Powered By Blogger

মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

বইমেলা ২০১৪

কড়ুই গাছের নীচে বাঁধানো চত্বর
রঙিন মুখোশ পরা বন্ধুরা আসছে
সুদৃশ্য হাত প্রেমিকার বাহুলগ্ন;সূর্যপুষ্প হলুদ,উজ্জ্বল সূর্যাধার
কোন প্রান্তর জ্বলছে
ফিদা হুসেনের তুলি,প্যাস্টেল,স্প্যাচুলা
জন্মের পেছনে জন্ম

আমার প্রেমিকা নেই---শৈশবে একটা নদী ছিল
আর একজন দেবী
সব সমর্পণ সমুদ্রের দিকে ফেলে
অবশেষে মরা খাল
দখলের মহোৎসবে কাটা পড়ে গেছে কাঁশবন
অস্তগামী চাঁদের তলায় সেই দেবী,তার এলোচুল
ঠোঁটের বাঁকানো হাসি,চিকন কোমর,সাদা পেট...


শান বাঁধানো চত্বরে ঠোঙা ভর্তি বাদাম দু'হাতে
জনস্রোত ভাঙে একে ওকে ডাক দিই
যুগযুগান্তে প্রত্যেক মুখে খুঁজিঃসূর্যোদয়,সূর্যাস্তসকল,কবি,চিত্রকর

নিজের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের ঘৃণা
সারি সারি অন্ধকার,একরোখা স্বপ্ন
এক বজ্রপাত থেকে আরেক বজ্রপাতের মধ্য মুকুল ঝরছে

সৌরভে উন্মাদ মানুষ ছুটছে

রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

পথের নিঃশ্বাসে

বিকেলের বাঁকা আলোতে স্থবির অপমানে তমিস্রার মতো বন্ধহীন দিন
বিচিত্র আশ্বাসে উচ্ছ্বসিত তবু ফিরে আসে স্বপ্নের নিভৃতে
ক্লান্তিহীন অনন্ত অভ্যাসে খুলে যায় মুঠো
পুঞ্জীভূত রক্তিম ফেণায় জন্মদিন,ছিল না উৎসব

ঘাসের আসনে আমাদের আছোঁয়া যৌনের স্পর্শ
অন্ত্রের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে বহিঃর্মুখী,মেদকাটা ভাষা
আঁটো-সাটো কাঁচুলিতে ঢাকা উদ্ধত,পুরুষ্ট স্তন,---
শিকারী বেড়াল য্যানো;ওঁৎ পেতে আছে
সুযোগ পেলেই লাফিয়ে পড়বে
একদিন তোমার সমস্ত দুধ টেনে নেব আকন্ঠ তৃষ্ণায়

যে গুপ্তবিদ্যায় তিনপুরু সর,নীচে দুধ
জারণের প্রক্রিয়া,রান্নার পুঁথি আশ্বাস-সংশয়ে জীর্ণ--

একমুঠো প্রাণ নিয়ে আমিও নেমেছি পথে
যদি পথের নিঃশ্বাসে গলে যাই
দুর্বিনীত ঝড় কিংবা আতপ্ত চক্রান্তে
ভাঙা পথে এসে দাঁড়ায় পাথর তবে
গণিকার নিষ্প্রদীপ স্নানের ছায়ায়
কবন্ধ শরীরে মেখে নেব পথশ্রম

কলংকিনী সেই মেয়ে আমাকে আশ্রয় দেবে
মুখোমুখি ঠোঁট গলে যাওয়া নিঃশ্বাসে

দিনান্তের সূর্য

খুব সহজেই ভেসে যেতে দিয়েছি অলকানন্দা জলে

ইচ্ছে ছিল পেশীবহুল দু'হাতে টেনে তুলি নিমগ্ন স্থিরতা
অঘোর আঘাতময় জলরাশি ভেঙে ভেঙে
ক্রিয়াপদ,অব্যয় ও যতি

