণের সূর্যে তাকিয়ে দেখেছিলামঃআবহমানতার অঢেল ঢেউ ভুলে ছুটে যাচ্ছ ভাটির প্রবল টানে। জল, তোমাকে ছোঁয় নি। ৪০. তল,বিন্দু ও রেখার প্রকৃতিতে পরিধির পাশে অভিনয়-মাখা তোমার মুখের একপাশে আলো আর এক পাশে বর্তুলাকার গহ্বর।সুতৃপ্তির লজ্জা মুছে অন্ধকারে ভেসে ওঠে মধ্যরাতের নোঙরের স্মৃতি।দ্বাদশীর বুক ভাঙা যমজ মিথ্যের মধ্যে প্রবাহতরল মুখ আরও কালো হতে থাকে।এই যে নীলাভ অন্ধকার মেঘ,বৃষ্টি,সৌরধূলো,---তোমার স্বরতাড়িত দুই চোখে লালসার মল্ল-আষাঢ়ের ঢল।জলের ভেতরে মুক্তিপথ আছে?সূর্যের কৌণিক রেখা ঘিরে যৌবনের উন্মাদনা,দৃঢ় রুদ্ররেখায় ব্যসনা এবং বিলাসের ছড় টানিয়ে রেখেছো?উদাসিনী ছিলে না কখনও---তোমার বুকের মধ্যে অদৃশ্য নাচের টান।জনহীন নৈশ রাজপথে নিজস্ব গরিমাভাষা নেই তাই প্রতিপলে নিজের বিরুদ্দধে এতো জেদ,এতো বিরোধীতা তবু লাঞ্জনায় ছিন্নভিন্ন বুকের উত্তাপে ফুটে ওঠে সূর্যমুখী ফুল।সহজিয়া ভাষার প্রাকৃতবোধে শেষ কবে স্বপ্ন দেখেছো?ধ্বংসাভ্যাসের শ্বাস ও প্রশ্বাসে অবিরাম হেঁটে চলা সংকেতের সর্বনাশের সীমায় তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখেছিঃশেষের তর্পণ,শরীরের বাঁকা খন্ডগুলো প্রেতিনীর হাঁ-করা মুখের দিকে ছুঁড়ে বলো,'নে,খা' অথচ শনাক্তযোগ্য নয় এমন অভিশাপের মধ্যে ঘন,সন্নিবেশিত লতাবীজ জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে রয়েছে।আমি জীবনের কথা বলতে চেয়েছিলামঃবর্ষা-আশ্রিত সঙ্গীত,বসন্ত ও শীতে সুরের বিস্তার ছিল।প্রেম-আরোপিত পথ ও প্রান্তরে অসুখের সঙ্গীত গেয়েছিলাম কথ্য ও চলিত ভাষা ও গভীর বেদনায়,---আজ সেই সমস্ত সঙ্গীত ঢেকে আছে মেঘের চাদরে।ঢেকে থাকল প্রেমের ইতিহাস;যেভাবে কুয়াশা ঢেকে দেয় নদী ও সমুদ্র,স্থিরতর ঝর্ণাজল ও সৈকতভূমি।বালুকণা উড়িয়ে দিক-নির্দেশ পেয়েছো?নাব্য পথের সন্ধানে খুঁজে দেখেছো জলফলক?সেতুহীন নদীর দু'পাশে মহিষের সারি চরছে;বিস্তৃত ছায়া পারাপারে।নদী পার হয়ে চলে যাবে আর বালুচরে মিশে যাক সুদূর বর্ষাসঙ্গীত এবং প্রতি-রক্তকণা থেকে ঝরে পড়ুক কবিতা। +

শুক্রবার, ৬ জুন, ২০১৪

ধূপের মতোন উড়ে গেছে প্রতিশ্রুত প্রেম-৩

