Powered By Blogger

বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৪

অন্ধ যুবতী

অন্ধ যুবতীর ঘরে আবৃত যোনীর রাত কাঁপে আজন্ম পাপের কূটিল অভ্যাসে খুলে যায় দু'হাতের মুঠো কুটিরে গ্রীষ্মের দাবদাহ পুড়ছে বিছানা 'বৃষ্টি দে,বৃষ্টি দে,' কেঁদে ওঠে জন্মান্ধ রমণী বৃষ্টি নেই উপুড় আকাশে কলঙ্কের আদরিনী নেঘ রজনীফুলের মুখ ভরে আসে পিপাসার্ত ভিতে বুকে তপস্যার মতো ঘন হয়ে ওঠে মেঘ স্বপ্ন ও নিস্তারহীন সর্বগ্রাসী রোদ,রক্তে- ইন্দ্রিয়কামনা গণিকার অসাড় শরীরজুড়ে স্বেদবিন্দুজল হেলে পড়া তালগাছে দুলছে বাবুইপাখির বাসা অন্ধ যুবতী নিঃসঙ্গ বিছানায়....

পান্ডুলিপি আলোচনাঃনা মানুষ/কুহক মাহমুদ ।

লিকলিকে শীর্ণদেহ,উস্কোখুসো চুঁড়াবাঁধা চুল,অযত্নে বেড়ে উঠছে দাঁড়ি-গোঁফ।কী শীত,কী গ্রীষ্ম গায়ে চাদর, কাঁধ থেকে ঝুলছে ল্যাপটপ,ক্যামেরার ব্যাগ । প্রথম নজরেই বলে দেয়া যায় লোকটা উন্নাসিক,ভাবুক - শিল্পসৃষতির প্রয়াসে উন্মুখ ।কাঁটাবন, কনকর্ড এ্যাম্পোরিয়ামের পরিচিত ও প্রিয়মুখ কবি কুহক মাহমুদের কথা বলছিলাম ।চা-সিগারেটের সাথে আড্ডা চলছিল অনুপ্রাণন প্রকাশনীর অফিসে । টেবিলের কাগজ-পত্র নাড়াচাড়া করতে করতে হাতে উঠে এল ষ্ট্যাপলড করা একতাড়া কাগজ।উল্টে-পাল্টে দেখি একটি পান্ডুলিপি,কুহক মাহমুদের 'না মানুষ'। পড়তে গিয়ে একটি কবিতায় চোখ আটকে গেলঃ সুরহীন সুরায় জাহ্নবী দিনের মতো বুঁদ হয়ে আছি দৃশ্যপটটি এখানেই শেষ হতে পারতো হয় নিঃ অবশিষ্ট সংলাপগুলো অবাধ্য বাদুড়ে ডানায় উড়ছে সে-এক কানা বাদুড় আবিষ্কার করতে চাইছে পালঙ্কের ইতিহাস গঞ্জ কী করে হলো,নগর ঔপনিবেশিক বা আবাস (মায়া) কবিতাটি পড়ে মনে হলো ভাববাদী দর্শনের প্রভাব আবছা হলেও আছে এবং ফল্গুধারার মতো তাঁর কবিতার অন্তঃসার - বৈরাগ্যের এক প্রতিভা । তাঁর কবিতার প্রকাশভঙ্গি আবেগময় এবং দূরন্ত বেগের কিন্তু এতে উচ্ছ্বলতা নেই আছে পরিমিতির নিপূণ মাত্রা । তিনি সমস্ত ইন্দ্রিয়কে সার্বক্ষনিক প্রস্তুতির অবস্থায় রাখেন । এ পান্ডুলিপির অর্ধেকেরও বেশী কবিতা প্রতীকধর্মী । প্রতীকবাদ তর্কের যদিও মীমাংসা হয় নি তবুও উপযুক্ত প্রতিভার হাতে প্রতীক স্বার্থক ও জীবন্ত হয়ে উঠতে পারে । এক্ষেত্রে কুহক মাহমুদের প্রতীকগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সেগুলো প্রগাঢ়ভাবে ব্যক্তিগত আর নানা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে অর্থাৎ একটি ভাব বা ভাবনা বা আবেগের জন্যে কবি প্রতীক ব্যবহার করেছেন - সে জন্যে কখনও কখনও কিছুটা দূর্বেধ্য মনে হয়েছেঃ .......... .......... .......... হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত,ঘুম ভেঙে আসে চোখের পাতা মা-মাটি নদীর পৈঠায়,দুঃস্বপ্নের চিৎকার ভাসে ভোরের সূর্য পৈঠায়,দুঃস্বপ্নের চিৎকার ভাসে ভোরের সূর্য্য ঢেকে দেয় বাদুড়ের ঝাঁক ধ্বংসস্তুপে শুনি বিড়াল কান্নার দীর্ঘ বিলাপ কাকনের পকেটে প্রশ্ন জাগে কোথাও নেই তুই! (রাজপথ) কুহক মাহমুদ আত্ম-জৈবনিক,রোমান্টিক একজন কবি।আজন্ম শিল্প-তৃষিত কবি শিল্প-চেতনাকেই নান্দনিকতার মূল উৎস বলে মনে করেন।মানবজীবনের মহত্ত্বম উপলব্ধি হছে প্রেম আর তাই তাঁর কবিতায় প্রেমের স্থান অবশ্যম্ভাবী।স্বতন্ত্র, নান্দনিক শৈলী,চেতনা ও নন্দনতাত্ত্বিক দার্শনিকবোধের কারণেই তাঁর কবিতা সৌন্দর্য্য চেতনাকে স্পর্শ করে কাব্যিক চেতনায়,সত্ত্বার গভীরতর আবেগের কল্পনায় সীমার মধ্যে অসীমের স্পর্শ সঞ্চরনশীল;যা প্রেম চেতনার সঙ্গে নন্দনতত্ত্বের নিবিড় সংযোগে প্রেমকে চিত্রিত করেছেন সর্ব প্রসারীরুপে প্রতীকের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অতি-প্রাকৃত আরেক প্রতীকঃ তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি,কিন্তু ঐ তির্যক চাহনী নির্জন নীরবতায় মৌন পাথর! অপুষ্ট আনি- সেখানে শুধুই শিল্প পেয়েছি নির্নিমেষ তাকিয়ে মাংসের ভেতর ঢুকে স্পষ্ট প্রত্যেকটা হাড়ের সংখ্যা গুনে ভালোবেসেছি মমতার জানালা খুলে ঘরে খিল এঁটেছি আমি এক না মানুষ,নিমন্ত্রণ রাখলাম একদিন এসোঃ পাল তোলা সাম্পানের পাতাতন হবো- (পাঁজরের খোঁড়লে ভালোবাসা) নিরন্তর প্রস্তুতির মাঝে নিজেকে ধরে রেখেছেন কবি কুহক মাহমুদ । সমকালকে তিনি মেপে চলেছেন মহাকালের বাটখারায় তাই তাঁর কবিতায় দেখি সৃষ্টিশীলতার বহুবর্ণা ঔজ্জ্বল্য ঠিকরে বেড়িয়ে আসে কবিতার লাইন ফুঁড়ে।আত্ম-চেতনা ও সৃষ্টির বিপুল আনন্দে আত্মহারা এ কবি পূর্বসুরীদের গতানুগতিক ভাবধারা সযত্নে এড়িয়ে চলার লক্ষ্যনীয় প্রয়াসে লিপ্ত । প্রথাগত আনন্দের ঝলকানি,বেদনার বিষাদাত্মক যন্ত্রণা কিংবা বাস্তবতার নিরেট পাথরও তাঁর কাছে গুরুত্ব বহন করে না । সৃজনশীলতার চরম উৎকর্ষে থেকে তিনি বিনির্মাণ করেন কবিতা;পৃথক ও স্বাতন্ত্র্যবোধের অভিনব ভাব,ভাষা ও বক্তব্যে উপস্থাপিত দ্বন্দ্বে ভরা এক বৈপরীত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় পাঠক হৃদয়ঃ রাতের ঘুম ভাঙিয়ে দিলো জোছনার স্রোত ফিরে চাইতে,তোমার নামে দেয়া অর্ঘ্য । হয়ে ওঠে না কিন্তু মনে পড়ে যায় ছড়ানো ফুল কুড়িয়ে যে যুবকটি পুরুষ হয়ে ওঠে সে বোঝেনি,ঠিক কোন সুরে বেঁধেছিলে মন্ময়?হারানো বিচ্ছেদ । একজন বৃদ্ধ তবু জপে যায় হরে কৃষ্ণ নাম!ঈশ্বরের কাতারে দাঁড়িয়ে থাকে এক না-মানুষ বিমু রসায়নে উজ্জীবিত বিপর্যস্ত হাইড্রা ফানুস (অভিকর্ষ) উত্তরাধুনিক মানুষ ছুটে চলেছে এক মহাশূন্যাত্র দিকে,অসীমতার দিকে ধাবমান,বিছিন্নতাবোধে আক্রান্ত একদল মানুষ । উত্তরাধুনিক মানুষ তার সীমাবদ্ধতা জানে কিন্তু মানতে চায় না অথচ সীমা লঙ্ঘন তার পক্ষে দুঃসাধ্য । ফলে জন্ম নেয় মনোজাগতিক এক দোদ্যুলময়তা । এর শুরু গত শতাব্দীর দু দু'টো অর্থহীন মহাযুদ্ধ মহাযুদ্ধ মানুষের চিরন্তন মৌল বিশ্বাসের ভিত নাড়িয়ে চিন্তা চেতনার জগতে আনে ব্যাপক পরিবর্তন । মানুষ ক্রমেই ঈশ্বরবিমুখ হতে শুরু করে সামাজিক রীতি-নীতি প্রহসনে পরিণত হয়,ভেঙে যেতে থাকে যুথবদ্ধ পরিবার । মানুষ ক্রমেই নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হয়ে পড়ে তদুপরি পুঁজিবাদী সর্বগ্রাসী আগ্রাসনে মানুষের ব্যক্ত-সচেতনাতা,ব্যক্তি-স্বাধীনতার সমস্যা ও সংকটের যন্ত্রণায় মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে বিচ্ছিন্নতাবোধে জর্জরিত হতে থাকেঃ ......... ......... ......... বৈশ্বিক বেশ্যা হয়ে তবু আমি সুখী- কচ্ছপের বর্ম বুকে বেঁধে বেঁচে আছি! এক না মানুষ- প্রতিটা রাত শেষের জন্মে পাই সাপের শরীর,সুদেষ্ণার ভাসান তোমরা মানুষ হয়ে থাকো গো রাই,সংসারী রথের উঠোন! (হতে পারতো কিন্তু হয়নি) প্রবল আশাবাদই কবি কুহক মাহমুদের কবিতার উপজীব্য ।প্রেম চেতনার কবিতায় থাকে না কোনো কেন্দ্রীয় উপমা,প্রথাগত চিত্রকল্প । নিপূণ।নিঁখুত শব্দের বুননে নান্দনিক অনুভূতিতে বিনির্মাণ করেন কবিতা;যাতে বাস্তবতাবিবর্জিত,পলায়নী মনোবৃত্তি নয় বাস্তব আশাবাদের অভিলাষ ব্যক্ত থাকেঃ আমৃত্যু শিল্পকলার অহংকার আমি এক মিথ কিংবা না-মানুষ খুব সোজা চলতে চেয়েছি,একবুক অসুখের বারুদ নিয়েঃ মণিবন্ধে রেখেছি কিছু ভুল । ভুলগুলো বিষ বিষগুলো দেহ আক্রান্ত করবার আগেই কালো কায়তনে কষে বেঁধেছি কোমর, সে এক বৈশাখী তুফান; ঝড়ের তাণ্ডবে করতলে কখনোই চাইনি সমাজ বদলানো যাদুর চেরাগ বেয়াল্লিশ বছর অপেক্ষা করেছি । আর ভুল করবো না (ভাসমান পরিচয়) গোধূলির প্রস্থানে জ্বালাও পূর্ণিমার পর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'না মানুষ' প্রকাশের ঊষালগ্নে কবিকে অভিনন্দন ।

মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৪

নব্বই দশকের কবিতায় উত্তরাধুনিক চেতনা

।।আয়শা ঝর্ণা ।। মনঋদ্ধ আবেগ ও ভাবনা কবি আয়শা ঝর্ণা এর কবিতায় স্বকীয় ও স্বাতন্ত্র্য এনে দিয়েছে । তাঁর কবিতায় উদ্ভাসিত নিরবিচ্ছিন্ন ও স্পষ্ট,সুস্থিত বিনির্মাণের ধারা লক্ষ্যণীয়ভাবে অনুভব করা যায় । তাঁর কবিতায় সম-সাময়িক এবং উত্তরাধুনিক সচেতন অনুশীলণের কারণে জীবন দর্শন,প্রতীক,ইতিহাস চেতনা ও ঐতিহ্যবাদ কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে ।কাল চেতনার প্রয়োগ, সমষ্টিজীবনের অবিচ্ছিন্ন ধারা এবং শুধু নিজের অস্তিত্বকে অতীতের অস্তিত্বের সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন আবার কখনো কখনো সুদূর ভবিষ্যৎকে নিয়ে গিয়েছেন - প্রকৃতপক্ষে প্রচ্ছন্নের সাথে,নিকটকে দূরের সাথে,বর্তমানকে অতীতের সাথে লীন করে দিতে চেয়েছেন আর সৃষ্টি করেছেন পলিমাটি ভরা এক উজ্জ্বল সংযোগ ভূমি। উত্তরাদুনিকতা আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আত্মানুসন্ধানের মুখোমুখি।প্রকৃতির পরিপুকতার ধারণা থেকে আত্ম-সম্পূর্ণতার দিকে,স্বয়ম্ভুতার দিকে । আধুনিকতা ও উত্তরাধুনিকতার নধ্যে সবচেয়ে বড় প্রভেদ হল একরৈখিকতা ও বহুরৈখিকতা । উত্তরাধুনিকতার মধ্যে মূলে রয়েছে কেন্দ্রকে আঘাত করে বলয় ভেঙে বহুরৈখিকতাকে তেনে আনার সক্রিয়তা । একরৈখিকতার টান যদিও পিছু ছাড়ছে না । কোনো এক কবিতায় কবি একরৈখিক হলেও সমগ্রে দেখা যায় তার বহুরৈখিকতা । এভাবেই একেকজন একেকভাবে তার নিজস্ব আঙ্গিকে জড় হচ্ছেন উত্তরাধুনিকতার বিস্তীর্ণাঞ্চলে : ময়দানের হাওয়া থেকে জেনেছি তারা আসলে নারীভূক,হিংসাতুর তাদের মুখের দিকে মুখ করে বলেছি,'আমার চোখের দিকে চোখ রেখে কতটা অসুখী আমি?' তোমাদের আনন্দ হয় খুব,উল্লসিত হয়ে ওঠো যখন মৃত্যুকালীন সময়ে জীবনের দিকে হাত বাড়াই।তোমরা লেখো কত নারকীয় পূরণো এথিক্স। মুষঢ়ে পড়ি আমিও।সেবার ধর্নশালায় ঠাকুরকে জেগে উঠতে দেখলাম, অসম্ভব রাগী আর ক্ষয়াটে মুখ।মেট্রোতে চড়ে দেখেছি তোমাদের বাড়ি ফেরার ক্লান্তি (ময়দানের হাওয়া) উত্তরাধুনিকতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল স্বাধীনতা । আধুনিক কৃষ্ণবিবরে পাঠক ছিল পুরোপুরি লেখকের আজ্ঞাধীন।উত্তরাধুনিক সাহিত্যের ভেতর পাঠক পুরোপুরি স্বাধীন।পাঠকের ভূমিকা এখানে ঊন বা বহিরাগত নয় অন্তর্গতঃ একটি রক্তাক্ত দুপুর,রোদগুলো রক্তের মত গড়িয়ে গড়িয়ে দোরগোড়ায়।একটি আধুনিক অতি আধুনিক যন্ত্র ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কাঁচের দেয়ালের ওপাশে দু'টো দীর্ঘকায় মানুষ অতি আদিম যৌনতায় রত।হয়তোবা,হয়তোবা না। ( রক্তাক্ত দুপুর) গতানুগতিকতার গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে উত্তরাধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করতে, কবিতার অভিনব মাত্রা সংযোগ করতে তিনি বরাবরই বদ্ধ পরিকর।আবেগঘন,বস্তুনিষ্ঠ নৈর্ব্যক্তিকতা - বাস্তবতা মূর্ত করে তোলেন স্বতঃস্ফুর্ততায় ।আনন্দের জন্যেই কবিতা তবুও তিনি কখনো গ্রহণ করেন না উদ্দেশ্য ও নীতিহীন আনন্দ । গভীর বিশ্বাসবোধ থেকে জারিত - উত্তরাধুনিকতা;তাঁর কবিতার মূল বক্তব্যঃ দুঃখ আর অমানিশা থেকে সেরে ওঠা গেল না আজও। তোমাদের আত্মীয়তা নিয়ে সন্দেহ নয়।এক জীবনে কতো আর পিঁপড়ের সারিতে সার বাঁধা যায় কিংবা কোনো বাতাস তাড়িত শব্দ জলযোগ বিচ্ছিন্নতা ধারণ করা যায় (অলুক্ষণে পেঁচা) দৈনন্দিন ও সমকালীন ঘটনাপ্রবাহ কে দেখেন বাস্তবতা বিবর্জিত,রোমান্টিক দৃষ্টিতে নয়,সমাজ সচেতন ও উত্তরাধুনিকবোধাক্রান্ত হয়ে।সামাজিক অনাচারের বিপক্ষে কবি বিষয় ও প্রসঙ্গের সহজ,স্বতঃস্ফুর্ত,স্বাভাবিকতার পাশাপাশি কবিতার ভাষা নির্মাণ ও প্রকৌশলে চিকিৎসক কিংবা বিচারকের দাপ্তরিক ভাষা নয়,নিছক আটপৌঢ়ে ও ব্যকরণ শৃঙ্খলমুক্ত সরল ও সহজবোধ্য ভাষায়,বিভিন্ন আলংকারিক প্রয়োগের মাধ্যমে কবিতাকে স্বতন্ত্র উচ্চতায় নিয়ে যাবার প্রচলিত প্রচেষ্টারতঃ একুশ বছর একুশ বছর আর যে তিন বছর যুক্ত হয় নি অপরিচিত নিয়ে বসে থাকে ডানে ঘুরি বায়ে হেলে কয়েক পা পেছনে,চুল ছেড়ার ইচ্ছেটা।বমি ভাবতা গলা ঠেলে ধীরে ধীরে উঠে আসে,না ঠেঁকিয়ে রাখি।বেড়ালের পা আর তার শব্দহীনতার কালে আসে ইন্দ্রিয়সমূহ এ্যালার্ট এ্যাতেনশন,মার্চ অন!পার্শ্ববর্তী কুঠুরী নির্গত করে কিছু শব্দ কল্ কল্ শর্ শর্ ফিস,ফিস্-হবে একটা,মেতে ওঠে ষড়যন্ত্রে, ষড়যন্ত্র, ষড়যন্ত্র অস্তিত্বকে ঘিরে ফ্যাকাসে।সচকিত,অনুভূতিপ্রবণ অনুভূতি বড়ই বিচিত্র (অস্তিত্ববাদ ও আমি) ।।শাহনাজ মুন্নী।। এক একজন কবি থাকেন যাদের কবিতায় প্রকাশ্য বিবৃতি এবং বিষয়কে অতিক্রম করে ছন্দ,ভাষা ও শৈলীর প্রয়োগে জীবনঘনিষ্ট চিত্রাবলী পরিস্ফুট হয়ে ওঠে - আমার দৃষ্টিতে শাহনাজ মুন্নী তেমনই একজন । তাঁকে মহিলা কবির দলে ফেলা যাবে না । গতি ও প্রগতির স্রোতধারায় ভবিষ্যৎমুখীন এ কবি তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আরও বিষাক্ত শর খুঁজে নেন । পূরাতন কবিতার ঐতিহ্য ভেঙে বের হয়ে নূতন এক কাব্য-কলার পরিমার্জনায় যে উচ্ছ্বসিত ভাবাবেগ দেখা যায় তা তাঁর কবিতায় সংহত,ব্যক্ত হৃদয়ের যন্ত্রণা এবং তীক্ষ্ম হৃদয়ানুভূতি - গভীরতর ব্যঞ্জনা পেয়েছে। রবীন্দ্রযুগের রোমান্টিক ধারার বিরোধিতা করেও তাঁর দৈশিক ও বৈশ্বিক ভাবনা,চিন্তন,মেধা ও মননশীলতা অনুসরণ করে বিশ শতকের প্রথমার্ধে কিছু তরুণ কবি নূতন ধারার এক কবিতা চর্চ্চা শুরু করেন;যা আধুনিক কবিতা । এ আধুনি কবিতার ফর্ম বা টেক্সট অর্ধ-শতাব্দীকালেরও কিছু বেশী সময় । তারপর বাংলা তথা বিশ্ব কবিতার ইতিহাস এক দীর্ঘ বাঁক নেয় - এর নাম উত্তরাধুনিকতা । এ উত্তরাধুনিক শব্দটি সম্পর্কে অনেকের দ্বিমত,বিভিন্ন তাত্ত্বিকের নানাবিধ বিশ্লেষণ,এর সার্বজনীন ব্যাখ্যা বা গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে নানা তর্ক-বিতর্ক প্রতিনিয়ত চলে আসছে এবং তিন দশককালেরও বেশী সময় ধরে এ তর্কের আজও মীমাংসা হয় নি অর্থাৎ কবিতার অবস্থান - আধুনিক না-কি উত্তরাধুনিক?যুগ-মানসের দোদ্যুলময়তায় সন্দিহান কবি শাহ্ নাজ মুন্নী বলেনঃ তীর্থযাত্রীদল খোঁজে পবিত্রভূমি;দ্রুত হয় যুগপৎ শ্বাসক্রিয়া শক্তিগতি;উত্তররুখী ঘরে শীত গায় শীতকাল;চিরকাল ঘিরে ঘিরে বারোটি কুমারী বোন;মাধ্যাকর্ষণ টেনে রাখে উড়ন্ত মানুষ। আমি সেই সতর্ক সিংহ শিকারীকে জানি;অকৃত্রিম আঁধার তার চিবুকে ফিনকি দ্যা রক্ত।কুয়াশায় সিংহের কেশর ভাসে,রোয়া ঝরে এবং চামড়া ছাড়াবার পর মৃত সিংহ হয় আরেকটি নীল কাক ( বিস্তারিত ভাঙচুর ) উত্তরাধুনিক মানুষের হতাশা,জীবন জটিলতা,অস্তিত্বের সংকট,সমাজের সঙ্গে অনন্বয় এবং স্বীয় সত্ত্বার বিচ্ছিন্নতার চিত্রকল্প তাঁর কবিতায় বিষাদ ভারাক্রান্ত করে বিচ্ছিন্নতার বিস্তৃতি ঘটেছে ব্যাপকভাবে;অন্তর্নিহিত বোইপরীত্য ও এটিএম যাতনা থেকে উদ্ভূত জীবনের অর্থহীনতা ,সভ্যতার কপটাচার,তাঁর বিচ্ছিন্নতার জ্বালা মেটতে পারে নিঃ ঘন অরণ্যকে চিনিয়ে দিয়েছি উদাস হওয়ার পথ এবার শুধু সময়-সুযোগ মতো তল্পি-তল্পা বেঁধে বেরিয়ে পড়া এই নিশ্চিতি ছেড়ে একেকবার খুব ঝুঁকি নিতে ইচ্ছা করে তার ইচ্ছা করে মাটির সংসার ভুলে শেকড়-বাকড় উপড়ে কিছুকাল ঘুরে আসে দূরে ডাইনিরা হেসে বলে,ঘন অরণ্য হেঁটে এলে দুর্ভাগ্য পিছু ধরে ( দীর্ঘ শুষ্কতায় ) আমরা বাস করছি উত্তরাধুনিক বিশ্বে । সময়ের সাথে সাথে পালটে গেছে চিরাচরিত লোকায়ত প্রথা,বিশ্বাস ও বিশ্বও ।আমাদের চিন্তা,চেতন ও মননকে নাড়া দিয়ে যায় মিশেল ফুকো,জ্যাক দেরিদা,রোলা বার্ত,লেভি স্ট্রস প্রমুখ চিন্তাবিদদের ভাবনা ও তত্ত্ব।উত্তরাধুনিকতার মূলমন্ত্র হল সৃজন নয়,বিনির্মাণ । উত্তরাধুনিক পূর্বকালে পাঠক ছিল লেখকের আজ্ঞাধীন কিন্তু এখন লেখক নয়,পাঠ ও বিষয় পাঠকের হাতে ।আর এই মনোজগতের নূতন ভাষা ,'পাঠকৃতি';যা গড়ে উঠেছে বিখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক ফার্দিনান্দ দ্য সোস্যুরের ভাষাতত্ত্বকে ধারণ করে । একবিংশ শতাব্দীর মানুষ কেবল অর্থনীতি বা যৌণের দ্বারা শাষিত নয় বরঞ্চ নিয়ন্ত্রিত ভাষার দ্বারাঃ সৃষতিতে ঈশ্বরও নিখুঁত নন মাঝে মাঝে এরকম আশ্বাসে ভয় কাটে নিজের কাজ দেখে চাপড়াই পিঠ বাহ্ বাহ্ বেশ। এই করে এক পথে হাঁটায় ক্ষুধা আর পথে পেম পথে পথে ঋণী করে সুজন মানুষ ঋণেতে সুফল কম ছোটো থেকে জানি (নিখুঁত সংক্রান্ত) নীৎসে ঘোষণা করেছিলেন ঈশ্বর মৃত্যুবরণ করেছেন অর্থাৎ রঙ্গমঞ্চে নায়কের আর প্রয়োজন নেই।দর্শকদের মধ্য থেকেই উঠে দাড়াঁতে হবে নায়ককে অর্থাৎ ঈশ্বরের স্থান পূর্ণ করবে মানুষ,অতি মানুষ।য়্যুরোপে রেনেসাঁর কাল হল মানব জাগরণের, মানবমুক্তির। মানুষ যে শুধু ঈশ্বরকে অস্বীকার করা শুরু করল শুধু তাই নয় তাকে অপ্রয়োজনীয়,বাতিল বস্ততে পরিণত করে মানুষ নিজেকেই ঈশ্বরের স্তরে উপনীত করে ফেলল: কম্পিউটারের যান্ত্রিক কন্ঠস্বরটি ভালোবেসে প্রতিবার ভুল নাম্বারে ডায়াল করেছে যে হতভাগী- পানির নিচে ময়নার মতো উত্তেজনা থিতিয়ে এলে তার মনে পড়েছে আমি তো গাছের মেয়ে,গাছ মানবী গাছের ভাগ্য মেনে এই মাঠে একা দাঁড়িয়েছি মরা কার্তিকে ঝরেছে যেসব নীলপাতা সেসবের জন্যে শোক করে লাভ নেই (গাছ মানবী)

