Powered By Blogger

শুক্রবার, ৩০ মে, ২০১৪

ধূপের মতোন উড়ে গেছে প্রতিশ্রুত প্রেম-২

১১. তোমার মুখের চিত্র ও রেখায় দিশেহারা ভাব,মাটির বিচ্ছেদ থেকে রক্তের বিষাদে শত শরতের বীর্য।কৃষ্ণ রেশমের মতোন ঝলসে ওঠা আনত দু'চোখে সামান্যই ছায়া।ভরা রৌদ্র ছুঁয়ে দিলে বাষ্পে বাষ্পে শরীর শীতল হয়ে যাবে।আমার ঔরসগন্ধ মুছে ফেলে তোমার শরীরজলে কার ছায়া পড়েছে?জঙ্ঘায় কোন পুরুষের সুখস্পর্শে বিভোর এখম?বরফ গলার মতো গলে গেছ,নদী হয়ে গেছ?তোমার সহজ জলে নৌকা ভাসায় নগ্নপুরুষ।উরুর সীমানা পার হয়ে যে পেয়েছে সবুজ ঘাসের স্পর্শ---কাকে তুমি প্রতারণা করেছ,রমণী?স্বামী,প্রেমিক,নিজেকে?ইন্দ্রগোপ কীটের দংশনে ফুলে ওঠা ঠোঁটে লোম গজিয়েছে। তা-কি দর্শনীয়?তা-কি গ্রহণীয়?দু'হাতে জ্বলন্ত ভস্ম মেখে জ্বালিয়ে দিয়েছ সাজানো সংসার,ঘর।নিয়মের রীতি পার হয়ে কতদূর যাবে? নান্দীমুখর পানশালায় পানপাত্র,বোতল উড়ছে শূন্যে।অন্ধকারে পালটে যাচ্ছে রতিসঙ্গী।মিলনের কালে মনে পড়ে প্রথম শিহরণের অনুভূতি,রকনিষ্ট প্রেম?সূর্যোদয় থেকে সায়াহ্ন অবধি পৃথিবীর একাগ্র আলোয় পথ খুঁজে ফিরে এসেছিল যে সুন্দর হাঁস---তার জঙয়ে দৃশ্যদ্বতী নদী এখনো প্রস্তুত। শীত ও গ্রীষ্মের মাঝখানে খাঁড়ি মোহনার উৎসে যে রক্তবিন্দুর মতোন পোকা নিষ্পাপ ভ্রমরনীল চোখে সাজিয়েছিল স্বয়ংবর সভা---অভিশাপগ্রস্ত আরুঢ় বাতাসে মৃত্যু ঘটেছিল প্রথম শ্যামাপোকার।এখন সমস্ত সানুদেশ জুড়ে অধঃপাতের কুয়াশা,আধোশ্বেত দৃষ্টিতে নির্লজ্জ হাসি,ঐশীবাণীর মতোন অন্য পুরুষের স্তবে সাজিয়েছ অবমাননার ধর্মগ্রন্থ। ১২. নূতন ভাষা ও স্বর শিখে নিয়েছো?অভিযোজন,অভিগমণের পথে এতো আগ্রহ?তোমার করপুট থেকে ঝরে পড়ে প্রেম,ধর্ম,সঙ্গীত,বিকেল?অপর্যাপ্ত সাংসারিক জলে এতো বিভাজন?সহজ রান্নার গন্ধ ভাসছে।শীত ও স্মৃতি এমন ঘুমকাতর?জেগে ওঠার সময়ে আমাদের ছেঁড়াখোঁড়া পালে লজ্জারুপ আলো এসে পড়ে---ঐ আলোর শেষে রক্তমাখা নখে উঁচু শিমুলের ডালে বসে আছে শকুন।অশ্রুত স্বরে মৃত নাবিক ও প্রেত,স্বপ্ন বিসর্জন এবং ভাসানের গানে ভরে ওঠে নদীর দু'পার।একদিন নগ্নতার সুর বেজে উঠেছিল বুকে,আদি প্রাণ জল থেকে,---সেই সুর স্রোতের সাথেই ভেসে গেছে।এখনও বুকে উঠে আসে বাষ্পভার। ক্ষরণের দিনে এই যে উত্থান,পতনের ধারা....শুক্ল মহিমার রাতে মনে পড়ে অন্ধকার,পাথর যুগের ব্রুণচিহ্নে সারাৎসার উড়ে যায় ধর্মজিজ্ঞাসা,গরীবজন্ম,সাহিত্য সাময়িকীর পাতা।গোচরীভূত শব্দ ও বোধে চোখ ঢেকে রেখেছো?অক্ষরগুলো তার দীর্ঘ নখে সম্পন্ন শব্দের ছাপ ফেলে যায়।সেই সুমন্ত পথের প্রান্ত তোমার অজানা ছিল?অতিকায় ঘোর ভেঙে নিঃশ্বাস ফেরাবে পৃথিবীর দিকে?আজ পথে যত সীসা ও গন্ধক, মেদমজ্জাহাড়, হৃদয়ের অন্তঃক্ষরণ,মরঙহাতী নেশা,---চরাচর ডুবে আছে বিশালাক্ষী অন্ধকারে।জলমন্ডলের ছায়ায় বিষাদ।বৃষ্টিহীন সমস্ত প্রান্তর ঢেকে আছে চাপ চাপ রক্তে,ভেদবমন,রজঃশলার।স্মৃত ও অস্মৃতে এই বুক ভরে আছে মেঘে,পাথর ভেঙেছি শুধুই তোমার কথা ভেবে ভেবে।তোমার ঠোঁটের কোণ থেকে অধিদেবতার যে স্তব বেরিয়ে আসে-অধর্ম ও শঙ্খের ফুৎকারমতো তার ধ্বনি অন্ধকার থেকে অন্ধকারে গড়িয়ে পড়ছে অই বর্তুল গহবরে।চিরজাগরুক চেতনায় বিষণ্ণ প্রতিভাকণা ছিঁড়ে ফেলে ক্রমাগত বাঁশের বাঁশির সুর,কবিতার আহ্লাদ ও আতিশয্যে,অশ্রু ও অক্ষরে ঢেকে আছে আমার শরীর।কবিতার শ্রম-বিনোদনে যে মগ্ন প্রাচীর আজ বাঁধা-সমূহ সর্বনাশের আগে ভেঙে পড়ে অশ্রুজলের আঘাতে। স্রোতঃপ্লাবী রমণী,শেফালীগুচ্ছে গন্ধ শুঁকে দেখঃনিরাকার প্রেমে বেদনার রাত মোহ নিয়ে আসে প্রেতসন্ধ্যার উচ্ছ্বাসে। ১৩. এ-শরীর জলপোড়া এই করোটি অনুশোচক জলপোড়া প্রকৃত শরীর প্রকৃতিবিহীন।অনুশোচক করোটি ভরে আছে অতীত,আসক্তি ও কীর্তিগাঁথায়।আলোছায়াময় টানারাত ও দিনের বিভাজনে,বনগত বনানী বিভায়,নির্জন খাঁড়ির মুখে অপব্যয়ী জীবন বিহ্বলভাবে জেগে উঠছে।সমাধি মন্দিরের প্রশস্ত চত্বরেম শতাব্দীর মৃত শোভাযাত্রা,যুগ্ম পাথর ও শ্যাওলার আস্তরণ পার হয়ে প্রেতিনীর দাঁতে কামড়ে ধরেছ এ মরজগৎ।দ্রব,--লবণ ও হলুদের মিশ্রণে ফুটছে জল।হরিণমাংস ঝুলছে,ডালে।ধোয়ঁআর নিভৃত রেখা ও আশ্লেষে তীর্থ ও বাগানে পোড়ামুখ দানবের চক্ষুষ্মান বাচালতায় সাজিয়ে নাও নিজেকে।উৎসবে,ঝাড়লন্ঠনের নাচে তোমার শরীর ঘিরে অন্ধকার শুধু জ্বলজ্বল করছে তোমার আঙুলের আঙটিগুলোর পাথর। পায়ের পাতায় অসুখ।কোথায় নাচ?উৎসবের পানীয়?সমস্ত রাত জেগে আছি।জানি,পূর্ব নির্ধারীত নিয়তি তোমাকে ভাসিয়েছে আবর্তিত ক্রোধ এবং শোণিত প্লাবনে।অস্বচ্ছ বিম্বের এই পরাভব বুকে তুমি ছুঁয়ে গেছ আতপ্ত হৃদয় ও নিবিড় ধ্যানে মাঝরাতের মানুষহীন পথে।শষ্পমুলের অবৈধ আদরের মর্মর তোমাকে ঘিরে রেখেছে।জীবনটাকে বোঝো;আজ যা জীবিত তাকে স্পর্শ করি না কারণ জীবিতেরা স্পর্শ বোঝে।পৃথিবীর প্রতিচ্ছায়া থেকে বৈধাবৈধ্যের অজস্র শরীরের প্রেমে দ্বিধা এসেছে কখনো।ভিনদেশী পথিক শরীর থেকে খুলে নেয় শেষ আচ্ছাদন আর দুই পায়ে দুঃখের ধারালো কাটা বিঁধে থাকে। পথে পতিত যে ফল হাতে নিয়েছ;উপচেপড়া পূর্ণটান জলস্রোতে ধারাময় যা-কিছু কলংক---শ্বাসকষ্টময় ফুসফুসে ভরে নেবে?প্রেত পায়ে বেড়ে ওঠে পৃথিবী তোমার।ঘুমের ভেতর জেগে ওঠে ঘরের বিষাদ ভুলে গেছ,ভুলে গেছ প্রিয় নাম?আমার বুকের মধ্যে দেখেছ অপর পুরুষের ছায়া?ভুল পায়ে উঠে এসে জলজ ভাষায় মাথা নিচু করে বলঃপাখিওড়া ছায়াতেই সমূহ স্বপ্নগুলোর শেষ পরিণতি।ছন্দপতনের বৃষ্টিহীন দিনগুলো একা পড়ে ছিল আর শীতার্ত প্রহর থেকে আমার মেরুদন্ডের শাঁস তুলে পৃথিবীময় ছড়িয়ে দিয়ে কি করে ভুলেছঃআষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টির বিন্দু কপালে মাখিয়ে নীল শাড়ীর আঁঅচল ভরেছিলে প্রফুল্ল কদমফুলে। আমাদের নৈঃশব্দের নিঃসীমতায় ঝাঁকড়াগাছ,পাথরকুঁচি সময়ে বিচ্ছেদের অপার বিস্তার।কামরাঙা বনের সবু জালে লক্ষ কীটপতঙ্গ পড়েছে।হাহাকার,শূন্যে ও বীভৎসতায় সেগুলোর রক্ত ঝরে পড়ে।নাও,গ্লাস ভরে পান করো রক্ত,মদ,বুকের আগুন।বীজ ও পোকায় ঢাকা আমার অনন্ত করোটিতে খর শীত,সব ঝর্ণা জমে আছে।স্থিরতর জলে ইতঃস্তত কিছু স্মৃতি ডানাভাঙা হাঁসের মতোন পড়ে থাকে শুধু। ১৪. অসাড় দিনেরা ঘিরে আছে মুহূর্তের সব ভুল।চমৎকার সব ছবি ছিল চোখের পাতায়।পূর্ণটান জোয়ারে বসন্ত,উড়োচুল,---বাতাসবিহীন অন্ধ ঘরে অবশ শরীর ছুঁয়ে আছে এক জীবনের পরাভব।বাতিল খোলস ফেলে ক্ষতহীন মুখে শীত সকালের সজীবতায় উপচে ওঠা ঘনায়মান নিঃশ্বাসে পুড়ে যায় আতপ্ত হৃদয়।অসামঞ্জস্য পরিণতির মণিকর্ণিকার আভা ও চতুর্দশীর অন্ধকারে বিচূর্ণিত পাঁজরের ভেতর শুশুক সাঁতরায় আর কপালে ছিটকে এসে লাগে জলের তিলক।এপিটাফহীন জীবনের প্রার্থনাও ছিল অপরাধময় ইউক্যালিপটাসের বনের গন্ধের দিকে।বুকের ভেতর দাহ,অগ্নি ও জলের সে-দাহনে জেগে ওঠে পশুআত্মা,আদিপ্রাণ,---মৃতের স্ফটিকমাংস মুখে উৎপ্রেক্ষা ও উপমায় মাতামুহুরির চর ও সিংড়ার বনে পাখিওড়া ছায়ায় নিজেকে দেখিঃপৌনঃপুনিক বিচ্ছেদে শতচ্ছিন্ন শরীরের ধড়ে শ্যাওলা,ছত্রাক,বীজানুর অধিকৃত কলোনী,ঝিঁঝির ডাক.... শুকনো চরায় যুক্ত ডানার পাখিরা ওড়ে।ভাগচাষী,চর-দখলকারী নায়েব-গোমস্তার মাথার ওপর নিরামিষাশী পূর্ণিমাচাঁদ জ্বলে।অনুপম রুপক ও চিত্রকল্পে ভরে ওঠে আমার মস্তিষ্ক।অভিজ্ঞানলব্ধ,মুক্তকছন্দে লিখিত কবিতারা অক্ষরের ক্রম ও সম্পন্ন শব্দে চরাচরে জন্ম দেয় এক নূতন বোধের।আমি পায়ে পায়ে ঘরে ফিরি অসময়ের বৃষ্টির ছাঁট গায়ে মেখে।চোখে ব্যথা নেই,কোটরে খড়ের স্তুপ।ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন মুখে ত্রেতা যুগের ভাবানুষঙ্গে এবং তৈরী হতে থাকি আগামীর অর্ধেক জীবনে;যা কাঁটায় ক্ষত-বিক্ষ,অঝোর রক্তপাতে মতিচ্ছন্ন ফুটে আছে।শ্বাসনালী ছিঁড়ে উঠে আসা শ্বাপদসুন্দর শ্যামলতা ও স্মৃতির মৃত ডানাগুলো রক্তিম মুহূর্তে আলো জ্বালে।শরীরের প্রতিকোষে বোধবুদ্ধিহীন জেগে থাকা জলটুকুছাড়া আর কি-ই বা পাথেয় আছে?শান্ত প্রবাহদুয়ারে সিংহরাশির প্রচ্ছায়া,জ্যোতিষির সম্ভাবনাময় মুখের আশ্বাসবাণী এবং আকাশের মুখোমুখি নির্মিত বিশাল চন্দ্রাতপে সূর্য ডুবে গেছে।একে একে নক্ষত্র ফুটছে--তার ছায়ায় উঠোন ভরে আছে আর একে একে জেগে উঠছে ্নামফলকহীন পিতৃ-পুরুষের কবর---তাদের ক্ষতে,ভস্মের ভেতরে জমে আছে অনিশ্চিত সময়ের ধারা,তাম্রলিপি,গুহাবাসের বিস্মৃতি। দ্বি-চারিণী নারী দ্বি-প্রহর মুখে সমকালীন বটের ঝুরি কিংবা বস্তু-ব্যাপক মাটিতে স্বচ্ছতাবিহীন পদচ্ছাপে এগিয়ে চলেছে নষ্টনিধি আবাসিকে,নৈশভোজের উৎসবে।তুমি তো আমিষভোজী।রাত দুপুরের উপুড়করা প্রদীপে সভ্যতার মাংসখন্ড মুখে শরীর চাটছে উপজাতীয় যুবক।প্রতিপদী চাঁদ ঝরছে আকাশ থেকে। ১৫. ধ্বনিবহুল জীবন আর সঙ্গীতময় শোবার ঘরে সরীসৃপ---স্বতই যা উঠে আসে প্রেম,বিরহ ও লজ্জাহীন শোকতাপ অথচ আমার রক্তলেপা হাড়,হাড়ের ভেতর ভাঙা সেতু,---তাকে পারাপার করে অবিশ্বাস,জ্ঞাত জগতের ব্যতিক্রম।পূবের সমুদ্রপথে অন্ধ কুয়াশা প্রদেশ।ফিরে আসার সময়ে ধীবরের জালে ধৃত নীলশরীরে যৌনের দাগ।ধীবর হাসছে---সুষম ও পরীক্ষামূলকভাবে প্রাকৃত ভাষার ছবি শানানো।মশল্লা প্রস্তুত।প্রশ্নোত্তরের পর্বে ঝগড়াটে কাদাখোঁচা পাখিগুলো পাতার আড়ালে জৈবফুলে নিঃশ্বাস ছাড়ছে।এই ফুল যৌগিক অথচ এর ফলগুলো সরলীকৃত বিন্যাসে ভারানত।মেরুদন্ড ঘিরে ভ্রষ্ট উপদ্রবে একাকী সমুদ্র পাড়ে হাঁটি।পূবে বা পশ্চিমে নয় দক্ষিণের জগতে তৃতীয় এক অসম্ভব পৃথিবী জ্বলছে।