২১. সমূহ শিল্পের জন্যে যারা পাথর কেটেছে,সুমন্ত শরীরে মেখেছিল লাল ধূলো,কাঁকর ও বালি---দেহবিকৃতি ও উচ্চারণের জড়তা হেতু তারা জানে-অনুগমনের পথের ওপর দিয়ে ক্রমান্বয়ে অন্ধকার দূরে সরে যাবে শুধু প্রতিগামী রমণী, বোঝ নি মধু,মেঘ ও জলের ফোঁটা তক্ষশীলা থেকে মগধ প্রদেশ পার হয়ে আমাদের উঠোনের কোণে এসে থেমে আছে।কাঁঠালি চাঁপার ফুলে স্বপ্নের সন্তুতি।সাদা পাখিগুলো সব ঘরে ফিরেছে কেওবল শ্রেয়তর অন্ত্যমিলে লেখা সর্বত্রগামী কবিতাগুলো ঘরের বিষাদ ভুলে গেছে।প্রত্যন্ত নদীপ্রদেশে শারদশশী নৌকার অনিশ্চিত গন্তব্যে স্তব্ধতা এবং কোলাহলের ভেতর মাতৃসমা জলরেখা ধরে স্বচ্ছতাবিহীন জীবনের যাত্রায় উত্তান রাত কেঁপে ওঠে উৎসবের বাজনায়।রমণীর বুকের তোরণে 'স্বাগতম'ইস্তাহার সাঁটা।বাজনাদারের ভাষা ও পোষাকে কিংবা জলজ স্রোতে মনে পড়েঃঅর্থবাচক শব্দের দৃঢ় গাঁথুনিতে একটানা ডেকে গিয়েছিলাম,---শরীরজুড়ে রক্তক্ষত।'রক্তে সিঁদুর গলবে'--এই প্রত্যাশায় শরীরের যত রক্ত ঢেলে দিয়েছিলাম অথচ আজ শ্মশামচারিনী প্রেতিনীর যোনী তোমার সমস্ত অবয়বে।ধ্বংস ও বিনাশের পূজারিনী হয়েছ?স্ব-প্রণোদিত এই জীবন সঠিক মনে হল?স্বেচ্ছাচারী,বল্গাহীন জীবনের স্বার্থকতা খুঁজে পেয়েছ?পাপ ও দুঃখবিষ গহবরের কাটা হাত,ভাঙা হাড়ের গুঞ্জন,হৃৎপিন্ড চেয়েছে ধ্বংস প্রতিমার পূজো। আজ রাতে সৃষ্টিছাড়া পূজো হবে।জবাফুল,বেলপাতা সাজিয়ে রেখেছো? ২৪. প্রত্যাশার মন্দিরে অনেক ঝুল,ঊর্ণাজালে আবৃত্ত দেয়াল।কতদিন এ-মন্দিরে ঘন্টা বাজে নি?রক্তিম নখে এসে থেমে থেকেছে প্রার্হনামন্ত্র,স্তোত্র।যা কিছু কলঙ্ক,অপমান,---মুছে নিয়ে শালকীর জলে প্রতিশ্রুতি ছিল জ্বালিয়ে দেয়ার ধাতুমুখ,ক্ষত কিন্তু অগাধ শরীর ছুঁয়ে ব্যর্থ এ-দু'হাত তুলে নিয়েছিল কেবলই পরাভবের পাথর।চোয়ালে লেগে থাকা উচ্চাশার ক্লীব শৈবালের প্রলেপ তা-কি আবরণের অপব্যয় নয়?শরীরের আমূল প্রপাত ভেঙে এই যে অন্ধকারের ধারাময় জীবন,---আসলে সময়ের পিচ্ছিল মন্দিরচূড়া আর শেষ সর্বনাশের ধারায় সঁপে দিতে পারো সবটুকু?জলস্রোতের রেখায় ভাসমান সাধ এবং শব্দহীন বালির উত্থানে ঢেকে গেল শষ্পাবৃত্ত নদীর দু'পার।সব বাজি জিতে নেয়া হয়ে গেছে?আশাছিল,একদিন কর্তব্যহীন সময়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জাগতিক সহ্যসীমার বাইরে কিছু দেখব না কিন্তু ক্রমশঃ শীতের টানে চরের ওপর ঝুঁকে পড়ে এবং আলো মাখামাখি তোমার শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রেতের বাতাস। ২৫. আধভাঙা কথামালাগুলো মাঠের কিনার ঘেঁষে কেঁপে ওঠে আর আমরা সুপারী রঙা গোধূলির থেকে দূরে সরে যাই।সাব্লীল পাহাড়চূড়া ও নীল জলাশয়ে খর শীত নামছে।অগ্নির সর্বস্বতা সোনামুখ হিমের ভেতর গলে যেতে দেখি।আমাদের পাঠ শেষ।অন্ধকার নেমে আসছে।দূরের নদীজল থেকে জেগে ওঠা মৃত মানুষের কোলাহলে উড়ে যেতে দেখি নিশাচর পাখি,শান্ত বাদুড়ের দল,জ্যোৎস্নার আকারে নড়ে ওঠে কাশের জঙ্গল।