ছিটে-ফোঁটা ভাঙা শব্দ;যা আমার অগোচরে
পরস্পর ভিন্নতায় কবিতার আগ্রহাতিশয্যে সম্পন্ন শব্দের অভিমাত্রা
ছন্দ,উপমা,প্রতীকে ঔদাসীন্যে মেনে নেই সামান্য ভাঙচুর,ভুলত্রুটি

ছেঁড়া কিছু অঙ্গবস্ত্র,পেতলের ফুলদানী,জলপাত্র ময়লায় কালো ও বিকৃত
কবি পুরুষের মতোন উদ্ধত,বিরহের অহংকারের ভেতর
শুয়ে আছে নীল সমুদ্র,রক্তাক্ত বুক
আর ঠিক তখনই সাশ্রুয়ী আলো এসে পড়ে আদমের উলঙ্গ শরীরে

অস্মৃত স্বপ্নের বিসর্জনে জেগে ওঠার সময়
ঘরময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছুঁচো-ইঁদুরের কিচকিচ শব্দে
অর্থহীন হাতে উঠে আসে বিষন্ন প্রতিভাকণা
জলমন্ডলের ছায়ায় রাঙানো মুখে চিরতার রস
মুহূর্তের স্বাদে পাকস্থলী ঠেলে বের হয়ে আসে অন্ত্র

দুই চোখে আঁকা ছিল ময়ূরপালক দিন
শরীরের মধ্যে অনেকান্ত খাল
কলা গাছের ভেলায় ঝরে শরীরের বালি,অনন্যতা
সমূহ সর্বনাশের সাথে নিজেকে ভাসিয়ে তোমাকেও ভাসিয়েছি
এইভাবে ডুবে গেল আমাদের দিনান্তের সূর্য

সুন্দর সংস্কার

মধ্যরাতে পরিকীর্ণ পানশালা--পানপাত্রের কানায় বুদবুদ
সম্ভাবনা ছিল তবু পাঁড় মাতাল হয় নি কেউ কেউ
ক্রোধ,অভিমান ও ক্লান্তিতে পরিশ্রান্ত মানুষেরা
সীমাবদ্ধ নশ্বরতা জেনে নিয়ে এই খানে একাট্টা হয়েছে

আমি ওদের করুণা করি

ঘৃণা পাবার মতোন কোন যোগ্যতাই ওদের ছি না

নৈসঃঙ্গপীড়িত বিচ্ছিন্ন মানুষ
ওদের মুখের লিথোগ্রাফে জন্মের শেকড় আঁকা
চোখে দ্বাপর যুগের জল ও অমিত প্রতিশ্রুতি
পায়ের তলায় জ্বলে অরব ও ধূপকাঠি

সমস্ত অন্যায়,বজ্র বিদ্যুৎ ও ঝড়ে
অসংলগ্ন বাকরীতি
প্রেমিকার কান্নার বৈভবে
পর্ব ও পর্বাঙ্গে ভাগ করে প্রেমের কবিতা
অস্তিত্বের ধ্বংসলীলা,অশ্বমেধ যজ্ঞে,
পৌষ সংক্রান্তিতে নিমগ্ন পানশালা
শুধু এক সুন্দর সংস্কারে

শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

হলুদজল সময়

হলুদজল সময়ে তল থেকে উঠে আসে আধোশ্বেত বধিরতা
মগ্ন অবসরে মুছে দেয় সীমান্ত শহর আর গ্রাম
মাথার ওপরে গন্ডিরেখা,পায়ের তলায় পরিত্যক্ত সাপের খোলস
পথের নিঃশ্বাসে ধ্বংসবীজ---স্থির ও পরিবর্ধনশীল