প্রতীক্ষার খোলা পথ

অরণ্যশহর ঘিরে মেঠো সমতল পথে এলোমেলোভাবে নির্মাণের যন্ত্রগুলো পড়ে আছে - অশোকের উঁচু দাল থেকে খসে পড়ছে পালক - ভাঙা খোসার পেছনে শরতের নিমন্তণ - যেতে চেয়েছিলাম পাহাড়ে - রাত দ্বি-প্রহরের প্লাবন ঠেলে ঠেলে এই বানভাসি ভোর - মৃত গবাদিপশুর ফেঁপে ওঠা পেট - পুতিগন্ধময় জল - স্বপ্নের ভেতর এক এলোকেশী বাস্তবতা - আমাদের প্রসন্ন উঠোন ঘিরে রাখে খর জলের নিঃশ্বাসে - অন্ধকারের মিছিলে মতিচ্ছন্ন মুখগুলো ফুটে আছে -শ্লোগানের শব্দ মিশে গেলে সমবেত পাঠে জন্ম নেয় অত্যাশ্চার্য এক মাদুলি -সুতোয় বাঁধা - রেল লাইনের ধারে কাটাহাত - হরি ডোম আসে ঐ - সমান্তরালে অস্থিরতা এবং রক্ষিতার রক্তমাখা চোলি - একসাথে ভাসে বিপন্ন নদীর জলে - কলঙ্কধারার নিবদ্ধ জীবন আষাঢ়ে মেঘের নীচে প্রবহমান - বাঁশির মেঠো সুর ও বর্শার গান - একাধিকবার ঐ পাহাড়ে এসে মনে হয়েছিল - নক্ষত্রমন্ডলীর তলায় পড়ে থাকা সজল সময় - গলায় রুদ্রাক্ষমালা-শরীরে লোহার আভরণ - হেতালের লাঠি উঁচিয়ে মৃতদের সব চলাচল বন্ধ রেখে জলপাই বনের আলোর রেখা মুছে দেয় - এবং অতিরিক্ত আয়ু জুড়ে বর্ষার সকালে পরান্মুখ আকাশের ভাঁজে প্রতীক্ষার খোলা পথ -

শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪

নব্বই দশকের কবিতায় উত্তরাধুনিক চেতনা

।।অলকা নন্দিতা।। ভাষা,সম্পূর্ণভাবে যৌক্তিকতা-নিমগ্ন,উত্তরাধুনিক চিন্তা-চেতনার কবি অলকা নন্দিতা বস্তুজগৎটাকে অস্বীকার করেন না বরং বস্তুর প্রতিফলন ঘটায় সৃষ্টিধর্মী পরিকল্পনায়।আত্ম-সমর্পিত কবিতা লেখার প্রবণতার দিকে এগিয়ে থাকা এ কবি কবিতার অবয়ব জিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা,ধ্যান নিমগ্নতা বা নৈসর্গিক সংলগ্নতা এবং তাৎপর্য্যময় আত্ম-কথনের কবিতায় নিত্যদিনের টানাপোড়ন,দ্বন্দ্ব এবং অপেক্ষার ক্লান্তিতে জড়িয়ে থাকা স্বপ্নের গভীর সুড়ঙ্গপথ পার হয়ে অবাক বিস্ময়ে দেখতে পান আনন্দ এবং উজ্জ্বলতা। উত্তরাধুনিক কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য একরৈখিকতার কেন্দ্রকে গুড়িয়ে দিয়ে বহুরৈখিক কবিতা বিনির্মাণঃ বর্ষা এলে সাপাতঙ্কে কাটে রাত।বাইরে বেরুলেই পিছলে যাওয়ার ভয়।সাপেরা পিচ্ছিল পথ ভালোবাসে।ফণা তুলে অন্ধকার গলি খোঁজে।বর্ষায় রাতও নামে দ্রুত।সন্ধে লাগতেই নিভে যায় আলো।জানলার কাচ ভেঙে বৃষ্টির জল ঢোকে।ভিজে যায় বইপত্র,তোষক চাদর।বসে থাকি হারিকেন জ্বেলে।যদি বৃষ্টি ধরে ঘুমাব এবার। (সাপাতঙ্ক) আধুনিক জীবন খুব বেশী সহজ নয়।পারিপার্শ্বিক আবহমন্ডল ক্রমেই জটিল করে তুলেছে ।যান্ত্রিক সভ্যতা জীবন-যাপনকে জটিল ও নিয়মের শৃঙ্খলায় বেঁধে ফেলতে চাচ্ছে।তাতে করে মানুষের জীবন বৈচিত্র্যহীন হয়ে পড়েছে,পড়েছে বর্ণহীন হয়ে।উত্তরাধুনিকেরা সনাতন ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ থেকে বিচ্যুত হয়ে নৈরাশ্যবাদী হয়ে উঠতে পারেঃ আমি তো ওরাং জাতি,বৃক্ষবাসী বৃক্ষের পাতায় লেগে আমর জন্মের পূর্বে বৃক্ষ ছিল,ফুল পাখি লতা ছিল বিবর্ণ,বন্ধনহীন, মধ্যে আমি প্রত্মজীব) বিনির্মাণ বা de-construction এর নিকটতম শব্দ বিশ্লেষণ বা analysis.জ্যাক দেরিদার বলেছেন,পাঠ প্রকৃতির মধ্যে নিজস্ব নিয়মেই তৈরী হয় তার অনুবিশ্ব এবং সেই অনুবিশ্ব সমগ্রের স্মৃতি নিয়ে জেগে থাকে যে সব টুকরো টুকরো চিহ্ন বা স্মারক,বিনির্মাণের ধারায় তাদের ওপর সমীভূত হয় মননশীলতার আলো অর্থাৎ এ সব পাঠে আপাত প্রচ্ছন্নতার চূর্ণ ভস্ম থেকে উঠে আসে এক সমগ্রের উজ্জ্বল আলোকিত মিনারঃ এইমাত্র খবর পেলাম অস্ত্রহীন যুদ্ধে তার কেটে গেছে সারারাত।ঝড়ের বেগে কামাল এগিয়ে এলে সহজেই ধরাশায়ী হয় প্রতিপক্ষ।পলিমাখা নদীর সীমানা ভেঙে পড়ে নিমেষেই।লন্ডভন্ড ধানক্ষেত,বন্ধ ঘরের কবাট। (সঙ্গম) সময়ের এক অবাস্তব যাদু দিয়ে গড়া আজকের এ পৃথিবী।বাস্তবতা পেরিয়ে যায় আঙ্গুলের ফাঁক গলে।প্রকল্পনার স্বচ্ছ চাদরে ঢাকা পড়ে যায় যাবতীয় তথ্য ও তত্ত্ব।কূটাভাস থেকে কূটাভাসেই যায় পরিভ্রমণ।তারুণ্যদীপ্ত অভিজ্ঞানে ছদ্ম এ সময় বিষদাঁত বিধিয়ে রাখে।ঊষর পৃথিবী ধরা দেয় উত্তরাধুনিক চেতনায়ঃ মানুষের পাশাপাশি প্রকৃতিও দ্রুত রং বদলায় বর্ষায় দেখে আসা দুগ্ধবতী সুবলং যেন শীতে শীর্ণ হয়ে আসা এক নারী ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে চোখের সামনে নির্বাক,নিশ্চুপ; (শীতের সুবলং)

শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

দীর্ঘ জলরেখা

শান্ত সাগরনদীর তীরে অতলান্ত জল্পনা,মনঃসীমায় শান্তি এসেছিল অপ্রত্যাশিত শর্তের কথা মনে আছে কুয়াশাচ্ছন্ন পথের প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি স্বপ্নসিদ্ধ জীবন ও অবিমৃশ্য অন্ধকারে প্রণয়কথনের সংগত ক্লীবশ্বাস আতপ্তভিত্তি সংসারে তবু দৃঢ়সম্ভব উপসংহারে অপরিমেয় জলের ধারে ধ্বস্ত হৃদয় প্রতীকি ঢেউ এবং স্রোতে একঘেয়ে সূর্যহীন গন্ধ,--- অন্তরীন আলোকণা শূন্যে নীল কিংবা ঘরের নৈরাশ্যে দিগন্তের ক্লান্তি - আর দেখব না লাঞ্চিত চোখের দৃষ্টি - আরেকদিকে নির্লিপ্ত ক্ষমা জলের অজস্র বুদবুদে অনিশ্চয়তা ও প্রাত্যহিকতার সহমর তৃষ্ণা যতিচ্ছেদ চিহ্নের মতোন প্রেমে দীর্ণ বুকে ঢেউ আসে দুই চোখে দীর্ঘ জলরেখা

বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৪

নীল যবনিকা

উপবন,সমুদ্র সৈকতেমূক ও বিমূঢ় লুয়াশায় অনুবর্তিতার স্বপ্নগুলো জীবন ফোটাতে চেয়েছিল,___ডালপালা অথবা বল্কল খুলে বনচ্ছায়ায় তোমার পাঠ-প্রতিপাঠে পুনর্গঠিত কবিতা এবং মিলিত দিন ও রাত ঝরে যায়।নিষ্পত্র তোমাকে বড় শুষ্ক লাগে।নবআবিষ্কৃত ও পূরানো সব পথে বসন্তদিন---জানালাহীন অন্ধকারেও ডুবে আছে সমস্ত পাহাড়,গাছ ও পাথরে সম্পন্ন বোধের অগোচরে ছিন্ন প্রেম স্খলিত পোষাকে বালিকার স্পষ্টতায় কেঁপে ওঠে;যতটুকু ভালোবাসি কিশোরী শরীর-চোখের তারায় মৃত্যু আঁকা আছে অসংখ্য কাটায়।তন্দ্রাহীনতায় কেটে গেছে সুদীর্ঘ জীবন।প্রেম ও অপ্রেমে সুন্দরের নিয়তি,স্মৃতির সৌধ ভেঙে পড়ে।আলেখ্য গীতিকবিতা কতদিন নিষ্ফলতা নিয়ে প্রবল নদীর জলে নীল যবনিকা ধরে রেখেছিল,তুলেছিল শূন্যতায় অনুর্বর মাটি।

শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৪

ময়ূরপালক দিন

অন্ধ রাতের প্রহরে ভেসে গেল ভর-নির্ভর;ব্রতধারণ,উপবাসে শাখাই শরীর শ্মশানের ঘাটে এসে ঠেকে আছে যা পেয়েছিলামঃঘোরলাগা দিন,স্মৃতিজল,হাঁটুর নীচের অন্ধকার নদীর ওপারে স্থির বৃষ্টিভরা মেঘ এপারে গম্ভীর চৈত্র এঁকে বেঁকে সামনের দিকে হেঁটে যায় ময়ূরপালক দিন

বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০১৪

হিম আর্তনাদ

বৃষ্টিবাহনের সুরে পায়ে পায়ে হেঁটে আসে রাত্রিবেলার নিঃস্বন বিলাপের ভার ধূয়ে নিয়ে জেগে ওঠে সকাল;নিঃসাড় দীর্ঘতর দিন বিসর্পিনী অত্যাচারে ভূর্জপত্র ও তালপাতায় এত গাঢ়,এত স্তব্ধতার সন্তরণ কে লিখে রেখেছে এমন আচ্ছন্ন ঘর,___ দেয়ালে দেয়ালে সিমেন্টের জমাট বাঁধানো স্নেহ পালাবদলের ঘন্টা বাজছে ঐ গুছানো হয়েছে এ্যালবাম,ছাইদানী,মদের বোতল আলস্য মাখানো দুই চোখে বিরহিত ভার মুছে যাবে শোক ও সন্তাপ কন্ঠনালী ছিঁড়ে বের হয়ে আসে হিম আর্তনাদ

শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৪

কাব্য

কাব্যের শোষণে যুক্ত পাঠ পুনরাবর্তনে বারংবার কাব্য ধরে রাখে কা সমকালের নৌকায় দূর্বাধান অন্ধ গোধূলি প্রদেশে ব্যাবিলন বালতিতে তুলে নিয়েছিল সভ্যতা কৃষক এবং মজুরের সম্মিলিত প্রয়াসের শোকভেরী--- বিরাট ধ্বংসের থেকে নারী ও পুরুষ নিরীশ্বর কবিতার শান্ত খালের জলের স্রোতে কখনো সমুদ্র এসে মিশে থাকে।

প্রতিচ্ছবি

বিসর্জনের বিষাদ এবং ভাসানের বিমূঢ়তা নিয়ে উত্তরের পথ পার হয়ে দক্ষিণের খালে এসে দাঁড়িয়েছি। সম্ভাবনাহীন বসন্ত আসছে।শীতরাতের প্রহরে উৎসারিত যত গান--- মাতাল দু'হাতে শেষ অস্থিরতান ভাসিয়ে দিলাম মুছে যায় কিশোরীর ভীরু কন্ঠ,পাতার শিশিরবিন্দু। ব্রাক্ষ্মুহূর্তের প্রণত আলোয় শুধু প্রতিচ্ছবি ভেসে থাকে।

সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০১৪

আশ্বাস

প্রেম ও সম্ভোগরত আদিবাসিনীর কালো স্তনবৃন্ত ঘিরে অজস্র বৃষ্টির ফোঁটা,আলো তরল চুম্বন,বহুমাত্রিক শরীর জুড়ে সেইসব সাপেরা ছোবল কাটে;যাদের বিষথলিতে পৌরাণিক স্মৃতিবিভ্রম,স্ফটিকস্বচ্ছ জীবাণুর বিস্তার,একক এবং তুলনারহিত অন্ধকার বনস্থলী।বিহ্বল উপজাতীয় বনে উৎকন্ঠিত বুনোফুল ও ফলের তাৎপর্য্যবিহীন বিন্যাসে যা কিছু ঝরে পড়ে---সুযোগসন্ধানী ও স্বভাবগত লোভ;শ্রেনীসমাধির ভেতর তৎপর,নেশাতুর হলুদ পাতার স্তুপ।বনগত বনানী ও বিভা ঠেলে সর্বস্বতার শৃঙ্খলে এই সায়াহ্নঅবধি নিমগ্ন মাকড়সার জাল বোনা এবং পোকাদের ঘোড়দৌড় দেখি।সীমাহীন কুয়াশার ভেতর যে প্রাণ জেগে ওঠে-অনেকের মতো আমিও তাদের আশ্বাস দিইঃবেড়ে ওঠ,বেড়ে ওঠ।

শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০১৪

নিশ্চিত জীবন

অবোধ সন্ন্যাসে বুঝি নি রুপালী মিথ্যা কিংবা দ্বাদশীর বুক ভাঙা আলো কোন পথে বেঁকে গিয়েছিল সামর্থ্য ছিল না শ্যামবিকাশের অন্য পারে হেঁটে যেতে কবর সারির পাশাপাশি এপিটাফগুলো মুছে দিয়ে শাপগ্রস্ত দিন ও রাতের শ্রান্তিভারের সমস্ত বৃত অবসানে ঠান্ডা পাথরের ঘরে নিশ্চিত জীবন

ঘূণাক্ষরে লেখা পাঠ

কালো ও বিকৃত মুখের পাশাপাশি ছায়ার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে অর্ধ দৃষ্টিপাতে শুধু গুনে গেছ ঢেউ,ঋতু,গোধূলি,আলোকবর্ষ উৎকীর্ণ পাথর হাতে লাঙলের ফলার মুখোমুখি লোনামাটি,___ পুনর্বিন্যাসিত নক্ষত্র আনুভূমিক মাপ এবং বজ্রে উৎপাটিত বৃক্ষে--- ঘূণাক্ষরে লেখা পাঠ তুমি পাঠ কর জলের ভেতর যতটুকু আলোর শোষণ ভাঙা ভিক্ষাপাত্রে এর বেশী চাই নি কখনো আরাধ্য অক্ষরে স্তব,দু'হাতে বিলিয়ে নির্বাসন আমি পাহাড়ের পথ ধরে ক্রমশঃ হাঁটছি পথ অর্থাৎ জয়ের এক অদম্য বাসনা

বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০১৪

মৃত্যু,ক্ষুধা ও চুম্বন

বসন্তের গূঢ় ধৈর্য্যে সমস্ত অক্ষরগুলো ধ্বনি-প্রতিধ্বনি সহ মুছে যায় প্রতিটি জন্মের পূর্বে এবং নগর ধ্বংসের পরে বিপরীত করতলে শুধু চিরায়ত একতি মুহূর্তে দালপালা অথবা বল্কল থেকে তুলে নেয়া ঘূণাক্ষরে লেখা পাঠ ম্লান,বিপূল গ্রন্থের কাছে হলুদ পাতার দুপুরবেলায় অনর্থক ছোটাছুটি বেলাভূমির আনত রৌদ্রে যতদূর দৃষ্টি যায়---- প্রসারিত ভূমি,নিষ্প্রভ অরণ্যে নাক্ষত্রিক স্বপ্ন যত প্রতিচ্ছবি অনুবর্তিতাকারে লুপ্তির পথে শুধু গত সহস্রাব্দের আলোয় পরিস্ফুট মৃত্যু,ক্ষুধা ও চুম্বন

শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৪

জলস্পর্শের অধিকার

পাখিদের স্বরলিপি উড়ে গেছে আকাশের পূরাণে;ডানায় রক্তক্ষত, পায়ে অসুখ-শব্দের সম্মোহন,নক্ষত্র ফোটার পূর্বে শেষ অস্থিরতা এবং অপস্রিয়মান ছায়া ছুঁয়ে যায় মর্মতল রক্তের তৃষ্ণায় যারা উড়ে গিয়েছিল-তাদের লোহার ঠোঁট ও ইস্পাত নখ পুরানো স্মৃতির ভারে কেঁপে ওঠে স্রোতস্বতী পার হয়ে সারারাত দুঃস্বপ্নের অসংখ্য শোকের ডাল কেটে যখন জলের কাছে ফিরে আস,ভাবনাহীন বৃত্তের মধ্যে যা কিছু টেনেছ,ঘূর্ণিপাকে অন্য দেশ,স্কুল,হাসপাতাল,মন্দির--- স্মরণাতীত কালের জলে ভেসে ওঠে প্রতিচ্ছায়া এই জলস্পর্শের আজন্ম অধিকার এখনো অটুট আছে

শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০১৪

জলবতী-২৫

সপ্তসুরের প্রকৃতি ভেঙে কার্তিক জ্যোৎস্নায় যা পেয়েছি অথবা যা পাই নি---অবলীলায় উঠে আসে নিসর্গরেখা,মাস্তুল,___ নদীর বিরুদ্ধগামী ঢেউ ক্রমশঃ টানছে অর্থহীন শব্দগুলো অই পারে মোহের শরীরে দুঃখ নেই,ভার আছে শিরা-উপশিরা ভরে জল অথচ সমস্ত সম্ভাবনা ফেলে নির্ণয়িত দিগন্তের স্থির বিন্দুতে ভবিষ্যৎ ম্লান সাদা ঘোড়া ছুটছে,পেছনে আলো,অন্ধকার তার পায়ে পায়ে

শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৪

জলবতী-২

১৯. সকাল ও সায়াহ্নের নদীতে অঢেল ঢেউ বালির ওপর নতজানু হয়ে সূর্যস্তবে বসেছি;গায়ত্রীমন্ত্রে মুছে যাবে শোকাবহ আগুন,নদীপ্রণামে কত লোক এসেছিল আজ? নিবিড় শ্লেষাবিহীন স্মৃতিকোষে শঙ্খের ফুৎকারমতো প্রাগিতিহাসের দিনলিপি তুমি কোন মুহূর্তের মুখ হাতে ধরে আছ,জলবতী? ২০. পরিত্যক্ত বন্দরের মুখে বেজে ওঠে মাঝরাতের স্মৃতি কপালে ফাটল,স্বচ্ছ জলের সংসারে কান পেতে আছি একদিন,অভিমানবশে আমি আর কোন গান শুনব না ইলিশের,নাবিকের,ভাসানের এই জলের ওপর থেকে আলো একদিন সরে যাবে মেঘ ও উদ্ভিদলতা বালি ও পাথর নিমজ্জিত জাহাজ ও দ্রুতগামী বুদবুদরেখা,___ কিছু অংশ শুষে নেবে,বাকীটা প্রতিফলিত স্বপ্নের ভেতর তুমি, কোন অন্ধকারে লুকিয়ে থাকবে ২১. এখন গোধূলিবেলা জলের কিনারে স্তব্ধ হাতে দাঁড়িয়েছ,জলবতী লুপ্তস্মৃতির সমস্ত কোষে নিষ্ফল আক্রোশ জলে ভেজা দু'পা;দাঁড়িয়ে থাকার অনন্যতা,স্থির ছবিতে নিসর্গ,___ সবকিছুই মানিয়ে যায় ধানসিঁড়ি, শালকী,সোহাগী অলকানন্দা,অমরাবতী..... সব নদী-ই সমুদ্রগামী শুধু আমাদের গন্তব্য অপরিণামদর্শী,উদ্দেশ্যবিহীন ২২. একশত চাঁদ পূর্বে থেকেই নদীবিস্তার কিংবা কুয়াশার মধ্য থেকে জন্মের জটিল ঠোঁট ছুঁয়ে আলো ও অন্ধকারের জল সীমানায় ব্যবহৃত শব,___ তোমার মুখমন্ডল ঘিরে অশ্রুবিন্দুজাল অস্তগামী চাঁদের তলায় কে এঁকে রেখেছে নগ্ন স্নানঘাট অপলাপী ভাষার বৃত্তান্ত থেকে এই নিঃঝুম নির্বাসনের প্রান্ত ঘেঁষে সশব্দ ও আশঙ্কায় হঠাৎ নোঙরের দড়ি ছিঁড়ে কাপড়ের পাল,কাঠের মাস্তুল,___ বালির চরায় ঠেকে আছে জলযান নীরবতার আনত চোখে কত ক্লান্তি,ছিন্ন মিথ্যা ও প্রত্যয়ে পথচলা কিছু বাকী ছিল---স্বপ্নের মতোন সমবেত সুরে আত্মতৃপ্তির সঙ্গীত;যারা গেয়ে থাকে,তারা বিদায় নিয়েছে সংহত উৎসব শেষে আমাদের ডানাজোড়া খুলে আমরা কী তবে জাগতিক বোধের অতীত আঁকড়ে থাকব ২৩. আশ্বিনের রোদ শুয়ে আছে বালুচর,কাশের জঙ্গলে নিভৃত সত্ত্বার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি;শবানুগমনের প্রহরে প্রতিবর্ণী অভিমান,---মুমূর্ষা ও শিল্পের অন্বয়ে মৃৎশিল্পীর চাকে নূতনভাবে নির্মিত যাত্রিকের শুষ্ক দেহ আবর্জিত কবিতার লাইন আউড়ে দ্রুত হেঁটে গেলে ২৪. ছন্দ বিভাগ ও বিভাজনে সমস্ত সকালবেলা সান্দ্র স্রোতের ভেতর পরিচিত উজ্জ্বলতা;নিশ্চিত শপথে মগ্ন সহজাত প্রবণতা আমি তীরে দাঁড়িয়ে রয়েছি মেঘ-রৌদ্র-আলোয় রচিত নিয়মনিরুদ্ধ প্রীতস্বরে ডেকে যাচ্ছি তুমি,জল ছেড়ে উঠে আস নিভৃত গৌরবে ঠোঁট তুলে বলে দাওঃ আমি একা নই ২৫. আমাদের ইচ্ছেগুলোর রুপরঙ আছে ধূসর প্রপাতে চেয়ে আছো ক্ষরণের দিকে খোঁড়া পায়ে চলে এসেছি;প্রাকৃত পৃথিবীর সমস্ত চাতুরী সাদা শরীরে মেখেছি বালুচর পার হতে যতটুকু শব্দ,তার চেয়ে বেশী শেকলের ঝনাৎকার শব্দ তুলে বুকের ওপর দিয়ে হেঁটে যায় দিন আমাদের ছড়ানো উজাড় কথামালাগুলো শেষ বিকেলের গোধূলিতে জলের মতোন স্পষ্ট জলপ্রবাহ,জলদর্পণে অনর্গল ছায়া এসে মিশেছে-ব্রতধারণে তোমার শরীর ঢেকে আছে-দুই তীরে রক্তিম ফোয়ারা দ্বিধা এবং ভয়ের প্রবল টান তবু আমি তোমার কাছেই ছুটে আসি

অন্য নাম

অন্তরের অতলান্ত খুঁড়ে দেখেছিঃতোমার আত্মা মিশে আছে অন্য এক নামে অকপট নিসর্গপ্রতিভায় যাদের অভিলাষ---অধিকাংশ হতপ্রাণ মেঘ ও শস্যের জন্যে প্রার্থনারত;মৃগয়া এবং মধু সংগ্রাহক শ্বেত ও প্রবাল ঘূর্ণিস্রোতে শুরু হয়েছিল প্রথম প্রণয় ঘাসে ভরে আছে উঠোন,এখন এই অবেলায় আর আমাকে ছুঁয়ো না

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০১৪

দেবী

আতুর বেশ্যার স্তনশীর্ষে সূর্যদাহ এবং অজ্ঞাত দংশনচিহ্ন গূঢ় মিলনের আকাঙ্খায় শরীর মথিত বিষ নিয়ে আমি তোর দরোজায় অতিথি,দেবতা পূজো দিবি না শরীর ঢেলে পূরোটা অতীত জুড়ে অনার্য আঙুলে মালা ও মদিরা শরীরের দূরতম শেষে অন্তিম বিস্ফার--- বিছানার মাঝখানে সভ্যতার ঘুম তুই কাঁদিস না বরঞ্চ গেয়ে নে কিশোরী নদীর গান বালুচরে যদি জেগে ওঠে উল্টোমুখের প্রাণ,আদিআত্মা যে যাই বলুক আমি জানি তুই সেই দেবী ঈশ্বরের সাথে অভিমানে মর্ত্যে নেমে এসেছিস তোর ডানা ছিল অন্ততঃ থাকাটা বিচিত্র ছিল না পিঠ উল্টিয়ে দেখিয়ে দে কাটা ডানার শুকনো রক্তক্ষত

মন্দাক্রান্তা রাগমোচন

পৃথিবীর শেষ কবিতাটি লিখতে অজস্র শব্দ ও বাঙ্ময় বেদনার মধ্য থেকে হিংস্র ও মাংসাশী অন্ধকারে জেগে ওঠে এক স্বপ্নাতীত সুর--- বস্তুত,দীর্ঘদিনের নিষ্ফলতা,শিল্প,সম্ভোগ,উদাসীনতা,--- ইন্দ্রিয়-তাড়িত ও প্রুতিশ্রুতিশীল কবিকে স্পর্শ করে না;সরল আকাঙ্খার মতো ভগ্নস্তুপের ভেতর এক অবিনশ্বর প্রচ্ছায়া---সোনালী বিভ্রম অশ্রুগ্রন্থির বিকাশ,মাতৃস্তন,বৃক্ষাশ্রিত বসত,পরিচয়ের সব সূত্র মুছে শালগাছের আড়ালে ধ্যানরত বুদ্ধের আসীনতায় গ্রীষ্মদুপুরের স্থির বিষুব শূন্যতা অবরোহী পদ্ধতিতে শনাক্ত করছে ভূত,ভবিষৎ ও অতীত চেতনার অস্থির জগতে বিতাড়িত হবার মুহূর্তে পরিদৃশ্যমান সুন্দরের জ্বালামুখ,মৃত্যুদিনের ফ্যাকাসে রঙে খুলে রাখে তার দৃষ্টির আগল মন্দাক্রান্তা রাগমোচনের সুরে বিমোহিত শেষ কবে তাকিয়ে দেখেছে প্রেমিকার পায়ের ঘুঙূর

বুক-চাপা সমুদ্র গর্জন

যেটুকু দেয়ার কথা ছিল--- হাতের আঁজলা ভরে শূন্যদৃষ্টি,বুক-চাপা সমুদ্র গর্জন,--- হৃদয় মথিত শান্ত আবেদনগুলো অজ্ঞাত জলের মতো বেড়ে উঠছে;লবণজল চুম্বনের ছবি মুছে নিয়ে গেল অতিকায় ঢেউ ভদ্র ও বিমূঢ়তায় পলি জমে ওঠে আমার নিমজ্জমান ঘরে তোমার শরীরে বৃষ্টিভরা মেঘ কিন্তু কোনো বৃষ্টি নেই বুকে ব্যস্ত যৌবনের তাপে বাষ্পে বাষ্পে ভস্মীভূত শরীরের ছায়া মাটিছোঁয়া মুহূর্তে ঝর্ণার কলরোল একদিন স্তব্ধতার মুখোমুখি নগ্নশ্বাস,ঊরুর কম্পন,--- রতির এমন উথাল-পাথাল ঢেউ সেদিন দারুণ ঝড় উঠেছিল,মাঝরাতে