যে সমস্ত শঙ্খ তোমাকে দিয়েছিলাম-তারা ছুঁয়ে গেছে নীল পরমায়ু।বুকের গহ্বরে শামুকের বুদবুদ,ত্র্যহস্পর্শ,---আমাকে কতোদূর নেবে,রমণী?তোমার চলা বড়ো বেশী দ্রুত।কুয়াশার আস্তরণে যতোবার ধরতে গিয়েছি ততোবার শুধু ছায়া,প্রচ্ছায়ার প্রহেলিকা। ২৬. একদিন শীতপোড়া রাতে দেখেছিলাম জীবাশ্ম,অন্ধকার বেতসের পাতাগুলো কাঁপছে।অক্ষর নিবদ্ধের কবির কবিতা,নিহিত বোধের চিত্রী ও গায়ক;প্রকৃতির অন্তর্গত গভীর রঙ,সমূহ সঙ্গীতে শারীরিক স্পর্শ,---তারপর মৃত্যু উৎসব,কৌণিক দূরত্বের তত্ত্বকথায় দূর্দমনীয় টানা ছুটির আমেজ।কিছু তার গল্প হয়ে ছিল।সরল গদ্যের ভয়াবহ প্রতারণার অভীপ্সায় যৌনতার আঁছোয়া অক্ষরে আমাদের আকর দিনগুলো পিন্ডের মতোন উঁচু হয়ে ওঠে য্যানো বা স্মরণস্তম্ভ কোনো।সমস্ত বালুর চর জেনে গেছে আমার অথর্ব,সামর্থ্যবিহীন ক্ষমতা।জোনাক পোকা ভীড় করে আসে...তার আলোতে বপণহীন দিশা। তত্ত্ব ও সর্বনাশের ঘুম,কুয়াশামাখা সকালে জেগে দেখি ভেসে গেছে বালুচর,প্রতিটি লতা ও গুল্মে চিহ্ন পরে আছে।আমার সমস্ত রাত ঘিরে ছিল জলের প্রবাহ,কুসুমিত বিশ্বাস।ব্রতধারণে ভুলে গেছ আমার জলের অধিকার,সীমানা ও নুড়ি-পাথরের সহজতা?তোমার শরীর য্যানো নিমপাতা-গোপন গহ্বরে ঢাকা অন্ধকার,হাহাকার।বর্ণান্ধ রাতগুলোতে জলদোষ ছিল?যে আগুনে পুড়ে যেতে চেয়েছিলে---এমন ধাতব পাত্র শূন্যে বেজে ওঠে ঝনঝন।দশ আঙুলের নির্ভরতা থেমে যায় অকস্মাৎ,কেঁপে ওঠে নিশিকোলাহল,কেঁপে ওঠে বনভূমি,বালুচর,ঝর্ণাজল। ২৭. পরধর্মময় চাঁদ ও গ্রহের মতো বস্তুত তোমার চোখে লেগে আছে বিরুদ্ধগামী স্রোতের পটভূমি।একসঙ্গে কেঁপে ওঠে নদীতীর,ভিটেমাটি,উদাসীন শরীরের ছায়া।ছুঁয়ে দেখেছিলে যে মুহূর্তে উঠে গিয়েছিলাম স্বপ্নের শেষাদ্রিচূড়ায় কিংবা শতাব্দী পরের স্থলপদ্ম পরিত্যক্ত বাড়ির উঠানে ইটের পাঁজর ভেঙে বের হয়ে আসা দীর্ঘদিনের সমূহ শ্বাসে পুড়ে গিয়েছিল ডানা?ভুলে যাব বুকে পোড়া পাখি?প্রবাহমানতার ঢেউয়ে অধর্মের নৌকা,নিরিবিলি মাস্তুল,দড়িদড়ার টান।উৎস থেকে মোহনায় বিসর্জনের আবহ।এতো বিষাদ বিসর্জনের ঢাকে? দিনানুদিনের পাপে ভরে আছে তোমার শরীর।আগুনের এমন ক্ষমতা আছে দেহের শুদ্ধতা জানে।পস্পর অঞ্জলিতে ভাসিয়েছিলাম উদ্যত প্রণয়,স্বপ্ন।তার বীজ উঠে আসে মধ্যজল থেকে আর আমার চোখের অনীশ্বর বিন্দু,কমন্ডলু,পায়ের খড়ম উড়ে যায় ভুল ঋষিদের আশ্রমে আশ্রমে। ২৮. ভূমধ্যসাগরের জ্বলন্ত দিনগুলো ভূলুন্ঠিত অথচ উন্মাদনায় ভরে ছিল।