উপলব্ধিজাত কস্তরীমালার ফুল,সীসা,গন্ধক,তামাকজাত নেশা
আর শস্যের সবুজ হাহাকার
ধানক্ষেতে রক্তপাত---পাঠ-প্রতিপাঠে,জীর্ণ ভূর্জপত্রে সর্বস্ব আগুন জ্বলে ওঠে

যে আগুন সর্বংসহা তাকে নিভে যেতে দেখি খর শীতে
এবারের শীতে উত্তরের পাখি নেমেছে অসংখ্য
তাদের ডানায় ভেজা বরফের আস্তরণ
উড়ে যেতে যেতে বলেঃদেখো আমাদের পালকে মেরুর দাবদাহ
বেগুনি রশ্মির লোভে এতদূর এসেছি,ঝলসে খেতে চাও
বুকের নরম মাংশ

তবে নাও গোধূলির আলো পাত্র ভরে পান করো
মদ,রক্ত ও মাথার খুলি উপড়ে মগজ

পাথর সম্মান

শ্মশান ভূমির মতো বিরান শহর
ইঁদুরের বিষ্ঠা,শেয়ালের লোম---ধূল পড়া দাগে
পুনর্বাসিত বাদুড় শুয়ে আছে নিথর ষ্টেশনে
এখন যেখানে বুনো ছাগলেরা চরে বেড়াচ্ছে সেখানে ঠেক ছিল
চোলাইয়ের,গাঁজার
বিচ্ছুরণময় গোধূলি সময়ে কতদিন জমানো শোকের চিতা জ্বালিয়েছি
আজ আধো আলো-অন্ধকার শহরের মধ্যে দিন ও রাতের আপাত পার্থক্য নেই

কত তৃষিত লোকের বাস ছিল এ শহরে
সুগঠিত স্তনশীর্ষে ঘন বরফের স্তুপ গলে গলে স্বাদু জল
কূয়োমুখে মাটি বালির উত্থানে চাপ চাপ মুথাঘাস
সুড়ঙ্গপথে তৃষ্ণার্ত শুকরের পাল নেমে যায়

সবার মুখের উৎস খুলে দেখি
শিরায় শিরায় মহীরুহ
একটি পাতার থেকে আরেকটি পাতা আরো বেশী অন্ধকার
সন্দেহে সন্দেহে কেটে যায় সমস্ত জীবন

কামট শহরে শেষ চিঠিটা যে ডাকবাক্সে ফেলেছি তা
ঝড় জল ও রৌদ্রের তাপে ঝলসে গিয়েছে
পাথর সম্মান পাব ভেবে
এই শহরে এখনো রয়ে গেছি
আপাতত একটি বিছানা,সাদা কাগজ,কলম সাথে
এবং উদ্ভিন্ন যৌবনা একজন প্রেমিকা পেলেই
কিছু প্রেমের কবিতা লিখে যাব

বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

অরুন্তুদ ও অকাল বৈধব্যের বেলা

নিস্তব্ধ নদীর ঘাটে বহুপরিচর্যাজাত রমণীরা জলস্রোতে মুখ দেখছিল
মুখের প্রচ্ছদ ভেঙে একে একে বেরিয়ে পড়ছে অন্নপূর্ণা সাজ
অর্ধনগ্ন বুকে দাউ দাউ অগ্নির কুসুম,রক্তগোলাপের ক্ষত
নীল বিষে ফুলে ওঠা শিরা ও ধমনী

দ্রুত খুলে সমস্ত পোষাক
যে নামে ডেকেছে একদিন অতৃপ্ত প্রেমিক
অবিকল উড়ন্ত মেঘের সাথে দু'টি পায়রার পাশাপাশি
সহজ জলের মতো স্বচ্ছ অন্তিম গোধূলি নিয়ে ফিরে এসেছিল

ডাঙায় তাড়ানো জলচর,---
জোড়া স্তন থেকে ঝরে পড়া মুক্তোর দানার মতো ফোঁটা ফোঁটা জল
মোহগর্ভে টেনে নেবে,নদী
সমর্পণে ঢেলে দেবে সমুদ্রের খাঁড়ি মোহনায়