দুই হাতে কলংকরেখার উচ্ছলতা নিয়ে অজ্ঞানতাকেই ধর্ম বলে মনে মেনেছ,মহান সত্যে রাবার ঘষেছ যদি পাল্টে যায় প্রিয় নাম,প্রিয় মুখের প্রচ্ছদ?সকালের পরিশ্রুত রোদ গায়ে মেখে অগম্যগমণে নদীপথ পার হয়ে এই বালিয়াড়িতে নেমেছ?এইমাত্র সূর্য ঢেকে গেল।পটভূমিকায় কালো ডানার মেঘের ওড়াউড়ি।আমার চোখের জলে নীল হয়ে যায় অফলা পৃথিবী আর শরীরের কানায় কানায় জেগে ওঠে পানাবৃত্ত,মৃত্যুর ঝলক।দুইহাতে কলঙ্করেখা অথচ পাথরে পাথর ঘষে জ্বেলে নাও প্রতিদিনের পূনর্বাসন।চারপাশে মৃত্যুর স্তব্ধতা এবং কোলাহলে বিশীর্ণ আঙুল শূন্যে উঠে যায় প্রার্থনার প্রার্থিত প্রহরে আর সন দান,ধ্যান,তপস্যা ও সিদ্ধি নষ্ট হয়ে যায়।তোমার পায়ের তলে গুড়ো হয়ে ঝরে পড়ে বরফ কুচির মতো।পাপ থেকে পাপের স্খলনে সমস্ত শরীর জ্বলে ওঠে।পরাহত জীবনের পাঠ,অসম্পূর্ণতা ও পাপ- থেকে যে গোপন রক্ত শরীরে বইছে---তার সবটুকুই নিষ্ফলা,বীজিহীন।লজ্জা লুকোতে যে কবর খুঁড়েছিলাম তুমি সোৎসাহে সেখানে জল ঢেলেছিলে অন্যপথে,নিভৃত রেখায়।ভয়াবহ প্রশ্ন ও বিচারে রক্তাপ্লতা নিয়ে আসে প্রসূতির রক্তমাখা রাত এবং নবজন্মের মতোন পাপজলে ভরা পৃথিবীকে মুক্ত করে নাও তোমার আশ্লেষ থেকে। ১৬. সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কবিতার বইয়ের পাতা উলটে বন বিভাগের নির্জন বাঙলোয় জামাখোলা,কাঁচুলিবিমুক্ত স্তনে মুখ রাখে কামোন্মত পুরুষ;শরীর সর্বস্বের এই খেলায় রমণী তোমার জারিত যৌনরস ঘামের ফোটার মতো উরুসন্ধি,জঙ্ঘা বেয়ে পায়ের পাতায় এসে থেমে থাকে।থেমে থাকে সভ্যতা,দ্বিধার টান এবং বিসর্জনের বাজনা।বাজনাদারেরা একে একে অন্ধকারে ডুবে যায়।জৈবজটিলতাহীন দুইচোখে অসুন্দরের বর্ণমালায় উড়াল পথের ছবি এঁকে দেয় প্রতিশিল্পী।একেকটা দিন এভাবে হারিয়ে যায় অন্ধকারের গহবরে আর আমার নিঃশব্দ মুখের প্রচ্ছদে জমে ওঠে তিনপুরু ধূলোস্তর।অইদিকে বাঙলোর পেছনে উপাসনাভেঙে ডেকে ওঠে প্রিয় কাক।স্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনিতে বনের নির্জনতা খান খান হয়ে ফেটে পড়ে। আমি কতোবার করজোড়ে বলেছিঃতোমার কলঙ্কের কিছু ভাগ দাও।শোন নি প্রার্থনা।শুধু চাঁপাকলির আঙুলে বেড়ে গেছে আঙটির অজন এবং সংখ্যা।আড়ালে আগুন,করতলে ছাই মেখে ঘরে যেতে ইচ্ছে নেই।গলিত শরীর নীরবতা মেনে জেনে গেছে তার শেষ পরিণতি।দ্রবীভূত সময়ের আলো এসে পড়ে প্রকট চোয়ালে।ক্লান্তিহীন অনন্ত অভ্যাসে বুকের পাপড়ি মেলে অবৈধ সমর্পণের মত্ত রাতে যা কিছু পার্থিব,নৈসর্গিক এবং দুঃস্বপ্নতাড়িত---এতোগুলো ক্লান্ত ভোর মুছে ফেলে আদরের কলঙ্কিনী রেখা। কুয়াশায়,সূর্যের বেলায়,অপরিমিতের ঋণে আমি কেঁপে উঠি জলের কাঁপন ও অস্থিরতায়।কুর্চিফুলে ঘেরা বাঙলো।এবারই প্রথম ফুটেছে কিন্তু অকল্পিত মুক্তিতে অগণ্য কীটপতঙ্গের দৃষ্টিপোড়া;গুঞ্জরণে যারা উড়িয়েছে স্বপ্নের উদ্ধত পাল।জল ও স্রোতের মাঝামাঝি ক্ষেত্রজ নৌকার সারি।গন্তব্যে স্থির ও সাবলীল যাত্রা।অনিশ্চিতের গন্তব্যে রুমি কোথায় চলেছ?অসম দাহের বুকে কোন কিস্মৃতি ও সহসা লুপ্তির ঘাটে অনন্ত যাত্রার শেষে?প্রতিটি তন্দ্রার ঘোর থেকে উঠে আসে শ্বেত-সূর্যরাত্রি।তারপর অপেক্ষার পর অপেক্ষার প্রহরে দু'হাতে পুঁথি ও রান্নার জলে পূরোনো সে ঘ্রাণ।মাথার ওপর সূর্য জ্বলছে।সূর্যের ভস্ম,ছাই এসে চোখে লাগে। ১৭. রক্তের ভেতর বান---নৈতিকতাবর্জিত ও স্খলনের।পাপ ও দুঃখনদীর ঘাটে এসে লাগে চির হরিৎ ক্ষিধের নৌকা।পরমান্ন কই।ষষ্ঠীতলা,ভাঙা দেয়ালের পাশে সাপের খোলস পাল্টানোর গান।এই গানে ঘর ছাড়ে মেঠো ইঁদুর,ব্যাঙ।আমার বিশীর্ণ শরীরের চামড়া ছেঁড়ার শব্দে ভুলভাবে ফুটে ওঠে ফুল আর ক্ষুব্ধ জল ঠেলে নির্বিকার হাতে তুলে নাও কর্কট মাংসের খন্ড।বিভ্রান্তি ও ভুল থেকে যে সৌন্দর্য্য---সানুদেশ পার হয়ে যাদুঘর,নিলামবাজারে সংগৃহীত স্তুপের মতোন পড়ে থাকে।উচ্ছিষ্টের ভাগ চাই নি কখনো উৎসব-বাড়ির কুকুরের মতো।কাশের জঙ্গলে,প্রতিমা,তক্ষণশিল্পে এবং উৎকেন্দ্রিক কবিতায় একদিন নিরুপায় ডেকে গেছি অতৃপ্ত প্রেমিক।পাহাড়,নীলগিরির অল্প গন্ধের ম্যাগনোলিয়া;সহজতা যার প্রশ্নাতীত--টুকরো টুকরো হয়ে ঝরে পড়ে বিদায়বেলার গানে।মায়ান ও পিরামিড সভ্যতারও পূর্বকাল থেকে ঠিক এইভাবে হাহাকারের দারুণ চিতা অনিমেষ জ্বলে জ্বলে উন্মীলিতা রাতগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে আর প্রিয় রমণীরা অন্ধকারের ওপারে চলে যাচ্ছে।অধিদেবতার জলভারে ছিন্ন,প্রবল ও নত হয়ে।জলের ওপরকার স্তর ভেঙে তার প্রতিটী রহস্য এই গ্রীষ্মাবকাশে অবচেতন মন ও মননে গেঁথে যা যা চেয়েছিল,---রক্ত,মদ,নগ্ন যৌনতা,অগ্নির সর্বস্বতা নিমেষের লবণজলের স্রোতে ভেসে যায়।অস্বচ্ছ বিম্বের মুখ ফসিলের ফুল হয়ে ফুটে থাকে পান্ডুরেখাজলে।মাটিছোঁয়া দিগন্তের প্রতিমুহূর্তেই মৃতসহযাত্রীদের অনুগমনের পথ বন্ধ করে স্ব-প্রণোদিত বর্ষাফলক হানে জর্জর বুকের পাঁজরের হাড়ে।সাজানো অক্ষরগুলো হাতে নিয়ে বুকে শ্মশানের পোড়া ছাই,ভস্মকণা মেখে শ্মশানতলায় জীবনের পাঠ নিতে নিতে দেখিঃপ্রেতিনির যোনী ঢেকে আছে সমস্ত প্রান্তর,পিণ্ড ও তর্পণে মেতে আছে প্রেতদল।সমবেত পাঠ ও প্রতিপাঠের কালে রমণীর চোখের স্মৃতিতে জমে ওঠে অন্য ব্যভিচার,অন্যরকম প্রেমের চোরাস্রোত।মুখগুলো দেখা যায় না-প্রতিবিন্দুর মর্মজল ঘিরে নাশকতার রক্তিম আভা।কতগুলো,দিন,কতগুলো ক্লান্তিহীন রাত লোভীর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।এ-কি আত্মঘাত নয়?এ-কি ধ্বনহসের দেয়াল গাঁথা জীবনের প্রতিচ্ছবি নয়? ভীড় করে আসে অমূলক প্রশ্নদল। গুহাচিত্র,ভাস্কর্য ও জল ধরে আছে গতিমালা অথচ নিঃশব্দ জীবনেরে খরতার স্বাদে তেতো হয়ে ওঠে অন্তরাত্মা।কাকদুপুরের প্রহরে আকাশ ভরে যায় এমন অন্তঃক্ষরণ---বিপরীত জলে জেগে ওঠে সাজানো সংসার,ঐকান্তিক প্রেম।ডুবে যায় বাড়িঘেরা প্রসন্ন উঠোন,সুখময় সুখের ধমনী।ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল দামভর্তি ব্যবহৃত পুকুরের জটিল শিয়রে?হেলেপড়া তালগাছের ছায়ায় সূর্যাস্তের গোধূলি দেখার?অবশিষ্টে পড়ে থাক উপক্রমনিকা।বৃষতিমুখর দিনের চলচ্ছবি ভেঙে যে ক্ষেত্রজ নৌকা এগিয়ে চলছে অল্প কিছু সময়ের ব্যবধানে সেটা ইতিহাস হয়ে যাবে।তারপর ঢেউ।শুধু ঢেউ। আজ আমার বুকের মধ্যে না ঘৃণা,না ভালোবাসা! ১৮. একেকটা স্তব্ধ মুহূর্তে মুখ ও মুখোশের শ্বাসে আমাদের মুখোমুখি ব্যঞ্জম ও স্বরধ্বনিগুলো ভূতগ্রস্ত ভেবে দূরে সরে যায়-জৈবজটিল তোমার দুই চোখে জেগে উঠুক বুকের খুবলেনেয়া আলো।সে আলোরধারা শব্দ নির্মাণ ও বিনির্মাণে রক্তঘটে এঁকে দেয় সিঁদুরে আল্পনা।নতমুখ বিকেলের এই আধা-প্রেম,আধা-ভালোবাসা পড়ন্ত গোধূলি বেলায় ঢেকে যায়,ঢেকে যায় তুলসীমঞ্চ,মন্দির,বটগাছ। বুকজুড়ে ছিল পারিজাত প্রেম,শুদ্ধতর ভালোবাসা কিন্তু অপ্রেম ও কালিমায় ঢাকা তোমার চোখের মণিকর্ণিকায় ঘোর সূর্যাস্ত কেবল কৃষ্ণাদ্বাদশীর চাঁদ জ্বলে। সমুদ্র তীরের ঝাউবনে সশস্ত্র সন্তাস,মাছেদের শব দূরে রেখে আমরা নেমেছিলাম সমুদ্রের জলে।অন্ধকারের জ্যোৎস্নায় নতজানু সৈকতে প্রেতের নৃত্য,ভূত-উৎসবে চুবড়ি গন্ধ। ১৯. একাকীত্ব কিংবা ধ্রুপদী গানে মৌনমুখ বিকেলের নদীর কিনার আর শ্মশানভূমির পাশের ঔষধি ক্ষেত ভরে ওঠে।আমি ভূগোলের জরাজটিল প্রান্তর থেকে মূঢ় মানবজন্মের স্মরণাতীত উজানসিন্ধু পার হয়ে বধির ও অন্ধদের পেছনে পেছনে হেঁটে গেছি গঙ্গা অববাহিকায়,নীল নদের উৎসের জলে।শালপ্রাংশু মাঝরাতে কুয়াশায় ঢাকা যক্ষধন হাতে চুপি চুপি ফিরে এসেছিলে অনায়াস,অন্যমনে?তোমার সে বিকৃত মুখের ফুলে এক মৃত্যু থেকে আরেক মৃত্যুর পথে দলবৃত্তে অন্ধ ছিল। সমুদ্রের তলদেশ খুঁড়ে কোনো শঙ্খ আমরা পাই নি। ২০. দৃশ্যমান বাস্তবতার নিরিখে বহুরাত্রি পূর্বের উৎসবে আরো অন্যসব পুরুষেরা এইসব ঐশ্বর্য,সংসারসমুদ্রের কূটজ্ঞান এবং ক্ষুধার সমূহরুপে তোমার সুডৌল স্তনে সেঁটে দিয়েছিল যৌনতার ইস্তাহার।দ্রুতলিখন অক্ষরে উড়ে আসা শীতের প্রথম হাঁস;যার ডানায় রক্তের ছোপ,দূরাগত দুপুরের প্রান্তদেশ এবং বুকজুড়ে অনেক নখরাঘাত যেন আদ্যিকালের মেঘের ভার।সেই থেকে আমি আর ছুঁয়েও দেখিনি শীত সকালের সাদা হাঁস।বনের অর্ধেক কাটা গাছে প্রতিহত রক্তছাপ মেখে আমিও কাঠুরেদের মতো প্রতিশ্রুতিবদ্ধঃবন্য ও আরণ্যসম্পদের প্রতি চিরদিন উদাসীন। অনুশাসিত অতীতে আশা-আকাঙ্খার বিমূর্ত প্রতিকৃতিতে দেখেছি তোমার অধৈর্য্যের উরু আর স্বপ্নাহত কৃশপায়ে চঞ্চল হরিণ গতি;ঘোর কুয়াশায় ছুঁতে গিয়ে দুই হাতে আগুন ছুঁয়েছি;যে ঘাটশীলায় বসে ছবি এঁকেছিলে---তার কিছু চিহ্ন,দুই এক বিন্দু অস্বচ্ছ রঙ পড়ে আছে শুধু। উত্তরদক্ষিণে বিস্তৃত পৃথিবী এবং এর মহাজাগতিক ত্বকে,বাঁধ ভাঙা জলে যে ঘরহারা মানুষেরা আতশবাজির শোভাযাত্রায় মেতেছ আর হতভাগ্য রমণীরা তাদের আঁচলে স্নেহরব বুলিয়ে দিয়েছে।ঘামে জর্জর মুখগুলোতে শুধু তোমার ত্র্যহস্পর্শের জলে ভাসে মসলিন স্বপ্নের ভাষা ও শেষ রাতের প্রহরে বলা স্রব্ধ কথামালা। আমার বুকের স্ট্রেচারবাহিত রক্তস্রোতে সেই একই নক্ষত্র,দূর আকাশের কিছুদূরে ভেসে আছে চাঁদ।শোনা যায় অপঘাতের কল্লোল,ব্যাথাতুর আত্মার ভেতর লক্ষ হীরামুখী সুঁইয়ের আর্তনাদ--তার ভেতর নিমগ্ন স্বপ্ন,স্বপ্নের ভেতরে প্রতিপদী স্বপ্নে পদ্মপাতায় টপকে যায়। সশব্দ ও আশংকায় ভাসমান কচুরিপানায় উদয়াস্ত পোকামাকড়ের বসতি অথচ লাফের আহ্লাদ আর চোরা ঘূর্ণিটানে পর্যুদস্ত অন্ধকারের ভেতর ডেকে বলছঃএ পথে নয়,অই পথে....।

