রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫
স্মৃতি,মৃদুজলঢেউ
চিনাংশুকে ঢাকা এইসব বনস্থলী,রুপালী জলের প্রভা,-
দেখেছ আগুন,বন্যপাতা কিভাবে পুড়ছে
শিশিরের জল আর মেঘের কুয়াশা
আধখানা মুখ,আধখানা চাঁদ জেগে আছে
ছায়াময় বাহিত প্রপাত
এতোবেশী অন্ধকার
ঝরে যায় সবমুখ,স্মৃতি,মৃদুজলঢেউ
মধ্যরাতে নিজেকে ছেড়ে এসেছি;একেলা পথ - অনিশ্চিত আর বার্তাবহ
শোক,তাপ আর বিদেহ,-'জয় হোক' কল্যাণী তোমার
পথে পথে আশীর্বাদী গান গেয়ে যাচ্ছি
আমরা অবুঝ তবুও ভালোবাসা পায়ে পায়ে হাঁটে
কালের মন্দিরা
অজস্রবার গিয়েছিলাম সমুদ্রের তীরে
সূর্যোদয়,সূর্যাস্ত,গোধূলী আর জ্যোৎস্নার শিখরে ভেসে
প্রতিবার ফিরতে হয়েছে
বিকৃত মুখের ফুল ও শূন্যের মাঝামাঝি
চিরন্তন স্বদেশ ও সন্ন্যাসের সজল উন্মেষে
জটায় জ্বলছে স্বাভিমান
প্রতিবার ফিরে আসি,ফিরতে হয়েছে - পাঁজরের হাড়ে বেজে ওঠে
স্ব-নির্মিত কালের মন্দিরা
কবির অভিশাপ
সময় ও দূরত্বের দীর্ঘ রেখায় দ্বি-ঘাত সমীকরণের দূরহ সকেত
প্রতিটি বিচ্ছেদ ঘিরে পতঙ্গের আনাগোনা
এই ব্যর্থ ভূ-মন্ডল,প্রাণের উন্মেষ এবং প্রণয়ের চিহ্ন ধরে
যত আঁক,স্থাপনা,কোকিলভাষ্য,---
অনাথ দেবদূতের মতো ভিক্ষাবাটি পেতেছি;বিপথে
জাতকূলীনের ছায়া - রাত নিশীথের স্নান শেষে তত্ত্ব-বিনির্মাণ
কবির অভিশাপের ছায়া এত বেশী গাঢ় যে অবলীলায়
একদিন সমস্ত গদ্যশহর মিশে যাবে
সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৫
নিহিত বর্ণমালা
আমাদের ঘর নেই,ভিটে নেই
সাবেক ভিটেতে দাউদাউ চিমনি জ্বলছে - ক্ষুধা এবং যৌনতার
আমাদের মেয়ে ও স্ত্রীলোকেদের শহরের বাবুরা তাদের সাথে করে নিয়ে গেছে
শহরের হারেমে এখনও কত ঘর খালি পড়ে আছে
রতিপ্রস্তুতির গর্জনে প্রতিটি রাত ভরে ওঠে অবৈধ সঙ্গমলোভে
একেকটি চুম্বনের শব্দে শহররক্ষার দেয়ালে ভিত কেঁপে ওঠে আর
ঐ দিকে নৈশপ্রহরী হেঁকে যায়,'সাবধান।'
যৌনতায় দুলে ওঠে শহর - নগরপিতা বার বার হিসেব কষছে
সাধারণ নাগরিক এবং বারবণিতার সমানুপাতিক সাংখ্যের আধিক্যে
সমর্থনের সুষম ভারসাম্য,জন্মনিয়ন্ত্রণ,পয়ঃনিষ্কাষন
শুঁড়িখানায় এখন আর মাতলামি নেই
বরঞ্চ বেশ্যাপল্লীর পথে অস্থি ও জীবাশ্মেভরা অন্ধকারের ভেতর
দৈবপ্রজনন,কটুগন্ধা যোনীর অনার্যা ঈশ্বরীর আর্তনাদ - নৃত্যরতা বাঈজী ও
বেশ্যার কিশোরীকন্যা - ওদের এখন কোন মৌলিক উৎসব নেই