অরুন্তুদ ও অকাল বৈধব্যের বেলা পড়ে এল,আশ্চর্য্য রমণীদল
জল থেকে শেকড় নাড়িয়ে উঠে এস

সমূহ মৃত্যু

মুছে যাবার সাহস নেই
তাই রয়ে গেছি এখনও
পাপের অভ্যাসে কলুষমাখানো হাত ঢুকে যায় বুকের গোপণ গর্তে
বের করে আনে লুকানো অসংখ্য মাছি
গ্রীষ্মের দুপুর এত তিতকুটে,কালো
আমার লুটেরা করতল শরীরের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নিঃস্ব করে তুলে নেয়
সমস্ত সৌন্দর্য্য
বিন্যাসিত সিঁথি,কাজল,কুমকুমের টিপ
রিরংসায় রিরংসায় শরীর কাঁপিয়ে ফণা তুলছে গোক্ষুর সাপ
দ্বি-খন্ডিত জিহ্বা,দু'কানে দাক্ষীর দুল
নতজানু ভিক্ষা নয়,---প্রতিটি ছোবলে খুলে নেয় শরীরের ত্বক
মেদ গলে যায় প্রবল ঘর্ষণে
শেকড় সমেত ভালোবাসা উপড়ে ফেলেছিলাম
শেষ অশ্রুপাতে তবু গজিয়ে উঠেছে দূর্বাঘাস,উঠোনের ধারে

দেখো,শ্মশানের ছাই উড়ছে বাতাসে
চন্ডালের কলসে নেভে নি
প্রেতের তর্পণে অগ্নি  প্রেম ও সম্ভোগ মুছে ফেলে
দাবী করে সমূহ মৃত্যুর

মৃত মুখের আছাড়

পরাভূত শতাব্দীর ওপর ছড়ানো হাত
চোখে বিঁধে আছে বর্ষা
ত্রয়োদর্শীর অমাবশ্যায় কেঁপে উঠছে দূরের গ্রাম,বাঁশবন
ঘুমের ভেতর স্বপ্নস্নান নিতে সমুদ্রে নেমেছ
জল নেই
জলস্তম্ভগুলো খাঁড়া হয়ে আছে আকাশের দিকে

তবে কি এ রাত্রিময় অমাবশ্যার ভেতর
কালের আহত কাল ফণা তুলে নিশ্চুপ খুবলে নেবে মাথার মগজ
আলোর বিরুদ্ধ স্রোত
বিমূঢ়তা নিয়ে বসে আছি তীরে
অলস ভাসানে ভাসে বৈঠাহীন নৌকা

'কতটুকু মুক্তি পেলে জীবনের অর্থ বদলাবে'
সেদিন বোঝে নি এই ক্রীতদাস মুক্তি,স্বাধীনতার অর্থবোধক শব্দ
সূঁচের মতোন ঢুকে পড়েছিলাম বিবিধ ফাটলের মধ্য দিয়ে
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট তোমাকে ছুঁয়ে দেখি ঘরে শুকনো হলুদ ফুল

মরুশূণ্যতাকে ভরে দিতে গতিময় অথচ নিশ্চল
বালির উত্থানে অনাসক্ত সমকামী মানুষেরা
তীর্থে নেমেছে,মন্দিরে ঘন্টা বাজে

বহুদূরগামী স্রোতে মাধবীলতার গল্প ছিল
কিশোরীর সুগোল দু'হাতে ইট ভেঙে ভেঙে পড়ছিল দ্বিতীয় নির্মাণে

