Powered By Blogger

রবিবার, ৩০ জুন, ২০১৩

দিনযাপন

রাত্রির মশাল জ্বলে উঠলে আমরা একে অন্যের শরীর হাতড়াই
বারান্দার প্রসন্ন টবের ফুলগুলো আমাদের জানে
আমরণ অন্তঃসার অস্তিত্ব চেতনা লুপ্ত---গূঢ় আশংকায় জেনে নিই
যারা সমুদ্রের বুকে নৌকা ভাসিয়েছিল;বাতাস ভেঙে ভেঙে তারা কতটা সফল

অফুরান অনুপ্রেরণার সূর্য তুমি জেনে নাওঃ
আমাদের  প্রত্যাহিক দিনযাপনের গ্লানি নেই,শত অপমানেও আমরা স্থির
সমুদ্র জেনেছে আমাদের লবণজল শরীর সূর্য্যাস্তের দিকে
'মিলনী সংরাগে অশ্রুত গানের চেয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের সুর বড় বেশী লোভনীয়'
চেতনাউদ্ভুত,অন্ধ কবি এই কথা মেনে নিহিত বোধের মধ্যরাতে চলে গেছে
প্রেমিকাকে ফেলে,চুপিসারে
প্লাবিত সঙ্গীত আমাদের শিরায় শিরায় রক্তের অমিত,---জ্বলে ওঠে

স্বাতী তারা কি ফুটেছে,সপ্তর্ষিমন্ডল আকাশের কোনদিকে দেখে নাও
আমরা এবার নৌকা ভাসাব দিগন্তে
২.
জোছনার স্বতঃস্ফুর্ত অবরোধে তারাদের বিপণি বিতান আজ বন্ধ ছিল
চে' খচিত গেঞ্জি ক্যাপে সাত ঋষির অলস দিনযাপনের গ্লানি,----
কেউ বাধ সাধে নি; নির্জন সান্ধ্য অভিসারে সম্ভ্রম হারানো
আদিবাসী রমণীটিকে ধর্ষণ এবং শ্লীলতাহানির আপাত পার্থক্য
বুঝিয়ে বলছিলেন স্মার্ট এক মেয়ে সাংবাদিক

ক্লান্ত শহরের গলিঘুঁজি,হাঁটুজল,কাদা পার হয়ে
আমি জানি কোনপথে গেলে তাড়াতাড়ি ফেরা হবে
দ্রুত খুচরো পয়সা গুনে দেখে নিই
বাদুড়ঝোলা বাসের সারি সারি চলন্ত মিছিল
৩.
একেকটি শব্দের আঘাতে নারিকেল বাগানের নির্জনতা ভেঙে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরে
আমি নিমগ্ন খালের জল থেকে উঠে আসি
অন্ধকার মাঠের ওপারে প্রেত-পিশাচের সংহত আনন্দে সুদূরতম উৎসব
অন্ধকার মাঠ পার হয়ে গেলে চার দেয়ালব্যাপী নিজস্ব আলোর স্ফুরণে
আমার লৌকিক বাড়ী
সুপুরী গাছের অনাশ্রয়ী প্রতিবাদে স্পন্দিত উঠোন
বাইরে ঝুমকোলতা দোলে

বাড়ী ফিরে দরোজা খোলার আগে মুছে ফেলি পথের বিস্ময়
দু'পাশের বাঁশবনে পদ্মপুকুরে যতই বৃষ্টি হোক
এক মোমবাতি থেকে আরেক মোমবাতির শিখা জ্বলে ওঠে বিপর্য্যস্ত
প্রণত দু'চোখ জেনেছিল সমস্ত গোধূলিবেলা
বনের ভেতর শান্ত নদী
ফুলের আঙুল ঘিরে রাখে বিন্যাসিত দেহ স্পর্ধিত শপথে
বকুলফুলের মৃদ্যুগন্ধে স্ফুরিত অনন্য এক জরাজটিল রিরংসা

আজ আমি সারারাত তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকব

৪.
বসন্তের বিশুদ্ধ নিয়মে যদি গাঁদা ফুটে থাকে

তবে কেন আমার সম্পন্ন বাগানের মালতী লতার ছায়া
আদিগন্ত গোলাপের ছবি চোখের সামনে থেকে সরে যায়

বাগানে ফেরার দিন শেষ হয়ে গেছে কবে
এতো স্পষ্ট মনে পড়ে করবী,মল্লিকাফুল
গোবর নিকানো উঠোনের ডালিমগাছে ঘোষিত দীপ্তি

জিহ্বার জড়তা নিয়ে
সারাদিন তোমাকে ডেকেছি একদিন অতৃপ্ত প্রেমিক
প্রতিসাম্যতার বসন্ত প্রহরে
আকাশে আলোর রেখা কেঁপে গিয়েছিল অস্পষ্ট বিষাদে

শব্দহীন বিস্ফোরণে দ্বিতীয় নির্মাণ শেষ হলে যে সমস্ত শিল্পী
মেঘ এবং আকাশের ছবি এঁকেছিল
তাদের সম্পর্কে আমি ভাবিঃ
নিমগ্ন ভালোবাসায় তারা ছুঁয়েছিল উজ্জ্বল রোদের দিন
সহজাত মেঘের ফাটল বেয়ে নেমে আসা বিকেলের আলো