শুক্রবার, ২৩ মে, ২০১৪

ধূপের মতোন উড়ে গেছে প্রতিশ্রুত প্রেম

ধূপের মতোন উড়ে গেছে প্রতিশ্রুত প্রেম।জলের স্বভাবে তরলবসনা নারী আমরা সকলে ডুবে আছি হাঁটু,কোমর ও বুকজলে।(মানুষের স্মৃতিও তরল।নিয়ত পরিবর্তনশীল।)সভ্যতা বানিয়েছিল যারা;আমাদের সেই পূর্বপুরুষেরান উদাসীন অক্ষমালা ঘিরে শূন্য প্রতিভার বিকিরণ ও প্রতিফলনে আলোর আরেকপাশে অধিকারহীন মর্যাদা অথবা কলংকরেখার ধারার নিবদ্ধে বেঁধেছিল জীবন।ভূ-প্রদক্ষিন,মরুযাত্রা,বেলাঞ্চলে রৌদ্রময় আভা,চারিদিকে ভাপ।অঘোর চৈতন্যেদয়ে একাকীত্ব,অপেক্ষা ও অন্ধত্বের গানে অনির্দেশিত সংকেত এবং কূটিল স্বার্থের গ্রন্থি---বৈপরীত্যে ভূমি বিভাজন,নদীর নাব্যতা কিন্তু তার চেয়েও দূরহ মানবীর প্রেম ও প্রেমের ফলিত জ্যোতিষরুপ।যে ভৌতবিদ্যায় আঙুরের রসের জারণ,সূর্য্যমুখী ফুল থেকে ভোজ্যতেল এবং সোঁদা মাটির গহ্বর থেকে যব গাছের উৎপত্তি ---তার রহস্য উদঘাটন এবং দূরান্বয়ী নক্ষত্রের আলো প্রকৃতির অন্তর্গত শৃঙ্খলিত স্থিতি ও অস্থিতিসহ সমুদ্র বিধৌত এ-উপত্যকায় মানুষের কোলাহল, শোভাযাত্রা,দূরারোগ্য ব্যাধির হাসপাতালে স্ত্রীলোকের রক্তক্ষরণের উৎসবে পাথর,শিবলিঙ্গ বেয়ে নামছে পানীয় জল।নর্দমার জলে হাঁস,পাশে পড়ে থাকে দুপুরের খোঁড়া রোদ।সমস্ত পাহাড় ভেঙে আসক্তি অতীত ফেলে এতদূর চলে এসেছি যে---ফিরে যাওয়া?সে প্রায় অসম্ভব।গোধূলিবেলার দিকে অনায়াস চলে যাওয়া যুবক,লঘু স্মৃতি,---প্রাণ টলে যায় জীবন্মৃতের মতোন।লাটবাগানের অন্ধকারে বৈধাবৈধের অজস্র চুম্বনের মতো মুক্ত নাভিতটে শ্বাপদের থাবা।পতনোন্মুখ মানবী,পতনের খোলা বুকে কালোরাত নেমে আসে।শরীর ফেরেও যদি,কৃকলাশ চাহনীতে বরফ।আকাশ ভরে যায় ভস্মে।কালো বাতাসের উত্থানে জর্জর বুক।ধর্মত যা দেখা অপরাধ--দেখেছিল এই দুই চোখ অন্ধ হওয়ার আগে।ধারাময় সরীসৃপ তাপদাহে জ্বলছে হৃদয়।মানবী,বোঝ নি চলমান স্রোতে জলের অক্ষরে লেখা কবিতা ও প্রেমগাঁথা। যদি এইখানে এর শেষ হত,যদি আবার নূতনভাবে অগ্নিময় শোক ও অশ্রুতে লিখে যাই কবিতা,গানের সন্ততির পাশে গলিত হাতের মুঠো খড়কুটো ভরে উঠে আসা---বালুচরে পড়ে আছে ডানাভাঙা হাঁস,ঠোঁটের আদূল কোণে রক্তমাখা কষ....এর কোন শেষ নেই। ২. ছন্দ শাসিত কবিতা এবং ভাষার ভেতর অনেকান্ত জ্জবনের ত্রাণহীন নীরন্ধ্র কালিমা,প্রেতের দাঁতের ফাকে মরজগতের টুকরো,সাংখ্যের ভেদে প্রকৃতি।পিতৃভূমির অই প্রান্তে শব্দগুলো মুছে আসে।নদীতীরে এসে লাগে ছইহারা নৌকা।ঝাঁকড়া অশ্বথগাছ।শেকড়বাকড়ের নিঃশ্বাসে উঠে আসে অর্বুদ কালের গান।অথচ এ-কথা ঢালু পাড় ভেঙে নেমে আসার সময়ে ছদ্মের সংসারে কানাগলি,মাকড়সা জাল---কেঁপে ওঠে অবৈধতা।সঞ্চারিত ভ্রূণে শকুনের ডানা।অক্ষয় জীবন ফেলে চেয়েছিলাম মুদ্রিত হতে কিন্তু সুমন্দ্রিত বুক জুড়ে কালো বাতাসের উত্থান।ঈশাণ কোণে মেঘ।আমার সঞ্চয় শূন্য।উত্তরাধিকারী আমার সন্তান-সে ও ভেসে গেছে।ইচ্ছে ছিল-বাঁচাতে পারি নি।সেই পাপে গোটা শহর কবিতা এবং শিশুহীন।যা আঁকড়ে বেঁচে আছি;আজ কিংবা আগামীকাল দুর্মর মৃত্যু,মায়াজাল,হোমের আগুন,সামমন্ত্রে ছাড়িয়ে গিয়েছি আলোর আসর।দুই চোখ ডুবে আছে অন্ধকারে।তোমাকে ছুঁয়েছে?ধোঁয়া ও আগুন থেকে হাত তুলেছি---মানস সরোবর থেকে অই দেখ পাখিরা আসছে।অর্ধেক হৃদয় খুলে স্বরব্যঞ্জনে ভাসিয়ে দিয়েছি।নেয় নি জল।অরুন্তুদ চিৎকারে চিৎকারে দশদিক বিদীর্ণ করেছি।শোন নি সে ডাক।জলের আবর্তে ঘেরা জলজ রমণী প্রতিহত সব পথ দুমড়ে মুচড়ে গেছে।ঘোরানো পথের বাঁকে কোজাগরী ইন্দ্রজাল।কুহকের মায়ায় দরজা খুলে বেরিয়ে পড়েছ?চৌরাস্তার কাছে অপেক্ষা করার সমস্ত জায়গাগুলো ভিখারীর দখলে।পেছনে যন্ত্রণার পদছাপ।জ্যোতির্ময় মুকুটে রাতের এ শহর অরোরা বিভায় জ্বলে ওঠে।আমি দুঃস্বপ্নের কালঘোর থেকে জেগে উঠেছি।এ-অন্ধকারে কোথা থেকে আসে এতো অলৌকিক আলো?তুমি তো জলের মেয়ে।নিবিড়ের সজলতা ছুঁয়ে দেখেছ কখনো?একেকটা সুর কিভাবে জড়িয়ে ধরে ঘাস-লতা-পাতা-শেকড়?পাঁজর ফুঁড়ে বের হয়ে আসা দীর্ঘশ্বাসে শুনেছ উজ্জীবনের কিংবা উচ্ছনের গান?অলস ভাসানে ভেসে চলা বিরহী সময়ে প্রিয় নামের নিঃশ্বাসে বাতিল হয়েছে? মাথার ওপর এক ভাঙা আকাশ।গোলকে পৃথিবীর ছায়া।কেবল শব্দের বোধে দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে চোখের সামনে খুলে যায় উৎসারণের রুপান্তরিত মুখ,অপূর্ব সম্ভাবনার শস্যক্ষেত,আলপথ,সেঁতু।আমাদের স্পর্শে বৃষ্টি ঝরেছিল।শ্মশানভূমির নির্জনতা কাম্য ছিল না অথচ অবলীলাক্রমে বিস্তৃত হয়েছে আমাদের ভালোবাসা, সমুদ্র পেরিয়ে গেছে।সৈকতের ভেজা বালিতে মাস্তুল,ভাঙা বৈঠা পড়ে আঁছে আর আমরা পরপরের মগজে খুঁটছি মৃত প্রজাপতিদের ডানা। ৩. অস্বচ্ছ জানালাজুড়ে আমাদের প্রিয় সম্বোধনগুলো অন্য গ্রহের ধূলোয় ঢেকে আছে।আমার হাহাকারের বুকে গাঢ় গুঞ্জন।কখন বেজে উঠেছিল বিষাদের সুর?সেতারের ছেঁড়া তার বিঁধে আছে পাঁজরে।আমরা বুঝি নি অথচ কথা ছিল বাঁধ হব অন্ধকার প্লাবনের মুখোমুখি কিন্তু বর্ষণের অকাল প্রপাতে ধূয়ে গেলাম বালির মতো।দু'কূল ছাপিয়ে ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে পৃথিবীর দেয়াল ও ঢালে।মোহের এ শরীর হয়ত ভেসে যাবে রাত দ্বি-প্রহরের ঘূর্ণির পাঁকে।জলে তাণ,প্রত্যাশার পাথর ভাসছে।তীরে দাঁঁড়িয়ে তোমার অশ্রুপাতহীন চোখে দেখেছি ভিনগ্রহের অন্ধকার,নির্বাসিত মুখের প্রচ্ছদ।একদিন যে বুকের মাঝখানে দিনরাতের রঙিন ফুল ফুটিয়ে ছিলাম---কালো ভোমরার দুষিত দাঁতের দাগে ভরে আছে সেই বুক। এ জ্বালা কখনো নিভে যাবে?আমার বুকের বদ্ধ বাতাসে পাতালগান,চোখে আচ্ছন্ন বিলাপ---অবিশ্রাম অনুরণনের মতো প্রাচীরের নিমগ্নতা ধ্বসে যাবে?মৃত্যুকূপে বেজে উঠেছে ধ্বংসবীজের সুর?আলোর স্ফটিকে মুখ ঢেকে আছ?খুলে দাও।ধারাজলের এ-রাতে পায়রা নদীর ধৈর্য্যশীল বালিয়াড়ি পার হয়ে যাবে?অই পারে নিশ্চিত আশ্রয়!সোনালী-সবুজ শস্যক্ষেতে এগিয়ে যাবার এই দৃশ্য---কার সাধ্য তোমাকে আটকে রাখে?কবিতামূর্খ রমণী,বোঝ নি ঝড়ের পূর্বাভাস,চোরাবালি,সমুদ্র আস্বাদ।সীমান্তের লাল বাতি এখন সবুজ।আড়মোড়া ভাঙে ট্রেন।মনখারাপের বাঁশিতে উদ্বেল সময়ের আপেক্ষিক স্রোত। আমি পৃথিবীর আলোয় অদৃশ্য তট আর শেষ সূর্য্যাস্তের কথা ভাবছিলাম;গোধূলি থেকে ছোট্ট ছোট্ট উৎস্মুখে আদিগন্ত ভালোবাসা পৃথিবীর মোহনায় বিস্তৃত উচ্ছ্বাসে আলোড়ন তুলছে ঢেউয়ে।ভেজা বালির ওপর সূর্যনাম।মধ্যদুপুরের তাত এড়িয়ে সন্তানসন্তুতির মুখে দেখি গভীর প্রশান্তি।এখন কি যন্ত্রণার চাঁচে নিজেকে গালিয়ে নেব?কবিতার অগণ্য পাঠক-পাঠিকার পাশাপাশি আমার স্বজন,অগুনিত শুভাকাঙ্খীদের ছেড়ে যাব?ঘরের চৌকাঠ আর বাগানের সুড়ঙ্গের মধ্যে শিশিরের এতো জল,এতো মমতার ছায়া---অস্বচ্ছ জলের চোরা টান থেকে ফিরে আসব?প্রণত জীবনের জন্যে। ৪. পরিণতিহীন লক্ষ্যে শিমুল তুলোর মতো উড়ে চলে গেছ।শীতঋতু থেকে দূরে শিকারী ঈগল মাংসখন্ড ভেবে তুলে নিল;এর পর প্রতি রোমকূপ জুড়ে রাতের শিৎকার।এত সন্তর্পণ,চন্দনচর্চিত উষ্ণ নাভী,লোভনীয় উরুতে পরকীয়ার ঝড়।মেঘ ও শস্যের জন্যে প্রার্থনারত যে পুরুষটি শ্বেত ও প্রবাল ঘূর্ণিপাতে দুই হাতে মাটি,লোহার বালতি ভরে জল ঢেলে গেঁথেছিল ভিত,---মাটির দেয়ালে ফুল,লতাপাতা ও পাখির ডানা আঁকা।খড়ের বিছানা ছেড়ে বাঁশের মাচান বেঁধেছিল শেষ সঙ্গমের আগে পুত্র সন্তানের জন্ম দেবে বলে রঙিন পাথর এনেছিল সামনের পাহাড় ও চাঁদ থেকে। আজ তার বুকে অগ্নিভরা জল।ক্রোধ ও বিস্ময়ে ফেটে পড়ে কঠিন পাথর। মনে পড়ে পৃথিবীর প্রথম প্রণয়,অতিকথা,কবিতা ও কল্পনার নিগূঢ়ে রক্তের ঢল।গৃহঘটে ফুটো,ভেজা লাকড়ীর ধূঁয়া,---জলের শুশ্রূষা নিতে উর্ধ্বশ্বাসে সাজানো সংসার ফেলে সকাল ও সায়াহ্নের নদীতে নেমেছ?আঁজলায় উঠে আসে সামুদ্রিক নুন,মাছেদের দীর্ঘশ্বাস।আমার মুখের মৃত্যুহীন আলোতে অসংখ্য মহাপ্রস্থানের সিঁড়ি।দৃশ্যপটে অগুনিত শবযাত্রা,মৃত মানুষের কোলাহলে কেঁপে ওঠে মনোভূমি আর মানবী আমার ক্ষয়জ্বালার রক্তাক্ত মুখে দুর্বাঘাস নয় বালি চেঁপে ধরেছিলে। ৫. যথেষ্ট বর্ণনা ছিল না,কঠিন পথ,শীর্ষে বাঁক,---সেইখানে এসে দাঁড়িয়েছ?অদৃশ্য ক্রোধ ও বিবমিষা থেকে কেবল পতিত থেকে যাও।ঔদাসীন্যে মেনে নিয়েছিলাম বিশ্বাসহীন সুন্দরের মুখচ্ছবি---কত অভিমান,অনুরাগ এবং কবিতার আগ্রহাতিশয্যে শীতার্ত রাতের দীর্ঘ প্রহরগুলো সঙ্গমহীনভাবে কেটে গিয়েছিল।