হাতুড়ি পেটার শব্দে মোহনায় মৃত মুখের আছাড়

মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

সাদা ফলকের অভিমান

শোকের আতসগড়া রাতগুলো চন্দ্রতাপে যখন আঙুল থেকে খুলে পড়ে,ভালোবাসা
আচ্ছন্ন বিলাপে সরে যায় আরও দক্ষিণ থেকে স্থির থেকে স্থিরতর সবুজ গুল্মেরর
আভাময় পথে নাটি তার পায়ে পায়ে হাঁটে,জলছবি নিয়ে প্রতিবিম্ব অবিচল ঋণে
বিশাল বাষ্পের মতো উঠে যায় পাহাড়ে-আকাশে।লবণাক্ত হৃদয়ের শিরা-উপশিরা
অথবা শুচিতা ধরে ফিরে গেছে গৈরিক গোধূলি।

আমি চিতার ওপর থেকে এমন মুহূর্তগুলো দুই হাতের অঙ্কুশে বিদ্ধ করে রাখি
রক্তাভ মঙ্গল মুখে,প্রাণী থেকে প্রাণীর ভেতরে,ঝলকিত মৃত্যুপথে মুদ্রার ভেতর,
পুষ্পপ্রসারণকালে দিনগুলো মানুষের দৃঢ়তটে ছত্রখান হয়ে গিয়েছিল আর
রাস্তায় দাঁড়িয়ে খোঁড়া ভিখারী জন্মান্ধ চোখে মেখেছিল অসামর্থ্য অভিমানের কুয়াশা।

করতল ভরে অভিশাপ,প্রত্যায়িত অপরাধের কতটা মাত্রা জেনে নিয়েছ,মানবী?
ঘৃণাভরে দেয়াল তুলেছ,ইস্পাতের।আগুন জ্বালিয়ে শরীরের প্রতিটি প্রত্যঙ্গ এবং
এর ভাঁজে ভাঁজে দেহের যে ক্ষয় তা আমার শেষ প্রতিশ্রুত ভালোবাসা।

শব্দের সন্ন্যাসে নীল বনপটভূমি এপিটাফহীন,
দুই এক ফোটা চন্দ্রতাপ মেখে নেয় দু'হাতে হরিশ ডোম,

মন্ত্রমুগ্ধ মৃত্যু পাশে ফেলে আমি ঘুমিয়ে থাকব,ফিরে আসার সময় হলে ডেকে নিও।

সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

পায়ে এসে পড়ছে যজ্ঞের কাঠ,মুখে কালপুরুষের ছায়া

আমাদের কখনো উৎসবে দেখা হবে না,সুচারু কারুকার্যময় ঝুলবারান্দায়
মালতী ফুলেরা দোল খায়
এমন আচ্ছন্ন ঘর জল পড়ে নষ্ট হয়
রাত্রিবেলার বিশ্বাস উবে যায় কর্পুরের মতো
আমার ধ্যানের তাপে গলে পড়ে সূর্যকণা,ইন্দ্রিয়স্বভাব

প্রসারিত মৃত্যুর ছায়ার নিচে জীবনের অন্তহীন উপত্যকা--
মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি
প্রতিকোষে আলো ও অন্ধকারের খেলা--শ্বাপদসুন্দর শ্যামলতা

চারদিক থেকে নেমে আসে বটের জটিল ঝুরি
পাখিরা উড়ছে,ভাঙা ডানায় রক্তের বিন্দু,--
সৌরতাপে ঝলসে গিয়েছে
জটায় বেঁধেছিলাম জলধারা
সব জল ছেড়ে একদিন রাত্রিবেলার নিঃস্বনে চলে যেতে চাই

পায়ে এসে পড়ছে যজ্ঞের কাঠ,মুখে কালপুরুষের ছায়া

অনুকম্পা

ভালোবেসে পুড়ে যাওয়া মুখের স্থিরচিত্রে
সমাসীন খুঁতো গুল্ম,তীক্ষ্ম কাঁটাগাছ পার হয়ে
এগিয়ে চলেছি যৌবনপ্রান্তিকে
প্রকৃত প্রলয় কালে দু'হাত বাড়িয়েছিলে
রক্তক্ষত,বিপন্নতা----
প্রস্তুতিবিহীন অনুকম্পা ছুঁড়ে তুলে নিয়েছ চাবুক
সপাটে বাতাসে শব্দ ওঠে আগুনের,স্ফুলিঙ্গের