আমার সৌন্দর্য্যবোধ ফিকে হয়ে আসে জীবাষ্মের অন্ধকারে
শালগাছে কচিপাতা আসার আগেই চলে গেছে সাঁওতাল রমণীরা
ইতস্ততঃ পড়ে আছে পাখির পালক, গলামাংশ
আমি বসে থাকি কবিতার কাছাকাছি
টিলার ওপার থেকে যদি ডাক আসে সংহত উৎসবের

পাহাড় টপকে মৃত্যুও পালিয়ে যাবে

শনিবার, ২৯ জুন, ২০১৩

লুপ্ত দ্রাবিড় ভাষা

লুপ্ত দ্রাবিড় ভাষায় নির্বসন যৌবনের সুরে যে বিষাদময় চান্দ্রগীতি গেয়েছিলে;
তার কথা আজ মনে নেই।আমার দরিদ্র ম্লান চোখ এক অক্ষৌহিনী অক্ষমতা নিয়ে
সমর্পণের চাঁদের আলো,তোমার নিঃসন রাত্রির ভেতর সব আলো নিভিয়ে দেবার
এক তামসী সংকল্পে অবগাঢ়।

আমাদের মানবিক বিস্ময়গুলিও একসময়ে শেঁকড় গেঁড়ে বসে।মাটির গভীর থেকে
অমোঘ সত্যের মতো উঠে আসে।

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০১৩

মহাপ্রয়াণ


বাতাসে আতর লোবানের গন্ধ।আমার একেলা পাখি পরিপাটি খাঁচা ফেলে চলে গেছে,কাল।
উঠোনের গাছে এতো বরই;কিভাবে আমি এর বেদনাময় সবুজ পাতাগুলো ছিঁড়ি?

বুধবার, ২৬ জুন, ২০১৩

নিস্পৃহ বিষাদ

অব্যবহৃত পাতকূয়োর জলে কার ছায়া পড়ে এ ভরদুপুরে
আহত পাখির ডানা থেকে খসিয়েছ পালক;গভীর মাত্রাজ্ঞানে
চৈত্রের তুফানে উড়ে যাবে ভাতঘুম
ছন্দে মথিত শরীর,কবিতার অন্ত্যমিল,কোকিলভাষ্য,অভ্রর খনি,---
সবই তোমার অধিকারে
প্রতিমুহূর্তেই পরিবর্তিত আলোর বিচ্ছুরণ
আমরা জ্যোৎস্নার ভয়ে ঘরে বসে থাকি ক্রীতদাস প্রথার প্রতীকী ব্যঞ্জনায়
শরীরের বিবিধ ফাটল বেয়ে ঢুকে পড়ে অম্লেয় কাব্যিকতার সূক্ষ্ম শৈলী
তবু বিমূর্ত ছবির ক্যানভাস থেকে কোনো রঙের বিন্যাস
কোনো রেখা বিশ্লিষ্ট করতে
পারি না;আমার দিনরাতগুলো এত নিস্পৃহ বিষাদে ভরা

সোমবার, ২৪ জুন, ২০১৩

ছায়া

রৌদ্র প্রতিহত আলোর ভেতর স্পষ্ট উচ্চারণে উড়ে গেল পাখি
কিছু পালক খসিয়ে
কত সহজ জীবন পাখিদের
পীত হিজলের সম্পন্ন আধাঁর
মূঢ় শব্দস্তুপে বসে কাক অন্তিম নিঃশব্দে প্রতিবাদী নীরব বৈশাখে

সুদূর পতাকাবাহী ইতিহাসে প্রেম ও অবক্ষয়ের ফাঁকে
মনে আছে
শরীরে শরীর চেপে রেখেছিলাম জলের ধারে
সারা শরীরে অভ্রের কুচি,বালি
শরীরের শেষে পৌঁছে দেখেছিলাম কিভাবে
অন্তরের অতলান্তে মন মিশে থাকে

আমার নিভৃত আত্মা কেঁপে ওঠে ফণিমনসার অশুভ ফুলের নীল বিষে
প্রথম বিশ্বাসে তুলে নিয়েছিলাম;সংহত উপহার
শুভ ও অশুভে জেগে ওঠে জাল অমৃত চোখের পাশে
বাড়ির সামনে শীল কড়ুই গাছের ছায়া স্থির হয়ে আছে
পেছনের জানালায় কার ছায়া পড়ে

অপমান,মৌল অবসাদ

আকাশের দিকে উড়ে গেল যে পাখিটা ;তার নাম আমি জানি
উঠোনের নিমগাছ নেচেছিল স্বতঃস্ফুর্ত হাওয়ায়
স্পষ্ট মনে আছে নিমফুলের সম্পন্ন কুঁড়িগুলো
অবাধ জ্যোৎস্নায় মেলে দিয়েছিল তার দুঃখ বিজিত মর্মরে

সমস্ত বিষন্নতার শেষে একদিন নিমগ্ন বিকেলবেলা
বৃষ্টি হয়েছিল
আমি সে বৃষ্টির মধ্যে পায়ে হেঁটে হেঁটে
ভগ্ন নদীর আরেককূলে পৌঁছে দেখি
চারিদিকে অতল জলের ঢেউ
প্রগাঢ় অন্যায় ভেসে যাচ্ছে নীল স্রোতে

আর মাটি ও আকাশে সাঁকো হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে বৃষ্টি
সেই বৃষ্টি ধুয়ে দিচ্ছিল আমার যত অপমান,মৌল অবসাদ