একাকীত্বের শূন্যতা

সিঙড়া বনের ঐ পাশে অনর্থের ছায়া,মেঘ ও সূর্যাস্ত চুম্বনরত বাঁকের মুখোমুখিঃপাথরে আছড়ে পড়া ঢেউ এবং তারপর শুধু একাকীত্বের আবহ একাকীত্বের শূন্যতা মেলে উড়ে যাবার সময়ে আমি স্পর্শ করেছিলাম দুঃস্বপ্ন তুমি তার ভেতর নিঃশব্দে মাথা নেড়েছিলে

পরিত্রাণের প্রত্যাশী

কাঁচুলির গিঁট খুলে মেঘ ও ছাঁয়ার খোঁজে-অভাবিত প্রাপ্যনীয়ে পরিষ্কার রক্তে ফুটে ওঠে উষ্ণমন্ডলের সূর্য,উত্তরের কৃষিক্ষেত নির্জন দুপুরবেলা,কাশের জঙ্গল নড়ে ওঠে অবিশ্বাস্য রুপান্তরে নির্বাণের মোহ ভেঙে বালির ওপর শুয়ে আছে বৌদ্ধ ভিক্ষু নগ্ন শরীরের চোখে নিরীশ্বর রৌদ্রে পরিত্রাণের প্রত্যাশী

সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০১৪

সমুদ্র,আগ্নেয়গিরির সুর

করতলে যেটুকু জীবন ধরে,--- তার বেশী চাই নি কখনো দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরের ভেতর থেমে আছে জাগতিক স্রোত রজঃস্বলা দিন,অন্তহীন রাত যে কোনও পূর্বতন প্রেমিকা;সমস্ত সম্পর্কের শেষে লুকানো অভিমানের ইতিবৃত্ত-কত অবিশ্বাস্য যন্ত্রণা,ঈর্ষার সংক্রমণ চতুর্ভাঙা মুখ,চোখে ময়াল সাপের ক্রোধ আমি কেন এত মূঢ়মতি আধা জীবনের জমানো কৃষ্ণচূড়ার যত ফুল অপাত্রে ঢেলেছি অন্তর্বেদনার পাখি সুর ধরে সেই সুর সমুদ্রের,আগ্নেয়গিরির

শনিবার, ১২ জুলাই, ২০১৪

সম্ভোগ এবং বৈরাগ্য

দু'পায়ে ব্যর্থতা,প্রগাঢ় শরীরে ধূলো ও ভস্মের কণা এ-জীবন যেন অন্ধকার,শূন্যে মুছে যাবার বর্তুল পথে গতানুগতিকতার রৌদ্রে ঝলসানো ফুলে-ওঠা বাঁশঝোপের ভেতর দুঃখ ও যৌনতা ভেঙে চোরাপথের নিষিদ্ধ মানচিত্র এঁকে সম্ভোগ ও বৈরাগ্যের গৈরিক কৌপিনে আত্মসন্তষ্টির রঙিন জগত রক্ত,মদ ও জ্বালানী---অন্ধকূপ এবং উন্মাদ আশ্রম,___ নিজেরাই নিজেদের কবর খুঁড়ছে পাহারায় পাথরচোখের সৈনিক,উন্মুক্ত টাঙ্গি হাত

বিবৃতি

রাত্রির আড়ালে চোলাই,কারণ বারি ও সাট্টার ধূম লেগে আছে তোমরা অপেক্ষা কোরো,--- কলার মধূর মতো কিশোরী ঠোঁটের স্বাদ পুঁজরক্তে মাখানো চাঁদর আর অনন্তের কাছাকাছি দীর্ঘ শৈত্যের ভেতর অন্ধকার প্রসূতিসদনে ঘুম নেমে আসে ক্রমবিকাশের ছবি,পরিত্যক্ত সারেঙ্গী ও অন্য বিবর্তনে অজন্তা,ইলোরা থেকে আজকের এই কসমোপলিটন শহর ঘিরে যে মন্বন্তরের রুপরেখা---কুৎসা ও নির্মমতার সমকামী সভ্যতার আস্তাবলে জন্ম নেয়া ক্ষমতা ও মেগালোম্যানিয়া___ ভেবে দেখেছোঃদুর্জ্ঞেয় পাটিগণিতের নির্বেদ শূন্যতা বেদ,কোরান ও বাইবেলে সঙ্গত প্রশ্নচিহ্নের অন্তরালে আত্মগত প্রশংসার স্তব দুঃখমোচনের কোনো সার্বজনীন পদ্ধতি নেই কিন্তু ধর্মযাজকের শুয়োরমুখে ঠিকই শোনা যায়ঃ নিশ্চয়,পাপের ক্ষমা আছে

বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০১৪

রাতের গল্প

নিরানন্দ ঘুমের ভেতর এক লুকানো মৃতদেহের সাথে আমি প্রতিনিয়ত সঙ্গম করি। বিনাশের গভীর সঙ্কেত বেজে উঠলে অশ্রুর শুক্র তীব্র গতিতে অশ্রুর ডিম্বানুর সাথে প্রচন্ড সংঘর্ষে সম্ভাবনাময় নূতন একটি সকালের জন্ম দেয়। এভাবেই একেকটি রাত কেটে যায়।

বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০১৪

ধূপের মতোন উড়ে গেছে প্রতিশ্রুত প্রেম-৫

৪১. চারিদিকে শুধু বিপরীত জল।এমন প্রপাত-ঝরে পড়ে রুপালী আকাশ।ভেঙে দিয়ে সাজানো জীবন চিবুকে পাষাণ জেগে ওঠে,---রাতের রাক্ষুসী অন্ধকারে একে একে খুলে যায় গ্রহ-নক্ষত্রের গিঁট,ভেসে আসে মাতালের অট্টহাসি।ভেবেছিলাম কবেই মুছে গেছে সব। অর্থহীনতার ভেতর চৈতন্য,নেশা,কস্তুরী,অকাল বৈধব্যের শ্বেত পাখি অনুসন্ধিৎসায় মেলে ধরে তার দূরহ শিল্পকর্মের ডানা।জলের সীমান্ত ঘেঁষে চলা সারিবদ্ধ নৌকাগুলো একে একে থেমে যায় তোমার সংকেতময় চোখে।তোমার রক্তিম নখে খেলা করে ট্রাফিকের লাল, হলুদ,সবুজ আলো।বাস্তবতাবর্জিত চরিত্রহীন মুখজুড়ে আতসবাজির স্ফুলিঙ্গে বিনষ্ট বসন্তের স্তব্ধ ছায়া।নিমগ্ন প্রেম,বিরহের রক্তক্ষরণের পাশাপাশি বহু অবিশ্বাসে শরীরের ভেতর যে গান বেজে ওঠে,অপ্রস্তুত স্মৃতি,---গীতপঞ্চাশিকার এ-রাতে সমস্ত ব্যর্থতা ধূয়ে নেবে আদ্যাপান্ত।স্তুপের সমস্ত দিন ফেলে নামগানে ভেসে চলেছি।কে কাকে গীতময় সৃষ্ট জগতে আঁকড়ে ধরে এক বিদায় বেলার থেকে আর এক বিদায়ের মাঝখানে সরলরৈখিক পথ---সত্য ও মিথ্যার যমজজন্মের পূর্বাপর গানে ঐ পথের শেষে বুড়ো বটগাছ অনেক দেখেছেঃস্বতঃস্ফুর্ত ও দ্বিধাজড়িত পায়ে ঘর জ্বালিয়ে যাওয়া নারী,ব্যর্থ প্রণয়ের ইতিহাস, বিচ্ছেদ,মিলন এবং সন্তত জীবন। আমরা এইভাবেই প্রতিদিন বাঁচি এবং মরে যাই।নীরবতার চৈত্য ও দেহাতীত কূটভাবনার প্রাকার সন্ধ্যায় নিঃঝুম নির্বাসনের নগ্নতায় তোমার শরীরে বিবিধ বিম্ব-প্রতিবিম্বের উন্মাদনা,ভৌগলিক রেখা ঘিরে আদিম উল্লাস।দিগন্তের এইসব দখলদারির মাংস খুবলে নেয়া কাক ও শকুন---ডালিম গাছের ডালে ডানা ছড়িয়ে বসে আছে,নীচে জলকাদার ওপর লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ। ৪২. তোমার অস্তিত্ব ঢেকে আছে অনাশ্রয় আর অবক্ষয়ে,---ফিরে আসবে?শেষরাতের সান্দ্র প্রহরে যে ঘর ফেলে এসেছো-সে ঘর চিরতরে পরিলুপ্ত।অবধারিতের এমন সময়ে পরিপ্রশ্ন ওঠে?প্রশ্নবানে জর্জরিত করে দেখো নিজেকে-সৈকতে তার ইতিবৃত্ত লেখাআছে।তোমাকে যে নামে ডেকেছিলাম-সে নামও বর্ণরীতি,ধ্বনিজ আবেশে পালটে গেছে কতো অবিশ্বাস্য যন্ত্রণায়।বিচ্ছেদের প্রান্ত থেকে ভয়াবহ সুষুপ্তির মাঝামাঝি সরলরেখার পথে ভাঙা রাতপাখা হাতে সময় পারাপারের যাত্রী---মোষ ও শুকরবাহী;সুখের ভেতরে সিঁড়ি আছে আরও ঊর্ধ্বে উঠে যাবার?রাস্তার বাতিগুলো তেমনি জ্বলছে।সেবারই প্রথম এ-পথে এসেছিলাম।নিখোঁজ যাত্রীদের তালিকার গন্ধ শুঁকে শুঁকে,পদচিহ্নে নাক গুঁজে অভিবাসী অসুরেরাখুঁজছে আমার নাম।আমি-তো নিখোঁজ নই,স্বেচ্ছা-নির্বাসিত কবিতার কাছাকাছি সরলতা খুঁটে নিই।তুমি তার কিছু ভাঙতে চেয়েছিলে?অকূল জোনাকীময় এই রাতে অন্য গ্রামের ডাকাত একাকার করে দেয় সমস্ত দিন ও রাত।তাদের পায়ের চাপে কেঁপে ওঠে জনপদ,পাথুরে নদী ও আমার নিয়তি।কোনো দুঃখ নেই, ভার জমে আছে শুধু।প্রতিবিম্ব নিয়ে যতদূর গিয়েছি-সুন্দর এসে মিশে থেকেছে প্রতিভাকণা এবং জীবিকার সীমান্ত প্রদেশে।শরীরের শিরা-উপশিরা ছিঁড়ে যখনই হাতে তুলে নিয়েছি হৃৎপিন্ড,---উদবৃত্ত কিছু নেই,পথের বিলাসে শূন্য-বাজনা বাজে না।প্রণতি ও উত্থানের মাঝামাঝি অদৃশ্য সুতোর জাল।অমন প্রাকৃত জালে আটকে রয়েছে অতীতকালের প্রেম,বেদনা ও অবসাদ। মুছে যাবার সাহস নেই-ফিরে পেতে দাঁড়িয়ে রয়েছি এই বাঁকানো সাপের পথে।জলকষ্টে ব্রতধারণের কথা ভুলে গেছি,ভুলে গেছি আমার সমস্ত দিন,রাত এবং সজীব আক্রোশভরা তন্বী শরীর।মুখর ভাঁজে একদিন আমাদেরও রাত্রির ভেতরে রাত্রি এসে মিশে যেত আর অন্ধকারের ভেতর থেকে গাঢ় অন্ধকার এসে ঢেকে দিত শিৎকার ও ললাটের তিলক,বিমূর্ত অভিমান।মাধবী লতার স্রোতে সেইসব আজ ভাসমান গল্প যেমন মৃত্যুর পর মৃত্যুভয় শুয়ে থাকে সমস্ত উঠোন,ঘরে।তোমার দু’চোখ ভরে যায় কালোপাখির ছায়ায়। ছন্দের ভেতরে,পঙতির ভেতরে তুমি বারবার নেমে আসো,আমাদের এতো দ্বিধা কেনো? ৪৩. সন্দেহমুখীন দুপুরের পথ এসে আমাদের সম্পন্ন উঠোনে মিশে গেছে আর আমাদের স্বপ্নেরা নিমগ্ন বালুকা বেলার।সংবাহন সূর্য নির্বিকার উত্তাপ ছড়িয়ে দিচ্ছে।আজকের গল্পের শুরুটা এভাবেই ক্রমশঃ উচ্চতা এবং শিখর ছাড়িয়ে আরও দূরে পর্বতের মালভূমি কিংবা পাহাড়ের সানুদেশে ইত;স্তত রডোডেনড্রন গুচ্ছে,গর্ভবতী পাথুরে শিকড়ে,বাঁশ ও চন্দনপাতা-ম্লান করতলের ভেতর প্রত্যকের অচেনা শরীর অন্য শত শরীরে মিশেছে।চিরকাল তোমার বাহুর অভিলাষী-বুক জুড়ে শস্যহীন ঘূর্ণিপাত, পাঁজরের স্ফুলিঙ্গে ঝরছে মটরদানার মতো আগুনের দাগ।শ্মশানের হিরণ্ময় চিতা কতক্ষণ জ্বলে?আধ প্রহর?শাশ্বত আগুনের উপাসনামন্ত্র,বেদবেদাঙ্গবিৎ সত্যের ধর্মে অভিশাপ জেগে ওঠে। অরাজকতা ও ন্যায়পরায়ণতার ভেতর তোমার অনাদর হয়েছিল?অদ্ভূত রঙিন দিনগুলো কত চিহ্ন ধরে রেখেছে?বুঝি নি ধর্ম।সমূহ ক্ষতির পূর্বাপর মুহূর্তে আনুপাতিক ছায়া.....অতঃপর অপদেবতার ঘোড়ার খুরের শব্দে হাসতে হাসতে বলেছিলেঃ’এ-এমন কিছু নয়।‘প্রতিশ্রুতিশীল যে নক্ষত্র প্রতিদিন মাথার ওপর আলো দেয় –সেই জ্বালিয়ে দিয়েছে মাথা,বুক নাভী আর,আর অজস্র ইস্পাতি গুঁড়া ঢেকে ফেলছে চরাঞ্চলের যত বালি। ৪৪. সম্পন্ন শব্দের অন্তরালে দীর্ঘশ্বাস-অপরিণত শীতের পাখিগুলো উড়ে আসে আর স্বপ্নের ভেতর দেবদারু গাছ থেকে খসে পড়ে অজস্র হলুদ পাতা।আমি ঐ হলুদ পাতা ছুঁয়ে দেখেছি তোমার পরিণতির শূণ্যতা-বৃত্তময় চাঁদমারি গর্ভগর্ত।অন্য ধর্ম,বস্তুত তোমার চোখে জন্মান্তরের প্রস্তুতি।জন্ম ও মৃত্যুর সম্ভাবনাময় দূয়ার ও সহমরণের চিতা থেকে সরাসরি আমাদের সাংসারিক উঠোনে উড়ে আসে বাঁশপাতা।পরান্নলোভী সূর্য,কালো নক্ষত্র ও বালুকণা রোগজীবাণুর মতো শরীরে জড়িয়ে মুড়ে নাও মৃত শিশু। শ্মশানতলীর আঘাটায় সরাসরি ঢেউ এসে কেঁপে ওঠে আগুনের সর্বস্বতা। তুমি কোন সর্বনাশা খেলায় মেতেছো? নৈশকালীন আগুন জানে এবারের শীতের তীব্রতা।অনপনেয় হেমন্তে আমিও বুঝে নিয়েছি অশ্রুর নীল নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্বের মহাবিষুবীয় রেখা আমার চিবুক ছুঁয়ে গেছে।পায়ের তলায় লুন্ঠিত,কাশ্মিরী শাল-তার ছেঁড়া,ম্লান সুতো শরীরে জড়িয়ে আছে পাকে পাকে এবং অতিরিক্ত মুনাফায় নেশাতুর চোখ মেলে দেখে নেই তোমার উলঙ্গ দেহে আগুন,উল্কির ছাপে আমার আত্মার চেয়ে মহার্ঘ্য রেশম এবং প্রত্যাখ্যানের চাতুর্যময় ভঙ্গি বলে দেয় কূয়াশার ঐ পারে সূর্যাস্ত অতঃপর বিদায়ের ঘন্টাধ্বনি.....। আধোলিন প্রতিটি বসন্তে আমাদের নাম লেখা ছিল।নিভৃত বাতাসে সেইসব সুন্দর দিনগুলোর স্বচ্ছ জল অন্তিম গোধূলি নিয়ে বুকের ভেতর আলো জ্বালে।জোনাকী পোকার হাজার ডানার শব্দে সেইসব আজ চাপা পড়ে আছে। তুমি কোন দুঃখে ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছ? ঘরপোড়া রমণী,নিষ্পাপ মৃতদেহে দীর্ঘ কালিগোলা ছাপ,অকাম কামনা,---এক একদিন এই ঘুমন্ত শরীর অনুপম মেঘের মতোন উড়ে যায়;যারা ফিরে আসতে চেয়েছে-বছরের ক্লান্ত শেষদিকে অগণ্য পালক পড়েছিল-হলুদ পাতার মতো এতো শীর্ণ পথ পার হয়ে কেউ-ই আসে নি।অদৃশ্য বিদ্যুতে পুড়ে গিয়েছিল যে ডানা-সৌন্দর্য্য অবলুপ্ত সমস্ত ভুলতে হাতে তুলে নিই মেঠোফল।সুন্দর নিয়তিগুলো জ্বলে একা একা বজ্রাহত,দীর্ঘ ঝড়জলে। ধাতুর গলানো চাঁদ থেকে তরল ফোটায় শালবনে ঝরে পড়ে অপর্যাপ্ত টানে লেখা 'সতর্কলিখন।' ৪৫. পশুচলাচলের সুড়ঙ্গ পথে বিষাক্ত আত্মার অশালীন বীজানুবিস্তার,ঘূর্ণায়িত দুই চোখে জীবনের অর্থহীনতা ও অনিষিক্ত ভ্রূণে শকুনের ডানা-মুখে খর মরভূমি নিয়ে চিরায়ত সকালের প্রতি পলে বিষাদ;চেতনাহীন শূন্যের ভেতর লোকায়ত অমর্ত্য ফুলের ঘ্রাণ মুছে বিপরীত প্রতিদ্বন্দ্বী বোধে কপালের একপাশ থেকে আর এক পাশে উড়ে যায় সারাৎসার বিচ্ছেদের নীল।নির্নিমেষ করুণ অঙ্গারে বুক,নাভী,ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হতে হতে সমস্ত শরীর মর্ম ছিঁড়ে আত্মরতিহীন যৌন মখমলের গালিচা পার হয়ে নির্মল বীজের থেকে ক্রমাগত পূর্ণরুপান্তরিত মহিলা হয়ে উঠছো?সালের বনে নির্বেদ শূন্যতা ঝরে পড়ে,ঝরে পড়ে ত্যক্ত বিপূলতা-যোনির শিখরে এতো রক্তপাত?সায়াহ্নকাল অবধি উচ্চকিত নিনাদ-কেননা জন্মোৎসব জাগতিক প্রণালীর ভাষা।ঔদাসীন্যহীন মৃত্যুতে মঙ্গল কিংবা অমঙ্গল কোনোটাই নেই। শোকের ভাবানুষঙ্গে মেঘ তার শ্রাবণসমেত ঝড় এবং অবিরল বৃষ্টি ধারাসহ গড়িয়ে পড়ছে।প্রাপ্যের তালিকা থেকে কিছু বাদ পড়ে গেছে?ত্বক পরিচর্যাকারী ক্ষার,নৌ-রথ,সৈকত,সমুদ্রের সান্দ্র স্বর?ঢেউ আর বায়ুর বিহারে অন্ধকার রাতের রাশির ছকে সূর্যোদয়ের স্বভাব ছটা দেখেছিলাম।প্রতিপদের চাঁদ বনের ঠিকানা মিলিয়ে নিয়েছে।ভূ-লুন্ঠিত আলোর ভূমিকা ছিল অথচ উন্মাদ কলাকার মঞ্চ জুড়ে অন্ধকারের আবহ্ন চেয়েছিল।তা-কি ঠিক?তা-কি কুশীলবের প্রত্যাশা?ধুন্দুমার আলো ও ছায়ায়,ভাষা ও বল্কলে,ব্যথাবেদনার অস্তাচলে কাকে খুঁজে পেয়েছিলে?আজ,বায়ুভূক গ্রন্থগুলিই আমার কাছে ছুটে আসে পোষা বিড়ালীর মতো।বাদামী শরীর ভরে দেয় তার সাদা রোমে।অক্ষর ও কবিতায় ফুটে ওঠে রঙধনু,আশ্চর্য,উদ্ভাসিত সহাস্য শিশুর কন্ঠ,বাবার অসুখ আর মায়ের শিন্নিমানতে ক্ষেতজাঙাল,গ্রামের আলপথ,পিতৃ-পুরুষের কবরখানায় মুক্তির বাসনা।ভয়াবহতায় প্রতিটি স্বপ্নের রেখা কেটে গেলে ভূ-কম্পিত প্রাকৃতিক নারী-জেনে নাও,আমি পরান্মুখ নই।প্রাচীর-ফটকে যারা প্রবেশাধিকার পায় নি তাদের একজন আমি এবং আমার অস্তিত্ব গোধূলিবেলার আলোর মতোন ক্ষণস্থায়ী নয়। ৪৬. যে পাথরে বসে মিলনের সঙ্গীট গেয়েছো,---পাঁজরকাঁপানো বিরহের সঙ্গীত তার চে' সুমধুর ছিল?এখন শহর থেকে শহরের স্মৃতির মিনার সব ব্যথা-বেদনা মোচন করে খুলে দেয় অসম্ভবের কুলায় শ্বাপদ সুন্দর শ্যামলতা ও বুকের ধারাস্নাত জল,রক্ত।ক্লানি ছিল না কখনও।গোধূলির রঙের অন্তিম থেকে অন্তঃসারহীম আলো খুলে ফেলেছিল সমস্ত শরীর,অস্তীতির ঘট ভেঙে প্রতিধ্বনিবিহীন শূন্যতা মুছে লেঁপে ওঠে দু'টি শরীরের একীভূত প্রতিবিম্ব।জলসন্ধি কিংবা প্রতিফলিত হ্রদের জলে ছায়া ছিল না-গরিমাচূড়া,আভিজাত্যে জ্বলজ্বল করছিল বুজে-আসা কূয়া আর ভস্মময় পার্ক।দীর্ঘ চরাচর,---আরও দীর্ঘতর যবনিকার উত্থানে আড়মোড়া ভাঙে সিঁদুরমাখা পাথরখন্ড।পূর্বাপর স্মৃতিতে আমার চোখে জেগে ওঠে শুকতারা,হিমতারাসকল,আগুনপোড়া খড় এবং শ্মশানঘাটের কালশিটে পথ।চিতার রুপালী ছাইয়ের ভেতর কিছু কী গোপনচারিতা ছিল?আমাদের বস্তুবাচক বয়স কত হল---ছেঁড়া কাগজসমেত এইসব ভাবি আর আমার উঠোনময় ত্যক্ত সাপের খোলস হেঁটে যায় সাপের সন্ধানে।বলা হয় নি-নিথর এসে দাঁড়ানো মিথুনমুর্তি ঘোর কালঘুমে অবিচল ঋণী থেকে যায় ঘুমের ভেতর।নির্বাসিত ভাষার স্বেচ্ছাচারিতা কিংবা তার জলীয় ফেনায় সহজ আশ্রয় পেতে দু'হাতের করপুট পেতে...কে কাকে আশ্রয় দেবে দুর্যোগের এই কালে?অতর্কিত গাছের শুকনো ডালপালা ছুঁয়ে তাদের ক্ষতের নীচে শস্যশরীর-সমস্ত শস্য ঝরে পড়ে চৈতালী বাতাসে। অতঃপর রমণী,হাজার আলোকবর্ষ নিঃশ্বাসে পাকা শস্যের বর্ণের মতো তোমার শরীরে স্বর্ণাভ-হলুদ ছটা-এই রাত্রি,আতুর আলোয় জন্মদাগ স্পর্শে কেবলই মনে হয়, 'ভুল এ-জন্মে প্রতিকারবিহীন দ্রুত ক্ষয়ে যাক।' ৪৭. হাতের ছাপের মূর্ত এই দেয়াললিপিকা;যার প্রতি ভাঁজে ভাঁজে মতিচ্ছন্ন মুখ ফুটে আছে,শোকাচ্ছন্ন হৃদয় ও দ্রাবিড় আঙুল-কোন কার্যপ্রণালীতে এটা শনাক্তযোগ্য?ঈশ্বর অবরোহী?সুর আর রক্ত?সূর্যপাত?বিসর্জন?অকাল্বোধন? গানের গভীর গলা থেকে উঠে আসে তোমার রক্তিম গ্রীবা।বিদায় বেলার শেষ রাগিণীতে তরল আগুন ছুঁয়ে দিয়েছিল আমিষরঙা শরীর।বিষের বোঁটায় সর্পগন্ধা-ছেয়ে আছে তোমার উঠোন। নৈঃশব্দ্যের চলচ্ছায়া,অবিশ্বাস ও অপরিণিত ভাষ্য এবং টীকাসমেত সরল মিথ্যে নিয়ে পৃথিবীর প্রান্তশায়ী জ্বলন্ত রমণী,সমস্ত বোধ ও চেতনার উর্ধ্বমুখে গতানুগতিক প্রথার বাইরে থেকে জেগে ওঠা সেই নীল অঘোর-বঞ্চণা অনভ্যস্ত বিক পেতে ধরে রাখি।আগুনে পোড়ে না।মোছে না জোয়ার জলে।প্রতি রোমকুপে ঘন তার সজীব সঞ্চারে।প্রতীকী অথচ আন্তরিক পরিত্রাণহীন রুপটান স্মৃতি-কোনও বিসর্জন নেই শুধু বিষাদের আবহে আকাশ ছেয়ে আছে। চুম্বনহীণ ঐ ঠোঁটে বিষধুতুরার নীল।কুহকিনী অন্ধকারে শুধু বেড়ে ওঠে নখ ও দাঁতের দাগ।তোমার বাহুর সুপ্ত ভাঁজে কতো নিথর শরীরে ভরে আছে।রোগা,ভীতু আলোতে ভুতুড়ে সাড়ে তিন হাত ছায়া,এতো বেশী অন্ধ হয়ে গেছো?কে তোমাকে ছোঁবে,আজ?পারাপারের সমস্ত নৌকা পুড়িয়ে এসেছো?সবরকমের অন্ধকার আজ এতো প্রিয় হল?ভেবেছো সমস্ত অপচ্ছায়া এই বিশালাক্ষী অন্ধকার গিলে নেবে?নিরন্তর প্রণয়ের মধ্যে প্রেতিনীর নাচ নেচে যাচ্ছো-মুহূর্তের বর্ষণে অতীতকাতরতা অবাঞ্চিত করে। তোমার গানের শব্দ লক্ষ্য করে যারা ছুটেছিল দিগ্বিদিক অজ্ঞানের ঘোরে-তাদের কঙ্কাল ইতঃস্তত পড়ে আছে,পথপ্রান্তে;তারা নিশীথস্নানের দ্বি-পদী রাশিমালার সুত্র বুঝতে পারে নি কিন্তু তুমি ঠিকই জানতে দেহমিলনের আবর্তিত সূত্র। সম-সাময়িক নিষ্ফলতার ভেতর সারারাত জেগে ভাঙা আকাশের গায়ে সময়ের অথর্ব তুলিতে পূর্ব্ভাদ্রপদ নক্ষত্র,রেবতী,কৃত্তিকানক্ষত্র,সপ্তর্ষিমন্ডল আঁলি এবং মুছে ফেলি রোহিণীনক্ষত্র,পুষ্যা ও অনুরাধানক্ষত্র।মুখের রেখার লেগে থাকে সিংহরাশি,কালপুরুষের ছায়া এবং নিঃশব্দ সময় কমে দূরত্বের পরিমাপ কেবল আকাশ ছুঁয়ে যায়। তোমার দু'চোখে সাঙ্কেতিক গুহাচিত্ররেখা,অপরিণত ভ্রূণের প্রসবের জটিলতা-প্রেম ও যৌনতা ভেঙে বিবর্তনের গুহায় উপবৃত্তাকার ব্রক্ষান্ডের ত্বকে মরণকালের নিস্তব্ধতা। গতি অবিচ্ছেদ্য তরল অগ্নির রিরংসায় কূটিল স্তনের বৃন্ত,উরুস্তম্ভ,জন্মদাগ কখন গ্রীবার তাপে ফেটে ওঠে-অপদেবতা মুক্তি ও ধর্মে,নিষেধের প্রবারণায় কখন ছুঁড়ে ফেলেছিল সতীচ্ছদ? তুমি গৌরী,কিশোরীকালের মন্ত্রে একদিন আমাকে আহ্বান করেছিলে। ৪৮. ব্যবহৃত পুকুরের জটিল শিয়রে হেলে পড়া তালগাছের ছায়ায় উড়ে আসা কাকের অক্ষর,চৈত্রদুপুরের ক্রোধ এবং আলস্যের অন্তর্দ্বন্দ্বে সমস্ত সোনালী বিভ্রমের চরে ভাষা ও বিচ্ছেদে ঐকান্তিক শরীরের তৃপ্তি ও সম্ভোজ্ঞ শেষে পরিত্যক্ত বাতিঘরের মতোন আমাকে নিঃশব্দে ছেড়ে উলঙ্গ বন্দরে নেমে যাও।দ্রুতগামী বুদ্বুদরেখা ও মুখোমুখি ঢেউ-রক্তে ভেজা,জ্বলন্ত সূর্যের কালো ছায়া-স্নায়ু ছেঁড়ে,শরীর বিদীর্ণ করে এবং ফিরে পাই রক্তের পরিশোধিত মদ।এই নাও,ভাঙা গ্লাস।যথেচ্ছ পরিবেশনে ঝাঁপ ফেলা অন্ধকারের দোকানে এতো মানুষের ভীড়?টেবিলে টেবিলে টুইস্টের টুংটাং,নারীর সঞ্চার,পুরুষের গলাবদ্ধ ফাঁসে সন্দেহের গান,গণিকার নিষ্প্রদীপ করতলে বাহুহীন ধরে গুপ্ত বিদ্যা,---চোরাডাক পৌঁছে যাক আত্মার গভীরে। নিশকৃতির চেয়ে দুর্দমনীয় আকাঙ্খা,সাবলীল শূন্যতা এমন করে ছড়িয়ে রয়েছে ক্ষরণের দিকে-এই গল্প,এই চক্রপরিক্রমায় সমস্ত ঋণ একদিন শোধ হয়ে যাবে?রাতের বিশ্বাসে যে গাছের নীচে পাশাপাশি শুয়ে নিঃশ্বাস শুঁকেছিলাম-তার ডালে উড়ন্ত পাখির বাসা;বহু ঝড়জলে এখনও অটুট।ছিঁড়ে নিতে চেয়েছিল বাতাস,রৌদের তাপের প্রয়োজন ছিল,বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়েছে,অবিনাশী ঝড় উড়িয়ে নেয় নি শুধু আমাদের ঘর পুড়ে গেছে,জ্বালিয়ে দিয়েছে বিচ্ছেদের নীল শিখা।ছাই ভস্ম ভেসে গেছে অকাল বর্ষণে। শূন্য কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে।হয়ত-বা আরও কিছুকাল টিকে যাবে। ৪৯. মাংসাশী অন্ধকারের মধ্যে বিমূর্ত রুপের নারী যতো শক্ত করে বেধেঁছিলে বুকের কাঁচুলি------স্তনশীর্ষে স্পষ্টতর ধারাবাহিক শোকের অবিনাশী কীর্তিগাঁথা যৌন-নিঃশ্বাসের নীচে চাপা পড়ে যায়।রাত্রি ঘন শীত-প্রস্তুত এখানে একমুঠো ধর্ম,সিকি,আধুলি,---খুচরো পয়সার আশীর্বাদ।অনির্দেশ্য টানে সুদীর্ঘ নিষ্ফলতার পর অবচেতনার স্থির অবসাদে সূক্ষ্মতর কম্পাসকাঁটা,স্থিতিস্থাপক এবং উদাসিনী তোমার শূন্যতা-প্রেম ছিল কখনো?শীতার্ত প্রহরের ইচ্ছাকৃত অসময়ে দ্বিতীয় বেদনা সঙ্গীতের চেয়েও বাঙ্ময় কেননা প্রেম থেকে জন্ম নেয় স্থবির কন্ঠের সুর,মোহরাত্রি;যা স্বপ্নে দেখেছিঃপ্রেমের প্রকৃত করতল,চোখ এবং চুম্বনের শামুক পিছল দাগ-সোঁদাগন্ধ দুঃখ থেকে মুছে গিয়েছিলে কোন মুহূর্তে?বিচ্ছেদ কিংবা অনিবার্য আমাদের ব্যর্থ প্রেমে এতো দুর্গলিত ক্ষত?ছায়ার মতোন দীন,প্রাচীন শ্যাওলা ধরা মুখে নীল ফেনা পোড়া ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকে।নিশিরাতের প্রহরে প্রতি পলে খোঁজো স্পর্শসুখ?ব্রাক্ষ্মনিতম্বিনী,রাত নেমে আসুক পাহাড়জুড়ে,তারপর জেগে উঠুক বিরহ। অনন্ত বিরহ-বর্ণময়।সাপের চলার পথে অক্ষরহীনতা,ভুল পাঠ।নিরন্তর পাঠে জলের গভীরে নেমে জেনে আসি পোড়া এই মুখ পরস্পরাচ্যুত জলের আঘাতে কতক্ষণে নিঃশেষিত হয়? ৫০. প্রতিটি দৃশ্যের অন্তর্গত গোপন মুহূর্তে মেঘ ও সূর্যাস্তরেখা ঘিরে সরল আকাঙ্খা-আমি তোমাকে চেয়েছিলাম। শুদ্ধ চিত্রকলা,প্রতীকী ব্যঞ্জনা ও কাব্যভাষার সূক্ষ্ম শৈলী এবং আবৃত যোনীর নির্মোহের রাতগুলোতে প্রণয় অসম্ভব শ্লোক ও নির্মম কটাক্ষের জগতে বস্তুতঃ অবাঞ্জিত-ই থেকেছি,চিরদিন।নক্ষত্রখচিত রাত্রির আকাশ।একটানা দু;সহ বৈশাখে ডেকে গেছি কাকের কর্কশ স্বরে।রুক্ষ্ম তালগাছের মতোন অন্ধকার কোণে দাঁড়িয়ে থেকেছো।রাতের প্রেতেরা চেটে গেছে শরীরের ত্বক,উন্মুক্ত পেট ও নাভী,উরুদ্বয়,সোনার কাঁচুলি খুলে জোড়া রাজহাঁসের বিমূর্ত ও ঘন রুপ নৈঃশব্দের মুখোমুখি মধ্যরাতের রতিশরীরে....শুধু কিছু অভিব্যক্তি ভেসে থেকেছে বাতাসে। কোথায় গিয়েছে যৌন-অহঙ্কার? শেষ কথন গল্পের শেষের অংশে এসে মনে হল অবিচ্ছিন্ন ফুলগুলো তত ভালো ছিল না যতটা আঙুলের ফাঁক গলে গড়িয়ে পড়েছে বসন্তরজনীর অনিঃশেষিত শোকতাপ।গতানুগতিক ক্লান্ত মুখচ্ছবির কবিত্ব কিংবা আমাদের আত্মউপলব্ধিতে বিস্ময়কর জন্মের প্ল্যাটফর্মেজোড়া প্রতীক্ষার সম্মিলিত আলো,অন্য প্রান্তে গন্ধমুষিকের দল;দাঁতে ধরে আছে ঔদাস্য,পলায়নের স্থিতিস্থাপকতা-দুই বিপরীত টানে বেড়ে চলে শূন্যতা ও দীর্ঘ রেললাইনের পাতজুড়ে বিধৃত আঁভা-গার্দের চায়াচিত্র। পশ্চিমের গন্তব্যে,সূর্যস্ত।সঙ্গীদলসহ সেদিকেই হেঁটে যাচ্ছ আর আমি ভিখিরির মতো সপ্রতিভ খুঁড়িয়ে চলছি পূর্বদিকে।সূর্যোদয়ে ধূয়ে নেবো মৃত পাখির ডানায় লেগে থাকা আমার পূরাণো সব প্রেমিকার প্রিয় ডাকনাম।

