Powered By Blogger

মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১০

অহংকার

অশুভ ও অকল্যাণের মাঝেও কবিরা মঙ্গলের আলোকবর্তিকা পৌছে দেন,
শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে কবিরাই সমস্বরে জ্বালাময়ী প্রতিবাদ জানাতে পারেন,
পারেন বিনা দ্বিধায় ছুড়ে ফেলতে লোভ,খ্যাতি ও রাজকীয় খেতাব
মৃত্যুর মুখোমুখি কবিরাই গেয়ে উঠতে পারেন জীবনের জয়গান

কবির দুর্বিনীত অহংকারের কাছে প্লেটো ছিলেন খুব অসহায়
কবির সীমাহীন কল্পনার জগতে তাঁর কল্পিত দার্শনিক রাষ্ট্রটি ছিল
নিতান্তই ক্ষুদ্র,অকিঞ্চিকরতাই ঈর্ষাবশতঃ  মহান এ দার্শনিক তাঁর 
রাষ্ট্র থেকে সমস্ত কবিকে ফুল-চন্দন দিয়ে নির্বাসনে দিয়েছিলেন

ঈশ্বর প্রাণ সৃষ্টি করেন আর ঈশ্বরের সমান অহংকারের অংশীদারিত্ব
নিয়েই কবিরা কবিতায় প্রাণ সঞ্চার করেন।কবিরা ঈশ্বর সমতুল্য!

'জীবনানন্দ'কে নিয়ে কিছু কথা ।

জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখলেন,"তোমার কবিতা চিত্ররুপময়;সেখানে তাকিয়ে দেখার আনন্দ আছে।"বুদ্ধদেব বসু লিখলেন,"ছবি আকঁতে তার অসাধারণ নিপুণতা,তার ছবিগুলো শুধু দৃশ্যের নয়,বিশেষভাবে গন্ধের ও স্পর্শের।"আব্দুল মান্নান সৈ্যদের মতে,"শুধু উত্তররৈখিক আধুনিক বাংলা কবিতার নয়__বৃহত্তর যে বাংলা কবিতার কাল (ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দী),সেই কালেরও একজন প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশ।"বাংলা কবিতার একটি সার্বভৌম অধ্যায়__ জীবনানন্দ দাশ।হাজার বছরের বাংলা কবিতাকে তিনি দিয়েছেন এক মহাকালিক ব্যঞ্জনা’__বলেচ্ছেন আবু হাসান শাহরিয়ার।


বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের পর জীবনানন্দ দাশকে নিয়েই লেখালিখি ও গবেষণার পরিমাণ সর্বাধিক।বাংলা কবিতার ইতিহাস জীবনানন্দ দাশ ছাড়া লেখা যাবে না।বাংলা কবিতায় জীবনানন্দ দাশ একটি মজবুত স্তম্ভ। জীবনানন্দ তাঁর কাব্য-সাহিত্যকে সাজিয়ছেন রোদ্দুরের দিকচিহ্নের মতোন।তাঁর অস্তিত্ব বাংলা কবিতায় দিগন্তরেখার মতোন সূচনা আছে,কিন্তু শেষ নেই। তাঁর কবিতায় ধীর,গভীরময়তা পাঠককে নিয়ে যায় অনেক দূরে ( হয়তোবা........আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরেঃবনলতা সেন)।তাঁর কবিতায় রেখে যাওয়া গভীর আবেগ বাংলা কবিতার ইতিহাসে বিরল।আবেগের তীব্র তীর আর হৃদয় খুঁড়ে জেগে ওঠা বেদনা প্রকাশের ভাব ও ভাষা বাংলা কবিতায় তুলনারহিত
(পৃথিবীর রাঙ্গা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে;
আবার তাহারে কেন ডেকে আনো?
কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!ঃহায় চিল............................................)।
কোনো এক গবেষক বলেছিলেন,’ জীবনানন্দ দাশ শুধু নির্জনতা আর ধূসরতার কবি নন,তিনি স্তিতধী সময়-সচেতন কবিপ্রাণ,তিমিরহন্তা আলোকরশ্মিমালা।‘