সবুজ আলোর পাখি

সঙ্গীতময় এ পৃথিবীতে কাক,চিল ও শকুন ছাড়া কোন পাখি থাকবে না ভাবতে ভাবতে
নিহিত বোধের মধ্যরাতে ঘুম ভেঙ্গে জ্বলে আদ্যিকালের পূরানো চাঁদ নিপূণ শিল্পছায়ায়।
আদুরে বধূর ঘুম লাগা চোখে পৃথিবীর বুকে মাথা রেখে সাগর ঘুমোয়;তার ঢেউ চোখে
লেগে থাকে সৈকতের রুপালী প্রচ্ছায়া।

সান্দ্র পরিচয়ে জেনেছি যে মানবীকে---অন্তহীন রহস্যের নিবিড় সমর্থনের ভারে
দীর্ঘায়ত মূর্ত প্রতিচ্ছবি---এখনো বুঝিনি তাকে--কেউ কি বোঝে তা?
বেদনা এ বুকে অর্ঘ্যের মতোন সাজিয়েছি।সংশোধিত দ্বিতীয় পরিচয়ের সূত্রে
দোলাচলে প্রতিষ্ঠিত ব্যবধানের ভাষায় অনুসৃত আবেগ ও মৌল অবসাদে
বিচ্ছিনের বিষন্নতায় দু'চোখ।রাত্রির নির্জনে ঘর ভেসে আছে নীলাভ আলোয়।
কুন্ডলিত শরীরে গভীর, আত্মলীন নিমগ্নতা।

ঘুমন্ত মুখশ্রী যন্ত্রণার পূর্ববর্তী বাঁকে বাঁকে আনন্দের প্রতিশ্রুত সবুজ আলোর পাখি
ডানা মেলে আছে।ওরা জানেঃইতঃস্তত ভালোবাসা বুকের ভেতর জমে থাকে।

সরল স্বীকারোক্তি

চৈত্রের প্রত্যাভিমানী পাতা ঝরার দুপুর পার হয়ে বললে,'বলার মতো কিছু নেই।'

পথে ছিল সরল আলোর পারাপার,
অশোকের উঁচু ডালে বসা লেজঝোলা কিছু পাখি
আর ছিল সার বেঁধে তোমার পূরনো প্রেমিকেরা।
প্রত্যেকেই চেয়েছিল হাত ছুঁয়ে শেষবারের মতোন বলো,'ভালো আছি।'
ফিরে যাবে?

যে কোন পুরুষেরই কাম্য ছিলে।

কিন্তু আমি এসব ভাবব কেন
ওরা কোনদিন আমাদের পথ এসে দাঁড়ায় নি।

শনিবার, ২২ জুন, ২০১৩

উজ্জ্বল হৃদয়

মল্ল আষাঢ়ের ঢলে এতো এতোবার ভেসে গেছে ঘর তবু ঘর হারানোর বেদনা এখনো
পেয়ে বসে।এতো বেশী কষ্ট হয় চেনা পথগুলো প্রত্যেকবার নূতন করে খুঁজে পেতে।
আবর্তনে আবর্তনে প্রত্যেক নিঃশেষ থেকে মৃত্যু উঠে আসে ধীরপায়ে তবু মৃত্যু ভয়ে মগ্ন
হয়ে শুয়ে থাকি বিছানায়।এখানে নিয়ত সৌরধূলো ও জীবানু ঢেকে ফেলেছে সমস্ত পথ।
ঠিকানাবিহীন এ প্রতিপথ কিভাবে খুঁজে পাবে?

গর্ভাশয়ে বেড়ে ওঠে পাপগ্রস্ত ভ্রুণ!'ভালোবাসি তোমাকে'-----সুস্পষ্ট  উচ্চারণ থেমে যায়
স্বচ্ছ শরীরের তলদেশে ফুঁড়ে যখন বেরিয়ে আসে তোমার হৃদয়।

অন্ধকার জীবন

প্রেম ও শুশ্রুষাময় পৃথিবীতে কোন গান থাকবে না।'শোক সঙ্গীতের দীর্ঘ মহড়ায়
ভেসে যাবে বালিয়াড়ি,সমুদ্র সৈকত',--এ দুঃস্বপ্নে অন্ধকার থেকে জেগে উঠলাম।
মনে পড়ে,অন্ধকার সিঁড়ির তলায় আমাদের কৈশোরকালীন কাঁপা চুম্বনের কথা,
গোলাপী অনুভবের প্রতিধ্বনিময় নূতন প্লাবিত সেই অমলিন,বিশুদ্ধ প্রেমের।
সুগত দু'চোখে ছিল নূতন বাড়ির ফাঁকা ঘরের মতোন বিস্ময়ের নিমগ্নতা।
ছাদের কার্ণিশ বেয়ে বেড়ে ওঠা অশ্বথ গাছের ছন্দময় পাতারাও জ্বেলে দিয়েছিল
নিবিড় শুভ্রতা। চোখের ভাষার মগ্ন অবকাশে আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টির উজ্জ্বলতা
ধরে রেখেছিল সংহত প্রার্থনা।বৃষ্টির সে ভাষা আমরা বুঝিনি।সিঁড়ির তলার প্রতিশ্রুতি
ভুলে যে যার মতোন অবজ্ঞাত বিশুষ্ক হলুদ নির্নিমেষ ছড়িয়ে দিয়েছিলাম,দ্রুত।
অশ্বথ গাছের অন্ধকারে স্পষ্ট সমস্ত জীবন,---এই যে সম্পন্ন ঘর-গেরস্থালি,
বারান্দার প্রসন্ন টবের ফুল অথচ বাড়ির সামনে পেছনে কোন গাছ নেই।

বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০১৩

মৌলিক জাগরণ

প্রবল বিশ্বাসে মুঠোভর্তি জোনাকীর যে আলো দিয়েছিলাম
সেই আলো আজ কোন ঘরে?
আমি বুঝিনি কখন প্রতিধ্বনিময় গোধূলির আলোর প্রতিটি কণা
বিশ্লেষন করেছিল অমৃত চোখের চাহনীতে
বকুল গন্ধের পাশে জ্যোৎস্নার স্থিরতা কেঁপে গিয়েছিল সান্দ্র স্বরে
বুনো তিৎপল্লার ঝোঁপে পাখির যে ছানা দু'টি বেড়ে উঠেছিল,---
'কি করে উড়তে হবে',কাঁশবন থেকে প্রস্তুতি জাগ্রত আকাশের
আর নিথর মৌলিক জাগরণে অন্ধকার গাঢ়তর করে জ্বলে ওঠে জোনাকী পোকারা

বুধবার, ১৯ জুন, ২০১৩

বিলুপ্তি

নিবিড় এ স্তব্দ রাতে কবিতার শেষ থেকেই আরম্ভ হয়ে গেল
ক্রম বিলুপ্তির ধারাবাহিক আখ্যান।মানুষের সভ্যতার ইতিহাসে যে অদম্য
বিবর্তন ঘটে চলেছে হয়তো তাতে একদিন কবিতারও বিলুপ্তি ঘটবে।
চৈত্র পূর্ণিমার খাঁ খাঁ রাতে অতীত জীবন থেকে টেলিগ্রামের মতোন দু'য়েক লাইন
রবীন্দ্র সঙ্গীত শোক,শুশ্রুষা ও প্রেমে হয়তো কখনো ভেসে আসবে প্রবীন অভিজ্ঞানে।

নিরপেক্ষ বাদুড়

নিরপেক্ষ বাদুড়েরা ঝুলে আছে প্রবীণ বিক্ষত ডালে ডালে
পক্ষপাতিত্বের জোরালো আলোয় ভরে যায় গাছের নীচে,ওপরে,পাতার ফাঁকগুলো।
পতঙ্গের মতো পুড়ে যাচ্ছি বলে অবশেষে বাদুড়েরা বলে ওঠে,
'যান,যান আপনারা গৃহে ফিরে যান,
কীটতত্ত্ব শিখে আসুন নতুবা অর্থহীন এ পোড়ার কোনো স্বার্থকতা নেই।

অন্তর্নিহিত জ্বালাযন্ত্রণাগুলোও পুড়তে পুড়তে একসময়ে কবিতা হয়ে ওঠে।

সোমবার, ১৭ জুন, ২০১৩

ব্যভিচারী পৃথিবী

এই যে কবিতা,এতো এতো নিবেদিত গান বেঁধেছিল চন্দ্রভূক কবি
ভাটিয়ালি সুরের মতোন ব্যকরনহীন তা হারিয়ে গেছে প্রাচীন সমাধিস্তম্ভে;
দীর্ঘ ঘাসেরা বিবর্ণ শুয়ে আছে,
যদি পারো,পড়ে নাও মৃতদের মূক ভাষা।

সৈকত ও নীলাভ শোবার ঘরে অর্ধনগ্ন নারীর শরীর,
অন্তর্বাস ফুঁড়ে বের হয়ে আসে স্ফীত স্তন,---পরিণত উপহার
নির্বোধের বাসনা ভুলেছে অপ্রেমে,প্রেমও।
শব্দের রহস্য খোঁজে মূঢ় কবি;নৈকট্যেরও অতীত শব্দের সত্য
বোঝেনি জীবন এবং মৃত্যুর পার্থক্য

এবং প্রেমহীন কাম জর্জর পৃথিবী ব্যভিচারে ছেয়ে গেছে।

রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৩

চোখের জল

প্রবল জ্যোৎস্নায় ব্যক্তিগত দুঃখগুলো একেবারে ফিকে হয়ে আসে।
বাড়ীগুলোকে তখন আর বাড়ী মনে হয় না,পাষাণসৌধ মনে হয়।
ছাদের কার্ণিশে চন্দ্রাহত অশ্বথগাছ,দেখে যাওঃ
আমার গোপণ টবে কত গোলাপ ফুটেছে!
আমি রৌদ্র এনে দিতে পারবো না শুনে
গোলাপগুলো নিঃশব্দে হেসে ওঠে;চন্দ্রমল্লিকা,টগর,অতসীগাছেরা
তাদের সবুজ পাতা থেকে জমানো কিছুটা জল ঢেলে দেয় আমার শরীরে।
এটা কি চোখের জল?আজ রাতে কেঁদেছো?না হলে ওরা কোথা থেকে পেল এত জল?

শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৩

অবৈধ অন্ধকার

জলের অক্ষরে লিখে দিয়েছিলাম ভালোবাসার কথকতা
শোনেনি সে কথা
মুখোমুখি উঠে এসেছিলাম দু'দিক থেকে
চোখে জ্বলজ্বলে ঘৃণা,নিঃশ্বাসে আগুন।।

প্রত্যাভিমানের পরাভবে প্রতিদিন বেঁচে উঠি
অস্তিত্বের প্রবল টানাপোড়ন আর
অবৈধ অন্ধকারের মধ্য থেকে।

শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০১৩

ভুল ভালোবাসা

চোখের পাতায় উড়ে যাওয়ার স্বপ্ন এঁকে দিয়েছিলাম;পাহাড়ে চলে যাব বলেছিলে
পাখিদের ঘরে ফেরার প্রহর এল্‌ মনে করে দেখো
কত অল্পে তুষ্ট থাকতে চেয়েছিলাম ।

নিজেরই হৃৎপিন্ড ছিঁড়েছি,আনমনা দুই হাতে।

কবিতার ভ্রুণ

নিজস্ব উঠোনে এখন আগাছার ঘরবসতি
কতদিন আবাদ করিনি রুপোলী কোন স্বপ্ন
মুখোমুখি বসে বলিনি প্রগাঢ় প্রেমের গল্প কিংবা
দ্রুত বদলে যাওয়া জীবনের কথা ,
সুদৃশ্য এ ফ্ল্যাটে পরিপাটি দামী আসবাবে
জমাট আঁধার
যদিও রুচির ঘাটতি নেই এতোটুকু।
সবুজের খুব কাঙাল আমি !
গোধূলি আলোয় কেমন থাকে
অপরাজিতা ? এ দেখা আমার আজীবনের সাধ তাই
বিকেল না ফুরতে গিয়েছি অগোছালো বুনো ঝোপে ।
কেটেছে সময় আমাদের অনর্গল কথার অজস্রতায়
বলেছি , চৈত্রের ক্ষরায় কতটা পোড়ালে
জল আর , কত পলি জমে জমে গড়ে ওঠে চর ।
জ্যোৎস্না রাতে বেঁধেছি পয়ার, খুব ভোরে শিউলি কুড়িয়ে
ধুলো পায়ে বায়না ধরেছি গল্প বল আজ
সেইসব দিন ছিল রঙ্গিন বর্নিল।
এখন অস্তিত্ব জুড়ে পোড়া ক্ষত এই চেতনায়
অন্যের ঘরবসতি
অন্য কেউ সেই মাঠময় লুকোচুরি খেলে
যে খেলা আমি খেলেছি এতদিন !
আমার উঠোনে এখন তুমুল আগাছা
বন্ধ্যা মনে জন্মায় না আর কবিতার ভ্রুণ !

জ্বী,স্যার

He came witha computer
And the broken language of the conqueror;
He says 'No,sir',May be sir,but never,'Yes,sir.'
Mudrooroo Narogin

যে চড়ুই পাখি প্রতিদিন কিচির মিচির শব্দে আমাকে জাগিয়ে তোলে
সে জেনেছে অনিশ্চয়তার দিকে আমার গন্তব্য
রক্ত-জল-ঘামে মাখা আমার কবিতাগুলো
যদি কেউ ইচ্ছে কোরো,পড়ে দেখো
জলের ঝাপটে আজো তা মুছে যায় নি।

আমার কবিতা কোনো কৃমিভূক সম্পাদকের টেবিলে পৌঁছুবে না।
আমি সর্বদাই শিখে এসেছি,হয়তো কিংবা হতে পারে
কিন্তু কখনোই বলিনি জ্বী,স্যার।

কবিতার সুমন্ত শরীর

কবিতার শরীরে শরীর ছুঁয়ে শুয়ে আছি,---
আমার হৃদয় থেকে যে সৌন্দর্য্যবোধ জেগে উঠছে তা পূর্ব ফাল্গুনীনক্ষত্র থেকে
বিশাখানক্ষত্র অঞ্চল ছাড়িয়ে আরো দূর,বহুদূর জ্যোতিষ্মান নক্ষত্রলোকের আলো
ও ছায়ার অন্তরাল ছিঁড়ে সূর্য দেখে;জ্যোৎস্নাগ্রস্ত এই কবি উঁচু অশোকের ডালে বসে
একদা গেয়েছিলাম----দৃশ্য জগতের যত গান,প্রবল বৃষ্টির শব্দে জেগে উঠে
চিনে নিয়েছিলাম অদৃশ্য সব বর্ণালী রঙ।মাধবীলতার স্রোতে ভেসে গিয়েছিল
বালিকার গল্পকথা;কদমের এতগুলি ডাল,ফুল ও সবুজ পাতা সুদূর বর্ষার গানে
সাদা হাঁস বাতাসে উড়ছে।আমার আত্মার মধ্যে কেঁপে ওঠে সোনামুখী সুই।
আমার শরীর জ্বলে ওঠে শালকীর স্বচ্ছ জলে।নদীর অনাব্য তীরের মাটিতে কিংবা
ঝর্ণাপাথরের পথে ছিল না তোমার পদচিহ্ন।তবে আমি হেঁটে যাব কোন পথ ধরে?
তোমার অমৃত চোখ একদিন যতটা কাঙ্খিত ছিল,আজ আর ততটুকু প্রিয় নেই।
তোমার করোটি ঢেকে রেখেছে দেহজ পোকা---অনন্ত খামারে বিস্মৃতির ডিমে ভরে আছে।
সমস্ত পাহাড়,সব নদী,সব ঝর্ণা স্থির হয়ে শুয়ে আছে জল,বাতাসবিহীন।
সৈকত পাখির ঝাঁকে কালো অথচ আমার আকাশের কোণ খালি করে গেছে কাকাতুয়া।