শনিবার, ১৪ জুন, ২০১৪

ধূপের মতোন উড়ে গেছে প্রতিশ্রুত প্রেম-৪

৩১. মায়ান বা তক্ষশিলা কিংবা যে কোনো পূরাণো সভ্যতার মতো সমস্ত ধ্বংসের শেষে কবরখানার মাটি ফুঁড়ে আরেক সভ্যতা এসে গেলে আমরা বলেছিলাম পূণর্জাগরন।অবিকৃত আগামীর গর্ভে কিছু বিস্ফোরণ...রঙের ঝলক।এইভাবে,এইভাবেই নূতন সভ্যতার শুরু অথচ সে জ্বলনের অরোরা আভায় শরীরের জল হয়ে ওঠে অগ্নিলাভা,গলন্ত ধাতু ও মাটির ভেতরে পচে যাওয়া হাড়ের স্তুপে বোনা বীজে হৃৎপিন্ডের রক্ত ঢেলেছি দু'বেলা যদি আশরীর ধ্বংস নিয়েও মেরুদন্ডের হাড় সীজা হয়ে দাঁড়ায়।মরণাহত জিজীবিষা,---প্রেম জেগে উঠেছিল ক্ষমার ভাষায়?সভ্যতার ইতিহাসে আবহমান বিচ্ছেদ।মানুষের ঘাতকজন্মে পাপযোগাদিদোষ।কালরাত্রিদোষে অন্ধ দুই চোখে স্থিরতা।আদিমতার নগ্ন প্রতিমানে গোপনে যে দুঃসাহসে ভর করে আগুন নেভাতে গিয়েছিলে---সেই আগুনে জ্বলছ্ব ঘর,সাজানো সংসার।বৃষ্টিভেজা রথের মেলায় যাই নি।পথশ্রমের গ্রামান্তরে উত্তর দক্ষিণ পূর্ব ও পশ্চিমে পায়ে পায়ে মুক্তি,মুক্তির শৃঙ্খল। সহজাত মুক্তি এমন সহজলভ্য। ৩২. শরীরের শেষতম হাড়ে কিছু পরিমাণ ত্বক লেগে আছে।মাটির আড়ালে মাটি চাপা দিয়ে ঘাসের বীজ ও জল (হৃৎপিন্ডের সব রক্ত জমে গেছে) ঢেলে মুছে দাও স্মৃতির সমস্ত চিহ্ন।গূঢ় লৌকিকতার পরাবাস্তব টানে এর চেয়ে বেশী খুঁজেছিলে অপার সম্ভাবনার স্তর?জায়মান শ্রেয়বোধে শিল্পের অন্বয়ে এবং প্রতিফলনের মতো বেঁচে থাকার অপর আয়নায় দেখি পূবের সমুদ্রস্রোতে আধপোড়া পুরুষ ভাসছে,---মরে গেছে বোধহয়।জলস্রোতে কার মুখ দেখেছিলে?রাত্রিময় অমাবস্যা থেকে উঠে আসে শবের মিছিল।চোখে তাদের জ্বলন্ত মৃত্যুচিহ্ন।বুকের আরেকদিকে বিমূঢ়তা?এতো বিমূঢ়তা ভালো লাগে?ভালো লাগে এইসব অলস ভাসানে ভেসে চলা ঘূর্ণিটান রাত্রি?অশরীরী অন্ধকারে তোমার করতলের স্পর্শে বাঁচতে চেয়েছিলাম।চেয়েছিলাম।নীরব পলের পাশাপাশি মাথার সমান্তরালে অতীতের স্থিরচিত্র।উপ্যাখ্যানের চরিত্র প্রেম দাবী করেছিল?তাদের স্মরণে দুঃখপথ-একে একে ম্লান খসে পড়ে উল্কা পতনের মতো।আমার ঘরের জানালাবিহীন অন্ধকারে বিচিত্র বর্ণের আলোকের ছটা ফেলেছিলে?জলের রেখার দীর্ঘ পরিসরে ধূয়ে নিয়েছিলে বিশীর্ণ হাহাকারের দুঃস্বপ্নের রাত।সেই তুমি কেন যে বালিকার স্পষ্টতায় ফুলে ওঠো?চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে অবিনাশ।কেউ জানে,কেউ জানে না।আমরা তার ক্ষীণ প্রান্ত ছুঁয়ে মুখোমুখি মুখোশের হাসি দেখেছিলাম।তোমার শরীরের নগ্নতা হাতের মুঠো ভরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম কচি শালপাতায় মুড়ে।আজ সেই পাপে অহর্নিশ ধ্বংসাবশেষের শ্বাস শুনি আর ঠোঁটের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে তেতো কষ।বাঘনখ আলিঙ্গনের ভেতর লাভা শরীর জড়িয়ে নিতে নিতে গোপন সংকেতে মনে পড়ে আমরা কীভাবে সমুদ্রের উষ্ণতায় উঠ গিয়েছিলাম।ভূ-মধ্যসাগরের স্রোত হঠাৎ সৈকতে এসে রুদ্ধ হল।তবু আমার স্বপ্নেরা দুপুরের,উবর্শী রাতের,সকালের শিশিরের জলে ধরে রাখে নীল যবনিকা।এর চেয়ে দীর্ঘ যবনিকা পৃথিবীতে আছে?ক্ষুধা ও নিবৃত্তিগানে মানুষ নিজেকে দ্বি-খন্ডিত,ত্রি-খন্ডিত কিংবা চতুর্খন্ড করে ফেলছে অথচ প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে দেখেছঃপৃথিবীর প্রতিচ্ছায়া কেমন শূন্যতা মেখে আছে?শূন্যতার ভেতর এতো ঢেউ কে রেখেছে?যথেষ্ট বর্ণনা ছিল না।বৃষ্টির পথ ভেঙে আষাঢ়ের কিছু অংশ ভেঙে ফেলেছিলাম।অন্যান্য বহু পুরুষের মতো আমি চেয়েছিলাম আমার নিজস্ব উঠোনে প্রতিশ্রুতিশীল নক্ষত্রের উত্থান ও দূর সমুদ্রের জাহাজের পাটাতনে শুয়ে নীল ঝর্ণাধারার জ্যোৎস্নায় অবারিত সৌন্দর্য্যে ছুটির অবকাশ।সকলেই চেয়েছিল সহজ আশ্রয় এবং ত্রাণ।এভাবেই বেঁচে উঠি ভাঙনের সীমানা,জলের অভাবে প্রাকৃতিক কূটিল লিখনে বৈপরীত্যে জোয়ার টানের মুখে। ৩৩. দ্রুত ছিঁড়ে ফেলা রক্তমুখ ভরে ফেনা,আকাঙ্খিত অপরাধে গভীর অসুখ,---আমার মানবজন্ম সারাদিন দলাদলা জল কাটে,কী কঠিন সব জল?বৈঠার শাব্দিক অর্থে পাল্টে যায় নদীর দু’তীর,বালিচর,কাশের জঙ্গল।দাঁড়ের বিরহী টানে যে মুহূর্তে একা হয়ে যাই কাকের দুপুর,ফাঁকা জলপথে দেখা হয়ে যায় দু’য়েকটা সভ্যতার যদিও কখনও তাদের নাম জিজ্ঞেস করি নি কিন্তু সেই গুহাচিত্রের আদলে দীর্ঘ সে অতীতকালে সুগত চোখের জল মিশে গেছে নদী ও সমুদ্রে।আঁচলে সংসার ঢেকে ডুবে গেলে ঘনমুখে।জাগরনের ঐ পারে থেকে গেল আধখানা শাড়ীর আঁচল।জীবনের রেখাগুলো অনন্ত প্রবাহে কেমন অস্থির হয়ে উঠেছে?তোমার দুই হাতের মুঠোতে আষাঢ়ের জলধারা।দেখো,ভেসে গেছে কত উন্মাদ যুবকদেহ।অতর্কিতে নদী পার হয়ে যাও।থেমে যায় জলযান,যাবতীয় স্রোত শুধু নদীর পূরাণে ভেসে থাকছে তোমার নাম। ৩৪. ব্রাক্ষ্মমুহূর্তের প্রার্থনা শোন নি।প্রেত-নিঃশ্বাসে সময় জেগে উঠছে যন্ত্রণা এবং বিচ্ছেদের পূর্ববর্তী বাঁকে আর করপুট ভরে উঠে আসে মিথ্যে মানবজন্মের গান।তারপর ক্রমশঃ সংক্রান্তি,নৈবেদ্য,পূজোর মন্ত্র.....।সময় কী নৌকা?অনায়াস ভেসে যাবে সহজ জলের স্রোতে?তীরে বিচিত্র ও বিবিধ পুরুষ সমস্বরে ডাকছে।অবৈধ সম্পর্কের শেষে এতো অভিলাষ লুকিয়ে রয়েছে?দীর্ঘচুল,ইচ্ছাময় চোখে নানাবিধ আলো-অন্ধকার।ফেলে আসা ভাঙা মুখ ঝরে গেছে?অধোঃমুখে মনে পড়ে অতীতের প্রিয় মুখ?আদিম জলের মধ্যে অনেক কালের দুঃখ,কতো সমর্পণ,---জল কী হিসেব রাখে?দু’একটি নিরিবিলি দুপুর---মধ্যকপালে সূর্য আঁকা;ছায়া নেই,মেঘ নেই;আমাকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলে?ভেবে রেখেছিলে দুর্বিনীত ভাগ্যরেখায় পালটে দেবে সূর্য্যনাম?স্পর্শতিলে ধরে রেখেছো যে সীমারেখা,ঈষৎ গভীর---শরীর কাঁপিয়ে ঝড় আসে,ঠোঁটের ঈষাঙ্কোণে কালো মেঘ।শেষ আদরের পর পরিশ্রান্ত আঙুলে জড়িয়ে চেয়েছিলে নিভৃত সন্তান?কতটুকু জীবন লুকানো ছিল নগ্নবুকে?ওপরে আকাশ,দূরে কৌতুহলী নদীতে জন্মজন্মের আয়ুষ্কাল।আয়ুষ্মতী হও,নারী। আয়ুষ্কাল।আয়ুষ্মতী হও।যাকে ইচ্ছে পথ থেকে তুলে নাও।ডেকে যাও,প্রিয় কিংবা ডাকনামে আর একাকী নিষিক্ত ভ্রূণ খসে পড়ুক তোমার কালো গর্ভাধার থেকে। ৩৫. সাপ,আপেল ও নারী,---সমস্ত ধর্মগ্রন্থের পাপ মেখে বসে আছো দুই হাতে।শুনে গেছো সারাদিন অতৃপ্ত প্রেমিক পুরুষের অনন্ত পতন।বেদনার প্রাণদাহী মৃত্যুর ফুলের মধ্যে জর্জরিত যে জীবন---শুষ্ক,পতিত ও অনুর্বর;তোমার অস্বচ্ছ হাতে হাত রাখলেই টের পাইঃবজ্রকলঙ্কিত,উলঙ্গের মুখোমুখি আরেক বিবস্ত্রা নারী দেহতাপের আধিক্যে গতরাতে যা বলেছো এই ঘাসের জঙ্গল,ফুলবন,---লিখে রেখেছি কীটদংশিত ঠোঁট,বুকের নখরাঘাত।সেতুহীন নদীতে পারাপারের মাঝি রাত্রির জীবন ভরে রাখে তার দ্বি-প্রহর মুখে।রাতের ললিতমাখা দেহ প্রিয় নিঃসীমতা ভুলে ভরে দিয়েছিলে---এমন সমর্পণের চাঁদ দেখিনি কখনও।আঙুলে,নখের কোণে অনুরাগ।মেহেদীর দাগ মুছে নিয়েছিল ঢেউয়ের উচ্ছ্বাসে?জল কেটে,নৌ-যাত্রায় পশ্চিমের দিকে এগিয়ে চলেছো?তীরে অন্ধত্ব ও অপেক্ষার গান গেয়ে যাচ্ছি আমি এক বধির যুবক।দীর্ঘ ও লম্বিত ফুঁ-য়ে ফেরাতে পারবো মৃত প্রেম? যা হারিয়ে গেছে-বিশ্বাস,পারস্পরিক সমঝোতা?আলোছায়াময় রাত্রি আর ময়ূরপালক দিন?তুমি মানবী ছিলে না।নারী হিসেবে তোমার কিছু শাপ থেকে গেল।মানুষ হিসেবে কিছু অনুচ্চারিত শব্দের প্রশ্নে অমীমাংসা থেকে গেল।নেশাতুর অপব্য জীবন ততটা স্বচ্ছ হল না-যতটা হলে বেঁচে থাকার আহ্লাদ জাগে।বিরুদ্ধগামী সময় এবং কালে ফুল-ফোটানোর সময় হয়েছে।কেই-বা হিসেব রাখে? ৩৬. রাতের উপান্তে অন্ধকার নামছে।আমার পাঠ শেষ।দেখিঃআকাশের মুখে প্রলয়ের প্রতিবিম্ব।ধ্বংসঅভ্যাসে পুতুল গড়েছিলে;সেই কাদা,সেই মাটি,সেই পোড়ামুখে ধর্ম শুঁকছে পুরোহিতের দল।তোমার দু'চোখে প্রিয় পাপ,স্মৃতিকোষে অবাধ যৌনাচারের গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল।প্রত্যেক নিঃশেষ থেকে উঠে আসে ডুবোজাহাজের স্মৃতি।তাহলে কি পরিত্যক্ত বাতিঘর-ই তোমার শেষ পরিণতি? পাপের স্খালনে খুলে যায় মুঠো-আমার হাতের মধ্য থেকে খসে গেছে আট বছর আগের হাত;আঙুলের স্পর্শে গলে যেত শরীরের জ্বর,মাথার অসুখ।পিঠে,তোমার লুকোনো ডানা ছিল?গভীর বিপথে উড়ে গেলে জ্বলন্ত রাতপোষাকে।আদিগন্ত ঘর, উচ্ছনে সংসার,---নদী রঙের শাড়ীতে প্রাচীন মেঘের ধ্বংসস্তুপ।সহজ জলের স্তর খুঁজে পেয়েছো? নদীতে ঢেউ।নদীও ভুলে গিয়েছিল কোন পথে,কবে,সে এসেছে?ধূলো ও জীবাণু নিয়ে ফসলের গন্ধমাখা আলপথে সন্তর্পণে পার হয়ে গেছো কবে-টের পাই নি।একান্ত জলবায়ুগত দিন ও রাতের বিভাজন ভুলে পরকীয়া নিমন্ত্রণের অঢেল আয়োজনে।সিঁড়িতে রোদের দাগ এখনও রয়েছে।তোমার শরীরে রোদ বসেছিল।তাকিয়ে দেখেছিলামঃআশরীর উপোষী চকোর আধখানা চাঁদমুখ খুবলে খেয়েছে।বুকে-পিঠে কোমল রক্তের স্বেদবিন্দু।অসুখের সঙ্গে নিরালা এ-মাঠে চিরন্তন নখ-দাঁত শানিয়ে রেখেছো?তোমার দু’চোখে কৃষ্ণপক্ষ নাচে। কাঁপছে ডান পাশের ভ্রূ।এটা কোন ঋতু?চোখের পাতায় মধুকূপী ফুল।প্রবল ইচ্ছায় খুলে ফেলি অতৃপ্ত আঙুল।এই ঘর,এই ঘাসের বিছানা---একসঙ্গে পথে নেমেছিলাম।ঝোড়ো শ্বাস,সিঁড়ির আড়ালে রক্তমুখী ক্ষত।মাথার ওপরে ডাকিনী মেঘের দল নেচে যাচ্ছে। অন্ধকার আমাকে বলেছেঃঅই মেয়েটিরও নাম অন্ধকার। ৩৭. যা হবার কথা ছিল না অথচ প্রাগৈতিহাসিক দুঃখ ঢুকে পড়ছে পাঁজর ফুঁড়ে এবং আমরা জেনেছি আশরীর সমুদ্র মন্থনে ইতস্তত দুঃখ,কিছু দুঃখ প্রাচীন মাছের পাখনার নীচে শ্যাওলার মতো জমে আছে আমার মোহের এ-শরীরে বিষণ্ন ডানার এ্যালবাট্রস যখন শেষবার চেষ্টা করছিল লবণের ঢিবি,নারিকেল বাগানের সারি পার হয়ে যেতে-গতানুগতিক দায়বদ্ধতায় চির-পরিচিত পৃথিবী তখনও নিজের অক্ষের ভরে ঘুরছিল।হতাশাজনক শীতার্ত প্রহরে ভারি কুয়াশার আস্তর নিঃশব্দে নেমে আসছে চরাচরের ব্যপ্তি পার হয়ে আর অকপট নিসর্গপ্রতিভা প্রতিদিন জন্ম দিতে থাকে আত্মরক্তপাত,মৃতঘুঙুরের শব্দ।নিজের বাঁকানো মেরুদন্ডে অসতর্ক পদক্ষেপে একসঙ্গে মনে পড়ে যাচ্ছিল অতীত,বর্তমান।ভবিষ্যতের গুহায় নিরপেক্ষ স্তব্ধতা ও কোলাহলে অগণ্য শব্দের বাঙ্ময় ও অবিকল্প শূন্যমেঘে সেইসব আদি অশ্রুগুলো এখনও শোভন।দৃশ্যপট ভরে আসে চৈত্র থেকে বৈশাখের স্বপ্নগুলোর বিপূল স্রোতধারা,চারপাশের গোধূলি বেলার আলোর মধ্যে জানাশোনা মানুষেরা কেমন স্তিমিত হয়ে যায়।তাদের আত্তপ্ত বাক্যগুলো হিম হয়ে যায়।সমস্ত চিন্তা ও চেতনার ভেতর পরাবাস্তববাদী ছায়া।শীতার্ত দিনের স্পর্শ ফেলে সকলেই খুঁজছে নিভৃত আকাশের উষ্ণতা।হৃদয় জ্বেলে দুই হাতে ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে মৃত্যু ও জীবন। আমাদের দেখা হল অধিকন্তু বালির মন্দিরে কিন্তু কেউ-ই কারো মুখ দেখি নি।নিশ্চয়তার ভেজা মাঠে অপেক্ষার কালে আমরা পাথর হয়েছিলাম।পাশের মাঠে থকথক করছিল পয়ার,ছদ্মপূরাণ। আমাদের কোনো কান্না যথাযথ নয়।নিম্নগতির সুষুম্না,আধা ধর্ম পথপাশে পড়ে আছে।সূর্যোকরোজ্জ্বল দুই হাত শূন্যে তুলে ডেকে গেছি।ছড়ানো পাখির ডানা-শোন নি সে ডাক।বোধিসত্ত্বে কার প্রাণ কামনা করেছো?অপরিমিত অন্ধকারের মধ্যে এতো সাজ?সূর্যোদয় থেকে সায়াহ্ন অবধি কঠিন শপথ,---সুগত ঐ চোখে কেনো এতো ভাঙা টুকরো,রাতের?করাল কালের কুম্ভীপাকে নিজের ধ্বংসের দিকে আমি কতোদিন শূন্যতার মধ্যে ভেসে আছি আশা ও নিরাশাহীম দোলাচলে,ঘেরাটোপের ভেতর।শূন্যতার ভেতর ঢেউ কিন্তু সৃষ্টি,সম্ভাবনা কিংবা প্রস্তাবনা নেই।তিরতিরে ঈথারের নীচে ঝর্ণা,নদী ও সমুদ্র।রুদ্রাক্ষের মালা ছড়িয়ে পড়ছে পথ ও পাহাড়ে। আমি অপেক্ষা করছিঃতুমি নৈসর্গের নিস্তব্ধতা মেখে বসে আছো? ৩৮. নিজের আদ্যন্ত আয়ু জ্বালিয়ে দু’হাতে কবর খুঁড়েছিলাম-তাই মুখ থুবড়ে ধূলোর নীচে পড়ে আছি।শ্মশানকালীর বিষ ও ভস্মের কণা এতো নিবিড় টানছে---ছারখার হয়ে যায় সমস্ত সাহস।বিবর্তনের বিকাশ,কুঁড়ি মেলা পদ্ম,---খরতোয়া নদীতে অনাব্য ঢেউ।রোমাঞ্চের কুহকিনী ডাক ফেরাতে পারো নি?সূর্যশিখর আবির্ভাবের স্বপ্নে ‘সুরঞ্জনা’হয়েছিলে?প্রচল ভাঙার সহজাত প্রবণতায় জ্যোৎস্নার এলোচুলে দুই চোখে হলুদ পাখির ডানা;বসন্তের বিশুদ্ধ নিয়ম অস্বীকারে পরিত্যক্ত ঘরে ফিরে যাবে?ঘরের ভেতর আলো ছিল---বিনত শুভ্রতা?ভয় পেয়ে পালিয়ে এসেছো?স্রোতের অনুগামীর মতো আমি প্রস্তুত।দেখবো, মালতীলতার অনায়াস দোল। ৩৯. মাত্রাবৃত্ত জীবন চেয়েছিলাম-বন্যা-ই আমা্র নিয়তিতে বাঁধা। তুমি ও তোমার বহমান উদ্বাস্তু জীবন বেঁধে নিয়েছো নৌকার বে-আব্রু মাস্তুলে।শিরায় ফেনিয়ে ওঠে কালবিষ,অফলা বিদ্যুৎ আছে কিন্তু দাহ নেই।শোধ করেছো জন্মান্তরের প্রথম শস্যের গন্ধ? যেভাবে দেখেছিলাম দগ্ধ দু'কোটরে সিঁদুরে গোধূলি নয়,---অন্ধকার মেঘ।অই মেঘে বৃষ্টি ঝরবে?দু'কূল ভেসে যাবে?সাথে অসম্পূর্ণ ঘর,কবিতার নীল খাতা?তোমার নিঃশ্বাসে কৃষ্ণচূড়ার সজীব বীজ ছিল---কোথায় হারিয়ে গেল সেইসব মোহময়ী দিন ও রাতের শ্রান্তিভার?শূন্য থেকে শূন্যে ভাসে কত অপমান তবু পানপাতার ঐ মুখে কেবলই জেগে উঠেছিল সবুজের রক্ত।সবটুকু শুষে খাবে?রেখার সারল্য,স্থানবিন্দু থেকে কালবিন্দুটুকু?এমন কী অতীতের কাতরতা? বজ্রাহত বাড়ীর সমস্ত ঘর পুড়ে গেছে অথচ অটুট সমুদ্র বালিয়াড়িতে গড়া বাড়ী।জোয়ারও পিছিয়ে গেছে অনন্ত ভাঁটায় ডুবে আছে বেলাঞ্চল।কাঁটাঝোপ,লোনাবালি,---চক্রবাল ছিঁড়ে যেতে চেয়েছিলে?ঠিক কতটুকু উষ্ণতা চেয়েছো এক জীবনে?তবে কি হৃদয় জুড়াতে ঘাট থেকে ঘাটে,পাহাড়,সমুদ্র থেকে সমতলে নুড়ি কুড়াতে কুড়াতে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ,শিলচর থেকে সুরাট,কাশ্মীর থেকে কন্যা কুমারিকা---তমার দু'পায়ে যাত্রাক্ষত।রক্তে সিঁদুর গলবে?আচম্বিত জলস্রোতে আমাদের যৌথ দিনগুলো নদীপথ থেকে মোহনা,মোহনা থেকে সমুদ্র,সমুদ্র থেকে অতঃপর বাষ্পীভূত ঘনমেঘে শুধু লবণগুলো সমুদ্র তার বুকে জমিয়ে রেখেছে।এপিটাফ মুছে অবিশ্রাম ঝরে পড়ছে পূর্বাষাঢ়ানক্ষত্র,সন্ধ্যা এবং রাত।আবলুশ কাঠের কফিন নিয়ে ভেসে আসে স্বপ্নোত্থিত নৌকা---গলুইয়ে বসে বেহালার ছড় টানছে জন্মান্ধ গায়কের দল-তাদের সুরের মূর্ছনায় পূণর্গঠিত পাঠল;যারা কবিতাবিরোধী,--- প্রথম দশক ছুঁয়ে অনুভূতির প্রদেশে ক্রমাগত প্রশ্নচিহ্ন,টেরোড্যাকটিলের আঘাতে স্বপ্নভঙ্গ- এখানে সবাই এক বিরহের কালে।আমার নিস্পৃহ চোখ ডুবে যায় নিমগ্ন,গভীর ঘুমে।ঘুমের ভেতর সেই মানবজন্মের গান, অশ্রপতনের অপেক্ষা,---আবার উঠে দাঁড়াব?দূরের পূষ্যা নক্ষত্রের থেকে বিবিধ রঙের বায়ূস্তর ভেদ করে কেউ কি আসবে শরীরে জড়িয়ে ইমনকল্যাণ?আশরীর প্রথম বৃষ্টির জলে ভেজা রাগিণীরেখার মতো?হাতে ধরে ঘুরিয়ে আনবে অন্তহীন ভবিষ্যৎ? খসে পড়া চিরায়ত ফলে ভরে আছে সমস্ত ফলবাগান,বীজ বোনা শেষ।এই গাছগুলোর ছায়ায় একদিন ছায়া নেবো।বুকের ভেতর এতো পরাভব।গ্রহণের সূর্যে তাকিয়ে দেখেছিলামঃআবহমানতার অঢেল ঢেউ ভুলে ছুটে যাচ্ছ ভাটির প্রবল টানে। জল, তোমাকে ছোঁয় নি। ৪০. তল,বিন্দু ও রেখার প্রকৃতিতে পরিধির পাশে অভিনয়-মাখা তোমার মুখের একপাশে আলো আর এক পাশে বর্তুলাকার গহ্বর।সুতৃপ্তির লজ্জা মুছে অন্ধকারে ভেসে ওঠে মধ্যরাতের নোঙরের স্মৃতি।দ্বাদশীর বুক ভাঙা যমজ মিথ্যের মধ্যে প্রবাহতরল মুখ আরও কালো হতে থাকে।এই যে নীলাভ অন্ধকার মেঘ,বৃষ্টি,সৌরধূলো,---তোমার স্বরতাড়িত দুই চোখে লালসার মল্ল-আষাঢ়ের ঢল।জলের ভেতরে মুক্তিপথ আছে?সূর্যের কৌণিক রেখা ঘিরে যৌবনের উন্মাদনা,দৃঢ় রুদ্ররেখায় ব্যসনা এবং বিলাসের ছড় টানিয়ে রেখেছো?উদাসিনী ছিলে না কখনও---তোমার বুকের মধ্যে অদৃশ্য নাচের টান।জনহীন নৈশ রাজপথে নিজস্ব গরিমাভাষা নেই তাই প্রতিপলে নিজের বিরুদ্দধে এতো জেদ,এতো বিরোধীতা তবু লাঞ্জনায় ছিন্নভিন্ন বুকের উত্তাপে ফুটে ওঠে সূর্যমুখী ফুল।সহজিয়া ভাষার প্রাকৃতবোধে শেষ কবে স্বপ্ন দেখেছো?ধ্বংসাভ্যাসের শ্বাস ও প্রশ্বাসে অবিরাম হেঁটে চলা সংকেতের সর্বনাশের সীমায় তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখেছিঃশেষের তর্পণ,শরীরের বাঁকা খন্ডগুলো প্রেতিনীর হাঁ-করা মুখের দিকে ছুঁড়ে বলো,'নে,খা' অথচ শনাক্তযোগ্য নয় এমন অভিশাপের মধ্যে ঘন,সন্নিবেশিত লতাবীজ জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে রয়েছে।আমি জীবনের কথা বলতে চেয়েছিলামঃবর্ষা-আশ্রিত সঙ্গীত,বসন্ত ও শীতে সুরের বিস্তার ছিল।প্রেম-আরোপিত পথ ও প্রান্তরে অসুখের সঙ্গীত গেয়েছিলাম কথ্য ও চলিত ভাষা ও গভীর বেদনায়,---আজ সেই সমস্ত সঙ্গীত ঢেকে আছে মেঘের চাদরে।ঢেকে থাকল প্রেমের ইতিহাস;যেভাবে কুয়াশা ঢেকে দেয় নদী ও সমুদ্র,স্থিরতর ঝর্ণাজল ও সৈকতভূমি।বালুকণা উড়িয়ে দিক-নির্দেশ পেয়েছো?নাব্য পথের সন্ধানে খুঁজে দেখেছো জলফলক?সেতুহীন নদীর দু'পাশে মহিষের সারি চরছে;বিস্তৃত ছায়া পারাপারে।নদী পার হয়ে চলে যাবে আর বালুচরে মিশে যাক সুদূর বর্ষাসঙ্গীত এবং প্রতি-রক্তকণা থেকে ঝরে পড়ুক কবিতা। +