চঞ্চল কীট ও পতঙ্গের মতো শস্যদর্শনের স্মৃতি আছে
প্রত্যেক অনামী ঠোঁট ও কপালে অজস্র যৌনপ্রহার
একেকটি মাতালের আলিঙ্গনে শরীরের লোভনীয় বাঁকে
ফুটে ওঠে আলোরেখা,চুম্বঞ্চিত্র,নিহিত বর্ণমালা
শূণ্যের বিরোধী
আমরা সবাই আজ শূণ্যের বিরোধী
অপূর্ণ শূণ্যতা ম্লান ইশারায় ছিঁড়ে নেয়
বুকের ভেতর চুপ করে বসে থাকা
দুঃখ ও তফসীলি বেদনা
মুখের প্রচ্ছদ এমনই সবুজ - এত যে অনাদর তবু
প্রতিদিনের পুণর্বাসনে সজীব সঞ্চার
পটভূমিকায় সামুদ্রিক ঝড় ও বাতাস
ফুলতোলা সকালের পথে অকাল বোধন
সনাতনী বলিদান
মৌল চাহিদা
আমার সমস্ত দুঃস্বপ্নের ভেতর আশ্রয় নেয় বিষুব-শূণ্যতা
নিঃশেষিত খাদ্য ও পানীয়ে - আমাদের যুগল আত্মহত্যার জ্বলজ্বলে স্মৃতি
কুয়াশামাখা সকালে শেষ যে চিঠিটি লেখা হয়েছিল;
তা কি ডাকবাক্সে ফেলেছ
রোদের ভেতর সেইসব প্রশ্নেরা অস্থিরতায় কিলবিল করছিল
আমাদের মৌল চাহিদাগুলো দিনকে দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে
সম্মিলিত বোঝাপড়া
একেলা নদীর তীর।ঘন সূর্য্যাস্ত।তোমরা পথ ভুল করে
এইখানে এসে দাঁড়িয়েছ?কাশবনের ভেতর আলপথ।
তো্মাদের অমোঘ মুঠিতে গোধূলির পাকা রঙ।সমস্ত সন্ধ্যাবেলা
ঝরে পড়ে - বিচ্ছুরণে মায়াবী মমতা?
গম্ভীর নিঃশ্বাসে বের হয়ে আসে রাত্রিবেলার বাদুড়
কৌম অন্ধকারের ভেতর দু'জনের লবণাক্ত হৃদয়।যুগল আত্মহত্যা এবং
তারপরের মুহূর্তে চিতা জ্বলে ওঠে।জলের কিনার ঘেঁষে
পড়ে থাকে সম্মিলিত বোঝাপড়া।
নৈশবিজ্ঞপ্তি
মাঝরাতের প্রহরে একেকটি সমুদ্রঝড় রমণীর বুকের ভেতর
তার অন্তর্বাস ভেদ করে তাকে পাহাড়ের উচ্চতায় নিয়ে যায় আর
ফ্লুরোসেন্ট বাল্বের আলোয় আমি নিমগ্ন তাকিয়ে দেখিঃ
তার শরীরের থেকে তারা খসে পড়ার মতোন একে একে
শাড়ী,শায়া,বক্ষবন্ধনী,ব্লাউজ এবং শেষ সুতোটির অন্তর্ধানে
কী শৈল্পিক নগ্নদেহ চোখের সামনে ভেসে ওঠে
রক্তের উন্মাদনায় নগ্ন দেবী প্রতিমার পায়ের তলায় পড়ে থাকি
আমার গোলাপী জিহ্বা পায়ের নখ ও পায়ের পাতা,গোঁড়ালি
হাঁটু,উরুসন্ধি থেকে মসৃন পেট ও নাভী,ভরাট স্তন ও গলদেশ,ওষ্ঠ থেকে....
ক্রমাগত একই রকম,এইভাবে এইভাবে
প্রতিরাতে আমার শোবার ঘরে অভিনীত হতে থাকে শরীরী প্রতিভা
আঙুলের নখে লুকানো আয়না - নৈশবিজ্ঞপ্তি এখানে থেমে থাকে
শোক ও শোকাশ্রু
শোক থেকে শোকাশ্রু ও শোক সঙ্গীতের সুরে
তারা ডোবা দেখেছিল মেয়ে - ঐ দিগন্তে তারা খসে পড়ে!