নিদ্রাহীন লালচোখে লেখা কবিতাগুলো রোদ্দুর,জল ও মেঘের অনুপম ছায়ায়; যা ছিল শীত-সকালের ধোঁয়াগন্ধ,গাছপালা,নদী এমনকি পূরাণো জুতার সঙ্গে আতংকিত বাঘিনীর ধারালো নখের ছাপাংকিত দাগ বুকে-পিঠে নিয়ে স্তব্ধ জীবনের ফাঁক ও ফোকরে কুঁড়ি মেলেছিল বটগাছ।অশ্বথের ছায়ার রহস্য চিরকাল অজানাই থেকে গিয়েছিল।একাকী মাঠের প্রান্তে স্বরধ্বনি-প্রতিধ্বনিজালে বটের পাতার স্বেদবিন্দু মুছে যায়,মুছে যায় কিশোরীর সারল্য,সমস্ত দুপুরের পথ।প্রতিহত পথ জেগে ওঠে বিকেলের অপরিচ্ছন্ন মুহূর্তে। গভীর অনন্ত শব্দে অস্থিরতা ছিল।আমি ক্ষমা চেয়েছিলাম।অনুচ্চারিত শব্দ ও বোধের পরিমিত মাত্রায় অনাদিকাল থেকে খসে যাওয়া পাথর,সৌরধূলো,নক্ষত্রের টুকরো,বৃষ্টির ধারাজলে.... আহ!মুক্তির এমন স্বাদ। ৬. অনেকান্ত জীবনের প্রতি পরিচ্ছেদে,প্রতিটি পাতায় এত প্রতারণা,এত ভুল ও অন্ধকারের পঙতি---দ্রুত বেলা পড়ে যায়।সমসাময়িক জাল রসায়নে স্পষ্ট ফুটে ওঠে লবণ-উত্থাল দোলাচলে গার্হস্থ্য-জীবন।গলিত ললাটরেখা ধরে অতীতের আর্ত কেকারব।নক্ষত্রে সাজানো ডানা নিয়ে উড়ে যেতে চেয়েছিলে।মেঘের সীমান্তে অনেক নৌকার সারি।এতদিনে বুঝে গেছ ক্ষেত্রজ নৌকাও ঠিক সামুদ্রিক স্রোতে খুঁজে নেয় গোত্র পরিচয়।অরোরা বিভায়,গোধূলির অন্তরালে অসাড় অপেক্ষা-শোনা যাবে সমুদ্রের স্বর।সূর্যাস্তের পথে ছিল ঝিনুকের দাগ,শেষ মুহূর্তের কথাগুলো লুফে নিয়ে সিন্ধুশকুনের উল্লাস,উৎসবে ছিঁড়ে নেয় ফুসফুস।প্রতিটি হাড়ের গায়ে ঘূণেপোকাদের বাস তবুও ঠিক পৌঁছে যাও সংকেতের বিকেলবেলায়।দূর অস্তাচল থেকে ভাসে আসে বুনোকুকুরের ডাক আর বুক জুড়ে শুরু হয় শকুনের নখের আঁচড়। কবরখানার পাশে স্তব্ধ রাত---আবছা পথের পথচারিনী বিন্দুতে বেঁধে ফেলেছ অতীত,বর্তমান আসক্তি ও ক্লেদে শরীরের রেখা ঘিরে অন্ধকার আলো।দিন ও রাতের পায়ে হাঁটে অস্বচ্ছের প্রতিবিম্ব।মাথার ওপর কোজাগরী চাঁদ অথচ সে আলো আলোর আরেক পাশে পড়ে থাকে।ধাতু-সমুজ্জ্বল বেশ্যাদের নগ্ন স্নানের মতোন ছুঁয়ে আছে অন্তহীন বুক কেননা শূন্যতা থেকে ঝরে পড়ে বিষাদপ্রতীক্ষা,নিয়মনিষ্ঠা ও আমাদের দৈনন্দিনতার সমূহ প্রয়োজনের সূত্রাবলী এমন কি জৈবিক ক্ষুধাও।প্রথম সূর্যোদয়ের কালে সূর্যস্তব ও গায়ত্রীমন্ত্রে শুনেছিলাম আশ্বাস কিন্তু কোন প্রত্যাশা ছিল না।সূর্যাস্তের করুণ কান্নায় ভুলে গিয়েছিলাম প্রার্থনামন্ত্র।অস্তিত্বকে ফিরে পেতে পাথরময় পৃথিবী এবং সমুদ্রের বালিয়াড়ি খুঁড়ে যে জল তুলেছি;রাক্ষসরক্তের বুকে স্বতন্ত্র ও অনিশ্চিত অবস্থানে সন্ধ্যা ও নৈমিষারণ্যে সমান্তরালে ছুটছে রক্তস্রোত---ভাটিয়ালী কথায় তা ধূয়ে দেব? ৭. প্রণত জীবন ছুঁয়েছিল সমস্ত গোধূলিবেলা।স্পষ্ট উচ্চারণে কার্তিক সন্ধ্যার শ্যামাপোকা উড়ে যাবার সৌন্দর্য্যে অদ্ভূত রঙিন ছাপচিত্রে পম্পা-সরোবর তীরে মিশে যায়।অন্ধকারে পাখি কাঁদে আর আঘাটায় এসে লাগে আবর্তিত অভিশাপ।উচ্চকিত তানে বিদায়ের যে সঙ্গীত বেজেছিল তার সুর এখনো প্রান্তর থেকে প্রান্তরে ছড়িয়ে আছে।প্রেতবনচ্ছায়া ঘিরে চন্দ্রালোকপানরত শকুন-যৌনদ্রাঘিমা ছুঁয়ে অকস্মাৎ উড়ে যায়।উড়ন্ত ঠোঁটের কষ বেয়ে ঝরে পড়ে উচ্ছিষ্ট মাংস,রক্তধারা। স্বেচ্ছাচারী জীবনের অলিখিত পূরাণে উল্লাসধ্বনি,আর্তনাদ ও হিংসার প্রপাতে অস্থির কালরাত্রি,শাশ্বত উপমা এবং প্রকৃতিপ্রত্যয়বোধে ঘন চুলের ভেতর বর্ষা নেমেছিল---মাত্রাবৃত্ত কদম গাছের সাদা পাপড়ি কী অবিরল ধারায় ঝরেছিল;দ্বিতীয় মানবী,বোঝ নি জলদ মেঘ,বৃষ্টিভেজা দুপুরের পথের অবশ্যম্ভাবী মসৃণতা।নিশিডাকের নাশকতায় ভেসে গেলে পেছনের অববাহিকার কাঁকর,এঁটেল মাটি,বালি ফেলে। ৮. যা কিছু গ্রহণ করেছিলেঃসামুদ্রিক শঙ্খ,বুনোফুল,নাকছাবিটির হীরা,পুরুষের প্রেমের খেয়ালে রৌদ্র থেকে ছিঁড়ে নেয়া আমার মস্তিষ্ক---একে একে শূন্যে উঠে যায়।তোমার বিনষ্ট মুখে বসন্তের অদ্ভূত স্ফুলিঙ্গ,বিসম্বাদী ডৌল শুষে নেয় আমার অন্তিম প্রপাতের জলধারা।সমূহ সর্বনাশের পূর্বে নিঃশব্দ অগ্নিবলয় ঘিরে আধোশ্বেত ডানার পাখির ব্যাকুলতা,চতুর্দিকে তার ছায়া।এখন বুঝতে পারি কোলাহলরত মৃত্যুর করুণ বাহু কী অবলীলায় গন্ধক মেশানো জলে সাঁতার কাটছে।মালিন্যমুক্তির প্রত্যাশায় পাটিগণিতের পাতার সরল এবং ঐকিকের নিয়মে শ্মশান থেকে শান্ত চোখে ফিরে এসেছ?ধোঁয়ার উৎসারণে নৈশকালীন যাত্রার পথে ঘুমন্ত মানুষ ঠেলে ঠেলে ট্রেন ছুটছে।টেলিগ্রাফ তারের খুঁটিতে কতো টরে-টক্কা---বে-হিসেবী সংকেতে শরীর খুলে বসে আছো?বে-সরকারী আতুরালয় লুকোচুরি খেলে।শরীরের সব দাহ আজও মেটেনি।দ্বিধা-বিভক্তির পাঠ-পাঠান্তরে অধি-দেবতার স্তব,সামমন্ত্রে প্রতারণা।গভীর প্রস্তাবনার এই রাতে খসে পড়ে নক্ষত্র,পৌত্তলিকতা।আমি বুঝি না গ্রহণকিংবা বর্জনের রীতিবদ্ধ অধৈর্য্যতা।ধৈর্য্যচ্যুত শিকারী পাখির রক্তনখে স্বেচ্ছাবন্দী হয়ে জীবন কাটাবে? সমুদ্রের অনিয়ন্ত্রিত জোয়ারভাটা,স্রোতে পুরুষের রক্তমোচনের তুলা আর সার্বভৌম বেশ্যাবৃত্তির চাতুর্যময় ভঙ্গি---আমি জলের কিনার ঘেঁষে দেখিঃজটিল ও দুর্বিষহ জীবনযাপনের প্রণালী,---ফাঁপা,নিষিক্ত ও কলরোলময় বাঁধ ধরে হেঁটে আসছে নিশীথ প্রণয়িনী।চোখে অবৈধ সমর্পের ছায়া!ব্যথা-বেদনার দূরত্বে আমার চোখ দিয়ে অবিরল বৃষ্টির ধারার মতো লজ্জা ঝরে পড়ছিল আর এই শব্দটির আধিক্যে দু'হাতে মুছে নিয়েছিলাম শ্যাওলা ও চোখের জলদাগ।অথচ রমণী বোঝে নি কংকাল,মদ ও মৃত্যুর শব্দে ঘর ভরে আছে। ৯. শাল-পিয়ালের তলে অপর্যাপ্ত দিন ও রাতের ভঙ্গুরতার ভেতর অতীতের আসক্তি ভরাট আঙুরের মতো পুঞ্জ হয়ে আছে। প্রতিবিম্বে প্রতিফলিত দুঃখস্নানের পর্যাপ্ত জলে।স্বচ্ছতায় ভবিতব্যরেখাও পেরিয়ে চলে এসেছি।যদিও সব দিন করতলগত মুঠোয় প্রতীক্ষা করে থাকি পাহাড় ধ্বসের অন্তিম গহ্বরে শরীরের সব তাপদহ চেতনাকে স্তব্ধ করে তার রহস্য হারাবে।কল্পণার নিগূঢ়ে সামান্য বুদবুদ---তাও হতে পারি নি।দিগন্তময় স্থির সর্বনাশের সীমায় কৃষ্ণগ্রীব মেঘে নাশকচিহ্ন,লোহার ঠোঁটে রাজ শকুন খুবলে নেয় বুকের নরম মাংস।অন্ধ চোখের পাটল প্রবাহের মধ্যে জলদুঃখ,তোমার সৌন্দর্য্য প্রবলতা---শ্মশানের আঘাটায় বসে নিজেকেও ছুঁতে পারি না এখন।যে ভুলের কাছে ঋণী নই-সুদসমেত ফিরিয়ে ভুলে যেতে মনেও আনি নি।ভাঞা,বিনষ্ট সে মুখে আতুর উৎসব।পথে বা বিপথে কালো পর্দা টানানো।অস্ফুট আলোর খেলার মধ্যে পায়ে পায়ে ভয়,দ্বিধার প্রবল টানে ভেসে যেতে যেতে কতোবার ডুবে গেছ,কতোবার ভেসে উঠেছ পরকীয়ার হলাহল স্রোতে।জলদর্পণের ছায়ায় মুখোশ খুলে গেছে।সত্যিকারের মুখের অবিরল রেখার সৌন্দর্য্যটুকু ছল,---একদিন জানু পেতে ভিক্ষে নিয়েছিলাম,তা ভাসিয়েছি কালো জলে।ক্ষীণ মায়াবশে আজও কখনো কখনো করুণা জাগে।মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি এখন করুণারও যোগ্য নও। ১০. হারিকেনের আলোয় ঘর ভাসে।তোমার অস্বচ্ছ মুখে থেমে যায় ধর্ম,লৌকিকতা।আমি নিচু ও নিথর হয়ে আমাদের পূরানো দিনের খোলামকুচিগুলূর টুকরো দু’হাতে তুলে নিই।মোহের আকাশ ভরে যায় ভস্মে।যেভাবে নিয়েছিলাম বসন্তের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ,মাটিতে পড়ে থাকা অর্ধেক বিকেল কিংবা নিমপাতা শরীরের গোপন সংকেতে পাঠোদ্ধারহীন শিলালিপি সূর্যরেখায় ছড়িয়ে দেব?পরার্থপর জলের স্রোতে ভেসে যেতে দেব? কবোষ্ণ দু’হাতে এখনও মেহেদীর দাগ,আদূল নখের কোণে রঙের প্রলেপে বিভা---এইভাবে মুছে ফেলে নদীর ওপারে চলে যাবে ভাবি নি কখনো।শালকীর চকচকে বালিয়াড়িতে রোদের তীব্র প্রফলনের বিম্বে পুড়ে যায় চোখ।পায়ে ফোস্কা পড়ে গেছে।ফেরার বিরাম নেই।যে ঘরে পূর্ণতা ছিল কাল,---শূন্য সে ঘরে ইঁদুর,তেলাপোকা.... অনন্ত বৃষ্টির শব্দে শুধুই পথের কথা ভেবে ভেবে নির্ঘুম শরীর নিয়ে পড়ে আছি।কৈবল্য মানি নি।মন ও চৈতন্যে জ্বর। অধিকারহীন ভাষায় অগ্রাহ্য ছিল শাশ্বত উপমা,চিরন্তনী প্রেম।গ্রীষ্মাবকাশের সেই সমস্ত দিনের আশা ছিল।সফলতা ও কর্তব্যহীনতার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিগুলো স্বস্তিকা চিহ্নের মতো আমাদের মাঝখানে শুয়ে ছিল।জল এবং কৃপাকণাবাহী বর্ষার জমজ মেঘ চোখে মেখে আবার বৃষ্টির মধ্যে স্বস্তি পেয়েছিলে সুখ যদিও ছিল না। সৌরধূলোয় আচ্ছন্ন পথ,চোখের কোটরে খড়কুঁটো,জল নেই।নিষ্কৃতির চেয়ে বড়ো দুর্দুমনীয় উৎসবে কোনো অপরাধের,ক্ষতির কথা মনে পড়ে নি অথচ আমাদের পারস্পরিক সমঝোতার মাঝখানে সেই পর্দা এখনও স্থির,ভিনগ্রহের বাতাসে একটু একটু কেঁপে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০১৪