শুক্রবার, ৬ জুন, ২০১৪

ধূপের মতোন উড়ে গেছে প্রতিশ্রুত প্রেম-৩

২১. সমূহ শিল্পের জন্যে যারা পাথর কেটেছে,সুমন্ত শরীরে মেখেছিল লাল ধূলো,কাঁকর ও বালি---দেহবিকৃতি ও উচ্চারণের জড়তা হেতু তারা জানে-অনুগমনের পথের ওপর দিয়ে ক্রমান্বয়ে অন্ধকার দূরে সরে যাবে শুধু প্রতিগামী রমণী, বোঝ নি মধু,মেঘ ও জলের ফোঁটা তক্ষশীলা থেকে মগধ প্রদেশ পার হয়ে আমাদের উঠোনের কোণে এসে থেমে আছে।কাঁঠালি চাঁপার ফুলে স্বপ্নের সন্তুতি।সাদা পাখিগুলো সব ঘরে ফিরেছে কেওবল শ্রেয়তর অন্ত্যমিলে লেখা সর্বত্রগামী কবিতাগুলো ঘরের বিষাদ ভুলে গেছে।প্রত্যন্ত নদীপ্রদেশে শারদশশী নৌকার অনিশ্চিত গন্তব্যে স্তব্ধতা এবং কোলাহলের ভেতর মাতৃসমা জলরেখা ধরে স্বচ্ছতাবিহীন জীবনের যাত্রায় উত্তান রাত কেঁপে ওঠে উৎসবের বাজনায়।রমণীর বুকের তোরণে 'স্বাগতম'ইস্তাহার সাঁটা।বাজনাদারের ভাষা ও পোষাকে কিংবা জলজ স্রোতে মনে পড়েঃঅর্থবাচক শব্দের দৃঢ় গাঁথুনিতে একটানা ডেকে গিয়েছিলাম,---শরীরজুড়ে রক্তক্ষত।'রক্তে সিঁদুর গলবে'--এই প্রত্যাশায় শরীরের যত রক্ত ঢেলে দিয়েছিলাম অথচ আজ শ্মশামচারিনী প্রেতিনীর যোনী তোমার সমস্ত অবয়বে।ধ্বংস ও বিনাশের পূজারিনী হয়েছ?স্ব-প্রণোদিত এই জীবন সঠিক মনে হল?স্বেচ্ছাচারী,বল্গাহীন জীবনের স্বার্থকতা খুঁজে পেয়েছ?পাপ ও দুঃখবিষ গহবরের কাটা হাত,ভাঙা হাড়ের গুঞ্জন,হৃৎপিন্ড চেয়েছে ধ্বংস প্রতিমার পূজো। আজ রাতে সৃষ্টিছাড়া পূজো হবে।জবাফুল,বেলপাতা সাজিয়ে রেখেছো? ২৪. প্রত্যাশার মন্দিরে অনেক ঝুল,ঊর্ণাজালে আবৃত্ত দেয়াল।কতদিন এ-মন্দিরে ঘন্টা বাজে নি?রক্তিম নখে এসে থেমে থেকেছে প্রার্হনামন্ত্র,স্তোত্র।যা কিছু কলঙ্ক,অপমান,---মুছে নিয়ে শালকীর জলে প্রতিশ্রুতি ছিল জ্বালিয়ে দেয়ার ধাতুমুখ,ক্ষত কিন্তু অগাধ শরীর ছুঁয়ে ব্যর্থ এ-দু'হাত তুলে নিয়েছিল কেবলই পরাভবের পাথর।চোয়ালে লেগে থাকা উচ্চাশার ক্লীব শৈবালের প্রলেপ তা-কি আবরণের অপব্যয় নয়?শরীরের আমূল প্রপাত ভেঙে এই যে অন্ধকারের ধারাময় জীবন,---আসলে সময়ের পিচ্ছিল মন্দিরচূড়া আর শেষ সর্বনাশের ধারায় সঁপে দিতে পারো সবটুকু?জলস্রোতের রেখায় ভাসমান সাধ এবং শব্দহীন বালির উত্থানে ঢেকে গেল শষ্পাবৃত্ত নদীর দু'পার।সব বাজি জিতে নেয়া হয়ে গেছে?আশাছিল,একদিন কর্তব্যহীন সময়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জাগতিক সহ্যসীমার বাইরে কিছু দেখব না কিন্তু ক্রমশঃ শীতের টানে চরের ওপর ঝুঁকে পড়ে এবং আলো মাখামাখি তোমার শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রেতের বাতাস। ২৫. আধভাঙা কথামালাগুলো মাঠের কিনার ঘেঁষে কেঁপে ওঠে আর আমরা সুপারী রঙা গোধূলির থেকে দূরে সরে যাই।সাব্লীল পাহাড়চূড়া ও নীল জলাশয়ে খর শীত নামছে।অগ্নির সর্বস্বতা সোনামুখ হিমের ভেতর গলে যেতে দেখি।আমাদের পাঠ শেষ।অন্ধকার নেমে আসছে।দূরের নদীজল থেকে জেগে ওঠা মৃত মানুষের কোলাহলে উড়ে যেতে দেখি নিশাচর পাখি,শান্ত বাদুড়ের দল,জ্যোৎস্নার আকারে নড়ে ওঠে কাশের জঙ্গল।যে সমস্ত শঙ্খ তোমাকে দিয়েছিলাম-তারা ছুঁয়ে গেছে নীল পরমায়ু।বুকের গহ্বরে শামুকের বুদবুদ,ত্র্যহস্পর্শ,---আমাকে কতোদূর নেবে,রমণী?তোমার চলা বড়ো বেশী দ্রুত।কুয়াশার আস্তরণে যতোবার ধরতে গিয়েছি ততোবার শুধু ছায়া,প্রচ্ছায়ার প্রহেলিকা। ২৬. একদিন শীতপোড়া রাতে দেখেছিলাম জীবাশ্ম,অন্ধকার বেতসের পাতাগুলো কাঁপছে।অক্ষর নিবদ্ধের কবির কবিতা,নিহিত বোধের চিত্রী ও গায়ক;প্রকৃতির অন্তর্গত গভীর রঙ,সমূহ সঙ্গীতে শারীরিক স্পর্শ,---তারপর মৃত্যু উৎসব,কৌণিক দূরত্বের তত্ত্বকথায় দূর্দমনীয় টানা ছুটির আমেজ।কিছু তার গল্প হয়ে ছিল।সরল গদ্যের ভয়াবহ প্রতারণার অভীপ্সায় যৌনতার আঁছোয়া অক্ষরে আমাদের আকর দিনগুলো পিন্ডের মতোন উঁচু হয়ে ওঠে য্যানো বা স্মরণস্তম্ভ কোনো।সমস্ত বালুর চর জেনে গেছে আমার অথর্ব,সামর্থ্যবিহীন ক্ষমতা।জোনাক পোকা ভীড় করে আসে...তার আলোতে বপণহীন দিশা। তত্ত্ব ও সর্বনাশের ঘুম,কুয়াশামাখা সকালে জেগে দেখি ভেসে গেছে বালুচর,প্রতিটি লতা ও গুল্মে চিহ্ন পরে আছে।আমার সমস্ত রাত ঘিরে ছিল জলের প্রবাহ,কুসুমিত বিশ্বাস।ব্রতধারণে ভুলে গেছ আমার জলের অধিকার,সীমানা ও নুড়ি-পাথরের সহজতা?তোমার শরীর য্যানো নিমপাতা-গোপন গহ্বরে ঢাকা অন্ধকার,হাহাকার।বর্ণান্ধ রাতগুলোতে জলদোষ ছিল?যে আগুনে পুড়ে যেতে চেয়েছিলে---এমন ধাতব পাত্র শূন্যে বেজে ওঠে ঝনঝন।দশ আঙুলের নির্ভরতা থেমে যায় অকস্মাৎ,কেঁপে ওঠে নিশিকোলাহল,কেঁপে ওঠে বনভূমি,বালুচর,ঝর্ণাজল। ২৭. পরধর্মময় চাঁদ ও গ্রহের মতো বস্তুত তোমার চোখে লেগে আছে বিরুদ্ধগামী স্রোতের পটভূমি।একসঙ্গে কেঁপে ওঠে নদীতীর,ভিটেমাটি,উদাসীন শরীরের ছায়া।ছুঁয়ে দেখেছিলে যে মুহূর্তে উঠে গিয়েছিলাম স্বপ্নের শেষাদ্রিচূড়ায় কিংবা শতাব্দী পরের স্থলপদ্ম পরিত্যক্ত বাড়ির উঠানে ইটের পাঁজর ভেঙে বের হয়ে আসা দীর্ঘদিনের সমূহ শ্বাসে পুড়ে গিয়েছিল ডানা?ভুলে যাব বুকে পোড়া পাখি?প্রবাহমানতার ঢেউয়ে অধর্মের নৌকা,নিরিবিলি মাস্তুল,দড়িদড়ার টান।উৎস থেকে মোহনায় বিসর্জনের আবহ।এতো বিষাদ বিসর্জনের ঢাকে? দিনানুদিনের পাপে ভরে আছে তোমার শরীর।আগুনের এমন ক্ষমতা আছে দেহের শুদ্ধতা জানে।পস্পর অঞ্জলিতে ভাসিয়েছিলাম উদ্যত প্রণয়,স্বপ্ন।তার বীজ উঠে আসে মধ্যজল থেকে আর আমার চোখের অনীশ্বর বিন্দু,কমন্ডলু,পায়ের খড়ম উড়ে যায় ভুল ঋষিদের আশ্রমে আশ্রমে। ২৮. ভূমধ্যসাগরের জ্বলন্ত দিনগুলো ভূলুন্ঠিত অথচ উন্মাদনায় ভরে ছিল।ভেবেছি,কবেই মুছে গেছে শ্লেট-ধোয়া জলে।পদ্মপাতায় টপকে যত ছিঁটে-ফোঁটা জলে আর্দ্র হাত---অই হাতে চেয়েছিলাম ক্ষমার সজীবতা।জীবাশ্মপ্রহত ছায়ামুখে ইতস্তত ভালোবাসা মুহূর্তের নির্বাপনে আচম্বিতে শেষ হয়ে যায় আর পৃথিবী তখনও ভেসে থাকে গ্রহণের জলে।প্রগাঢ় অন্যায়ে চেয়েছিলে আরও কিছু সোজাসুজি?হাড়ে লেগে থাকা জমাট রক্তের বিন্দু?তোমার বিষাক্ত করোটিতে অবাধ ব্যভিচারের স্মৃতি।আমাকে কী তার ভাগ নিতে বলেছিলে?গোপন রাতের স্তুপে পড়ে আছে শ্বেত বধিরতা ও মন্দ্রিত অভিসার।বসন্ত আসার পথ জুড়ে ছিল পিছল পাথর।ঝুঁকে আছি।চারিদিকে ছড়ানো কাজল পরিবেশ,শারীরিকতার জাল।চোখ জ্বলে ওঠে কৃষ্ণ বিস্ফোরণে।নূতন পৃথিবী কখনো মসৃণ নয়,--- দরোজাবিহীন মন্দিরের মতো লতাগুল্মে আচ্ছাদিত;যারা জানত না ঠেকে শিখে নিয়েছিল।ধ্বংসের অতলে কতদূর যাবে?আমার সমস্ত দেহে সর্বনাশের উল্কির ছাপ।আমি সর্বনাশ দিয়ে পতন ঠেকাবো বলে দুই হাত মেলে তোমার পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এই বুকে পরাভন নেই। ২৯. একক ও তুলনারহিত আমাদের সেই প্রেম ভেসে গেছে নীলচে জলের স্রোতে।সমুদ্র সাঁতারে আমাদের কত ক্লান্তি জমে আছে।গভীরতর জলের ভয় ছিল---জলজ শ্বাপদ আর খোলা-গিট হাঙর স্তব্ধ করে রাখে মোহনা ও উপকূল।যারা সমুদ্রে নামে নি-বাতাস ও জোয়ারের টানে তাদের পায়ের তলা থেকে সরে গেছে বালির চাক ও মাটি।যতটা আগুনে পুড়েছিল এই বুক,---ভেবেছিলাম সমুদ্র ধুয়ে দেবে পোড়াক্ষত,ফেনায়িত রক্তবিন্দু।অবশিষ্টে পড়ে থাক রহস্যের মূল যখন হলুদ,নীল সাংখ্যের অতীতে ধূর্ত ও জটিল এক স্তর ধোঁয়া।মহাজাগতিক শূন্যের তলায় পরিচিত ঝর্ণাজলে ঘর যায়,পথ যায় যেভাবে আমার দিনগুলো ছোট্ট হয়ে এসেছে।নিদ্রাবিহীন রাতে অতীতের প্রিয় দু'টি হাত কখনও কখনও চেঁপে ধরে করোটি।বিভ্রান্তি এবং অস্পষ্ট মুহূর্তে ডুবে যেতে চায় সমূহ শরীর।নদী কিংবা পানামিশ্রিত পুকুরে।লোভ ছিল অপরিসীম ও শর্তহীম।যে সমস্ত বাগানের সৌন্দর্য্য উথলে উঠেছিল;ভূত ও ভবিষ্য থেকে---আরও কিছু দূরে ছায়া ও আলোর অন্তরালে ঢাকা পড়ে আছে নক্ষত্রামৃতযোগ,সংক্রান্তিদোষ। অরোরা বিভায় জ্বলে ওঠে ময়ূরপালকদিন।্মনঃশিলার পাষাণভার এবং তোমার লাবণ্যেফুলে ওঠে বানভেজা মাটি।টপটপ জল ঝরে,লোনাজল।জলশোধনের প্রত্যেক বিন্দুতে রক্তের প্রবাহ।ক্ষান্ত আকাশে বিচ্ছেদ,অনন্তের।বর্তুল হৃৎপিন্ড জড়ো হতে থাকে গোলাপ রঙের গল্প। তোমার শরীরে ছিল ইমঙ্কল্যাণ।তার সুর শুনতে শুনতে কতদিন স্পর্শ পেয়েছি রাতের।সাবধানবাণী ভুলে যে দিকে যাবার কথা ছিল না-গিয়েছিলাম।ব্রক্ষপুত্রের জমাট অন্ধকারে অবৈধ,অসামাজিক স্বর্ণ-সমুজ্জ্বল বেশ্যাদের নগ্ন শুয়ে থাকার ভেতর পথ করে।উপকথার বৃত্তান্ত থেকে বৃত্তান্তের আবছায়ার আড়ালে কত অপমানে শরীর সাজিয়ে বসে আছ।স্ফুরিত আনন্দ এবং শব্দহীন স্তবে?চারিদিকে ধাবমান জল।দিশাহীন জলে জানা নেই কে,কখম কতদূর নেবে?বুকের গভীরে নেমে যায় জলরেখা।নিভৃত নিঃশ্বাসে ঘট ভেঙে মুছে নেয় সিঁদুরের নাম।বুকে খরতালি,---আবর্ত বাজনা কেউ শোনে নি।বিতত পদ্মপাতা---কতটুকু জল ধরে?যতটুকু দুই চোখে হ্রদতটমূলে?ভাসিয়ে নদীর তীর-অই দূরে জলচারী নৌকা।তৃষ্ণাদেবতার মূলে কখন যে একাকার মিশে যাও সুমন্ত শরীরে-বণিকের মেরুদন্ড তোমারই দুই হাতে বহুপরিচর্যাজাত, বায়বীয় স্বরে ফিরে যায় ঘরে।বিকল্প বন্ধুত্বে কিংবা তার চেয়ে বেশী ফুলঝুরি-এই উদাসীন মর্যাদায় নিঃস্ব তাকিয়ে রয়েছো সুন্দরের মজ্জাহীন রাতে।শোকের আতসগুলো ঝরে তোমার চোখের ত্রাণ মহোৎসবে।অসম্ভব নিঃসঙ্গ আমার চোখে পূর্ণিমার ছায়া।আমার নিঃশীল বসে থাকার ভেতর আত্মপতনের বীজ,বিচ্ছেদের অঙ্কুরোদগমে কুঁড়ি মেলে নূতন কবিতা।সু-সংহত,ছন্দোবদ্ধে নির্মাণ ও বিনির্মাণের ফাটলে জর্জরিত বাঁধে অথই উল্লাস।ভবিষ্যতের পাথেয় জমা নেই তাই বাধাঁ হয়নি যে ঘর---সেই ঘরের বিষাদ মনে পড়ে?রক্তিম ফেনার সন্ধ্যাকাশে যে তারা ওঠেনি তার আলো ভরে আছে প্রসন্ন উঠোন।আমি ভুলে যাই নি সে প্রেম;আতপ্তভিত্তি সংসারে আনন্দিত দুই হাতে উপুড়করা প্রদীপ।রাতদুপুরের সন্দেহে স্বপ্ন নিতে নিতে আবিষ্ট দু'চোখ। ৩০. পরিচিত পথের লানম্য,বাঁকে বাঁকে সবুজের সমারোহে সজীব সঞ্চার;তুমি তার কতটুকু জানো?তোমার কি মনে হয়েছিল চিরদিনের নিরুদ্বেগের মধ্যে এতোদীর্ঘ,প্রতিশ্রুত ভালোবাসাম সময়বিহীন স্তব্ধ জালে আটকে রয়েছে। আমি দু'হাতে চেয়েছিলাম সকালের শব্দগুলো খুলে যাক লজ্জাশীলা রমণীর মতো এবং অবজ্ঞাত সময়ের স্তর ফুঁড়ে বেরিয়ে আসুক হাজারদুয়ারি ভালোবাসা।আমাদের ঘোরমাখা দিন ও রাতের প্রতি প্রহরে মুখথুবড়ে পড়ে ছিল পরিপাটি জীবন ও মেদমজ্জাহাড়।আদি সময়ের ধূলোমাখা পায়ে দীর্ঘ চলাচল থেমে গিয়েছিল উর্ধ্বগামী মশালের নীচে।বুকের প্রান্তরে ছিল কাটাগুল্মের উদ্ভিদ।প্রতিটি লতা ও গুল্মে সাংখ্যের অতীত তীক্ষ্ম কাঁটা বিধেঁ যায় বুকের গভীর থেকে গভীরতর প্রদেশে।চারিদিকে এতো শব,শবের মিছিল,---তুমি ঝুঁকে দেখেছিলে আমার কপাল।কপাল না-কি কপালের লিখন?নিয়তি পালাটাতে চেয়েছিলে?কোনো ক্ষোভ নয়,কোনো শোক নয় তবু অশ্রুপাতে দুই চোখ ভার।