ভেবেছি,কবেই মুছে গেছে শ্লেট-ধোয়া জলে।পদ্মপাতায় টপকে যত ছিঁটে-ফোঁটা জলে আর্দ্র হাত---অই হাতে চেয়েছিলাম ক্ষমার সজীবতা।জীবাশ্মপ্রহত ছায়ামুখে ইতস্তত ভালোবাসা মুহূর্তের নির্বাপনে আচম্বিতে শেষ হয়ে যায় আর পৃথিবী তখনও ভেসে থাকে গ্রহণের জলে।প্রগাঢ় অন্যায়ে চেয়েছিলে আরও কিছু সোজাসুজি?হাড়ে লেগে থাকা জমাট রক্তের বিন্দু?তোমার বিষাক্ত করোটিতে অবাধ ব্যভিচারের স্মৃতি।আমাকে কী তার ভাগ নিতে বলেছিলে?গোপন রাতের স্তুপে পড়ে আছে শ্বেত বধিরতা ও মন্দ্রিত অভিসার।বসন্ত আসার পথ জুড়ে ছিল পিছল পাথর।ঝুঁকে আছি।চারিদিকে ছড়ানো কাজল পরিবেশ,শারীরিকতার জাল।চোখ জ্বলে ওঠে কৃষ্ণ বিস্ফোরণে।নূতন পৃথিবী কখনো মসৃণ নয়,--- দরোজাবিহীন মন্দিরের মতো লতাগুল্মে আচ্ছাদিত;যারা জানত না ঠেকে শিখে নিয়েছিল।ধ্বংসের অতলে কতদূর যাবে?আমার সমস্ত দেহে সর্বনাশের উল্কির ছাপ।আমি সর্বনাশ দিয়ে পতন ঠেকাবো বলে দুই হাত মেলে তোমার পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এই বুকে পরাভন নেই। ২৯. একক ও তুলনারহিত আমাদের সেই প্রেম ভেসে গেছে নীলচে জলের স্রোতে।সমুদ্র সাঁতারে আমাদের কত ক্লান্তি জমে আছে।গভীরতর জলের ভয় ছিল---জলজ শ্বাপদ আর খোলা-গিট হাঙর স্তব্ধ করে রাখে মোহনা ও উপকূল।যারা সমুদ্রে নামে নি-বাতাস ও জোয়ারের টানে তাদের পায়ের তলা থেকে সরে গেছে বালির চাক ও মাটি।যতটা আগুনে পুড়েছিল এই বুক,---ভেবেছিলাম সমুদ্র ধুয়ে দেবে পোড়াক্ষত,ফেনায়িত রক্তবিন্দু।অবশিষ্টে পড়ে থাক রহস্যের মূল যখন হলুদ,নীল সাংখ্যের অতীতে ধূর্ত ও জটিল এক স্তর ধোঁয়া।মহাজাগতিক শূন্যের তলায় পরিচিত ঝর্ণাজলে ঘর যায়,পথ যায় যেভাবে আমার দিনগুলো ছোট্ট হয়ে এসেছে।নিদ্রাবিহীন রাতে অতীতের প্রিয় দু'টি হাত কখনও কখনও চেঁপে ধরে করোটি।বিভ্রান্তি এবং অস্পষ্ট মুহূর্তে ডুবে যেতে চায় সমূহ শরীর।নদী কিংবা পানামিশ্রিত পুকুরে।লোভ ছিল অপরিসীম ও শর্তহীম।যে সমস্ত বাগানের সৌন্দর্য্য উথলে উঠেছিল;ভূত ও ভবিষ্য থেকে---আরও কিছু দূরে ছায়া ও আলোর অন্তরালে ঢাকা পড়ে আছে নক্ষত্রামৃতযোগ,সংক্রান্তিদোষ। অরোরা বিভায় জ্বলে ওঠে ময়ূরপালকদিন।্মনঃশিলার পাষাণভার এবং তোমার লাবণ্যেফুলে ওঠে বানভেজা মাটি।টপটপ জল ঝরে,লোনাজল।জলশোধনের প্রত্যেক বিন্দুতে রক্তের প্রবাহ।ক্ষান্ত আকাশে বিচ্ছেদ,অনন্তের।বর্তুল হৃৎপিন্ড জড়ো হতে থাকে গোলাপ রঙের গল্প। তোমার শরীরে ছিল ইমঙ্কল্যাণ।তার সুর শুনতে শুনতে কতদিন স্পর্শ পেয়েছি রাতের।