দূরের নক্ষত্র

মাথার উপরে সূর্য
নীচে তপ্ত বালি
জলহীন নদী সাপের মতোন এঁকে বেঁকে শুয়ে আছে
জন্মাবধি,---
অশথগুঁড়ির জটে মুখব্যাদানের অন্ধকার

তোমরা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছ
মহাজাগতিক ত্বকের পাহাড়ী পথে বর্ণচ্ছটা
গাছের রঙিন পাতা,শুষ্ক কুঁড়িতে জ্যোতিষবিদ্যা
পদার্থবিজ্ঞান ও বীজগণিতে ভুল

স্কুল পালিয়ে এ অবেলায়
কবিতা ও নক্ষত্রে আকীর্ণ মাঠে
খেলতে নেমেছ

দূরে ঐ নক্ষত্র

সোমবার, ১৯ মে, ২০১৪

বসন্ত দিনের অবস্থান

প্রবাহমান দিগন্তে কিশোরবেলার একাকিনী দুঃখ,সদ্যসবুজ উদ্ভিদ আর স্নেহরঙিন দিনের প্রান্ত ছুঁয়ে শ্রান্ত হয়ে বসে আছ,সতেজ ঝর্ণার হলে পা ডুবিয়ে,চোখে অর্বুদ কালের মেঘ।ঠোঁটে লেগে আছে আদ্যিকালের পাথরে ঘঁষা কাল পিপাসার গান।তোমার দু'হাতে পদ্মপাতা,চিরায়ত ফল,---গ্রহণের এই দিনে মনে পড়ে দাঁড়ানো মিথুনমূর্তি?শরিরের সূচীপথ ঘিরে সকাল,দুপুর এবং বিকেলের অপরিচ্ছন্ন মুহূর্তমুখ?কালের আহতকালে ডানাভাঙা হাঁসসস পড়ে থাকে---বুকে পাটল প্রবাহ।আদি-মানবীর চোখের রক্তজলের ক্ষতে যেসব প্রপাতধারাঃঘূর্ণিটান রাত্রি,অবসাদ,অব্যবহৃত সময়--বুকের গভীরে বিমূঢ়তা নিয়ে বসে থাকে।মধ্যজল থেকে উঠে আসা এই যে স্থবির,অলস ভাসানে ভেসে চলা চিরহরিতের ক্ষিধে এবং প্রবাহিত যুগল নিঃশ্বাসে মাটির শরীর জাগে কুন্ডলিত কুয়াশায় আর স্রোতে কাঁপে কলংকরেখার উচ্ছ্বলতা।আমাদের দেখা হয়েছিল শীতার্ত প্রহরে।পটভূমিকায় কূয়াশা,পাংশুটে চাঁদ।আমি সুমেরুর বাসিন্দা,কুমেরু থেকে এনেছিলে বিসর্পিনী অত্যাচার,অপব্যয়ী জীবন ও ভ্রষ্ট উপদ্রব।সজীব সঞ্চারে দেখো সুমেরু আজও কেমন জ্বলছে।যা কিছু আমার চারপাশে প্রাণবন্তঃ
স্বচ্ছ সকাল ও নদীপথ
ঘাস ও শুকনো পাতা
সদ্যস্নাত শরীর ও ভেজা চুলের সুবাস
বাগানের করবীফুল ও আঙুরের রস