শুক্রবার, ৩০ মে, ২০১৪

ধূপের মতোন উড়ে গেছে প্রতিশ্রুত প্রেম-২

১১. তোমার মুখের চিত্র ও রেখায় দিশেহারা ভাব,মাটির বিচ্ছেদ থেকে রক্তের বিষাদে শত শরতের বীর্য।কৃষ্ণ রেশমের মতোন ঝলসে ওঠা আনত দু'চোখে সামান্যই ছায়া।ভরা রৌদ্র ছুঁয়ে দিলে বাষ্পে বাষ্পে শরীর শীতল হয়ে যাবে।আমার ঔরসগন্ধ মুছে ফেলে তোমার শরীরজলে কার ছায়া পড়েছে?জঙ্ঘায় কোন পুরুষের সুখস্পর্শে বিভোর এখম?বরফ গলার মতো গলে গেছ,নদী হয়ে গেছ?তোমার সহজ জলে নৌকা ভাসায় নগ্নপুরুষ।উরুর সীমানা পার হয়ে যে পেয়েছে সবুজ ঘাসের স্পর্শ---কাকে তুমি প্রতারণা করেছ,রমণী?স্বামী,প্রেমিক,নিজেকে?ইন্দ্রগোপ কীটের দংশনে ফুলে ওঠা ঠোঁটে লোম গজিয়েছে। তা-কি দর্শনীয়?তা-কি গ্রহণীয়?দু'হাতে জ্বলন্ত ভস্ম মেখে জ্বালিয়ে দিয়েছ সাজানো সংসার,ঘর।নিয়মের রীতি পার হয়ে কতদূর যাবে? নান্দীমুখর পানশালায় পানপাত্র,বোতল উড়ছে শূন্যে।অন্ধকারে পালটে যাচ্ছে রতিসঙ্গী।মিলনের কালে মনে পড়ে প্রথম শিহরণের অনুভূতি,রকনিষ্ট প্রেম?সূর্যোদয় থেকে সায়াহ্ন অবধি পৃথিবীর একাগ্র আলোয় পথ খুঁজে ফিরে এসেছিল যে সুন্দর হাঁস---তার জঙয়ে দৃশ্যদ্বতী নদী এখনো প্রস্তুত। শীত ও গ্রীষ্মের মাঝখানে খাঁড়ি মোহনার উৎসে যে রক্তবিন্দুর মতোন পোকা নিষ্পাপ ভ্রমরনীল চোখে সাজিয়েছিল স্বয়ংবর সভা---অভিশাপগ্রস্ত আরুঢ় বাতাসে মৃত্যু ঘটেছিল প্রথম শ্যামাপোকার।এখন সমস্ত সানুদেশ জুড়ে অধঃপাতের কুয়াশা,আধোশ্বেত দৃষ্টিতে নির্লজ্জ হাসি,ঐশীবাণীর মতোন অন্য পুরুষের স্তবে সাজিয়েছ অবমাননার ধর্মগ্রন্থ। ১২. নূতন ভাষা ও স্বর শিখে নিয়েছো?অভিযোজন,অভিগমণের পথে এতো আগ্রহ?তোমার করপুট থেকে ঝরে পড়ে প্রেম,ধর্ম,সঙ্গীত,বিকেল?অপর্যাপ্ত সাংসারিক জলে এতো বিভাজন?সহজ রান্নার গন্ধ ভাসছে।শীত ও স্মৃতি এমন ঘুমকাতর?জেগে ওঠার সময়ে আমাদের ছেঁড়াখোঁড়া পালে লজ্জারুপ আলো এসে পড়ে---ঐ আলোর শেষে রক্তমাখা নখে উঁচু শিমুলের ডালে বসে আছে শকুন।অশ্রুত স্বরে মৃত নাবিক ও প্রেত,স্বপ্ন বিসর্জন এবং ভাসানের গানে ভরে ওঠে নদীর দু'পার।একদিন নগ্নতার সুর বেজে উঠেছিল বুকে,আদি প্রাণ জল থেকে,---সেই সুর স্রোতের সাথেই ভেসে গেছে।এখনও বুকে উঠে আসে বাষ্পভার। ক্ষরণের দিনে এই যে উত্থান,পতনের ধারা....শুক্ল মহিমার রাতে মনে পড়ে অন্ধকার,পাথর যুগের ব্রুণচিহ্নে সারাৎসার উড়ে যায় ধর্মজিজ্ঞাসা,গরীবজন্ম,সাহিত্য সাময়িকীর পাতা।গোচরীভূত শব্দ ও বোধে চোখ ঢেকে রেখেছো?অক্ষরগুলো তার দীর্ঘ নখে সম্পন্ন শব্দের ছাপ ফেলে যায়।সেই সুমন্ত পথের প্রান্ত তোমার অজানা ছিল?অতিকায় ঘোর ভেঙে নিঃশ্বাস ফেরাবে পৃথিবীর দিকে?আজ পথে যত সীসা ও গন্ধক, মেদমজ্জাহাড়, হৃদয়ের অন্তঃক্ষরণ,মরঙহাতী নেশা,---চরাচর ডুবে আছে বিশালাক্ষী অন্ধকারে।জলমন্ডলের ছায়ায় বিষাদ।বৃষ্টিহীন সমস্ত প্রান্তর ঢেকে আছে চাপ চাপ রক্তে,ভেদবমন,রজঃশলার।স্মৃত ও অস্মৃতে এই বুক ভরে আছে মেঘে,পাথর ভেঙেছি শুধুই তোমার কথা ভেবে ভেবে।তোমার ঠোঁটের কোণ থেকে অধিদেবতার যে স্তব বেরিয়ে আসে-অধর্ম ও শঙ্খের ফুৎকারমতো তার ধ্বনি অন্ধকার থেকে অন্ধকারে গড়িয়ে পড়ছে অই বর্তুল গহবরে।চিরজাগরুক চেতনায় বিষণ্ণ প্রতিভাকণা ছিঁড়ে ফেলে ক্রমাগত বাঁশের বাঁশির সুর,কবিতার আহ্লাদ ও আতিশয্যে,অশ্রু ও অক্ষরে ঢেকে আছে আমার শরীর।কবিতার শ্রম-বিনোদনে যে মগ্ন প্রাচীর আজ বাঁধা-সমূহ সর্বনাশের আগে ভেঙে পড়ে অশ্রুজলের আঘাতে। স্রোতঃপ্লাবী রমণী,শেফালীগুচ্ছে গন্ধ শুঁকে দেখঃনিরাকার প্রেমে বেদনার রাত মোহ নিয়ে আসে প্রেতসন্ধ্যার উচ্ছ্বাসে। ১৩. এ-শরীর জলপোড়া এই করোটি অনুশোচক জলপোড়া প্রকৃত শরীর প্রকৃতিবিহীন।অনুশোচক করোটি ভরে আছে অতীত,আসক্তি ও কীর্তিগাঁথায়।আলোছায়াময় টানারাত ও দিনের বিভাজনে,বনগত বনানী বিভায়,নির্জন খাঁড়ির মুখে অপব্যয়ী জীবন বিহ্বলভাবে জেগে উঠছে।সমাধি মন্দিরের প্রশস্ত চত্বরেম শতাব্দীর মৃত শোভাযাত্রা,যুগ্ম পাথর ও শ্যাওলার আস্তরণ পার হয়ে প্রেতিনীর দাঁতে কামড়ে ধরেছ এ মরজগৎ।দ্রব,--লবণ ও হলুদের মিশ্রণে ফুটছে জল।হরিণমাংস ঝুলছে,ডালে।ধোয়ঁআর নিভৃত রেখা ও আশ্লেষে তীর্থ ও বাগানে পোড়ামুখ দানবের চক্ষুষ্মান বাচালতায় সাজিয়ে নাও নিজেকে।উৎসবে,ঝাড়লন্ঠনের নাচে তোমার শরীর ঘিরে অন্ধকার শুধু জ্বলজ্বল করছে তোমার আঙুলের আঙটিগুলোর পাথর। পায়ের পাতায় অসুখ।কোথায় নাচ?উৎসবের পানীয়?সমস্ত রাত জেগে আছি।জানি,পূর্ব নির্ধারীত নিয়তি তোমাকে ভাসিয়েছে আবর্তিত ক্রোধ এবং শোণিত প্লাবনে।অস্বচ্ছ বিম্বের এই পরাভব বুকে তুমি ছুঁয়ে গেছ আতপ্ত হৃদয় ও নিবিড় ধ্যানে মাঝরাতের মানুষহীন পথে।শষ্পমুলের অবৈধ আদরের মর্মর তোমাকে ঘিরে রেখেছে।জীবনটাকে বোঝো;আজ যা জীবিত তাকে স্পর্শ করি না কারণ জীবিতেরা স্পর্শ বোঝে।পৃথিবীর প্রতিচ্ছায়া থেকে বৈধাবৈধ্যের অজস্র শরীরের প্রেমে দ্বিধা এসেছে কখনো।ভিনদেশী পথিক শরীর থেকে খুলে নেয় শেষ আচ্ছাদন আর দুই পায়ে দুঃখের ধারালো কাটা বিঁধে থাকে। পথে পতিত যে ফল হাতে নিয়েছ;উপচেপড়া পূর্ণটান জলস্রোতে ধারাময় যা-কিছু কলংক---শ্বাসকষ্টময় ফুসফুসে ভরে নেবে?প্রেত পায়ে বেড়ে ওঠে পৃথিবী তোমার।ঘুমের ভেতর জেগে ওঠে ঘরের বিষাদ ভুলে গেছ,ভুলে গেছ প্রিয় নাম?আমার বুকের মধ্যে দেখেছ অপর পুরুষের ছায়া?ভুল পায়ে উঠে এসে জলজ ভাষায় মাথা নিচু করে বলঃপাখিওড়া ছায়াতেই সমূহ স্বপ্নগুলোর শেষ পরিণতি।ছন্দপতনের বৃষ্টিহীন দিনগুলো একা পড়ে ছিল আর শীতার্ত প্রহর থেকে আমার মেরুদন্ডের শাঁস তুলে পৃথিবীময় ছড়িয়ে দিয়ে কি করে ভুলেছঃআষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টির বিন্দু কপালে মাখিয়ে নীল শাড়ীর আঁঅচল ভরেছিলে প্রফুল্ল কদমফুলে। আমাদের নৈঃশব্দের নিঃসীমতায় ঝাঁকড়াগাছ,পাথরকুঁচি সময়ে বিচ্ছেদের অপার বিস্তার।কামরাঙা বনের সবু জালে লক্ষ কীটপতঙ্গ পড়েছে।হাহাকার,শূন্যে ও বীভৎসতায় সেগুলোর রক্ত ঝরে পড়ে।নাও,গ্লাস ভরে পান করো রক্ত,মদ,বুকের আগুন।বীজ ও পোকায় ঢাকা আমার অনন্ত করোটিতে খর শীত,সব ঝর্ণা জমে আছে।স্থিরতর জলে ইতঃস্তত কিছু স্মৃতি ডানাভাঙা হাঁসের মতোন পড়ে থাকে শুধু। ১৪. অসাড় দিনেরা ঘিরে আছে মুহূর্তের সব ভুল।চমৎকার সব ছবি ছিল চোখের পাতায়।পূর্ণটান জোয়ারে বসন্ত,উড়োচুল,---বাতাসবিহীন অন্ধ ঘরে অবশ শরীর ছুঁয়ে আছে এক জীবনের পরাভব।বাতিল খোলস ফেলে ক্ষতহীন মুখে শীত সকালের সজীবতায় উপচে ওঠা ঘনায়মান নিঃশ্বাসে পুড়ে যায় আতপ্ত হৃদয়।অসামঞ্জস্য পরিণতির মণিকর্ণিকার আভা ও চতুর্দশীর অন্ধকারে বিচূর্ণিত পাঁজরের ভেতর শুশুক সাঁতরায় আর কপালে ছিটকে এসে লাগে জলের তিলক।এপিটাফহীন জীবনের প্রার্থনাও ছিল অপরাধময় ইউক্যালিপটাসের বনের গন্ধের দিকে।বুকের ভেতর দাহ,অগ্নি ও জলের সে-দাহনে জেগে ওঠে পশুআত্মা,আদিপ্রাণ,---মৃতের স্ফটিকমাংস মুখে উৎপ্রেক্ষা ও উপমায় মাতামুহুরির চর ও সিংড়ার বনে পাখিওড়া ছায়ায় নিজেকে দেখিঃপৌনঃপুনিক বিচ্ছেদে শতচ্ছিন্ন শরীরের ধড়ে শ্যাওলা,ছত্রাক,বীজানুর অধিকৃত কলোনী,ঝিঁঝির ডাক.... শুকনো চরায় যুক্ত ডানার পাখিরা ওড়ে।ভাগচাষী,চর-দখলকারী নায়েব-গোমস্তার মাথার ওপর নিরামিষাশী পূর্ণিমাচাঁদ জ্বলে।অনুপম রুপক ও চিত্রকল্পে ভরে ওঠে আমার মস্তিষ্ক।অভিজ্ঞানলব্ধ,মুক্তকছন্দে লিখিত কবিতারা অক্ষরের ক্রম ও সম্পন্ন শব্দে চরাচরে জন্ম দেয় এক নূতন বোধের।আমি পায়ে পায়ে ঘরে ফিরি অসময়ের বৃষ্টির ছাঁট গায়ে মেখে।চোখে ব্যথা নেই,কোটরে খড়ের স্তুপ।ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন মুখে ত্রেতা যুগের ভাবানুষঙ্গে এবং তৈরী হতে থাকি আগামীর অর্ধেক জীবনে;যা কাঁটায় ক্ষত-বিক্ষ,অঝোর রক্তপাতে মতিচ্ছন্ন ফুটে আছে।শ্বাসনালী ছিঁড়ে উঠে আসা শ্বাপদসুন্দর শ্যামলতা ও স্মৃতির মৃত ডানাগুলো রক্তিম মুহূর্তে আলো জ্বালে।শরীরের প্রতিকোষে বোধবুদ্ধিহীন জেগে থাকা জলটুকুছাড়া আর কি-ই বা পাথেয় আছে?শান্ত প্রবাহদুয়ারে সিংহরাশির প্রচ্ছায়া,জ্যোতিষির সম্ভাবনাময় মুখের আশ্বাসবাণী এবং আকাশের মুখোমুখি নির্মিত বিশাল চন্দ্রাতপে সূর্য ডুবে গেছে।একে একে নক্ষত্র ফুটছে--তার ছায়ায় উঠোন ভরে আছে আর একে একে জেগে উঠছে ্নামফলকহীন পিতৃ-পুরুষের কবর---তাদের ক্ষতে,ভস্মের ভেতরে জমে আছে অনিশ্চিত সময়ের ধারা,তাম্রলিপি,গুহাবাসের বিস্মৃতি। দ্বি-চারিণী নারী দ্বি-প্রহর মুখে সমকালীন বটের ঝুরি কিংবা বস্তু-ব্যাপক মাটিতে স্বচ্ছতাবিহীন পদচ্ছাপে এগিয়ে চলেছে নষ্টনিধি আবাসিকে,নৈশভোজের উৎসবে।তুমি তো আমিষভোজী।রাত দুপুরের উপুড়করা প্রদীপে সভ্যতার মাংসখন্ড মুখে শরীর চাটছে উপজাতীয় যুবক।প্রতিপদী চাঁদ ঝরছে আকাশ থেকে। ১৫. ধ্বনিবহুল জীবন আর সঙ্গীতময় শোবার ঘরে সরীসৃপ---স্বতই যা উঠে আসে প্রেম,বিরহ ও লজ্জাহীন শোকতাপ অথচ আমার রক্তলেপা হাড়,হাড়ের ভেতর ভাঙা সেতু,---তাকে পারাপার করে অবিশ্বাস,জ্ঞাত জগতের ব্যতিক্রম।পূবের সমুদ্রপথে অন্ধ কুয়াশা প্রদেশ।ফিরে আসার সময়ে ধীবরের জালে ধৃত নীলশরীরে যৌনের দাগ।ধীবর হাসছে---সুষম ও পরীক্ষামূলকভাবে প্রাকৃত ভাষার ছবি শানানো।মশল্লা প্রস্তুত।প্রশ্নোত্তরের পর্বে ঝগড়াটে কাদাখোঁচা পাখিগুলো পাতার আড়ালে জৈবফুলে নিঃশ্বাস ছাড়ছে।এই ফুল যৌগিক অথচ এর ফলগুলো সরলীকৃত বিন্যাসে ভারানত।মেরুদন্ড ঘিরে ভ্রষ্ট উপদ্রবে একাকী সমুদ্র পাড়ে হাঁটি।পূবে বা পশ্চিমে নয় দক্ষিণের জগতে তৃতীয় এক অসম্ভব পৃথিবী জ্বলছে।দুই হাতে কলংকরেখার উচ্ছলতা নিয়ে অজ্ঞানতাকেই ধর্ম বলে মনে মেনেছ,মহান সত্যে রাবার ঘষেছ যদি পাল্টে যায় প্রিয় নাম,প্রিয় মুখের প্রচ্ছদ?সকালের পরিশ্রুত রোদ গায়ে মেখে অগম্যগমণে নদীপথ পার হয়ে এই বালিয়াড়িতে নেমেছ?এইমাত্র সূর্য ঢেকে গেল।পটভূমিকায় কালো ডানার মেঘের ওড়াউড়ি।আমার চোখের জলে নীল হয়ে যায় অফলা পৃথিবী আর শরীরের কানায় কানায় জেগে ওঠে পানাবৃত্ত,মৃত্যুর ঝলক।দুইহাতে কলঙ্করেখা অথচ পাথরে পাথর ঘষে জ্বেলে নাও প্রতিদিনের পূনর্বাসন।চারপাশে মৃত্যুর স্তব্ধতা এবং কোলাহলে বিশীর্ণ আঙুল শূন্যে উঠে যায় প্রার্থনার প্রার্থিত প্রহরে আর সন দান,ধ্যান,তপস্যা ও সিদ্ধি নষ্ট হয়ে যায়।তোমার পায়ের তলে গুড়ো হয়ে ঝরে পড়ে বরফ কুচির মতো।পাপ থেকে পাপের স্খলনে সমস্ত শরীর জ্বলে ওঠে।পরাহত জীবনের পাঠ,অসম্পূর্ণতা ও পাপ- থেকে যে গোপন রক্ত শরীরে বইছে---তার সবটুকুই নিষ্ফলা,বীজিহীন।লজ্জা লুকোতে যে কবর খুঁড়েছিলাম তুমি সোৎসাহে সেখানে জল ঢেলেছিলে অন্যপথে,নিভৃত রেখায়।ভয়াবহ প্রশ্ন ও বিচারে রক্তাপ্লতা নিয়ে আসে প্রসূতির রক্তমাখা রাত এবং নবজন্মের মতোন পাপজলে ভরা পৃথিবীকে মুক্ত করে নাও তোমার আশ্লেষ থেকে। ১৬. সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কবিতার বইয়ের পাতা উলটে বন বিভাগের নির্জন বাঙলোয় জামাখোলা,কাঁচুলিবিমুক্ত স্তনে মুখ রাখে কামোন্মত পুরুষ;শরীর সর্বস্বের এই খেলায় রমণী তোমার জারিত যৌনরস ঘামের ফোটার মতো উরুসন্ধি,জঙ্ঘা বেয়ে পায়ের পাতায় এসে থেমে থাকে।থেমে থাকে সভ্যতা,দ্বিধার টান এবং বিসর্জনের বাজনা।বাজনাদারেরা একে একে অন্ধকারে ডুবে যায়।জৈবজটিলতাহীন দুইচোখে অসুন্দরের বর্ণমালায় উড়াল পথের ছবি এঁকে দেয় প্রতিশিল্পী।একেকটা দিন এভাবে হারিয়ে যায় অন্ধকারের গহবরে আর আমার নিঃশব্দ মুখের প্রচ্ছদে জমে ওঠে তিনপুরু ধূলোস্তর।অইদিকে বাঙলোর পেছনে উপাসনাভেঙে ডেকে ওঠে প্রিয় কাক।স্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনিতে বনের নির্জনতা খান খান হয়ে ফেটে পড়ে। আমি কতোবার করজোড়ে বলেছিঃতোমার কলঙ্কের কিছু ভাগ দাও।শোন নি প্রার্থনা।শুধু চাঁপাকলির আঙুলে বেড়ে গেছে আঙটির অজন এবং সংখ্যা।আড়ালে আগুন,করতলে ছাই মেখে ঘরে যেতে ইচ্ছে নেই।গলিত শরীর নীরবতা মেনে জেনে গেছে তার শেষ পরিণতি।দ্রবীভূত সময়ের আলো এসে পড়ে প্রকট চোয়ালে।ক্লান্তিহীন অনন্ত অভ্যাসে বুকের পাপড়ি মেলে অবৈধ সমর্পণের মত্ত রাতে যা কিছু পার্থিব,নৈসর্গিক এবং দুঃস্বপ্নতাড়িত---এতোগুলো ক্লান্ত ভোর মুছে ফেলে আদরের কলঙ্কিনী রেখা। কুয়াশায়,সূর্যের বেলায়,অপরিমিতের ঋণে আমি কেঁপে উঠি জলের কাঁপন ও অস্থিরতায়।কুর্চিফুলে ঘেরা বাঙলো।এবারই প্রথম ফুটেছে কিন্তু অকল্পিত মুক্তিতে অগণ্য কীটপতঙ্গের দৃষ্টিপোড়া;গুঞ্জরণে যারা উড়িয়েছে স্বপ্নের উদ্ধত পাল।জল ও স্রোতের মাঝামাঝি ক্ষেত্রজ নৌকার সারি।গন্তব্যে স্থির ও সাবলীল যাত্রা।অনিশ্চিতের গন্তব্যে রুমি কোথায় চলেছ?অসম দাহের বুকে কোন কিস্মৃতি ও সহসা লুপ্তির ঘাটে অনন্ত যাত্রার শেষে?প্রতিটি তন্দ্রার ঘোর থেকে উঠে আসে শ্বেত-সূর্যরাত্রি।তারপর অপেক্ষার পর অপেক্ষার প্রহরে দু'হাতে পুঁথি ও রান্নার জলে পূরোনো সে ঘ্রাণ।মাথার ওপর সূর্য জ্বলছে।সূর্যের ভস্ম,ছাই এসে চোখে লাগে। ১৭. রক্তের ভেতর বান---নৈতিকতাবর্জিত ও স্খলনের।পাপ ও দুঃখনদীর ঘাটে এসে লাগে চির হরিৎ ক্ষিধের নৌকা।পরমান্ন কই।ষষ্ঠীতলা,ভাঙা দেয়ালের পাশে সাপের খোলস পাল্টানোর গান।এই গানে ঘর ছাড়ে মেঠো ইঁদুর,ব্যাঙ।আমার বিশীর্ণ শরীরের চামড়া ছেঁড়ার শব্দে ভুলভাবে ফুটে ওঠে ফুল আর ক্ষুব্ধ জল ঠেলে নির্বিকার হাতে তুলে নাও কর্কট মাংসের খন্ড।বিভ্রান্তি ও ভুল থেকে যে সৌন্দর্য্য---সানুদেশ পার হয়ে যাদুঘর,নিলামবাজারে সংগৃহীত স্তুপের মতোন পড়ে থাকে।উচ্ছিষ্টের ভাগ চাই নি কখনো উৎসব-বাড়ির কুকুরের মতো।কাশের জঙ্গলে,প্রতিমা,তক্ষণশিল্পে এবং উৎকেন্দ্রিক কবিতায় একদিন নিরুপায় ডেকে গেছি অতৃপ্ত প্রেমিক।পাহাড়,নীলগিরির অল্প গন্ধের ম্যাগনোলিয়া;সহজতা যার প্রশ্নাতীত--টুকরো টুকরো হয়ে ঝরে পড়ে বিদায়বেলার গানে।মায়ান ও পিরামিড সভ্যতারও পূর্বকাল থেকে ঠিক এইভাবে হাহাকারের দারুণ চিতা অনিমেষ জ্বলে জ্বলে উন্মীলিতা রাতগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে আর প্রিয় রমণীরা অন্ধকারের ওপারে চলে যাচ্ছে।অধিদেবতার জলভারে ছিন্ন,প্রবল ও নত হয়ে।জলের ওপরকার স্তর ভেঙে তার প্রতিটী রহস্য এই গ্রীষ্মাবকাশে অবচেতন মন ও মননে গেঁথে যা যা চেয়েছিল,---রক্ত,মদ,নগ্ন যৌনতা,অগ্নির সর্বস্বতা নিমেষের লবণজলের স্রোতে ভেসে যায়।অস্বচ্ছ বিম্বের মুখ ফসিলের ফুল হয়ে ফুটে থাকে পান্ডুরেখাজলে।মাটিছোঁয়া দিগন্তের প্রতিমুহূর্তেই মৃতসহযাত্রীদের অনুগমনের পথ বন্ধ করে স্ব-প্রণোদিত বর্ষাফলক হানে জর্জর বুকের পাঁজরের হাড়ে।সাজানো অক্ষরগুলো হাতে নিয়ে বুকে শ্মশানের পোড়া ছাই,ভস্মকণা মেখে শ্মশানতলায় জীবনের পাঠ নিতে নিতে দেখিঃপ্রেতিনির যোনী ঢেকে আছে সমস্ত প্রান্তর,পিণ্ড ও তর্পণে মেতে আছে প্রেতদল।সমবেত পাঠ ও প্রতিপাঠের কালে রমণীর চোখের স্মৃতিতে জমে ওঠে অন্য ব্যভিচার,অন্যরকম প্রেমের চোরাস্রোত।মুখগুলো দেখা যায় না-প্রতিবিন্দুর মর্মজল ঘিরে নাশকতার রক্তিম আভা।কতগুলো,দিন,কতগুলো ক্লান্তিহীন রাত লোভীর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।এ-কি আত্মঘাত নয়?এ-কি ধ্বনহসের দেয়াল গাঁথা জীবনের প্রতিচ্ছবি নয়? ভীড় করে আসে অমূলক প্রশ্নদল। গুহাচিত্র,ভাস্কর্য ও জল ধরে আছে গতিমালা অথচ নিঃশব্দ জীবনেরে খরতার স্বাদে তেতো হয়ে ওঠে অন্তরাত্মা।কাকদুপুরের প্রহরে আকাশ ভরে যায় এমন অন্তঃক্ষরণ---বিপরীত জলে জেগে ওঠে সাজানো সংসার,ঐকান্তিক প্রেম।ডুবে যায় বাড়িঘেরা প্রসন্ন উঠোন,সুখময় সুখের ধমনী।ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল দামভর্তি ব্যবহৃত পুকুরের জটিল শিয়রে?হেলেপড়া তালগাছের ছায়ায় সূর্যাস্তের গোধূলি দেখার?অবশিষ্টে পড়ে থাক উপক্রমনিকা।বৃষতিমুখর দিনের চলচ্ছবি ভেঙে যে ক্ষেত্রজ নৌকা এগিয়ে চলছে অল্প কিছু সময়ের ব্যবধানে সেটা ইতিহাস হয়ে যাবে।তারপর ঢেউ।শুধু ঢেউ। আজ আমার বুকের মধ্যে না ঘৃণা,না ভালোবাসা! ১৮. একেকটা স্তব্ধ মুহূর্তে মুখ ও মুখোশের শ্বাসে আমাদের মুখোমুখি ব্যঞ্জম ও স্বরধ্বনিগুলো ভূতগ্রস্ত ভেবে দূরে সরে যায়-জৈবজটিল তোমার দুই চোখে জেগে উঠুক বুকের খুবলেনেয়া আলো।সে আলোরধারা শব্দ নির্মাণ ও বিনির্মাণে রক্তঘটে এঁকে দেয় সিঁদুরে আল্পনা।নতমুখ বিকেলের এই আধা-প্রেম,আধা-ভালোবাসা পড়ন্ত গোধূলি বেলায় ঢেকে যায়,ঢেকে যায় তুলসীমঞ্চ,মন্দির,বটগাছ। বুকজুড়ে ছিল পারিজাত প্রেম,শুদ্ধতর ভালোবাসা কিন্তু অপ্রেম ও কালিমায় ঢাকা তোমার চোখের মণিকর্ণিকায় ঘোর সূর্যাস্ত কেবল কৃষ্ণাদ্বাদশীর চাঁদ জ্বলে। সমুদ্র তীরের ঝাউবনে সশস্ত্র সন্তাস,মাছেদের শব দূরে রেখে আমরা নেমেছিলাম সমুদ্রের জলে।অন্ধকারের জ্যোৎস্নায় নতজানু সৈকতে প্রেতের নৃত্য,ভূত-উৎসবে চুবড়ি গন্ধ। ১৯. একাকীত্ব কিংবা ধ্রুপদী গানে মৌনমুখ বিকেলের নদীর কিনার আর শ্মশানভূমির পাশের ঔষধি ক্ষেত ভরে ওঠে।আমি ভূগোলের জরাজটিল প্রান্তর থেকে মূঢ় মানবজন্মের স্মরণাতীত উজানসিন্ধু পার হয়ে বধির ও অন্ধদের পেছনে পেছনে হেঁটে গেছি গঙ্গা অববাহিকায়,নীল নদের উৎসের জলে।শালপ্রাংশু মাঝরাতে কুয়াশায় ঢাকা যক্ষধন হাতে চুপি চুপি ফিরে এসেছিলে অনায়াস,অন্যমনে?তোমার সে বিকৃত মুখের ফুলে এক মৃত্যু থেকে আরেক মৃত্যুর পথে দলবৃত্তে অন্ধ ছিল। সমুদ্রের তলদেশ খুঁড়ে কোনো শঙ্খ আমরা পাই নি। ২০. দৃশ্যমান বাস্তবতার নিরিখে বহুরাত্রি পূর্বের উৎসবে আরো অন্যসব পুরুষেরা এইসব ঐশ্বর্য,সংসারসমুদ্রের কূটজ্ঞান এবং ক্ষুধার সমূহরুপে তোমার সুডৌল স্তনে সেঁটে দিয়েছিল যৌনতার ইস্তাহার।দ্রুতলিখন অক্ষরে উড়ে আসা শীতের প্রথম হাঁস;যার ডানায় রক্তের ছোপ,দূরাগত দুপুরের প্রান্তদেশ এবং বুকজুড়ে অনেক নখরাঘাত যেন আদ্যিকালের মেঘের ভার।সেই থেকে আমি আর ছুঁয়েও দেখিনি শীত সকালের সাদা হাঁস।বনের অর্ধেক কাটা গাছে প্রতিহত রক্তছাপ মেখে আমিও কাঠুরেদের মতো প্রতিশ্রুতিবদ্ধঃবন্য ও আরণ্যসম্পদের প্রতি চিরদিন উদাসীন। অনুশাসিত অতীতে আশা-আকাঙ্খার বিমূর্ত প্রতিকৃতিতে দেখেছি তোমার অধৈর্য্যের উরু আর স্বপ্নাহত কৃশপায়ে চঞ্চল হরিণ গতি;ঘোর কুয়াশায় ছুঁতে গিয়ে দুই হাতে আগুন ছুঁয়েছি;যে ঘাটশীলায় বসে ছবি এঁকেছিলে---তার কিছু চিহ্ন,দুই এক বিন্দু অস্বচ্ছ রঙ পড়ে আছে শুধু। উত্তরদক্ষিণে বিস্তৃত পৃথিবী এবং এর মহাজাগতিক ত্বকে,বাঁধ ভাঙা জলে যে ঘরহারা মানুষেরা আতশবাজির শোভাযাত্রায় মেতেছ আর হতভাগ্য রমণীরা তাদের আঁচলে স্নেহরব বুলিয়ে দিয়েছে।ঘামে জর্জর মুখগুলোতে শুধু তোমার ত্র্যহস্পর্শের জলে ভাসে মসলিন স্বপ্নের ভাষা ও শেষ রাতের প্রহরে বলা স্রব্ধ কথামালা। আমার বুকের স্ট্রেচারবাহিত রক্তস্রোতে সেই একই নক্ষত্র,দূর আকাশের কিছুদূরে ভেসে আছে চাঁদ।শোনা যায় অপঘাতের কল্লোল,ব্যাথাতুর আত্মার ভেতর লক্ষ হীরামুখী সুঁইয়ের আর্তনাদ--তার ভেতর নিমগ্ন স্বপ্ন,স্বপ্নের ভেতরে প্রতিপদী স্বপ্নে পদ্মপাতায় টপকে যায়। সশব্দ ও আশংকায় ভাসমান কচুরিপানায় উদয়াস্ত পোকামাকড়ের বসতি অথচ লাফের আহ্লাদ আর চোরা ঘূর্ণিটানে পর্যুদস্ত অন্ধকারের ভেতর ডেকে বলছঃএ পথে নয়,অই পথে....।

