পূর্ণচাঁদের জ্যোৎস্নায় ভরে ছিল চারপাশ নদীর দু'কূল
ছাপিয়ে উন্মত বাঁধভাঙ্গা স্রোতের মতোন জ্যোৎস্না
প্লাবিত হচ্ছিল গোটা উপত্যকা জুড়ে
গাছের সবুজ পাতা থেকে টুপটাপ ঝরে পড়ছিল জ্যোৎস্না
কুয়াশার স্তব্ধতায় রাতজাগা পাখির ডানায়
লেগে থাকা ভেজা জ্যোৎস্না চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছিল
চাপ চাপ অন্ধকার গাছের খোড়লে,বনভূমে
নিরুপায় আত্ম-সমর্পণে ভেসে যাচ্ছিল প্রবল
চান্দ্র জ্যোৎস্নার জোয়ারে;দুর্বাঘাসের নরোম ডগা
ছুয়ে যাচ্ছিল জ্যোৎস্নার প্রবাহিত স্রোতে
পাহাড়ের চুঁড়া থেকে তরল জ্যোৎস্নার তীব্র স্রোত
ভেঙ্গে পড়ছিল কঠিন পাথর
পরিপুষ্ট ফসলের সোনালী ঔদ্ধত্য ম্লান অপার্থিব জ্যোৎস্নালোক
অবিরল ধারা
বয়ে যাচ্ছিল লেকের স্বচ্ছ,স্থির,টলটলে জলের ওপর
রুপোলী জ্যোৎস্নায় মনে হচ্ছিল দৃষ্টিনন্দন দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত
এক নৈসর্গিক
সৌন্দর্য্যের প্রাচুর্যতা নিসর্গের নিস্তব্ধতা নেমে
এসেছিলো গোটা পৃথিবীতে
একফোঁটা মেঘ ছিল না আকাশে ঝিরিঝিরি বাউল বাতাসে
ফুলেল নির্যাস ভেসে আসছিল আর
পেছন পেছন তাড়া করছিলো নিরন্তর কাল
দ্রুতগামী অশ্বের মতোন
ধাতব ঝালর দেয়া ঊষর পৃথিবী প্রভাতিক
স্নিগ্ধ শিশিরের মতো ঝলমল করছিলো রুপোলী জ্যোৎস্না
সে এক অপূর্ব, ঐশ্বরিক রাত ছিলো
দুগ্ধফেননিভ,শুভ্র শাড়ীতে রাজেন্দ্রানীর অহংকারে গর্বোদ্ধত
সুষমামন্ডিত
জ্যোৎস্নায় পায়ের পাতা ডুবে যাচ্ছিল লেকের তীরে
তোমার সলীল পদচিহ্ন আলপনা আঁকছিল
ফিনিক জ্যোৎস্নার বুকে;ঠোঁটে ছিল মৃদ্যু সঙ্গীতের
মোহময়ী এক সুর;অপূর্ব আবহে মনে হচ্ছিল ঐন্দ্রজালিক
এ সুরের সৃষ্টি
পৃথিবীতে নয়,অন্য কোন এক ভূবনে,স্বর্গীয়
আলোর দ্যুতিতে ভরে ছিল প্রগাঢ় চোখের ভাষা
এই উন্মন জ্যোৎস্নায় টেনে নেবার প্রবল আকর্ষণ চোখে
খেলে যাচ্ছিল তোমার আর কামনার বাষ্পগুলো
গলে যাচ্ছিল জ্যোৎস্নার কোমল আলোয়
ব্রীড়াময় ভঙ্গিমায় সর্পিনীর মতো
জৈবিক তাড়না স্পর্শ করছিলো স্বণনে,স্পন্দিত
মধুক্ষরা কন্ঠস্বরে দেহের জৈবিক ঘ্রাণে আলিঙ্গনাবদ্ধ
মাদকতায় আবিষ্ট পরস্পর নৈতিকতা হারানোর বোধে
কামতপ্ত ঠোঁটে এঁকে দেই চুম্বনের উঁল্কি;বিস্ফোরিত দেহে
শরীরের কোষে কোষে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি জলধারার মতন
চির বহমান
সময়ের স্রোতে ভেসে জ্যোৎস্নালোকের এ রাত হয়
মৈথনিক ঘাসের শয্যায়
তৃপ্ত হয় আমাদের নগ্নদেহ উদার,উন্মুক্ত
অপরুপ সাজের প্রকৃতি জ্যোৎস্নার চাদরে ঢেকে
দেয়;সমস্ত শরীর অবসাদে ভরে যায়। নীরব,নিঃস্তব্ধ শান্তি
স্বাপ্নিক প্রহরে
তারপরের প্রহর গুলো বিষাদময়,কর্দমাক্ততা
জ্যোৎস্না রাতগুলো ম্লান,আলোহীন,ম্রিয়মান ধোয়াটে,ফ্যাকাশে
দিন,সপ্তাহ,মাসান্তে একে একে জলাধার শুকিয়ে নিঃশেষ
হয়ে গেছে;নির্জনতা ঢেকে দিলো আমার জীবন
মৃতুর অতল তলে অনন্তঘুমে বিভোর তুমি
শান্তি,চির শান্তির আশায়
গাঢ়,কালো অন্ধকার নিঃস্তব্ধ কবরে
তোমার প্রসূন দেহ আজ মিশে আছে
স্মৃতির ভাঁড়ারে তুমি আজ যাবজ্জীবন মেয়াদে
আসন গেড়েছো মগজের কোষে কোষে,শরীরের
শিরা-উপশিরা ব্যেপে নিস্তরঙ্গ পদচারনায়
চির সতেজ,উচ্ছল প্রাণবন্ত এক
চঞ্চলা ময়ূরী য্যানো চন্দ্রালোকিত জ্যোৎস্নায় দেহের গভীরে
প্রজনন অঞ্চলের উর্বর প্রদেশে
শুক্রাণুর অবাধ প্রপাতে পরিপূর্ণ হয়েছিলো
আমাদের প্রেম আর সেই প্রেমের ফসল নবজাতকের
চোখে দেখিঃআজো তুমি চির যৌবনবতী,নিভাঁজ
বলিরেখাহীন মুখচ্ছটা,মাদকতাময় চোখ
রক্তক্ষরিত হৃদয়ে অবসিত আমি
ক্ষয়াটে,ফ্যাকাসে,ক্ষীণ চোখে নিরন্তর
সময়ের চোরা স্রোতে সাঁতরাতে থাকি
২০.০৫.১১
উত্তরা,ঢাকা।