সমস্ত জ্বালিয়ে দিয়ে পুনর্বাসিত জীবন অধিকন্ত শীতে দাবী করেছিল তুষের আগুন।অস্থি খুলে নিয়ে দু'হাতে একাকী ঘের,শস্ত্রময় বিশ্বাসঘাতকতায় বুকের পাঁজরে ইচ্ছাময়ী বীজ...।পাঁজরে পাঁজর জুড়ে অর্থহীনতার পরপারে মেরুদন্ডে আর্তনাদ,অগ্নিকুন্ড ঘিরে যে হল্লার রেশ উঠছে;আড়ষ্ট লতা এবং তুষারের কণা থেকে যথার্থ সুদূরে বসন্ত দিনের অবস্থান।

চোখের চুম্বন

জলের গভীরতর প্রহেলিকার ভেতর আমি দেখেছি বিরহ,অগ্নিময় শোক এবং প্রকৃত স্বপ্নের রুপে শব্দ ও স্রোতের উর্ধ্বে উঠে যায় ক্ষেত্রজ নৌকাও।নিকারীর শতছিদ্র জাল থেকে নিকারী বৌ এর যে আহ্লাদগুলো স্রোতময়তায় ভেসে চলে-স্মৃতি ও বিস্মৃতিপ্রায় খাঁড়ি মোহনার মুখে জলবন্দী মাছেদের সাথে-এইভাবে,শুধু এইভাবে মানুষের বিনাশের কালে নীল মোমশিখা হাতে দাঁড়িয়েছ অন্ধকারের ভেতর।কালো গর্ভাধারে রক্তচোষা ভ্রুণ।পথচারীর মগজ ঘূণেপোকা।এই সমস্ত শব্দকুহক ছুঁয়ে বুঝে নিই আমাদের বুকের আগুনভরা জল,বাতুলের অগাধ মূর্ছনা।শরীরের প্রতি রোমকূপে যে পাতালগান জেগে উঠছে;নিঃশ্বাসে বুকের পাঁজর ফুঁড়ে বের হয়ে আসে ভাঙা মাস্তুল ও উদাসীন হাল।নিরক্ষরেখার প্রান্তে যতদূর চোখ যায় অবসাদে ভরে আসে শরীর ও মন।খোঁড়াপায়ে কতদূর যাব?দিগন্তের ওপারে নিরভিমানী স্বেদবিন্দু।তার স্মৃতি ছড়িয়ে রয়েছে---কোমল ও ভাস্বরতা মেলে।আমার এ চোখ দিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকাওঃজন্মের প্রতীক্ষায় কত ভ্রুণ যন্ত্রণাহত,পায়ের কাছে নগ্ন শুয়ে আছে,শিয়রে মৃত্যুর হা্তছানি।মায়াজাল ছুঁড়ে আর কর মরা ফড়িঙের ডানা,অসাড় দিনের স্থবিরতা তুলে আনা?সৃষ্টির ভেতর ধ্বংসবীজ?স্রোতের ভেতর ঘূর্ণি?শস্যবীজের প্রণয়ে দীর্ঘকাল---ভালো লাগে এইসব প্রেমের কান্নাতে?মুঠো খুলে যায় চৈত্রের দুপুরে আর গড়িয়ে গড়িয়ে নামে তুচ্ছ সবুজের স্মৃতি।মানুষের জন্মে ইচ্ছের স্ফটিক আলো,অসংখ্য আনন্দভারে জীবন ছুঁয়েছিলাম---পরিস্রুত প্রেমিক তারার মতো।বিচিত্র সুখানুভূতি এবং আলস্যের লতা যৌবনের প্রাত্যহিকে খুলে দিয়েছিল---ঘাসের মাথার নীলে,সবুজে-সবুজে।ধারাময় সরীসৃপ দাহে চরাচরব্যাপী  ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়ার রক্তের লাল ফুল।চোখের আহত দৃষ্টি চেয়েছিল চোখের চুম্বন।

বশীভূত জীবন

মেঘের ভেতর করপুট পেতে
যে জল ধরেছিলাম
ছড়িয়ে দিয়েছি নদী ও সমুদ্রে
পূর্ণিমার চাঁদ গালিয়ে ঢেলেছি
অঘোর আকাশময় আর
জীবাশ্মের অন্ধকারে অগ্নিশিখা ঘিরে যে উৎসব
জন্ম ও মৃত্যুর তীর অবধি ঐ জ্বলজ্বলে স্মৃতি
ক্ষুধা -তৃষ্ণাহীন ঘুমন্ত পুরুষেরই প্রতিরুপ

অধোমুখ রহস্যের ধ্বনিতে পরিবর্তিত আলো
সংস্কারবিহীন অনির্ভরতার কেন্দ্রাভিমূখী বিনির্মাণের ঋজু থামে
শ্বেত পাথরের অরচিত বাড়ি
উঠোনে করবী ফুল

অনর্থের তুকে বশীভূত এ জীবন
জলের ওপর দিয়ে ক্রমশঃ প্রতিফলিত মেঘ ও আলোয়

রবিবার, ১৮ মে, ২০১৪

সমকাল

পরাবাস্তববাদী দৃশ্য ও চেতনার ভেতর প্রবল আলোড়ন;এ দেহ সংকেতে পরিপূর্ণ-পাঠ এবং প্রতিপাঠে বিচিত্রিত পৃথিবী হিংসার অবলীঢ় তাপে জ্বলছে।আগুনে ডাক,আলেখ্য,কাব্যের অন্তর্গত দ্রোহ ও প্রেমের সম্মিলনে যে-বাল্যে মানবজন্ম কেটেছিল আপাত স্বপ্নের রেতঃপাত থেকে;সেই ভুল জন্ম,ঐহিকতা,জায়মান শ্রেয়বোধে তুলা ও শস্যের ক্ষেত পরিত্যক্ত প্রায়।দ্বি-মুখী সমাজ নিরপেক্ষ জোটবদ্ধতার রক্তমাখা নখ থেকে ঝরে পড়ে সাংসারিক বৃষ্টি আর বোধিবৃক্ষের তলায় ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের শরীরে বাসা বাঁধে মৌমাছির ঝাঁক।চাক ভেঙে যারা মধু নিতে এসেছিল,তারা সকলেই দেখেছেঃঅস্বাভাবিক জীবানুর স্থিতিস্থাপকতা,ধ্বংস ও সূর্যোদয়ের পাশাপাশি অকাল বৈধব্য,বহু পরিচর্যাজাত খামার চাষের ক্ষেতে লতিয়ে উঠছে মুথা,দূর্বাঘাস।সম-সাময়িক রসায়নে জারিত যবের দানা,আঙুরের রস ক্রমঃবর্ধমান লক্ষ্যমাত্রার সারণি ছুঁয়ে গন্ধকময় ঝর্ণার জলে মিশে আছে।গ্রাম্য কিশোরীর প্রতি যৌনতা ও উপদ্রবে পারঙ্গম ধর্মচ্যুত,ধর্মজ্ঞানী সাধুর নক্ষত্রহীন মাঠ হতে সশব্দে উৎখাত হতে থাকে শহরের স্তব মুখে।পড়ে থাকে ত্রিশুল,ধূনির ভান্ড।হাতে উঠে আসে পরিত্রাণের শাবল।কঠিন মাটির স্তর ভেঙে জলময় আঘাতে আঘাতে গড়ে তোলা নিমগ্ন প্রাচীর;লোভ ও বিভাজনের-পরস্পর ভিন্নতায় অনির্দেশিত অপরাধ ও ক্ষমতার ক্রোড়পত্রে ক্রীড়াশীল অগ্নি। আপাতত শান্ত,নিরুদ্বেগে রেখেছে ভরাট মেঘপুঞ্জ,দিন ও রাতের ভঙ্গুরতা।অলস ভাসান কিংবা আত্মঘাত থেকে লাফিয়ে উঠছে শব,কপালে জন্মের জলছাপ সমেত;যখন এক পথ থেকে আর এক পথের দূরত্ব--সমকাল।

বিসর্জনের বিষাদ।

সময়ের নিজস্বতা,শব্দের যোজনা এবং আড়ালের সজলতামুখ ধূয়ে গেছে রাতজলে শব্দহীন দিন খুব বেশী নয় কিন্তু ভূতগ্রস্ত রাতগুলো বুকের ওপর দিয়ে খোঁড়া পায়ে নেমে আসে।ক্ষতহীন মুখের রেখায় পাথরের ভাস্বরতা,বিষাদপ্রতীম চোখে প্রজাপতির ডানার জলছাপ।গোধূলিবেলাকার ছায়ায় খসে পড়া মুহূর্তগুলো চেয়েছে স্তব্ধ কথামালা,অক্ষর ও শব্দে অভিজ্ঞানলব্ধ গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ।পশুবীজ বাতাসে ভাসছে।জেগে ওঠে ক্ষুধা,রিরংসা,জিঘাংসা।অর্বুদকালের পথ পার হয়ে পালিয়ে এসেছি শেকড়ের অন্বেষণে।তা-কি ঠিক?মানুষ ও পশুজন্মে মুছে যাবে পাখিদের ইতিহাস?চাদরে লুকানো রক্তমাখা তীর,ঝুলি ভরে আছে মৃত পাখিদের শরীরে।শিমুলতুলো প্রভাব ও প্রতিপত্তিহীন পাতা,খড়---বাতাসতাড়িত।কার্পাসতুলোর চাষ নেই।পায়ে হেঁটে ফিরেছি,ক্ষেতজাঙালে।নিরক্ষর বেশ্যা ও নটিনীদের পদভারে খরনুপুরের শব্দে কাঁপছে এ ভূমি।মেঘের সারল্য আর দারিদ্রহীনতার নেত্তৃত্বে  পিতৃ-পুরুষের এই ভূমিতে যে ভাবে বেড়ে উঠেছিল নটেশাক,গুল্মলতা ও ঔষধি গাছ;উভয়তোমুখে আজ ভাবিঃঅপরিণত মাটির তলাকার অশ্রু-স্বেদ-রক্ত-ঘাম এবং ডাহুকবিলের শুকনো চরায় প্রিয় কবিতা ও গাঁথাগুলো উপাসনারত।উড়ছে বাঁশের পাতা--সরাসরি স্বস্তিময় সুখের মতোন এবং আমরা অপেক্ষারত মৃত্যু ও সহমরণে।চিতা প্রস্তুত।অকাল বৈধব্যকে টেনে তোল আর অই দিকে ঘরে ঘরে অভিনীত হতে থাক 'বাল্মিকী প্রতিভা।'
লতানো গাছের নীল শাখাপ্রশাখায় মৌমাছি প্রজননের পরীক্ষামূলক প্রকল্প ঝুলছে।ওই গাছগুলোর তলায় ঘাস এবং কবর;অভ্রখনির মতো নির্বিকার।অজ্ঞাত বছর শেষে নানান গোপনীয়তা থেকে উদভ্রান্ত মানুষের কলস্বরে বসবতের গূঢ় ধৈর্য্য থেকে আমার অন্ধত্ব ও কু-সংস্কারের ভাঙা দাঁড়িপাল্লা,বস্তুজগতের টুকরো সাজানো--ভাসমানতায় ভরা অথচ অক্ষম ভেসে যেতে শূন্যের ভেতর।ভূর্জপত্র,তালপাতায় কে লিখে রেখে গেছে মানুষের সারাৎসার জীবন ও গান?বীজ ও পতঙ্গে পরিপূর্ণ আমার করোটি ভরে আছে কোকিলের ডাকে।বসন্ত পূর্ণিমা রাতে পুজো হবে তারপর বিসর্জনের বিষাদ।

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০১৪

জন্ম ও মৃত্যুর পরবর্তী পরিচ্ছেদ

সংবাহ অন্ধকারে দ্বি-খন্ডিত পথ,মুহূর্ত মুখর হাসি এবং যৌবনপ্রান্তিক বটের ঝুরিতে ভেজা কুয়াশার প্রলেপ;চোখের গর্তে নির্বোধ পতঙ্গ আর অনাদরে সবুজ,রহস্যময় মুখে এমনই আভা-মুছে যাবার সাহস!শূন্য থেকে ত্রিতাল,দিগন্তময় স্থির,বিনত বিশ্বাসে কেঁপে ওঠে অভাব,অতীত,বর্তমান।ভবিতব্যরেখায় দুর্বোধ্য সব নক্সা।নাক্ষত্রিক পরিমন্ডলের মধ্য দিয়ে চলে আসা এ জীবন;যারা সমকাল চিনতে পারে নি,দিন ও রাতের আপাত পার্থক্যে নৈর্ব্যক্তিক,অর্ধ-উন্মাদেরা জেনেছিল অগ্নি ও জলের বিভাজন?ঘোরতর নীলবর্ণে জন্ম ও মৃত্যুর পরবর্তী পরিচ্ছেদ?