শুক্রবার, ২৩ মে, ২০১৪

ধূপের মতোন উড়ে গেছে প্রতিশ্রুত প্রেম

ধূপের মতোন উড়ে গেছে প্রতিশ্রুত প্রেম।জলের স্বভাবে তরলবসনা নারী আমরা সকলে ডুবে আছি হাঁটু,কোমর ও বুকজলে।(মানুষের স্মৃতিও তরল।নিয়ত পরিবর্তনশীল।)সভ্যতা বানিয়েছিল যারা;আমাদের সেই পূর্বপুরুষেরান উদাসীন অক্ষমালা ঘিরে শূন্য প্রতিভার বিকিরণ ও প্রতিফলনে আলোর আরেকপাশে অধিকারহীন মর্যাদা অথবা কলংকরেখার ধারার নিবদ্ধে বেঁধেছিল জীবন।ভূ-প্রদক্ষিন,মরুযাত্রা,বেলাঞ্চলে রৌদ্রময় আভা,চারিদিকে ভাপ।অঘোর চৈতন্যেদয়ে একাকীত্ব,অপেক্ষা ও অন্ধত্বের গানে অনির্দেশিত সংকেত এবং কূটিল স্বার্থের গ্রন্থি---বৈপরীত্যে ভূমি বিভাজন,নদীর নাব্যতা কিন্তু তার চেয়েও দূরহ মানবীর প্রেম ও প্রেমের ফলিত জ্যোতিষরুপ।যে ভৌতবিদ্যায় আঙুরের রসের জারণ,সূর্য্যমুখী ফুল থেকে ভোজ্যতেল এবং সোঁদা মাটির গহ্বর থেকে যব গাছের উৎপত্তি ---তার রহস্য উদঘাটন এবং দূরান্বয়ী নক্ষত্রের আলো প্রকৃতির অন্তর্গত শৃঙ্খলিত স্থিতি ও অস্থিতিসহ সমুদ্র বিধৌত এ-উপত্যকায় মানুষের কোলাহল, শোভাযাত্রা,দূরারোগ্য ব্যাধির হাসপাতালে স্ত্রীলোকের রক্তক্ষরণের উৎসবে পাথর,শিবলিঙ্গ বেয়ে নামছে পানীয় জল।নর্দমার জলে হাঁস,পাশে পড়ে থাকে দুপুরের খোঁড়া রোদ।সমস্ত পাহাড় ভেঙে আসক্তি অতীত ফেলে এতদূর চলে এসেছি যে---ফিরে যাওয়া?সে প্রায় অসম্ভব।গোধূলিবেলার দিকে অনায়াস চলে যাওয়া যুবক,লঘু স্মৃতি,---প্রাণ টলে যায় জীবন্মৃতের মতোন।লাটবাগানের অন্ধকারে বৈধাবৈধের অজস্র চুম্বনের মতো মুক্ত নাভিতটে শ্বাপদের থাবা।পতনোন্মুখ মানবী,পতনের খোলা বুকে কালোরাত নেমে আসে।শরীর ফেরেও যদি,কৃকলাশ চাহনীতে বরফ।আকাশ ভরে যায় ভস্মে।কালো বাতাসের উত্থানে জর্জর বুক।ধর্মত যা দেখা অপরাধ--দেখেছিল এই দুই চোখ অন্ধ হওয়ার আগে।ধারাময় সরীসৃপ তাপদাহে জ্বলছে হৃদয়।মানবী,বোঝ নি চলমান স্রোতে জলের অক্ষরে লেখা কবিতা ও প্রেমগাঁথা। যদি এইখানে এর শেষ হত,যদি আবার নূতনভাবে অগ্নিময় শোক ও অশ্রুতে লিখে যাই কবিতা,গানের সন্ততির পাশে গলিত হাতের মুঠো খড়কুটো ভরে উঠে আসা---বালুচরে পড়ে আছে ডানাভাঙা হাঁস,ঠোঁটের আদূল কোণে রক্তমাখা কষ....এর কোন শেষ নেই। ২. ছন্দ শাসিত কবিতা এবং ভাষার ভেতর অনেকান্ত জ্জবনের ত্রাণহীন নীরন্ধ্র কালিমা,প্রেতের দাঁতের ফাকে মরজগতের টুকরো,সাংখ্যের ভেদে প্রকৃতি।পিতৃভূমির অই প্রান্তে শব্দগুলো মুছে আসে।নদীতীরে এসে লাগে ছইহারা নৌকা।ঝাঁকড়া অশ্বথগাছ।শেকড়বাকড়ের নিঃশ্বাসে উঠে আসে অর্বুদ কালের গান।অথচ এ-কথা ঢালু পাড় ভেঙে নেমে আসার সময়ে ছদ্মের সংসারে কানাগলি,মাকড়সা জাল---কেঁপে ওঠে অবৈধতা।সঞ্চারিত ভ্রূণে শকুনের ডানা।অক্ষয় জীবন ফেলে চেয়েছিলাম মুদ্রিত হতে কিন্তু সুমন্দ্রিত বুক জুড়ে কালো বাতাসের উত্থান।ঈশাণ কোণে মেঘ।আমার সঞ্চয় শূন্য।উত্তরাধিকারী আমার সন্তান-সে ও ভেসে গেছে।ইচ্ছে ছিল-বাঁচাতে পারি নি।সেই পাপে গোটা শহর কবিতা এবং শিশুহীন।যা আঁকড়ে বেঁচে আছি;আজ কিংবা আগামীকাল দুর্মর মৃত্যু,মায়াজাল,হোমের আগুন,সামমন্ত্রে ছাড়িয়ে গিয়েছি আলোর আসর।দুই চোখ ডুবে আছে অন্ধকারে।তোমাকে ছুঁয়েছে?ধোঁয়া ও আগুন থেকে হাত তুলেছি---মানস সরোবর থেকে অই দেখ পাখিরা আসছে।অর্ধেক হৃদয় খুলে স্বরব্যঞ্জনে ভাসিয়ে দিয়েছি।নেয় নি জল।অরুন্তুদ চিৎকারে চিৎকারে দশদিক বিদীর্ণ করেছি।শোন নি সে ডাক।জলের আবর্তে ঘেরা জলজ রমণী প্রতিহত সব পথ দুমড়ে মুচড়ে গেছে।ঘোরানো পথের বাঁকে কোজাগরী ইন্দ্রজাল।কুহকের মায়ায় দরজা খুলে বেরিয়ে পড়েছ?চৌরাস্তার কাছে অপেক্ষা করার সমস্ত জায়গাগুলো ভিখারীর দখলে।পেছনে যন্ত্রণার পদছাপ।জ্যোতির্ময় মুকুটে রাতের এ শহর অরোরা বিভায় জ্বলে ওঠে।আমি দুঃস্বপ্নের কালঘোর থেকে জেগে উঠেছি।এ-অন্ধকারে কোথা থেকে আসে এতো অলৌকিক আলো?তুমি তো জলের মেয়ে।নিবিড়ের সজলতা ছুঁয়ে দেখেছ কখনো?একেকটা সুর কিভাবে জড়িয়ে ধরে ঘাস-লতা-পাতা-শেকড়?পাঁজর ফুঁড়ে বের হয়ে আসা দীর্ঘশ্বাসে শুনেছ উজ্জীবনের কিংবা উচ্ছনের গান?অলস ভাসানে ভেসে চলা বিরহী সময়ে প্রিয় নামের নিঃশ্বাসে বাতিল হয়েছে? মাথার ওপর এক ভাঙা আকাশ।গোলকে পৃথিবীর ছায়া।কেবল শব্দের বোধে দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে চোখের সামনে খুলে যায় উৎসারণের রুপান্তরিত মুখ,অপূর্ব সম্ভাবনার শস্যক্ষেত,আলপথ,সেঁতু।আমাদের স্পর্শে বৃষ্টি ঝরেছিল।শ্মশানভূমির নির্জনতা কাম্য ছিল না অথচ অবলীলাক্রমে বিস্তৃত হয়েছে আমাদের ভালোবাসা, সমুদ্র পেরিয়ে গেছে।সৈকতের ভেজা বালিতে মাস্তুল,ভাঙা বৈঠা পড়ে আঁছে আর আমরা পরপরের মগজে খুঁটছি মৃত প্রজাপতিদের ডানা। ৩. অস্বচ্ছ জানালাজুড়ে আমাদের প্রিয় সম্বোধনগুলো অন্য গ্রহের ধূলোয় ঢেকে আছে।আমার হাহাকারের বুকে গাঢ় গুঞ্জন।কখন বেজে উঠেছিল বিষাদের সুর?সেতারের ছেঁড়া তার বিঁধে আছে পাঁজরে।আমরা বুঝি নি অথচ কথা ছিল বাঁধ হব অন্ধকার প্লাবনের মুখোমুখি কিন্তু বর্ষণের অকাল প্রপাতে ধূয়ে গেলাম বালির মতো।দু'কূল ছাপিয়ে ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে পৃথিবীর দেয়াল ও ঢালে।মোহের এ শরীর হয়ত ভেসে যাবে রাত দ্বি-প্রহরের ঘূর্ণির পাঁকে।জলে তাণ,প্রত্যাশার পাথর ভাসছে।তীরে দাঁঁড়িয়ে তোমার অশ্রুপাতহীন চোখে দেখেছি ভিনগ্রহের অন্ধকার,নির্বাসিত মুখের প্রচ্ছদ।একদিন যে বুকের মাঝখানে দিনরাতের রঙিন ফুল ফুটিয়ে ছিলাম---কালো ভোমরার দুষিত দাঁতের দাগে ভরে আছে সেই বুক। এ জ্বালা কখনো নিভে যাবে?আমার বুকের বদ্ধ বাতাসে পাতালগান,চোখে আচ্ছন্ন বিলাপ---অবিশ্রাম অনুরণনের মতো প্রাচীরের নিমগ্নতা ধ্বসে যাবে?মৃত্যুকূপে বেজে উঠেছে ধ্বংসবীজের সুর?আলোর স্ফটিকে মুখ ঢেকে আছ?খুলে দাও।ধারাজলের এ-রাতে পায়রা নদীর ধৈর্য্যশীল বালিয়াড়ি পার হয়ে যাবে?অই পারে নিশ্চিত আশ্রয়!সোনালী-সবুজ শস্যক্ষেতে এগিয়ে যাবার এই দৃশ্য---কার সাধ্য তোমাকে আটকে রাখে?কবিতামূর্খ রমণী,বোঝ নি ঝড়ের পূর্বাভাস,চোরাবালি,সমুদ্র আস্বাদ।সীমান্তের লাল বাতি এখন সবুজ।আড়মোড়া ভাঙে ট্রেন।মনখারাপের বাঁশিতে উদ্বেল সময়ের আপেক্ষিক স্রোত। আমি পৃথিবীর আলোয় অদৃশ্য তট আর শেষ সূর্য্যাস্তের কথা ভাবছিলাম;গোধূলি থেকে ছোট্ট ছোট্ট উৎস্মুখে আদিগন্ত ভালোবাসা পৃথিবীর মোহনায় বিস্তৃত উচ্ছ্বাসে আলোড়ন তুলছে ঢেউয়ে।ভেজা বালির ওপর সূর্যনাম।মধ্যদুপুরের তাত এড়িয়ে সন্তানসন্তুতির মুখে দেখি গভীর প্রশান্তি।এখন কি যন্ত্রণার চাঁচে নিজেকে গালিয়ে নেব?কবিতার অগণ্য পাঠক-পাঠিকার পাশাপাশি আমার স্বজন,অগুনিত শুভাকাঙ্খীদের ছেড়ে যাব?ঘরের চৌকাঠ আর বাগানের সুড়ঙ্গের মধ্যে শিশিরের এতো জল,এতো মমতার ছায়া---অস্বচ্ছ জলের চোরা টান থেকে ফিরে আসব?প্রণত জীবনের জন্যে। ৪. পরিণতিহীন লক্ষ্যে শিমুল তুলোর মতো উড়ে চলে গেছ।শীতঋতু থেকে দূরে শিকারী ঈগল মাংসখন্ড ভেবে তুলে নিল;এর পর প্রতি রোমকূপ জুড়ে রাতের শিৎকার।এত সন্তর্পণ,চন্দনচর্চিত উষ্ণ নাভী,লোভনীয় উরুতে পরকীয়ার ঝড়।মেঘ ও শস্যের জন্যে প্রার্থনারত যে পুরুষটি শ্বেত ও প্রবাল ঘূর্ণিপাতে দুই হাতে মাটি,লোহার বালতি ভরে জল ঢেলে গেঁথেছিল ভিত,---মাটির দেয়ালে ফুল,লতাপাতা ও পাখির ডানা আঁকা।খড়ের বিছানা ছেড়ে বাঁশের মাচান বেঁধেছিল শেষ সঙ্গমের আগে পুত্র সন্তানের জন্ম দেবে বলে রঙিন পাথর এনেছিল সামনের পাহাড় ও চাঁদ থেকে। আজ তার বুকে অগ্নিভরা জল।ক্রোধ ও বিস্ময়ে ফেটে পড়ে কঠিন পাথর। মনে পড়ে পৃথিবীর প্রথম প্রণয়,অতিকথা,কবিতা ও কল্পনার নিগূঢ়ে রক্তের ঢল।গৃহঘটে ফুটো,ভেজা লাকড়ীর ধূঁয়া,---জলের শুশ্রূষা নিতে উর্ধ্বশ্বাসে সাজানো সংসার ফেলে সকাল ও সায়াহ্নের নদীতে নেমেছ?আঁজলায় উঠে আসে সামুদ্রিক নুন,মাছেদের দীর্ঘশ্বাস।আমার মুখের মৃত্যুহীন আলোতে অসংখ্য মহাপ্রস্থানের সিঁড়ি।দৃশ্যপটে অগুনিত শবযাত্রা,মৃত মানুষের কোলাহলে কেঁপে ওঠে মনোভূমি আর মানবী আমার ক্ষয়জ্বালার রক্তাক্ত মুখে দুর্বাঘাস নয় বালি চেঁপে ধরেছিলে। ৫. যথেষ্ট বর্ণনা ছিল না,কঠিন পথ,শীর্ষে বাঁক,---সেইখানে এসে দাঁড়িয়েছ?অদৃশ্য ক্রোধ ও বিবমিষা থেকে কেবল পতিত থেকে যাও।ঔদাসীন্যে মেনে নিয়েছিলাম বিশ্বাসহীন সুন্দরের মুখচ্ছবি---কত অভিমান,অনুরাগ এবং কবিতার আগ্রহাতিশয্যে শীতার্ত রাতের দীর্ঘ প্রহরগুলো সঙ্গমহীনভাবে কেটে গিয়েছিল।নিদ্রাহীন লালচোখে লেখা কবিতাগুলো রোদ্দুর,জল ও মেঘের অনুপম ছায়ায়; যা ছিল শীত-সকালের ধোঁয়াগন্ধ,গাছপালা,নদী এমনকি পূরাণো জুতার সঙ্গে আতংকিত বাঘিনীর ধারালো নখের ছাপাংকিত দাগ বুকে-পিঠে নিয়ে স্তব্ধ জীবনের ফাঁক ও ফোকরে কুঁড়ি মেলেছিল বটগাছ।অশ্বথের ছায়ার রহস্য চিরকাল অজানাই থেকে গিয়েছিল।একাকী মাঠের প্রান্তে স্বরধ্বনি-প্রতিধ্বনিজালে বটের পাতার স্বেদবিন্দু মুছে যায়,মুছে যায় কিশোরীর সারল্য,সমস্ত দুপুরের পথ।প্রতিহত পথ জেগে ওঠে বিকেলের অপরিচ্ছন্ন মুহূর্তে। গভীর অনন্ত শব্দে অস্থিরতা ছিল।আমি ক্ষমা চেয়েছিলাম।অনুচ্চারিত শব্দ ও বোধের পরিমিত মাত্রায় অনাদিকাল থেকে খসে যাওয়া পাথর,সৌরধূলো,নক্ষত্রের টুকরো,বৃষ্টির ধারাজলে.... আহ!মুক্তির এমন স্বাদ। ৬. অনেকান্ত জীবনের প্রতি পরিচ্ছেদে,প্রতিটি পাতায় এত প্রতারণা,এত ভুল ও অন্ধকারের পঙতি---দ্রুত বেলা পড়ে যায়।সমসাময়িক জাল রসায়নে স্পষ্ট ফুটে ওঠে লবণ-উত্থাল দোলাচলে গার্হস্থ্য-জীবন।গলিত ললাটরেখা ধরে অতীতের আর্ত কেকারব।নক্ষত্রে সাজানো ডানা নিয়ে উড়ে যেতে চেয়েছিলে।মেঘের সীমান্তে অনেক নৌকার সারি।এতদিনে বুঝে গেছ ক্ষেত্রজ নৌকাও ঠিক সামুদ্রিক স্রোতে খুঁজে নেয় গোত্র পরিচয়।অরোরা বিভায়,গোধূলির অন্তরালে অসাড় অপেক্ষা-শোনা যাবে সমুদ্রের স্বর।সূর্যাস্তের পথে ছিল ঝিনুকের দাগ,শেষ মুহূর্তের কথাগুলো লুফে নিয়ে সিন্ধুশকুনের উল্লাস,উৎসবে ছিঁড়ে নেয় ফুসফুস।প্রতিটি হাড়ের গায়ে ঘূণেপোকাদের বাস তবুও ঠিক পৌঁছে যাও সংকেতের বিকেলবেলায়।দূর অস্তাচল থেকে ভাসে আসে বুনোকুকুরের ডাক আর বুক জুড়ে শুরু হয় শকুনের নখের আঁচড়। কবরখানার পাশে স্তব্ধ রাত---আবছা পথের পথচারিনী বিন্দুতে বেঁধে ফেলেছ অতীত,বর্তমান আসক্তি ও ক্লেদে শরীরের রেখা ঘিরে অন্ধকার আলো।দিন ও রাতের পায়ে হাঁটে অস্বচ্ছের প্রতিবিম্ব।মাথার ওপর কোজাগরী চাঁদ অথচ সে আলো আলোর আরেক পাশে পড়ে থাকে।ধাতু-সমুজ্জ্বল বেশ্যাদের নগ্ন স্নানের মতোন ছুঁয়ে আছে অন্তহীন বুক কেননা শূন্যতা থেকে ঝরে পড়ে বিষাদপ্রতীক্ষা,নিয়মনিষ্ঠা ও আমাদের দৈনন্দিনতার সমূহ প্রয়োজনের সূত্রাবলী এমন কি জৈবিক ক্ষুধাও।প্রথম সূর্যোদয়ের কালে সূর্যস্তব ও গায়ত্রীমন্ত্রে শুনেছিলাম আশ্বাস কিন্তু কোন প্রত্যাশা ছিল না।সূর্যাস্তের করুণ কান্নায় ভুলে গিয়েছিলাম প্রার্থনামন্ত্র।অস্তিত্বকে ফিরে পেতে পাথরময় পৃথিবী এবং সমুদ্রের বালিয়াড়ি খুঁড়ে যে জল তুলেছি;রাক্ষসরক্তের বুকে স্বতন্ত্র ও অনিশ্চিত অবস্থানে সন্ধ্যা ও নৈমিষারণ্যে সমান্তরালে ছুটছে রক্তস্রোত---ভাটিয়ালী কথায় তা ধূয়ে দেব? ৭. প্রণত জীবন ছুঁয়েছিল সমস্ত গোধূলিবেলা।স্পষ্ট উচ্চারণে কার্তিক সন্ধ্যার শ্যামাপোকা উড়ে যাবার সৌন্দর্য্যে অদ্ভূত রঙিন ছাপচিত্রে পম্পা-সরোবর তীরে মিশে যায়।অন্ধকারে পাখি কাঁদে আর আঘাটায় এসে লাগে আবর্তিত অভিশাপ।উচ্চকিত তানে বিদায়ের যে সঙ্গীত বেজেছিল তার সুর এখনো প্রান্তর থেকে প্রান্তরে ছড়িয়ে আছে।প্রেতবনচ্ছায়া ঘিরে চন্দ্রালোকপানরত শকুন-যৌনদ্রাঘিমা ছুঁয়ে অকস্মাৎ উড়ে যায়।উড়ন্ত ঠোঁটের কষ বেয়ে ঝরে পড়ে উচ্ছিষ্ট মাংস,রক্তধারা। স্বেচ্ছাচারী জীবনের অলিখিত পূরাণে উল্লাসধ্বনি,আর্তনাদ ও হিংসার প্রপাতে অস্থির কালরাত্রি,শাশ্বত উপমা এবং প্রকৃতিপ্রত্যয়বোধে ঘন চুলের ভেতর বর্ষা নেমেছিল---মাত্রাবৃত্ত কদম গাছের সাদা পাপড়ি কী অবিরল ধারায় ঝরেছিল;দ্বিতীয় মানবী,বোঝ নি জলদ মেঘ,বৃষ্টিভেজা দুপুরের পথের অবশ্যম্ভাবী মসৃণতা।নিশিডাকের নাশকতায় ভেসে গেলে পেছনের অববাহিকার কাঁকর,এঁটেল মাটি,বালি ফেলে। ৮. যা কিছু গ্রহণ করেছিলেঃসামুদ্রিক শঙ্খ,বুনোফুল,নাকছাবিটির হীরা,পুরুষের প্রেমের খেয়ালে রৌদ্র থেকে ছিঁড়ে নেয়া আমার মস্তিষ্ক---একে একে শূন্যে উঠে যায়।তোমার বিনষ্ট মুখে বসন্তের অদ্ভূত স্ফুলিঙ্গ,বিসম্বাদী ডৌল শুষে নেয় আমার অন্তিম প্রপাতের জলধারা।সমূহ সর্বনাশের পূর্বে নিঃশব্দ অগ্নিবলয় ঘিরে আধোশ্বেত ডানার পাখির ব্যাকুলতা,চতুর্দিকে তার ছায়া।এখন বুঝতে পারি কোলাহলরত মৃত্যুর করুণ বাহু কী অবলীলায় গন্ধক মেশানো জলে সাঁতার কাটছে।মালিন্যমুক্তির প্রত্যাশায় পাটিগণিতের পাতার সরল এবং ঐকিকের নিয়মে শ্মশান থেকে শান্ত চোখে ফিরে এসেছ?ধোঁয়ার উৎসারণে নৈশকালীন যাত্রার পথে ঘুমন্ত মানুষ ঠেলে ঠেলে ট্রেন ছুটছে।টেলিগ্রাফ তারের খুঁটিতে কতো টরে-টক্কা---বে-হিসেবী সংকেতে শরীর খুলে বসে আছো?বে-সরকারী আতুরালয় লুকোচুরি খেলে।শরীরের সব দাহ আজও মেটেনি।দ্বিধা-বিভক্তির পাঠ-পাঠান্তরে অধি-দেবতার স্তব,সামমন্ত্রে প্রতারণা।গভীর প্রস্তাবনার এই রাতে খসে পড়ে নক্ষত্র,পৌত্তলিকতা।আমি বুঝি না গ্রহণকিংবা বর্জনের রীতিবদ্ধ অধৈর্য্যতা।ধৈর্য্যচ্যুত শিকারী পাখির রক্তনখে স্বেচ্ছাবন্দী হয়ে জীবন কাটাবে? সমুদ্রের অনিয়ন্ত্রিত জোয়ারভাটা,স্রোতে পুরুষের রক্তমোচনের তুলা আর সার্বভৌম বেশ্যাবৃত্তির চাতুর্যময় ভঙ্গি---আমি জলের কিনার ঘেঁষে দেখিঃজটিল ও দুর্বিষহ জীবনযাপনের প্রণালী,---ফাঁপা,নিষিক্ত ও কলরোলময় বাঁধ ধরে হেঁটে আসছে নিশীথ প্রণয়িনী।চোখে অবৈধ সমর্পের ছায়া!ব্যথা-বেদনার দূরত্বে আমার চোখ দিয়ে অবিরল বৃষ্টির ধারার মতো লজ্জা ঝরে পড়ছিল আর এই শব্দটির আধিক্যে দু'হাতে মুছে নিয়েছিলাম শ্যাওলা ও চোখের জলদাগ।অথচ রমণী বোঝে নি কংকাল,মদ ও মৃত্যুর শব্দে ঘর ভরে আছে। ৯. শাল-পিয়ালের তলে অপর্যাপ্ত দিন ও রাতের ভঙ্গুরতার ভেতর অতীতের আসক্তি ভরাট আঙুরের মতো পুঞ্জ হয়ে আছে। প্রতিবিম্বে প্রতিফলিত দুঃখস্নানের পর্যাপ্ত জলে।স্বচ্ছতায় ভবিতব্যরেখাও পেরিয়ে চলে এসেছি।যদিও সব দিন করতলগত মুঠোয় প্রতীক্ষা করে থাকি পাহাড় ধ্বসের অন্তিম গহ্বরে শরীরের সব তাপদহ চেতনাকে স্তব্ধ করে তার রহস্য হারাবে।কল্পণার নিগূঢ়ে সামান্য বুদবুদ---তাও হতে পারি নি।দিগন্তময় স্থির সর্বনাশের সীমায় কৃষ্ণগ্রীব মেঘে নাশকচিহ্ন,লোহার ঠোঁটে রাজ শকুন খুবলে নেয় বুকের নরম মাংস।অন্ধ চোখের পাটল প্রবাহের মধ্যে জলদুঃখ,তোমার সৌন্দর্য্য প্রবলতা---শ্মশানের আঘাটায় বসে নিজেকেও ছুঁতে পারি না এখন।যে ভুলের কাছে ঋণী নই-সুদসমেত ফিরিয়ে ভুলে যেতে মনেও আনি নি।ভাঞা,বিনষ্ট সে মুখে আতুর উৎসব।পথে বা বিপথে কালো পর্দা টানানো।অস্ফুট আলোর খেলার মধ্যে পায়ে পায়ে ভয়,দ্বিধার প্রবল টানে ভেসে যেতে যেতে কতোবার ডুবে গেছ,কতোবার ভেসে উঠেছ পরকীয়ার হলাহল স্রোতে।জলদর্পণের ছায়ায় মুখোশ খুলে গেছে।সত্যিকারের মুখের অবিরল রেখার সৌন্দর্য্যটুকু ছল,---একদিন জানু পেতে ভিক্ষে নিয়েছিলাম,তা ভাসিয়েছি কালো জলে।ক্ষীণ মায়াবশে আজও কখনো কখনো করুণা জাগে।মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি এখন করুণারও যোগ্য নও। ১০. হারিকেনের আলোয় ঘর ভাসে।তোমার অস্বচ্ছ মুখে থেমে যায় ধর্ম,লৌকিকতা।আমি নিচু ও নিথর হয়ে আমাদের পূরানো দিনের খোলামকুচিগুলূর টুকরো দু’হাতে তুলে নিই।মোহের আকাশ ভরে যায় ভস্মে।যেভাবে নিয়েছিলাম বসন্তের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ,মাটিতে পড়ে থাকা অর্ধেক বিকেল কিংবা নিমপাতা শরীরের গোপন সংকেতে পাঠোদ্ধারহীন শিলালিপি সূর্যরেখায় ছড়িয়ে দেব?পরার্থপর জলের স্রোতে ভেসে যেতে দেব? কবোষ্ণ দু’হাতে এখনও মেহেদীর দাগ,আদূল নখের কোণে রঙের প্রলেপে বিভা---এইভাবে মুছে ফেলে নদীর ওপারে চলে যাবে ভাবি নি কখনো।শালকীর চকচকে বালিয়াড়িতে রোদের তীব্র প্রফলনের বিম্বে পুড়ে যায় চোখ।পায়ে ফোস্কা পড়ে গেছে।ফেরার বিরাম নেই।যে ঘরে পূর্ণতা ছিল কাল,---শূন্য সে ঘরে ইঁদুর,তেলাপোকা.... অনন্ত বৃষ্টির শব্দে শুধুই পথের কথা ভেবে ভেবে নির্ঘুম শরীর নিয়ে পড়ে আছি।কৈবল্য মানি নি।মন ও চৈতন্যে জ্বর। অধিকারহীন ভাষায় অগ্রাহ্য ছিল শাশ্বত উপমা,চিরন্তনী প্রেম।গ্রীষ্মাবকাশের সেই সমস্ত দিনের আশা ছিল।সফলতা ও কর্তব্যহীনতার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিগুলো স্বস্তিকা চিহ্নের মতো আমাদের মাঝখানে শুয়ে ছিল।জল এবং কৃপাকণাবাহী বর্ষার জমজ মেঘ চোখে মেখে আবার বৃষ্টির মধ্যে স্বস্তি পেয়েছিলে সুখ যদিও ছিল না। সৌরধূলোয় আচ্ছন্ন পথ,চোখের কোটরে খড়কুঁটো,জল নেই।নিষ্কৃতির চেয়ে বড়ো দুর্দুমনীয় উৎসবে কোনো অপরাধের,ক্ষতির কথা মনে পড়ে নি অথচ আমাদের পারস্পরিক সমঝোতার মাঝখানে সেই পর্দা এখনও স্থির,ভিনগ্রহের বাতাসে একটু একটু কেঁপে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০১৪