এইসব দেখে উপহারজাত বীজ ফেলে আমি পা বাড়াব কবিতার দিকে
প্রেমিকার মতো জড়িয়ে থাকব কবিতার সুমন্ত শরীর।

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০১৩

টুকরো কাব্য



কাল ভেবেছি সারা রাত
যখন এদিককার সব পথ বন্ধ হবে জেনে
উন্মীলিতা রাতে পশ্চিম দূয়ার খুলে চলে যাব সমুদ্র সৈকতে
জোয়ার ভাটার দিকে
খাঁড়ি মোহনার দিকে
ঝাউবন থেকে ভেসে আসা গাঙচিলের আর্তস্বরে
খুঁজে নেব নিশ্চিত গন্তব্য

২.
ফুল থেকে জন্ম নিয়েছে যে প্রেত
আজ তাকে দেখি দেবতাদের সম্মানে অধিষ্টিত
সিঁদুর মাখানো শশা,আম্রপালি,আলোচাল,দূর্বাঘাস,বেলফুলের পূজোয়---
বৈতালিকদের স্তুতিতে স্তুতিতে স্ফীত পৌরাণিক গিরিগর্ভ
আর যারা জন্ম নিয়েছিল লাউডগার পাতায়
তারা আরো বেশী করে মিশে যায় সবুজের ভেতর যদিও
তাদের শরীর বেয়ে ঘুরে বেড়ায় সবুজ,লিকলিকে সাপ

মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৩

দুঃখের অন্ন

আমার দুঃখের অন্নে কার ছায়া পড়ে?

মেঘ পতাকায় মৃতের বিষন্ন মুখ,মলিন শোভাযাত্রায় আমাদের ক্লান্ত চোখ
আশা-নিরাশার দোলাচলের অসহনীয় ভার ছুঁড়ে দেয় অনাব্য পথের বাঁকে।
আমার স্বগত সুর থেকে আগুনের যে স্ফুলিঙ্গ বের হয়ে আসে তা পুড়ে যায়
কবিতার অকর্ষিত ভূমি।চাতকের পাখার নীলচে আলো গোপণে ছড়িয়ে পড়ে
কবিতার শরীরে শরীরে।আত্মার নৈকট্যে স্পষ্ট মনে পড়ে তাল পাতার লিখন রীতি;
জটিল ও দুর্বিষহ প্রচ্ছদের রাত দীর্ঘ প্রতিধ্বনিময় সীমাহীন কুয়াশায়
গাছে গাছে ঝুলছে মানুষ।
ঘাস ও কবর ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে মৃত মানুষেরা।
ঝড়ো বাতাসে অজস্র অন্ধকার ঝাপিয়ে পড়ছে আর
সময়ের রক্তস্রোত পার হয়ে অগুনতি মানুষেরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল
বীজ বুনবার
সাঁকো বানাবার
খেয়া নৌকা তৈরী কোরবার
কঠিন পাথুরে পথ ভেঙে ভেঙে সুগম্য,মসৃণ কোরব।

আমাদের বেঁচে থাকবার নাম মৌল রসায়ন বিদ্যা।
লাল চালের ভাত ও সাদা নুন
সাথে লংকা না হলেও ক্ষতি নেই
লকলকে জিহ্বায় অমৃত স্বাদ।

অন্ধকার ঘরে আলোয় ফুটানো
আমার দুঃখের অন্নে কার ছায়া পড়ে?


রবিবার, ৯ জুন, ২০১৩

আমার কবিতারা

আমার আনন্দ এবং ঘুমের ভেতর কবিতারা খেলা করে।

কাকে শোনাব?যে বিষাদের চান্দ্রগীতি পৃথিবীময় গেয়েছিলাম
মহাশূণ্যে তা মিলিয়ে গেছে----মহাবিস্ফোরণের আগেই
স্বপ্ন ভেঙে উঠে এসেছে মানুষ।এক অক্ষৌহিনী বৃষ্টিসেনা
আমার অস্তিত্বে,চেতনায় আঘাতে আঘাতে দেশান্তরী করেছিল;
চেয়ে বসেছিল ব্যাপক বাণিজ্যে বালুকণাসহ বাতাসে উড়িয়ে নিতে,---

গ্রীষ্মের বালিয়াড়িতে শিখে নেই পরাভূত অধিবিদ্যা,
আমার অতীত জ্ঞান,জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক জ্ঞানাবলী
প্রচন্ড ক্ষিধের মুখে আধোশ্বেত মাছের ওপর ধাবমান।

বৃষ্টিভেজা পথে যে গুহায় চিত্র আঁকা হয়ে ছিল,----
উদ্যত বর্ষার ফাল হাতে ক্ষুধার্ত পুরুষ এবং নারী
সহজাত অভিজ্ঞানে শিখে নেয় লাঙল,দড়ি বুনন কৌশল।

আদিত্যবর্ণ রমণী সঙ্গী পুরুষটিকে জানিয়ে দিয়েছিলঃ
মানুষের পশুআত্মা একদিন স্রোতশীল ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভেসে যাবে।

কেন যে এসব কথা কবিতায় ঘুরে-ফিরে আসে।

শনিবার, ৮ জুন, ২০১৩

নিশাজাগরুক ঘন্টা

শেষ চিঠিতে মৌ লিখেছিল,
কবিতার স্বচ্ছতার মতোন বাঁচতে চাই।'