জীবনানন্দের কাছে কবিতা ছিলো অন্যরকম।শব্দ চয়ন ও ভাষার ব্যবহারে নির্বাক প্রকৃতি ও সবাক হয়ে উঠেছে তাঁর কবিতায়।তিনি বাংলা কবিতার অকর্ষিত ভূমি চাষ করে অনেক ফসল তুলে দিয়ে গ্যাছেন বাংলা কবিতার গোলায়।তাঁর কবিতায় অনেকবার স্থান পেয়েছে মশা,মাছি,ব্যাঙ,পেঁচা,ইদুর, শেয়াল ও ঘাসফড়িং; যা অন্য কবির কবিতায় বিরল।তিনি কীটের দুঃখো অনুভব করেছেন (...._কীটের বুকেতে যেই ব্যাথা জাগে আমি সে বেদনা পাই;নিখিল আমার ভাই),অনুভব করছেন যে নক্ষত্রেরা মরে গিয়েছে তার বুকের হিম (....যে-নক্ষত্র মরে যায়,তাহার বুকের শীত/লাগিতেছে আমার শরীরে,ঃনির্জন স্বাক্ষর)।তিনি বাংলা ভাষার একমাত্র কবি যিনি বাতাসের রঙ সবুজ (........ঘাসের উপর দিয়ে ভেসে যায় সবুজ বাতাসঃবিভিন্ন কোরাস),মধ্যরাতের রঙ নীল (রৌদ্র ঝিলমিল,/ঊষার আকাশ,মধ্যনিশীথের নীলঃনীলিমা) দেখেছেন।দেখেছেন রৌদ্রের অন্ধকার,পেয়েছেন শিশিরের ঘ্রাণ।


কবির জীবদ্দশায় তিনি সবচে’ নির্জন,অন্ধকারের নির্জন কবি হিশেবে অভিহিত হো’য়েছিলেন।অস্তিত্বের যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট,যান্ত্রিক-যন্ত্রণায় পিষ্ট,মৃতু যন্ত্রণায় আড়ষ্ট এবং মানসিক ও আত্মিক সংকটে জর্জরিত কবি জীবনানন্দ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ,পারিবারিক ও সামাজিক,রাষ্ট্রিক এমনকি বৈশ্বিক পরিমন্ডলের কোনো কিছুকেই তিনি অবলম্বন করতে পারেন নি। প্রেম-নারী-প্রকৃতি-ইতিহাস কিংবা যুগের জটিলতার ক্লেদাক্ত চিত্র আকঁতে গিয়ে সর্বত্রি তিনি নৈঃসঙ্গ ও মর্মবিদারী যন্ত্রণার কথা অকপটে ফুটিয়ে তুলেছেন।ব্যক্তিজীবনের সীমাহীন দুর্ভোগ ও যুগমানসের জটিলতায় তিনি মুষড়ে পড়েছিলেন,নিমজ্জিত হয়েছিলেন হতাশা,ক্লান্তি,নশ্য,বিছিন্নতা আর একাকীত্বের গভীরে। জীবনানন্দের কবিতায় ফুতে উঠেছে অনাশ্রয়ী পৃথিবীর কথা।বিনির্মাণ করেছেন নৈঃসঙ্গপীড়িত,বিপন্নতার,যন্ত্রণার কথা।


চির সবুজ কবি জীবনানন্দ দাশের কাব্য আমাদের এ পৃথিবীকে দিয়েছে অনন্য এক বিশিষ্টতা,যেমন বিশিষ্টতা তাঁর ইন্দ্রিয়াতুর রুপ,গন্ধ ও স্পর্শের সুক্ষ চেতনায়।তাঁর সমস্ত কাব্য যেমন ঘিরে রেখেছে প্রেমের তীব্র অনুভূতি অন্যদিকে পরিবর্ত্মান মহাকালে।তারঁ কাব্যের পটভূমি হাজার বছরের বাংলার গ্রাম থেকে শুরু করে আধুনিক শহর কিংবা কখনো সুদূর অতীতের পিরামিডের যুগ থেকে বর্তমানে প্রবাহিত।ইতিহাসাচ্ছন্ন গভীর হতাশাবোধ থেকে ওঠা প্রবল আশাবোধের এক অনুপম চেতনা।


জীবনানন্দ দাশ বাংলার মাটি,জল,মানষ ও প্রকৃতির কবি।মানুষ ডুব দেয় তাঁর অতিন্দ্রিয় উর্বর শতকের কবিতায়।তাঁর কবিতা আমাদের সমাজ,সভ্যতা ও চেতনাকে সমুন্নুত করে।তিনিই প্রথম আমাদের জীবন জটিলতাকে গভীর উপলব্ধিসহ কবিতায় প্রকাশ  করেন।তিনি হাজার বছর ধরে কবিতার রাজ্যে বিচরণ করে নিজস্ব সৌন্দর্য্যের মাঝে একক সৃজনশীলতায় ছিলেন শ্রেষ্ঠ কুশীলব।বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে যথাযথভাবে সম্মান দেখিয়ে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবির আসনটি জীবনানন্দ দাশকে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে।


সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১০

বিশ্ব রক্ষিতার জন্মদিনে উৎসর্গপত্রঃ

15th august is the darkest night....
একটি জাতির স্বপ্ন ভঙ্গের দিন ।

এক বেবুশ্য (লোকে যারে আদর করে বিশ্ব রক্ষিতা বলে);
পাকি বাবার ঐরশে ভারতে যার জান্ম,;
বাংলার আলো-হাওয়া মেখে যে বেড়ে উঠেছে।
তার স্বামী যখন রনাঙ্গনে ;মুক্তিযুদ্ধে।
তিনি তখন ইয়াহিয়ার সোনার ছেলেদের বুকের মাঝে
ঠিক যেমন কবুতর'র বাচচার মতন আদরের অম নেয়।
রনাঙ্গন থেকে মেজরদুত পাঠান
প্রিয়তমা স্ত্রী ও সন্তানকে কাছে নেয়ার__
পাকি অফিসার?নিরাপদ আশ্রয়,বিত্ত,বৈভবফেলে সে কোথায় যাবে?

'ছোঃ,তিন'শ টাকা বেতনের একজন মেজর স্বামী গেলে কি আসে-য়ায় ?

অতঃপর রক্ষিতার স্বপ্ন ভেঙ্গে দেশ স্বাধীন হয়।
স্বামী ফিরে আসে বিজয়ী,বীররুপে।
স্ত্রীকে অস্বীকার,গৃহচ্যুত করে ।
বুদ্ধিমতি রক্ষিতা দ্বারস্হ হয় মহান পিতার দরবারে,
ক্ষমাশীল পিতার আদেশ মানতে বাধ্য হনআমাদের মেজর ।
এক সামরিক অভ্যুথ্থানে আমাদের মেজর (মেজর তখন সাবেক জেনারেল,রাষ্ট্রের কর্ণধার)
নিহত হলে রক্ষিতার সৌভাগ্যের দ্বার উন্মোচিত হয় ;
রাতারাতি পেয়ে যান___
ক্যান্টনমেন্টে বাড়ী,গুলসানে প্রাসাদ,দলীয় প্রধানের পদ।
স্বামীর ভাঙ্গা স্যুটকেশ হতে একে একে বের হয় __
কোকো,ড্যান্ডি ডাইং,কোটি কোটি ডলার ।
হঠাৎ একদিন ম্যারেজ ,স্কুল সার্টিফিকেট নর্দমায় ছুড়ে দ্যানঃবলেন,
১৫'ই অগাষ্ট তার জ-ন-মো-দি-ন।

লজ্জা-ঘৃণা-ধিক্কারে জাতি মুখ ফিরিয়ে নেয় ।

রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১০

অপেক্ষাতুর

বর্তমানের কবিরা স্বেচ্ছা-নির্বাসনে চলে যাক_______
আমাদের নবীন কবিরা অকর্ষিত কবিতার জমি
প্রগতিশীলতার লাঙ্গলে চষে অসাম্প্রদায়িক ও সাম্যবাদের বীজ বুনবে;
সার হিশেবে দেবে মৃত কবিদের অস্থি ও মজ্জা।

 

রবীন্দ্রনাথের বর্ষা নবীন কবিদের যুথবদ্ধ খামারে
অঝোরধারায় ঝরে খামারকে সিক্ত ও সতেজ করবে।
গণতন্ত্রের সুবাতাসে ফসলের চারাগাছ আন্দোলিত হবে ;
কিশোরীর নরম পায়ের ঘুঙ্গুরের মতোন ।


ক্ষতিকর রাজাকার কীট-পতঙ্গের তাড়াঁতে শিকারী পাখি

মুক্তিযোদ্ধারা রাত জেগে ক্ষেত পাহারা দেবে।


আমরা সবাই যুথবদ্ধ খামারের ফসলের জন্যে অপেক্ষাতুর।


ঈশ্বরনামা

অলীক ঈশ্বরে কখনো বিশ্বাস ছিলো না
শেষ কবে হাটু গেড়ে ঈশ্বর বন্দনা কোরেছি;তা
নৃ-তাত্ত্বিকদের গবেষণার বিষয় হো'তে পারে
'অভিকর্ষ বলের' সূত্র না জানা এ আমিও যে
স্টিফেন হকিং এর মতোন বিশ্বাস করি,
...'অভিকর্ষ বলে'র কারণেই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি হোয়েছে।
বিশাল এ বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের বিকাশ ও ক্রম-বিকাশ স্বয়ংক্রিয়____
 

এর পেছনে ঈশ্বরের কোনো হাত নেই ।