দূরের নক্ষত্র

মাথার উপরে সূর্য
নীচে তপ্ত বালি
জলহীন নদী সাপের মতোন এঁকে বেঁকে শুয়ে আছে
জন্মাবধি,---
অশথগুঁড়ির জটে মুখব্যাদানের অন্ধকার

তোমরা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছ
মহাজাগতিক ত্বকের পাহাড়ী পথে বর্ণচ্ছটা
গাছের রঙিন পাতা,শুষ্ক কুঁড়িতে জ্যোতিষবিদ্যা
পদার্থবিজ্ঞান ও বীজগণিতে ভুল

স্কুল পালিয়ে এ অবেলায়
কবিতা ও নক্ষত্রে আকীর্ণ মাঠে
খেলতে নেমেছ

দূরে ঐ নক্ষত্র

সোমবার, ১৯ মে, ২০১৪

বসন্ত দিনের অবস্থান

প্রবাহমান দিগন্তে কিশোরবেলার একাকিনী দুঃখ,সদ্যসবুজ উদ্ভিদ আর স্নেহরঙিন দিনের প্রান্ত ছুঁয়ে শ্রান্ত হয়ে বসে আছ,সতেজ ঝর্ণার হলে পা ডুবিয়ে,চোখে অর্বুদ কালের মেঘ।ঠোঁটে লেগে আছে আদ্যিকালের পাথরে ঘঁষা কাল পিপাসার গান।তোমার দু'হাতে পদ্মপাতা,চিরায়ত ফল,---গ্রহণের এই দিনে মনে পড়ে দাঁড়ানো মিথুনমূর্তি?শরিরের সূচীপথ ঘিরে সকাল,দুপুর এবং বিকেলের অপরিচ্ছন্ন মুহূর্তমুখ?কালের আহতকালে ডানাভাঙা হাঁসসস পড়ে থাকে---বুকে পাটল প্রবাহ।আদি-মানবীর চোখের রক্তজলের ক্ষতে যেসব প্রপাতধারাঃঘূর্ণিটান রাত্রি,অবসাদ,অব্যবহৃত সময়--বুকের গভীরে বিমূঢ়তা নিয়ে বসে থাকে।মধ্যজল থেকে উঠে আসা এই যে স্থবির,অলস ভাসানে ভেসে চলা চিরহরিতের ক্ষিধে এবং প্রবাহিত যুগল নিঃশ্বাসে মাটির শরীর জাগে কুন্ডলিত কুয়াশায় আর স্রোতে কাঁপে কলংকরেখার উচ্ছ্বলতা।আমাদের দেখা হয়েছিল শীতার্ত প্রহরে।পটভূমিকায় কূয়াশা,পাংশুটে চাঁদ।আমি সুমেরুর বাসিন্দা,কুমেরু থেকে এনেছিলে বিসর্পিনী অত্যাচার,অপব্যয়ী জীবন ও ভ্রষ্ট উপদ্রব।সজীব সঞ্চারে দেখো সুমেরু আজও কেমন জ্বলছে।যা কিছু আমার চারপাশে প্রাণবন্তঃ
স্বচ্ছ সকাল ও নদীপথ
ঘাস ও শুকনো পাতা
সদ্যস্নাত শরীর ও ভেজা চুলের সুবাস
বাগানের করবীফুল ও আঙুরের রস

সমস্ত জ্বালিয়ে দিয়ে পুনর্বাসিত জীবন অধিকন্ত শীতে দাবী করেছিল তুষের আগুন।অস্থি খুলে নিয়ে দু'হাতে একাকী ঘের,শস্ত্রময় বিশ্বাসঘাতকতায় বুকের পাঁজরে ইচ্ছাময়ী বীজ...।পাঁজরে পাঁজর জুড়ে অর্থহীনতার পরপারে মেরুদন্ডে আর্তনাদ,অগ্নিকুন্ড ঘিরে যে হল্লার রেশ উঠছে;আড়ষ্ট লতা এবং তুষারের কণা থেকে যথার্থ সুদূরে বসন্ত দিনের অবস্থান।

চোখের চুম্বন

জলের গভীরতর প্রহেলিকার ভেতর আমি দেখেছি বিরহ,অগ্নিময় শোক এবং প্রকৃত স্বপ্নের রুপে শব্দ ও স্রোতের উর্ধ্বে উঠে যায় ক্ষেত্রজ নৌকাও।নিকারীর শতছিদ্র জাল থেকে নিকারী বৌ এর যে আহ্লাদগুলো স্রোতময়তায় ভেসে চলে-স্মৃতি ও বিস্মৃতিপ্রায় খাঁড়ি মোহনার মুখে জলবন্দী মাছেদের সাথে-এইভাবে,শুধু এইভাবে মানুষের বিনাশের কালে নীল মোমশিখা হাতে দাঁড়িয়েছ অন্ধকারের ভেতর।কালো গর্ভাধারে রক্তচোষা ভ্রুণ।পথচারীর মগজ ঘূণেপোকা।এই সমস্ত শব্দকুহক ছুঁয়ে বুঝে নিই আমাদের বুকের আগুনভরা জল,বাতুলের অগাধ মূর্ছনা।শরীরের প্রতি রোমকূপে যে পাতালগান জেগে উঠছে;নিঃশ্বাসে বুকের পাঁজর ফুঁড়ে বের হয়ে আসে ভাঙা মাস্তুল ও উদাসীন হাল।নিরক্ষরেখার প্রান্তে যতদূর চোখ যায় অবসাদে ভরে আসে শরীর ও মন।খোঁড়াপায়ে কতদূর যাব?দিগন্তের ওপারে নিরভিমানী স্বেদবিন্দু।তার স্মৃতি ছড়িয়ে রয়েছে---কোমল ও ভাস্বরতা মেলে।আমার এ চোখ দিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকাওঃজন্মের প্রতীক্ষায় কত ভ্রুণ যন্ত্রণাহত,পায়ের কাছে নগ্ন শুয়ে আছে,শিয়রে মৃত্যুর হা্তছানি।মায়াজাল ছুঁড়ে আর কর মরা ফড়িঙের ডানা,অসাড় দিনের স্থবিরতা তুলে আনা?সৃষ্টির ভেতর ধ্বংসবীজ?স্রোতের ভেতর ঘূর্ণি?শস্যবীজের প্রণয়ে দীর্ঘকাল---ভালো লাগে এইসব প্রেমের কান্নাতে?মুঠো খুলে যায় চৈত্রের দুপুরে আর গড়িয়ে গড়িয়ে নামে তুচ্ছ সবুজের স্মৃতি।মানুষের জন্মে ইচ্ছের স্ফটিক আলো,অসংখ্য আনন্দভারে জীবন ছুঁয়েছিলাম---পরিস্রুত প্রেমিক তারার মতো।বিচিত্র সুখানুভূতি এবং আলস্যের লতা যৌবনের প্রাত্যহিকে খুলে দিয়েছিল---ঘাসের মাথার নীলে,সবুজে-সবুজে।ধারাময় সরীসৃপ দাহে চরাচরব্যাপী  ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়ার রক্তের লাল ফুল।চোখের আহত দৃষ্টি চেয়েছিল চোখের চুম্বন।

বশীভূত জীবন

মেঘের ভেতর করপুট পেতে
যে জল ধরেছিলাম
ছড়িয়ে দিয়েছি নদী ও সমুদ্রে
পূর্ণিমার চাঁদ গালিয়ে ঢেলেছি
অঘোর আকাশময় আর
জীবাশ্মের অন্ধকারে অগ্নিশিখা ঘিরে যে উৎসব
জন্ম ও মৃত্যুর তীর অবধি ঐ জ্বলজ্বলে স্মৃতি
ক্ষুধা -তৃষ্ণাহীন ঘুমন্ত পুরুষেরই প্রতিরুপ

অধোমুখ রহস্যের ধ্বনিতে পরিবর্তিত আলো
সংস্কারবিহীন অনির্ভরতার কেন্দ্রাভিমূখী বিনির্মাণের ঋজু থামে
শ্বেত পাথরের অরচিত বাড়ি
উঠোনে করবী ফুল

অনর্থের তুকে বশীভূত এ জীবন
জলের ওপর দিয়ে ক্রমশঃ প্রতিফলিত মেঘ ও আলোয়

রবিবার, ১৮ মে, ২০১৪

সমকাল

পরাবাস্তববাদী দৃশ্য ও চেতনার ভেতর প্রবল আলোড়ন;এ দেহ সংকেতে পরিপূর্ণ-পাঠ এবং প্রতিপাঠে বিচিত্রিত পৃথিবী হিংসার অবলীঢ় তাপে জ্বলছে।আগুনে ডাক,আলেখ্য,কাব্যের অন্তর্গত দ্রোহ ও প্রেমের সম্মিলনে যে-বাল্যে মানবজন্ম কেটেছিল আপাত স্বপ্নের রেতঃপাত থেকে;সেই ভুল জন্ম,ঐহিকতা,জায়মান শ্রেয়বোধে তুলা ও শস্যের ক্ষেত পরিত্যক্ত প্রায়।দ্বি-মুখী সমাজ নিরপেক্ষ জোটবদ্ধতার রক্তমাখা নখ থেকে ঝরে পড়ে সাংসারিক বৃষ্টি আর বোধিবৃক্ষের তলায় ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের শরীরে বাসা বাঁধে মৌমাছির ঝাঁক।চাক ভেঙে যারা মধু নিতে এসেছিল,তারা সকলেই দেখেছেঃঅস্বাভাবিক জীবানুর স্থিতিস্থাপকতা,ধ্বংস ও সূর্যোদয়ের পাশাপাশি অকাল বৈধব্য,বহু পরিচর্যাজাত খামার চাষের ক্ষেতে লতিয়ে উঠছে মুথা,দূর্বাঘাস।সম-সাময়িক রসায়নে জারিত যবের দানা,আঙুরের রস ক্রমঃবর্ধমান লক্ষ্যমাত্রার সারণি ছুঁয়ে গন্ধকময় ঝর্ণার জলে মিশে আছে।গ্রাম্য কিশোরীর প্রতি যৌনতা ও উপদ্রবে পারঙ্গম ধর্মচ্যুত,ধর্মজ্ঞানী সাধুর নক্ষত্রহীন মাঠ হতে সশব্দে উৎখাত হতে থাকে শহরের স্তব মুখে।পড়ে থাকে ত্রিশুল,ধূনির ভান্ড।হাতে উঠে আসে পরিত্রাণের শাবল।কঠিন মাটির স্তর ভেঙে জলময় আঘাতে আঘাতে গড়ে তোলা নিমগ্ন প্রাচীর;লোভ ও বিভাজনের-পরস্পর ভিন্নতায় অনির্দেশিত অপরাধ ও ক্ষমতার ক্রোড়পত্রে ক্রীড়াশীল অগ্নি। আপাতত শান্ত,নিরুদ্বেগে রেখেছে ভরাট মেঘপুঞ্জ,দিন ও রাতের ভঙ্গুরতা।অলস ভাসান কিংবা আত্মঘাত থেকে লাফিয়ে উঠছে শব,কপালে জন্মের জলছাপ সমেত;যখন এক পথ থেকে আর এক পথের দূরত্ব--সমকাল।

বিসর্জনের বিষাদ।

সময়ের নিজস্বতা,শব্দের যোজনা এবং আড়ালের সজলতামুখ ধূয়ে গেছে রাতজলে শব্দহীন দিন খুব বেশী নয় কিন্তু ভূতগ্রস্ত রাতগুলো বুকের ওপর দিয়ে খোঁড়া পায়ে নেমে আসে।ক্ষতহীন মুখের রেখায় পাথরের ভাস্বরতা,বিষাদপ্রতীম চোখে প্রজাপতির ডানার জলছাপ।গোধূলিবেলাকার ছায়ায় খসে পড়া মুহূর্তগুলো চেয়েছে স্তব্ধ কথামালা,অক্ষর ও শব্দে অভিজ্ঞানলব্ধ গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ।পশুবীজ বাতাসে ভাসছে।জেগে ওঠে ক্ষুধা,রিরংসা,জিঘাংসা।অর্বুদকালের পথ পার হয়ে পালিয়ে এসেছি শেকড়ের অন্বেষণে।তা-কি ঠিক?মানুষ ও পশুজন্মে মুছে যাবে পাখিদের ইতিহাস?চাদরে লুকানো রক্তমাখা তীর,ঝুলি ভরে আছে মৃত পাখিদের শরীরে।শিমুলতুলো প্রভাব ও প্রতিপত্তিহীন পাতা,খড়---বাতাসতাড়িত।কার্পাসতুলোর চাষ নেই।পায়ে হেঁটে ফিরেছি,ক্ষেতজাঙালে।নিরক্ষর বেশ্যা ও নটিনীদের পদভারে খরনুপুরের শব্দে কাঁপছে এ ভূমি।মেঘের সারল্য আর দারিদ্রহীনতার নেত্তৃত্বে  পিতৃ-পুরুষের এই ভূমিতে যে ভাবে বেড়ে উঠেছিল নটেশাক,গুল্মলতা ও ঔষধি গাছ;উভয়তোমুখে আজ ভাবিঃঅপরিণত মাটির তলাকার অশ্রু-স্বেদ-রক্ত-ঘাম এবং ডাহুকবিলের শুকনো চরায় প্রিয় কবিতা ও গাঁথাগুলো উপাসনারত।উড়ছে বাঁশের পাতা--সরাসরি স্বস্তিময় সুখের মতোন এবং আমরা অপেক্ষারত মৃত্যু ও সহমরণে।চিতা প্রস্তুত।অকাল বৈধব্যকে টেনে তোল আর অই দিকে ঘরে ঘরে অভিনীত হতে থাক 'বাল্মিকী প্রতিভা।'
লতানো গাছের নীল শাখাপ্রশাখায় মৌমাছি প্রজননের পরীক্ষামূলক প্রকল্প ঝুলছে।ওই গাছগুলোর তলায় ঘাস এবং কবর;অভ্রখনির মতো নির্বিকার।অজ্ঞাত বছর শেষে নানান গোপনীয়তা থেকে উদভ্রান্ত মানুষের কলস্বরে বসবতের গূঢ় ধৈর্য্য থেকে আমার অন্ধত্ব ও কু-সংস্কারের ভাঙা দাঁড়িপাল্লা,বস্তুজগতের টুকরো সাজানো--ভাসমানতায় ভরা অথচ অক্ষম ভেসে যেতে শূন্যের ভেতর।ভূর্জপত্র,তালপাতায় কে লিখে রেখে গেছে মানুষের সারাৎসার জীবন ও গান?বীজ ও পতঙ্গে পরিপূর্ণ আমার করোটি ভরে আছে কোকিলের ডাকে।বসন্ত পূর্ণিমা রাতে পুজো হবে তারপর বিসর্জনের বিষাদ।

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০১৪

জন্ম ও মৃত্যুর পরবর্তী পরিচ্ছেদ

সংবাহ অন্ধকারে দ্বি-খন্ডিত পথ,মুহূর্ত মুখর হাসি এবং যৌবনপ্রান্তিক বটের ঝুরিতে ভেজা কুয়াশার প্রলেপ;চোখের গর্তে নির্বোধ পতঙ্গ আর অনাদরে সবুজ,রহস্যময় মুখে এমনই আভা-মুছে যাবার সাহস!শূন্য থেকে ত্রিতাল,দিগন্তময় স্থির,বিনত বিশ্বাসে কেঁপে ওঠে অভাব,অতীত,বর্তমান।ভবিতব্যরেখায় দুর্বোধ্য সব নক্সা।নাক্ষত্রিক পরিমন্ডলের মধ্য দিয়ে চলে আসা এ জীবন;যারা সমকাল চিনতে পারে নি,দিন ও রাতের আপাত পার্থক্যে নৈর্ব্যক্তিক,অর্ধ-উন্মাদেরা জেনেছিল অগ্নি ও জলের বিভাজন?ঘোরতর নীলবর্ণে জন্ম ও মৃত্যুর পরবর্তী পরিচ্ছেদ?

বুধবার, ১৪ মে, ২০১৪

প্রলামনিমগ্ন স্বপ্ন ও স্ফটিক সময়ের জলভার

একসাথে নীল পাথরে হেঁটেছিলাম।শীতের জটিল কুয়াশায় শরীরের উষ্ণতা জলের তলাকার স্তরে নেমে কপালের অকালরেখা,ঠোঁটের কোণে আঁকা লুব্ধ আগুন ও চুম্বনের মধ্যে ডানা ঝাপটে বেড়িয়েছিল এক লক্ষ ফলাহারী বাদুড়।অথচ সেই বহুরুপে অবতীর্ণ রাত,সাঁকোবিহীন নদীর ভাঙা তীরে প্রেম এবং বিচ্ছেদের মাঝখানে পড়ে আছে সরল রৈখিক পথ;বটের পাতার দুধ আর পৌষের শিশির লেগে থাকা নদীর দু'তীর ছেঁপে জল ও স্রোতের কলস্বরে আমাদের বিস্ময়াবিষ্ট বিস্ময়গুলো মূর্ত হয়ে ওঠে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু আর বিসর্পিল রেখায়।শুকনো খড় জ্বলে।এই তীর থেকে ওই তীরের দূরত্বে ঘূর্ণিচরাচরের সমস্ত রাত স্মরণস্তম্ভের মতো নিঃস্মরণ ও আঁকর দিনগুলো নির্মাণ ও বিনির্মাণে শেষ হয়ে যায়।মধ্যরাতের নীলাভ মুখের প্রচ্ছদ ফেটে আণবী ছটায় বের হয়ে আসে নিহিত বোধের নিজস্বতা-স্পর্শমাত্র যতদূর চোখ যায়,ততদূরে শূন্য থেকে শূন্য উড়ে যায় প্রলামনিমগ্ন স্বপ্ন ও স্ফটিক সময়ের জলভার

বুকের বাদামী তিল

প্রিয় রমণীর বুকের বাদামী তিল ছুঁয়ে সমস্ত জীবিন সেই ঝর্ণাতলায়,মেঘহরিণীরুপে....।কিশোরবেলাকার রুপকথার মতো মুছে গেছে দিন,রাত।যখন কবির হাত থেকে ফেটে গিয়েছিল কলম ও কবিতার নীল খাতা অনিশ্চয়তায় নক্ষত্রের মধ্যে লীন হয়ে গেল।এক আকাশের সমান লেখার কথা বলে অসাড় আঙুলে পাখির পালক গুঁজে খুঁজে পেতে বালুচর,কাঁশবন এবং গোধূলি বেলার ধ্রুবজ্যোতি,বৃষ্টিগাছের শাখায় আনন্দিত ময়ূরের নাচ আর 'নির্জনতার সমস্ত অধিকার একমাত্র কবিদের জন্যে সংরক্ষিত রাখা হোক' শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত নীলাভ অন্ধকারের বাঁশবন লক্ষ জোনাক পোকার সম্মেলনে।স্ফটিক সময় হাতে,সহজ ভাষায় রৌদ্র ও আলোছায়ার খেলা,শব্দকুহকের সামনে পাথর ঠেলে ঠেলে ইরাবতীর ভবিষ্যৎগামী স্রোতে মৃত্যুর তারিখ ভেসে উঠছে।ওপারে,আত্মীয়বন্ধুর দল।হাতে ধরা ছিল নিমতলীর শ্মশান। সেইখানে থমকে দাঁড়িয়ে আছে বলয়িত সূর্য ও সৌরমন্ডল। খাঁড়িমোহনায় কাৎ হয়ে পড়ে থাকা একেলা নৌকায় জলবন্দী মাছেদের পুনর্বাসন,স্বভাবগত মুদ্রাদোষ ও মর্যাদাবোধে সোনারঙা শরীরের বিচ্ছুরণে উদভ্রান্ত কবি সমুদ্রের ভেতর প্রহরী সেজে ঢেউয়ের ফেনায় দু'হাত,---সমুদ্রের অতলান্ত তল খুঁড়ে বালি ও কাঁকর ছেঁকে সাদা শঙ্খ ও স্বপ্নের থেকে সুগত চোখের দৃষ্টিপোড়া সাহসে আরেকবার ছুটে এসে জ্বলন্ত বুকের স্তনশীর্ষে,শান্ত আদরের ছলে দৃষ্টিপোড়া.......।

মানববৃত্তের রেখা

মানববৃত্তের রেখা ছুঁয়ে অপরিসর গহ্বর এবং জীবাষ্মের অন্ধকার থেকে করপুট ছেঁকে তুলে নিয়েছিলাম যে জীবনের সারাৎসার;সুসজ্জিত বিকলাঙ্গদের শোভাযাত্রায় অনুপস্থিত রৌদ্রময়তার অনুষঙ্গরিক্ত বর্তমানে প্রবাহমানতার ভেতর প্রতিফলনের উপচারে গোধূলির সম্পূর্ণতা।উজ্জীবনের তামসী অস্বীকারে নিঃসংশয় অতীত ও অনাগতকাল অর্থাৎ ভবিষ্যতের রুপ ও রঙের ক্রমাবনতির ঢালে জলসিক্ত প্রান্তর ও বাসভূমি-সংবেদনশীল;যা স্পষ্টতঃ শেকড়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।অশান্ত সংসারের ওপর অনাবসান-সুগত চোখের জলে আয়তনহীন এই দশদিকে শাখা-প্রশাখায় রক্তফল,---স্বাদু এবং বেঁচে থাকার পরার্থপর অগ্নি।অর্ধন্মাদ,উলঙ্গ মানুষেদের মুখোমুখি লিখে রেখেছিঃঘাসের বিছানায় যারা শুয়েছিল,দেহতাপে পুড়ে গিয়েছিল ফুল আর অতৃপ্ত সঙ্গীকে ছুঁড়ে ফেলেছিল-তাদের সম্পর্কে ভাবিঃবজ্রকলঙ্কিত ও কাটারিদাগে সুখভোগ.....।

প্রশ্নাতীত সহানুভূতিশীলতায় আকন্ঠ নিমজ্জিত স্নায়ুউর্ধ্ব দৃশ্যকল্পে শর্তস্বাধীন,নিরতিশয় সমজ্ঞানে।একাগ্রতা ভুলে পরিত্যক্ত পথ;যা নির্জন-দৈনন্দিন ব্যবহারে দ্বিধা,বধির কুয়াশা এবং উঁচু অশোকের ডালে মনে আছে লেজ ঝোলা কিছু পাখি....