আমাদের গভীর ইচ্ছের সমুদ্দুরে তৃষ্ণার্ত মুহূর্তগুলো চেয়ে থাকে
দূর প্রবাসের নৌকাগুলো স্রোতের স্বপক্ষে টেনে নিয়েছিল
চেতনাজড়িত সমস্ত জ্বলুনী;
সময়ের খন্ড স্তর ভেদ করে অতল পাতাল থেকে
উঠে আসা অনুভবের পাষাণ ভার,---
ছুঁড়ে ফেলেছিলে সূর্য্যঘড়ির ওপর।
সোনালী খুশীর শীষ গূঢ় আশঙ্কার অশ্রু থেকে জন্ম নেয়;
তা যখন জেনে গিয়েছ তখন নিশ্চয়ই জানঃ
শব্দের আঘাতে ভেঙে পড়ে চতুর্দিকের দেয়াল,
বন্ধ্য বাতাসে কেমন করে ফসল দুলতে থাকে নাক্ষত্রিক ছন্দে
আর সুর ফুটে ওঠে আকাশের কোণায় কোণায়।
যদি স্বচ্ছ চোখে বর্ষণের ধারা নেমে আসে
তবে মুখর উল্লাসে প্রাণ মেতে ওঠে ভাঙ্গন প্রবল
নদীর দু'তীরে।

মুখোমুখি আত্মার খেলায় তবু উঠে আসা স্বেদাক্ত সময়ে
দারিদ্র্যঅন্নের ওপর উছলে ওঠে শীর্ণ ধোঁয়া।
মধ্য দুপুরের তাপে কেন বেজে ওঠে নিশাজাগরুক ঘন্টা।


শুক্রবার, ৭ জুন, ২০১৩

ভোরের শিশির

কাল যে কিষাণ বউয়ের চোখে কচি কলা পাতায় মোড়ানো স্বপ্ন ছিল
আজ তার চোখে ভাসে আদিগন্ত ফসলের মাঠ
শেষ রাতের প্রহরে খুলে গিয়েছিল জোয়ারবাঁধ ফটক
উতরোল নির্জনতা ভাসিয়ে নদীও ভেসে গিয়েছিল দক্ষিণ সমুদ্রে
নামহারা মানুষেরা সেখানে জলের আয়নায় মুখ দেখে
খন্ড সময়ের পাত্রে ভরে রাখে প্রবল স্বস্তির শূণ্য

অভিজ্ঞতার শিখর ঢেকে যায় প্রত্নতত্ত্বের ধূলোয়
বুকের পাঁজরে জ্বলে সহমর তৃষ্ণায়;যখন
আধপাকা সব ইমারত,মন্দিরের ত্রিশুল পবিত্র হয়ে ওঠে জলোচ্ছ্বাসে

যখন চিতার আলো ফিকে হয়ে আসে,---
কিষাণীর শরীরের লবণজল মেশানো ঘাম
ভোরের শিশির হয়ে ফোটে


বৃহস্পতিবার, ৬ জুন, ২০১৩

অভিবাসন

সুমন্তের পাখিরা ফিরবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল
কিন্তু তারা মিথ্যে বলেছিল
শ্রাবণসন্ধ্যার বাতাসে যে সুর ভেসে আসে
রাত্রিমগ্ন এ উপত্যকায়,---
তাতে লোবানের গন্ধ মিশে আছে

মৃত্যুর ভেতর দিয়ে সার্থবহ পথে মৃত্যুহীনতার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলাম
জলের কিনার ঘেঁষে অস্থির পায়ের দাগ আর
জলের ওপর ঝুঁকে ছিল অগণ্য দোসরদের পাশাপাশি
প্রিয় যত মুখ যন্ত্রণার ছাঁচে
অস্তিত্ব জটিল বেশ্যাদের স্নানে
সৈকতের ঝাউবনে আর্তরবে ডেকেছিল গাঙচিলেরা

আমার পূর্বসুরীরা শত প্রতিকূলতাতেও সমুদ্র পাড়ি দিয়েছিল
আমার উত্তরসূরী তোমরাও জেনে নাও
লবণজল আগুন এবং ঘামে মাখামাখি সূর্যোদয় দেখেছি,রক্তাভ,---
এবং চলে যাবো সূর্য্যাস্তের ঢালু পথ ধরে
যদিও কখনো তোমাদের আর্তস্বরে আমি ফিরবো না

মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৩

শব্দ ও ধ্বণি

যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল
বল পয়েন্টের লেখা পাতা থেকে কালো অক্ষরেরা উঠে এসে তা পোড়াচ্ছে
ঘাস মাটি পাথর সবুজ ক্ষেত
অম্রৃত চোখের সমুদ্দুরে সে এক অস্থির মুখরতা
ব্যাকুল তা যে এমন স্নিগ্ধ----হৃদয়হীনতার যন্ত্রণা
পুকুর পাড়ের ঘেঁটুঝোপ ঘুরে গেঁয়ো সন্ধ্যা বেলাকার মাঠের চিৎকারে মিশে যায়
শব্দ ও ধ্বণির পৃথিবীতে---রক্তের শেকড় বেয়ে নেমে আসে ছন্দ
মাঝরাতের অব্যক্ত কষ্টগুলো গান হয়ে উড়ে যায়
আর ঋদ্ধ করপুট থেকে ঝুরঝুর করে ঝরে পরে
ক্ষত-বিক্ষত অক্ষরগুলো