শত বছরের আগে এবং পরে
আকাশে আকাশ ভরা তারা - কত লোক ওপারের পথে গিয়েছিল
গত শতাব্দীতে মারী ও মড়কে যারা গ্রামছেড়ে গিয়েছিল
তাদের উত্তর পুরুষেরা কোথায়,কেমন আছে
এই শতাব্দীতে গান থেমে আছে
মরা লোকালয়ে চাঁদ জ্বলে
চকোর পাখিরা ফিরে আসছে ঐ
ঊনিশ এবং রক্তমাখানো নখের জলছাপ
অনতিদূরে গমের ক্ষেত,সমস্ত রাতের স্বপ্ন জ্বলে -
নবআবিষ্কৃত শমী বৃক্ষের তলায় উদাসীন বসে আছি
ভুলে গেছি প্রার্থনার মন্ত্র,সূর্যস্তব -
এবারের শরতে কেবল মৃত্যুবোধ জেগে ওঠে
মৃত্যুর দেবতা এসে লিখে গেছেঃ
সাল আনুমানিক ঊনিশ কিংবা তার পরের হেমন্তে...
সারি সারি চিতার আগুন - খবরের পাতা ভরে আসে দুঃসংবাদ
আগুন ও ধোঁয়া,ধোঁয়া ও আগুন
এতো মৃত্যু কাদের কল্যাণে
দুর্মূল্য পেট্রোল বোঝে না নিজের সক্ষমতা
মসজিদ,মন্দির ও গীর্জায় পূণ্যার্থীর ভীড়ের ভেতর কেবল একটি চোখ জ্বলে উঠেছিল
বান্ধবের মৃত্যু ও সহমরণে - তহবিল সম্ভাবনাহীন এবং
ধর্পোম ও তীর্থশালার পোড়া ইটে আঁকা ঊনিশ এবং রক্তমাখানো নখের জলছাপ
সীতার মতোন পূত ও পবিত্র....
রাত্রির পাথর ভেঙে বেশ্যাপারার বিপথে একসাথে ধর্ম ও কবিতা
মদে নেশাচ্ছন্ন হয়েছিল -
হে আমার পিতৃপুরুষেরা
কেবল জলের অনুষঙ্গে ভেসে গেলে
রক্তবর্ণ মদ,নখরাঘাতে ক্ষত-বিক্ষত গণিকার স্তন
থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরে - তা মদের চেয়েও স্বাদু
ঠান্ডা পানীয়ের চেয়েও কোমল ও মিষ্টি
গ্রাম্য কুমারীর মাংসে যারা তৃপ্ত হয়েছিল সেইসব কবি ও পূজারী
আজ দীক্ষা দেবে - বেশ্যারা প্রস্তুত
অগ্নিস্নানে সীতার মতোন পূত ও পবিত্র....
উদ্ভিদ,প্রাণী,পতঙ্গ ও ঢেউ
প্রেমিকাকে বন্ধ্যা করবার ক্ষমতা নিয়েই চলে গেল
যতদিন বেঁচে ছিল -চোখে বিহ্বলতা নিয়ে
নারী ও নদীর মুখোমুখি আনমনে প্রশ্ন করেছিলঃ
তোমরা পেছনেকোন ঘর ভাসিয়ে এসেছ
অগণন মানবযোনী পরিভ্রমণ শেষে কবি বসেছিলেন প্রান্তরে
তোমাদের জন্ম হয়েছিল কোন সালে
তোমরা কি প্রতিবেশীদের খাবারে বিষ মিশিয়েছিলে অথবা
ঘরে আগুন - ক্ষেতের আল কেটে দিয়েছিলে
ঘন্টা বাজছে ঐ,গীর্জাঘরে সামগান
মাতা মেরী,তোমার সন্তানদের রক্ষা করো
শহর,নগর আর বন্দরের বাতাসে মানুষপোড়া ছাই ভাসছে - রঙহীন সূর্যোদয়ে
আতর ও লোবানের ঘ্রাণ
ভাঙা চারাগাছে কাঠি বেঁধে ভূগোল ঘুরছে
দেখো,ধ্বংসের ভেতর মাথা তুলছে উদ্ভিদ,প্রাণী,পতঙ্গ ও ঢেউ
সময় ও পরিপার্শ্ব
আমাকে রাত্রিরপথে ঠেলে দিয়েছ,একেলা
আমি দশদিকে হাত উঁচিয়েছি -
পথ আমাকে নেয় নি
আমাকে চিনেছে ঘন বিনুনী শুণ্যতা,অন্ধকার -
পৃথিবী নামক এই গ্রহ তার বায়বীয় জালে আটকে রেখেছে
সময় ও পরিপার্শ্ব
ঝমঝম বাজছে রুপার মল
আমার বিলীয়মান বালি,অবিমৃশ্য বালি -
চোখের পাতায় খাল
খালের দু'ধারে বাবলার বন,হিজল গাছের সারি