ঠোঁটের আঘাত নিয়ে খাঁচার ময়না ডেকে উঠেছিল
'ধ্বংসের অতল থেকে বের হয়ে আসো,মূঢ়।'

আমরা শুনি নি
রৌদ্রাহত নির্মলতা ভেঙে লিখেছি ছায়ার প্রতিনাম
আজ সেই হাতে চকচকে ভিক্ষার এনামেলের বাটি

তোমার নিজের হাতে ভিক্ষে দেবে

মৃত গ্রহের কংকালসার জীবন

সন্দেহে সন্দেহে কেটেছিল দুপুরের পথ
নিঃঝুমতা খোলা-
বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাসে দুই হাতে মুঠো মুঠো রৌদ্রতাপ
যতখানি প্রয়োজন ছড়িয়ে দিয়েছে
নদী কি তার সমস্ত জল ধরে রাখে,রেখেছে কখনো

সমুদ্রের পথে নদীও নিঃশেষ হয়ে যায়

আমার নীরব রক্তপাত,স্থবিরতা
অস্পষ্ট জীবন,কালিমাখা ঘর---পরিধিবিকার বৃত্ত ঘুরে ঘুরে ফিরে আসা

বেঁচে থাকতে চেয়েছি মাথা তুলে জলের ওপর
অথচ প্রবাহমান ঢেউ ঢেকে দেয় অবয়ব
ডুবোপাথরের প্রসারণশীলতায় বেড়ে উঠছি

দিনের সমস্ত অপমান নিয়ে বসে আছি
রাত---সে ও একরাশ অপমান ঢেলে দেয় বিছানায়
আমার মাটির বাড়ি বজ্রাহতে পুড়ে খাক হয়ে আছে
দরোজা-জানালা বন্ধ,আলোবাতাসহীন এ ঘরে কেটে গেছে অর্ধেক জীবন

লোহার আরক,সীসা,গন্ধক মেশানো জল কুঁজো ভরে রাখি
যদি মাঝরাতে তৃষ্ণা পায়
জেগে ওঠে কবিতার প্রহর,গ্রহণ কাল

আমার নিমগ্ন হাতে উঠে আসে কবিতার বই
সূচিভেদ্য অন্ধকারে গেয়ে উঠি

আমি চাই নি এমন মৃত গ্রহের কংকালসার এ জীবন


আবহমান

মাটির অতল গর্তে আবাস গড়েছি
কেননা আমার বাবা-মা শেয়াল ছিল
মানুষেরা তাদের মেরেছে
লোকালয়ে এসে পড়েছিল বলে

চারিদিকে হাতছানি উচ্চাশা,লোভের
সারারাত জেগে জেগে দেয়াল গাঁথতে থাকি
সুরক্ষিত মনোজগৎ,তমোহীনতা,---

আমার বুকের ক্ষত পেকে টসটসে
হাতের চেটোয় নোংরা পুঁজ মুছে ফেলে
জলে নামি,ভেসে যাই,যেতে যেতে দেখিঃ

মাথার ওপর চিল পাক খায়
নীচে,কুকুরের শব
পিঠের ওপরে কাক ঠোকরাচ্ছে অন্ত্র

তুষের আগুন

যদি ফেরৎ দেবার প্রশ্ন আসে
যা নিয়েছি এতদিনে,---
আমার শোবার ঘরে খুব যত্নে আছে সে ছবিটা
মেহেদী রাঙানো হাত---আজও তেমনি জ্বলজ্বলে

আর আত্মলাঞ্জনার ক্ষত সমস্ত শরীরে
অথচ গলায় ঠিক সুর বাজে
উদগত শষ্পের মতোন কলুষমাখা এ হাত
বুকের উপান্ত বেয়ে আরও গভীরে....