সোমবার, ৩ জুন, ২০১৩

আসন্ন জোয়ার

সেইসব দিন গত হয়েছে সুখের পরপারে
দুঃখের ওপারে নক্ষত্রখচিত প্রতিহত পথ জেগে ওঠে
গোধূলির অনন্তসন্ন্যাসে কোথায় গিয়েছিলাম
জানা নেই দীর্ঘতর বটের জটিলঝুরি সমকালে চাবুকের শিষ শোনে
আর লাল আগুনে ঝলসে ওঠে কাল মহাকাল

যে পাথরে তুমি দাঁড়িয়ে আমাকে একটানা ডেকে গিয়েছিলে
সেই পাথরটা আজ আর পথের ওপর নেই
আমি তার ভেঙে পড়া দেখেছি আষাঢ়ে স্রোতে
প্রিয় যত গান বাধাঁনো খাতায়----সেগুলোও

সৈকতের ঝাউবনে যারা হেঁটে যায় দূর পূর্ণিমাসন্ধ্যায়
দেখে যাও
ওরা মগ্ন হয়ে আছে অমর্ত্য ফুলের
সৌরভে;পূরনো ঘর ভেসে যায় আসন্ন জোয়ারে

প্রাকৃতিক গান

একদিন যে সমস্ত গান পৃথিবীময় গেয়েছিলাম
পাথরের বুক থেকে তার সুর আজো জেগে ওঠে
এত গাঢ় অন্ধকার----স্তব্দময় এ জীবন
ঝড়ে ক্লান্ত,নিরালোক----এক একটি সুরের জন্ম
এক একটি অরণ্যে----ফুলের ওপর নত
ফুসফুস ভরে শ্বাস নিয়েছি মহুয়া আর ধানের বাতাসে
এতসব সুরের,ছন্দের জন্মে----
পরিযায়ী পাখিদের অস্থিরতাও উৎসবে শেষ হয়

দ্বিপদী রাশি

আমাদের যুথবদ্ধ দিনগুলো চোখে জল নিয়ে
ফিরে গিয়েছিল কবরখানার পাশ দিয়ে

কুয়াশায় মোড়া সারি সারি কবরগুলো শীতল অন্ধকারে ডুবে থাকে
আর হিম হয়ে আসে মৃতদের শ্বাসে

যখন জীবন ছিল সেইসব মৃত মানুষেরা
ছুঁয়েও দেখেনি কতটুকু উষ্ণতা জীবনে

তবে কি জীবন আর মৃত্যুর পার্থক্য
শুধু আপেক্ষিক সীমারেখাতে আবদ্ধ থেকে যাবে

সৃষ্টির দরোজা খুলে মৃত্যুকে ডেকেছি
অপব্যয়ে অপব্যয়ে ক্ষয়ে গেছে এ জীবন

শনিবার, ১ জুন, ২০১৩

অন্তহীনতা

দিনরাতের সীমানা পার হয়ে মহাশূণ্যে যখুনি বিলীন হতে চেয়েছি অমনি
ঘনঘোর মেঘগুলো তীব্র আক্রোশে আমার চোখে মুখে চেতনায় আঘাতে আঘাতে
বিপুল পৃথিবীময় পাথরের বুকে আছড়ে ফেলেছে।এখন বাতাস ভরে আসে
পঞ্চমুখী শাঁখ।উন্মাদ ঝড়ের কাছে বিশীর্ণ আঙুল তুলে অস্তিত্বকে ফিরে পেতে,
মহাজগতের কোন স্তরে আমার স্বপ্নেরা অন্য সংসারের অসুখে কতটা ক্লান্ত?
আমি জানতে চেয়েছিলাম---সুনির্মল নির্জনতায় শূণ্যের কাছাকাছি সৃষ্টিশীল
ক্ষমতাও কি অন্তহীনতায় খসে পড়ে?

সমুজ্জ্বল প্রতিশ্রুতি

গোধূলির কাল পার হবার আগেই,---
তোমার নির্জন  প্রতিশ্রুতিগুলো মৃত মাছের মতোন ভেসে উঠেছিল।নিভৃত আকাঙ্খা
বুকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম মাঠের শুকনো আলপথ ধরে।অগ্নিকোণে
আমাদের প্রতিবিম্ব উজ্জ্বলতার ভেতর এক নূতন মাত্রার সৃষ্টি করছিল।
আমাদের অনুভবে ছিল তৃষ্ণার শিখর,পায়ে ছিল না দ্বিধার টান;যে পাখিরা
পালক খসিয়ে উড়ে যাচ্ছিল আমরা সেই পথেই আখরোটের বীজ বুনে দিচ্ছিলাম।
মৃদ্যু বাতাসকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলাম পুকুরের নীলচে জলের ঘাটে;যেখানে আজও
হিরণ্ময় বুদবুদগুলো ভবিষ্যতের আল্পনা এঁকে দেয় কূল বধূদের ঘটে ঘটে।

জল জোছনায় মাখা তোমার দু'হাত সমুজ্জ্বল প্রতিশ্রুতিতে অনুরণন তুলেছিল।

আক্ষেপ

যমুনার ঢেউয়ে ঢেউয়ে সারি সারি নৌকা;দীর্ঘ মাস্তুলে মাস্তুলে
জমে ওঠে অভিমানের কুয়াশা
দ্বাদশীর পূর্ণচাঁদ ঢেকে দেয় নীলচে জলের স্তর
তবে এখানে কোথায় আমি শেষ ঝাঁপ দেব