বুধবার, ১৪ মে, ২০১৪

প্রলামনিমগ্ন স্বপ্ন ও স্ফটিক সময়ের জলভার

একসাথে নীল পাথরে হেঁটেছিলাম।শীতের জটিল কুয়াশায় শরীরের উষ্ণতা জলের তলাকার স্তরে নেমে কপালের অকালরেখা,ঠোঁটের কোণে আঁকা লুব্ধ আগুন ও চুম্বনের মধ্যে ডানা ঝাপটে বেড়িয়েছিল এক লক্ষ ফলাহারী বাদুড়।অথচ সেই বহুরুপে অবতীর্ণ রাত,সাঁকোবিহীন নদীর ভাঙা তীরে প্রেম এবং বিচ্ছেদের মাঝখানে পড়ে আছে সরল রৈখিক পথ;বটের পাতার দুধ আর পৌষের শিশির লেগে থাকা নদীর দু'তীর ছেঁপে জল ও স্রোতের কলস্বরে আমাদের বিস্ময়াবিষ্ট বিস্ময়গুলো মূর্ত হয়ে ওঠে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু আর বিসর্পিল রেখায়।শুকনো খড় জ্বলে।এই তীর থেকে ওই তীরের দূরত্বে ঘূর্ণিচরাচরের সমস্ত রাত স্মরণস্তম্ভের মতো নিঃস্মরণ ও আঁকর দিনগুলো নির্মাণ ও বিনির্মাণে শেষ হয়ে যায়।মধ্যরাতের নীলাভ মুখের প্রচ্ছদ ফেটে আণবী ছটায় বের হয়ে আসে নিহিত বোধের নিজস্বতা-স্পর্শমাত্র যতদূর চোখ যায়,ততদূরে শূন্য থেকে শূন্য উড়ে যায় প্রলামনিমগ্ন স্বপ্ন ও স্ফটিক সময়ের জলভার

বুকের বাদামী তিল

প্রিয় রমণীর বুকের বাদামী তিল ছুঁয়ে সমস্ত জীবিন সেই ঝর্ণাতলায়,মেঘহরিণীরুপে....।কিশোরবেলাকার রুপকথার মতো মুছে গেছে দিন,রাত।যখন কবির হাত থেকে ফেটে গিয়েছিল কলম ও কবিতার নীল খাতা অনিশ্চয়তায় নক্ষত্রের মধ্যে লীন হয়ে গেল।এক আকাশের সমান লেখার কথা বলে অসাড় আঙুলে পাখির পালক গুঁজে খুঁজে পেতে বালুচর,কাঁশবন এবং গোধূলি বেলার ধ্রুবজ্যোতি,বৃষ্টিগাছের শাখায় আনন্দিত ময়ূরের নাচ আর 'নির্জনতার সমস্ত অধিকার একমাত্র কবিদের জন্যে সংরক্ষিত রাখা হোক' শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত নীলাভ অন্ধকারের বাঁশবন লক্ষ জোনাক পোকার সম্মেলনে।স্ফটিক সময় হাতে,সহজ ভাষায় রৌদ্র ও আলোছায়ার খেলা,শব্দকুহকের সামনে পাথর ঠেলে ঠেলে ইরাবতীর ভবিষ্যৎগামী স্রোতে মৃত্যুর তারিখ ভেসে উঠছে।ওপারে,আত্মীয়বন্ধুর দল।হাতে ধরা ছিল নিমতলীর শ্মশান। সেইখানে থমকে দাঁড়িয়ে আছে বলয়িত সূর্য ও সৌরমন্ডল। খাঁড়িমোহনায় কাৎ হয়ে পড়ে থাকা একেলা নৌকায় জলবন্দী মাছেদের পুনর্বাসন,স্বভাবগত মুদ্রাদোষ ও মর্যাদাবোধে সোনারঙা শরীরের বিচ্ছুরণে উদভ্রান্ত কবি সমুদ্রের ভেতর প্রহরী সেজে ঢেউয়ের ফেনায় দু'হাত,---সমুদ্রের অতলান্ত তল খুঁড়ে বালি ও কাঁকর ছেঁকে সাদা শঙ্খ ও স্বপ্নের থেকে সুগত চোখের দৃষ্টিপোড়া সাহসে আরেকবার ছুটে এসে জ্বলন্ত বুকের স্তনশীর্ষে,শান্ত আদরের ছলে দৃষ্টিপোড়া.......।

মানববৃত্তের রেখা

মানববৃত্তের রেখা ছুঁয়ে অপরিসর গহ্বর এবং জীবাষ্মের অন্ধকার থেকে করপুট ছেঁকে তুলে নিয়েছিলাম যে জীবনের সারাৎসার;সুসজ্জিত বিকলাঙ্গদের শোভাযাত্রায় অনুপস্থিত রৌদ্রময়তার অনুষঙ্গরিক্ত বর্তমানে প্রবাহমানতার ভেতর প্রতিফলনের উপচারে গোধূলির সম্পূর্ণতা।উজ্জীবনের তামসী অস্বীকারে নিঃসংশয় অতীত ও অনাগতকাল অর্থাৎ ভবিষ্যতের রুপ ও রঙের ক্রমাবনতির ঢালে জলসিক্ত প্রান্তর ও বাসভূমি-সংবেদনশীল;যা স্পষ্টতঃ শেকড়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।অশান্ত সংসারের ওপর অনাবসান-সুগত চোখের জলে আয়তনহীন এই দশদিকে শাখা-প্রশাখায় রক্তফল,---স্বাদু এবং বেঁচে থাকার পরার্থপর অগ্নি।অর্ধন্মাদ,উলঙ্গ মানুষেদের মুখোমুখি লিখে রেখেছিঃঘাসের বিছানায় যারা শুয়েছিল,দেহতাপে পুড়ে গিয়েছিল ফুল আর অতৃপ্ত সঙ্গীকে ছুঁড়ে ফেলেছিল-তাদের সম্পর্কে ভাবিঃবজ্রকলঙ্কিত ও কাটারিদাগে সুখভোগ.....।

প্রশ্নাতীত সহানুভূতিশীলতায় আকন্ঠ নিমজ্জিত স্নায়ুউর্ধ্ব দৃশ্যকল্পে শর্তস্বাধীন,নিরতিশয় সমজ্ঞানে।একাগ্রতা ভুলে পরিত্যক্ত পথ;যা নির্জন-দৈনন্দিন ব্যবহারে দ্বিধা,বধির কুয়াশা এবং উঁচু অশোকের ডালে মনে আছে লেজ ঝোলা কিছু পাখি....

মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০১৪

পোড়োবাড়ি

শব্দময় মূর্ছা,পতন ও আত্মউপলব্ধিজাত লোনাঘরে ঝুল,মাকড়সা জাল।অব্যবহৃত উঠোনে গুল্মলতা,স্তুপীকৃত পাতা,ইঁদুরের বিষ্ঠা,ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিন্নত্বক, রক্তফল ও বীজের বেদনা-আহত হাসি।দুপুরের প্রচ্ছদে চৈত্রের ধারাস্নান,পেছনে পানাপুকুর।ভাঙা ঘরের পটভূমিতে নিশ্চেতন পড়ে আছি।আমার পোষাক থেকে ছেঁড়া,ম্লান সুতো বাতাসে উড়ছে।ক্লান্তিবোধ থেকে স্বতঃস্ফুর্ত স্তব্ধতায় মনে পড়ে শূন্য ক্ষেত,অতিরিক্ত পথঘাটে মানুষের শোভাযাত্রা।আমার পেশীর তলা থেকে জন্ম নেয় গ্রন্থকীট।সমূলে হামলে পড়ে অনেকদিনের আছোঁয়া পুঁথি ও ভূর্জপত্রে।

অতঃপর ঘরে ফেরার শীৎকার,চারদিক আলো করে আসে পতঙ্গভূক পাখি ও বিপরীত প্রতিদ্বন্দ্বীবোধ।নির্বেদ শূন্যতা,প্রসারিত সূর্যালোকে নৈকষ্যকুলীন শুদ্রজাত সন্তান--বিচ্ছেদে নীল মৃত্যু ঔদাসীন্যহীনতায় ধ্রুবতত্ত্বে ফিরে যেতে চেয়েছি শৈশবে।উপদ্রুবময় সহস্র বাদুড় ঠেলে যে সব জামের বন একদিন ক্রমাগত সূর্যতাপে দক্ষিণে,খাঁড়িমোহনা পার হয়ে স্ফীতমান বালি ও পাথরে ধ্বনি-প্রতিধ্বনিময় ফিরে এসছিল সাদা কবুতর হয়ে---এখনো হরিতকির মাঠে,কেওড়া তলায় মৃত্যুপথগামী মানুষেরা ছুঁতে চেয়েছিল দীর্ঘ পরমায়ূ রেখা।অন্ধ,বধির ও আঁতুড়েরা দুধের প্রবাহ থেকে কীর্ণ হয়ে উঠে আসে।

নশ্বরতা।আদিপ্রাণ।পশুয়াত্মা।ঘোরানো সিঁড়ির বাঁকে একদিন শুনেছিলাম কঙ্কন,নুপুরের ধ্বনি,মিহিকন্ঠ।কুঁজো হয়ে বসে আজ দেখছি তার্কিক চাঁদে পৃথিবীর গোলাকার ছায়া বুকে নিষ্প্রাণ জ্বলছে।সুখদুঃখের এসব কথা ভেবে ভেবে আঙুরের রস,রুটির টুকরো ছিঁড়ে ইঁদুরেদের ডাকছি,প্রহরীবিহীন।শেষ টুকরোটি শেষ হয়ে গেলে একে একে ত্বক,শিরা,মাংশ,চোখ,হৃৎপিন্ড,মগজ......।শুধু কঙ্কাল অটুট থাক।

রবিবার, ১১ মে, ২০১৪

অন্তিম বিস্ফার

অন্তঃসারশূন্য চেতনার নিঃসঙ্গতা এবং বিপথগামী পাথরে
জল লঙ্ঘনের হার্দ্য প্রবণতা;উন্মার্গের গোধূলিতে
মিশে আছে বিজয়শঙ্খের ধ্বনি
সেতুহীন নদীর দু'তীরে বালির উত্থানে
অন্তিম বিস্ফার

কোন নক্ষত্রের আলো এসে আমাদের উঠোন ভরেছে
আবহমানতার শেকড় ছিঁড়ে খরশব্দে সৌরমন্ডলের কলংকলাঞ্জন
প্রতিশ্রুত প্রেম ও অপ্রেমে উপবাসী শরীর;স্বপ্নের যথার্থতা থেকে দূরে
বিষণ্ণ শহর;শতাব্দীর বুকের পেছনে জলভারানত দীঘি
দীর্ঘদিনের অব্যবহৃত জলে শ্যাওলার স্তর,ইতঃস্তত মরা পাতা

রৌদ্রাহত জনপদে মৃতদের পোষাক শুকাচ্ছে
মৃত্যুর পরের দিন এবং
তার পরে অন্য কোনও দিন
আরও আরও বেশী মৃতদের শোকসভায় গেয়েছি দীর্ঘতম শোকগাঁথা

মৃতদের কাছে তা-কি গ্রহণীয় ছিল
বর্জনীয় ছিল জীবিত মানুষেদের কাছে

যক্ষ ও প্রেতের নৃত্যনাট্য

জলের প্রবাহধারা রোধ করতে না পেরে
যে তমসা নদী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেল ধানক্ষেত,স্কুলবাড়ি
এবং তোমার উঠোনে
তার জলকণাগুলো বিপদসীমার রেখা ছুঁয়ে
আরও একটু ওপরে
আমাদের মুখোমুখি দুধের ডেকচি তাতে তিনপুরু সর
তোলা উনুনে কাঠের জ্বাল
যৌনাক্ষরে অংকিত তোমার দেহ
আমার পুরুষদেহ ওম নেবে-শীতের প্রহরে