সাবধানবাণী ভুলে যে দিকে যাবার কথা ছিল না-গিয়েছিলাম।ব্রক্ষপুত্রের জমাট অন্ধকারে অবৈধ,অসামাজিক স্বর্ণ-সমুজ্জ্বল বেশ্যাদের নগ্ন শুয়ে থাকার ভেতর পথ করে।উপকথার বৃত্তান্ত থেকে বৃত্তান্তের আবছায়ার আড়ালে কত অপমানে শরীর সাজিয়ে বসে আছ।স্ফুরিত আনন্দ এবং শব্দহীন স্তবে?চারিদিকে ধাবমান জল।দিশাহীন জলে জানা নেই কে,কখম কতদূর নেবে?বুকের গভীরে নেমে যায় জলরেখা।নিভৃত নিঃশ্বাসে ঘট ভেঙে মুছে নেয় সিঁদুরের নাম।বুকে খরতালি,---আবর্ত বাজনা কেউ শোনে নি।বিতত পদ্মপাতা---কতটুকু জল ধরে?যতটুকু দুই চোখে হ্রদতটমূলে?ভাসিয়ে নদীর তীর-অই দূরে জলচারী নৌকা।তৃষ্ণাদেবতার মূলে কখন যে একাকার মিশে যাও সুমন্ত শরীরে-বণিকের মেরুদন্ড তোমারই দুই হাতে বহুপরিচর্যাজাত, বায়বীয় স্বরে ফিরে যায় ঘরে।বিকল্প বন্ধুত্বে কিংবা তার চেয়ে বেশী ফুলঝুরি-এই উদাসীন মর্যাদায় নিঃস্ব তাকিয়ে রয়েছো সুন্দরের মজ্জাহীন রাতে।শোকের আতসগুলো ঝরে তোমার চোখের ত্রাণ মহোৎসবে।অসম্ভব নিঃসঙ্গ আমার চোখে পূর্ণিমার ছায়া।আমার নিঃশীল বসে থাকার ভেতর আত্মপতনের বীজ,বিচ্ছেদের অঙ্কুরোদগমে কুঁড়ি মেলে নূতন কবিতা।সু-সংহত,ছন্দোবদ্ধে নির্মাণ ও বিনির্মাণের ফাটলে জর্জরিত বাঁধে অথই উল্লাস।ভবিষ্যতের পাথেয় জমা নেই তাই বাধাঁ হয়নি যে ঘর---সেই ঘরের বিষাদ মনে পড়ে?রক্তিম ফেনার সন্ধ্যাকাশে যে তারা ওঠেনি তার আলো ভরে আছে প্রসন্ন উঠোন।আমি ভুলে যাই নি সে প্রেম;আতপ্তভিত্তি সংসারে আনন্দিত দুই হাতে উপুড়করা প্রদীপ।রাতদুপুরের সন্দেহে স্বপ্ন নিতে নিতে আবিষ্ট দু'চোখ। ৩০. পরিচিত পথের লানম্য,বাঁকে বাঁকে সবুজের সমারোহে সজীব সঞ্চার;তুমি তার কতটুকু জানো?তোমার কি মনে হয়েছিল চিরদিনের নিরুদ্বেগের মধ্যে এতোদীর্ঘ,প্রতিশ্রুত ভালোবাসাম সময়বিহীন স্তব্ধ জালে আটকে রয়েছে। আমি দু'হাতে চেয়েছিলাম সকালের শব্দগুলো খুলে যাক লজ্জাশীলা রমণীর মতো এবং অবজ্ঞাত সময়ের স্তর ফুঁড়ে বেরিয়ে আসুক হাজারদুয়ারি ভালোবাসা।আমাদের ঘোরমাখা দিন ও রাতের প্রতি প্রহরে মুখথুবড়ে পড়ে ছিল পরিপাটি জীবন ও মেদমজ্জাহাড়।আদি সময়ের ধূলোমাখা পায়ে দীর্ঘ চলাচল থেমে গিয়েছিল উর্ধ্বগামী মশালের নীচে।বুকের প্রান্তরে ছিল কাটাগুল্মের উদ্ভিদ।প্রতিটি লতা ও গুল্মে সাংখ্যের অতীত তীক্ষ্ম কাঁটা বিধেঁ যায় বুকের গভীর থেকে গভীরতর প্রদেশে।চারিদিকে এতো শব,শবের মিছিল,---তুমি ঝুঁকে দেখেছিলে আমার কপাল।কপাল না-কি কপালের লিখন?নিয়তি পালাটাতে চেয়েছিলে?কোনো ক্ষোভ নয়,কোনো শোক নয় তবু অশ্রুপাতে দুই চোখ ভার।