সবুজের অবাধ্ন স্মৃতির মধ্যে নৌকা-খালের সংঘাত বেজে ওঠে
শরীরের চতুরঙ্গে ভ্রুকূটির শাষন-নিখাত পাতালের ছায়া
যেদিকে তাকাই - বেজে ওঠে শত হাজার কাঠির ঢাক
মাটিতে শোয়ানীও নৌকা- কত আর জল ধরে রাখে
উত্থান ও প্রণতির মাঝখানে পড়ে ছিল আমাদের বোঝাপড়া
ভুল কিংবা সঠিক - হিসেব করি নি কখনো
কেবল শুনেছিলাম তোমার পায়ের শব্দ
ঝমঝম বাজছে,বেজেই চলেছে রুপার মল
রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৫
ঘরের বিষাদ
গৈরিক সন্ন্যাসে ডুবে আছে সমস্ত পাহাড়ী পথ তবু
আমি পথে নেমেছি - ভেবেছি সামঞ্জস্য পরিণতি অথবা সজীব সমাধান
যেদিকে তাকাই - শুধুই মৃত্যুর গান
পেছনে যে ঘর - তাতে ক্ষুধা
সামনে যে পথ - তা জ্বলছে
ডানে কবরখানা,বাঁইয়ের পথে খানা-খন্দক-গহ্বর
আমি দুই হাত শূন্যে তুলেছি- আকাশ নেমে আসে মাথার ওপর
ভুল সময়ে পথেরমাঝখানে এসে দাঁরিয়েছি
বন্ধকী এ জীবনের দেনা পথে পথে কেটে যাবে
অতীতের ধারাপাত- যেইখানে ছিল...সেভাবেই আজও আছে
ঘরের বিষাদ একাকার হয়ে মিশে আছে পথের রেখায়
পাঁজর নির্মিত দাঁড়
সকালের সমুদ্রবাতাসে
এক দূরন্ত গাঙচিল-মুখে যার মাছের স্ফটিকঅমাংশঃ
ক্রমাগত দূরে উড়ে যায়
রাতের জোয়ারে দূর থেকে দেখা যায়
নক্ষত্রহীন আলোকস্তম্ভ - আলোকগ্রস্ত,অর্ধেকঢাকা
গাঙচিল ও রাতের ফসফরাসে
আমি কেবল একাকী খুলে ফেলি পাঁজর নির্মিত দাঁড়
মুক্তি
দক্ষিণাবর্ত শঙ্খের থেকে সাধকের ইড়া,
পিঙ্গলায় ওঁকার ধ্বনির স্বর,___
ত্রেতা,দ্বাপর যুগের মুনি ঋষিরা মহাকলিতে মিশে আছে
কৈলাস,মানস সরোবর,অমরনাথ,গাঙ্গোত্রী
এতো ভীড় মানুষের-কুলকুন্ডলিনী খুলে যায়
জয় শিবশম্ভু
'গৃহী মানুষের মুক্তি নেই' বলে
গৌতমবুদ্ধ খড়গপুর ষ্টেশনের প্ল্যাটফর্মে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে
প্রিয় সব নামের অক্ষর
তোমার নিজের হাতে এক এক করে বুকের পাঁজরগুলো খুলে নাও
তারপর হৃৎপিন্ড উপড়ে দেখো
ভালোবাসার সু-বিন্ন্যাসিত স্তরেকেমন সাজানো প্রিয় সব নামের অক্ষর
পরাভব
সুখ এবং দুঃখ।হলুদ পূর্ণিমা।
ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি
যা-কিছু প্রবল দূর্বিপাকে টেনে নিয়েছিলেঃ
রেল-সাঁকো
অর্ধেক ডফুবন্ত নৌকা
কবিতার নিষ্ফলতা
অন্ধত্ব ও বধিরতার সঙ্গীতে-
সমুদ্তোর অথবা নদী মোহনার বুকে তোমার দু'চোখ
ফুটে বেরিয়েছিল অবিশ্বাসের ঝড়।যা কিছু প্রত্যক্ষ-
কিংবা মনগড়া - চক্ষ্মুষ্মান পুরুষের বাচালতা নিয়ে
আমি কিছুই দেখি নি শুধু বুঝতে চেয়েছিলামঃ
একজীবনের পরাভব।
ক্লান্তি ও শ্রমবিনোদনের কথা মনে আছে?
আমার লেখার নীল খাতা ভরে গেছে
অভিজ্ঞানলব্বধ কবিতা ও গানে।
একদিন পড়ে দেখো।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)