গ্রীষ্মাবকাশের ছুটি নেই-তথ্য ও উপাত্তে
শুধু গরমিল

আগুন উল্কির ছাপ
দৃশ্য ও দৃশ্যমানতার ভেতর নৃত্যনাট্য
যক্ষ ও প্রেতের

কবিতা এবং গাঁথা

শুধু তোমাদের কথা ভেবে ভেবে এতোদিনে যা লিখেছি
সেই সমস্ত কবিতা এবং গাঁথা
হে আমার পুত্র ও কন্যারা
খেজুরগাছ,আকন্দঝোপ,তমাল বনের অন্ধকারে
দ্যুতিহীন ক্ষুধা,অসুস্থ প্রণয় আর উৎসবের রঙিন বেলুন

নিয়মবিরুদ্ধ দৃশ্য অথবা শর্তস্বাধীন আত্মমগ্ন প্রয়াসের অরচিত বিন্ন্যাস ও
সামগ্রিকতা,রৌদ্রশপথে অবিসংবাদিত এই বর্তমান
যা ঝরছে;সমমর্মী শিল্পী ও কবিরা তাকে চেয়েছিল
পৌনঃপুনিক রঙ,রেখা ও চিত্রকল্পের অনুষঙ্গে

অনেকান্ত জীবনের ওপর অনেক ঝড়,বজ্রপাত
অনাবসান বাজছে,যন্ত্রণার আকাশে কালপুরুষ,কাঁধে কালো কাক
সে-সৌন্দর্য মনোলোভা

উত্থান-পতনে ভ্রষ্ট এ-সব দুঃস্বপ্ন
প্রত্যয় ও ছেদচিহ্নে আগুন,কাটারিভোগ চাল

পানাপুকুরের জল মেশালেই সাদা ভাত

আমার দুঃখের অন্নে দেবতার ভোগ হবে

প্রত্যন্তপ্রদেশে সারাদিন কর্মে ও ভাষায়
শ্রেষ্ঠ অন্ত্যমিলে গেয়েছিলাম সঙ্গীত,পিতৃ-মাতৃ পরস্পরা

খুঁটেছিল কন্দফল
শালকীর বালুচরে জেগে উঠেছিল আত্মা,আদিপ্রাণ
বৃষ্টিনাশা ধানক্ষেত,প্রেতবিম্বে

রুগ্নতারই আলো ও প্রাকৃতজনের হাতে রক্তফল
রক্তক্ষরিত হৃদয় এবং জলহীন গহ্বরে দেখেছি
এনামেলের বালতি দুলে দুলে নামছে,বাঙ্ময় পাখি
ক্রমাবনতির অক্ষরে উড়ছে-তার ডানায় দূরহ শিল্পকর্ম

পৃথিবীর ঢালু ও বর্মরেখায় ইস্পাতের স্ফুলিঙ্গ,বিষাদছায়া
স্তরীভূত মেঘের ফাটলে প্রতিফলনের অস্ত্রহীন আলো
ঔষধির ক্ষেত আর শ্মশানভূমির মাঝখানে

যে বিষুবরেখা---
একদিন সে রেখার প্রান্ত ছুঁয়ে
জল,স্থল ও আকাশপথ পার হয়ে
সাহিত্যপত্র,নূতন বইয়ের প্রচ্ছদ,সন্তাস এবং ঢোল,করতাল,খঞ্জনীর শব্দে
ঐকান্তিক শরীরের প্রেমে মগ্ন
শারদশশী নৌকায় নদী পারাপার

ততোদিন,ততোদিন---
আমার পুত্র ও কন্যাগন
জটিলতাহীন হলুদ কাঁচের জানালার দিকে চোখ রাখো

শুক্রবার, ৯ মে, ২০১৪

বিহ্বল শঙ্খচিলের ডাক

জলদ মেঘের বাসা ভেঙে অঝোর ধারার স্বতঃস্ফুর্ত বৃষ্টি ঝরেছিল।পাথরপ্রতিম বুকে সজল আদর।বাসাহীন শরীরের স্পর্ধিত ইশারা-সমুদ্রের রঙে,সভ্যতার দগ্ধীভূত পাপে জ্বলে ওঠে চোখ।মধ্যজল পার হয়ে 'গলে যা,গলে যা' বলে দু'য়েকটি বাস্তুসাপ নির্নিমেষ অন্ধকারে অসম্ভব আলো জ্বালে।হৃদয়ের তীব্র অন্তর্দহন,উচ্ছ্বাসী সরলতা অর্থাৎ আবেগী নির্বিকল্প;যা নিথর এবং প্রতিধ্বনিময়।সহজতর স্রোতের অনুকূলে ক্ষেত্রজ নৌকার অনায়াস যাত্রা এবং সমুদ্রবাহিত বাতাসে আমরা ভেবে নিয়েছি নিশ্চিত গন্তব্যের যথার্থতা।নদী তীরের বন্দরে কত গল্প,কত উপ্যাখ্যান নির্মাণ-বিনির্মাণের।পৈঠাতে কাছিম,খাঁড়ি মোহনায় হাঙর পিঠে লবণ জলের ক্ষত,প্রতিহত সূর্যস্নানে শীর্ণ শরীর জ্বলছে;যারা নিজের শক্তিতে গন্ডিরেখা পার হয়ে গিয়েছিল তারা কতটা সফল ছিল?প্রশ্নবোধক জীবন,তার পরিপার্শ্ব ভেদ করে নিজস্ব নিয়মে সৌরমন্ডলের গতি ছুঁয়ে কোন প্রথম মানুষ শুনেছিল বিহ্বল শঙ্খচিলের ডাক।

বৃহস্পতিবার, ৮ মে, ২০১৪

না জন্ম,না মৃত্যু

মন্থরগামী আশ্বাসে কাটে পৌষের হিমেল রাত
অন্ধকার স্রোত কেটে শীত ও আগুন,মুখোমুখি--
চোখের ভেতর মৃগশিরা
বিস্ময়বোধক চিহ্নে স্বপ্নেরা ঝলসে গেছে অয়নান্ত সূর্যতাপে

আমাদের কাঠের বাড়িটা আজও টিকে আছে
ঝড়,জল ও শীতের অত্যাচারে আরও কিছুকাল.....

ধ্বংসবীজ হাতে প্রেত সন্ধ্যার প্রান্তরে দাঁড়িয়েছ
ক্লান্তিকর আঙুলে আঁকছ জন্মকোষ্ঠি
সাথে লাশবাহী কফিনের নক্সা
পুরোপুরি কোনটাই নয়
না জন্ম,না মৃত্যু

ভবিষ্যৎ,পরিণাম

বিলের বিতত লাল শাপলা,মহুয়া ফুল,রোদ্দুরে ডাহুক
বনের গভীরে আমাদের অস্বীকৃত যৌনমিলন,ঘাসের বিছানায়---
পরিতৃপ্ত এবং ক্লান্তিকর আলস্য;শরীরজুড়ে ঘর্মস্নান
আমরা ভাবছিলাম অনাগত ভবিষ্যৎ,পরিণাম

ভাষান্তরে দ্বন্দ্ব ও ব্যকরণের স্বতঃসিদ্ধ প্রত্যয়,যতিচিহ্নের অন্তরালে
মনোঃদৈহিক ভাষার ছাপচিত্রে যে ব্যঞ্জনা
শোকাভাসিত হৃদয়,আত্মভাষিক কথনে
অনুচ্চারিত নিহিত বোধে পরিস্ফুট প্রেম

ফেরার সময় হয়ে এসেছে,পথের বাঁকে কাটাগুল্ম
জলে ভাসমান বৈঠাহীন নৌকা
আমাদের দুই পায়ে যাত্রাক্ষত

বরঞ্চ দু'হাত ভরে তুলে নাও বুনোফুল
পাতার পোষাক,পর্ণকুটির,হৃৎপিন্ডে শালিকের নাচ

এ রকম অসম্ভব জানি তবু মেনে নাও

মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০১৪

সুচারূ

প্রাকৃত পৃথিবী ইন্দ্রিয়স্বভাবদোষে কন্ঠনালী ছিঁড়ে
হাহাকারের যে গান ধ্বনি প্রতিধ্বনি তুলে
দশ দিগন্তে আছড়েপড়েছিল
বৃষ্টিবাহনের সুরে গোধূলিশহর এমন আচ্ছন্ন সারাবেলা
মুখে মরুভূমি,নির্মেঘ চোখের কোণে ছিল অপমান
মারী ও মড়কে ঘন হয়ে আসে প্রতিপদের চাঁদের আলো

সুচারূতা নিয়ে অঘ্রাণ শরীর
বিসর্পিনী ছাদের কার্নিশে

অধিকারহীন মর্যাদায়

গোধূলিজর্জর মেঘে রক্ত
আপ্রাণ বাঁচার ইচ্ছে নিয়ে
হাঁটুজল পার হয়ে ডাঙায় উঠেছিলাম
সেই সমস্ত মাছেরা আজও ভুলে যায় নি আমাকে

পেছনে পেছনে তারা উঠে আসেআষাঢ়ের স্রোতে
দূরে সরে যেতে যেতে
অধিকারহীন মর্যাদায় নর্দমার পাঁকে.....

ছোঁয়াছুঁয়ি

দুই চোখে মেঘের কাজল
অগাধ শরীর বেয়ে উঠে আসে আষাঢ়ের ঢল
দ্রাবিত সময় প্রতিবিন্দু জলীয়তা নিয়ে আসে বিদ্যুতের টান
সূর্যময় আমার জীবিকা
অথচ উনুনে ঢেলে সব উপার্জন
পোড়া আত্মা,দু;স্বপ্নগুলোকে নর্দমায় ফেলে

জোয়ারের স্রোতে দু'জনের এতো দাপাদাপি

এতো ভালো লাগে শরীরের এইসব ছোঁয়াছুঁয়ি খেলে

সারাৎসার অন্ধকার

আলো ও অন্ধকারের সংমিশ্রণে এমন আচ্ছন্ন রাত
ব্রক্ষান্ড কলস ভেঙে ছড়িয়ে পড়ছে তারা
আকাশের মুখোমুখি কালপুরুষ,পায়ের চাপে ঝরছে পাথর,বালি
হাতে খোলা তলোয়ার

কার সাথে,কিসের এ রণসাজ

উৎস থেকে মোহনায় গেঁথে আছে ত্রিশুলের খন্ড
অমীমাংসীত ক্রোধ ও বিবমিষা

বিদ্যা,সিদ্ধি ছেড়ে
সময় হয়েছে সন্ন্যাস নেবার

শরীর জাগিয়ে দুই হাতে তুলে নাও
সারাৎসার অন্ধকার

সোমবার, ৫ মে, ২০১৪

ঐহিকতা

চোখের সামনে ক্ষেতজাঙাল,প্রেমের
বার্ষিকগতির রেখা ঘুরে যৌনতার কালে
আমি ও ঐন্দ্রিলা মুখোমুখি--
কার্তিক জ্যোৎস্নার মাঠে
অনায়াস অনুরাগে জেনেছি ফুলের
কোরকে অবাধ যৌনতার ছোঁয়া
বৃন্ততটে,অক্লান্ত মিলন,---
প্রতিটি ফুলের সাথে

জেগে উঠি
যাবার সময়ে ভেঙে ফেলি পান্থনিবাস,নিসর্গ এবং
মৃত পথিকের করোটিতে ভরে নিই আঙুরের রস

কুয়াশায়,মেঘের আড়ালে কেঁপে ওঠে তুষের আগুন---ঐহিকতা

কবিতা ও অবাস্তব বিরোধী লেখা

ছিটে-ফোঁটা ভাঙা শব্দে এতদিনে যা লিখেছি
কিছুটা রহস্য এবং প্রশ্নবোধক চিহ্নের অন্তরালে
অদৃশ্য ক্রোধ ও বিবমিষা এমনকি
শাণিতউজ্জ্বল কৌটিল্যের সাংকেতিক ভাষার কবিতা
পৌনঃপুনিক রঙের ব্যবহারে ক্যানভাসের প্রতিফলন;

আমি এসবের থেকে পালিয়ে এসেছি
মিথুনমুর্তির হাতছানি,সমকামী মৎস্যকন্যাদের প্রলোভন
অপরিশোধিত ঋণ এবং এর দায়ভার---

সর্বোপরি প্রতিশ্রুতিময় কবিতা ও অবাস্তব বিরোধী লেখার থেকে

যারা পথে নেমেছিল কোদাল,গাঁইতি হাতে
তাদের জিজ্ঞেস করিঃপথের দু'ধারে সেই সমস্ত সরল গাছ
তাদের সবুজ পাতা রৌদ্র জলের আশ্রয়ে কেন পথিকের পায়ে পায়ে
সশস্ত্র সন্ত্রাস নিয়ে ঝরে পড়ে