দ্বিধা ও দ্বন্দ্বের লজ্জা ভেঙে বলেছিলাম,'বিদায়।'
অর্থাৎ তোমাকে নয় নিজেই নিজেকে ভাসিয়েছি জলস্রোতে

জল বাড়িয়ে দিয়েছে দাহ,ধিকিধিকি তুষের আগুন

শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

দ্বিতীয় নির্মাণ

কাঁশবন।বধির নৌকার সারি।অনিশ্চিত প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে ভূগোল ঘুরছে।
ওই দেখ,আকাশ কেমন ঝূঁকে আছে পৃথিবীর দিকে,শোনো,তার শ্বাসপতনের শব্দ।
রৌদ্র ও আবহমান নক্ষত্রের আবর্তনে গৈরিক দ্যুতির ব্যবধান।নির্মোহ বিশ্লেষে
প্রারম্ভিক প্রস্তুতি;যা অনিবার্য্য আমাদের দ্বিতীয় নির্মাণে যথাযথ ইঙ্গিতপালন।

অসাড় সমুদ্রচারী-যারা দ্বীপান্তরে খুঁজে নিয়েছিল দ্বিতীয় আবাস,প্রতিধ্বনিময়,
জোয়ার ভাটার দিকে,খাড়িমোহনার দিক থেকে উঠে এসেছিল সূর্যোদয়ের পথ,
সেই পথে মেঘ ও আলোর রেখা,বাঁশির ফুৎকার,ইদ্দিশ মন্ত্রের মতো ঘন জলরাশি।

ভাঙা ঢোলের আহ্লাদে অনেকান্ত জীবনের সর্বাস্তিক উপস্থিতি;শব্দময় আয়োজনে
তারাপতন মুহূর্ত,অবধারিতের বিকিরণশীল চলমানতা অর্থাৎ শ্বাশতিক।

নিয়মানুবর্ত যা অন্তত বর্ণমুখী-দ্বিতীয় নির্মাণে আত্মবৃত্ত ও একক পরিসীমা।

সমবেত পাঠে পাহাড়ের ঢালে এসে মিশে গিয়েছে আকাশছোঁয়া পদপ্রাতে,প্রতিবিন্দু
নিয়ে জ্বলে ওঠে অন্ধকারের মশাল,উর্ধ্বমুখী শিখা ঢেকে ফেলে প্রতীক্ষার গুহামুখ।

আমার বুকের ক্ষত ঢেকে আছে প্রথম বিশ্বাসে অপুষ্পিত ফুল,শুকনো পথের ধূলো
জমিয়ে রেখেছি।যাকে দেবো ভেবেছিলামঃডানায় রক্তদাগ নিয়ে উড়ে গেছে।এই তীরে
চাঁপা পড়ে আছে সজল সময়।ডানার সীমানা নেই।যতটূকু উড়েছিল ততটুকু

নিজস্ব আকাশ।আত্মঘাতকামী পাখিরা ঝাপিয়ে পড়ে আর আদিগন্ত মাটি ভরে ওঠে
এঁটেল মাংসের গন্ধে।মুখগুলি চেনা যায় নেশায় বিকল চোখ,ধূপচ্ছায়া,ধূনিজ্বালা
ধূপের মতোন উড়ে যায় দীর্ঘরাত।সমুদ্রের রঙে মসৃণ ছিল না ভালোবাসা তবু
প্রথম বিশ্বাস হাতে তুলে দেবো দ্বিতীয় নির্মাণ শেষ হলে।

মাটির প্রতিমা

জল ব্যথা সহ্য করতে পারে নি বলে ডাঙায় ফিরেছি
পূর্বজন্ম থেকে অন্ধত্ব ও অপেক্ষার গানে অঘোর চৈতন্যোদয়
প্রাণবৃক্ষ,কূটিল লিখন,বীজগণিতের দ্বি-ঘাত সমীকরণ,--
আলো ও জলের মাঝখানে একটুকরো বারান্দা

খসে গেছে মাটির বানানো মুখ,ঠেস দিয়ে রাখা খড়দেহ
ঘুমের তলায় সারাক্ষন তুলে ধরি জলকণা,বাষ্প
যেন শুষে নেয় ওই শুকনো শরীর
জাদুর শেকড়,মরা ইঁদুরের দাঁত,ময়ূরের চোখ জড়ো করেছি সুড়ঙ্গে
প্রসূন মগজে ধরে রাখি কালো মুক্তা,ভল্লুকের চামড়া ও অপুষ্পিত ফুল
এবং তার চারপাশ ঘিরেছি দেয়ালে

আমার দু'হাতে ছিল শিল্পের শিল্পিত দণ্ড

জ্যোৎস্না ভেবে যখনই ঠোঁট ছূঁতে গিয়েছি অমনি
আঙুলের ফাঁক গলে খসে পড়ে মাটির প্রতিমা আর
এক অক্ষৌহিনী সৌরতাপ এসে শূণ্যে ছুঁড়ে ফেলেছ আমাকে

দরোজাবিহীন ভাঙা সিঁড়িপথে লতানো গাছের ডালে আমি শূণ্যে ঝুলে থাকি

সজল শেকড়

জল ও আলোর মাঝামাঝি শুয়েছিলাম,বুকে,---
পিতামহের প্রদীপজোড়া দুঃখ
সবুজের সবটুকু আন্তঃসার পায়ের তলায় মেখে
মন্ডপের পাশ ঘেঁষে চলে গেল তীর্থযাত্রীদল

সমস্ত শরীরে অবসাদ নিয়ে উঠে আসি ভোরবেলা
দিন ও রাতের পঙ্গু পরিশ্রমের তরল আলো,খালপারে
জলে ভেসে যাব কবে
এলোমেলো ডাঙার নৌকায় বসে চেয়ে দেখি
দক্ষিণমুখো স্রোতের দিকে
করতলে সূর্যরেখা,চোখে প্রাত্যহিক তিস্তা

একেকদিন ব্রাক্ষমুহূর্তে ভেজা বাকলের শ্বাসে মনে হয় মুছে যাই
শেফালীগুচ্ছের গন্ধে
মাথার ওপর দিয়ে
'মৃত্যু নেই,মৃত্যু নেই।'বলে উড়ে যায় সাদা বক
খসে পড়া পালকে,ডানায় রক্তক্ষত

রুপালী ডানার মতো আমার স্বগত সুরে ঝরে পড়ে
মেঘ রৌদ্র,ঢেকে ফেলে আলোকবর্ষের গতিপথ
দু'ধারে গাছের স্নেহশাখা---বাকলে বাকলে ঘূণ
পাতায় সবুজ শিরা-উপশিরা
ম্লান ইশারায় অনাদরের ভেতর বাসাহীন শরীরের সজল শেকড়

আগুনের প্রতিহিংসা

নদীর ঐ তীরে আগুন জ্বলছে
পুড়ে যাচ্ছে কার স্বপ্নমাখা বাড়ীঘর
কাছে গিয়ে দেখি ঝলসানো ভিটেমাটি,---ওপরে আগুন
পুরোপুরি নেভেনি,উড়ছে জলকণা,উঠোনে শুকোনো রক্ত,
তোবড়ানো ঘট,এনামেলের সানকি
খুনখুনে বুড়ি কাঁদছে---মাথার চুলে জট

পাথর,না প্রতিহিংসা---আগুন বোঝে না
ধিকিধিকি ছাই নাচে আধপোড়া দেহ ঘিরে;
যে সমস্ত নারী ও পুরুষ
শুয়ে আছে শীতল জলের ধারে